মেহেরজান পর্ব-২৯+৩০

0
2

#মেহেরজান
লেখনীতে- #সোহামণি
পর্ব ২৯

মেহরান আর নুজাইশ চলে যেতেই বৃষ্টি হাফ ছেড়ে বাঁচলো।ঘরের ভেতর উঁকি দিলো একবার। দেখে আসার জন্য পা বাড়াতেই মেহরান আর নুজাইশ আসলো আবারও। বৃষ্টি এদের দেখে হতবম্ভ হয়ে গেলো। মেহরান বৃষ্টির কোনো কথা না শুনেই ঘরে ঢুকতে যাবে তার আগেই বৃষ্টি পথ আটকে দাঁড়ালো।মেহরান কপাল কুঁচকালো।

“আপনার সাহস কি করে হয়? না বলে কয়ে আমার বাড়িতে ঢোকার।”

মেহরান বিরক্তি ঢেলে উত্তর করলো,
“আ’ম শিওর।ভেতরে আমার রাউশি আছে।”

বৃষ্টি আবারও অনড় রইলো।দাতে দাত চেপে বলল,
“কোনো রাউশি টাউশি নেই।”
“তাহলে পথ আটকাচ্ছেন কেন? আমাদের ভেতরে চেক করতে দিন।”
“আমার বাড়ি, আমি অনুমতি দেই নি।”

নুজাইশ এগিয়ে এলো।বৃষ্টির সামনে এসে বলল,
“দেখুন রাউশি যদি আপনাদের বাড়িতে থেকে থাকে তাহলে প্লিজ মিথ্যা বলবেন না। আমরা ওকে আমাদের সাথে নিয়ে চলে যাব।”

“কে রে? কি হইছে রে মা?এরা কেরা?”

বলতে বলতে মতিন মোড়ল এগিয়ে আসলেন মেয়ের দিকে।এদিকে বাইরে থেকে চেঁচামেচির আওয়াজে রাউশির ঘুম ভাঙলো। গা জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে তার। কোনোরকম উঠে বসলো মাথায় হাত দিয়ে। চোখমুখ লাল হয়ে রয়েছে।হুট করেই জ্বর উঠেছে।হাত পা পুরো শরীরই ভীষণ ব্যাথা। হঠাৎ ধ্যান ফিরলো পরিচিত মানুষের আওয়াজ শুনে।রাউশি এই আওয়াজ চেনে। খুব ভালোভাবেই চেনে।মেহরান এসেছে এটা মাথায় আসতেই রাউশি এই অসুস্থ শরীর নিয়েই বিছানা ছেড়ে তাড়াহুড়ো করে নামতে গিয়ে পড়ে গেলো।তবে আবারও উঠে দাঁড়ালো। পায়ে চোট পেয়েছে।তবে সেসব ভুলে বেরিয়ে আসলো বাইরে।

চোখ গেলো বিরক্তি ভঙ্গিতে কথা বলা প্রিয় সেই পুরুষের দিকে।মানুষটাকে দেখতে অন্যরকম লাগছে।কেমন উসকোখুসকো চুল, চোখমুখ শুকনো।আগের গম্ভীর, সুপুরষ মেহরানকে আজ যেন অন্যরকম লাগছে রাউশির।নুজাইশের দিকেও চোখ পড়লো।মানুষটারও অবস্থা মেহরানের মতোই।কাঁপা কাঁপা গলায় দুজনকেই ডেকে উঠলো রাউশি,
“মেহরান ভাই, নুজাইশ স্যার।”

রাউশির কণ্ঠ শুনে মেহরানের চোখ গেলো বৃষ্টির পেছনে।মরুভূমির বুকে যেন এক পশলা বৃষ্টি মুহুর্তেই নামলো।চোখের তৃষ্ণা যেন ক্ষনিকের জন্য মিটলো।রাউশির চোখ টলমল করছে।নুজাইশও দেখলো রাউশিকে। রাউশির এমন অবস্থা দেখে সে নিজেও ব্যথিত হলো।

এদিকে নুজাইশ থ মেরে দাঁড়িয়ে আছে। নিজের চোখকে যেন বিশ্বাস করতেও কষ্ট হচ্ছে।যদি সামর্থ্য আর কোনো বাঁধা না থাকতো তবে নুজাইশ দৌঁড়ে গিয়ে রাউশিকে জাপটে জড়িয়ে ধরতো।চোখের কোণায় জল জমলো নুজাইশের।মাথা নামিয়ে তা লুকানোর চেষ্টা করলো।

