রাগে অনুরাগে পর্ব-১৩

0
445

#রাগে_অনুরাগে💚✨

#পর্ব_১৩

#লেখক_ঈশান_আহমেদ

মিহির’ আরাধ্যার কান থেকে তার হাত ছাড়িয়ে বললো,

“আরাধ্যা তুমি কি বাচ্চা হয়ে গেলে নাকি!”

মিহিরের কথায় আরাধ্যা মুচকি আসলো।রুশা মিহির আর আরাধ্যার সামনে হালকা কেশে বললো,

“এখানে আঙ্কেল আর আন্টিও আছে।সো একটু বুঝে শুনে কাজ করো।”

আরাধ্যা উঠে দাঁড়িয়ে রুশা মাথায় চাটি মেরে বললো,

“আমরা এমন কিছু করতে ছিলাম না যে বাবা-মা সামনে থাকলে সমস্যা হবে!পন্ডিতি করা কমিয়ে দে।”

মিহির উঠে দাঁড়িয়ে সবাইকে উদ্দেশ্য করে বললো,

“আচ্ছা অনেক রাত হয়ে গিয়েছে।আমার এখন বাড়িতে যেতে হবে।”

রুমা বেগম এসে মিহিরের কাঁধে হাত দিয়ে বললো,

“না খেয়ে তো তোমাকে এতো রাতে আমি যেতে দিবো না মিহির বাবা।রাতে খেয়ে তারপরে যাবে।”

মিহির কিছু বলতে যাবে তার আগে হিমু সাহেব বললো,

“মিহির তোমার শ্বাশুড়ি মা কিন্তু ঠিকই বলেছে।তুমি না খেয়ে যাবে না কিন্তু।আমি বরং উপরে যাই।আমার আবার ঔষধ খেতে হবে।”

/✨/

সবাই মিলে রাতের খাবার খেয়ে নিলো।হঠাৎ করে ঝড় শুরু হলো।রুমা বেগম বললেন,

“আচ্ছা তোমরা সবাই বরং আজকে আমাদের বাড়িতে থেকে যা।এতো ঝড়ে বের হওয়ার দরকার নেই।আর রাত প্রায় বারোটা বেজে গেছে।”

মিহির রুমা বেগমের কাছে গিয়ে বললো,

“আন্টি আমার সাথে গাড়ি আছে।আমি না হয় চলে যাই।ওরা থাকুক।”

“না বাবা।এই ঝড়ের সময় আমি তোমাকে কোথাও যেতে দিবো নাহ্।”

“কিন্তু বাবা আর মুহিত তো কিছু জানে নাহ।”

হিমু সাহেব বললেন,

“আমি মুবিন সাহেবকে কল করে জানিয়ে দিচ্ছি।”

মিহির আর কি করবে!সে থাকতে রাজি হলো আরাধ্যাদের বাড়িতে।

রুশা হাসি দিয়ে বললো,

“ভালোই হয়েছে সবাই একসাথে আড্ডা দিতে পারবো।”

রুমা বেগম বললেন,

“তোরা যা খুশি কর।আমি আর তোদের আঙ্কেল গিয়ে ঘুমাই।আরাধ্যা তুই কিন্তু মিহিরের খেয়াল রাখবি।”

“আচ্ছা আম্মু।”

হিমু সাহেব আর রুমা বেগম চলে গেলেন।সবাই ড্রয়িং রুমের ফ্লোরে গোল হয়ে বসলো।ফিহা আগ্রহী হয়ে বললো,

“চলো আমরা ট্রুথ ডেয়ার খেলি।সবার ভালো লাগবে আশা করি।”

নোমান বললো,

“হ্যাঁ ফিহা ঠিক বলেছো।আমরা ট্রুথ ডেয়ার খেলতে পারি।”

আরাধ্যা উঠে দাঁড়িয়ে বললো,

“আচ্ছা তোরা শুরু কর।আমি কিছু স্ন্যাকস বানিয়ে আনি।ঝড়ের রাতে খেতে ভালোই লাগবে।”

