মেঘবিলাসী পর্ব-৩৭ এবং শেষ পর্ব

0
1626

#মেঘবিলাসী
#israt_jahan_arina
#last_part

বাহিরে তুমুল ঝড় বইছে।এই ঝড়ে বাহিরের সবকিছুকে দমিয়ে রাখতে পারলেও এই প্রেমিক পুরুষকে দমিয়ে রাখতে পারেনি।কোনো বাধা তাকে আজ তার প্রিয়তমার কাছে যেতে আটকাতে পারবেনা।জিসান এই বৃষ্টির মধ্যে ড্রাইভ করছে আর ভাবছে তিন্নিকে আজ সে অনেক কষ্ট দিয়ে ফেলেছে।নিজের গালে কষিয়ে দুইটা থাপ্পড় মারতে ইচ্ছে করছে।তার পুতুলের মত বউটাকে কাদিয়েছে।আজ মা বেচে থাকলে এই অপরাধের জন্য খুন্তি দিয়ে পিটাত।আর বলতো

-“বলদের বাচ্চা বলদ।আমার পরীর মতো বৌমার চোখ দিয়ে পানি ঝরিয়েছে?তোর আজ থেকে পানি খাওয়া বন্ধ।পানি পিপাসা পেলে তিন্নির চোখের ঝরা পানি খাবি।একটু নোনতা লাগবে।কিন্তু কিছুই করার নেই।এটাই তোর শাস্তি।যা তিন্নির চোখের সামনে গ্লাস ধরে বসে থাক।”

এসব ভেবে জিসান মনে মনে হেসে দিলো।আজ তার বউ যেই সাজে এসেছিলো, সব ঠিক থাকলে আজ সে তিন্নির পারমিশন ছাড়াই একটা গভীর চুমু খেয়ে নিতো।এই মেয়ে আমাকে সারা জীবন এই ভাবেই অনুভূতির তাণ্ডবে ছিন্ন বিচ্ছিন্ন করে ছাড়বে।তবে আমিও আর ছার দিচ্ছি না।আমার অনুভূতির জালে ফাঁসাবো তাকে।সারা জীবনেও এই জাল ভেদ করতে পারবেনা।

এতো সব ভাবনার মাঝে রিয়াজ তাকে কল করলো।
জিসান কল রিসিভ করতেই রিয়াজ বললো

-“জিসান আমাকে বাঁচা।”

রিয়াজের এমন কথায় জিসান কিছুটা ভয় পেয়ে গেলো।সে বললো

-“কি হয়েছে রিয়াজ ভাই?”

-“তোর এই আধা পাগল ফ্রেন্ড প্রেগনেন্ট হওয়ার পর পুরা পাগল হয়ে গেছে।”

-“আবার কি করেছে?”

-“এই মেয়ে আমার মাথা পাগল করে দিয়েছে।রাত বিরাতে আমাকে জাগিয়ে বলে কিনা তার আইসক্রিম,চকলেট কেক খেতে মন চায়।আমি গভীর রাতে এই সব আনতে যাই।কিন্তু আজ বলে কিনা ফুচকা খাবে।তুই বল এই বারোটা বাজে আমি কোথা থেকে ফুচকা আনব? ওইসব নাহয় ডিপার্টমেন্ট স্টোরে পাওয়া যায়।কিন্তু ফুচকা?আমার কাল সকালে মিটিং।কিন্তু আমি ঘুমাবো কি করে।কিছু বললে বলে আমার না বাচ্চার খেতে মন চায়।তুই বল আমার মতো ACP কে কিনা ব্ল্যাকমেইল করে।ভীষণ প্যারায় আছি।”

জিসান হোহো করে হেসে দিল। এই দুইজন জীবনে শোধরাবে না। আচ্ছা তিন্নি যখন প্রেগনেন্ট হবে সেও কি এমন করবে?

