মেহেরজান পর্ব-৪১ এবং শেষ পর্ব

0
3

#মেহেরজান
লেখনীতে- #সোহামণি
পর্ব ৪১ (শেষ পর্ব)

রাউশিকে নিয়ে মেহরান একটি রুফটপ রেস্টুরেন্টে নিয়ে এলো। বাহারি রঙের লাইটিং এ আলোকিত চারিধার। পাঁচতলা ভবনের ছাদে নির্মিত এই রেস্টুরেন্ট যেন নিজের আলাদা সৌন্দর্য ফুটিয়ে তুলেছে।

রাউশির ঠোঁটের কোণে এক ক্ষীণ হাসির সূক্ষ্ম রেখা দেখা গেলো। রাউশির এই হাসিটাই যেন মেহরানের সবচেয়ে সুখের কারণ হলো। এর কিছুক্ষণ পরই একে একে সবাই এলো। খান পরিবারের সবাই, সাথে বৃষ্টির পরিবার,মেহরানের বন্ধুরা সহ হঠাৎ আয়াশকেও দেখা গেলো এখানে। আয়াশকে দেখে অবাক হলো রাউশি।

মেহরানই আয়াশকে আসতে বলেছিলো। এছাড়া আয়াশ নিজের ভুল বুঝতে পেরেছে। তারও এখনও অনেক বড় জীবন পড়ে আছে। তার জীবনটাও আবার নতুন করে শুরু করা দরকার। বৃষ্টি ডিভোর্সী, সমাজে এমন নারীকে অবিবাহিত যুবকগণ খুব একটা মেনে নিতে চায় না। বৃষ্টি তো সারাজীবন একা কাটাতে পারবে না। তাই তাই মেহরান আয়াশের সাথে বৃষ্টির আজই দেখা করিয়েছিলো। সমস্ত সত্য ঘটনা তুলে ধরেছে মেহরান বৃষ্টির সামনে আয়াশের ব্যাপারে। আয়াশও বার বার ক্ষমা চেয়েছে। বৃষ্টি তখন কিছু না বললেও মেহরানকে পরবর্তীতে বলেছে প্রত্যেক মানুষকেই একটা সুযোগ দেওয়া উচিত।

আয়াশের ওপর মেহরান একদিকে কৃতজ্ঞ। সেদিন আয়াশই রাউশিকে বাঁচিয়েছিলো। নয়তো রাউশি..। আর ভালো না মেহরান। রাউশির দিকে বারকয়েক পলক ফেলে তাকালো। রাউশি আপাতত আলভির সাথে কথা বলছে। তুষার এসে মেহরানের পাশে দাঁড়ালো। আর বলল,
“চোখ নামা শালা। আর কত দেখবি? এক জীবন পরেই আছে দেখার জন্য। নিজেকে সংযত রাখ।”

সাঈদও আসলো তখন। নুজাইশ আর এহসানও আসলো। এহসান এসে মজা করে বলল,
“ওর ভাবটা এমন জীবনে বউ দেখে নি।”

মেহরান এদের কথায় কিছু বললো না আজ। নয়তো ধমকে ধামকে চুপ করাতো। এদিকে রাউশি হাত নাড়িয়ে নাড়িয়ে কি যেন বলছে। রাউশি এটাতো বুঝতে পেরেছে তার বার্থডে সেলিব্রেশনের জন্যই মেহরান এখানে নিয়ে এসেছে তাকে।

“মেহরান যেদিন চোখ খুলে তাকিয়েছিলো সেদিন আমরা সবাই সেখানে উপস্থিত ছিলাম। তুষার,এহসান তো কেঁদেই দিয়েছিলো। সাঈদের অবস্থাও কিছুটা একই ছিলো। এছাড়া নুজাইশও এরপরের দিনই আমেরিকায় গিয়েছিলো। কেউই ভাবতে পারে নি যে এমন মিরাকল হবে।”

আলভি কাহিনীগুলো শুনাচ্ছিলো। আর রাউশিও মন দিয়ে শুনছিলো। আলভি আবারও বলল,
“মেহরান চোখ খোলার পর একটা কথাই জিজ্ঞাসা করেছিলো প্রথমে ‘রাউশি কেমন আছে?’। তার এহেন প্রশ্নে আমরা খুব একটা চমকায় নি। কারণ আমরা জানি মেহরান তোমায় কি পরিমাণ ভালোবাসে।”

