#মেন্টাল_হাসবেন্ড
[দ্বিতীয় পর্ব]
লেখক – শহীদ উল্লাহ সবুজ
ওয়াশরুমের ভিতর থেকে তূর্যর আচমকা চিৎকার শুনে তড়িঘড়ি করে ইরা ওয়াশরুমের সামনে গিয়ে বলল,
— কি হইছে আপনার?
তূর্য এবার দরজা খুলে বলল,
— দূর তোমাদের ওয়াশরুম ভালোনা, আমি বাসায় গিয়ে করব।
— কেন আমাদের ওয়াশরুমের কি হইছে? কোনো সমস্যা?
— অনেক সমস্যা তোমাদের ওয়াশরুমে কমোড নেই। ভিতরে চেয়ার দিয়ে কি কোরো তোমরা?
ইরা একটা মুচকি হাসি দিয়ে বলল – এটাই কমোড। এটাকে হাই কমোড বলে।
— আমি এটাতে পারবোনা।
— তাহলে বাসা অব্দি কীভাবে যাবেন? আপনার না খুব জোরে চাপ দিয়েছে।
— সমস্যা নাই। আচ্ছা আমি যাই বাবাকে নিয়ে তাড়াতাড়ি বাসায় যেতে হবে।
ইরা মুচকি হাসি দিয়ে বলল — ঠিক আছে।
তারপর ইরা তূর্যকে নিয়ে বাহিরে গেলো। ছেলে ভিতরে গিয়ে কি গন্ডগোল করলো এটা নিয়ে রায়হান সাহেব চিন্তিত হয়ে আছে। তূর্য তার বাবার কাছে গিয়ে বলল,
— বাবা বাসায় চলো তাড়াতাড়ি।
ছেলের কথা শুনে রায়হান সাহেব চিন্তিত চোখে ইরার দিকে তাকালো। তারপর ইরার বাবাকে বলল,
— আজ তাহলে আমরা উঠি। আমরা ঘটককে আমাদের ব্যাপারে জানিয়ে দেবো। আপনারাও জানিয়ে দিয়েন।
এই কথা বলে বাড়ির দিকে রওনা দিলেন রায়হান সাহেব। ওনারা যাওয়ার পরে ইরার বাবা ইরাকে বলল,
— ইরা ছেলেটাকে আমার একদম পছন্দ হয়নি। কেমন অদ্ভুত ব্যাবহার ছেলেটার।
— বাবা ছেলেটা সহজ সরল কিন্তু ছেলেতো খারাপ না। একটু বোকা আছে। সমস্যা নেই।
— কিহ? তোর এই ছেলেকে পছন্দ হয়েছে?
ইরা মাথা নিচু করে রাখল লজ্জায়। তখন ইরার বাবা বুঝতে পারে ইরার ছেলেকে পছন্দ হয়েছে। কিন্তু তার ছেলেকে তেমন একটা পছন্দ হয়নি। কি আর করার মেয়ের যখন পছন্দ হলো উনিও আর অমত করতে পারলোনা। অন্যদিকে রায়হান সাহেব তূর্যকে নিয়ে বাসায় চলে গেলো। তূর্যর আম্মু এসে বলল,
— কিগো এবার কি ছেলে কোনো ঝামেলা করছে নাকি?
— আমার সামনে তো করেনি। মেয়ের সাথে আলাদা কি কথা বলছে তাও জানিনা। ওখান থেকে আশার পরেই বাসায় আশার জন্য তাড়াহুড়ো করছিলো। মনে হয় এবারের বিয়ে টাও হবে না।
— আচ্ছা দেখেন কি হয়। তূর্য কই?
— ওতো নিজের রুমের দিকে দৌড় দিল।
কিছুক্ষণ পরে তূর্য নিজের রুম থেকে বের হয়ে আসতেই আমেনা বেগম বলল — তুই আবার ওখানে কোনো ঝামেলা করিস নাই তো?
