#রক্তিম_পূর্ণিমা
#পর্ব_১১
#লেখিকাঃদিশা_মনি
পলক ভীষণ খুশি খু্শি মনে পাভেল ও জান্নাতকে নিয়ে তার বাড়ির দিকে রওনা দেয়। সাথে মেহরাজরাও ছিল৷ কিন্তু বাড়িতে পৌঁছানো মাত্র যেন তার সব খুশি উড়ে যায়৷ কেননা বাড়িতে পৌঁছেই সে দেখতে পায় আশরাফ,জুয়েলরা সবাই মিলে এসে তার বাড়ির বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। পলক এসব দেখে ভীষণ ভয় পেয়ে যায়। তবে মেহরাজ তার সাথে থাকায় একটু সাহসও ছিল মনে। জান্নাত ও পাভেলকে একসাথে দেখে আশরাফের মাথায় আগুন জ্বলে যায়। সে এগিয়ে এসে পাভেলের কলার চেপে ধরে বলে,
“তোর এত বড় সাহস, আশরাফের জিনিসের দিকে হাত বাড়াস। তোর হাত আমি কে*টে ফেলব।”
পরিস্থিতি বেগতিক দেখে পলক এগিয়ে গিয়ে আশরাফকে ধাক্কাধাক্কি করতে করতে বলে,
“আমার ভাইয়াকে ছেড়ে দিন। নাহলে কিন্তু ভালো হবে না।”
আশরাফ জোরে একটা ধাক্কা দেয় পলককে। যার ফলে পলক আর তাল সামলাতে না পেরে নিচে পড়ে যায়। এই দৃশ্য দেখে মেহরাজ ভীষণ রেগে যায়। রাগে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে নেয়। পলককে দ্রুত টেনে তুলে আশরাফের কাছে গিয়ে তাকে এলোপাতাড়ি মা*রতে থাকে। জুয়েল সহ আশরাফের অন্যান্য সাঙ্গপাঙ্গরা তাকে বাঁচাতে এগিয়ে আসে। মেহরাজের বন্ধুরাও এগিয়ে আসে তার হয়ে লড়তে। দুপক্ষের মধ্যেই বেশ ভালো লড়াই বাঁধে।
এমন সময় পারভেজ ইসলাম বাড়ির বাইরে এসে এসব দেখে আর চুপ থাকতে না পেরে বলেন,
“এসব হচ্ছে টা কি? এটা একটা ভদ্রলোকের বাড়ি। আমার বাড়ির সামনে এসব মারামারি হানাহানি চলবে না।”
জুয়েল পারভেজ ইসলামকে কিছু বিশ্রী ভাষায় গালি দিয়ে বলে,
“ভদ্রলোক? তোরা ভদ্রলোক? তোর ছেলে আমার বোনকে তুলে নিয়ে এসে বিয়ে করেছে। ও জানে না কোথায় হাত দিয়েছে। তোদের গুষ্টি আমি উদ্ধার করে রেখে দেব।”
পাভেল রাগান্বিত স্বরে বলেন,
“আমার বাবার সাথে ভদ্রভাবে কথা বলো। নাহলে,, ”
“নাহলে কি করবি তুই? চোরের মায়ের আবার বড় গলা? এক্ষুনি আমার বোনকে ফিরিয়ে দে নাহলে তোর খবর আছে।”
“জান্নাত এখন আমার স্ত্রী। তাই ওর উপর এখন সব অধিকার আমার।”
পারভেজ ইসলাম পুরো তব্দা খেয়ে যান। তিনি পাভেলের উদ্দ্যেশ্যে বলেন,
“এসব আমি কি শুনছি পাভেল? এসবের মানে কি? তার মানে ঐ ছেলেটা যা বলছে তা সব সত্যি? তুই একটা মেয়েকে পালিয়ে বিয়ে করে নিয়েছিস। আমার শিক্ষার এই দাম দিলি। ”
“আব্বু, আমার কথাটা একবার শোনো,,”