-“রিয়াজ ভাই কিছু করার নাই। বউ আপনার সামলানোর দায়িত্ব আপনার। তবে আমি একটা হেল্প করতে পারি। অনলাইনে অর্ডার করেন। বৃষ্টির দিন তো একটু রিকুয়েস্ট করে দেখেন।”

-“আসলেই তো এটা তোমার মাথায় ছিল না?”

এমন সময় সূচনা রিয়াজের থেকে ফোন নিয়ে বলতে শুরু করলো

-“দেখলি জিসান আমাকে এই ব্যাটা খওয়ার খোটা দেয়। আমি যদি একবার বাবাকে জানাই তাহলে কালই আমাকে এখন থেকে নিয়ে যাবে।পড়ে কিন্তু এই বেটাই কেঁদে কেটে শেষ হয়ে যাবে।”

-“তোরা একটু কম ঝগড়া করতে পারিস না?”

-“ইসস নেকা!আর তোরা কি করিস?দুইজন তো দুই প্রান্তে থেকেও কোল্ড ওয়ার করিস।’

জিসান হেসে বললো

-“আজ থেকে কোনো ওয়ার হবে না।শুধু ভাব বিনিময় হবে।”

-“তাই নাকি?এই তুই কই?এই বৃষ্টির মধ্যে বাহিরে কি করিস?”

-“আমার পরীকে আনতে যাই।পরীটাকে কষ্ট দিয়ে ফেলেছি তো,তাই রাগ ভাঙাতে যাই।”

-“আরে মজনু।তলে তলে এতো দূর? তা তোর জেদি পরী যদি না আসে?”

-“তুলে নিয়ে আসবো।”

-“বেস্ট অফ লাক।যা মজনু লাইলীর কাছে যা।”

-“নিজের খেয়াল রাখিস।আর রিয়াজ ভাইকে বেশি করে টাইট দিস।আমাকে কয়দিন অনেক খাটিয়েছে।”

-“কি এই বেটার এতো সাহস? দারা এই বেটার খবর নিতেছি।”

জিসান কল কেটে আবার ড্রাইভিংয়ে মনোযোগ দিলো।আজ রাস্তাটা এতো লম্বা মনে হচ্ছে কেনো।ভীষণ অস্থির লাগছে। এক নজর তিন্নিকে না দেখা পর্যন্ত কিছুতেই এই অস্থিরতা কমবে না।

প্রায় সাড়ে বারোটার দিকে জিসান তিন্নির বাসায় পৌঁছলো।তিন্নির বাবা মাকে কি জবাব দিবে।অনেক দ্বিধা নিয়ে সে ডোরবেল চাপলো।কিছুক্ষণ পর দরজা খুললো তিন্নির বাবা।জিসান কি বলবে বুঝতে পারছেনা।একেতো তিন্নি তার বাসা থেকে চলে এসেছে,তার উপর এতো রাতে সে এখানে এসেছে।নিশ্চয়ই তার উপর অনেক রাগ করবেন।তিন্নি তার প্রাণ ।আর সে তার প্রাণটা কে কষ্ট দিয়েছ। বাবা যদি তাকে তিন্নির সাথে দেখা করতে না দেয়। তবে জিসানকে অবাক করে দিয়ে তিন্নির বাবা হাসিমুখে জিসানকে বাসার ভেতরে আসতে বললেন।

আনিসুর রহমান আর জিসান মুখোমুখি বসে আছে। দুজনের মধ্যে এই কিছুক্ষণ নিরবতা বিরাজ করল। আনিসুর রহমান বলতে শুরু করল

-“তিন্নিকে ঘিরে আমার পুরো পৃথিবী। মেয়েটাকে অনেক আদরে বড় করেছি আমি। সব সময় আগলে রাখতে চেয়েছি। কিন্তু শেষ অবধি পারিনি।”

কথাটা বলেই আনিসুর রহমান করে কেঁদে উঠলেন। জিসানের চোখ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে। আনিসুর রহমান আবার বলতে শুরু করলেন

