রঙ বেরঙে প্রণয় পর্ব-১১

0
72

#রঙ_বেরঙে_প্রণয়
#পর্ব_১১
#তাসমিয়া_তাসনিন_প্রিয়া

( কঠোরভাবে প্রাপ্তমনস্কদের জন্য উন্মুক্ত।)

হ্যাঁ রওনকই আগন্তুক, ফাইজার ভালোবাসার মানুষ। এখন সময় হয়েছে বলেই রওনক নিজে থেকে ধরা দিলো ওর সামনে। তবে ফাইজা কখনোই ভাবেনি তার স্যারই আগন্তুক হতে পারে।
” সরি বসিয়ে রাখার জন্য। ”
রওনকের কথায় ভাবনায় ছেদ ঘটল ফাইজার। মৃদু হেসে উঠে দাঁড়ালো ও। রওনক ফাইজার ওপর আড়চোখে আপাদমস্তক নজর বুলিয়ে নিলো। বেশ কিউট লাগছে মেয়েটাকে।

” সমস্যা নেই। বসুন স্যার। ”
রওনক আর ফাইজা মাঝখানে কিছুটা দূরত্ব রেখে বসলো। রওনক যে এতক্ষণ ইচ্ছে দূর থেকে দাঁড়িয়ে ফাইজাকে দেখছিল সেটা বুঝতে পারেনি ফাইজা। ফাইজার নীরবতা দেখে মুচকি হাসলো রওনক। পরিবার বলতে কেউ নেই রওনকের। ছোটো থেকে দাদা বাড়িতে বড়ো হয়েছে। দাদা-দাদিও পৃথিবীতে নেই এখন। চাচা চাচি থাকেন গ্রামের বাড়িতে। রওনক এ শহরে একাই আছে।
” কিছু বলবে না ফাইজা? ”
” হুম বলবো। ”
” বলো তাহলে।”
ফাইজা শুকনো ঢোক গিলে কিছু একটা বলতে চাইলো। কিন্তু মুখ থেকে কোনো কথাই বের হচ্ছে না ওর। রওনককে সামনে দেখে সবকিছু এলোমেলো হয়ে গেছে। ফাইজার স্বভাবচরিত্র সম্পর্কে অবহিত রওনক। তাই ইচ্ছে করেই একটু মজা করছে ওর সাথে। ফাইজা মনে মনে অনেক কিছু বলতে চাইলেও লজ্জায় কিছু বলতে পারবে না সেটা রওনক জানে।
” আসলে… আপনি কেনো না মানে এতদিন বলেননি কিছু। ”
” শান্ত হও। স্বাভাবিক করো নিজেকে। ”
” ঠিক আছি। ”
” চলো পার্কের বাইরের রেস্টুরেন্টে বসে কথা বলবো। ”
” আরেকদিন গেলে হয় না? ”
ফাইজা নিজের হাত দিয়ে বেঞ্চি ধরে আছে। রওনক ওর অস্বস্তি বুঝতে পেরে জোর করলোনা।
” ঠিক আছে। তুমি চাইলে আমি তোমার বাসায় আমাদের বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যাবো। তুমি রাজি? কিছু বলতে হবে না। শুধু মাথা নেড়ে ইশারা করো। তোমার সিন্ধান্তকে সম্মান করি আমি। ”
ফাইজার হার্টবিট বেড়ে গেছে। গলা কেমন শুকিয়ে যাচ্ছে। প্রিয় মানুষের সাথে বিয়ের কথা হলে সব মেয়ের অবস্থাই হয়তো এমন হয়। তবুও ফাইজা মাথা নেড়ে সম্মতি জানাল। রওনক মুচকি হেসে আলগোছে মাথায় একটু হাত ছুঁইয়ে দিলো ওর। মুহুর্তেই কেঁপে উঠল ফাইজা। ইশ প্রিয় পুরুষের প্রথম স্পর্শ!