বৃষ্টি এবার কিছুটা নরম হলো নাম শুনে। পেছনে ফিরে রাউশিকে দেখলো।রাউশি ঢুলুঢুলু অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে।মেহরান বৃষ্টিকে পাশ কাটিয়ে রাউশির দিকে ধীরপায়ে এগিয়ে গেলো।মনে হচ্ছে যেন কতবছর পর মেয়েটাকে দেখছে।হাজার বছর পেরিয়ে গেছে নাকি সন্দেহ! রাউশিও এগিয়ে আসলো মেহরানের দিকে।মেহরান কাছে এগিয়ে হুট করেই সবার সামনেই জাপটে জড়িয়ে ধরলো।মেহরানের তখনও বুক ধ্বক ধ্বক করছে।হার্টবিট বাড়ছে ক্রমাগত। রাউশি সেটা ঠাওর করতে পারছে।লোকলজ্জা ভুলে সবার সামনেই রাউশির চোখে মুখে গালে কপালে অসংখ্য চুমু খাওয়া শুরু করলো মেহরান।এদিকে মতিন মোড়ল অন্যদিকে চলে গেলেন।বৃষ্টি পিঠ দিয়ে দাঁড়াতেই নুজাইশ খুশির চোটে রসিকতা করে ঠেস দিয়ে বলল,
“শরম কর শালা।এখানে অপরিচিত মানুষজন আছে।আমি নাহয় তোর মতোই বেশরম।কিন্তু উনারা তো আর না।চুমু বাসর রাতে খেয়ে নিস।এখন থাম ব্যাটা।”

নুজাইশের কথা শুনে বৃষ্টি লজ্জা পেলো। মুখ অস্ফুট স্বরে আওড়ালো ‘অসভ্য’। নুজাইশ স্পষ্ট শুনতে পেলো অসভ্য বলাটা। বৃষ্টিকে গম্ভীর স্বরে বলল,
“আপনি কি আমাকেই বলেছেন?”

বৃষ্টি পাশে ফিরে তাকালো,
“হ্যা আপনাকেই।”

ক্ষেপে গেলো নুজাইশ।কিন্তু কিছু বলতে পারলো না রাউশিকে পাওয়া খুশিতে। ভাবলো মেয়েটাকে আজকের মতো ছেড়ে দেবে।এদিকে মেহরানের এমন কাজে ভেতর থেকে সৃষ্টিও হা করে তাকিয়ে আছে। নুজাইশের কথা শুনে রাউশিও লজ্জা পেলো। কিন্তু মেহরানের হেলদোল নেই। রাউশি লজ্জামিশ্রিত আওয়াজে বলল,
“কি করছেন? মানুষ আছে এখানে।”
“থাকুক।”

মেহরান গম্ভীর আওয়াজে বললো কথাটা। এই মানুষটার কি লাজ শরম সব লোপ পেয়েছে নাকি ভাবলো রাউশি। মেহরান রাউশিকে ছেড়ে দিলো। মাথায় হাত রেখে বলল,
“আমায় ক্ষমা করে দিস রাউ।”

রাউশি কিছু বললো না।নুজাইশ আবারও বলে উঠলো,
“চলে যাব আজ? নাকি_”

রাউশি এবার বিরোধিতা করে বলে উঠলো,
“আমি যাব না।আমি এখান থেকেই ঢাকা চলে যেতে চাই।”

মেহরান রাউশির হাত ধরে আছে।পেছনে মেহরানের দিকে একবার তাকালো। চোখ দিয়ে কিছু একটা ইশারা করতেই নুজাইশ হেসে ফেললো।বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে গম্ভীর স্বরে বলল,
“আপনার বাবা কোথায়?”

বৃষ্টি মুখ অন্যদিকে ঘুরিয়ে তার বাবাকে ডাকলো।এই মেয়ের এমন ব্যবহার দেখে নুজাইশ আশ্চর্য না হয়ে পারলো না।মতিন মোড়ল আসলেন সেখানে।নুজাইশ বললেন,
“আমার সাথে আসুন তো চাচা।”

মতিন মোড়লকে নিয়ে নুজাইশ কোথায় যেন চলে গেলো।

.

রাত নেমেছে।ঠান্ডার মাত্রা ধীরে ধীরে বাড়ছে।নুজাইশ আর মতিন মোড়ল ফিরলেন একজন কাজীকে নিয়ে। মেহরান নুজাইশকে বলে রেখেছে রাউশিকে খুঁজে পেলেই সঙ্গে সঙ্গেই বিয়ে করবে।তাইতো এই ব্যবস্থা।নুজাইশ সাথে কয়েক কেজি মিষ্টিসহ বড় বাজার থেকেই কয়েক পদ খাবার কিনে নিয়ে এসেছে।সাথে মতিন মোড়লসহ এই বাড়ির সবার জন্যই কিছু না কিছু কিনে দিয়েছে।নুজাইশ ভীষণ খুশি মেহরান আর রাউশির বিয়ে নিয়ে।অবশেষে দুজনের বিয়েটা হয়েই যাচ্ছে ভেবে মনে মনে আলহামদুলিল্লাহ বললো বার কয়েক। রাউশি আর মেহরানের জন্য কোনো পোশাক আশাক আনে নি নুজাইশ।মেহরান জিজ্ঞাসা করলে নুজাইশ সোজাসুজি জবাব দেয়,
“যেভাবে আছিস সেভাবেই করে ফেল। কারণ সেজেগুজে লাভ কি? যদি বাসরই না করতে পারিস?”

