রঙ বেরঙের অনুভূতি পর্ব-১২

0
260

#রঙ_বেরঙের_অনুভূতি
#লেখনীতেঃতানজিলা_খাতুন_তানু

(১২)

রাহাতের এমন কাজে সুহানি আর নোহান দুজনেই চমকে উঠলো।

রাহাত নিজের হাতে একটা গোলাপ নিয়ে সুহানির দিকে তাক করে বললোঃ আমি তোমাকে ভালোবাসি। আই উইল ম্যারি ইউ।

সুহানির কানে নোহানের বলা ওই একই কথাটা বাজতে লাগলো। নোহান ওহ সুহানিকে ঠিক একই কথা বলেছিলো।সুহানির চোখটা অশ্রুসিক্ত হয়ে উঠলো। নোহান গম্ভীর মূখটা সুহানির চোখে পড়লো। ওদিকে সকলেই সুহানিকে বলছে উত্তর দেবার জন্য। নোহান জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সুহানির দিকে খুব করে চাইছে সুহানি রাহাতকে না বলে দিক। সুহানি চোখের পানিটা চোখেই আটকে দিয়ে নোহানের দিকে তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে রাহাতের হাত থেকে ফুলটা নিয়ে নিলো। সকলেই আনন্দে চেঁচিয়ে উঠলো। সবাই খুব খুশি কিন্তু দূটো মানুষ বাদে নোহান আর একজন সুহানি। কোনো এক কারনে খুশি হতে পারছে না। হয়তো নোহানের বৈধ স্ত্রী বলে। কিন্তু আদোও কি এই সম্পর্কের কোনো ভিত্তি আছে।

সবাই সবার মতো করে আনন্দ করতে লাগলো। সুহানি এক সাইটে দাঁড়িয়ে আছে হুট করে কেউ একজন ওকে টেনে সাইটে নিয়ে আসলো। সুহানি সামনে তাকিয়ে দেখলো নোহান।

সুহানিঃ কি হলো আমাকে আনলেন কেন?

নোহানঃ কি শুরু করেছো তুমি এসব কি?

সুহানিঃ আমি এতদিনে ঠিক কাজ করেছি। আমি আপনার থেকে মুক্তি চাই।‌কিছুদিন পরে ডির্ভোস চাই আমার।

নোহান সুহানিকে আরো একটু শক্ত করে চেপে ধরে বললঃ এত সহজে আমার থেকে মুক্তি তুমি পাবে না মিসেস সুহানি শিকদার।

সুহানিঃ আমি মিসেস শিকদার নয় আমি সুহানি হাসান বুঝেছেন।

নোহান বাঁকা হেসে বললঃ তুমি মানো আর না মানো সত্যি তো এটাই। আর এটা গোটা দুনিয়া জানবে তুমি নোহান শিকদারের স্ত্রী।

সুহানিঃ কোনোদিন না আমি কখনোই আপনাকে স্বামী হিসাবে মানবো না।

নোহানঃ আমার কথা না শুনলে অপমানিত হবার জন্য তেরি হও।

সুহানিঃ কি করবেন আপনি?

নোহানঃ আমি তোমার কিছুই করবো না।‌ভাবো একবার যদি সকলে জানে আমাদের বিয়ের হবার পরেও তুমি রাহাতকে বিয়ে করছো তাহলে একবার ভাবো এই সমাজ তোমার পরিবারকে কি ছেড়ে কথা বলবে।

সুহানির দূর্বলতা ওর পরিবার। আর নোহান সবসময় ওই জিনিসেই আঘাত করে।

সুহানিঃ আমাকে এই সবকিছু থেকে মুক্তি দিন না দয়া করে।

নোহান সুহানির কানের কাছে মুখ নিয়ে এসে বললোঃ আমার থেকে তুমি মুক্তি পাবে না মিসেস শিকদার,,তুমি আমার ছিলে আর থাকবে।‌আমাদের বন্ধনটা উপর ওয়ালার দ্বারা সৃষ্টি। মৃ”ত্যু ব্যতীত তোমাকে আমার থেকে আলাদা করতে কেউ পারবে না।

