#যেদিন_তুমি_এসেছিলে
#পর্ব_৩৯
#মুন্নি_আক্তার_প্রিয়া
____________________
অপ্রত্যাশিতভাবে কাছে আসার মুহূর্ত হয় কল্পনাতীত, বর্ণনাতীত। অনুভব করার জ্ঞানটুকুও অবশিষ্ট নেই। মোহাবিষ্ট হয়ে আহনাফের দ্বারা অর্ষার হাত চলছে। হার্টবিট চলছে দ্রুত। অস্বস্তিকর পরিস্থিতি বলবে নাকি সুখকর পরিস্থিতি হিসেবে আখ্যায়িত করবে সেটাও সে বুঝতে পারছে না।
স্মিথ দৌঁড়ে রান্নাঘরে আসায় আহনাফ অর্ষাকে ছেড়ে কিছুটা দূরে সরে দাঁড়ায়। স্মিথও কিছুক্ষণ কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।
অর্ষা আমতা-আমতা করে জিজ্ঞেস করে,’কী হয়েছে স্মিথ?’
স্মিথ শান্তকণ্ঠে বলল,’ফ্রিজের পানি খাব।’
আহনাফ ফ্রিজ থেকে পানির বোতল বের করে একটা গ্লাসে ঢেলে দেয়। স্মিথ গ্লাস নিয়ে চলে যাওয়ার পর আহনাফ আবার কাছে আসতেই অর্ষা বলে,
‘আর সাহায্য লাগবে না। কাটা হয়ে গেছে।’
‘ডাবলি কি আগে ভেজানো ছিল? সেদ্ধ হবে এখন?’
অর্ষা এবার আহনাফের দিকে ঘুরে দাঁড়ায়। কোমরে হাত রেখে বলে,’আপনার কি মনে হয় আমি রান্নাবান্না করতে জানি না?’
‘আমি এই কথা কখন বললাম? আমি তো শুধু জিজ্ঞেস করলাম।’
‘আপনার প্রশ্নের ধরণেই বোঝা যায়। ভেজানো ডাবলি আগেই ফ্রিজের ডিপে রাখা ছিল। দু’দিন আগে বানিয়ে খেয়েছিলাম।’
‘এ কথাটা প্রথমে বললেই পারতে। শুধু শুধু ঝগড়া করার জন্য মুখিয়ে থাকো।’
‘আমি মোটেও ঝগড়া করছি না।’
‘তাহলে কি তর্ক করছ?’
‘হয়েছে কি আপনার আজ?’
‘আমার আবার কী হবে? আমি কি মেয়ে নাকি? হলে আমার বউয়ের হবে। মানে তোমার।’
কথাটা বলেই অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে আহনাফ। কী বলতে কী বলে ফেলেছে! এদিকে আহনাফের এমন কথা শুনে মুখ হা হয়ে গেছে অর্ষার।
আহনাফ মুখটা কাচুমুচু করে বলল,’স্যরি! আমি আসলে এমন কিছু বলতে চাইনি। সব দোষ লামিয়ার। ওর বাতাস লেগেছে আমার গায়ে। তাই তো ওর মতো বেফাঁসে উলটা-পালটা কথা বলে ফেলেছি। তুমি কিছু মনে কোরো না প্লিজ!’
কথা শেষ করে আহনাফ আর এক মুহূর্তও সেখানে দাঁড়ায় না। লম্বা লম্বা পা ফেলে দ্রুত বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়। অর্ষা বিস্মিত নয়নে নিরবে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে হেসে ফেলে।
আহনাফকে হন্তদন্ত হয়ে আসতে দেখে লামিয়া জিজ্ঞেস করে,’আরে ভাইয়া কী হলো?’
আহনাফ অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে ফের। লামিয়ার জন্যই সব ঘেঁটে যাচ্ছে। এতদিন তো সে তার গম্ভীরতা, রাগ নিয়ে ভালোই কর্তৃত্ব ফলাচ্ছিল। নিজের মতো চলতে পারছিল। আর এখন কিনা হুট করেই হাওয়া বদলে গেল!
আহনাফকে নিরুত্তর দেখে লামিয়া ফের বলল,’এক্সকিউজ মি ভাইয়া? হলো কী?’
‘কিছু হয়নি।’
‘এভাবে বাড়ি থেকে বের হলেন যে? ভূত দেখেছেন নাকি?’
আহনাফ বেঞ্চে বসতে বসতে বলল,’ধুর! কীসব যে বলো তুমি। ভূত আসবে কোত্থেকে? ভূত বলতে কিছু আছে নাকি?’
লামিয়াও এবার পাশে বসে বলল,’হয়তো নেই। তবে আপনার ভাবসাবে মনে হচ্ছে থাকলেও থাকতে পারে।’
আহনাফ এবার নিহালের দিকে তাকয়। কপাল চুলকে মৃদুস্বরে জানতে চায়,’একে টলারেট করেন কীভাবে?’
‘সবই কপাল ভাই! দু’কাঁধ উঁচু করে বলল নিহাল।
লামিয়া গাল ফুলিয়ে বলে,’তোমরা দুজন আমাকে পচাচ্ছ?’
