মেহেরজান পর্ব-১৪+১৫

0
6

#মেহেরজান
লেখনীতে- #সোহামণি
পর্ব ১৪

নুজাইশ বাড়িতে ফিরতেই বাড়িতে প্রচুর লোকজন দেখতে পেয়ে মেজাজ আরও বেশি খারাপ হয়ে যায়।আর কয়েকদিন পর নুসফারের বিয়ে।এজন্যই বাড়িটা এত গমগম করছে লোক সমাগমে।নুজাইশ সিড়ি বেয়ে ওপরে উঠে দেখে নুসফার একটি মেয়ের সাথে কথা বলছে।নুজাইশের মনে হলো মেয়েটিকে সে চেনে।ভালোভাবে খেয়াল করতেই মনে পড়ে মেয়েটি মৌরিনের বান্ধবী।নুজাইশ খুব একটা গুরুত্ব না দিয়েই নিজের রুমে চলে যায়।নুসফারও সেসব খেয়াল করে না খুব একটা।সে তো ব্যস্ত মিলির সাথে কথা বলতে।মিলি নুসফারের হবু ননদ বলা চলে।নুসফারের হবু স্বামী নিলয়ের চাচাতো বোন।বরপক্ষ হতে একটি চিঠিবাহকের কাজেই তাকে নিযুক্ত করা হয়েছে।

“চলো মিলি আমার রুমে চলো।” হাসিমুখে কথাটি বলে নুসফার।মিলিও রাজি হয়। নুসফারের রুমে আসতেই সামনের দেয়ালে টাঙানো একটি ছবিতে চোখ আটকে যায় মিলির।পরিচিত মানুষটিকে দেখে ঠোঁটে হাসি ফোটার আগেই আড়াল করে নেয়। তবে নুজাইশ স্যারই কি নুসফারের বোন? নামেও মিল আছে।মিলি নুসফারকে দ্বিধা নিয়ে ছবির দিকে আঙ্গুল তুলে জিজ্ঞাসা করলো,
“ইনি কি তোমার ভাই নুসফার আপু?”

নুসফার ছবির দিকে তাকিয়ে বললো,
“হ্যা আমার ভাই, নুজাইশ।তুমি চেনো না?”

মিলি সত্যটা কথাটাই বললো নুসফারকে,
“উনি আমাদের ডিপার্টমেন্টের প্রফেসর।”

নুসফার কিছুটা হাসলো।নুসফার আর নুজাইশের হাসিটা একই, সুন্দর।তাদের মাঝে কিছুক্ষণ আলাপ আলোচনা চললো। এক ঘন্টার মতো সময় কাটিয়ে মিলি হাতঘড়িতে সময় দেখে বলে,
“আমায় যেতে হবে নুসফার আপু।তোমাকে শুধু এই চিঠিটা দিতে এসেছিলাম অথচ দেখো দেড় ঘন্টার ওপরে হয়ে গেলাম। যেতে হবে।”

নুসফারও আর মানা করে না।মিলি আর নুসফার বেরোতেই সামনে নুজাইশকে তাড়াহুড়ো করে যেতে দেখতে পায় তারা। নুসফার ভাইকে চেচিয়ে ডেকে উঠলো। পরিচিত আওয়াজে ডাক শুনে পেছনে ফিরে নুজাইশ।মিলি আর নুসফার কাছে যায়। মিলি সালাম জানায় নুজাইশকে।নুজাইশের চোখদুটো খুব লাল দেখাচ্ছে।নুসফার কপাল কুঁচকায়।কিছু হয়েছে কি নুজাইশের?এমন এলোমেলো লাগছে কেন?নুজাইশ মিলির সালামের উত্তর দেয় ভাঙ্গা গলায়।মিলিরও কিছুটা সন্দেহ হয়।পার্সোনাল কিছু বিষয় নাকি অসুস্থ?কিছুই জিজ্ঞাসা করে না মিলি। নুসফার কপাল কুঁচকে জিজ্ঞাসা করলো,
“কোথায় যাচ্ছিস?”

নুজাইশ চোখ নামিয়ে উত্তর দেয়,
“বাইরে যাচ্ছি।কাজ আছে।”

এবার সন্দেহ যেনো একটু বেশিই প্রখর হয়। নুসফার কখনো কিছু জিজ্ঞাসা করলে নুজাইশ কোনোদিনই সোজা উত্তর দেয় না।আজ এমন কি হলো যে ছেলেটা একেবারেই শান্ত।নুজাইশ অনেক চঞ্চল স্বভাবের সাথে খুবই নরম মনেরও।নিশ্চিত কোনো বিষয়ে ছেলেটা কষ্ট পেয়েছে।মিলির সামনে আপাতত এসব কিছুই জিজ্ঞাসা করে না নুসফার।শুধু ছোট্ট একটা শ্বাস ফেলে বললো,
“মিলি নিলয়ের চাচাতো বোন।ওকে একটু বাড়ি পৌঁছে দিয়ে আয়।”