মেহরান নুজাইশের মাথায় বড়সড় করে একটা গাট্টা মারে। রাউশি এদের কর্মকাণ্ড দেখে যাচ্ছে শুধু।পরিবার হীন এই বিয়েতে কেমন লাগলেও নাকোচ করলো না। বৃষ্টি হাসিমুখে সবকিছুর আয়োজন করছে সাথে হাসনা বেগম।সৃষ্টি ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে তাদের দিকে।

নুজাইশ আর মতিন মোড়ল বরপক্ষের লোক হিসেবে এবং বৃষ্টি,হাসনা বেগম কনে পক্ষ হিসেবে থাকবেন বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েচগে।কাজী সাহেব রাউশির দিকে তাকিয়ে হাসিহাসি মুখ করে বললেন,
“বলো মা কবুল।”

রাউশির কণ্ঠনালী কেঁপে উঠলো।মেহরান তার পাশেই বসে ছিলো।রাউশির হাত ধরলো। রাউশি নিজের জীবনের অতীত ভাবতে লাগলো আর মেহরানের আগমনের কথা ভাবতে লাগলো।চোখ বুজে নিঃসংকোচেই যেন মাথা নিচু করে তিনবার কবুল বললো রাউশি এবার।এবার কাজী সাহেব মেহরানের উদ্দেশ্যে বললেন,
“মাহমুদ খানের কন্যা মৌরিন খান রাউশিকে পাঁচ লক্ষ মোহরানায় আপনার কাছে বিবাহ দিলাম।আপনি বলুন কবুল।”

মেহরানও খুব স্বাভাবিকভাবেই কবুল বললে উপস্থিত সবাই আলহামদুলিল্লাহ বলে ওঠে। নুজাইশ তো একপ্রকার চেঁচিয়ে উঠলো মনে হলো সকলের।বৃষ্টি মুখ ভেংচে বলল,
“গলা তো না যেন ফাঁটাবাশ।”

নুজাইশের রাগ লাগল।কিছু বলতে যেয়েও বললো না।এদিকে রাউশি চুপচাপ বসে আছে। মেহরান রাউশির দিকে একপলক তাকালো।এই মেয়ে এখন শুধুমাত্রই তার। একান্তই তার। ভাবতেই যেন শীতল হাওয়া গা ছুয়ে গেলো।মেহরান খানিক হাসলো। রাউশি মাথা নামিয়ে বসে আছে। হুট করেই জীবনের সবচেয়ে সুন্দর একটি ক্ষণ শেষ হয়ে গেলো রাউশির।মেহরান এখন তার স্বামী।কি থেকে কি হয়ে গেলো একবার ভাবলো।এই তো গতকাল রাতেই রাউশি মনে মনে ভাবছিলো মেহরানের সাথে তার বুঝি আর দেখাই হবে না।অথচ আজই কিছু মুহুর্ত আগেই মেহরান আর সে পবিত্র এক বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে গেলো।রাউশিও একবার মাথা তুলে মেহরানের দিকে তাকালো। মেহরান নুজাইশের সাথে কথা বলছিলো। ঘাড় হেলিয়ে তাকিয়ে রইলো মেহরানের দিকে।এই মানুষটা শুধুমাত্রই তার ভেবে মন যেন উৎফুল্ল হয়ে উঠলো রাউশির। তবে পরিবারের সবাইকেই খুব মিস করছে রাউশি। তবে নুজাইশ বিয়ের আগেই বলেছে তাকে পরিবারের সবারই নাকি পূর্ণ সম্মতি আছে বিয়েতে।মেহরান না জানালেও নুজাইশ মেহরানের অগোচরে ঠিকই জানিয়ে দিয়েছে।

ক্ষণিকের মাঝেই বৃষ্টির পরিবারের সাথে মেহরান নুজাইশের সম্পর্ক ভীষণ ভালো হয়ে গেলো।আজ রাতটা এই বাড়িতেই থাকবে মেহরান আর রাউশি।নুজাইশ বললো সে বড় বাজারের দিকে ছোট্ট হোটেলে একটি রুম ঠিক করে এসেছে।সে সেখানেই থাকবে।নুজাইশ কিছুক্ষণ আগেই চলে গেলো।সকালে দেখা হবে বলে মেহরানের সাথে কোলাকুলি করেই চলে গেলো ছেলেটা।বৃষ্টিরা মেহরান আর রাউশির জন্য একটি ঘর গুছিয়ে দিলো। মেহরানরা শত বাঁধা দিলেও মানলো না কেউ। ছোট্ট সেই রুমটিতে থাকার ব্যবস্থা করা হলো দুজনের।এদিকে ওপাশের বড় রুমে দুটো ছোট ছোট চৌকি ছিলো সেখানে বৃষ্টিরাসহ তার বাবা মা আজ রাতটা কোনোভাবে পার করবে।ঘরটা যখন গুছিয়ে দিচ্ছিলো বৃষ্টি রাউশি বসে ছিলো বিছানায়। বৃষ্টি রাউশির মুখটা লাল দেখে বলল,
“বাসরের জন্য এতোটা গোছাতে পারলাম না রাউশি।”