নিহাল হেসে ফেলে। লামিয়ার গাল টেনে দিয়ে বলে,’এত সাধ্যি কার?’
লামিয়া অবশ্য নিহালের আহ্লাদী কথায় একদম পাত্তা দিলো না। সে এমনভাবে নিহালের দিকে তাকাল যার অর্থ,’একবার শুধু একা পাই তোমাকে! ঘাড় ম’ট’কা’ব একদম। আমায় তো চেনো না তুমি!’
এরপর সে নাছোড়বান্দার মতো আবারও আহনাফের কাছে জানতে চাইল,’আমি কী জিজ্ঞেস করলাম? বলেন না কেন?’
‘তুমি কি এমনই লামিয়া? মাঝখানে এতগুলো কথা হয়ে গেল। তারপরও সেই একই প্রশ্ন নিয়ে বসে আছো!’
‘আরে না জানলে বুঝব কীভাবে প্ল্যান কতদূর আগালো?’
‘কী! প্ল্যান মানে? কীসের প্ল্যান?’
লামিয়া এবার ফেঁসে যায়। মুখ ফসকে কথা বলার স্বভাব তার ইহজীবনেও যাবে কিনা সন্দেহ! তুতলিয়ে বলল,
‘চটপটি হওয়ার প্ল্যান।’
‘কী বলো এসব?’
‘আসলে ভাইয়া লামিয়া প্ল্যান করেছিল যে, অর্ষার চটপটির প্লেটে ঝাল মিশিয়ে দেবে একটু বেশি। ঐযে একটু আগে নাকি দুজনের রাগ-অভিমান হয়েছে। তাই রিভেঞ্জ নেওয়ার প্ল্যান করেছিল আরকি! অর্ষা তো ঝাল খেতে পারে না।’
নিহাল লামিয়াকে বাঁচানোর জন্য মিথ্যা বলল। লামিয়া যতই বাঁচাল প্রকৃতির মেয়ে হোক না, তার তো স্ত্রী! আর কঠিন মুহূর্তে, বিপদে-আপদে স্ত্রীকে বাঁচানো তার দায়িত্ব ও কর্তব্যের মধ্যে পড়ে। এদিকে লামিয়াও মহাখুশি হয় নিহালের পরিস্থিতি সামলে নেওয়ার ক্ষমতা দেখে।
ওদের দুজনের খুশিতে পানি ঢেলে আহনাফ বলল,’কিন্তু অর্ষা তো ঝাল খেতে পারে। শুধু তাই নয়, খুব পছন্দও করে।’
লামিয়ার হাসি বন্ধ হয়ে যায়। কী করবে এখন সে? সেই সময়ে তাকে আল্লাহ্-ই সাহায্য করে। উসিলা হিসেবে অর্ষাকে বোধ হয় পাঠিয়ে দিলেন।
গার্ডেনে এসে অর্ষা সবাইকে ভেতরে আসতে বলল। চটপটি বানানো হয়ে গেছে। লামিয়া আর এক সেকেন্ড সময়ও নষ্ট করল না। দ্রুত বসা থেকে উঠে অর্ষার হাত ধরে হাঁটতে হাঁটতে বলল,’হ্যাঁ, হ্যাঁ চল।’
‘আরে! এভাবে তাড়াহুড়া করে হাঁটছিস কেন? তুইও পড়বি, আমাকেও ফেলবি।’
‘আর আস্তে হাঁটলে আমি ম’র’ব। সূতরাং পা চালা।’
অর্ষায় বেজায় বিরক্ত হয়ে লামিয়ার দিকে তাকায়।
অর্ষা সবার জন্য চটপটি নিয়েছে বাটিতে। স্মিথ আর লিলিয়া খাবে না জানিয়ে দিয়েছে। যেহেতু বেশি করে ঝাল দিয়ে বানানো হয়েছে তাই আহনাফ কিংবা অর্ষা কেউই আর জোর করল না।
খাওয়ার সময় লামিয়া খেয়াল করে যে, আহনাফ কেমন যেন সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকাচ্ছে। একটু পরপরই তাকাচ্ছে। পাছে লামিয়া আবার ধরা না পড়ে যায়, তাই অর্ষাকে বলল,
‘তোর সাথে আমার কিছু কথা আছে। চল ঘরে যাই।’
অর্ষা আহনাফের দিকে তাকাতেই আহনাফ সায় দিল। নিহালও বলল,’হ্যাঁ, যাও তোমরা আলাদা গল্প করো। মেয়েলি গল্প শুনে আমাদের কাজ নেই। আমি আর আহনাফ ভাইয়া আমাদের গল্প করি।’
অর্ষা হেসে বলল,’ঠিক আছে।’
দুজনে নিজেদের খাবার নিয়ে রুমে চলে যায়। বিছানায় বসে অর্ষা বলল,’এবার বল এমন কী কথা?’
‘আরে ধুর! জানিস না তো কী হয়েছে!’
‘কী?’