নুজাইশ মানা করতে চেয়েও ভদ্রতার খাতিরে মানা করতে পারে না।আজকে এমন কিছু হলো যে, নুজাইশ বিন্দুমাত্র বিস্মিতও হলো না তারই স্টুডেন্ট মিলি নুসফারের হবু ননদ।নুজাইশ চোখ নামিয়েই মিলিকে বললো,
“চলো।”

মিলি তো ভীষণ খুশি।এমনিতেও নুজাইশ স্যারকে সে পছন্দ করে।আজ প্রায় অনেকদিন হলো।নুসফারকে বিদায় জানিয়ে নুজাইশের পিছু পিছু চললো মিলি। নুজাইশ গাড়ি এনে মিলির সামনে দাড় করাতেই মিলিও উঠে পড়লো গাড়িতে।আশেপাশে মানুষজন তাদের দিকেই তাকিয়ে আছে। মিলির মনে শুধু লাড্ডুই ফুটছে অবশ্য নুজাইশ স্যারের জন্য চিন্তাও হচ্ছে।নুজাইশ চুপচাপ গাড়ি চালাচ্ছে।নিলয়দের বাড়িটা সে চেনে।মিলি সংকোচবোধ করছিলো কিছু জিজ্ঞাসা করতে।তবে মুখে আটকে রাখতে না পেরে বলেই ফেলে,
“স্যার আপনার কি কিছু হয়েছে?”

নুজাইশ শুনতে পায় মিলির কথাটা।তবে আপাতত উত্তর দেওয়ার মুডেও নেই।বহু কষ্টে গম্ভীরভাবে আওড়ালো,
“কিছু না।”

মিলিও আর কিছু বলে না।সেও চুপ হয়ে যায়।বাড়ির সামনে গাড়ি থামাতেই মিলিও নেমে যায়।তার মনে হলো যেন খুব তাড়াতাড়িই আজ বাড়ি পৌঁছালো।আরেকটু দেরি হলে কি খুব খারাপ হতো নাকি? মিলি নুজাইশকে ধন্যবাদ জানায়।নুজাইশ শুধু মাথা নাড়িয়েই গাড়ি ঘুরিয়ে কোথাও চলে যায়।মিলি পলক না ফেলে সেদিকে তাকিয়ে থাকে যতক্ষণ না পর্যন্ত দৃষ্টিসীমার বাইরে না যায়।

নুজাইশ ক্লাবে এসেছে।সাথে আছে তুষারও। একের পর এক বিয়ারের গ্লাস শেষ করছে। তুষার বাধা দিলেও শুনছে না।তুষার এখনও বুঝতে পারছে না এই ছেলের হয়েছে—টা কি? এবার একটু দম নিয়েই জিজ্ঞাসা করে,
“তোর হয়েছে—টা কি?”

নুজাইশ গ্লাসে শেষ চুমুক দেয়,
“প্রেমও হলো না, আর না ওপাশ হতে পছন্দ তার আগেই ছ্যাকা।”
“কি বলছিস এসব?”
“মেহরান আমার সবচেয়ে কাছে বন্ধু। আমি সবসময়ই ওর ভালো চাই রে তুষার।তবে আজ কিছুটা হলেও হিংসা হচ্ছে।”
“কি বা* বলছিস কিছুই বুঝতেছি না। বুঝিয়ে বল শালা।”

নুজাইশ কষ্টের মাঝেও হাসে।তুষার জড়ালো ভাবে কপাল কুচকায়।নুজাইশ আরেকটি গ্লাস হাতে নিয়ে বলা শুরু করে,
“মৌরিনের কথা বলেছিলাম না তোদের ওইদিন?ওই মৌরিনই হলো মেহরানের বোন।”

গ্লাসে চুমুক দিয়ে পুরোটাই শেষ করে নুজাইশ।চোখ দুটো এখন আরও বেশি লালচে হয়ে গেছে।চুলগুলো কপালে পড়ে আছে এলোমেলোভাবে।নুজাইশ সবসময়ই পরিপাটি থাকতে পছন্দ করে। কিন্তু আজ তাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে ছেলেটা ভালো নেই।তুষার কপালে হাত দেয়,
“কি বলিস?এটা কিভাবে কি?তুই জানতি না?”

নুজাইশ ছোট্ট করে শুধায়,
“উহু।”

তুষার বিষয়টা বুঝতে পারছে।এখানে আসলে দোষটাও কারোরই না।ঘটনার শিকার নুজাইশ।তুষার কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না।তবুও কিছু কথা গুছিয়ে বলে,
“রাউশিকে নিয়ে মেহরান খুবই সিরিয়াস। সেদিন দেখলি তো কিভাবে মদ্যপান করলো সবার সাথে।অথচ মেহরান কখনও এমন কিছু করে নি।রাউশির বিষয়েই মেহরান সেদিন এতো আপসেট ছিলো।এজ মাই ওপিনিয়ন আই থিংক মেহরান ইজ আ ফারফেক্ট পার্সন ফর রাউশি।”