রাউশি লজ্জা পেলেও উত্তর করলো,
“কি যা তা বলছো বৃষ্টি।এসবের কিছুরই দরকার নেই।”
“বিয়ের রাত। উপভোগ করো।”

বলেই হাসলো বৃষ্টি।হেসে চলে গেলো বাইরে। মেহরান ঘরে ঢুকলো।বাকিরা ঘুমানোর জন্য সবাই নিজেদের ঘরে গেলো।মেহরানকে দেখেই রাউশির কেন যেন আজ লজ্জা লাগলো ভীষণ।মেহরান দরজা লাগিয়ে রাউশির পাশে আসলো।রাউশি উঠে দাঁড়ালো।মেহরান কাছে এগিয়ে এসে রাউশির দুহাতে ধরে কপালে দীর্ঘ চুম্বন এঁকে দিলো।রাউশি চোখ বুজে তা অনুভব করলো। মেহরান রাউশিকে বলল,
“আমি গতকাল খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম রাউশি।তোকে হারানোর ভয়ে যেন আমি পাগল হয়ে যাচ্ছিলাম।আজ তোকে পাওয়ার পর আর কিছু ভাবতে পারি নি।বিয়ে করার সিদ্ধান্তই বেস্ট মনে করলাম।যেহেতু পরিবারেরও কোনো অমত নেই।যদিও বা ভুল কিছু হয় তো আমায় ভুল বুঝিস না কখনো।”

রাউশি মেহরানের হাত ধরলো,
“এসব কি বলছেন? ”

মেহরান খানিক হাসলো।কপালে পড়ে থাকা চুলগুলো ডান হাতে অন্যপাশে ঠেলে দিলো। মেহরানকে চুপ থাকতে দেখে রাউশি মেহরানের দিকে তাকালো।দেখলো মেহরান তারই দিকে তাকিয়ে আছে ঘোর লাগানো চোখে।রাউশি চোখ নামিয়ে নিলো। মেহরানও হাসলো রাউশির এমন আচরণে। রাউশির দিকে ঝুকে কানের কাছে মুখ নিয়ে একটা ফু দিতেই রাউশি কেঁপে উঠলো। অনুভুতিগুলো যেন বেসামাল হয়ে পড়লো। মেহরান বুঝলো রাউশির অনুভুতি।কানে ফিসফিস করে বলল,
“কাছে আসবো নাকি আমার সাথে বাইরে যাবি?”

রাউশি থমকালো।এভাবে কি কেউ কখনো নব বিবাহিত স্ত্রীকে বলে ধারণা নেই রাউশির। লজ্জায় গাল লাল হলো। এই লোক কি তাকে লজ্জা দেওয়ার জন্যই এসব বলছে নাকি? থমথমে মুখে জবাব দিলো,
“অবশ্যই দ্বিতীয়টা।”

মেহরান ঠোঁটে ঠোঁট চেপে হাসলো। চুকচুক শব্দ করে নিজের প্রতি আফসোস ঢেলে বলল,
“মেহরানের কপালে যে বাসর রাত থাকবে না এটা জানতাম।যাইই হোক তোর ইচ্ছাই পূরণ করি তাহলে চল।”

রাউশির হাত ধরে ঘরের দরজা খুলে বাইরে নিয়ে এলো মেহরান। রাউশির ঠান্ডা লাগলে ভেতর থেকে আলনায় রাখা একটা শাল এনে গায়ে জড়িয়ে দিলো মেহরান। এবার রাউশির হাত ধরে নিয়ে গেলো সামনে। বাড়ির বাম দিকে একটি সরু রাস্তা আছে। আইলও বলা চলে।পাশে ক্ষেত আর ক্ষেত। মেহরান কিছুটা নিচু হয়ে দাঁড়িয়ে রাউশিকে পেছনে ওঠার জন্য ইশারা করলো। রাউশি মুখে হাসি ফুঁটিয়ে মেহরানের পেছনে গিয়ে গলা জড়িয়ে ধরলে মেহরান হাত পেছনে দিয়ে রাউশির দু উরুতে ধরে হাঁটা শুরু করলো। আকাশে আজ চাঁদ উঠেছে তবে পুরোটা নয়। ঠান্ডা হাওয়ায় রাস্তাটা বেয়ে যেতে লাগলো মেহরান। রাউশির খুব ইচ্ছে করলো সময়টাকে এখানেই থামিয়ে দেওয়ার। তবে এটা যে কখনই সম্ভব না ভেবে কষ্ট পেলেও মেহরানের কাঁধে মাথা থুতনি রাখলো আর কানে ফিসফিস করে বলল,
“মেহরান মশাই, আপনার মেহেরজান আপনাকে খুব বেশি ভালোবাসে।মানে এতো এত্তো এত্তোও।”