‘আমি মুখ ফসকে প্ল্যানের কথা বলে ফেলেছি।’
অর্ষা কপাল চাপড়াতে চাপড়াতে বলে,’তোর বেফাঁসে কথা বলার স্বভাব কি কোনোদিন যাবে না?’
‘মনে হয় না।’
‘বেশি কিছু যে বলিসনি এটাই অনেক।’
‘ঘোড়ার ডিম! একটু পরপর তোর হাজবেন্ড যেই লুক দিচ্ছে! বাপরে বাপ!’
‘বাদ দে এসব। আমি বলি শোন, শুধু শুধু এসব করে সময় নষ্ট করিস না। তোরা ঘুরেফিরে ইনজয় কর। কাল থেকেই ঘুরাঘুরি শুরু কর।’
‘অত সোজা? এত সহজে আমি হাল ছাড়ছি না বুঝলি?’
‘বাচ্চামো করছিস কেন? আমায় একটা কথা বল। তুই এখানে হানিমুনে এসেছিস নাকি রোমান্টিসিজম শেখানোর ক্লাস নিতে?’
লামিয়া দুষ্টু হেসে বলল,’দুটোই।’
অর্ষার ফোনে হোয়াটসএপে তখন কল আসে। ফোন চার্জে দেওয়া ছিল। লামিয়া গিয়ে ফোন তোলে।
‘রেশমি ফোন করেছে।’ বলল লামিয়া।
এরপর সে নিজেই ফোন রিসিভ করে বলল,’কীরে? কী খবর?’
‘লামিয়া! তুই এখনো অর্ষার বাসায়?’ ওপাশ থেকে বলল রেশমি।
‘জি হ্যাঁ।’
লামিয়া অর্ষার পাশে বসে ফোন লাউড স্পিকারে দিল। ওপাশ থেকে রেশমি বলল,’রাতেও এখানে থাকবি?’
‘উঁহু। একটু পর চলে যাব। তোর কাহিনি কী বল? অর্ষাকে একা কল দিলি কেন?’
‘ভেজালে পড়ে গেছি বা’ল! আমার জন্য ঘটকে বিয়ের প্রস্তাব এনেছে।’
‘ওয়াও! এটা তো গ্রেট নিউজ। গুড নিউজ। তোর মুড অফ কেন তাহলে?’
অর্ষাও বলল,’তাই তো! তুই না এতদিন বিয়ে বিয়ে করে পাগল হয়ে যাচ্ছিলি? তাহলে এখন এমন করছিস কেন?’
রেশমি বিরক্ত হয়ে বলল,’আশ্চর্য! তাই বলে কি আমি এত তাড়াতাড়ি বিয়ে করতে চেয়েছি? অনার্সটা শেষ করতে চেয়েছিলাম।’
লামিয়া ফোন নিয়ে শুয়ে পড়ল। হেসে হেসে বলল,’একেবারে বিয়ে পাশ কর আগে। পরে না অনার্স আর মাস্টার্স করবি।’
‘মজা নিস না লামিয়া।’
‘আরে ইয়ার! এত ভাউ খাচ্ছিস কেন? আমিও তো বলেছিলাম বিয়েটিয়ে কিচ্ছু করব না এখনই। কিন্তু কী হলো শেষে? ছেলেকে দেখে আমারই মাথা নষ্ট হয়ে গেল। আমিই বিয়ের জন্য পাগল হয়ে গেলাম। তোরও দেখবি এমন হবে।’
‘জি না! আমি ছেলের ছবি দেখেছি। আহামরী কোনো সুন্দর নয়। তবে চলার মতো।’
‘তুই যদি সত্যিই বিয়ে করতে না চাস তাহলে বাড়িতে সুন্দর করে বুঝিয়ে বল।’ বলল অর্ষা।
রেশমি রাগ দেখিয়ে বলল,’বলেছি রে বলেছি! কিন্তু ম’রা’র ঘটক যে কী বুঝাইছে আব্বু-আম্মুরে আল্লাহ্ মালুম! ঘটক উল্টা আমার সামনেই মাকে বলে, এখনই তো মেয়েদের বিয়ের সময়। পরে চেহারা নষ্ট হয়ে যাবে ব্লা ব্লা।’
‘মহিলা ঘটক নাকি?’
‘হ্যাঁ রে! পাশের বাড়ির আন্টি। তার বান্ধবীর ছেলের জন্য ঘটকালি করতেছে।’
লামিয়া আর অর্ষা এবার শব্দ করে হেসে ফেলে। লামিয়া হেসে হেসে বলে,’তোর বিয়ের দায়িত্ব যখন পাশের বাড়ির আন্টি নিয়েছে, তখন তুই নিশ্চিন্তে থাক। উনারা আদাজল খেয়েই নামে।’
‘সব দোষ তোদের।’
‘আমাদের?’ সমস্বরে বলল অর্ষা, লামিয়া।
লামিয়া জিজ্ঞেস করল,’আমরা কী করেছি?’