নুজাইশ চোখ ছোট ছোট করে তুষারের দিকে তাকাতেই তুষার বলে,
“আমি বলছিনা যে তুই রাউশির জন্য আনপারফেক্ট।তবে তুই হয়তো জানিস না রাউশি ডিভোর্সি।ওর তিনবছর আগেই বিয়ে হয়েছিলো ওর মামাতো ভাইয়ের সাথে।কিন্তু ছেলেটা নাকি রাউশিকে পছন্দ করতো না বলে বিয়ের কিছুসময় পরই চলে যায়।এইতো গতমাসে ফিরেছে আরেকটি বউ নিয়ে।রাউশির বাবা চাচারা ভীষণ ক্ষেপে গিয়েছিলো।মেহরানের বাবা মাহবুব আঙ্কেলের জন্যই তো রাউশির মামারা ছাড় পেয়েছে।ডিভোর্সটা করিয়েই ঢাকায় এসেছে রাউশিরা।বলতে চাইনি তবুও বললাম।”

নুজাইশ গ্লাসটা টেবিলের ওপর রেখে রুষ্ট হয়ে বললো,
“তাতে কি যায় আসে?মৌরিন হাজারটা বিয়ে করলেও ওকে আমার ভালো লাগবে।

ফোস করে শ্বাস ফেলে তুষার।বুঝলো নুজাইশও কিছুটা সিরিয়াস।কিছুসময় নিরবতায় কেটে গেলো।প্রথম কথা নুজাইশই বললো,
“মৌরিন মেয়েটা ভীষণ ভদ্র আর আত্মসম্মানবোধ সেটা আকাশচুম্বী।পছন্দ করার অন্যতম কারণ এটা ধরলেও কোনো সন্দেহ নেই।মেহরানকে জিজ্ঞাসা করলেও হয়তো এই একই কথা বলবে দেখিস। মেহরানকে কিছুটা হলেও হিংসে হচ্ছে আফটার অল মৌরিনের মতো একজন নারীকে ভবিষ্যতে পাবে ও।আবার খুশিও হচ্ছে দুজনকে নিয়ে।এই সময়ে এসে এসব কথা বলতে একদিকে যেমন গলা ধরে আসছে অন্যদিকে বুকের ভেতর প্রশান্তিও হচ্ছে।ভাগ্যিস বেশি গভীরে চলে যায় নি তার আগেই সত্যিটা জানলাম।নয়তো পাগলামী বেড়ে যেতো আমার এতে মেহরান আর আমার বন্ধুত্বেই ফাটল ধরতো।এমনটা কখনোই হতে দেওয়া যাবে না।আগামীটা আরও বেশি উজ্জ্বল এবং সুন্দর হোক দুজনের এই মনষ্কামনা করি।ভালো থাকুক তারা।তবে আমার পক্ষে মৌরিনকে ভোলা সম্ভব নয়।অধ্যায়ের পাতায় একবার নাম লিখিয়েছে যেহেতু সেটা মুছে ফেলা সম্ভব নয়।”

উঠে দাঁড়ায় নুজাইশ।হয়তো চলে যাবে।যাওয়ার আগে বলে,
“কারণ লেখাটা সাধারণ ছিলো না সযত্নে খোদাই করে লেখা ছিলো।”

.

বাবার কবরের পাশে অনেক্ষণ বসে আছে আয়াশ।তার থেকে কিছুটা দূরেই দাড়িয়ে আছে অনিমা।তাও আবার হাতে ফোন নিয়ে,ফোন স্ক্রল করছে।ভাবটা এমন যেন কিছুই হয় নি।আয়াশের রাগ উঠে যায়। উঠে গিয়ে ফোন কেড়ে নিয়ে দূরে ছুড়ে মারে। অনিমাকে চেঁচিয়ে বলে,
“তোমার কি মনুষ্যত্ব লোপ পেয়েছে?কোথায় কি করছো?একটু দয়ামায়া নেই?খারাপ লাগছে না?”

অনিমা উলটো দ্বিগুণ রাগ দেখায়,
“খারাপ লাগার কি আছে?মরেছে তোমার বাপ।আমার তো নয়।”

আয়াশ সজোরে একটি চড় মেরে বসে অনিমার গালে।অনিমা গালে হাত দিয়ে আয়াশকে দেখে।আয়াশের চোখ দুটো রাগে লাল হয়ে আছে।ঘন ঘন শ্বাস নিচ্ছে।অনিমাও ভীষণ রেগে যায়।চেঁচিয়ে বলে,
“আমাকে তুমি চড় মারলে?”
“মেরেছি দরকার হলে আরও মারবো ”

আমেনা বেগম দৌঁড়ে এসে ছেলেকে সড়ান।অনিমার হাত ধরে বলেন,
“তুমি বাড়িতে যাও মা।”
“বাড়িতে যাব মানে?আপনার ছেলে আমায় চড় মেরেছে।”
“মা একটু বোঝার চেষ্টা করো আয়াশের মাথা ঠিক নেই।তুমি বাসায় যাও।আমরা একটুপর আসছি।”