— না। কিন্তু ওদের ওয়াশরুম ভালোনা। আমি ঐ বাড়িতে বিয়ে করব না।
— কি হইছে ওয়াশরুমে?
— ওদের ওখানে কমোড নেই। একটা চেয়ারের মতো কি যেনো ছিল। ওটার নাম নাকি হাই কমোড।
— ওহ আচ্ছা। ঠিকি তো বলেছে। আচ্ছা যাইহোক বাদ দে। তুই রুমে যা।
দেখতে দেখতে রাত হয়ে গেলো। এমন সময় রায়হান সাহেবের নাম্বারে ঘটক কল দিলেন।
— হ্যালো ঘটক সাহেব।
— রায়হান সাহেব মিষ্টি খাওয়ান। মেয়ের বাড়ি থেকে কল আসছে ওড়না রাজি আছে।
রায়হান সাহেবের মুখে একটা হাসি ফুটে ওঠে। মেয়েটাও খুব পছন্দ হয়েছে। এর পর বিয়ের দিন তারিখ ঠিক হয়ে গেলো। আগামী শুক্রবার বিয়ে। বিয়ের কেনাকাটা শুরু হয়ে গেলো। ধুমধাম করে বিয়ের আয়োজন করছেন রায়হান সাহেব। এক মাত্র ছেলে বলে কথা। কোনো কিছুর কমতি রাখছে না। তূর্য তার সব বন্ধুদের দাওয়াত করলো। দেখতে দেখতে বিয়ে হয়ে গেলো। বউ নিয়ে বাসায় এলো তূর্য। আজ তাদের বাসর রাত। বধু সাজে বাসর ঘরে বসে আছে ইরা। অপেক্ষা করছে তূর্যর জন্য। কিন্তু তূর্য এখনো বাসর ঘরে প্রবেশ করেনি। সে আড্ডা দিচ্ছে বন্ধুদের সাথে। তূর্যর বন্ধু বলল,
— তূর্য অনেক রাত হয়েছে এবার তুই রুমে যা। আজকে তোর বাসর রাত। আজকে কিন্তু তোকে বিড়াল মারতে হবে।
— বাসর রাতে বিড়াল মারতে হয়?
— হ্যাঁ বিড়াল মারতে না পারলে তুই কীসের পুরুষ। বিড়াল মারতেই হবে।
— আচ্ছা ঠিক আছে।
— হুম এখন তাহলে চল।
এবার বন্ধুরা তূর্যকে নিয়ে বাসর ঘরের সামনে এলো। তারপর তূর্যকে ভিতরে ঢুকিয়ে দিয়ে তারা বের হয়ে চলে এলো। তূর্য খাটের সামনে যেতেই ইরা উঠে এসে তূর্যর পা ধরে সালাম করলো। তারপর ইরা আবার খাটের উপরে গিয়ে বসে। ইরা বড় একটা ঘোমটা টেনে বসে আছে। তূর্য খাটের উপরে বসে বলল,
— তুমি যে এতো বড় ঘোমটা দিয়ে আছো তোমার কি গরম লাগছেনা। আমার তো এমনিতেই খুব গরম লাগছে।
ইরা কোনো কথা বললনা।
তখন তূর্য বলল — ওহ আচ্ছা আমি তো টিবিতে দেখেছি নায়ক এসে নাইকার ঘোমটা খুলে দেয়। আচ্ছা আমিও খুলে দিচ্ছি।
এই কথা বলে তূর্য ইরার ঘোমটা খুলে দিল। ইরাকে খুন সুন্দর লাগছে আজ। কিন্তু তূর্য ইরার কোনো প্রশংসা না করে ইরাকে বলল,
— আজ তো আমাদের বাসর রাত তাইনা? আমার বন্ধুরা বলছে আজকে রাতে নাকি বিড়াল মারতে হবে। বিড়াল না পারলে আমি নাকি পুরুষ হবোনা। কিন্তু। এখন আমি বিড়াল কোথায় পাবো? আমাকে একটা হেল্প করবেন?