-“একটা বাবার জন্য এটা কতটা কষ্টের সেটা আমি হয়তো তোমাকে বলে বোঝাতে পারবো না। মেয়েটাকে যখন হসপিটালে বিভৎস অবস্থায় দেখেছিলাম সেদিন আমার বুকটা জ্বলে পুড়ে শেষ হয়ে গেছিল। যে মেয়েটাকে কোনদিন আমি ফুলের টোকাও লাগতে দেই নি, সে মেয়েকে ক্ষতবিক্ষত অবস্থায় আমি হসপিটালে পড়ে থাকতে দেখেছি। আমার মেয়েটা ভেতর থেকে সেদিনই মরে গেছিল।যে মেয়ে প্রতিদিন আমার কোলে মাথা রেখে ঘুমাতো, সে আমার সাথে পুরো আট মাস কোন কথা অব্দি বলেনি। আমার মেয়েটার আরো ভেঙে পড়েছিল রাকিব এর কোন বিচার না পেয়ে। জানোয়ারটা অন্যায় করে বুক ফুলিয়ে আমার বাসার সামনে দিয়ে হেঁটে যেত। বাবা হয়ে কিভাবে সহ্য করি আমি সেটা? এই জানোয়ারগুলোকে নিজেই শাস্তি দিয়েছি।

তবে সবকিছুর মাঝে আমি তোমার সাথে অনেক বড় অন্যায় করে ফেলেছি। তিন্নির ফুপা যখন তোমার বিষয়ে আমাকে বলেছিল। বিশ্বাস করো বাবা, আমার মনে হয়েছিল একমাত্র তুমি পারবে আমার মেয়েটাকে সুখে রাখতে। তাকে প্রাপ্য মর্যাদা দিতে।আমি নিজেই সব বিষয় তোমাকে বলতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আমি তো বাবা, নিজের মেয়ের সুখের কথাটা আমার মাথায় আগে এসেছে। ভীষণ স্বার্থপর হয়ে গেছিলাম।তোমার মত ছেলেকে ঠকিয়ে আমি কোন মতে সস্তি পাচ্ছিলাম না।আর না আমার মেয়েটা।

তোমাদের বিয়ের পর থেকে তিন্নির মধ্যে আমি অনেক পরিবর্তন দেখতে পেয়েছি।মেয়েটা আমার আগের মতো হাসি খুশি থাকতে শুরু করেছে।আমি জানি আজ তিন্নি তোমাকে সব সত্যি জানতে গেছে।কিন্তু মেয়েটাকে যখন বাসায় ফিরে আসতে দেখলাম অনেকটা ভয় পেয়ে গেছিলাম।আর তিন্নির মুখ দেখে ভয়টা আরো প্রকট আকারে ধারণ করেছে।

আমাকে মাফ করে দিও।তোমার জীবনটা নষ্ট করার কোনো অধিকার আমার নেই।তুমি যা চাও,আমরা তাই মেনে নিবো।
এবার জিসান তিন্নির বাবার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে তার হাতে হাত রাখলো,আর বললো

-“বাবা আপনি কোনো ভুল করেননি।বরং আপনি আমাকে আপনার সবচাইতে দামী জিনিসটা গিফট করেছেন। এর মূল্যায়ন আমি সারা জীবন করবো।আর তিন্নির সাথে যা হয়েছে তাতে তিন্নির কোনো দোষ নেই।আর ওই জানোয়ারদের সাথে যা হয়েছে ভালো হয়েছে।সব বাবারা যদি আপনার মত তার মেয়েদের সাপোর্ট করতো,তবে কোনো মেয়ের জীবন ঝরে পড়তো না।
তিন্নিকে আমি সারা জীবন আগলে রাখতে চাই।হয়তো আপনার মতো তাকে ভালবাসতে পারবো না,তবে আমার সর্বস্ব দিয়ে তিন্নিকে ভালোবাসবো।”

