রঙ বেরঙে প্রণয় পর্ব-০৭

0
79

#রঙ_বেরঙে_প্রণয়
#পর্ব_৭
#তাসমিয়া_তাসনিন_প্রিয়া

( মুক্তমনাদের জন্য উন্মুক্ত।)

আতিকা তো গতকালও অনুপস্থিত ছিলো। শায়লা বাসায় গিয়ে কীভাবে বিষয়টা বলে সেই নিয়ে। মেয়েটার গালে তাহমির পাঁচটা আঙুলের দাগ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিল। একটু আস্তেও তো মা*রতে পারতো?

” কী ব্যাপার সহন? তোমাকে চিন্তিত দেখাচ্ছে। কোনো সমস্যা? ”

রাশেদুল ইসলাম সহনের কলিগ। বয়সে সহনের থেকে বছর দশেকের বড়ো হবেন। তবে বেশ বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ওদের। সহন একটু নড়েচড়ে উঠলো। রাশেদুল ভাই সহনের সামনাসামনি চেয়ার টেনে বসেছেন। পরনে উনার সাদা পাঞ্জাবি, পাজামা, মুখভর্তি চাপদাড়ি। সহন গলা খাঁকারি দিয়ে বলতে লাগলো,
” তেমন কিছু না রাশেদুল ভাই। তবে একটু চিন্তা করছি এটা ঠিক। ”
” এই বলছো চিন্তা করছো আবার বলছো তেমন কিছু না! যেকোনো একটা বলো ভাই। ”
সহন রাশেদুলকে গতকালের ঘটনা সংক্ষিপ্ত আকারে বললো। রাশেদুল ভাই বেশ মনোযোগ সহকারে শুনলেন সবকিছু।
” বুঝলেন ভাই? ”
” হুম বুঝলাম। দেখো তোমার কাজিন একটু ক্ষ্যাপাটে ঠিক আছে, কিন্তু দোষটা কিন্তু শায়লার। আজকালকার ছেলেমেয়েরা অতিরিক্ত পাকা। তোমার উচিত শায়লার মা’কে সবটা খুলে বলে আর না পড়ানো।”

সহন কিয়ৎক্ষণ ভাবলো। তারপর গম্ভীর কণ্ঠে বললো,
” তাই করবো। বাইরের বিষয় নিয়ে ঘরে অশান্তি করতে পারবোনা। তাহমি রাগারাগি শুরু করলে দুই বাড়ি অশান্ত হয়ে ওঠে ভাই। ”

রাশেদুল ইসলাম মুচকি হাসলেন সহনের কথায়। তবে এই হাসি একটু আলাদা। হয়তো ভবিষ্যতের কোনো বিষয় বুঝতে পেরেই উনি এমন রহস্যময়ী হাসলেন।

গতকাল কারোরই মন মানসিকতা ভালো ছিলো না। সেজন্য রাতে পিকনিক করার প্ল্যান এখন পর্যন্ত কার্যকর হয়নি। যা-ও আজকে ইচ্ছে ছিলো সহনের কিন্তু কালকে অর্থাৎ সোমবার রুদ্রর রিসিপশনের অনুষ্ঠান। তাহমি যে কালকের দিনটা নিয়ে বেশ প্ল্যানিং করছে সে বিষয় কোনো সন্দেহ নেই সহনের।

ঘড়িতে রাত সাড়ে আটটা ছুঁইছুঁই। ফাহিম খান ড্রইং রুমে বসে আছেন। ফোনের স্ক্রিনে তাকাচ্ছেন কখনো আবার কখনো টিভিতে। আগে টিভি রাখার জন্য আলাদা রুম ছিলো এ বাড়িতে। কিন্তু সবাই বসার ঘরে বসে কথাবার্তা বলে সেজন্য এখানেই টিভি রাখা হয়েছে এখন। তাহমি সোফায় বসে বসে টিভি দেখছে। জাহানারা খান ডিনারের জন্য খাবারদাবার রেডি করে ডাইনিং টেবিলে সাজিয়ে-গুছিয়ে রাখছেন। এরমধ্যে কলিংবেলের শব্দে নড়েচড়ে উঠলো সবাই। তাহমি বসা থেকে উঠে দরজার দিকে এগোলো। হয় ফাইজা না হয় সহন, ওরা ছাড়া এমন সময় কেউ আসার কথা নয় বলে ফাহিম ও জাহানারা চুপচাপ নিজেদের কাজেই মনোযোগী হয়ে আছেন। তাহমি দরজা খোলার সাথে সাথে সহন ওর দুই কাঁধে হাত রেখে সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকিয়ে শুধালো,
” এই তুই কি কাল রুদ্রর রিসিপশনে যাবি? ”
” এইটা জিজ্ঞেস করতে আসছো তুমি? ”
” উফ! বল না। ”
” অদ্ভুত! বেডরুমে বসে উফ, আহ করে মানুষ। তুমি এখন করতেছ কেন ভাইয়া?”
সহন গেলো রেগে। মেয়েটা এতো বেয়াদব কেন? কণ্ঠ নিচু রেখেই সহন কিছুটা ঝাঁঝাল স্বরে বললো,
” ভাই ডাকিস আবার এসব কেমন আচরণ? এক থাপ্পড়ে কবে জানি তোর সব দাঁত ফেলে দেই। ”
তাহমিও রেগে গেছে। সহনের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে আঙুল নেড়ে নেড়ে বলে,
” তুই এসব জিজ্ঞেস করতে এসেছিস? হ্যাঁ আমি কাল যাবো আর গিয়ে শেষবারের মতো ওর পিণ্ডি চটকে আসবো। তুই যাবি না-কি খেয়ে যাবি? ”