মেহরান আরেকটু সামনে এগিয়ে গিয়ে থামলো। চাঁদের আশেপাশে অসংখ্য ভাঙা ভাঙা মেঘ। ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো। চাঁদের আলো পাকা ধানের পাতার ওপর পড়ছে। মনোমুগ্ধকর এক দৃশ্য তৈরি হয়েছে সময়টাতে। মেহরান ঘাড় ঘুরিয়ে রাউশির দিকে তাকালো। রাউশি তারই দিকে তাকিয়ে ছিলো মেহরান এবার সাহস করলো।প্রথমবারের মতো রাউশির ঠোঁটে সে অবস্থাতেই ছোট করে একটা চুমু খেলো।রাউশি চোখ বুজলো। সারা শরীরে শিহরণের মাত্রা ভারী হতে লাগলো। অনুভব করলো মেহরানকে। মেহরান ছেড়ে দিলো। রাউশি চোখ বুজে বারকয়েক দীর্ঘশ্বাস ফেললো মেহরানের ঘাড়ে।মেহরান হালকা হেসে বলল,
“ভালো না বাসলেও যে বাসতে হবে। আফটার অল আমারই তো মেহেরজান।”

চলবে….

#মেহেরজান
লেখনীতে- #সোহামণি
পর্ব ৩০

ভোরের আলো ফুটলো। পাখির কিচিরমিচির আওয়াজ জড়ালো হলো। খাবারের খোঁজে বেরিয়ে পড়েছে তারা। রাউশি আর মেহরান ঘুমিয়েছে ভোররাতের দিকে। তবে রাউশি খুব একটা ঘুমাতে পারে নি। বাইরে থেকে কিছু আওয়াজ শুনেই শোয়া থেকে উঠে গায়ে শাল জড়িয়ে বেরিয়েছে ঘরের বাহিরে। হাসনা বেগম আর বৃষ্টি রান্নার আয়োজন করছিলো। বৃষ্টি বিভিন্ন তরকারি কাটছিলো উঠোনে বসে। আর হাসনা বেগম রুটি বানাচ্ছিলেন। রাউশিকে এতো ভোরে উঠতে দেখে হাসনা বেগম চমকালেন। জিজ্ঞাসা করলেন,
“একি তুমি উইঠা পড়ছো? রাইতে কি ভালা ঘুম হয় নাই?”

রাউশি বৃষ্টির পাশে গিয়ে দাঁড়ালো,
“অনেক ভালো ঘুম হয়েছে আন্টি।”

বৃষ্টি মুখ টিপে হাসলো।সে রাতে একবার টয়লেটে যাওয়ার জন্য উঠেছিলো তখন মেহরান আর রাউশিকে কিছুটা দূরে বসে থাকতে দেখেছে।রাত তখন গভীর।বৃষ্টির এতটুকু তো ধারণা হয়েছে এদের মধ্যকার ভালোবাসা সত্যিই অনন্য যেন।রাউশি টিউবওয়েলের সামনে গিয়ে মুখ ধুয়ে নিলো। উঠোনের বামদিকের নিমগাছটা থেকে একটি কচি ডাল ভেঙ্গে তা দিয়ে দাত ঘষলো কিছুক্ষণ। এরপর কুলি করে এসে বৃষ্টির পাশে হাটু ভেঙ্গে বসলো।বৃষ্টি বলল,
“তোমরা কি আজই চলে যাবে?”

রাউশি সেই প্রশ্নের উত্তর দিলো না বরং উল্টো বৃষ্টিকে প্রশ্ন করলো,
“তোমরা কি আমাদের সাথে যাবে?”

বৃষ্টি হতচকালো।এটা কি করে হয়? মাথা দুদিকে ঘুরিয়ে বলল,
“না না তা কি করে হয়?”

রাউশি শুনলো না তার কথা।ঘাড় এলিয়ে বলল,
“দেখো তোমরা এখানে পূর্বস্থানীয় নও। এছাড়া আঙ্কেলের বয়স হয়েছে।এই বয়সেই অনেক পরিশ্রম করে। ঢাকায় গেলে তুমি নিজেই একটা জব করতে পারবে।আঙ্কেলেরও কিছুটা চাপ কমবে।তোমাদের থাকার ব্যবস্থা আমিই করে দেব।তুমি শুধু হ্যা বলে দাও ফার্স্ট।”

বৃষ্টি বুঝলো রাউশি অনেক মিশুক স্বভাবের। বৃষ্টি মায়ের দিকে একপলক তাকালো। সত্যিই তার বাবার এখানে অনেক বেশিই কষ্ট হয়।বৃষ্টির নিজের একটা জব থাকলে হয়তো কিছুটা হলেও বাবার কষ্ট লাঘব হতো।তবে তার এডুকেশনাল কোয়ালিফিকেশন নেই তেমন।শুধুই তো এইচএসসি পাস করেছে।হতাশার শ্বাস ফেললো বৃষ্টি। বৃষ্টির মনোভাব যেন রাউশি বুঝে গেলো।বৃষ্টির কাঁধে হাত রেখে বলল,
“বাই এনি চান্স তুমি তুমি কি নিজের যোগ্যতা খুঁজছো?চিন্তা নেই আমি তো আছি।”