আয়াশ মাথায় হাত দিয়ে দাড়িয়ে আছে। রাউশির মুখটা মনে পড়ছে হঠাৎ।চোখ লাল করে দাড়িয়েছিলো তার সম্মুখে।আড়চোখে একবার তাকিয়েছিলো চোখ তুলে তাকানোর সাহসটুকু ছিলো না।আয়াশ ভেবেছিলো খান পরিবারের কেউ আসবে না।অথচ কয়েকজন বাদে বাড়ির কর্তারাসহ রূপা বেগম,রাউশি আর মেহরানও এসেছিলো।তাদের কারোর সাথেই একটা কথাও বলে নি কেউ।শুধু জানাযা আর দাফনের কাজে নিজেদের নিয়োজিত রেখেছে তারপর রাউশি একবার কবরের পাশে বসে হাত বুলিয়ে সবাই চলে গিয়েছে। আয়াশ মুখ ফুটে ফুপুকে বলতেও পারেনি কোনো কথা আর না আমেনা বেগম কিছু বলতে পেরেছেন।উলটো চমকটাই যেন বেশি ছিলো।আয়াশের হঠাৎ আজ কিছুটা আফসোস হচ্ছে রাউশির কথা মনে করে।

‘Pick up the phone Raushi, Amar tor shathe Joruri kotha ache.’

মেসেজটার দিকেই তাকিয়ে আছে রাউশি। প্রায় দশমিনিট হলো মেসেজটা এসেছে মেহরানের থেকে।তবে রাউশি খাটের পাশে নিচে ফ্লোরে বসে খাটের ওপর মাথা ঠেকিয়ে বসে আছে।চোখমুখ ফোলাফোলা।দরজায় কিছুক্ষণ আগে বারবার নক করছিলেন উর্মিলা বেগম।রাউশি রেসপন্স করে নি। কিছুটা একা সময় কাটাতে চায় সে।বাইরে থেকে পর্দা উড়িয়ে ঠান্ডা হাওয়া আসছে। বৃষ্টি হবে হয়তো।ফোনের স্ক্রিনে চোখ রাখে রাউশি রাত ১২টা বেজে চৌদ্দ মিনিট।এইতো আধঘণ্টা আগেই পৌঁছেছে বাসায় তারা।আসার পর থেকেই দরজা লাগিয়ে বসে আছে।রাউশির বাবারা যেতে চেয়েছিলেন শুধু তবে রাউশির জোরাজুরিতে রূপা বেগমসহ মাহবুব খানও গিয়েছেন রাজশাহী।আজ সকাল ৯টার দিকে রায়হান সিকদারের জানাযা শেষ হয়ে দাফন করা হয়েছে।রাউশি সাদা কাপড়ে মোড়ানো মামার লাশটার দিকেই পলকহীন তাকিয়ে ছিলো শুধু। ভাবতেই চোখ বেয়ে পানির ফোটা গড়িয়ে পড়ছে।কবরে একবার হাত বুলিয়ে দিয়েছে রাউশি।তারপরই ঢাকায় চলে এসেছে আবারও।বাবার চেয়েও বেশি স্নেহ করতেন রায়হান সিকদার।সেই মানুষটাই নাকি আর নেই দুনিয়ায়।রাউশি চোখ বুজে থাকে কিছুক্ষণ।আবারও কল আসে তার ফোনে। কিন্তু রাউশি রিসিভ করে না।এই ট্রমা কাটাতে অন্তত দুই একদিন সময় দরকার তার।নিঃসঙ্গতায় অভ্যস্ত রাউশি।অন্যান্যদের মতো এতোটা চঞ্চল,চটপটে স্বভাবের নয়। দুঃখ ভুলিয়ে হাসার স্বভাব থাকলেও কষ্ট প্রকাশ্য করার স্বভাব নেই।শান্তশিষ্ট স্বভাবের হওয়ায় সহজে কারোর সাথে নিজের দুঃখের কথাও শেয়ার করতে পারে না।এতে অবশ্য রাউশির নিজেরও কোনো আক্ষেপ নেই আর না কোনো ইচ্ছা।এমন থাকতেই পছন্দ করে সে।মেঘের গর্জনে ধ্যান ভাঙে।পর্দা ভেদ করে ঠান্ডা বাতাস এসে গা ছুয়ে দিচ্ছে রাউশির।বষ্টিতে ভিজতে ইচ্ছা করলো হঠাৎ।বৃষ্টিতে ভিজে জোরে জোরে কান্না করতে পারবে।ইচ্ছে জাগার সাথে সাথেই তা বাস্তবায়ন করা উচিত। নিজের অনিচ্ছাতে কোনো কাজ করা মানেই সেটা পরিপূর্ণ কিংবা নিজের মন থেকে নয়। রাউশি সর্বদা নিজের ইচ্ছাকে প্রাধান্য দেয়। চোখ মুছে উঠে দাঁড়ায়।দরজা খুলে হাটা ধরে ছাদের উদ্দেশ্যে।একটু আগে এখানে মেহরান ছিলো হয়তো এখন নেই। সোজা ছাদে উঠে পড়ে রাউশি।ভেজামাটির ঘ্রাণ নাকে এসে লাগে।ঝিরিঝিরি বৃষ্টির ফোটা শরীরে পড়তেই ইষৎ কেঁপে ওঠে। একসময় জোরে বৃষ্টি শুরু হয় সাথে বিদ্যুৎ চমকানো,মেঘের গর্জন তো আছেই। বিদ্যুৎ চমকালে রাউশি ভয় পেতো তবে আজ সেই ভয়টুকুও অবশিষ্ট নেই তার মাঝে।মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে বৃষ্টিতেই ভিজে যাচ্ছে শুধু আশেপাশের খেয়াল নেই।

