ম্যারি মি পর্ব-০৪

0
3

#ম্যারি_মি-০৪
#তাহিনা_নিভৃত_প্রাণ

আজকে সারাদিন ধরে বৃষ্টি হচ্ছে। নিনীকা তৃতীয় দিনের মতো ভার্সিটি থেকে ফিরছে৷ আজ সে গাড়ি আনেনি, স্কুটি নিয়ে এসেছিলো। শরীরের শর্ট ফতোয়াটা ইতিমধ্যে ভিজে একাকার। জিন্স ভিজে গেলেও ততোটা বোঝা যায় না। পায়ের হাইহিল পিছলে যাচ্ছে বার-বার৷ স্কুটি চালাতে বিড়ম্বনার মধ্যে পড়তে হচ্ছে নিনীকাকে৷ ফুটপাতে স্কুটি থামালো সে৷ এখন বৃষ্টির তেজ কমে এসেছে, এটাকে বলে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি৷ নিনীকার ব্যাগ ওয়াটারপ্রুফ হওয়ায় বেঁচে গেলো।

একটু দূর থেকে স্কুটি নিয়ে নিনীকাকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে বাইক নিয়ে এগিয়ে এলো ধ্রুব। পড়োনে ক্যাডেটের পোশাক৷ হুট করে ধ্রুবকে নিজের সামনে দেখে নিনীকা চমকে গেলো। চেহারায় সেটা না ফুটিয়ে ভ্রু কুঁচকে তাকালো। ধ্রুব হেলমেট খুললো না। বাইকে বসেই বলল,

‘ কোনো সমস্যা? ‘

নিনীকা ইতস্তত করলো,

‘ আসলে বৃষ্টির কারণে হিল পিছলে যাচ্ছে বার-বার, চালাতে সমস্যা হচ্ছে। ‘

ধ্রুব নিনীকার দিকে পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকালো। পড়োনের ফতোয়া কালো রঙের সুতির কাপড়ের হওয়ার কারণে ভিজে গেলেও সমস্যা হচ্ছে না। কালে রঙের হাইহিলে চোখ পড়তেই ধ্রুব ঠোঁট বাকালো।

‘ বৃষ্টির দিনেও ফ্যাশন করে হাইহিল পড়ে হয় তোমাদের৷ ‘

নিনীকা নাক ফুলিয়ে বলল,

‘ আগে ভাবিনি এতো বৃষ্টি হবে আজ, জানলে অবশ্যই পড়ে আসতাম না। ‘

ধ্রুব কাঁধ চুলকে বলল,

‘ তুমি চাইলে আমি তোমাকে লিফট দিতে পারি। ‘

নিনীকা এক মুহূর্ত ভাবলো। আপাতত এ ছাড়া আর কোনো পথ নেই। স্কুটিটা তালা মেরে সে ধ্রুবর পেছনে দু পা দু’দিকে দিয়ে বসলো। ধ্রুব মিররে নিনীকাকে দেখে হাসলো,

‘ তোমার স্কুটির হেলমেটটাই থাক, আমি এক্সট্রা আনি আসিনি। ‘

নিনীকা উত্তর দিলো,

‘ কোনো সমস্যা নেই। ‘

ধ্রুব বাইক স্টার্ট দিলো৷ নিনীকা প্রশ্ন করলো,

‘ আপনার বাসা কি এদিকে? ‘

‘ না এদিকে আমি একটি ফ্ল্যাটে থাকি দুদিন ধরে। ‘

‘ বাড়িতে কি সমস্যা? স্যরি ব্যক্তিগত প্রশ্ন করে পেলেছি৷ ‘

‘ আরে না, বাড়িতে একটু প্রব্লেম হয়েছে সেজন্য কয়েকদিন এখানেই থাকবো। ‘

ধ্রুবর চোখের সামনে ভাসলো ধারার মুখ। মায়ের সাথে অভিমান করেই সে বাড়িতে যাচ্ছে না। মা ফোন না করা পর্যন্ত সে যাবেও না। এরকম অনেক বারই হয়েছে। ধারা প্রতিবারই ফোন করে যেতে বলেছেন তারপর ধ্রুব বাড়িতে ফিরেছে৷

নিনীকার বাড়ির রাস্তায় ধ্রুব বাইক থামালো। বড়বড় করে লেখা শেখ বাড়ি লেখাটি স্পষ্ট করে দেখা যাচ্ছে। নিনীকা অফার করল,

‘ আমাদের বাড়িতে আসুন, আমাকে যেহেতু লিফট দিয়েছেন এক কাপ কফি তো আপনি খেতেই পারেন। ‘