বলেই হেসে উঠলো আলভি। রায়শি আড়চোখে মেহরানের দিকে তাকালো। মেহরান এবার নুজাইশের কাঁধে হাত রেখে বাকিদের সাথে কথা বলছে। আলভি আবারও বলল,
“রাউশি, ইউ নো? ইউ আ এ লাকি গার্ল। মেহরান তোমায় অনেক বেশি ভালোবাসে। আজ একদিন দুইদিন ধরে না তো, বহুবছর আগে থেকেই। এমন ভালোবাসা পাওয়া আসলেই দূর্লভ। তোমার আগামী দিনগুল সুন্দর হোক। শুভ জন্মদিন মেয়ে।”

রাউশি হেসে ধন্যবাদ জানালো। আলভি বন্ধুদের কাছে চলে গেলো। আলভি আসতেই এহসান জিজ্ঞাসা করলো,
“কি এতো বলছিলি রাউশিকে?”

আলভি মেহরানের দিকে তাকালো।দেখলো ছেলেটাও উৎসুক দৃষ্টি মেলে তাকিয়ে আছে। আলভি হেসে বলল,
“মেহরানের নামে কুমন্ত্রণা দিচ্ছিলাম।”

একযোগে সবাই হেসে উঠলো। মেহরান চুপ রইলো। রাউশি এখন বড়দের কাছে গেছে। তাদের সাথে কথা বলছে। মেহরান কাউকে খুঁজলো। আয়াশকে খুঁজছে সে। আয়াশকে দেখতে পেলো একদম রেলিং ঘেষে কোণায় দাঁড়িয়ে আছে। রাতের শহর উপভোগ করছে। মেহরান বন্ধুদের ছেড়ে আয়াশের কাছে গেলো। আয়াশ মেহরানের উপস্থিতি বুঝতে পেরে তাকালো। ম্লান হেসে জিজ্ঞাসা করলো,
“আমি কি চলে যাবো?”

মেহরানও রেলিং ঘেষে দাঁড়ালো। বলল,
“যদি তোমার মন চায়।”
“আমার মন চাইবে না এখান থেকে যাওয়ার। তবে কিছুটা লজ্জা আর অস্বস্তি হচ্ছে।”
“লজ্জা অস্বস্তিকে ভুলিয়ে যাও রাউশিকে গিফটটা দিয়ে এসো। আর অতীতের জন্য একবার ক্ষমা চেও।”

আয়াশ পেছনে ঘুরে রাউশিকে খুঁজলো। দেখতেও পেলো। কেমন উৎফুল্ল মেজাজে সবার সাথে হেসে হেসে কথা বলছে। আয়াশ বলল,
“তুমি দিয়ে দিও গিফটটা। আমি গেলে আবার রাগ না করে বসে।”
“যেতে বলেছি।”

মেহরানের দৃঢ় কণ্ঠস্বর। মেহরানের কথা শুনে আয়াশ এবার পা বাড়ালো সেদিকে। আয়াশকে দেখে মাহমুদ খান অন্যদিকে চলে গেলেন। রূপা বেগম যেতে পারলেন না। যাই-ই হোক উনার ভাইয়ের অংশ আয়াশ। বাবার প্রতিচ্ছবি কিছুটা আয়াশের মুখায়বে আছে। আয়াশ মাথা নামিয়ে নরম গলায় রূপা বেগমের কাছে জানতে চাইলো,
“কেমন আছেন খালামণি?”

রূপা বেগম একটু হেসে উত্তর করলেন,
“আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি বাবা। তুমি কেমন আছো? ভাবি কেমন আছে? আরিশা কেমন আছে?”

আয়াশের কণ্ঠরোধ হয়ে এলো এই কথাটা বলতে যে তার মা মারা গেছে দুমাস আগে। তবুও খুব কষ্টে মাথা নিচু করেই বলল,
“মা আর এই দুনিয়ায় নেই খালামণি। আরিশার বিয়ে হয়ে গেছে। ও ভালো আছে।”

ব্যথিত হলেন রূপা বেগম। কান্না আসলেও তা গিলে নিলেন। স্ত্রীর অবস্থা বুঝতে পেরে মাহমুদ খান স্ত্রীকে ডাকলেন। রূপা বেগমও এগিয়ে গেলেন সেদিকে।

এদিকে আয়াশের কথা শুনে রাউশিও থমকে গিয়েছিলো কিয়ৎক্ষণের জন্য। আমেনা বেগম যত যাই-ই করুক রাউশিকে তিনটে বছর কোনো খারাপ কথা বলেন নি। হয়তোবা এসব রাউশি নিজের অজান্তে টাকা দিয়েই কিনতো। তবুও তো!