আরাধ্যা রান্নাঘরের দিকে চলে গেলো।মিহির উঠে দাঁড়িয়ে বললো,

“আমি গিয়ে আরাধ্যা একটু সাহায্য করে আসি।”

সবাই মিটিমিটি হাসছে।রুশা মুখ ফসকে বলে ফেললো,

“দেখেন দুজনে আবার অন্য জগতে হারিয়ে যেয়েন না স্ন্যাকস বানাতে গিয়ে।”

মিহির মুচকি হেসে রান্নাঘরের দিকে চলে গেলো।আরাধ্যা স্ন্যাকস ভাজছে।মিহির গিয়ে তার পাশে দাঁড়ালো।আরাধ্যা ভ্রু কুচকে বললো,

“আপনি এখানে কেনো এসেছেন মিহির বাবু?”

“আমার হবু বউ একা একা কাজ করছে।আর আমি একটু সাহায্য না করলে চলে নাকি!”

“আপনার সাহায্য করা লাগবে না।আপনি গিয়ে ওদের সাথে আড্ডা দেন বসে বসে।”

“উহু চাশমিশ!তোমাকে ছাড়া ওখানে থাকতে আমার ভালো লাগে নাকি?”

আরাধ্যা চশমা ঠিক করে বললো,

“তা আমার সাথে থেকে কি করবেন?”

আরাধ্যা কথাটা বলার সাথে সাথে চলে গেলো।মিহির আরাধ্যার হাত ধরে তার একদম কাছে নিয়ে এসে বললো,

“কারেন্টটা একদম ঠিক সময়ে গিয়েছে।রোমাঞ্চ করতে সুবিধা হবে।”

“মিহির বাবু কি করছেন?ছাড়ুন আমাকে!”

মিহির কিছু বললো নাহ্।সে এক দৃষ্টিতে আরাধ্যার দিকে তাকিয়ে আছে।বাইরে বিদ্যুৎ চমকানোর কারণে হালকা আলো জানালা দিয়ে এসে রান্নাঘরে পড়ছে।এই আলোতে আরাধ্যাকে দেখতে অসম্ভব সুন্দর লাগছে!

বাতাসের কারণে আরাধ্যার চুলগুলো উড়ে এসে তার মুখের উপর পড়ছে।মিহির তা খুব যত্নে আরাধ্যার কানের পাশে গুঁজে দিচ্ছে।

আরাধ্যা হাত-পা নাড়িয়ে বললো,

“মিহির বাবু ছাড়ুন প্লিজ।ওরা চলে আসলে মানসম্মান সব যাবে।”

মিহির মুচকি হেসে আরাধ্যাকে আরো চেপে ধরে বললো,

“মানসম্মান দিয়ে কি হবে!তোমার মতো সুন্দরী পাশে থাকলে মানসম্মানের চিন্তা মাথায় থাকে না।”

রুশা মোমবাতি নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে বললো,

“রান্নাঘরে কি আমাদের লায়লা-মজনু আছে নাকি অন্য কোথাও হারিয়ে গেছে।”

রুশা গলা কানে আসতেই আরাধ্যা’ মিহিরের হাতে একটা চিমটি দিলো।যার ফলে মিহির আরাধ্যাকে ছেড়ে কিছুটা উচ্চস্বরে বললো,

“আউচ!”

মিহিরের চিৎকার কানে আসতে রুশা তাড়াতাড়ি রান্নাঘরে গেলো।তারপরে বললো,

“কি হয়েছে জিজু।”

মিহির হাত ডলতে ডলতে আরাধ্যার দিকে মুখ গোমড়া করে তাকিয়ে বললো,

“মশা কামড় দিয়ে শালিকা।”

“মশা কামড় দিলে এতো জোরে চিৎকার করতে হয় নাকি জিজু?”

“মশাটা অনেক বড় ছিলো তো তাই একটু জোরেই চিৎকার করে ফেলেছি।”

রুশা আরাধ্যার দিকে তাকিয়ে বললো,

“তোর স্ন্যাকস ভাজা শেষ?”