নোহান চলে গেলো কথাটা বলে,সুহানি থম মেরে দাঁড়িয়ে রইল। কি প্রতিক্রিয়া করা উচিত সেটা বুঝে উঠতে পারলো না।

পরেরদিন সকালে…

সুহানি ওর বাবার সাথে বসার ঘরে বসে আছে। কলিং বেলের শব্দ শুনতে পেয়ে সুহানির মা উঠে গিয়ে দরজা খুলে দিলেন।

মাঃ আসলে নোহান বাবা তুমি

সুহানি নোহানের নাম শুনে চমকে উঠলো। উঠে দাঁড়িয়ে দেখলো সত্যি সত্যি নোহান এসেছে।

নোহানঃ আন্টি আমি কি ভেতরে আসতে পারি

মাঃ হ্যা বাবা এসো।

নোহান ভেতরে এসে বসল। সুহানির বাবা নোহান এর দিকে তাকিয়ে আছে।

নোহানঃ আঙ্কেল আমি আপনার মেয়েকে নিয়ে যেতে চাই।

সুহানি চমকে উঠলো নোহানের কথায়। নোহান বাড়ি তে এসে ওকে এভাবে নিয়ে যেতে চাইবে এটা ওর ধারনার বাইরে ছিলো।

বাবাঃ আমি কেন তোমার সাথে আমার মেয়েকে ছাড়বো?

নোহানঃ আঙ্কেল সুহানি আমার বিবাহিত স্ত্রী। আমি চাইলেই ওকে নিয়ে যেতে পারি তাই না।

বাবাঃ কিন্তু তুমি ওর মতের বিরুদ্ধে বিয়ে করছো।

নোহানঃ সমস্তটাই পরিস্থিতির শিকার। আমি চাইলেও এটা বদলাতে পারবো না সুহানি আমার স্ত্রী।

বাবাঃ ভালোবাসো আমার মেয়েকে?

নোহান সুহানির দিকে তাকালো। সুহানি এতক্ষন মাথা নীচু করে ছিলো কিন্তু বাবার করা এমন প্রশ্ন শুনে মাথা তুলে তাকিয়ে অবাক হয়ে বাবার দিকে তাকিয়ে রইল।

বাবাঃ কি হলো উত্তর দাও।

নোহান সুহানির দিকে তাকিয়ে বললোঃ ভালোবাসি না।

সুহানি নোহানের দিকে তাকালো। নোহান সুহানির চোখের দিকে তাকিয়ে বললোঃ কিন্তু আমার রঙহীন জীবনটাকে রঙিন করার জন্য সুহানিকে আমার লাগবে। আমার বেঁচে থাকার জন্য সুহানিকে আমার লাগবে‌।

সুহানির বাবা নোহান এর দিকে তাকিয়ে আছে। নোহান ওনার দিকে তাকিয়ে বললোঃ আঙ্কেল আমার হাতে কি নিজের মেয়েকে তুলে দেবেন।

সুহানির বাবা নোহান আর সুহানির দিকে একপলক তাকালো। তারপরে কিছু একটা চিন্তা করে বললেনঃ আমি আমার মেয়েকে তোমার হাতে তুলে দেবো না।

সুহানি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। নোহান হতাশ চোখে ওনার দিকে তাকিয়ে থাকলো। সুহানির বাবা নোহানের দিকে তাকিয়ে বললোঃ আমি আমার মেয়েকে আমার জামাই এর হাতে তুলে দেবো।

সুহানির চোখ কোটর থেকে ঠেলে বেরিয়ে আসার উপক্রম। নোহানের মুখে হাসি ফুটে উঠল।

বাবাঃ কিন্তু আমার একটা শর্ত আছে।

নোহানঃ কি শর্ত।

বাবাঃ দ্যাখো নোহান আমরাও এই সমাজে বাস করি। আমাদেরও কিছু নিয়ম মেনে চলতে হয়। তাই আমি চাইনা আমার মেয়ের চরিত্র নিয়ে কেউ কোনো কথা বলুক। আমি চাই তোমাদের বিয়ে দিয়ে সুহাকে তোমার হাতে তুলে দিতে।