বৃষ্টি ভাবুক হলো। নিজের যোগ্যতায় কিছু করতে চায় সে।বৃষ্টি ভাবলো বাবার সাথে কথা বলবে।মতিন মোড়ল রাউশি ওঠার কিছু সময় আগেই বাড়ি থেকে বেরিয়েছে কাজের উদ্দেশ্যে।দুপুরে রান্নার জন্যও বাজার নিয়ে আসবেন।

রাউশি হাতে হাতে সহায়তা করলো কিছুক্ষণ। গল্প করলো বৃষ্টির সাথে।দেখতে দেখতে ঘণ্টা খানেক পেরিয়ে গেলো।

নয়টা বাজে মেহরান ঘুম থেকে উঠলো।রাতে দেরি করে ঘুমানোতে এত দেরিতে ঘুম ভাঙলো তাও বাইরে থেকে শোরগোলের কারণে।রাউশিকে পাশে না পেয়ে একবার এদিকে ওদিক তাকালো।বাইরে থেকে গলার শুনে আর দরজা হালকা খোলা দেখে বুঝলো মেয়েটা বাইরে।মেহরান ফোনটা খুঁজলো।ঘুমঘুম চোখে নুজাইশকে কল করলো।তবে পেলো না।এবার উঠে বসলো মেহরান।আর তখনই বাইরে থেকে চেঁচামেচির আওয়াজ শুনতে পেলো মেহরান। সঙ্গে সঙ্গেই তাড়াহুড়ো করে বেরোলো ঘর থেকে।আর তখনই নজর গেলো সামনে মতিন মোড়লের রক্তাক্ত নিথর দেহের ওপর।মেহরান স্তব্ধ হলো,থমকালো।বৃষ্টি বাবার লাশের পাশে বসে কাঁদছে আর হাসনা বেগম অপলক স্বামীর লাশের দিকে চেয়ে আছেন চুপচাপ।যেন শোকে পাথর হয়ে গেছেন। মেহরান রাউশিকে দেখতে পেলো বৃষ্টির কাছে।এছাড়া চারপাশে লোকজন ভরে গেছে। অনেক পুরুষ,মহিলা,যুবক,যুবতীরাও ভিড় করেছে।মেহরানকে ঘর থেকে বেরোতে দেখে কিছুজন আবার কেমন করে যেন তাকালো।

রাউশি তখনও মেহরানকে খেয়াল করে নি। তার এখনও হাত পা কাঁপছে।কি থেকে কি হয়ে গেলো ভেবে? মতিন মোড়লকে নাকি রাস্তায় বাড়ি ফেরার সময় কেউ দাও দিয়ে কু*পি*য়ে*ছে।কে করেছে এটা কেউ জানে না।রাস্তাটা নির্জন ছিলো বিধায় কাজটা খুব সহজেই করতে পেরেছে খুনী।কেউ দেখেও নি কাউকে।মতিন মোড়লের নিথর দেহটা দেখার পর পরই কিছু জন মানুষ ধরে এনেছে বাড়িতে।হাসনা বেগম সেসময় হাড়ি- পাতিল ধোঁয়াধুঁয়ি করছিলেন কলপাড়ে। রাউশি আর বৃষ্টি বসে বসে কাজ করছিলো আর কথা বলছিলো।তখনই নিয়ে আসা হয় মতিন মোড়লের লাশটা।হাসনা বেগম তো একটা চিৎকার দিয়ে সেখানেই অজ্ঞান হয়ে যান।আর বৃষ্টি যেন বাবার এমন অবস্থা বিশ্বাসই করতে পারছিলো না।সৃষ্টি সেসময় ঘুম থেকে উঠে বাবার লাশ দেখে যেন পুরো পা থেকে মাটির তলা সড়ে গিয়েছিলো। এতকিছুর মাঝে মেহরানকে ডাকাও সম্ভব হয়ে ওঠে নি রাউশির।কাকে রেখে কাকে সামলাবে এই অবস্থা।একদিনেই এই পরিবার কত আপনজন হয়ে গেছে তাদের। আর তাদেরও কি একটা হৃদয়বিদারক ঘটনাই না ঘটলো।রাউশি বৃষ্টির পাশে বসে ছিলো। সামনে থেকে মেহরানকে থমকানো দৃষ্টিতে চুপচাপ এগিয়ে আসতে দেখে ছলছল চোখে তাকালো।মেহরানও রাউশির টলমলে চোখ দেখে তার কাছে গেলো। কিছু মহিলা সড়ে দাঁড়ালো।রাউশি বৃষ্টির পাশে বসে থেকেই মেহরানকে কান্নাভেজা আওয়াজে বলল,
“কে যেন উনাকে মেরে ফেলেছে।”

আর কিছু বলতে পারছে না রাউশি নিজেও। গলা দিয়ে শব্দ বের হচ্ছে না।মেহরানের মাথাও যেন কিছুক্ষণের জন্য কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে।রাউশির কথা শুনে ফোনটা হাতে নিয়ে আবারও নুজাইশকে কল করলো। এবার দুবার রিং হতেই নুজাইশ কল রিসিভ করলো।মেহরান চোখ বুজে দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলল,
“মতিন আঙ্কেল আর নেই। তুই ইমিডিয়েটলি এখানে চলে আয়।”

নুজাইশকে কিছু বলতে না দিয়ে কল কেটে দিলো মেহরান।আশেপাশে একবার তাকালো। লোকজন তার দিকে কেমন করে তাকিয়ে আছে।মেহরান এবার বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে শান্ত আওয়াজে জিজ্ঞাসা করলো,
“বাবার লাশের পোস্টমর্টেম করাতে চাও বৃষ্টি?”

