রাঙা আলোর সন্ধ্যা পর্ব-৩১+৩২

0
7

#রাঙা_আলোর_সন্ধ্যা
#পার্ট_৩১
জাওয়াদ জামী জামী

” শুনছেন? ” পুলক ফোন নিয়ে ব্যস্ত। আশফি অনেকক্ষণ ধরেই ওর আশেপাশে ঘুরঘুর করছে। পুলক সেটা দেখেও কিছুই বলছেনা। ও আশফিকে রাগাতে চাইছে।

‘ বলুন , শুনছি। ” অগত্যা আশফির ডাকের উত্তর নিতেই হয়।

” আবারও ইয়ার্কি করছেন? ” মুখ গোমড়া করে বলল মেয়েটা।

” উঁহু, ইয়ার্কি নয়, সিরিয়াসলি বলছি। কি বলতে চান বলে ফেলুন মহামান্য রানী সাহেবা। এই অধম আপনার সকল কথা শোনার জন্য সদা প্রস্তুত। ”

” এভাবে ইয়ার্কি করলে আমি কিন্তু বলবনা। ”

” সরি, মেরি জান। এবার বল তোমার মনের যত কথা। ” কথা বলতে বলতে পুলক হাত বাড়িয়ে আশফিকে কাছে টেনে নেয়।

” মা ভাইয়ার বিয়ের কথা বলছিল। আমাকে বলল ভাইয়াকে বলতে। কিন্তু ভাইয়াকে কিভাবে বলব? আমি আগে কখনোই ভাইয়ার সাথে এসব নিয়ে কথা বলিনি। ” পুলকের বুকে মাথা রেখে বলল আশফি।

” তুমি ভাইয়াকে বল, তার খাওয়াদাওয়ার কষ্ট হচ্ছে। একটা পারমানেন্ট রাঁধুনির ব্যবস্থা করতে হবে। এছাড়াও রাতে ঘুমানোর জন্য তার জ্যান্ত কোলবালিশ দরকার। শিমুল তুলোর কোলবালিশ দিয়ে কোন পুরুষেরই ঘুম হয়না ঠিকঠাক। ”

পুলকের কথা শোনামাত্রই ওর বুক থেকে মাথা তুলল আশফি। রাগে ওর কান দিয়ে ধোঁয়া বেরোচ্ছে।

” অসভ্য পুরুষ, আমি বড় ভাইয়াকে এসব বলব! ভাইয়া আমার মুখে এসব শুনলে আমাকে নির্ঘাত থাপড়াবে। আপনি কি আমার থাপ্পড় খাওয়ার রাস্তা ক্লিয়ার করছেন! ” দাঁত কিড়মিড়িয়ে বলল আশফি।

” তোমার থাপ্পড়ও খেতে হবেনা আবার ভাইয়াকেও কিছু বলতে হবেনা। ভাইয়াকে যা বলার আমিই বলব। তুমি বলতে গেলে সব ভেস্তে যাবে। ”

” আচ্ছা, মনে করে বলবেন। ভাইয়াকে কিন্তু রাজি করাতেই হবে। ”

” সেসব তোমাকে ভাবতে হবেনা। কথা না বলে এখন বুকে এস অনেকক্ষণ আদর করিনা আমার বউটাকে। ” পুলক হাত বাড়িয়ে আবারও আশফিকে বুকে জড়িয়ে নিল।

***

” মিনহাজ, রাস্তার কাজ কতদূর এগিয়েছে? কাজের জন্য নির্ধারিত সময়সীমা কিন্তু শেষ হয়েছে আরও চারদিন আগেই। এভাবে সময় লাগালে আমার দূর্নাম বৈ সুনাম হবেনা। ” আতিক মির্জা অফিসে বসে আছেন। তাকে কয়েকজন জানিয়েছে সিটি করপোরেশনের উন্নয়ন কাজের কোন অগ্রগতি নেই। তাই তিনি তার সেক্রেটারি কে জিজ্ঞেস করলেন।

” আমি সংশ্লিষ্ট সকলের সাথে কথা বলেছি, তারা খুব তাড়াতাড়িই কাজ শেষ করতে চেয়েছে। ” উত্তর দিল সেক্রেটারি।

” তুমি বিষয়টা দেখ। নতুবা আমাকেই মিটিংয়ে বসতে হবে সকলে নিয়ে। আর আমি যদি একবার মিটিং ডাকি, তবে কাউকেই ছেড়ে কথা বলবনা। আমি চাইনা একটা টাকাও এদিকওদিক খরচ হোক। আর যদি এমন দেখি তবে আমি এবার সবার মুখোশ খুলে দেব। ” আতিক মির্জার গলা শুনে সেক্রেটারি আর কিছু বললনা। সে বিভিন্ন জায়গায় ফোন করতে ব্যস্ত হয়ে পরল।

আতিক মির্জাও কয়েক জায়গায় ফোন করে কাজের ব্যাপারে খুটিনাটি সবকিছু জেনে নিলেন। সেই সাথে কয়েকজনের ওপর রাগও ঝাড়লেন।

***

আশফি, পুষ্পিতা ড্রয়িংরুমে বসে খুনশুটি করছিল। মল্লিকা মির্জা একটু দূরে বসে দু’জনকে দেখছিলেন। ছেলের বউ তিনি মনের মত পেয়েছেন এতেই তার আনন্দ।