কিছুক্ষণ বাদে বৃষ্টির বেগ আরও বেড়ে যায়। তবে রাউশির মনে হলো তার মাথায় আর বৃষ্টির বড় বড় পানির ফোঁটা পড়ছে না আর। ওপরে তাকাতেই দেখে ছাতা।পেছনে ফিরে তাকাতেই মেহরানকে ছাতা হাতে দাঁড়িয়ে দেখে একটু পেছায় রাউশি।মেহরানের চোখমুখ আজ খুবই শান্ত।নিত্যদিনের সেই তেজ মেশানো মুখটা অপরিলক্ষিত। মেহরানও একই ভাবে রাউশির দিকেই তাকিয়ে।রাউশিকে নিরুদ্বেগ লাগছে। চোখে ভরা যন্ত্রণার ছাপ।ঠান্ডায় ঠোঁটজোড়া হালকা হালকা কেঁপে উঠছে।বৃষ্টিতে ভেজার ফাঁকে মেয়েটা যে কেঁদেছে তা বুঝতে খুব একটা সময় লাগলো না মেহরানের।

“ভেতরে চল।” ঠান্ডা গলায় কথাটা বলে রাউশির হাত ধরে মেহরান।রাউশিও বিরোধিতা না করে মেহরানের হাতটা আরও শক্ত করে ধরেই ভেতরে যায়।মেহরানের খুব ভালো লাগলো বিষয়টা।রাউশি ভিজে জুবুথুবু হয়ে আছে।মেহরানও কিছুটা ভিজেছে।রাউশির রুমে গিয়ে রাউশিকে জামাকাপড় বদলাতে বলে।রাউশিও বিনাবাক্যব্যয়ে মেহরানের কথামতো কাভার্ড থেকে জামাকাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়।এই ফাঁকে মেহরানও নিজের জামাকাপড় বদলে আসে।রাউশির রুমে আসতেই শুনতে পায় ফোঁপানোর শব্দ। বাথরুম থেকে আসছে আওয়াজটা। পানির শব্দ শুনে বুঝতে পারে কাঁদছে আবার শাওয়ারও নিচ্ছে।ভেজা চুলে জামা কাপড় পাল্টে বেরিয়ে আসে রাউশি।রাউশিকে উপরনিচ একপলক দেখে রাউশির কাছে যায়।রাউশির হাত থেকে টাওয়ালটা নিজের হাতে নিয়ে রাউশিকে ধরে বিছানায় বসিয়ে দেয়।নিজেই রাউশির মাথা,চুল মুছে দিতে থাকে।রাউশি সামনে নিষ্প্রভ চেয়ে আছে।আগের দিনের মতো হলে বাধা দিতো রাউশি তবে আজ সেও নিশ্চুপ।চুল মুছে দিতে দিতে মেহরান ঠান্ডা আওয়াজে বলা শুরু করে,
“আমাদের জীবন স্থায়ী নয়।আমরা আজ আছি কাল নেই।”

এতটুকু শুনতেই রাউশি কিছুটা কেঁপে ওঠে। মেহরানও বলছে,
“এই অস্থায়ী জীবনে অনেক মানুষের আনাগোনা হয় আমাদের জীবনে।তাদের প্রতি একটা মায়া জন্মে যায়।সেটা ক্ষণিকের জন্য হোক কিংবা আজীবনের জন্য। তারা যে অমর বা আমরা নিজেরাই যে অমর এমন কিছুই নয়।মৃত্যুর তিক্ত স্বাদ আমাদেরও গ্রহণ করতে হবে।এতে করে আমাদের আশেপাশে থাকা মানুষদের কাছের মানুষদের কষ্ট যেমন হবে সেটা কিছুদিন পরে কিছুটা লাঘবও হবে। তবে এসবের মাঝে নিজের ক্ষতি নিজেই করাটা নেহাৎই বাচ্চামো রাউশি।তোর মামা অনেক ভালো একজন ব্যক্তি ছিলেন।লোকে বলে ভালো মানুষ বাঁচে কম।তোরও এই কথাটা মাথায় রাখা উচিত।কুসংস্কার হলেও মাঝেমধ্যে এমন কথা মস্তিষ্কে রাখলেও আবার ভুল হয় না।কোনোকিছুর তাগিদে নিজের ক্ষতি করার মনোভাব মাথায় আনা ঠিক না।কোন ইচ্ছাতে বৃষ্টিতে ভিজেছিস জানি না তবে ক্ষতিটা ঠিকই হবে।”

থামে মেহরান।রাউশির সামনে হাটু গেড়ে বসে দেখে রাউশির চোখ ভেজা।দুই হাত রাউশির গালে রেখে বৃদ্ধাঙ্গুল দিয়ে চোখ দুটো মুছে দিয়ে বলে,
“কেউ যাবে কেউ আসবে এ নিয়ে এতটা ভেঙ্গে পড়িস না রাউশি।তুই কান্না করছিস আমার বুকে ব্যাথা হচ্ছে।এটার কি হবে?”