আয়াশ হাতে থাকা গিফটটা রাউশির দিকে বাড়িয়ে দিলো। রাউশি কষ্ট পেলেও নিজেকে সামলে মুচকি হাসি দিয়ে হাতে নিলো। আয়াশ ছোট্ট করে বলল,
“শুভ জন্মদিন।”

বলেই মেহরানের কাছে চলে এলো সেখান থেকে। মেহরান সিগারেট ধরিয়ে সুখটান দিচ্ছিলো। সিগারেট খাওয়া বারণ তবুও আজ হঠাৎ সিগারেট খেতে মন চাইলো। তাই এই পন্থা।

“তুমি না কিছুদিন আগেই এই অসুখ থেকে ভালো হলে? আবারও তো সেই একই কাজ করছো?”

আয়াশের কথা শুনে ঠোঁট বেঁকিয়ে হাসলো মেহরান। উত্তর না দিয়ে অন্য কথা বলল,
“বৃষ্টির সাথে কথা বলো গিয়ে যাও।তোমাদের মাঝেও বোঝাপড়াটা জরুরী কিন্তু।”

বলেই উঠে চলে যাবে আবারও পেছনে ফিরে বলল,
“আচ্ছা তুমি থাকো আমিই বৃষ্টিকে পাঠিয়ে দিচ্ছি।”

মেহরান বৃষ্টির কাছে গিয়ে বলল,
“আয়াশের সাথে কথা বলো বৃষ্টি। পরিচিত হও। ভবিষ্যতে একসাথেই কাটাতে হবে তোমাদের।”

একটু দূরেই মাহবুব খান দাঁড়িয়ে ছিলেন। তিনিও এগিয়ে এসে বললেন,
“হ্যা তাই করো বৃষ্টি।”

মাহবুব খান সমস্ত বিষয়ই জানেন। মেহরানই বলেছে তাকে।

রাউশি উজানকে খুঁজলো। উজান তখনও অনুপস্থিত। তবে আবার তখনই উজান আসলো। এসেই রাউশির কাছে এসে মাথায় গাট্টা মেরে বলল,
“শুভ জন্মদিন। তোর কি মনে হয়েছে উজান ভাই ভুলে গিয়েছে? অবশ্যই না।”

রাউশি হেসে দিলো। উজানকে কেমন মনমরা মনে হলো। রাউশি জিজ্ঞাসা করলো,
“কি হয়েছে উজান ভাই?”

উজান ঠোঁটে হাসি রেখেই জবাব দিলো,
“বিপাশার বিয়ে হয়ে গেছে।”

চমকে গেলো রাউশি। বিয়ে হয়ে গেছে মানে? বিপাশাও তো উজান ভাইকে ভালোবাসতো। তবে হঠাৎ করে এমন?
রাউশি উজানের কষ্ট বুঝতে পারলো। জিজ্ঞাসা করলো,
“উজান ভাই, হঠাৎ করে?”
“ওর বাবা জোর করে বিয়ে দিয়েছে। আচ্ছা বাদ দে। তোর বার্থডে তে এমন তথ্য মানায় না। এনজয় কর।”

সমস্তকিছু শেষে সবাই একে একে চলে গেলো। খান বাড়ির সবাই চলে গেলো। সবাই একসাথে যেতে চেয়েছিলো তবে মেহরান বলেছে রাউশি আর সে পরে আসবে। মেহরানের বন্ধুরাও চলে গিয়েছে। বৃষ্টিরাও চলে গিয়েছে। আয়াশ তাদের পৌঁছে দেবে।

রাউশি গাড়িতে বসে ছিলো। সেসময় মেহরান হাতে এক বক্স আইসক্রিম এনে রাউশির হাতে দিলো। রাউশি খুব খুশি হলো। মেহরান গাড়িতে উঠে বসলো। গাড়ি স্টার্ট দিলো। রাউশি আইসক্রিম খেতে খেতে জিজ্ঞাসা করলো,
“আজ আপনাকে ভীষণ খুশি দেখাচ্ছে?”

মেহরান হেসে জবাব দিলো,
“সারাজীবনের মতো কাঙ্ক্ষিত নারীকে পেয়েছি, এই খুশি রাখিটা কোথায়?”