ধ্রুব ঠোঁট চেপে ভাবলো। তার আপাতত কোনো কাজ নেই। সুতরাং যাওয়াই যায়। বলল,

‘ ঠিক আছে চলো। ‘

নিনীকার পেছন পেছন ধ্রুব যাচ্ছে। এর মধ্যে তার মুঠোয় স্ব শব্দে বেজে উঠলো। নিনীকা কি ভেবে শব্দ করে হাসলো।

‘ হয়তো আপনার গার্লফ্রেন্ডরা ফোন দিচ্ছে, চিল আপনি কথা বলুন আমার সমস্যা হবে না। ‘

ধ্রুবর মুখ থমথমে। গেইট পেরিয়ে ঢুকার সময় বাড়ির দারোয়ান বড়বড় চোখে তাকিয়ে ছিলো। গত দিনের কথা মনে করে ধ্রুব কেশে ফেললো। নিনীকাদের সদর দরজা দিয়ে প্রথমবার বাড়িতে ঢুকলো সে। ড্রয়িংরুমের সোফাতে বসতে বললো নিনীকা। ধ্রুব বসে চারিদিকে চোখ ভুলিয়ে নিলো। আভিজাত্য চারিদিকে ঝলমল করছে।

নিনীকা উপরে গিয়ে ফোন করে ড্রাইভারকে বলল তার স্কুটির কথা। ফ্রেশ না হয়ে আগে মায়ের ঘরে গেলো। মিথিলা তখন কিছু একটা করছিলেন। নিনীকা ঢুকেই বলল,

‘ নিচে একজনকে বসিয়ে এসেছি মা, তুমি গিয়ে তাকে কোম্পানি দাও ততোক্ষণে আমি ফ্রেশ হয়ে আসি। ‘

মিথিলা অতিথি আসার কথা শুনে নিচে নামলেন। ধ্রুব তাকে দেখেই উঠে দাড়িয়ে সালাম দিলো। পড়োনের ড্রেসই পরিচয় বলে দিলো তার। মিথিলা হেসে বললেন,

‘ ভিন্ন ভার্সিটির হয়ে নিনীকার সাথে পরিচয় কিভাবে হলো বাবা? ‘

ধ্রুব ইতস্তত করে বলল,

‘ লিফট দিলাম..’

মিথিলা অবশ্য উত্তর আশা না করেই কিচেনের দিকে চলে গেলেন৷ সার্ভেন্ট কে বলে আবার এলেন ড্রয়িংরুমে। ধ্রুবর সোজাসুজি বসে বললেন,

‘ কেমন আছো তুমি? ছোট বলে তুমিই ডাকছি কিছু মনে করো নি তো? ‘

‘ আরে না আন্টি কি বলেন, আপনি তো আমার মায়ের মতোই। আমি ভালো আছি, আপনার সাথে কথা বলে আরও ভালো লাগছে। ‘

মিথিলা হেসে ফেললেন। ধ্রুব বুঝলো নিনীকার মা হাসতে ভালোবাসেন৷

‘ বাড়িতে কে কে আছে তোমার? ওহ হ তোমার নামটাই তো জানা হলো না। কি নাম তোমার? ‘

‘ আমি ধ্রুব মাহবুব, সন অফ আর্মি অফিসার ফাহিম মাহবুব, মাদার ভার্সিটি টিচার ধারা আহমেদ। আমার একটি ছোট্ট বোনও আছে যে ফাইভে পড়ে। আপনি? ‘

মিথিলার চোখেমুখে উচ্ছ্বাস। একা বাড়িতে একজন আড্ডা দেওয়ার মানুষ পেলেন যেনো।

‘ আমি মিথিলা, নিনীকার মা ও এই বাড়ির একমাত্র ছেলে রমজান শেখের ওয়াইফ। আমি স্কুলে পড়াতাম একটা সময় তবে এখন আর পড়াই না৷ অবসরে সাহিত্যের বই নিয়ে পড়ে থাকি। আমার একটাই মেয়ে। এ বাড়ির সদস্য সংখ্যা তিন, বাট সার্ভেন্ট, দারোয়ান, ড্রাইভার সবাই মিলে অনেকজন৷ শেখ বাড়িতে প্রথমবার এসেছো সেজন্য তোমাকে স্বাগতম। ‘

ধ্রুব মুগ্ধ হয়ে সব শুনলো। নিনীকার মা ছটফটে স্বভাবের। কথা বলেন অনেক সুন্দর করে, সাহিত্যের মানুষদের কথার ধরণ যে অন্যরকম সুন্দর হয় সেটা সে জানতো আজ সামনাসামনি শুনে নিলো৷ সিঁড়ির দিকে চোখ পড়তেই দেখলো নিনীকা নামছে। পড়োনে স্কার্ট ও শার্ট, মাথায় হেয়ার বেল্ট। অন্যরকম স্নিগ্ধ লাগছে৷ নিনীকা মিথিলার পাশে বসলো।

