#রাঙিয়ে দিয়ে যাও💙
#লেখনীতে:অনুসা রাত(ছদ্মনাম)
#পর্ব:১৪
.
রিসোর্টে উঠেছি অনেকক্ষণ। নিজের রুমে হাত-পা ছড়িয়ে শুয়ে আছি আমি। আহা!জীবনটা এত উপভোগ্য কেন?কতদিন পর ঘুরাঘুরি। একটু পর সাদিও আমার সাথে এসে হাত-পা ছড়িয়ে শুয়ে পড়লেন। আমি ওনার দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে বললাম,
___” শুয়ে পড়লেন যে..”
উনিও ঘাড় ঘুরিয়ে বললেন,
___” ক্লান্ত লাগছে রে।”
আমি আর কিছু বললাম না। দৃষ্টি সিলিং এর উপর রেখে শুয়ে রইলাম।অনুভব করছি,উনি আমার দিকেই তাকিয়ে আছেন।কেন যেন ভীষণ লজ্জা লাগছে আমার। আমি ওনার দিকে আবারো ঘাড় ঘুরিয়ে চাপা হেসে বললাম,
___” কি?”
উনি নিজের নিচের ঠোঁটটাকে কামড়ে বললেন,
___” কি?”
আমি অন্যদিকে ফিরে গেলাম। এই লোকটা অলওয়েস আমাকে লজ্জা দেয়।পেটে ওনার ঠান্ডা হাতের স্পর্শ পেতেই কেঁপে উঠে চোখ বন্ধ করে ফেললাম আমি। উনি এগিয়ে এসে কানের পিছনে মুখ গুঁজলেন। নাক ঘষতে ঘষতে বললেন,
___” এত লজ্জা পাস না অনুজান। খেয়ে ফেলতে ইচ্ছে করে।”
এবার যেনো আরো লজ্জায় লাল হয়ে গেলাম আমি।কিছু না বলায় উনি কানের লতিতে কামড় বসালেন। আমি হালকা চিল্লিয়ে বললাম,
___” আউচ, এসব কি।”
সাথে সাথে উনি আবারো কামড় বসিয়ে বললেন,
___” চুপ করে থাক, নয়ত আরো খাবি।”
আমি চুপ হয়ে গেলাম।উনি আমাকে নিজের দিকে ফিরিয়ে নিলেন। চোখ পড়লো ওনার চোখের উপর। ওনার চোখে তীব্র নেশা দেখতে পাচ্ছি আমি। কেমন একটা ঘোর।ঠোঁটে ঠোঁট ছোঁয়াতেই কেপে উঠে চোখ বন্ধ করে ফেললাম আমি। বেশ কিছুক্ষণ পর আস্তে আস্তে উনি আমার দিকে এগিয়ে এসে গলায় মুখ ডুবালেন। ওনার চুল আঁকড়ে ধরলাম আমি। ঠিক তখনি দরজায় কারোর ঠকঠক শব্দে ঘোর কাটলো আমার।আমি ওনাকে ছাড়ানোর ব্যর্থ চেষ্টা করে বললাম,
___” দরজায় কেউ এসেছে।ছাড়ুন।”
উনার কান পর্যন্ত পৌঁছেছে কিনা জানি না। কিন্তু দরজার পেছন থেকে কেউ ধাক্কিয়েই চলেছে। আমি ওনার চুল টেনে বিরক্ত হয়ে বললাম,
___” এই বাজে লোক!কখন থেকে বলছি,কেউ এসেছে। উঠুন বছি।”
উনি এবার গলায় মাথা রেখে জড়িয়ে ধরে বললেন,
___” যেতে হবে না।”
____” উঠুননননন।”
উনি মুখ তুলে আমার দিকে অসহায় চোখে তাকালেন। মায়া হলো!কিন্তু কিছু করার নেই। ওনাকে সরিয়ে উঠে বললাম,
___” এটা কোনো সময় হলো এসবের।”
বলেই উঠে দরজার খুলতে যাচ্ছিলাম। ঠিক তখনই উনি আমার শাড়ির আঁচল ধরে ফেললেন। আমি ওনার দিকে ফিরে চোখ রাঙিয়ে বললাম,