রাউশি এক চামচ আইসক্রিম মেহরানের মুখের সামনে তুলে ধরলো। মেহরান একটা নির্জন জায়গায় নিয়ে এলো রাউশিকে। একটা ছোট্ট নদী বয়ে গেছে এই জায়গা দিয়ে। পাশবর্তী একটা জঙ্গলও রয়েছে। রাউশি আইসক্রিমের চামচটা তখনও ধরে ছিলো। মেহরান সেটা রাউশিকেই খাইয়ে দিলো নিজ হাতে। এরপর রাউশির দিকে একটু ঝুকে রাউশি কিছু বুঝে ওঠার আগেই রাউশির ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দিলো। চোখ বড় বড় করে মুহুর্তেই চোখ বন্ধ করে নিলো রাউশি।অনুভুতিগুলো নির্জনতায় যেন আরও বেশি জেকে বসেছিলো। এই নির্জনতার মাঝে শুধু ঠান্ডা হাওয়ার কমতি ছিলো। আর বেসামাল অনুভুতিগুলো সেটা যেন গুরুত্বই দিলো না।

.

মেহরান আর রাউশির নাকি আজ ঘরোয়াভাবে ভাবে বিয়ে পড়ানো হবে। শুধুমাত্র বাড়ির লোকজন আর পরিচিত কিছুজন বাদে কাউকেই ইনভাইট করা হয় নি। আর না বড়সড় কোনো অনুষ্ঠান হবে!

গোধুলী বিকেলে রক্তিম আভায় চারপাশে কেমন লালচে ভাব ছড়িয়েছে এমন মনে হলো। একটা সময় সূর্যটাও একসময় ডুবে গেলো, পাখিরাও নীড়ে ফিরলো তখন।
রাউশিকে একটি লাল জামদানী শাড়ি দেওয়া হলো পড়ার জন্য। রাউশিও শাড়িটা পড়লো। মুখে তেমন মেক-আপের কোনো আস্তরণ মাখলো না। বরং সাদামাটা ভাবেই রইলো। শুধু চোখে কাজল দিলো আর বর্তমানে কোমড় সমান চুলগুলো খোপা করে নিলো। এমন সাজেই রাউশিকে যেন অনন্যা, লাবণ্যময়ী লাগছিলো। উর্মিলা বেগম, রোকসানা বেগম যখন এলেন রাউশির রুমে রাউশিকে এভাবে দেখে নিজেরাও মুখ ফুটিয়ে বলে ফেললেন,
“মাশা-আল্লাহ।”

উর্মিলা বেগম তো বলেই ফেললেন,
“আজ আমার ছেলে তোর থেকে চোখ সড়াতে পারবে না রে মা।”

রাউশি ভীষণ লজ্জা পেলো বড় মায়ের এহেন কথায়। কেউ পুত্রবধুকে এমন কথা বলে জানা নেই রাউশির। রাউশিকে নিচে নিয়ে যাওয়া হলো।

মেহরান খয়েরী রঙের পাঞ্জাবি-পাজামা পড়েছে। বন্ধুদের সাথে কথা বলছিলো। রাউশিকে নামতে দেখে বৃষ্টি এগিয়ে গেলো। আর কানে ফিসফিস করে বলল,
“আজ তোমার থেকে মেহরান ভাই চোখ সড়াতে পারবে না।”

লজ্জা পেলেও নিজেকে ধাতস্থ করলো রাউশি। মেহরান রাউশিকে দেখার পর একদৃষ্টে তাকিয়ে রইলো। নুজাইশের সেসময় কল আসলো। বড় বোন নুসফার কল করেছে। সে উঠে চলে গেলো বাড়ির বাইরে। তার মনে হলো আর তার আপু খুব ভালো একটা কাজ করেছে। মেহরানকে একদৃষ্টে রাউশির দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে এহসান ব্যঙ্গ করে বলল,
“মনে হয় না মেহরান আজ ছাড় দেবে রাউশিকে।”

মেহরান তার কথা শুনে ঠোঁট কামড়ে এসে পিঠে একটা চাপড় লাগিয়ে দিলো। এহসান উহ করে উঠলো। রাউশিকে নিয়ে আসা হলো। মেহরানের পাশে বসানো হলো।

রাউশি নিজেকে গুটিয়ে বসে রইল। মেহরান সবার অগোচরে রাউশির একটু কাছে এগিয়ে কানে ফিসফিস করে বলল,
“অসাধারণ তুমি আবারও দ্বিতীয়বারের জন্য আমার জীবনের খাতায় খোদাই করে নাম লেখাচ্ছো।”

মেহরানের মুখে তুমি শব্দটা শুনে রাউশি যেন আকাশ থেকে পড়লো। এই লোক আবার কবে থেকে এই তুমি’তে এসেছে?