দুপুরবেলা। শরৎকাল, রৌদ্রজ্বল আকাশে সাদা মেঘের ভেলা ভাসছে। কড়া রোদে ঘেমে-নেয়ে বাসায় ফিরেছে সহন। তাহমি রান্নাবান্না শেষে গোসল করতে ওয়াশরুমে ঢুকেছে কেবল। সহন রুমে ঢুকে শার্ট, প্যান্ট পাল্টে শুধু একটা লুঙ্গি পরে নিলো। গরমে হাসফাস লাগছে ভীষণ। এখুনি গোসল করতে না পারলে মাথাও ব্যথা শুরু হবে ওর।
” তাহমি? এই তাহমি! দরজাটা খুলবি একটু? ”
” আমি গোসল করছি তো। ”
সহন একটু ভাবলো। তারপর আবার ওয়াশরুমের দরজায় টোকা দিয়ে বললো,
” জরুরি দরকার আছে। যেভাবে আছিস সেভাবেই খোল দরজা। তাড়াতাড়ি! ”
সহনের ব্যতিব্যস্ততা বুঝতে পেরে ভেজা অবস্থায় দরজা খুলে দিলো তাহমি। সারা শরীর ভেজা, জামাকাপড় লেপ্টে রয়েছে শরীরে। সহন তাহমিকে কিছু না বলেই ভেতরে ঢুকে দরজা আঁটকে দিলো। সহনের এমন কান্ডকারখানা দেখে থতমত খেয়ে তাকিয়ে আছে তাহমি।
” এটা কী হলো? ”
” আমিও গোসল করবো। অসহ্য লাগছে গরমে। তুই কর, আমিও করি। ”
” হুঁশ! ফাইজা যদি কোনো কারণে রুমে এসে বুঝতে পারে আমরা একসাথে ওয়াশরুমে তোমারই কিন্তু লজ্জা লাগবে। ”
তাহমি চুলে শ্যাম্পু লাগাতে লাগাতে বললো। সহন ঝর্ণার নিচে দাঁড়িয়ে আছে। আপাতত ঠান্ডা পানিতে মনপ্রাণ জুড়িয়ে যাচ্ছে ওর। তাহমির কথা আমলে নিচ্ছে না।
” থাক। ”
” ঠিক আছে। ”
তাহমি নিজের মতো চুলে শ্যাম্পু দিতে লাগলো। সহনের গোসল করতে সময় লাগে না। যতক্ষণে তাহমি শ্যাম্পু করবে ততক্ষণে ওর গোসল শেষ হয়ে যাবে ভেবেই চুপ করে আছে তাহমি। মাথা, শরীর পানির স্পর্শে শীতল হতেই তাহমির দিকে দৃষ্টিপাত করলো সহন। ভেজা জামাকাপড়ে ভীষণ আবেদনময়ী লাগছে ওকে। শরীরের প্রতিটি ভাজ স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। অবস্থা বেগতিক দেখে শুকনো ঢোক গিললো সহন। কিন্তু হাতের মধ্যের নিশপিশ ভাবখানা দমন করতে আর পারলো না। পেছন দিক থেকে তাহমির কোমরে দু-হাত রেখে ঘাড়ে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলো সহন। আকস্মিক স্পর্শে চমকাল তাহমি।
” কী করছো! চুলে শ্যাম্পু তো। ”
সহন মুখে কিছু না বলে তাহমিকে চট করে নিজের দিকে ফেরালো। পিঠে হাত রেখে বুকের সাথে আগলে ধরে ঝর্নার নিচে গিয়ে দাঁড়াল। ঝর্নার পানিতে তাহমির চুলের শ্যাম্পু ধুয়ে যাচ্ছে। সহন একহাতে ওর চুলগুলো নেড়েচেড়ে দিচ্ছে আর অন্য হাত কোমরে রেখে শক্ত করে ধরে আছে।
” এই নে সব শ্যাম্পু ধুয়ে গেছে। ”
” কিন্তু.. ”
” চুপ! ”
সহন তাহমির ঠোঁটে আঙুল চেপে ধরেছে। কপালে আলতো করে ওষ্ট ছুঁইয়ে দিয়ে আবারো পেছনে ফিরিয়ে দাঁড় করালো তাহমিকে। উদরে হাত রেখে মৃদু চাপ দিয়ে নিজের শরীরের সাথে ঠেকাল তাহমির পিঠ। তারপর ওর ভেজা চুলগুলো একপাশে সরিয়ে ঘাড়ে তপ্ত নিঃশ্বাস ফেলে এলোমেলো করে দিতে লাগলো সহন।
” ঠান্ডা লেগে যাবে কিন্তু! রুমে গিয়ে না হয় আদর করলে!”
” এখুনি লাগবে। বাঁধা দিও না, কষ্ট তুই পাবি। ”
তাহমি মুচকি হেসে চুপ করে রইলো। মারাত্মক মুডে আছে ভদ্রলোক। এখন আর ঘাঁটানো যাবে না ভেবে চুপচাপ স্বায় দিলো তাহমি।