চলবে……

#মেহেরজান
লেখনীতে- #সোহামণি
পর্ব ১৫

রাত্রি পেরিয়ে প্রভাতের মিষ্টি আলো জানালা দিয়ে এসে মুখে পড়ছে রাউশির।বিরক্তির জন্য ঘুমের ঘোরেই কপাল কুঁচকে যায়। তবুও চোখ খুলে না রাউশি।ইচ্ছে আছে আজ অনেক্ষণ ঘুমাবার তবে তা আর হয়তো হয়ে ওঠে না। তানিয়া এসে চেঁচাতে থাকে আর বলে,
“এই রাউশিপু, রাউশিপু!!”

রাউশি মাথায় হাত দিয়ে চোখ খুলে তাকায়। মাথা ব্যাথা করছে।রাতে জ্বর এসেছিলো। তবে এখন কিছুটা সুস্থ অনুভব করছে।মধ্য রাতে জ্বরে যখন গা কাঁপছিলো তখন কপালে ঠান্ডা হাতের স্পর্শ পেয়ে যখন চোখ খুলে তাকিয়েছিলো ড্রিম লাইটের আবছা আলোয় মেহরানের মুখ দেখে থমকে গিয়েছিলো রাউশি।মেহরান তার শীতল হাত দিয়ে রাউশির গায়ের তাপমাত্রা চেক করছিলো তখন।ভালোভাবেও তাকাতে পারছিলো না রাউশি চোখব্যাথায়।ঘুমে ঢুলুঢুলু আর তীব্র জ্বরাক্রান্ত চোখে মেহরানের চিন্তান্বিত মুখশ্রীটা কিছুটা হলেও আন্দাজ করেছে রাউশি।মেহরান অস্থির হয়ে আদুরে স্বরে যখন বলল,
“রাউ,তোর তো প্রচুর জ্বর! দাড়া কপালে জলপট্টি দিয়ে দিচ্ছি।”

তীব্র জ্বরের ঘোরেও রাউশির প্রচুর ভালো লাগে।মেহরান হন্তদন্ত হয়ে উঠে গিয়ে একটি ছোট বালতিতে পানি আর পরিষ্কার কাপড় এনে ভিজিয়ে রাউশির কপালে জলপট্টি দিতে থাকে।রাউশি কিছুটা আরামবোধ করেছিলো তখন।সেই জ্বরের মাঝেও রাউশির আলাদা অনুভুতিতে খুবই ভালো লাগছিলো।মন চাচ্ছিলো সময়টা যদি সেখানেই থেমে যেতো নতুবা বার বার যদি একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতো তবে হয়তো খুব একটা খারাপ হতো না।কিয়ৎক্ষণ মাথায় জলপট্টি আর পানি ঢেলে দিয়ে টাওয়ালে দিয়ে মাথা মুছে দেয়।প্রবল মাথা ব্যথায় রাউশি চোখ বুজে রয়েছে আর জ্বরের ঘোরে ছোট্ট আওয়াজে কিছু বলে যাচ্ছে।মেহরান সেসব শুনে।বেশিরভাগ কথায় নিজের অতীত জীবনের।মেহরান রাউশিকে আবারও ভালোভাবে শুইয়ে দিয়ে রান্নাঘরে যায় স্যুপ বানাতে।রূপা বেগমকে ডাকবে কিনা একবার ভাবে পরক্ষণেই আবার মনে পড়ে উনি নিজেও আজ উদাসীন ছিলেন সারাদিন।আর এখন সবাই ঘুমাচ্ছে ডাকাটা উচিত হবে না।তাই নিজ দায়িত্ব স্যুপ বানিয়ে এনে রাউশিকে আধশোয়া করে খাওয়ানোর চেষ্টা করে।তবে রাউশি খেতে না চাইলে মেকি ধমক দেয়।ডান গালে বাম হাত রেখে বলে,
“রাউশি, খেয়ে নে তাড়াতাড়ি।রাগ উঠলে কিন্তু ভালো হবে না।”

রাউশি বাধ্য মেয়ের মতোই পরবর্তীতে খেয়ে নেয়।এরপর জ্বরের ঔষধি খাইয়ে আবারও বিছানায় শুইয়ে দেয় রাউশিকে।মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে,
“ঘুমানোর চেষ্টা কর।”