” বুঝলে ভাবী, আমার কাজিনমহল রিফাত ভাইয়ার ওপর ক্রাশ খেয়েছে। অনুসহ চারজন রিফাত ভাইয়ার ওপর ফিদা। এদের মধ্যে থেকেই একজনকে বেছে নাও ভাইয়ার বউ হিসেবে। আমার কাজিনরা কিন্তু ওয়াইফ ম্যাটেরিয়াল। ” পুষ্পিতা সোৎসাহে বলল।

” আমি ভাইয়াকে এখন অব্দি বিয়ের কথা বলতে পারিনি। তোমার ভাইয়া বলতে চেয়েছে। আগে দেখি ভাইয়া কি বলে। ” আশফিরও ইচ্ছে রিফাত বিয়ে করুক।

” যা করার তাড়াতাড়ি কর। রিফাত ভাইয়ার বিয়েতে আমরা অনেক মজা করব। সাতদিন আগেই তোমাদের বাড়িতে যাব। তোমার গোমড়ামুখো ভাইয়াকে ভিষণ জ্বালাব। সে আমাকে কিছু বলতে পারবেনা শুধু চুপচাপ সহ্য করবে। ”

” বাব্বাহ্ পুষ্পিতা, তুমি এতকিছু ভেবে রেখেছ! ভাইয়াকে বিয়ের কথা বলতেই পারলামনা, আর এদিকে তোমার দেখছি মহাপরিকল্পনা! ”

” তুমি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তোমার ভাইয়াকে রাজি করাও। ” পুষ্পিতা কথা শেষ করতে পারলনা। কলিং বেল বাজতেই উঠে গিয়ে দরজা খুলে দেয়।

বড় মামাকে দরজার সামনে দেখে বেশ অবাকই হয়েছে পুষ্পিতা। ও জানতনা আজকে মামা আসবে।

” পুষ্পি মা, আমাকে ভেতরে ঢুকতে দেবেনা? এত পথ জার্নি করে এসেছি আবার তুমিও বাহিরে দাড় করিয়ে রেখছ, এটা কি ঠিক? ”

বড় মামার কথা শুনে পুষ্পিতা লজ্জা পায়। ও দরজা ছেড়ে দাঁড়ায়।

” ভাইয়া, তুমি! তুমি আসবে আমাকে জানাওনিতো! ” মল্লিকা মির্জা সত্যিই অবাক হয়েছেন।

” জানানোর মত পরিস্থিতি ছিলনা, তাই তোকে বলিনি। এবার আমাকে ঠান্ডা পানি খাওয়া দেখি। পিপাসায় গলা শুকিয়ে গেছে। ”

মামাশ্বশুরকে দেখে আশফি তার কাছে গিয়ে সালাম দিয়ে কুশলাদি জানতে চায়। তার সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে রান্নাঘরে যায় মামার জন্য নাস্তা বানাতে।

***

” নতুন বউ, আইজ শাহেদ বাবা আসব। বাবা’র পছন্দের দুইটা পদ রাঁনমু। এইছাড়াও সকলের জন্যই রাঁন্দন লাগব। তুমি তো প্রত্যেকদিনই দুই-একটা পদ রান্ধো, আইজও কি রাঁন্দবা? ”

শাহেদের আসার খবর শুনে চমকে উঠল তিয়াসা। ও জানতনা শাহেদ আসছে। শাহেদের আসার কথা শুনেই ওর হৃৎস্পন্দনেরা ডামাডোল পেটাতে শুরু করল।

” কখন আসবেন উনি? আপনাকে ফোন করেছিল? ” উদগ্রীব হয়ে জানতে চাইল মেয়েটা।

” ক্যান তোমারে বাবা’য় কিছু কয়নাই? নাকি তোমারে চমকায় দিবার চাইছিল? যাহ্ আমি তোমারে কইয়া দিলাম। ”

খাদিজা আন্টির কথা শুনে তিয়াসা ড্যাবডেবিয়ে তাকিয়ে থাকল। শাহেদ যে ওকে সারপ্রাইজ দেবেনা সেটা ও ভালো করেই জানে। কিন্তু আন্টি যখন কিছুই বুঝতে পারেনি, তাই আর আন্টিকে জানাতে চায়না।

” উনি কি কি খেতে পছন্দ করেন, আন্টি? আমি একদিন শুনেছিলাম উনি ফ্রুট স্যালাড পছন্দ করেন। ” সাহস করে জিজ্ঞেস করল তিয়াসা।

” ওমা! তুমি আমার বাবা’র কি খাবার পছন্দ সেইডা জানোনা! বাবা’য় তোমারে কয়নাই? ” আশ্চর্য হয়ে জানতে চাইলেন আন্টি।

আন্টির এমন প্রশ্নের মুখে পরে মুখ কাঁচুমাচু করে তার দিকে তাকিয়ে থাকল মেয়েটা। কি উত্তর দেবে সেটাই চিন্তা করছে।

” আসলে আন্টি, এসব জানতে চাইনি তার কাছে। আমি ভেবেছিলাম উনি আসলে উনার কাছেই জিজ্ঞেস করব। ”