তিন্নির বাবা জিসানকে জড়িয়ে ধরলেন।
তিন্নির রুমের সামনে দাড়িয়ে আছে জিসান।ভিতরে যেতে তার ভীষণ ভয় হচ্ছে।মনে মনে সে নিজেকেই গালি দিচ্ছে।একজন ACP হয়ে পিচ্চি মেয়েটা কে ভয় পাচ্ছে।আজ এই পিচ্চির কোন কথাই শুনবে না। সোজা তুলে নিয়ে যাবে।
তিন্নির রুমের দরজা লক করা ছিলো।তিন্নির বাবা নিজেই তাকে তিন্নির রুমের চাবি দিয়েছে।তিন্নি নাকি জিসানের বাসা থেকে ফিরে দরজা লক করে বসে আছে।

ধীরে ধীরে দরজা খুলে জিসান বেশ অবাক হলো। পুরো রুম অন্ধকার। বারান্দার কাচ টা খোলা তাই বাইরে ঠান্ডা হাওয়া রুমটাকে শীতল করে রেখেছে। জিসান তিন্নির রুম এর লাইট অন করে পিছনে তাকাতেই চমকে উঠলো। তিন্নি ফ্লোরে বসে হাঁটুতে মুখ গুজে আছে।রুমে কারো উপস্থিতি যেনো তাকে মোটেও বিচলিত করলনা।সে সেভাবে বসে থেকেই গম্ভীর কণ্ঠে বললো

-“পাপা প্লিজ চলে যাও।আমি কিছুক্ষন একা থাকতে চাই।”

তিন্নির কন্ঠে কি ছিলো তা জিসান জানেনা।তবে তার ভিতরটা কেপে উঠলো।তিন্নিকে সে কখনো এই রূপে দেখে নি।তিন্নিকে তো তার পাথর মনে হতো।যাকে কিছুতেই দমিয়ে রাখা যায়না।যাকে শত চেষ্টা করেও ভাঙা যায়না।জিসান নীরবে তিন্নির পাশে ফ্লোরে বসে পড়লো।পাশে করো উপস্থিতি টের পেয়ে তিন্নি মুখ তুলে বলতে শুরু করলো

-“পাপা আমি ঠিক………”

আর বলতে পারলোনা।জিসানকে দেখে থেমে গেলো।আর জিসান এক দৃষ্টিতে তিন্নির দিকে তাকিয়ে আছে।তিন্নি এখনো সেই সাজে।শুধু তিন্নির চোখ দুটো লাল হয়ে ফুলে আছে।অনেক কেঁদেছে মনে হয়।তিন্নির ফর্সা গাল দুটো লাল টমেটো হয়ে আছে।অতি সুন্দরী মেয়েরা বুজি কাদলে ভয়ংকর সুন্দর লাগে?এই মেয়েতো দেখা যায় কাদতে কাদতেও আমাকে ঘায়েল করতে পারে।তিন্নি সোজা হয়ে বসে কাপা কাপ কন্ঠে বললো

-“আ…আপনি এখানে?

জিসান গম্ভীর কণ্ঠে বললো
-“কেনো অন্য কাউকে আসা করছিলে?”

-“না তেমন কিছু না।”

তার পর কিছুক্ষণ নিরবতা ছেয়ে গেলো।জিসান গম্ভীর কণ্ঠে বললো

-“তোমাকে কি শাস্তি দেয়া যায় বলোতো?”

তিন্নি কিছুটা অস্থির হয়ে বলে
-“বিশ্বাস করুন,আমি আপনাকে ঠকাতে চাইনি।তবে আপনি যে শাস্তি দেবেন আমি তা মাথা পেতে নিবো।”

জিসান মনে মনে ভীষণ হাসি পাচ্ছে।এতো দিনে তিন্নিকে আজ্ঞাকারি বউ মনে হচ্ছে।তিন্নি আবার বলতে শুরু করলো