” রেগে যাচ্ছে মেয়েটা। চল ভেতরে চল আপা। ”
সহন তাহমির মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বাসায় ঢুকলো। এরমধ্যে ফাহিম খান গিয়ে খেতে বসেছে। জাহানারা সহনের কথা শুনে ওকে খেতে ডাকলেন।

” সহন আর তাহমি আয় সবাই একসাথে খাবো আজ। ”
বসার ঘর থেকে ছোটো আম্মুর ডাক শুনে তাহমিকে নিয়ে রান্নাঘরের দিকে এগোলো সহন। এখন তাহমিকে কিছু বলে যে লাভ হবে না সেটা ভালো করে বুঝতে পেরেছে সহন। আসল কথা হলো রুদ্রকে একটু জ্বালা দিয়ে নিজের মনকে শান্তি দিতে চাইছে ও। সহন আরকিছুই বলবে না তাহমিকে। তারচে আগামীকাল কিছু একটা করবে বরং। এসব ভাবতে ভাবতে তাহমিদের সাথে ডিনার সেড়ে নিলো।

রাতের খাওয়াদাওয়া শেষে বিছানায় শরীর এলিয়ে দিয়েছেন তারিকুল খান। আইমান মশারী টানানো শেষে পাশের বালিশে মাথা রেখে শুয়েছেন মাত্র।
” এখন বলো তো আইমান সহনের বিষয় কী জানি বলছিলে তখন? ”
” তুমি তো বললে বিয়ের কথা! ”
” হ্যাঁ। তাহলে জয়নাল ভাইকে বলবো মেয়ে খুঁজতে। ”
আইমান স্বামীর বুকে হাত রেখে পাশ ফিরে শুয়ে বললেন,
” একটা কথা বলবো? ”
” বাব্বাহ! এতো আহ্লাদী হয়ে বলছ যে? ”

তারিকুল মুচকি হেসে শুধলেন। আইমান বললেন,

” তাহমিকে তোমার কেমন লাগে? ”
” তাহমি! ওকে আবার আলাদা করে কেমন লাগবে? রাগী, ক্ষ্যাপাটে তবে সুন্দর মনের একটা মেয়ে। আমার বংশের মেয়ে কি খারাপ হতে পারে! ”

শেষের কথাটা বেশ গর্ব করে বললেন তারিকুল।

” হ্যাঁ এটাই কথা। ঘরে ভালো মেয়ে থাকতে বাইরে মেয়ে খুঁজে লাভ কী বলো? ”
তারিকুল কিঞ্চিৎ চমকালেন স্ত্রী’র কথায়। মুখোমুখি শুয়ে বললেন,
” কী বলছো তুমি! সহন আর তাহমি রাজি হবে?”
” ওদের আর না মানার কী আছে বলো! লোকে কি চাচাতো-মামাতো ভাইবোনদের বিয়ে করে না? না-কি শরিয়তে নেই! ”

” আহা আইমান তা বলিনি আমি। বললাম ওরা দু’জন মানসিকভাবে বিষয়টা মানবে কি-না। ”

” বিয়ে হয়ে গেলে সব ঠিক হয়ে যাবে। সহন রাজি না হলেও তোমার কথা ফেলবে না। তাহমির ব্যাপারটা আলাদা। ও রাজি না হলে আর কিচ্ছু হবে না। ”