তিয়াসার দিকে তাকিয়ে হাসল খাদিজা আন্টি। মেয়েটা মলিন মুখে তার দিকে তাকিয়ে আছে।

” আমার বাবা’য় সবই খায়। বাঙালী সব খাবারই শাহেদ বাবা’র পছন্দ করে। তয় এসবের মধ্যেও বাবা ছোট মাছ পছন্দ করে বেশি। সব ধরনের ছোট মাছ বাবা খায়। ”

” বাসায় ছোট মাছ আছেনা, আন্টি? না থাকলে কাউকে বাজারে পাঠাতে হবে। আজকে আমি ছোট মাছ রান্না করব। ” তিয়াসা খাদিজা আন্টির প্রত্তুত্যরের আশা না করে দৌড়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। ওর গন্তব্য রান্নাঘর।

রাত এগারোটার দিকে শাহেদ বাসায় আসল। তিয়াসা তখন ওর ফুপু শ্বাশুড়ির সাথে গল্প করছিল। খাদিজা আন্টি দরজা খুলে দিলে শাহেদ ভেতরে ঢুকল৷

” ভাইয়ায়ায়ায়া, তুমি এসেছ? মাই ডিয়ার ভাইয়া, এবার কিন্তু আমরা জম্পেশ আড্ডা দেব। ” শাহেদের ফুপু ফাতিমা জান্নাতের মেয়ে ফিহা দৌড়ে গিয়ে শাহেদকে জড়িয়ে ধরল। কয়েক মুহুর্ত পরই বাকি সব মেয়েরা দৌড়ে গেল শাহেদের কাছে। একে একে সবাই জড়িয়ে ধরল ওকে। শাহেদও পালাক্রমে জড়িয়ে ধরল ওর আদরের বোনদের। বিদেশে জন্মাবার সুবাদে ওরা একটু বেশিই ফ্রি।

তিয়াসা চোখ সরু করে ঠোঁট কামড়ে তাকিয়ে আছে শাহেদের দিকে। শাহেদ হেসে হেসে কথা বলছে কাজিনদের সাথে।

কিছুক্ষণ সবার সাথে কথা বলে দাদুর কাছে যায় শাহেদ। ঘুমন্ত দাদুর পাশে অনেকক্ষণ কাটিয়ে রুমে যায়। তিয়াসা তখন রান্নাঘরে।

অনেকদিন পর রুমে এসে ভ্রু কুঁচকে দাঁড়িয়ে থাকে শাহেদ। পুরো রুমটাই মেয়েলি ধাঁচের মনে হচ্ছে। জানালার পর্দা পাল্টানো হয়েছে। আগে সেগুলো হালকা নীল রঙের ছিল। এখন সেগুলো গোলাপি রঙের হয়েছে। বেডশিটও হজলকা গোলাপি রঙের। শাহেদের গোলাপি রংটা কখনোই পছন্দের ছিলনা। ওর মনে হয়, গোলাপি রংটাই মেয়েদের জন্য। এই রংয়ের শাড়ী, সালোয়ার-স্যুটে মেয়েদের পারফেক্ট লাগে। শাহেদ খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে রুমটাকে দেখতে লাগল। ড্রেসিং টেবিল জুড়ে মেয়েলি পারফিউম শোভা পাচ্ছে। সেখানে লিপস্টিকসহ কিছু জিনিসপত্র দেখা যাচ্ছে যেগুলোর নাম শাহেদ জানেনা। কিন্তু বুঝতে পারছে এগুলো মেয়েদের জিনিস। মোটকথা পুরো রুম জুড়ে মেয়েলি গন্ধ। এক মুহুর্ত কিছু একটা ভেবে চোখ বন্ধ করে শ্বাস নিল সে। এই মেয়েলি গন্ধকে প্রান ভরে উপভোগ করতে চাইছে। মিশিয়ে নিতে চাইছে অস্তিত্বের সাথে।

” আপনার জন্য সবাই অপেক্ষা করছে। আপনি নিচে গেলেই তবে খাওয়া শুরু করবে। ”

হঠাৎই তিয়াসার গলা শুনে চমকে উঠল শাহেদ। মেয়েটা দরজার সামনে মুখ নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। ড্রয়িংরুমে সবাই উপস্থিত থাকায়, তখন ওর সাথে কথা বলা হয়নি। এমনকি ওকে ভালোভাবে লক্ষ্যও করা হয়নি। এখন সুযোগ পেতেই ওর দিকে গভীর চোখে তাকায় শাহেদ। মেয়েটা বোধহয় আগের থেকে ফর্সা হয়েছে। সেই সাথে হয়েছে গম্ভীর।

” কেমন আছেন? আমার কাজিনরা আপনাকে বিরক্ত করছেনাতো? ”

” বিরক্ত করলে কি করবেন? ওদেরকে মারবেন? ”

তিয়াসার উত্তর শুন থমকায় শাহেদ। কোন প্রশ্নের কি উত্তর! বিস্ময়ে চোয়াল ঝুলে পরল।

” না মারব কেন! ওরা বিরক্ত করলে ওদেরকে নিষেধ করব। ”

” সেটা আমিই করতে পারব। অযথা আপনি কেন কষ্ট করবেন? ওদের সাথে কেন শত্রুতা সৃষ্টি করবেন? সেটা বোধহয় আপনার জন্য ভালোও হবেনা। অনেক সুযোগসুবিধা মিস করবেন তাহলে। ”