নোহানঃ কিন্তু আঙ্কেল আমাদের তো বিয়ে হয়ে গেছে।

বাবাঃ সেটা তো আমরা জানি অন্য কেউ তো জানে না।

নোহান আর কিছু বললো না। সুহানি কি করবে বুঝে উঠতে পারছে না।

বাবাঃ কি রাজি তো।

নোহানঃ ওকে।

বাবাঃ তাহলে আমি বিয়ের দিন ঠিক করে তোমাকে জানাচ্ছি।

নোহানঃ ঠিকাছে। কিন্তু আঙ্কেল আমি সুহানিকে নিয়ে যেতে চাই।

বাবাঃ কিন্তু

নোহানঃ প্লিজ আঙ্কেল।

বাবাঃ ওকে।

সুহানি ওর বাবার দিকে তাকিয়ে আছে ওর বাবা রাজি হয়ে যাবে সেটা বুঝতে পারেনি।

সুহানি নিজের ঘরে বসে আছে। রাস্তায় নোহানের সাথে একটাও কথা বলেনি। চুপচাপ ছিলো। বাড়িতে এসেও কিছু বলেনি একদম চুপচাপ ছিলো।

নোহান হাতে খাবার নিয়ে বললোঃ সুহানি এটা খেয়ে নাও।

সুহানিঃ আমি খাবো না।

নোহানঃ আমি তোমাকে জিজ্ঞেস করিনি। আমি খেতে বলেছি।

সুহানি কিছু না বলে চুপ করে বসে থাকলো। নোহান ওর পাশে বসে খাবারটা নিজের হাতে নিয়ে সুহানির মুখের সামনে ধরলো। সুহানি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে নোহানের দিকে।

নোহান বাঁকা হেসে বললঃ এভাবে তাকিয়ে না থেকে কি বলবে বলো। আমি জানি আমি দেখতে ভালো।

সুহানি যেই না কিছু বলবে বলে মুখটা খুললো তখনি নোহান ওর মুখে ঢুকিয়ে দিলো খাবার টা।‌সুহানি নোহানের কাজে হতভম্ব হয়ে গেলো।

২ দিন পর…

নোহান সুহানির খেয়াল রেখেছে। আগের মতো ব্যবহার আর করে না। এখন সবসময় আগলে রাখে। সুহানি নোহানের এরকম পরিবর্তন এ অনেকটাই অবাক হয়ে গেছে। নোহান আর সুহানির বিয়ে ঠিক করা হয়েছে সামনের সপ্তাহে শুক্রবার।

নোহান আর সুহানির বাবা ফুল দমে ডেকোরেশন করছে।

সুহানির বাবা রাহাতের বাড়িতে আসতেই রাহাতের বাবা অবাক হয়ে বললোঃ আরে আপনি । আমি তো ভাবছিলাম আপনার কাছেই যাবো।যাক ভালোই হয়েছে এসেছেন।

সুহানির বাবাঃ কি করবো বলুন আরো আগেই আসতাম কিন্তু একা মানুষ তো কত দিক সামলাবো বলুন।

রাহাতের বাবাঃ সেটাই তো। আপনার সাথে একটা কথা ছিলো। আপনি কি সুহানির বিয়ের কথা নিয়ে কিছু ভাবছেন।

সুহানির বাবাঃ সেই জন্যই এখানে আসা।

রাহাতের বাবা একটু খুশি হলেন।

সুহানির বাবাঃ এই নিন কার্ড।

রাহাতের বাবা একটু অবাক হয়ে বললোঃ কিসের কার্ড।

সুহানির বাবাঃ সুহানি আর নোহানের বিয়ের কার্ড।

রাহাতের বাবা চমকে উঠে বললঃ কি বলছেন আপনি এসব কবে হলো।

সুহানির বাবাঃ কিছু দিন আগেই নোহান ভালো ছেলে তাই আর না করিনি। আসবেন কিন্তু আজ আসি।

সুহানির বাবা চলে গেলেন। রাহাতের বাবা চিন্তায় পড়ে গেলেন।‌কিভাবে এই কথাটা তার ছেলেকে জানাবে। কিন্তু তার আগে সুহানির সাথে কথা বলতে হবে। কেন করলো ওহ এটা।

#চলবে…

বিঃ দ্রঃ-ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
হ্যাপি রিডিং।