তারিকুল খান একটু ভাবলেন। ভাবনার অতলে সবকিছু সাজিয়েগুছিয়ে দেখে খানিকক্ষণ বাদে বললেন,
” ঠিক আছে। তুমি তাহলে তাহমির মায়ের সাথে আগে কথা বলে দেখো, তাহমি রাজি হয় কি-না। সবকিছু ঠিক থাকলে আমি ফাহিমের সাথে কথা বলবো। ”
” ঠিক আছে। ”
” হুম। রাত অনেক হলো! বাতিটা নিভিয়ে আসি বরং। ”
” হ্যাঁ যাও।”
তারিকুল শোয়া থেকে উঠে গিয়ে বাতি অফ করে এলেন।

jo akh lad javey

saari raat neend na avey

mainu badaa tadpave

dil chain kahee na pave pave pave)

khan khan khan khan churi

teri khan khan khan khan khanke

khan khan khan khanke

vekh vekh ke chehra

mera dil yeh dhak dhak dhadke re

dil yeh dhak dhak dhadke

বিয়ে বাড়ির উৎসবে হঠাৎ গান বেজে ওঠাতে উপস্থিত সবাই চমকাল। তবে তারচে বেশি চমকাল স্টেজে একজন যুবতীকে নাচতে দেখে। রুদ্র আর সুনয়না তো স্টেজের সামনে দাঁড়িয়ে হা হয়ে তাকিয়ে আছে। বাকিদের অবস্থাও একইরকম। ছোটো থেকে বুড়ো সবাই নিজেদের কাজকর্ম ভুলে স্টেজে নাচতে থাকা তাহমির দিকে বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে আছে। অফ হোয়াইট কালারের লেহেঙ্গা পরনে ওর, চুলগুলো ফ্রেঞ্চ বিনুনি করা। কানে, গলায় সিম্পল গয়নাগাটি। এককথায় বেশ সুন্দর লাগছে। মজার কথা হলো ওকে কেউ নাচতে বাঁধা দিচ্ছে না। সবাই যেনো সার্কাস দেখতে ব্যস্ত। রুদ্রর হাতটা সুনয়না শক্ত করে ধরেছ এরমধ্যে। মেয়েটা প্রথম দিনের অভিজ্ঞতার কথা আজও বোধহয় ভুলতে পারেনি। রুদ্র সুনয়নার হাতটা শক্ত করে ধরেছে।
” কিচ্ছু হবে না সুনয়না। শান্ত থাকো তুমি। নির্লজ্জ মেয়েটাকে আমি দেখছি। জাস্ট ওয়েট। ”
রুদ্র সুনয়নাকে আস্বস্ত করে আগে গিয়ে গানটা বন্ধ করলো। আর সাথে সাথে সবাই একপ্রকার নড়েচড়ে উঠলো যেনো। মেয়েটা নাচ নেহাৎ খারাপ করেনি বলেই এতক্ষণ সবাই নাচেই মুগ্ধ ছিলো। রুদ্রকে স্টেজের দিকে এগিয়ে আসতে দেখে তাহমি ক্রুর হাসলো। রুদ্র প্রচন্ড রেগে আছে। স্টেজ থেকে নামতেই রুদ্রর মুখোমুখি হলো তাহমি। সুনয়নার পরিবারের লোকজনসহ রুদ্রর পরিবারের সবাই ওদের দিকে উৎসুকভাবে তাকিয়ে আছে।
” কী চাস তুই? এরকম অসভ্যের মতো আচরণ কেন করলি? তুই কি বুঝতে পারছিস না আমি আর তোকে চাই না? ”
রুদ্র দাঁতে দাঁত খিঁচিয়ে বললো কথাগুলো। তাহমি শান্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। যেনো কিচ্ছু হয়নি, হচ্ছে না। পাশ থেকে একজন ওয়েটার যাচ্ছিল। তাহমি তাকে ডাক দিলো,
” হেই এদিকে এসো তো মামা। ”
” জি ম্যাম। ”
তাহমি ট্রে থেকে একটা হার্ড ড্রিংকসের গ্লাস নিলো। তারপর ইশারায় লোকটাকে চলে যেতে বলে গ্লাসে এক চুমুক দিয়ে রুদ্রর দিকে দৃষ্টিপাত করলো।
” কী জানি বলছিলিস? এখন বল।”
” তাহমি! এখান থেকে চলে যা বলছি। বাড়াবাড়ি করলে কিন্তু ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিবো। ”
রুদ্রর কথা শেষ হওয়ার আগেই তাহমি গ্লাসের সবটুকু ড্রিংকস রুদ্রর মুখে ছুড়ে ফেললো। ঘটনার আকস্মিকতায় হতভম্ব হয়ে গেছে সবাই। রুদ্র নিজেও এটার জন্য প্রস্তুত ছিলো না।

চলবে,