তিয়াসার কথাগুলো ঠিক বোধগম্য হলোনা শাহেদের। তাই বোকার মত প্রশ্ন করেই বসল,

” কিসের সুযোগসুবিধা বলুনতো? আর ওদের নিষেধ করলেইবা কিসের শত্রুতা সৃষ্টি হবে? আপনার কথা আমি ঠিক বুঝতে পারিনি। ”

” আপনি বাচ্চা মানুষ তাই বড়দের কথা বুঝবেননা এটাই স্বাভাবিক। আমিই পাগল। বাচ্চারা কতকিছুই করে থাকে, সবকিছু ধরতে আছে নাকি। যাহোক, ফ্রেশ হয়ে খেতে আসুন। ” গটগটিয়ে চলে গেল তিয়াসা। একবারও পেছন ফিরে তাকালোনা। তাকালে দেখতে পেত শাহেদ বিস্ময়ভরা চোখে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।

***

রাতে খাবার পর শাহেদকে ওর কাজিনরা ধরেবেঁধে ছাদে নিয়ে গেল। ওরা আগেই সেখানে বসার ব্যবস্থা করে রেখেছিল। ওরা তিয়াসাকেও ডেকেছিল। কিন্তু ঘুমের অযুহাত দিয়ে তিয়াসা রুমে চলে যায়।

রাত আড়াইটায় শাহেদ রুমে এসে দেখল তিয়াসা বই নিয়ে বসে আছে।

” একি আপনি ঘুমাননি! তখন যে বললেন ঘুমাবেন? ” শাহেদ জিজ্ঞেস না করে পারলনা।

” তখন ঘুম এসেছিল, এখন সেটা কেটে গেছে। এতে কি আমার অপরাধ হয়েছে? ” তিয়াসা বই থেকে মুখ না তুলেই বলল।

” অপরাধ হবে কেন! আপনিও ছাদে যেতে পারতেন। ওরা আপনার কথা বলছিল। আপনি থাকলে ওরা আরও মজা করত। ”

” আমি গেলে আপনার ভালো লাগত? অসুবিধা হতোনা? ” বই বন্ধ করে সোজা হয়ে বসল তিয়াসা।

” কিসের অসুবিধা হবে! আর আপনি গেলে আমার খারাপই বা লাগবে কেন! এভাবে কথা বলছেন কেন আপনি? ”

” বাদ দিন। আমার ঘুম পেয়েছে। ” তিয়াসা আর কিছু না বলে বাতি নিভিয়ে শুয়ে পরল।

শাহেদ রুমের মাঝখানে দাঁড়িয়ে অবাক চোখে দেখছে তিয়াসাকে। মেয়েটা ওর দিকে পেছন ফিরে শুয়েছে। তিয়াসার দিকে তাকিয়ে ভেবেই চলেছে শাহেদ। হঠাৎ তিয়াসা ওর সাথে এমন আচরণ করছে কেন? কি হয়েছে ওর? অনেক ভেবেও কোন উত্তর পায়না সে। বাধ্য হয়ে সোফায় গিয়ে শুয়ে পরল। কিন্তু চিন্তায় সারারাত ঘুমাতে পারলনা।

চলবে…

#রাঙা_আলোর_সন্ধ্যা
#পার্ট_৩২
জাওয়াদ জামী জামী

আশফি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে ওর মামা শ্বশুরের দিকে। তার কথা আশফির বোধগম্য হচ্ছেনা। এদিকে পুষ্পিতা সেই কখন থেকে কিছু একটা বলার জন্য ছটফট করছে। কিন্তু বলার সুযোগ পাচ্ছেনা। পুলকের বরাবরের মতোই ফোনে মনযোগ।

” বউমা, তুমি কিছু বলছনা কেন? আমার প্রস্তাব কি তোমার পছন্দ হয়নি? ” আশফিকে কিছু বলতে না দেখে ওর মামা শ্বশুর জিজ্ঞেস করল।

” আমি আপনার কথা শুনে কিছু বলতে ভুলে গেছি, মামা। আমার বিশ্বাসই হচ্ছেনা আপনি এমন প্রস্তাব দিয়েছেন। ” এর থেকে বেশি কিছু বলতে পারলনা আশফি।

” পাগলি মেয়ের কথা শোন। তুই শুধু বল নিলাশাকে তোর কেমন লাগে? বাকিটা আমি দেখছি। ” মল্লিকা মির্জা আশফিকে সাহস দিচ্ছেন।

” নিলাশা অনেক ভালো একটা মেয়ে। ও আমার কাছে পুষ্পিতার থেকে কোন অংশেই কম নয়। তবুও আমার বিশ্বাস হচ্ছেনা নিলাশা ভাইয়াকে পছন্দ করে। ”

” কেন রিফাতকে পছন্দ করলে সমস্যা কোথায়! ওর কাছে রিফাতকে নিজের যোগ্য মনে হয়েছে, তাই ওর পছন্দের কথা বাড়িতে বলেছে। এতে অবিশ্বাসের কি আছে? রিফাত তো কারও থেকে কোন অংশেই কম নয়। শোন মা, আমার রিফাতকে পছন্দ হয়েছে। নিলাশার সাথে ওকে বেশ মানাবে। এবার তোর আর বেয়াইয়ের সাথে কথা বলার পর রিফাতের সাথে কথা বলব। ” মল্লিকা মির্জা আশফিকে বোঝানোর চেষ্টা করলেন।