— কি হেল্প?
— চলুন আমি আর তুমি এক সাথে বিড়াল খুঁজি।
তূর্যর কথা শুনে ইরা একটা মুচকি হাসি দিয়ে বলল,
— আপনি যে বিড়াল ভাবছেন সেই বিড়ালের কথা বলেনি।
— দূর তুমি কিছু জানোনা। চলো আমার সাথে বিড়াল খুঁজতে।
এই কথা বলে তূর্য ইরার হাত ধরে খাট থেকে নামাল। তারপর পুরু রুমে তূর্য বিড়াল খুঁজতে শুরু করে। কোথাও কোনো বিড়াল না পেয়ে হতাশ হয়ে তূর্য ফ্লোরের উপরে বসে পড়ে।
— কি হলো আপনার?
— বিড়াল তো পেলাম না। এখন কি হবে?
— আচ্ছা কাল মারতে পারবেন। অনেক রাত হইছে ঘুমিয়ে পড়ুন।
— ওয়েট, ওয়েট, তুমি কি আমার রুমে ঘুমাবে নাকি?
— হ্যাঁ। আজ থেকে আপনি আর আমি এক সাথে থাকবো।
— নাহহহহহহ।
— কি হলো?
— আমি কোনো মেয়ের সাথে ঘুমাতে পারবোনা। আমার আম্মু আমাকে মেয়েদের সাথে মিশতে মানা করছে।
— আরে আমি তো আপনার স্ত্রী। আমাদের তো বিয়ে হয়েছে।
— বিয়ে হলে কি হইছে হ্যাঁ? আপনি একটা মেয়ে মানুষ আমি একটা ছেলে মানুষ। ছেলে আর মেয়ে এক সাথে থাকতে পারেনা।
ইরা কি বলবে বুঝতে পারছেনা। এবার ইরা উদাহরণ দিয়ে বলল,
— আচ্ছা আপনার বাবা আর মা কি আলাদা রুমে থাকে?
— না তো।
— তাহলে আমরা কেন আলাদা থাকবো? তাদের ও বিয়ে হয়েছে আমাদের ও তো হয়েছে।
— তাদের বয়স হয়েছে তাই এক সাথে থাকে। আমাদের কি এখনো বয়স হয়েছে?
এ কোন পাগলের পাল্লায় পড়লাম?( মনে মনে বলল ইরা)
— ভাই দেখেন অনেক রাত হয়েছে আমার ঘুম পাচ্ছে।
— ছিহ! জামাইকে কেউ ভাই ডাকে?
— সরি। আচ্ছা আসেন ঘুমাই।
— আমি আপনার সাথে ঘুমাতে পারবোনা। রুমের দরজা ও বন্ধ। আপনি নিচে ঘুমান আমি খাটে ঘুমব।
— আমি নিচে ঘুমাতে পারিনা।
— আচ্ছা ঠিক আছে। খাটে ঘুমান। কিন্তু আমাদের মাঝে একটা কোলবালিশ থাকবে। আমি কোলবালিশের ওদিকে যাবোনা আপনিও আসবেন না ঠিক আছে?
— একবার আপনি একবার তুমি? তুমি করেই বলুন সমস্যা নেই। আর আপনি যেটা বলছেন সেটাই হবে।
এবার তাদের মাঝে একটা কোলবালিশ রেখে ঘুমিয়ে পড়ে দু’জনে। সকালে বুকের উপর ভারি কিছু অনুভব করতেই চোখ খুলে তাকাল তূর্য। তূর্য চোখ খুলতেই দেখে ইরা তূর্যকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছে। তূর্যর বুকে ইরা মাথা রেখে ঘুমাচ্ছে। ইটা দেখে তূর্য একটা চিৎকার দিয়ে ইরাকে সরিয়ে দিলো।
চলবে?