___” উফফো! আপনি এমন করছেন কেন?”
উনি ঠোঁট উল্টিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে শাড়ির আঁচল পেঁচাচ্ছেন। আমি তেজ নিয়ে বললাম,
___” অবুঝের মত কইরেন না। ছাড়ুন। এটা কি বাসা পাইছেন?”
___” এখন যা কিন্তু পরে ডাকলে কিন্তু আসতে হবে।”
___” কেন?”(ভ্রু কুঁচকে)
___” তাহলে ছাড়ব না যা।”(মুখ ফুলিয়ে)
___” আচ্ছা আচ্ছা। আচ্ছা ঠিকাছে। ”
কোনমতো বুঝ দিয়ে আমি ওনার থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিলাম। পাগল লোক!পুরা বাচ্চাদের মত বিহেভিয়ার শুরু করছে। ভেবেই হেসে দিলাম আমি। দরজা খুলে কাউকে পেলাম আমি। সাদিও আমার পিছন পিছন এসে বললো,
___” চল তাহলে নিচে যাই।”
আমি হ্যা’বোধক মাথা নাড়লাম।
___” পরে কিন্তু ডাকলেই আসতে হবে। মনে থাকে যেন।”
এই নিচে যেতে যেতে উনি যে কতবার বলেছে তার হিসাব নেই। এই লোকটা পারেও। সবাই মিলে একটা রেস্টুরেন্টে খাবো বলে ঠিক করেছিলাম। বড় একটা টেবিলে বসে আছি। সাদি আমার পাশেই বসে আছে।রুশ হঠাৎ আমাকে উদ্দেশ্য করে বললো,
___” অনুর জন্য লেট হলো।”
আমি ইনোসেন্ট মার্কা ফেস নিয়ে বললাম,
___” আমি কি করেছি?”
রুশ মুখ ফুলিয়ে বললো,
___” কতবার নক করেছি? আদর খাচ্ছিলি বললেই হত।”
অয়ন হঠাৎ বিষম খেল। আমিও থতমত খেয়ে গেলাম ওর কথায়।ও যে এটা বলবে আমি ভাবতেই পারিনি। আমি ওকে চোখ রাঙাচ্ছি। বাকি সবাই হাসছে। আর অয়নকে শান্ত করছে মিশমি।বুঝলাম না!বিষম খাওয়ার কি আছে। রিডিকিউলাস!
আমি দাঁতে দাঁত চেপে বললাম,
___” তুই বাহিরে চল, তোকে আদর বুঝাচ্ছি। শালা মা*দা*র*বোর্ড। ”
সাদি পাশ থেকে গম্ভীর গলায় বললেন,
___” ছি অনুজান। গালি দিতে হয় না।আর ও ভুল কি বলেছে?নেকসট টাইম থেকে নক করেও না খুললে নিজ দায়িত্বে প্রাইভেসি দিও। ঠিকাছে শালাবাবু?”
বলেই দুষ্টু হাসলেন উনি। আর অয়ন -মিশমি ছাড়া বাকি সবাই ‘ওহোওওওওও’
করে উঠলো। লজ্জায় শেষ হয়ে যাচ্ছি আমি। মন তো চাচ্ছে মাটি ফাঁক করে ঢুকে বসে থাকতে। সাদির দিকে আঁড়চোখে তাকালাম। ওনার ঠোঁটের কোণের হালকা লিপস্টিক লেগে আছে। দেখেই তখনকার ঘটনাটা মনে পড়ে গেলো আমার। আমি আশেপাশে তাকিয়ে ওনাকে ডাক দিলাম,