এমন সময় সেখানে উপস্থিত হন আশরাফের বাবা মানে জান্নাতের চাচা এবং তার বাবা। জান্নাতের বাবা তো নিজের মেয়ের এত দুঃসাহসিকতা দেখে চমকে যান। তার শান্তশিষ্ট মেয়ে যে এমন কিছু করতে পারে সেটা তার ভাবনার বাইরে ছিল। আশরাফের বাবার প্রতিক্রিয়া আরো শীতল। তিনি আশরাফ ও জুয়েলকে শান্ত হতে বলেন এবং অতঃপর সবার উদ্দ্যেশ্যে বলেন,
“যখন এই বিয়েটা হয়ে গেছে তখন তো আমরা এটা অস্বীকার করতে পারব না। কিন্তু তার মানে এই নয় যে আমরা এই বিয়েটা মেনে নিব। আমি কখনোই এই বিয়েটা মানব না। এখন থেকে জান্নাতের সাথে আমাদের কারো কোন সম্পর্ক নেই। জান্নাত যেন ভুলে যায় ওর বাপের বাড়ি বলে কিছু একটা আছে।”
বলেই তিনি স্থান ত্যাগ করেন এবং বাকিরাও তার পিছু পিছু যায়। আশরাফ যাওয়ার আগে মেহরাজ ও পাভেলের দিকে অগ্নিদৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,
“আব্বু যাই বলুক না কেন, আমি এত সহজে এই অপমান ভুলব না। তোদের থেকে এই সবকিছুর জন্য পাই টু পাই হিসাব নেব।”
বলেই আশরাফ স্থান ত্যাগ করে। সবাই চলে যাবার পর জান্নাত কান্নায় ভেঙে পড়ে। পাভেল ও পলক মিলে তাকে সামলানোর বৃথা চেষ্টা করে।
এরমধ্যে মেহরাজ পলকের দিকে একপলক তাকিয়ে তার বন্ধু-বান্ধবদের নিয়ে বিদায় নেয় এই স্থান থেকে। পলক মেহরাজের দিকে কৃতজ্ঞতার সহিত তাকিয়ে ছিল যতক্ষণ তাকে দেখা যায়।
★★★
পারভেজ ইসলাম ও নূর বেগম এই বিয়েটা নিয়ে খুব একটা খুশি না থাকলেও বিয়েটা মেনে নেন। জান্নাতকে নিজেদের পুত্রবধূর স্বীকৃতি দিতে তাদের কোন আপত্তি নেই। পাভেলের ভালোবাসা যেন এখানে পূর্ণতা পেল। আজ তার আর জান্নাতের জীবনের সবথেকে স্পেশাল রাত। যা তাদের বাসর রাত। তারা অন্যান্য দম্পত্তিদের মতো সুন্দর করে তাদের জীবনের প্রথম রাতটা উপভোগ করছে।
পলক বেলকনিতে দাঁড়িয়ে অনিমেষ চেয়ে আছে আকাশের পানে। আজকেও একটি পূর্ণিমা রাত। পলকের মনে পড়ে এরকম একটি পূর্ণিমার রাত্রেই তার জীবনটা বদলে গিয়েছিল৷ ঘড়িতে তখন সময় ১১ঃ৫০। পলক একটা হালকা দীর্ঘশ্বাস ফেলে। হঠাৎ তার নজরে আসে তার বাড়ির বাইরে একটা বুড়ি দাঁড়িয়ে। তার মুখে সামান্য হাসি৷ পলককে যেন বুড়িটা কোন এক অদ্ভুত বলে আকর্ষণ করছিল। পলক দ্রুত বাড়ির বাইরে এসে সেই বুড়ির মুখোমুখি হলো। বুড়িটা পলককে দেখামাত্রই বলল,
“তোর জীবন থেকে একটা পূর্ণিমা চলে গেল। তোর হাতে আর মাত্র ৩ টা পূর্ণিমা পর্যন্ত সময় আছে। এরমধ্যে তোকে যা করার করতে হবে।”
বুড়ির কথা শুনে পলক অবাক হয়। জিজ্ঞেস করে,
“কে আপনি? আপনি কি আমার ব্যাপারে সব জানেন?”