-“আমি আপনাকে অনেক বার সব বলতে চেয়েছিলাম।কিন্তু ভয়ে বলতে পারিনি।আমার অপরাধের যে শাস্তি মন চায় দিতে পারেন।তবে প্লিজ পাপাকে মাফ করে দিবেন।তিনি আমার সুখের কথা চিন্তা করে এমন করেছে।আমিও চাইনা আমার এই অন্ধকার জীবনের সাথে আপনাকে জড়াতে।আমার অপবিত্রতা আপনার পবিত্রতাকে কুলোসিত করুক আমি চাইনা।আপনাকে আমি খুব জলদি মুক্তি দিয়ে দিবো।ডিভোর্সের জন্য অ্যাপ……”
আর কিছুই বলতে পারলোনা তিন্নি।জিসান তাকে ততক্ষণে বুকে জড়িয়ে নিয়েছে।দুই জনের চোখ থেকে অশ্রু ঝরছে।জিসান কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বলে উঠলো

-“এই জীবনে কোনদিন তুমি আমার থেকে মুক্তি পাবেন।তোমার একটাই শাস্তি,আমার সাথে সারা জীবন থাকতে হবে।আর তুমি অপবিত্র কে বলেছে?আমার চোখে তুমি সবচাইতে পবিত্র আর শুভ্র নারী।যারা তোমার সাথে অন্যায় করেছে তারা অপবিত্র।তুমি কেনো নিজেকে ছোট করে দেখবে?”

-“আপনি প্লিজ আমাকে ছেড়ে দিন।এতেই সবার মঙ্গল।আমি চাইনা আমার মত একটা ধর্ষিতা মেয়ে আপনার সুন্দর জীবনে বাধা হয়ে দাঁড়াক।”

জিসান এবার তিন্নির চিবুকে হাত রেখে বললো

-“তুমি আমার স্ত্রী।আমার ভালোবাসা।তুমি ছাড়া আমার জীবন মোটেও সুন্দর না।তোমাকে ছাড়া আমি জীবন কল্পনাও করতে পারিনা।আমার কেউ নেই।এই পুরো পৃথিবীতে একমাত্র তুমিই আমার আপন।তুমি ছাড়া আমি নিঃস্ব।”

তিন্নির চোখের পানিতে জিসানের হাত ভিজে যাচ্ছে।তিন্নি কাদতে কাদতে বললো

-“আপনি আবেগের বসে এই ডিসিশন নিচ্ছেন। পরে আফসোস হবে।”

-“আমি মোটেও আবেগের বয়সে নেই।তিন্নি তোমার সাথে যা ঘটেছে তা একটা দুর্ঘটনা।যাতে তোমার কোনো হাত নেই।আর আমি শুধু তোমার শরীর না,গোটা তিন্নিকে পাগলের মতো ভালোবাসি।”

জিসান তিন্নির চোখের পানি মুছে দিয়ে বললো

-“তোমার চোখে অশ্রুধারা একটুও মানায় না।এই চোখে ভালোবাসা,অভিমান আর ক্রোধ মানায়।সেই রাগী চাহনি আমাকে ভৎস করে দেয়।”

এবার জিসান তিন্নির হাত ধরে বললো

-“এইযে হাত ধরেছি।আর কোনোদিন ছাড়বোনা।তুমি চাইলেই না।”

-“প্লিজ জিসান আপনি নিজের জীবনটাকে আবার সাজিয়ে নিন।”

জিসান এখন রাগ হচ্ছে।এই মেয়ে এতো জেদি কেনো।তাকে যে আমি পাগলের মত ভালোবাসি এটাকি বুঝে না।তবে জিসানের এই মুহূর্তে একটা কাজ করতে ইচ্ছা হচ্ছে।আজ সে তার ইচ্ছা পূরণ করবে।তার পর যা হবে দেখা যাবে।যা ভাবনা তাই কাজ।জিসান হঠাৎ করেই তিন্নির চুলে হাত গুজে গভীর চুমুতে লিপ্ত হলো।তিন্নি যেনো মুহূর্তেই কদতে ভুলে গেলো। হটাৎ এই আকর্ষিক হামলার ব্যাপারে সে মোটেও অবগত ছিলো না।তবে তার মনে অন্যরকম অনুভূতি হচ্ছে।মনে হয় নিশ্বাস নিতে ভুলে গেছে।আর জিসান যেনো বহুদিনের তৃষ্ণা মেটাচ্ছে।জিসান তিন্নিকে ছাড়তেই তিন্নি লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেললো।