‘তোরা সবাই বিয়ে করে ফেলেছিস এই খোঁটা দিচ্ছে আম্মু। আমি না করেছি বলে আমায় বলতেছে, তোর সব বান্ধবীরা বিয়ে করে ফেলেছে। তাহলে তোর সমস্যা কী? এখন আমি কী করব তোরাই বল।’
‘এত ভাউ না খেয়ে ছেলে ভালো হলে বিয়ে-শাদী করে ফেল।’
‘সলিউশনের জন্য অর্ষাকে ফোন করেছিলাম। আর তুই আমাকে এসব কী বলতেছিস?’
‘খারাপ কী বললাম? বিয়েটা করেই ফেল। ভালোই হবে তাহলে। আমরা তিনজনে ম্যারিড। তুই একাই আনম্যারিড বিষয়টা কেমন না?’
রেশমি বিমর্ষস্বরে বলল,’কালকে দেখতে আসবে। দেখি কী হয়! রাখছি এখন।’
‘ঠিক আছে। অল দ্য বেস্ট।’
ফোন রেখে লামিয়া বলে,’বিয়েটা হয়ে গেলেই ভালো হবে। চার বান্ধবী এক সাথে বর নিয়ে ঘুরতে যাব। গ্রুপ সেলফি তুলব। অনেক মজা হবে।’
প্রত্যুত্তরে অর্ষা মুচকি হাসে। বাটিগুলো হাতে নিয়ে বলে,’আমি যাই ডিনারের ব্যবস্থা করি।’
‘যা। আমি একটু শুয়ে থাকি।’
অর্ষা গিয়ে একাই ডিনারের আয়োজন করছিল। কিছুক্ষণ পর লিলিয়াও এসে অর্ষার হাতে হাতে কাজ করে। আজ অনেক পদের খাবার রান্না করা হয়েছে। সবকিছু ডাইনিং টেবিলে নিয়ে সকলকে খেতে ডাকা হয়। লামিয়ার ঠোঁটে কেমন যেন দুষ্টু দুষ্টু হাসি।
খাওয়া-দাওয়ার পাট চুকিয়ে চলে যাওয়ার সময় লামিয়া আবদার করল আহনাফ যেন ওদের পৌঁছে দিয়ে আসে। আহনাফও কোনো আপত্তি প্রকাশ করেনি।
আজকের মতো বিদায় নিয়ে লামিয়া আর নিহাল চলে যায়। ওদেরকে পৌঁছে দিতে যায় আহনাফ। অর্ষার আজ অনেক ধকল গেছে বলে, দু’চোখে ঘুমও চলে আসে। তাই আহনাফের ফিরে আসা পর্যন্ত আর অপেক্ষা করে থাকতে পারে না। আহনাফের ওদেরকে পৌঁছে দিয়ে ফিরে আসতে প্রায় চল্লিশ মিনিট লেগে গেছে। দরজা খুলে দিয়েছে লিলিয়া। সে রুমে এসে দেখে অর্ষা গভীর ঘুমে তলিয়ে আছে। সে বেড সাইডের লাইট অফ করতে গিয়ে একটা চিঠি দেখতে পায়। কৌতুহলবশত সে চিঠি খুলে পড়তে শুরু করে।
‘আপনি এত আনরোমান্টিক কেন? আমাকে একটুও বোঝেন না। আপনার জন্য সাজগোজ করি সেটা কি আপনার চোখে পড়ে না? শাড়ি নাকি ছেলেদের খুব পছন্দ। কই আপনি তো কোনোদিন আমার প্রসংশা করলেন না? এত কঞ্জুস কেন আপনি? বউয়ের প্রসংশা হাজবেন্ড না করলে কি অন্য লোকে করবে? একটু তো রোমান্টিক হোন প্লিজ! কথাগুলো সামনা-সামনি মুখে বলতে পারব না বলে, কাগজে লিখে দিলাম। খবরদার! আমাকে এই চিঠি নিয়ে সামনা-সামনি কোনো প্রশ্ন করবেন না। কিছু জিজ্ঞেস করবেন না।
ইতি
আপনার একমাত্র বউ অর্ষা।’
চিঠি পড়ে হতভম্ব হয়ে যায় আহনাফ। এটা সত্যিই অর্ষা লিখেছে? তার তো বিশ্বাস-ই হচ্ছে না। আবার হতেও পারে! অর্ষা তো লাজুক স্বভাবের। মুখে বলতে না পারলে লিখেও প্রকাশ করতে পারে। অসম্ভব কিছু না। কিন্তু তবুও কেমন যেন বিষয়টা তাকে একটু ভাবিয়ে তুলছে।
রাতটা কোনোমতে পার করে সে। কোনোমতে বলছি এই কারণে যে, রাতে আহনাফের ঠিকমতো ঘুম হয়নি। বারবার চিঠির কথাগুলো মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল। স্বপ্নেও সে আবোল-তাবোল এসবই দেখছিল। শেষমেশ ঘুমটাই তো আর হলো না। তবে আজকের সকালটি ভিন্ন। সে একটু বাদে বাদেই ঘনঘন অর্ষার দিকে তাকাচ্ছে। চাহনীও কেমন অন্য রকম। অর্ষা বিষয়টি প্রথমে স্বাভাবিকভাবে নিলেও এখন কেমন যেন অস্বাভাবিক লাগছে।
সে প্রশ্ন করেই ফেলে,’এভাবে কী দেখেন?’