” চিন্তা করা যায়, নিলাশা চিটাগং গিয়ে রিফাত ভাইয়ার অফিসেও গেছে। দূর থেকে তাকে কয়েকদিন পর্যবেক্ষনও করেছে! রিফাত ভাইয়ার সম্পর্কে সব জেনেও নিয়েছে! আম্মু, নিলাশার সাহস আছে বলতে হবে। আমরা কি করলাম জীবনে। ” পুষ্পিতা এবার কথা না বলে পারলনা৷

” কেন তুইও অয়নের সাথে চুটিয়ে প্রেম করছিস।কয়দিন পর বিয়েও করবি। এটাকে তোর কিছুই বলে মনে হয়না? ” পুলক ফোনের দিকে তাকিয়েই কথা বলল ।

” আমি বলতে চাচ্ছি নিলাশার সাহস আছে। আর তুমি কোনদিকে কথা ঘোরাচ্ছ? ” পুষ্পিতা মুখ গোমড়া করে বলল৷

” এসব ক্ষেত্রে মেয়েদের সাহসী হতে হয়। যার সাথে পুরো জীবন কাটাবে তাকে আগে থেকেই জানবেনা! নিলাশার খালামনি চিটাগং থাকে, তাই ও সেখানে গিয়ে ভাইয়ার সম্পর্কে খোঁজ নিয়েছে। ও বুদ্ধিমতি তাই ভুল কিছু করেনি। আম্মু, তুমি চিন্তা করোনা আমি ভাইয়ার সাথে আজকেই কথা বলব। আশফি কিংবা ওর বাবা’র এখানে কথা বলার কিছুই নেই। সে বিয়ে করবে তার মতামতই আসল। ” পুলক কারও দিকে না তাকিয়েই কথা বলছে।

” বেয়াই ছেলেকে বিয়ে করাবে কিনা সেটাও তো আমাদের জানতে হবে? তাকে রেখে রিফাতের কাছে প্রস্তাব দিতে আমার খারাপ লাগবে। ” পুলকের মামা একটু ইতস্তত করছেন।

” মামা, এখন দিন বদলেছে। তুমি সেই আগের দিনেই পরে আছ। আর তাছাড়া আমার মহামান্য শ্বশুর বাবা তার ছোট দুই ছেলেমেয়েকে নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। আশফি কিংবা রিফাতের দিকে নজর দেয়ার সময় তার নেই। তাই প্যারা না নিয়ে মেয়ের বিয়ের আয়োজন শুরু করে দাও। জামাইকে রাজি করানোর দ্বায়িত্ব আমার। ” পুলক আশফির দিকে আঁড়চোখে তাকিয়ে কথাগুলো বলল।

তবে মল্লিকা মির্জার কথামত আশফি আগে ওর বাবা’র সাথে কথা বলল। ছেলের বিয়ের কথা শুনে আফজাল হোসেন অমত করলেননা। তিনি রিফাতের সাথে কথা বলতে চাইলেন।

এদিকে পুলক রিফাতের কাছে ফোন দিয়ে ওর বিয়ের ব্যাপারে কথা বলল। রিফাত প্রথমে আপত্তি করলেও পুলকের যুক্তির কাছে হার মানে। আবার আফজাল হোসেনও তাকে ফোনে বিয়ের জন্য চাপ দিলেন। আশফিও ওকে বিয়ের কথা বারবার বলতে থাকে। চারদিক থেকে সবার অনুরোধে রিফাত আর না করতে পারলনা। তবে সে বিয়েতে মত দেয়নি। প্রথমেই নিলাশার সাথে একান্তে কিছু কথা বলতে চায়।

***

” ভাইয়া, আজকে আমরা লং ড্রাইভে যাব। তুমি পুলক ভাইয়াকে বলে তার জিপ নিবে। এবং সেই সাথে ভাইয়া এবং ভাবীকেও লং ড্রাইভে যেতে ইনভাইট করবে। ” ফিহা হুট করে এসে আবদার করে বসল।

তিয়াসা রান্নাঘর থেকে ফিহার কথা শুনতে পায়।

” আজ থাক। কালকে যাই? আজকে আমি একটু ব্যস্ত থাকব। প্রমিজ করছি কাল তোদের লং ড্রাইভে নিয়ে যাব। ”

” তোমার কাজ কি সেটা আমি ভালো করেই জানি। বাসা থেকে বেরিয়ে সোজা যাবে পুলক ভাইয়ার আড্ডাখানায়। তাই এসব বাহানা চলবেনা। তুমি আজই আমাদের নিয়ে যাবে। ” ফিহা জোড়াজুড়ি করতে থাকল।

” ভাইয়া যদি জিপ নিয়ে কোথাও যায়, তবে আমি তোদের নিয়ে কিভাবে যাব? আগে থেকেই যদি ভাইয়াকে বলে রাখতাম তবে কোন কথা ছিলনা। তারচেয়ে বরং একটা দিন অপেক্ষা কর। আমি আজকে ভাইয়াকে বলে রাখছি। কালকে তোদের নিয়ে বেরোব। ”