বৃষ্টি কাঁদতে কাঁদতেই মাথা দুদিকে দুবার নাড়ালো।লাশের ময়নাতদন্ত করাতে চায় না সে।মেহরানও আর কিছু বললো না।কি করবে সেটাও বুঝতে পারছে না মেহরান। এদিকে চারপাশের লোকজন কানাঘুষা করছে ‘এইরা কেরা?কোইথেইকা আইছে মোড়ল বাড়িত?’

মেহরান সেসবে কান দিলো না।একটু সাইডে গিয়ে নুজাইশকে আবারও কল দিলো আর কিছু একটা বললো।

.

দেখতে দেখতে মতিন মোড়লের যানাজা শেষ হলো।কবর দেওয়া হলো বাড়ির থেকে কিছুটা দূরে।নুজাইশ আর মেহরানই করে দিলো সমস্ত ব্যবস্থা।বৃষ্টির পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন মতিন মোড়ল।উনার এমন মৃত্যুতে অনেকেই শোক প্রকাশ করছেন এলাকার মানুষজন। এছাড়া হাসনা বেগম,সৃষ্টি শোকে পাথর বনে রয়েছে। বৃষ্টি নিজেকে কোনোরকম সামলে রেখেছে। মেহরানদের সাহায্য করলো সে নিজেও। রাউশির তার মামার কথা মনে পড়ে গেলো। আজ হঠাৎ বাবা মায়ের কথাও যেন খুব বেশি মনে পড়ছে।মিস করছে উনাদের। কেমন আছে সবাই? বাড়ির সবাই কেমন আছে? তারাও নিশ্চয় রাউশিদের অনেক বেশি মিস করছে।

বিকেলের দিকে সমস্ত কিছু সেড়ে মেহরান আর নুজাইশ বাড়িতে ফিরলো।সবাই কেমন মূর্তির মতো বসে রয়েছে।শুধু রাউশি এদিকে তাকাচ্ছে বারবার।মেহরানকে দেখে এগিয়ে গেলো তাদের দিকে,
“শুনুন না। এখন কি হবে? আমি চাই বৃষ্টিদেরও আমাদের সাথেই ঢাকায় নিয়ে যেতে।”

নুজাইশ রাউশির দিকে তাকালো। মেহরান হাসনা বেগমের দিকে তাকালো।স্বামীর মৃত্যুশোকে মানুষটা কেমন একদৃষ্টে সামনে তাকিয়ে রয়েছেন।উনাদের এখানে একা রেখে যাওয়া মানেই হলো শেয়ালের কাছে মুরগি রেখে যাওয়া।প্রতিবেশিরা হিংস্র হয়ে উঠবে উনাদের ওপর।মেহরান পুলিশ লাগিয়ে দিয়েছে মতিন মোড়লের খুনিকে খোঁজার জন্য।এছাড়া আজ প্রতিবেশিরাও নানা কথা বলছিলো মেহরান নুজাইশকে নিয়ে বৃষ্টিকে উদ্দেশ্য করে করে।এসবে পাত্তা না দিলেও পরবর্তীতে যে অনেক ঝামেলাই পড়তে হবে তা নিশ্চিত।তাই আগামীকালই এখান থেকে চলে যেতে হবে।এছাড়াও খান বাড়ির সবাই ঢাকা চলে যাবে আগামীকাল।

মেহরান রাউশির দিকে তাকালো।মেয়েটার চোখমুখ শুকনো।রাউশির মাথায় ডান হাতটা রেখে বলল,
“আমাদের সাথেই যাবে উনারা।উনাদের এখানে একা রেখে যাওয়া ঠিক হবে না।”

নুজাইশও সম্মতি জানালো।এদিকে বাড়িতে নুজাইশের থাকা সম্ভব নয়।এমনিতেও দুজন মেয়ে আছে।আবার মেহরান রাউশি।লোকজন তিলকে তাল বানিয়ে নানাকিছু ছড়িয়ে দিয়ে পরে না আবার কোনো বিপদ হয়।তাই নুজাইশ সন্ধ্যা সাতটার দিকে চলে গেলো।

রাতের দিকে বাড়িতে হঠাৎ দুজন মহিলা আর এক মেয়ে আসলো।মেয়েটা বৃষ্টির বয়সী।মহিলা দুজন হাসনা বেগমকে মতিন মোড়লের নানা ঋণের কথা বলা শুরু করলেন। সবাই শুনলো সব।বৃষ্টি বলল,
“আপনাদের পাওনা টাকা পরিশোধ করে দেবো আমি।কিছুদিন সময় দিন।”