রাউশি মেহরানের দিকে অপলক তাকিয়ে থাকে।মানুষটাকে যেমন গম্ভীর আর দৃঢ় ব্যাক্তিত্বের দেখায় তবে আড়ালে থেকে ভীষণ যত্নশীল আর নরম মনের মানুষ।যেটা রাউশি রাতেই বুঝতে পেরেছে আর এখন তো আরও প্রখর।রাউশিকে এভাবে নিজের দিকে অপলক তাকিয়ে থাকতে দেখে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতেই বলল,
“আমাকে দেখার আজীবন পড়ে আছে। এখন ঘুমা।”

রাউশি তড়িৎ বেগে চোখ বন্ধ করে ঘুমানোর চেষ্টা চালায়।অবশ্য সফলও হয়।ঘুমের রাজ্যে পাড়ি দেওয়ার পর আর কিছুই মনে থাকে না তার।
রাউশিকে ভাবনায় মশগুল দেখে তানিয়া বলে,
“এই রাউশিপু শুনলাম তোমার রাতে জ্বর উঠেছে?এখন কেমন আছো?বড় মা,মেজো মা তোমায় নিয়ে ভীষণ চিন্তিত।”

রাউশি এখন মোটামুটি সুস্থ তবে মাথা ব্যথা আছে এখনও।এক চোখ খুলে আর অপর চোখ বন্ধ অবস্থায় তানিয়ার দিকে তাকিয়ে বলল,
“চিন্তা করার দরকার নেই আমি এখন ভালো আছি।”
“তুমি তো আজ ভার্সিটি যেতে পারবে না তাই না?”

রাউশি ভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার পর ঠিকমতো ক্লাসই করতে পারছে না আজকে এই ঝামেলা তো কালকে ওই ঝামেলা। মামার মৃত্যুর কথা মনে পড়তেই আবারও চুপসে যায় রাউশি।তবুও ভাঙ্গা গলায় উত্তর দিলো,
“যাব।কয়টা বাজে?”
“যাওয়ার দরকার নেই আপু।আজ আমরা কেউই যাব না।আজ নাকি মেহরান ভাই কোথাও ঘুরতে নিয়ে যাবে আমাদের।”

ললাটে ভাজ পড়ে রাউশির।মিহি স্বরে জানতে চাইলো,
“কোথায় আর কেন?”
“সেটাতো জানি না।তবে সকালে উজান ভাই বললো।”
“আচ্ছা মেহরান ভাই কোথায় এখন?”
“ভাইয়া তো রুমে ঘুমাচ্ছে।”
“আজ অফিসে যাবে না?”
“উজান ভাইয়া বললো যাবে না।”

রাতে ঘুম হয়নি এখন ঘুমানোরই কথা।রাউশি আর ঘাটায় না।বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ায় ফ্রেশ হওয়ার জন্য।

রাতে ঘুম না হওয়ায় এখন ঘুমাচ্ছে মেহরান। এগারোটা বেজে গেছে।মেহরান এতো দেরি পর্যন্ত কখনোই ঘুমায় না।এই স্বভাব নেই।সর্বোচ্চ ৮টা পর্যন্ত এর বেশি নয়।নিয়মমাফিক কাজ তার পছন্দ।গতকাল রাউশিকে ঘুমা পারিয়ে অনেক্ষণ পর্যন্ত মেয়েটার পাশে বসে ছিলো।টানা আড়াই ঘণ্টা রাউশির বেডের পাশের সোফায় বসে বসে বই পড়েছে।ভোর পাঁচটা বাজতেই উর্মিলা বেগম যখন ঘুম থেকে ওঠেন। বাড়ির রান্নাবান্না সমস্ত কাজ বাড়ির গিন্নিরাই করে থাকেন।উনার ওঠার পরপরই যখন রূপা বেগম ঘুম থেকে ওঠেন মেয়েকে একবার দেখার জন্য মেয়ের দোতলায় যেতেই রাউশির রুমের দরজা খোলা দেখে কিছুটা ঘাবড়ে যান।রুমে গিয়ে মেহরানকে সোফায় বসে থাকতে দেখে রূপা বেগম চিন্তিত হয়ে বলেন,
“মেহরান বাবা, তুমি এখানে?”

ইতস্ততবোধ করলেও মেহরান উত্তরে বলল,
“মেজো মা মধ্যরাতে রাউশির রাতে জ্বর এসেছিলো প্রচুর।আমি পানি খাওয়ার জন্য উঠেছিলাম তখন গোঙানির আওয়াজ শুনে রাউশির রুমে ঢুকে দেখি মেয়েটা জ্বরে কাঁপছে।তোমরাও ঘুমাচ্ছিলে তাই আর তোমাদের ডিস্টার্ভ করিনি।”

রূপা বেগমের ভীষণ মায়া হলো মেহরানের জন্য,
“বাবা আমায় ডাকতে পারতে।তোমার কষ্ট হয়ে গেলো না।”