“হ্যাঁ শেষ।”

“আচ্ছা তাহলে চল।”

আরাধ্যা রুশার হাতে থেকে মোমবাতি নিয়ে তার হাতে স্ন্যাকসের বাটি ধরিয়ে দিলো।তারপরে মোমবাতিটা মিহিরের হাতে দিয়ে চোখ টিপ মারলো।মিহির কিছু না বলে মোমবাতি হাতে নিয়ে হাঁটা শুরু করলো।

আরাধ্যা ফ্রিজ থেকে জুস আর পানি নিয়ে রুশার এক হাত চেপে ধরে হাঁটতে লাগলো।

ড্রয়িংরুমে যেতেই কারেন্ট চলে আসলো।মিহির আরাধ্যার পাশে না বসে নোমানের পাশে গিয়ে বসলো।আরাধ্যা বুঝতে পেড়েছি মিহির তার উপর রাগ করেছে।আরাধ্যা মনে মনে বললো,

“ইশ চিমটিটা মনে হয় বেশি জোরেই দিয়ে ফেলেছি।”

ট্রুথ ডেয়ার খেলা শুরু হলো।রাত তিনটা পর্যন্ত খেলে সবাই ঘুমাতে গেলো।আরাধ্যা মিহিরকে নিয়ে একটা রুমে গেলো।আরাধ্যা রুমে গিয়ে মিহিরকে বললো,

“মিহির বাবু আপনি এই রুমে থাকেন।”

মিহির মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ সূচক উত্তর দিলো।আরাধ্যা বুঝতে পারলো মিহির এখনো তার উপর রেগে আছে।

আরাধ্যা মিহিরের কিছুটা কাছে গিয়ে তার গলা জড়িয়ে ধরে মিহিরের গালে একটা চুমু দিয়ে বললো,

“সরি তখন চিমটি দেওয়ার জন্য।রুশা আমাদের ওভাবে দেখে ফেললে অনেক মজা করতো।”

আরাধ্যার কথা শুনে মিহির ফিক করে হেসে দিলো।আরাধ্যা ভ্রু কুচকে বললো,

“আপনি হাসছেন কেনো?”

“চাশমিশ আমি তোমার সাথে মজা করতে ছিলাম।দেখলাম আমি রাগ করলে তুমি রাগ ভাঙাতে পারো নাকি!”

আরাধ্যা মিহিরের গলা ছেড়ে ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললো,

“আপনার রাগ ভাঙানো কোনো ব্যাপার নাকি!একটা চুমু দিয়েছি আপনার রাগ আকাশে উড়ে গেছে।”

মিহির গিয়ে আরাধ্যাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে তার কাঁধে থুতনি ঠেকিয়ে বললো,

“যাকে ভালোবাসি তার সাথে কি করে বেশিক্ষণ রাগ করে থাকতে পারি!আমাকে দিয়ে তা সম্ভব নাহ্।”

আরাধ্যা মিহিরের দিকে তাকিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে বললো,

“আপনি আসলেই অনেক ভালো মিহির বাবু।”

“পাম দিচ্ছো নাকি?”

“হ্যাঁ আপনাকে পাম দিয়ে ফুলানোর চেষ্টা করছি।”

“দেখে বেশি আবার ফুলিয়ো নাহ্ যেন!তাহলে আবার উড়ে যেতে পারি।”

মিহিরের কথা শুনে আরাধ্যাকে হেসে দিলো।মিহিরও তার সাথে হাসলো।

আরাধ্যা মিহিরকে ছেড়ে বললো,

“অনেক রাত হয়ে গেছে ঘুমিয়ে পড়ুন।আমি এখন যাই।”

মিহির আরাধ্যার কপালে ভালোবাসার পরশ এঁকে দিয়ে বললো,

“গুড নাইট চাশমিশ।”

আরাধ্যা মুচকি হেসে বললো,

“গুড নাইট মিহির বাবু।”

আরাধ্যা চলে গেলো।আরাধ্যা চলে যেতে মিহির বিছানায় শুয়ে পড়লো।

#চলবে……………….