বুড়িটা কিছুক্ষণ অদ্ভুত হাসি দিয়ে বলে,
“১২ টা বাজতে আর বেশি দেরি নেই৷ তৈরি হয়ে যা আবারো সময়ের আর্বতনে ঘোরার জন্য। প্রত্যেক পূর্ণিমাতেই তোর সাথে এমন হবে। একদিন পর আবারো তুই অতীতে ফিরতে পারবি। তবে তার আগে তোকে ভবিষ্যতে গিয়ে আরো কিছু জানতে হবে। ভবিষ্যতে এক দিন অতিবাহিত করে আবারো অতীতে ফিরতে হবে। যাতে তুই অতীতটা সুন্দর করতে পারিস।”
পলক আর কিছু জিজ্ঞেস করতে যাবে কি তার আগেই আকাশের পূর্ণিমার চাঁদটা আরো বড় হতে থাকে এবং সেখান থেকে রক্তিম আলোর ছটা বের হয়। সেই আলো পলকের চোখে এসে লাগতেই সে চোখ বন্ধ করে নেয় এবং সাথে সাথেই পুনরায় সময়ের আবর্তনে ঘুরতে থাকে।
★★★
চোখ খুলতেই নিজেকে নিজের বাড়িতে আবিষ্কার করে পলক। তার পড়নে ছিল একটা নীল শাড়ি। পলক কিছুই বুঝে উঠতে পারে না।
“তাহলে কি আমি এতক্ষণ স্বপ্ন দেখছিলাম?!”
পলকের ভাবনার মধ্যেই পারভেজ ইসলাম তার সামনে এসে দাঁড়ান। একদম ফিটফাট। পলক অবাক হয়। পলককে আরো অবাক করে দিয়ে তিনি বলেন,
“তুই আরাফাতকে ডিভোর্স দিয়ে একদম ঠিক কাজ করেছিস। ঐ ছেলেটা তোর যোগ্যই ছিল না। তুই একদম চিন্তা করিস না, আমরা সবাই আছি তোর সাথে।”
“আব্বু, তুমি ঠিক আছ? তোমার পায়ে না সমস্যা ছিল, লাঠি কোথায়?”
‘কিসব বলছিস তুই?’
একটু পরেই নূর বেগম পলকের রুমে আসেন। তিনিও একদম স্বাভাবিক ছিলেন। এটাও পলককে অবাক করে। তবে পলক সবথেকে অবাক তখন হয় যখন পাভেল আর জান্নাত একসাথে তার রুমে চলে আসে৷ পাভেল এসেই পলককে দেখে ব্যতিব্যস্ত হয়ে বলে,
“তুই একদম চিন্তা করিস না, ঐ আরাফাতকে আমি উচিৎ শিক্ষা দেব।”
জান্নাতও বলে,
“তুমি নিজেকে একা ভেবে আর কষ্ট পেয়ো না। তোমার ভাই, ভাবি, বাবা-মা সবাই তোমার সাথে আছে।”
পলক মনে মনে বলে,
“তাহলে এসব কিছু স্বপ্ন ছিল না৷ আমি সত্যিই সময় ভ্রমণ বা টাইম ট্রাভেল করে এসেছি। আর আমি যা পরিবর্তন করতে পেরেছি তা পরিবর্তন হয়েছে। মানে জান্নাত ভাবি এখন পাভেল ভাইয়ের স্ত্রী রুহানি নয়।”
পলক এরপর সেই বুড়ির বলা কথাগুলো মনে করে বলে,
“আমার হাতে একদিন সময় আছে। এই একদিন আমি ভবিষ্যতে থাকার পর আবার অতীতে ফিরে যাব। তার আগে আমায় জানতে হবে, অতীতে গিয়ে এরপর আমায় কি পরিবর্তন করতে হবে। আমার হাতে আর তিন পূর্ণিমা পর্যন্ত সময় আছে, তার মধ্যেই যা করার করতে হবে।”
এমনটা ভেবেই পলক উঠে দাঁড়ায়। উঠে কোথাও যেন রওনা দেয়৷ পলককে যেতে দেখে পারভেজ ইসলাম, পাভেল সবাই বলে,
“কোথা যাচ্ছিস তুই?”
“আমার একটা জরুরি কাজ আছে, আমায় যেতেই হবে।”
বলে সে আর এক মুহুর্ত অপেক্ষা না করে চলে যায়।
চলবে ইনশাআল্লাহ ✨