জিসান মুচকি হেসে বললো

-“এইযে এখন তুমি পুরোটাই আমার।তিন্নি আমি তোমাকে আজ আমার সাথে নিয়ে যেতে চাই।আমি তোমাকে ছাড়া আর ওই বসাতে থাকতে পারছিনা।আমি চাই দিন শেষে বাসায় ফিরে যেনো আমার একা থাকতে না হয়।আমি আর একা টেবিলে বসে খেতে চাই না।আমার জীবনের প্রতিটা সকাল তোমার মুখ দেখে শুরু করতে চাই।তুমি কি আমার পাশে থাকবে?বিশ্বাস করো কোনোদিন তোমার অমর্যাদা করবো না।তুমি আমার জন্য ভীষণ মূল্যবান।”

তিন্নি আবারো কেঁদে দিলো আর জিসানকে ঝাপটে ধরলো।জিসান তিন্নির মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো

-“কেঁদে লাভ নেই।আজ আমি তোমাকে নিয়ে যাবই।দরকার হলে তুলে নিয়ে যাবো।”

কান্নার মাঝেও তিন্নি হালকা হেসে দিলো।জিসান তিন্নিকে কোলে তুলে নিলো।আর তিন্নি জিসানের বুকে মুখ গুজে রইলো।

আনিসুর রহমান অনেক্ষন যাবত ড্রয়িং রুমে বসে আছে।অবণী রহমান যখন আসে তখন জিসান তিন্নির রুমে প্রবেশ করছিলো।তিনি স্বামীকে বললেন

-“ব্যাপার কি বলোতো?জিসান এতো রাতে?ওদের মধ্যে কি আবার জামেলা হয়েছে।তুমি প্লিজ তিন্নিকে বুজাও।আর তিন্নি যেনো জিসানকে কিছু না বলে।আমি আমার মেয়েকে সুখী দেখতে চাই।”

-“জিসান সব জেনে গেছে অবনী।”

-“কি বলছো তুমি?তোমার জন্য আমার মেয়ের সংসার ভেঙে গেলে কোনোদিন ক্ষমা করবনা?”

কথাটা বলেই তিনি কেঁদে দিলেন।আনিসুর রহমান স্ত্রীর মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন

-“আমাদের মেয়েকে আর কোনো কষ্ট ছুঁতে পারবেনা। এখন তো আমার মেয়ের সুখের সময় শুরু।বলেছিলাম না জিসান কোনোদিন আমার মেয়েকে অসম্মান করবে না?”

-“তুমি সত্যি বলছো?”

-“হুম।”

জিসান তিন্নিকে কোলে নিয়ে ড্রয়িং রুমে আসতেই তিন্নির মা বাবাকে দেখতে পেলো।তার ভীষণ লজ্জা লাগছে।তিন্নি এখনো চোখ বন্ধ করে তার বুকে মুখ গুজে আছে।জিসান ভাবছে আজ লজ্জা পেলে আর বউ নিয়ে যেতে পারবে না।তাই আমতা আমতা করে বললো

-“বাবা আমি তিন্নিকে নিয়ে যাচ্ছি।”

তিন্নি এক হাতে জিসানের টিশার্ট খামচে ধরলো।আসলে সেও লজ্জায় মুখ তুলতে পড়ছে না।
আনিসুর রহমান হেসে বললো

-“তোমার বউ,যা খুশি করো।”