‘মনে তো হয় তোমাকেই।’ গলায় টাই বাঁধতে বাঁধতে উত্তর দিল আহনাফ।
‘আজ কি নতুন দেখতেছেন?’
‘না। তবে নতুন করে দেখতেছি। আচ্ছা তোমার বান্ধবী কখন আসবে?’
‘জানিনা। আসার আগে ফোন করবে বলেছে।’
‘ওহ। আমি আজ অফিসে গিয়ে ছুটি চাইব। যদি দেয় তাহলে তো ভালোই।’
‘আর যদি না দেয়?’
আহনাফ এবার অর্ষার দিকে ঘুরে দাঁড়াল। মুচকি হেসে বলল,’তাই তো! যদি না দেয়?’
অর্ষা বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে আহনাফের আচরণে। মানুষটা একেক সময়ে একেক রকম রূপ দেখায়। কোনো রূপ-ই আগে থেকে আন্দাজ করা যায় না। সে নিজে থেকে প্রকাশ না করলে বুঝাও যায় না।
উত্তরের জন্য আর অপেক্ষা করল না আহনাফ। অফিসের উদ্দেশ্যে বের হওয়ার পূর্বে বলল,’আজ আর বাসায় খাব না। অফিসে গিয়ে খেয়ে নেব।’
‘কেন?’
‘এমনিই। কেউ তো খাইয়ে দেবে না।’
‘কী!’
‘কিছু না।’ বলে আহনাফ রুম থেকে বেরিয়ে যায়। আবার দ্রুতগতিতে ফিরে এসে মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বলে,
‘তেমন কিছু না। একটু রোমান্টিক হওয়ার ট্রাই করছিলাম। বউয়ের আবদার বলে কথা!’
অর্ষার অদ্ভুত রিয়াকশন দেখে আহনাফ শব্দ করে হেসে ফেলে। যাওয়ার পূর্বে অর্ষার মাথায় হাত রেখে চুলগুলো একটু এলোমেলো করে দেয়।
চলবে…
#যেদিন_তুমি_এসেছিলে
#পর্ব_৪০
#মুন্নি_আক্তার_প্রিয়া
__________________
আজকের আকাশ ভীষণ সুন্দর। রোদের তেমন ঝাঁঝ নেই। সত্যি বলতে, রোদও মিষ্টি লাগছে। সবসময়ের মতো বিরক্তিকর নয়। অর্ষা জানালার ধারে বসে রয়েছে। লামিয়া আর নিহাল এসেছে বিকেলের দিকে। বাড়িতে এসেই নিহাল স্মিথকে নিয়ে বেরিয়ে পড়েছে বাড়ির আশপাশটা দেখার জন্য। লামিয়া গেছে ওয়াশরুমে।
অর্ষা তখনো আহনাফের কথাগুলো ভেবে চলছিল। মানুষটা কি তাকে ভালোবাসে? তার হাভভাব, কথাবার্তা কিংবা আচরণ যেসবের কথাই বলি না কেন, সবকিছু তো পজিটিভ দিকে-ই ইঙ্গিত করে।
‘এত কী ভাবছিস?’ ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়েছে লামিয়া। চুলগুলো হাত দিয়ে ঠিক করে নিতে নিতে অর্ষার কাছে ভাবনার বিষয়-বস্তু জানতে চাইল।
অর্ষা লামিয়ার দিকে তাকিয়ে বলল,’কিছু না।’
‘কী কিছু না? অবশ্যই কিছু না কিছু ভাবছিস। আচ্ছা আগে এটা বল যে, কাজ কি কিছু হয়েছে?’
‘কীসের কাজ?’
লামিয়া এবার বিছানায় পা তুলে বসে। একটু ভাব নিয়ে বলে,’কাল রাতে আমি একটা চিঠি লিখেছিলাম।’
‘কী! কাকে?’
‘তোর হাজবেন্ডকে। ভাবিস না আবার আমি প্রেমপত্র লিখেছি। অভিযোগ পত্র লিখেছি।’
‘তোর কথার মাথা-মুণ্ডু কিছুই বুঝতে পারছি না।’
‘মানে হচ্ছে আমি তুই সেজে ভাইয়াকে একটা চিঠি লিখেছি।’
অর্ষা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে,’কী লিখেছিস?’
চিঠির কথাগুলো অর্ষাকে হাসতে হাসতে বলে লামিয়া। অর্ষা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলে,’ওহ আচ্ছা! এজন্যই সকালে তাহলে এমন আচরণ করেছে।’
লামিয়া উদগ্রীব হয়ে ওঠে। অর্ষাকে টেনে এনে বিছানায় বসায়। উৎসাহিত কণ্ঠে জানতে চায়,’কী করেছে রে?’