___” ওয়..”
উনি আমার দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালেন। আমি ইশারা করে ওনাকে ঠোঁট মুছতে বললাম। উনি হয়তো বুঝলেন। তবুও না বোঝার ভান করে ফিসফিস করে বললেন,
___” কিস চাও? রুমে গিয়ে দিবোনে।”
আমি রাগী চোখে তাকালাম। টিস্যু নিয়ে নিজেই ঠোঁট মুছে দিতে লাগলাম। এক নাম্বারের বেয়াদব লোক। অলওয়েস আমাকে ফাঁসানো। এদিকে এসব দেখে মিশমি একটু জোরেই বললো,
___” ভাইরে, আর কত দেখানো ভালোবাসা যে দেখবো।”
হাতটা প্রথমে থেমে গেলেও থামালাম না। আমার বর,আমি যা ইচ্ছে করবো। যে যা বলুক। আই ডোন্ট কেয়ার। কিন্তু প্রান্তি প্রতিবাদ করলো। একটু হাসি হাসি গলায় বললো,
___” বিয়ের আগেও কত দেখানো ভালোবাসা দেখায় মানুষ। আমরা মেডিকেলে যে কত দেখলাম মিশমি ভাব্বীইই। কিন্তু বিয়ের পরই সব ফুস হয়ে যায়।”
ওর কথায় সাদি হেসে উঠলো। আমি টিস্যুটা সরিয়ে নিলাম। নিজেও হেসে দিয়ে বললাম,
___” ভালোবাসা এমন একটা জিনিস,যেটা কাউকে দিতে পারলে শান্তি লাগে। কিন্তু কেউ সেটার অপব্যবহার করলে তার উপর ঘৃণা চলে আসে।”(মুচকি হেসে)
মিশমি চুপ হয়ে গেলো।আঁড়চোখে খেয়াল করলাম, অয়ন আমার দিকেই তাকিয়ে আছে।
আমি কিছু বললাম না। এভাবেই টুকটাক কথা বলতে বলতে সবাই খাওয়া শেষ করলাম।
.
.
বিকেলের দিকে একটু ঘরুতে বের হলাম সবাই মিলে। সবাই সবার মত করে আশেপাশের জায়গাগুলোতে হাঁটছে। সাদি আমার হাতটা আঁকড়ে ধরে সমুদ্রের কিনারা দিয়ে হাঁটতে লাগলো। আমিও ওনার দিকে একটু পর পর তাকাচ্ছি আর পা মেলাচ্ছি। ইশ!অনুভূতিটা! নীরবতা ভেঙে উনি বললেন,
___” এই সমুদ্রে তোকে ছুঁড়ে মারি?”
আমি ওনার দিকে কোণাচোখে তাকালাম। ওনার ঠোঁটে দুষ্টুমির হাসি। আমি মুখ ফুলিয়ে বললাম,
___” এত সোজা না।”
___” দেখতে চাস?”
আমি সেখানেই দাঁড়িয়ে পড়লাম। কোমড়ে হাত রেখে বললাম,
___” পারলে ফেলে দেখান।”
উনি আচমকা আমাকে কোলে তুলে নিলেন। ঘটনার আকস্মিকতায় আমি হকচকিয়ে আশেপাশে তাকাচ্ছি। বাকি সবাই আমাদের দিকে তাকিয়ে ফিসফিস করছে। এতে কোনোপ্রকার ভ্রু-ক্ষেপ না করে সাদি বললেন,
___” ফেলে দি?”
আমি ওনার শার্টের কলার চেপে নিম্ন স্বরে বললাম,
___” সবাই কেমন করে দেখছে।নামান।”
___” দেখুক।”
___” প্লিজ নামিয়ে দিন। আমার লজ্জা লাগছে।”
উনি হেসে আমাকে সমুদ্রের পানিতে টুপ করে ফেলে দিলেন। উফ!কোমড়টা মনে হয় গেলো।খাটাশ লোকটা আমাকে এভাবে ফেলে দিলো? বাকি সবাই কেমন হাসতে লাগলো। দূর থেকে আমার বন্ধুরাও হাসতে হাসতে এগিয়ে আসছে। আমি রাগী গলায় বললাম,