বিয়ে পড়ানো শেষ হলো। কাজী যখন মেহরানকে কবুল বলতে বলেছিলো মেহরান দ্বিধাহীন একদম শুদ্ধভাবে দ্বিতীয়বারের মতো আবারও কবুল করে নিয়েছে রাউশিকে। রাউশিও তেমনই ভাবে মেহরানকে আজীবনের জন্য কবুল করে নিয়েছে। রাউশির সেমুহুর্তে মনে হলো জীবন সুন্দর। বাঁধা বিপত্তি এসব থাকবেই। সব মিলিয়ে জীবনকে উপভোগ করার মাঝে সার্থকতা নিহিত।

রাতে বাসর ঘরে রাউশি বারান্দার দরজার সামনে দাঁড়িয়ে ছিলো। খাটটা গোলাপের পাপড়িতে কত সুন্দর সাজানো হয়েছে। রাউশি অনেক্ষণ যাবৎই মেহরানের অপেক্ষা করছিলো। মেহরানও ক্ষণবাদেই চলে এলো। আজ হঠাৎ রাউশির বুক ধ্বক করে উঠলো। মেহরানের সাথে অনেক রাতই তো একসাথে থেকেছে। তবে তেমন কিছু হয় নি। কিন্তু আজ তো হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে! সেজন্যই কি?

মেহরান রাউশির দিকে এগিয়ে গিয়ে পেছন থেকে জাপটে জড়িয়ে ধরলো। কানে ঠোঁটের স্পর্শ একে দিয়ে বলল,
“অপেক্ষা করছিলে?”

রাউশি ছোট্ট করে বলল,”হু।”

রাউশি কাঁপছিলো। মেহরান সেটা স্পষ্ট টের পেলো। আর হেসে উঠলো। হেসে বলল,
“আল্লাহ তুই কাঁপছিস রাউশি? কি হয়েছে তোর?”

মেহরান তুই-তে ফিরে এসেছে আবারও। এদিকে মেহরানের কথা শুনে মাথা নামিয়ে নিলো। রাউশিকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে মেহরানের রাউশির কপালে গাঢ় চুম্বন একে দিলো।আর বলল,
“আমার জীবনে আরও অনেক আগে আসা উচিত ছিলো তোর। এত দেরিতে আসা মোটেও উচিত হয় নি। তবুও তুই শুধুই আমারই।”

রাউশি এবার সাহস করেই মেহরানের গলা জড়িয়ে ধরলো। পুরো রুম জুড়ে আলোকিত করা মৃদু ক্যান্ডেলের আলোতে অনুভুতিরা আগ্রাসী হয়ে উঠলো। মেহরানের চোখজোড়া রাউশির চোখেতে নিবদ্ধ হলো। বিড়বিড় করে আওড়ালো,
“আমার তোকে প্রয়োজন রাউশি। অনুভব করতে পারছিস? বুকে কান পেতে শোন। মনের কথা,আকুলতা। সবটুকুতেই তোকে চাই।”

রাউশি মুচকি হাসি দিয়ে মেহরানের বুকে মাথা ঠেকালো। মেহরানের হার্টবিট তখন অতিমাত্রায় রয়েছে। রাউশি একটা হাসি দিয়ে দুষ্টুমি করে বলল,
“কান পেতে তো শুনলাম, তবে আমি রাউশি কিছুই বুঝলাম না।”

মেহরান রাউশির দুষ্টামি ধরতে পারলো। রাউশির ঠোঁটে আলতো করে চুমু খেয়ে হুট করেই পাজাকোলে তুলে নিলো। খাটের দিকে এগিয়ে যেতে যেতে বলল,
“আমি মেহরান খান আছি কেন? সব বুঝিয়ে দেবো তোকে।”

সযত্নে রাউশিকে বিছানায় শোয়ালো মেহরান। একটি ক্যান্ডেল বাদে সমস্ত ক্যান্ডেল নিভিয়ে দিলো। প্রতিক্ষিত সেই রাত আজ হতে চলেছে। সাক্ষী থাকবে বায়ুকণা।রাউশির দিকে এগিয়ে যেতে যেতে কবির সুরে বলল,

“ আমার হৃদ জান্নাতের সকাল-সন্ধ্যা তুই,
থেকে যাবি অম্লান,
আমার নিভৃত জীবনের সর্বাংশ তুই,
মেহরানেরই মেহেরজান। ”

~ সমাপ্ত