‘তেমন কিছু না। রোমান্টিক হওয়ার চেষ্টা করেছে।’
সকালের ঘটনা শুনে লামিয়া মুখে হাত দিয়ে হাসে। হাসতে হাসতে অর্ষার গায়ে লুটিয়ে পড়ে বলে,’যাক, প্ল্যানে তাহলে কাজ হচ্ছে।’
অর্ষা মৃদু হেসে বলে,’হুম। তো কোথায় কোথায় ঘুরবি ঠিক করেছিস?’
‘আমি কিছু জানি না। প্লেস নিহাল ঠিক করেছে। ভাইয়ার অফিস থেকে ছুটি দিয়েছে?’
‘না রে! এর আগে হুটহাট বেশ ক’দিন ছুটি নিয়েছে তো। তাই এখন আর ছুটি পায়নি। তোরা এক কাজ কর, তোরা দুজনে তোদের মতো করে ঘোরাফেরা কর। রাতে আমাদের এখানে চলে আসবি। একসাথে ডিনার করব।’
লামিয়ার মনটা খারাপ হয়ে যায়। সে বিমর্ষ হয়ে বলে,’ধুর!’
অর্ষা লামিয়াকে জড়িয়ে ধরে আহ্লাদী স্বরে বলল,’ওলে! রাগ করে না। ঘুরাঘুরি করার সময় কি শেষ হয়ে গেছে? অন্য এক সময় সবাই একসাথে ঘুরব।’
লামিয়াও তাই মেনে নিল। আসলে অর্ষা মিথ্যে বলেছে লামিয়াকে। আহনাফের সাথে কথা বলেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যাতে করে নিহাল এবং লামিয়া তাদের হানিমুনটা সুইজারল্যান্ডে ঠিকমতো করতে পারে।
অর্ষা নিহালকেও আলাদা করে সব বুঝিয়ে বলেছে। লামিয়ার পাগলামিতে সায় না দিতে অনুরোধও করেছে। পরেরদিন বাংলাদেশ থেকে রেশমি জানিয়েছে পাত্রপক্ষ পছন্দ করে গেছে। তারা বিয়ের ব্যাপারে আগাতে চায়। রেশমি বুদ্ধি করে ছেলের সাথে কথা বলে সময় চেয়ে নিয়েছে। লামিয়া দেশে ফিরলে এরপর সবাই মিলে একটা গোল বৈঠকে বসবে। তারপর যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার নেওয়া যাবে।
এদিকে একটা দিন শুধু আহনাফ, অর্ষা, লামিয়া আর নিহাল চারজনে একসাথে ঘুরতে বের হয়েছিল। একদিন রাতে ডিনার করতে বাইরে রেস্টুরেন্টে গেছিল। বাকি সময়টা নিহাল এবং লামিয়াকে আলাদা কাটানোর জন্য দিয়েছে। লামিয়া অবশ্য প্রথমে মানতে চায়নি। অনেক বুঝিয়ে-সুঝিয়ে তবেই না ও’কে মানানো গিয়েছে। ঘোরাফেরা, আড্ডা, একসাথে সময় কাটানো সকল মুহূর্তগুলো সুন্দর ছিল। সুইজারল্যান্ড থেকে ফিরে যেতে একদমই ইচ্ছে হচ্ছিল না। কিন্তু উপায়-ই বা কী? চলে যাওয়ার দিন ঘনিয়ে এসেছে। ইচ্ছের পরোয়া সময় করবে না।
লামিয়া ও নিহালের ফ্লাইটের দিন অর্ষার মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে যায়। তার মুখের মলিনতা দৃষ্টিতে আটকে যায় আহনাফের। দুজনে মিলে রেডি হচ্ছিল লামিয়া এবং নিহালকে পৌঁছে দেওয়ার জন্য। এখান থেকে ওদের হোটেলে যাবে। হোটেল থেকে পিক করে যাবে এয়ারপোর্টে।
আহনাফ গলা খাঁকারি দিয়ে অর্ষার দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলে,’কী হয়েছে?’
অর্ষা নির্লিপ্তস্বরে বলে,’কিছু না।’
‘মন খারাপ?’
‘না।’
আহনাফ অর্ষার কাছে এগিয়ে যায়। দু’কাঁধে হাত রেখে মৃদু হেসে বলে,’লামিয়া চলে যাবে বলে মন খারাপ হচ্ছে?’
অর্ষা মায়াভরা দৃষ্টিতে আহনাফের দিকে তাকায়। আহনাফ বলে,’মন খারাপ কোরো না। তোমাদের আবার তো দেখা হবেই। এখন তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নাও। নয়তো ওদের দেরি হয়ে যাবে।’
অর্ষা ছোটো করে বলল,’হুম।’
‘গুড গার্ল।’
দুজনে একসাথে রেডি হয়ে হোটেলে যায়। সেখান থেকে নিহাল ও লামিয়াকে পিক করে গাড়ি ঘোরায় এয়ারপোর্টের দিকে। লামিয়া ও অর্ষার মন ভীষণ খারাপ। কীভাবে যে সময়গুলো এত দ্রুত চলে গেল!