” তোমার ছুটি কয়দিন সেটা আগে বল? ”

” চারদিন। কেন কি হয়েছে? ”

” গতকাল রাতে এসেছ। আর কয়দিন সময় পাবে আমাদের নিয়ে বেড়ানোর? এমন অলসতা করলে তোমার ছুটি শেষ হয়ে যাবে কিন্তু আমরা বেড়াতে পারবনা। আজকেই আমরা লং ড্রাইভে যাব। আর কালকে পার্টি দেব। তুমি পুলক ভাইয়াকে ফোন কর। ”

” ফোন করতে হবেনা, আমি ভাইয়াকে সরাসরিই বলব। ”

” তারমানে তুমি এখন বাহিরে যাবে? ”

” হুম। অনেকদিন সবার সাথে দেখা হয়নি। ওদের সাথে দেখা করে এসে তোদের নিয়ে বেরোব। ” শাহেদ বেড়িয়ে গেল।

ফিহা ফোঁসসস করে নিঃশ্বাস ছেড়ে রান্নাঘরে গেল।

” মাই ডিয়ার ভাবী, তোমার জামাই কেমন রসকষহীন মানুষ দেখলে? কতদিন পর দেশে আসলাম কোথায় সে আমাদের নিয়ে বেড়াতে যাবে, কিন্তু সেটা না করে পালিয়ে গেল। আমার এই রসকষহীন ভাইয়া নাকি আবার কাউকে ভালোবেসেছে গত চার বছর যাবৎ। এক মিনিট, ভাইয়ার সেই চার বছরের গোপন প্রনয়িনী কি তুমি? আমরা কতবার ভাইয়ার কাছ থেকে তার নাম জানতে চেয়েছি কিন্তু সে প্রতিবারই মুখে সুপার গ্লু লাগিয়ে রাখত। ” ফিহা তিয়াসার কাছে জানতে চাইল।

” তোমার ভাইয়াকেই জিজ্ঞেস কর। আমি জানিনা তুমি কার কথা বলছ। ” ফিহা এই বিষয়ে কথা বলতে চায়না।

” এই রে ভুল করে ফেললাম বোধহয়। তুমি যদি সেই মেয়ে না হও, তবে তো তুমি ভাইয়ার সাথে ঝগড়া বাঁধিয়ে দেবে। ফিহা রে তুই কবে মানুষ হবি? গাধী একটা। ও ভাবী, তুমি ভাইয়াকে কিছু বলোনা প্লিজ। জানোতো আমার ভাইয়া অনেক ভালো। ভাইয়ার মনে অনেক কষ্ট, কিন্তু কাউকে বুঝতে দেয়না। তোমার কথায় ভাইয়া আঘাত পেলেও তুমি বুঝতে পারবেনা। প্লিজ ভাবী, ভাইয়াকে কিছু বলোনা। ” ফিহা অসহায় মুখে আকুতি করছে।

” ফিহা, তুমি এভাবে রিকুয়েষ্ট করছ কেন! বিয়ের আগে এমন পছন্দের মানুষ অনেকেরই থাকে। তাই বলে এটা নিয়ে অশান্তি করার মত মেয়ে আমি নই। রিল্যাক্স। কিছুই বলবনা তোমার ভাইয়াকে। ”

তিয়াসার কথা শুনে হাঁফ ছাড়ল ফিহা।

” থাংকিউ মাই সুইট, ভাবী। তুমিও কিন্তু আমাদের সাথে লং ড্রাইভে যাচ্ছ? ভাইয়াকে বলবে খালি ওয়ালেট নিয়ে যেন না বেরোয়। আগে স্টুডেন্ট ছিল তাই বেশি খরচ করাইনি। এখন সেই নিয়ম চলবেনা। ”

” তোমার ভাইয়াকে তুমিই বলো। তোমাদের ভাইবোনের মধ্যে আমি কিছুই বলবনা। ”

” এই তোমরা এখানে কি ফিসফাস করছ? আমাকেও একটু বল। ” শাহেদের বড় চাচার মেয়ে কায়া আসল রান্নাঘরে।

” তোমার বয়ফ্রেন্ডের কথা ভাবীকে জানিয়ে দিয়েছি। ভাবী তার ছবি দেখতে চেয়েছে। ” ফিহা সিরিয়াস হয়ে বলল।

” মাই গড! তুমি আমার সিক্রেট বিষয়ে ভাবীর সাথে আলোচনা করছ? পাপা জানলে কি হবে জানো? আমাকে আর কানাডা নিয়ে যাবেনা। এখানেই কোন ছেলে দেখে বিয়ে করিয়ে দেবে। ” কায়া ভীতু গলায় বলল।

” সে কি দেশী প্রোডাক্ট নয়, কায়া? তুমি কি কোন সাদা বান্দর পছন্দ করেছ? ” তিয়াসা কৌতুহলী হয়ে জানতে চাইল।

” না গো, ভাবী। সে দেশি নয়। সে আইরিশ আমেরিকান। ”

” কি করেছ তুমি! আমাদের দেশে এত ভালো ভালো ছেলে রেখে আইরিশ সাদা বান্দরকে মন দিতে গেলে কেন? দেশে কি ছেলের অভাব পরেছিল? ”