এক মহিলা খ্যাঁক করে উঠলেন,
“তোমার বাপ মইরা গেছে। এহন তো টাকা কামানির লাইগা আর নাই কেউ। তা কোন হান থাইকা টাকা দিবা তুমি।আমরা এইগলা বুঝি না।আইজকাই টাকা দেওন লাগবো।”

মেহরান আর রাউশি এই প্রতিবেশিদের আচরণে অবাক না হয়ে পারলো না।আজই এ বাড়ির একজন মানুষ মৃত্যুবরণ করলো। আর আজই এদের এমন ব্যবহার সত্যিই ভারি অদ্ভুত।এদিকে হাসনা বেগম শাড়ির আঁচল মুখে গুঁজে নিরবে কাঁদছেন।স্বামী মারা গেলো কয়েক ঘণ্টা হলো না আর এখনই এরা এসেছে টাকা চাইতে।কি মানুষ!

মহিলা দুজনের চোখ গেলো মেহরান আর রাউশির দিকে।রাউশি এদের একজনকে চেনে।উনি সেই মহিলা যিনি গতকাল রাউশির জামাটা নিজের দাবী করে নিয়ে গেছেন।গতকালই উনার ব্যবহার সম্পর্কে ধারণা হয়ে গেছে রাউশির।

মহিলা একজন বৃষ্টিকে তাচ্ছিল্য করে বলল,
“এইডি কেরা? তোগোর বাড়িত কি হরে? পুলাডা কি নাগর নাকি?”

মেহরান রেগে গেলো।রাউশিও ক্ষেপলো। এদিকে বৃষ্টি আর সহ্য করতে না পেরে উঁচু গলায় ক্রোধ ঢেলে বলল,
“বাজে কথা বলবেন না।আপনার সব কথা সহ্য করছি বলে ভাববেন না যে আপনার বাজে কথাও হজম করে নেব।মুখ সামলে কথা বলতে আসবেন।বেরিয়ে যান বাড়ি থেকে।আপনাদের মতো ছোটলোকের মুখ যেন আর না দেখি আমাদের বাড়ির আশেপাশে।”

মহিলাটা রেগে গেলেন।হাত উঠালেন বৃষ্টিকে মারার জন্য।রাউশি গিয়ে ধরলো মহিলার হাত,
“আপনার হাত বেশি চলতেই পারে, তবে সেটা অবশ্যই অন্যদের ওপর। আমাদের আপনজনদের ওপর এই হাত যদি উঠানো দেখি আমি নিজে এই হাত ভেঙ্গে দেব।”

এত দুঃখ কষ্টের মাঝে রাউশির মুখে আপনজন শব্দটা শুনে ভীষণ ভালো লাগলো বৃষ্টির।এদিকে মহিলাটি হাত মোচড়ামুচড়ি করছেন।রাউশি হাতটা আবারও মুঁচড়ে দিয়েখ্যাঁক করে উঠে আবারও কিছু বলতে যাবে রাউশি হাতটা মুচড়ে দিয়ে বলল,
“অনেক্ষণ যাবৎ আপনার বাজে কথা শুনেছি বলে, দ্বিতীয়বার এই কাজটা মোটেও করবেন না।নয়তো আপনাদের কিভাবে শায়েস্তা করতে হয় সেটা এই রাউশি খুব ভালো ভাবেই জানে।আপনার পাওনা টাকা আপনারা খুব শিঘ্রই পেয়ে যাবেন। এখন এখান থেকে চলে যান দ্রুত।নয়তো কখন কি হয়? সেটা আমিও ভালোভাবে বলতে পারবো না।”

হাত ছুড়ে দেওয়ার মতো ছুড়লো রাউশি। মহিলা একবার রাউশি আর তার পেছনে মেহরানের দিকে তাকালো।কিছু না বলে শুধু চোখ রাঙিয়ে চলে গেলো তারা।রাউশি বৃষ্টির পাশে এসে দাঁড়ালো।কাঁধে হাত রেখে বলল,
“আমরা আগামীকাল চলে যাব।”

বৃষ্টি কেমন ম্লান চোখে তাকালো রাউশির দিকে।রাউশি বৃষ্টির ডান হাত ধরে বলল,
“তোমরাও আমাদের সাথেই যাবে।সবকিছু রেডি করে নাও রাতের ভেতরেই।আর পাওনা টাকা পরিশোধ করে দেব।”

বৃষ্টি বিরোধিতা করে বলল,
“না তা কি করে হয়?”

রাউশি আবারও বৃষ্টির কাঁধে ভরসার হাত রেখে বলল,
“তুমি নাহয় যখন একটা ভালো মাইনের চাকরি করবে তখন পরিশোধ করে দিও।”

বৃষ্টি স্থির দৃষ্টে রাউশির দিকে তাকালো। হাসনা বেগমও তাকিয়ে আছেন রাউশিদের দিকে।এমনিতেই আজ জীবনের যেন অর্ধেক গতি হারালেন তারওপর প্রতিবেশিদের বাজে ব্যবহার আবার এখন রাউশিদের এমন কথা ঠিক কিভাবে নেবেন বুঝতে পারলেন না।

চলবে…..