___” ব্যাথা পেলাম না?!
উনি হাতে হাত ভাজ করে বললেন,
___” তখন ডাকলাম আসিস নি। এটা তোর শাস্তি।”
আমি দাঁত কিড়মিড় করে ওঠার চেষ্টা করছি। ঠিক তখনই অয়ন দৌড়ে এসে কিছুটা রেগেই বললো,
___” আরে এভাবে ফেলে দিলেন কেন? ও ব্যাথা পেলো তো।”
সাদি ওর দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে। আমিও আঁড়চোখে একবার তাকালাম। ওর এত কি হচ্ছে। আমি সাদির দিকে হাত বাড়িয়ে দিলাম। কিন্তু উনি ঢং করে সেটা ধরছেন না। কেমনডা লাগে। ঠিক তখনই অয়ন আমার হাত টা ধরতে নিলো। সাদি আচমকা আমার হাত ধরলো। আমার কেন যেন প্রচুর হাসি পেল। এই সিরিয়াস মোমেন্টে কেন যে হাসি পায়। অয়নের চোখ দিয়ে আগুন ঝরছে। আমি টেনে সাদিকে নিচে ফেলে দিলাম। ভেবেছিলাম উনি পানিতে পড়বেন। কিন্তু ভাগ্যের কি পরিহাস!সোজা আমার উপ্রে পড়লেন। কক্সবাজারের মানুষকে বিনামূল্যে বাংলা সিনেমা দেখিয়ে দিলাম।এদিকে আয়ান হাসতে হাসতে বলছে,
___” জিও অনু। তুই যে এত রোমান্টিক জানতাম না তো।”
আমি লজ্জায় মরে যাচ্ছি। আর এই লোকটা কখন থেকে ঢ্যাবঢ্যাব করে দেখছে। আমি ফিসফিস করে বললাম,
___” উঠুন।”
উনি উঠলেন না। বরং আমারে পানি ছুঁড়তে ছুঁড়তে বললেন,
___” আরো করবি?”
আমিও কম কিসে! পানি ছুঁড়তে লাগলাম ওনার মুখে। এভাবে আস্তে আস্তে সবকটাকে টেনে পানিতে নামিয়ে পানি দিয়ে খেলতে লাগলাম। ইশশ!কি মনোরোম পরিবেশ। মিশমি নামবে না। তাই ও এসব ভিডিও করছে আর বলছে,
___” মন খারাপ থাকলে এগুলা দেখে হাসতে পারব। হা হা হা। কি বোকা সবাই।”
অয়ন দীর্ঘশ্বাস ফেলে মিশমিকে দেখছে। চোখ এড়ায় না আমার। তবুও পাত্তা দিলাম না। বেশ কিছুক্ষণ পর সাদি আমাকে কোলে তুলে নিয়ে রিসোর্টে ফিরতে ফিরতে সবার দিকে তাকিয়ে বললেন,
___” আমার বউ নিয়ে গেলাম। তোমরা থাকো।”
আমি হা হয়ে ওনার দিকে তাকিয়ে আছে। নাড়াচাড়া করতে করতে বলছি,
___” এ্যাআআআ আমিও খেলবো। নামান আমায়। খালি কোলে নেন কেন। সবাই কেমন করে তাকিয়ে আছে।”
___” চুপ কর।”
ব্যস এতটুকুই যথেষ্ট। আমি চুপ করে কোলে বসে রইলাম। ওনার একটা ধমকের পর আর কথা বলার সাহস হচ্ছে না। ধূর! একটু খেলতাম!ভাল্লাগে না।বাজে ডক্টর!
চলবে….
(ভুলক্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন।)