লামিয়া অর্ষার কাঁধে মাথা রেখে বলে,’তোকে খুব মিস করব বোকারানী খুব!’
অর্ষা কিছু বলে না। শুধু শক্ত করে লামিয়ার হাতটা ধরে। এয়ারপোর্ট পৌঁছে দুই বান্ধবী শেষবারের মতো সুইজারল্যান্ডে আলিঙ্গনবদ্ধ হয়। এই মুহূর্তটিতে দুজনে আর নিজেদের কান্না আটকে রাখতে পারে না।
চোখের পানি মুছতে মুছতে লামিয়া আহনাফকে বলে,’খবরদার! আমার বান্ধবীকে কষ্ট দেবেন না ভাইয়া। সবসময় আগলে রাখবেন।’
প্রত্যুত্তরে আহনাফ মৃদু হাসল। দুজনের উদ্দেশ্যে বলল,’সাবধানে যেও।’
বিদায় দেওয়ার ইচ্ছে না থাকলেও বান্ধবীকে বিদায় দিতে হলো। ওরা চলে যাওয়ার পর আহনাফ আর অর্ষা গাড়ির কাছে যাচ্ছিল। তখনো অর্ষার চোখে পানি ছিল। এটা দেখে আহনাফ বলে,
‘বিয়ের দিনও তো মনে হয় এত কান্না করোনি। বান্ধবীর জন্য এত দরদ?’
অর্ষা কিছুই বলল না। চুপচাপ গাড়িতে উঠে বসে রইল। দৃষ্টি রাখল জানালার বাইরে। আহনাফ বুঝতে পারে, অর্ষার মনটা আজ বেশিই খারাপ। তাই আর সে বেশি কিছু বলে না। বাড়িতে অর্ষাকে নামিয়ে দিয়ে সে অফিসে চলে যায়। মন ভালো হয়েছে কিনা জানার জন্য অফিসে গিয়ে বার দুয়েক ফোনও করে। অর্ষার প্রতিটি কথাই ছিল মনমরা। তাই সে বাড়িতে ফেরার পথে অর্ষার জন্য ওর প্রিয় চকোলেট নিয়ে আসে। চকোলেট পেলে নিশ্চয়ই খুশি হবে?
রাতে বাড়িতে ফেরার সময় চকোলেটের প্যাকেটটি লুকিয়ে রাখে। কলিংবেল বাজানোর পর দরজা খুলে দেয় লিলিয়া। অর্ষা ড্রয়িংরুমেই ছিল। স্মিথকে পড়াচ্ছিল। দুজনের চোখাচোখি হয়, তবে আজ আর অর্ষার চোখ হাসে না। রাগও প্রকাশ করে না। কেমন যেন নির্জীব!
আহনাফ রুমে যাওয়ার পূর্বে বলে গেল,’একটু রুমে আসো তো অর্ষা।’
অর্ষা সঙ্গে সঙ্গেই রুমে যায়। আহনাফ শার্টের হাতার বোতাম খুলতে খুলতে জিজ্ঞেস করে,’কী হয়েছে? এত মন খারাপ কেন আজ?’
‘মন খারাপ না।’
‘আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি তোমার মন খারাপ। আমায় বলো না কী হয়েছে? বান্ধবীর জন্য এত বিরহ?’
‘এমন কিছু নয়।’
‘তাহলে কেমন কিছু? বন্ধুদের সবাইকে মিস করছ?’
‘তা তো সবসময়ই করি।’
‘তাহলে? বাংলাদেশে যেতে ইচ্ছে করছে?’
অর্ষা নিরুত্তর। মাথা নত করে রেখেছে। আহনাফ কিছুক্ষণ চুপ করে তাকিয়ে থাকে। গোপনে দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলে,’আচ্ছা চোখ বন্ধ করো তো! একটা সারপ্রাইজ আছে তোমার জন্য।’
অর্ষা বিনাবাক্য ব্যয়ে চোখ বন্ধ করল। আহনাফ বলল,’হাত পাতো।’
অর্ষা হাত মেলে ধরার পর আহনাফ চকোলেটগুলো অর্ষার হাতে দিয়ে বলল,’এবার চোখ খোলো।’
চোখ খুলে চকোলেট দেখে আহনাফের দিকে তাকায় অর্ষা। স্মিত হেসে বলে,’থ্যাঙ্কিউ।’
‘চকোলেট পেয়েও মন ভালো হয়নি? এখন তো মনে হচ্ছে তোমার মন সাংঘাতিক লেভেলের খারাপ। আচ্ছা কী করলে মন ভালো হবে? রোমান্টিক হওয়ার ট্রাই করব একটু?’
‘আপনি ফ্রেশ হয়ে নিন। আমি খাবার গরম করি।’
অর্ষা উত্তরের অপেক্ষা না করেই চলে যায়। অবাক হয় আহনাফ। দুষ্টুমি করল তাও হাসল না। রাগও করল না। হঠাৎ করে এত গম্ভীরতা কেন? সে কি কোনো ভুল করে ফেলেছে? কই না তো! লামিয়া আসার পর থেকেই তো অর্ষার সাথে সে স্বাভাবিক আচরণ করেছে। তাহলে হঠাৎ করে অর্ষা কেন এমন করছে?