” দেশের একটা ছেলেকে তো পছন্দই করেছিলাম। কিন্তু তার নাকি একজন ছিল। চার বছর ধরে তাকেই ভালোবেসে আসছে। তাকে ছাড়া অন্য কোন মেয়েকেই নাকি সে ভালোবাসতে পারবেনা। তাই আমার প্রোপোজাল একসেপ্ট করেনি। সেই দুঃখে আমিও জোসেফের দিকে ঝুঁকে গেলাম। ”

কায়া’র কথা শুনে তিয়াসা চমকে উঠে। ও আঁড়চোখে তাকায় ফিহার দিকে। ফিহাও ওর দিকে তাকিয়ে আছে। চোখের ইশারায় তিয়াসা ফিহার কাছে কিছু জানতে চাইল। ফিহাও ইশারায় ওকে জানিয়ে দেয়। তিয়াসা নিশ্চিত হয় কায়া শাহেদের কথা বলছে।

” বাদ দাও এসব কথা। টাইমপাস করছ কর। কিন্তু বিয়ে দেশি ছেলেকেই কর। এরা ভালোবাসতে জানে। স্ত্রী’কে আগলে রাখতে জানে। ” তিয়াসা মুখ ফসকে বলে ফেলল।

” ভাইয়াও বুঝি তোমাকে অনেক ভালোবাসে? আগলে রাখে? ” কায়া হুট করেই জিজ্ঞেস করল।

” কেন বাসবেনা? স্ত্রী’কে কে না ভালোবাসে। আর সেই স্ত্রী যদি তার চার বছরের গোপন প্রনয়িনী হয় তবেতো কথাই নেই। ”

তিয়াসার কথা শুনে ফিহা আর কায়া চোখ বড় করে ওর দিকে তাকায়।

” ভাবী, তুমি না একটু আগেই বললে ভাইয়ার গোপন প্রনয়ীনির বিষয়ে কিছু জানোনা! কিন্তু এখন আবার বলছ, তুমিই সে। ঘটনা কি বুঝিয়ে বল। ” ফিহা সত্যিই অবাক হয়েছে।

” তুমি ছোট মানুষ, ফিহু। বড়দের কথা বুঝবেনা। আর তাছাড়া কিছু কিছু বিষয় গোপনই সুন্দর। ” তিয়াসা হাসিমুখে বলল।

” কনগ্রাচুলেশন, ভাবী। তুমি ভাগ্যবতী শাহেদ ভাইয়ার মত একজনকে পেয়েছ। সে এমন এক রত্ন যাকে পেতে অনেকেই নিজের সর্বস্ব বিলিয়ে দিতে চেয়েছে। কিন্তু সে তার গোপন প্রনয়ীনিকেই সবটা দিয়ে ভালোবেসেছে। এমন ভালোবাসা দেখলেও শান্তি লাগে। ” কায়া তিয়াসাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলল।

” ও নতুন বউ, তোমার ফোন আইছে। ফোন রাইখা এখানে আইছ! এই ধর কথা কও। ” খাদিজা আন্টি এসে তিয়াসার দিকে ফোন বাড়িয়ে দিল।

তিয়াসা দেখল আশফির ফোন।

” বল, আশফি? কেমন আছিস? ”

” তিয়ু রে, একটা সাংঘাতিক খবর আছে। উত্তেজনায় আমার হাত-পা কাঁপছে। ” আশফি হড়বড়িয়ে বলল।

” কি হয়েছে বলতো? এমন হাঁপাচ্ছিস কেন? ভাইয়া কি তোকে ম্যারাথনে পাঠিয়েছে? ”

” তার থেকেও বড় কিছু। আমি আনন্দে পাগল হয়ে যাব। ”

” কি এমন ঘটেছে যে তুই পাগল হয়ে যাবি! ভাইয়া জানে তুই পাগল হতে চলেছিস? সে কি তোকে পাগল হতে দেবে! তুই পাগল হলে ভাইয়া বাড়িতেই পাগলাগারদ বানাবে এটা কি তুই জানিস? ”

” তিয়ু, তুইও আমার সাথে মজা নিচ্ছিস? আমার আনন্দই মাটি করে দিচ্ছিস তুই। ”

তিয়াসা বুঝতে পারছে আশফির মন খারাপ হয়ে গেছে। তাই ও হাসল।

” এবার বল, এত আনন্দ কিসের? নতুন অতিথি আসছে নাকি? আমি কি খালামনি হতে চলেছি? ”

” নতুন অতিথিতো আসছেই। তবে তুই খালামনি হচ্ছিসনা। তুই ননদীনি হচ্ছিস। আমিও তাই। ”

এবার তিয়াসার অবাক হওয়ার পালা। ও সত্যিই বুঝতে পারেনি আশফির কথার অর্থ।

” আমি তোর কথা বুঝতে পারছিনা। একটু বুঝিয়ে বলবি? আগেই তুই ভালো ছিলিস। বোকা বোকা কথা বলতিস। আমি তোর সব কথা বুঝতেও পারতাম। কিন্তু বিয়ের পর ভাইয়ার ছোঁয়া পেয়ে এতটাই চালাক হয়েছিস যে তোর কথা বুঝতে কষ্ট হচ্ছে আমার। ”