” ভাবি! ভাবি? কই তুমি? ভাইয়াকেও তো দেখছি না। ”

আচমকা ফাইজার ডাকে নড়েচড়ে উঠলো দু’জন। তাহমি নিজের কামিজ ঠিক করে তাড়াতাড়ি দরজা খুলতে গেলে সহন আঁটকে দিয়ে বললো,
” এই বলদি তোর জামাকাপড় সব ভেজা। তুই বের হবি কীভাবে? ”
” চুপ! অশালীন লোক। মানা করেছিলাম না? এখন চুপ করে থাকো নয়তো লুঙ্গি খুলে ফেলবো। ”
সহন দুষ্ট হাসি দিয়ে বললো,
” সে আর নতুন কী! ”
তাহমি সহনের গলায় ছোটোখাটো একটা কামড় বসিয়ে দিতেই চিৎকার করে উঠলো ও। আচমকা ভাইয়ের মৃদু চিৎকারে কিছুটা ঘাবড়ে গেলো ফাইজা। তাড়াতাড়ি ওয়াশরুমের দরজার বাইরে গিয়ে বললো,
” ভাইয়া? কী হয়েছে তোমার? ”
” আরে পা পিছলে গেছে সাবানে। তাহমি তো ওদের বাসায় গেছে। তুই বরং পরে কথা বলিস ওর সাথে। আমি গোসল সেড়ে আসছি। ”
” ওও আচ্ছা। ঠিক আছে ভাইয়া। আমি খেতে গেলাম। তুমি এসো আর ভাবিকে কল দিয়ে আসতে বইলো। এই দুপুরবেলা ওই বাসায় কী!”

শেষের কথাটা একা একা বলতে বলতে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো ফাইজা।

” কামড় দিয়েছিস না? ”
তাহমিকে পেছন থেকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ঘাড়ে আলতো করে কামড়ে দিয়ে শুধালো সহন। আবেশে সাপের মতো মুচড়ে যাচ্ছে তাহমির বদন।
” ছাড়ো প্লিজ! ফাইজা চলে গেছে। এখন তাড়াতাড়ি বের হই। বাকিটা রাতের জন্য তুলে রাখো। ”
” ওকে। দু’টো কিস কর তাহলে। ”
তাহমি সহনের মুখোমুখি পায়ের ওপর পা রেখে দাঁড়িয়ে গলা জড়িয়ে হেসে বললো,
” এটা কোনো ব্যাপার? তোমার বউ অলওয়েজ রেডি এসবের জন্য। আসো…..”
পরপর দুই বার তাহমি সহনের ঠোঁটে নিজের ঠোঁট ডুবিয়ে দিলো কয়েক মুহুর্তের জন্য।
” লাভ ইউ তাহমি। ”
” লাভ ইউ টু। ”
” দুই নম্বর ভালোবাসা? ”
” হুঁশ! ভালোবাসি আমিও, ওকে? ”
” একদম। আমি বের হচ্ছি, তুইও তাড়াতাড়ি আয়। ”
তাহমি মাথা নেড়ে সম্মতি দিলো। সহন ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে আগে ঘরের দরজা আঁটকে নিলো। তারপর চেঞ্জ করে চুলগুলো পরিপাটি করে ঘর থেকে বেরোলো।

দুপুর থেকে তাহমির সাথে কথা বলতে চেয়েও বলতে পারছে না ফাইজা। কীভাবে যেনো সময় মিলছে না দু’জনের। তাহমিকে আগেভাগে রওনক স্যারের বিষয়টা বলে রাখলে স্বস্তি পেতো ও। কিন্তু এই তাহমি তো আজ পূর্ণিমার চাঁদ হয়ে গেছে! নিজের ঘরে বসে বসে এইসব ভাবছে ফাইজা। এরমধ্যেই দরজায় টোকা পড়লো।
” ফাইজা আসবো? ”
” ভাবি! আসো আসো। ”
তাহমি মুচকি হেসে ফাইজার পাশে বিছানায় এসে বসলো।
” সারাদিন আজ আমাকে খুঁজেছিস শুনলাম? কোনো জরুরি কথা আমি নাকি? ”
” হ্যাঁ মানে কিছু বলার আছে। ”
তাহমির কথার জবাব দিতে গিয়ে ফাইজা মিটিমিটি হাসছে।
” কাহিনী কী রে ফাইজা? প্রেমটেম করছিস না-কি তুই?”

চলবে,