মেহরান ঘুমন্ত রাউশির দিকে তাকায়। শীতল গলায় ছোট করে বলল,
“এমন কষ্ট আমি আজীবন করতে রাজী যদি কারণটা হয় রাউশি।”

রূপা বেগম রাউশির পাশে গিয়ে মেয়ের শরীরে হাত দিয়ে দেখছিলেন তাই মেহরানের ছোট্ট আওয়াজে বলা কথা কর্ণগোচর হয় না।রূপা বেগম মেহরানের দিকে তাকিয়ে সোহাগী গলায় বললেন,
“বাবা যাও তুমি ঘুমাতে যাও।এখন আমরা আছি।”

মেহরান রাউশিকে কয়েকপলক দেখে নিয়ে চলে যায় নিজের রুমে।ভেবে নেয় আজ বাড়ির ছেলেমেয়েদের নিয়ে ঘুরতে যাবে কোথাও।তাই আগে থেকেই উজানকে মেসেজ দিয়ে বলে দেয়।

.

আজ ক্লাসে এসে রাউশিকে চোখে পড়ে না আয়াশের।প্রায় অনেকদিন হলো ভার্সিটি মিস দিচ্ছে বলেই গতকালই মাকে নিয়ে তারাও ঢাকায় চলে এসেছে আর আজ ভার্সিটিতে ক্লাস নেওয়ার জন্যও এসেছে।মনে মনে একরাশ আশা নিয়ে এসেছিলো রাউশিকে একবার দেখার।কেমন আছে?একটা সরি বলা যায় কি?সরি বলে সরিকে অপমান করা হবে ভেবে দমে যায় আবারও।তবে রাউশিকে গতদিন দেখে আয়াশের নিজেরই খুব খারাপ লাগছিলো। কেমন যেন দমবন্ধ লাগছিলো নিজের।রাউশিকে কখনো ভালোভাবে তাকায় নি পর্যন্ত আয়াশ।তবে গতকাল খুব নিখুঁতভাবে পর্যবেক্ষণ করেছে রাউশিকে।মুখটা ফ্যাকাসে ছিলো মেয়েটার,চোখমুখে অঢেল বিষণ্ণতা।রাউশির কথা মনে পড়তেই অনিমার কথা মনে পড়ে আয়াশের।অনিমাকে ভালোবাসে আয়াশ তবে অনিমার ব্যবহার দিন দিন বাজে থেকেও বাজে হয়ে যাচ্ছে।আয়াশ তার মা-কে রাজশাহী থেকে ঢাকায় এনেছে বলে অনেক কথা কাটাকাটি পরবর্তীতে তুমুল ঝগড়াও হয়েছে তাদের মাঝে।অনিমার গায়ে হাত তুলতেই যাবে তখন অনিমাই আয়াশের হাত ধরে ফেলে।এতে আয়াশ হতবম্ভ হয়ে যায়।রাগ দেখিয়ে খুব তাড়াতাড়িই বাসা থেকে বেরিয়েছে ভার্সিটির উদ্দেশ্যে।ক্লাস শেষে ক্লাস থেকে বেরিয়ে এসে নুজাইশ স্যারের মুখোমুখি হয় আয়াশ।হেসে কুশল বিনিময়ের জন্য কথা বলে। নুজাইশও মুচকি হেসে জবাব দেয় তবে আগের মতো প্রানবন্ত মনে হলো না আজ মানুষটাকে।আয়াশ ভাবে হয়তো উনারও পার্সোনাল কোনো সমস্যাই হবে। আয়াশ চলে যায় নুজাইশও ক্লাসে ঢুকে পড়ে। ক্লাসে ঢুকতেই আগে একবার পুরো ক্লাস পরখ করে নজর ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে কাঙ্ক্ষিত নারীকে খোজে।কিন্তু দেখা মেলে না তার।আজ আসে নি কেন?কিছু কি হয়েছে?ক্লাসে টপিক বোঝানোর সময় বারবার মৌরিনের কথা মনে পড়ছিলো।টালমাটাল মন নিয়ে থাকতে না পেরে তৃষ্ণার্ত কাকের মতো বলে উঠলো,
“আপনাদের ক্লাসের মৌরিন আজ আসে নি কেন? কেউ কি জানেন?”

পেছন থেকে রুনা হাত তুলে উঠে দাঁড়ায়,
“স্যার রাউশি অসুস্থ।”

নুজাইশের মন ধ্বক করে ওঠে।অসুস্থ মানে?এই মেহরান নিজের প্রেমিকার খেয়াল রাখতে পারে না নাকি?মেহরানের ওপর খুব রাগ হলো নুজাইশের। নুজাইশ রুনাকে বসতে বলে।রুনাও বসে পড়ে। হাসিব পাশ থেকে বলে,
“আমরা না আসলে তো জীবনেও জিজ্ঞাসা করে না।”

মিলি কথাটা শুনতে পায়।ভালো লাগে না তার কথাটা।অন্যরকম ইঙ্গিত।তাই বলে,
“নুজাইশ স্যার রাউশির ভাইয়ের বন্ধু।তাই হয়তো।”

চলবে….