রাতে খাওয়ার টেবিলে আহনাফ জেদ ধরে বলল,’যতক্ষণ না বলবে মন খারাপ কেন ততক্ষণ আমি কিছু খাব না।’
অর্ষা বিরসমুখে বলল,’কোথায় মন খারাপ দেখতেছেন আপনি? আমি ঠিক আছি তো!’
‘তাহলে এমন মনমরা দেখাচ্ছে কেন তোমায়? আমি কিছু করেছি? কোনো ভুল করে থাকলে সেটাও আমায় বলো।’
‘আপনি কিছুই করেননি। আমারই ভালো লাগছে না। সবসময় সবার মুড এক রকম থাকে না। প্লিজ এটা নিয়ে আর কোনো জোর-জবরদস্তি করিয়েন না। খেয়ে নিন।’
আহনাফের কাছে এসব কথার পিঠে বলার মতো আর কোনো কথা নেই। তাই সে প্রসঙ্গ পাল্টিয়ে বলল,’ঠিক আছে। তুমিও খেতে বসো।’
অর্ষা খেতে তো বসল ঠিক-ই। তবে তেমন কিছুই খেতে পারল না। মন-মেজাজ ভালো নেই বলে আহনাফও আর কিছু জিজ্ঞেস করেনি। খেয়ে-দেয়ে সে রুমে চলে গেছে।
রুমে গিয়ে কিছুক্ষণ রেস্ট নিয়ে সে ল্যাপটপ নিয়ে বসে। মিনিট বিশেক পার হওয়ার পরও অর্ষা রুমে আসেনি। এবার তার কেন জানি মনে হচ্ছে, হয়তো তার-ই কোনো ভুলের জন্য অর্ষা এমন আচরণ করছে। অর্ষাকে ডাকার জন্য রুম থেকে বের হয়ে থেকে অর্ষা ড্রয়িংরুমের ফ্লোরে দুই হাঁটু ভাঁজ করে বসে আছে। সে একা নয়। পাশে স্মিথ রয়েছে। আর একটু দূরত্বে সামনে রয়েছে ক্যাথিওন আর অ্যানিওন। ওরা একটু পরপর অর্ষাকে দেখছে আর একটু করে খাচ্ছে।
আহনাফও নিঃশব্দে অর্ষার পাশে এসে বসে। গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে জিজ্ঞেস করে,’খুব বেশি মন খারাপ তাই না?’
অর্ষা ঘাড় ঘুরিয়ে আহনাফের দিকে তাকিয়ে থাকে কয়েক সেকেন্ড। এরপর শীতলকণ্ঠে বলে,’ক্যাথি আর অ্যানিকে একটু ধরতে শেখাবেন?’
অর্ষার এই কথাটি আহনাফকে বিস্মিত করে তোলে। যেই অর্ষা কিনা বিড়ালের নাম শুনলেই দশ হাত দূরে থাকে সে-ই অর্ষাই যেতে বিড়াল ধরতে চাচ্ছে! এটা কি অবিশ্বাস্য কথা নয়?
‘কী হলো?’
অর্ষার ডাকে ভাবনার প্রহর শেষ হয়। আহনাফ অর্ষার হাত ধরে ক্যাথির মাথার কাছে নিতে যাবে, তখন অর্ষা ভয়ে চোখ বন্ধ করে হাত সরিয়ে নেয়। একটু সময় নিয়ে নিজেকে ধাতস্থ করে বলে,’এবার নিন!’
আহনাফ আস্তে করে হাতটা ক্যাথির মাথায় রাখে। এরপর আস্তে আস্তে বুলিয়ে দেয়। চোখ মেলে তাকায় অর্ষা। একটু একটু করে তার ভয় কাটছে। দু’হাত দিয়ে ক্যাথি ও অ্যানির মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আহনাফ। কিছুক্ষণ পর আহনাফের সাহায্য ছাড়াই সে বিড়াল দুটোকে আদর করে দেয়। ক্যাথি এবং অ্যানিও বোধ হয় আজ অর্ষার থেকে অবিশ্বাস্য এবং সেরা আদর পেয়েছে। আহনাফ মুচকি হাসে অর্ষার দিকে তাকিয়ে।
‘আজ তোমার কেন এমন পরিবর্তন বলতে পারো অর্ষা?’
অর্ষা কিছুক্ষণ নিস্তব্ধ থাকে। বিড়াল দুটোর মাথায় হাত বুলায়। মৌনতা কাটিয়ে বলে,’আর মাত্র তিনদিন পর আমিও লামিয়ার মতো সুইজারল্যান্ড থেকে চলে যাব।’
আহনাফ অবাক হয়ে জানতে চায়,’মানে?’
‘মানে আমার ভিসার মেয়াদ শেষ। ট্যুরিস্ট ভিসায় এসেছিলাম। চলে যেতে হবে এবার আমাকে!’
চলবে…
[কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ।]