জিসান যেনো আরো লজ্জা পেলো।দ্রুত বাসা থেকে বের হয়ে তিন্নিকে গাড়িতে বসিয়ে দিলো।গাড়ি চলতে শুরু করল।এই নীরব রাতের শহরে একজোড়া দম্পতি নতুন জীবনকে আহ্বান জানাচ্ছে। সুখ তাদের হাতছানি দিয়ে ডাকছে।
গভীর রাতে তারা জিসানের বাসায় পৌঁছালো।জিসান তিন্নিকে আবারো কোলে তুলে নিলো।তারা বাসায় পৌঁছে ফ্রেশ হয়ে নিলো।তিন্নি ওয়াস রুম থেকে বের হতেই জিসান বললো

-“জানো তোমাকে শাড়িতে দেখার ভীষণ ইচ্ছা ছিলো।”

-“আমি জানি।”

-“তার মানে এতদিন জেনেও ইচ্ছা করে পড়তে না।”

তিন্নি ভাবলেশহীন ভাবে বললো

-“আপনি কন্ট্রোল লেস হয়ে পড়তেন তাই।”

-“আমি কন্ট্রোল লেস হতাম তাই,নাকি আমার মুগ্ধ চাহুনি দেখে তুমি কন্ট্রোল লেস হয়ে পড়তে?”

-“আপনি বেশি বুঝেন।আমার ক্ষিধা লেগেছে।”

-“একটু বসো।আমি আমি আসছি।”

অনেক ক্ষন পরও জিসানকে আসতে না দেখে তিন্নি কিচেনের দিকে গেলো।জিসান চুলায় কিছু একটা করছে।তিন্নি বললো

-“কি করছেন?”

-“ও! তোমার জন্য পিৎজা বানাচ্ছি।”

-“আপনি পিৎজাও বানাতে পারেন?”

_”তোমার জামাইর কোয়ালিটি আছে।সব পারে।”

তারা পিৎজা শেষ করতেই জিসান বললো
কফি খেতে মন চাইছে।তিন্নি হেসে বললো

-“আপনি রুমে জান,আমি আনছি।”

জিসান রুমে আসতেই সূচনা কল করলো।
জিসান হেলো বলতেই সূচনা বললো

-“কীরে মজনু,খুব খুশি মনে হচ্ছে।”

-“লাইলিকে তুলে নিয়ে আসছি।”

-“একদম ভালো কাজ করছিস।যা এবার নিজের ভার্জিনিটি লুস করে ফেল।আর কত ভার্জিন থাকবি? বুড়া হইলে এই ভার্জিনিটি দিয়ে কি করবি?”

-“তুই জীবনেও ঠিক হবিনা।এই অবস্থায় এতো রাত জেগে থাকা ঠিক না।”

-“জ্ঞান দিবি না তো। ওই বেটাও তাই করে।আমার ঘুম নাই কিন্তু ওই ব্যাটা ঠিক ঘুমাইতেছে।যায় হোক তুই তোর লাইলীর কাছে যা।”

-“আচ্ছা বায়।”

তিন্নি রুমে এসে দেখে জিসান বারান্দায় বসে আছে।তিন্নি কফি দিতেই জিসান তিন্নিকে নিজের কোলে বসিয়ে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলো।আর বললো

-“আজ আমরা সারা রাত এখানে মেঘবিলাস করবো”

তিন্নি কপাল কুঁচকে বললো

-“এইটা আবার কি জিনিস?”

জিসান হেসে বললো

-“রাতে বসে চন্দ্র উপভোগ করাকে চন্দ্রবিলাস বলে।তবে আজ আকাশে চাঁদ নেই।আছে শুধু রাশি রাশি মেঘ।তাই আমরা মেঘবিলাস করবো।জিসানের কথায় তিন্নি খিল খিল করে হেসে দেয়।আর জিসান মুগ্ধ নয়নে তার মেঘবিলাসী কে দেখতে থাকে।যে হাসি জুড়ে আছে শুধু মুগ্ধতা।

সমাপ্ত।