‘ কোনো অসুবিধা হচ্ছে না তো? ‘

‘ একদমই না, যাকে পাঠিয়েছো সে আমাকে একদমই বোরিং হতে দেয়নি। আমি এনজয় করছি অনেক। ‘

নিনীকার এক হাত দিয়ে মিথিলাকে জড়িয়ে ধরলো।

‘ ইনি হলেন আমার সুন্দরী মাদার, তার সাথে কথা বলার সৌভাগ্য সবার হয়না। কারণ তিনি সবার সাথে কথা বলেন না। আপনার সাথে কথা বলেছেন তারমানে তার আপনাকে অনেক ভালো লেগেছে। ‘

মিথিলা হেসে বললেন,

‘ আমার তোর বন্ধুকে অনেক ভালো লেগেছে নিনী মা। ওর নামটাই তো ভালো লাগার মতো। ‘

ধ্রুব লজ্জা পেলো। সামনাসামনি কেউ প্রশংসা করলে সে কিছু বলতে পারে না। নিনীকা কথা পাল্টালো।

‘ মা ইনি আমাকে লিফট দিয়েছেন আজ, নাহলে তো আমি বাড়িতে কিভাবে পৌছাতাম জানিই না৷ ‘

‘ ভালো ছেলে, মাঝে মধ্যে আসবে এখানে আমি তোমার সাথে আড্ডা দিবো৷ ‘

নিনীকা ঠোঁট চেপে হেসে বলল,

‘ প্রথম পরিচয়ে উনি আমার শত্রু ছিলেন। বাট তুমি যেহেতু আমার বন্ধু বানিয়ে দিয়েছো তবে আমি মেনে নিচ্ছি। ‘

সার্ভেন্ট ইতিমধ্যে কফি ও নাস্তা দিয়ে গেছে। ধ্রুব কফি খেতে খেতে বলল,

‘ আপনার প্রিয় লেখক কে আন্টি? ‘

মিথিলা আগ্রহী হয়ে বললেন,

‘ আমার সবার লেখাই ভালো লাগে। তবে বর্তমানে তোমাকে দেখে শীর্ষেন্দুকে প্রিয় বলতে ইচ্ছে করছে। তোমার নামটার একটি চরিত্র নিয়ে শীর্ষেন্দু লিখেছেন। সেটাতে তুমি অত্যন্ত অন্যরকম একটি চরিত্রে ছিলে। আচ্ছা তুমি কি ড্রিংক করো? ‘

ধ্রুব হেসে ফেললো,

‘ না আন্টি, কখনো করিনি। আমি তো ক্যাডেটে পড়ি এসব আমার দ্বারা হবে না। আর বাবা মা ও এসব পছন্দ করেন না। ‘

‘ গ্রেট, বইয়ের ধ্রুব কিন্তু অনেক ড্রিংক করতো৷ ‘

নিনীকা কফিতে চুমুক দিয়ে বলল,

‘ মা বইয়ের নামের কোনো মানুষ পেলে মিলিয়ে দেখেন তেমন স্বভাব বা বৈশিষ্ট্য আছে কি না। আপনি কিছু মনে করবেন না। ‘

ধ্রুব চমৎকার ভঙ্গিতে হাসলো,

‘ একদমই কিছু মনে করছি না, বরং আন্টির কথা গুলো আমি উপভোগ করছি। ‘

মিথিলা উঠে দাড়ালেন,

‘ তুমি কি বইটা পড়তে চাও ধ্রুব? ‘

‘ আপনি বললে পড়বো। ‘

‘ বেশ আমি তবে বইটা নিয়ে আসছি, পড়ে ফেরত দিয়ে যেও। তুমি চাইলে আমার থেকে নিয়ে পড়তে পারো যেটা ইচ্ছে। ‘

মিথিলা উপরে চলে গেলেন। নিনীকা ঠোঁট চেপে বলল,

‘ কিছু মনে করবেন না, মা এমনই। অনেক সহজ সরল৷’

‘ আমি কিন্তু একবারও বলিনি কিছু মনে করেছি। বরং নিজের নামের অন্যরকম একটি চরিত্র পড়তে আমি আগ্রহী। ‘

মিথিলা বইটা নিয়ে নিচে নামলেন। ধ্রুবকে দিয়ে বললেন,

‘ এই নাও বই। ‘

ধ্রুব বইটা হাতে নিলো। উপরে বড়বড় করে লেখা ‘দূরবীন। ‘

(চলবে)