তিয়াসার কথা শুনে আশফি খিলখিলিয়ে হেসে উঠল। ও তিয়াসার কথায় মজা পেয়েছে। এই প্রথমবার কারও মুখ থেকে আশফি শুনল ও চালাক। হাসির দমকে বেশ কিছুক্ষণ কথা বলতে পারলনা। অনেকক্ষণ পর হাসি থামলে কথা বলল মেয়েটা।

” বইন রে, আমি চালাক হলে নাকি পুলক মির্জা পুরো শহরের মানুষকে দাওয়াত করে খাওয়াবে। এতিমখানার বাচ্চাদের, বৃদ্ধাশ্রমের অসহায়দের একনাগাড়ে সাতদিন খাওয়াবে। যেহেতু এখন অব্দি সে এগুলো করেনি তাই আমি চালাক হয়েছি এটা মানতে পারছিনা। আজ আমার একটু বেশিই আনন্দ হচ্ছে, তাই এত কথা বলে ফেলেছি। ”

” মির্জা সাহেবের বউ, তোর কিসে এত আনন্দ সেটাই আমি অনেকক্ষণ ধরে জানতে চাচ্ছি। দয়া করে কি আমাকে বলবি? ”

” এক্ষুণি বলছি। তিয়ু রে, ভাইয়ার বিয়ের কথা হচ্ছে। আমাদের নিলাশা ভাইয়াকে পছন্দ করে। সে মামা-মামীকে ওর পছন্দের কথা বলেছে। মামা-মামী নিলাশার পছন্দ মেনে নিয়েছে। মামা আমাদের বাসায় এসেছেন। আমার শ্বশুর-শ্বাশুড়িও রাজি আছেন। তারা আব্বার সাথে কথা বলেছে। আব্বা আর উনি ভাইয়ার সাথে কথা বলেছে। ”

আশফির কথা শুনে তিয়াসার হাসি মিলিয়ে যায়। ওর চোখেমুখে বেদনার ছাপ স্পষ্ট। তবে কয়েক মুহুর্ত পরই ও স্বাভাবিক হয়ে যায়। নিজেকে সামলে নেয়। যেখানে ও অন্যের সংসারে নিজেকে ব্যস্ত রেখেছে। শাহেদের সাথে মানিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছে। সেখানে রিফাতেরও ভালো থাকার অধিকার আছে। তিয়াসাকে মনে রেখে রিফাতের ভবিষ্যৎ নষ্ট করার কোন মানে হয়না। তিয়াসা চায় রিফাত সুখী হোক। সব ভালোবাসাই পূর্ণতা পায়না। ওদের ভালোবাসাও তাই। কিন্তু তাই বলে তিয়াসা স্বার্থপর হতে পারবেনা।

” এতকিছু কবে ঘটে গেছে! ভাইয়া রাজি হয়েছে? কবে বিয়ে? ” তিয়াসা উচ্ছ্বসিত হওয়ার ভান করল।

” কালকে এসেছে মামা। আজকে গ্রামে গিয়েছিল আমার শ্বশুর আর উনার সাথে। আব্বা সব শুনে রাজি হয়েছে। এরপর ভাইয়ার সাথে কথা বলেছে। ভাইয়া বলেছে, আগে নিলাশার সাথে কথা বলবে। তারপর সিদ্ধান্ত জানাবে। তবে মনে হচ্ছে ভাইয়া অমত করবেনা। ভাইয়া রাজি হলেই বিয়ের দিন ঠিক হবে। ”

” আশফি রে, আমি ভাবছি নিলাশার কথা। মেয়েটার সাহস আছে বলতে হবে। ও ভাইয়াকে না দেখেই ভাইয়াকে পছন্দ করে বসে আছে! ”

” কে বলেছে ও ভাইয়াকে দেখেনি! ও আমাদের বিয়ের সময় গ্রামে গিয়েছিল, তারপরই তো ও আমার কাছ থেকে ভাইয়ার সম্পর্কে সবকিছু জেনে নিয়েছিল। আমি সরল মনে ওকে সব বলে দিয়েছিলাম। ঘুনাক্ষরেও বুঝতে পারিনি ওর মনে কি চলছে। আমি ভাইয়ার চিটাগংয়ের এ্যাড্রেসও ওকে দিয়েছিলাম। ওর খালামনির বাসা চিটাগং। ও চিটাগং গিয়ে গোপনে ভাইয়ার অফিসে গিয়েছিল। ভাইয়ার সম্পর্কে সব খোঁজখবর নিয়েছে। ”

” আরিব্বাস! এসব কি শুনছি রে! যাহোক নিলাশা অনেক ভালো একটা মেয়ে। তোরা ভাইয়ার সাথে কথা বলে তাকে রাজি করা। অনেক কষ্ট করেছে ভাইয়া। এবার তার সুখী হওয়ার সময় এসেছে। নিলাশাই ভাইয়াকে সুখী করতে পারবে। তোর কথা শুনে মনে হচ্ছে, সে ভাইয়াকে খুব ভালোবাসে। ”

” আমারও সেটাই মনে হচ্ছে। আমিও চাই ভাইয়া সুখী হোক। আর কোন কষ্ট, অবহেলা যেন ভাইয়াকে ছুঁতে না পারে। ”

চলবে…