রাঙিয়ে দিয়ে যাও পর্ব-১৬

0
269

#রাঙিয়ে দিয়ে যাও💙
#লেখনীতে:অনুসা রাত(ছদ্মনাম)
#পর্ব:১৬

সাদির কথায় সবাই সায় দিলেও আমার মুখটা কাঁদো কাঁদো হয়ে গেলো। এই লোকটার লজ্জা সরম তো নাই ই। এখন আমারটাও বেঁচে দিচ্ছে। সাদি দুষ্টু হেসে আমার দিকে হাত এগিয়ে দিয়ে বললো,

___” কাম সুইটহার্ট। ”

আমি ওনার দিকে রাগী চোখে তাকালাম। বিরবির করে বললাম,

___” কি হচ্ছেটা কি?”

সাদি আমার হাতটা ধরে দাঁড় করিয়ে দিলো। কোমড় টেনে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো। এদিকে লজ্জায় আমি শেষ হয়ে যাচ্ছি। সবাই বেশ ইনজয় করছে।কিছুক্ষণ যাওয়ার পরও আমার রিয়াকশন পাল্টালো না। হঠাৎ মিশমি বলে উঠলো,

___” হায়রে, কিস করবে!তাও পারে না।”

আমি পিছনে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালাম। সবাইও ওর দিকেই তাকিয়ে আছে।এমনকি অয়নও।মিশমি অয়নের গাল টেনে ঠোঁটে কিস করে বললো,

___” দেখলে.. এভাবে কিস করতে হয়।”

ওর কাজে আমরা সবাই স্তম্ভিত! এই মেয়ের আদৌ লজ্জা-সরম আছে? কিন্তু ওর কথায় আমার কেমন যেন অপমানিত বোধ হলো। আমি ওকে উদ্দেশ্য করে দাঁতে দাঁত চেপে বললাম,

___” আমি অনুভূতি নিয়ে কিস করবো। বুঝলা?”

বলেই সাদির ঘাড়ে হাত দিয়ে কাছে টেনে নিলাম। পা জোড়া ওনার পায়ের উপর রাখলাম। চোখ বন্ধ করে কপালে ঠোঁট ছোঁয়ালাম। তারপর মিশমির দিকে আবারো ঘাড় ঘুরিয়ে হেসে বললাম,

___” সি?”

মিশমি কিছু না বলে মুখ ভেংচি কাটলো। এদিকে সাদি এখনো আমার কোমড় জড়িয়ে আছে। অয়ন-মিশমি বাদে আর সবাই আমাদের ঘিরে গোল করে ঘুরছে আর গান গাইছে। আমি ওনাকে হালকা ধাক্কা দিয়ে বললাম,

___” ছাড়ুন।”

উনি কেমন করে যেনো তাকিয়ে আছেন। এদিকে আমি লজ্জায় শেষ হয়ে যাচ্ছি।

___” ছাড়ুননন।”

উনি এবার আমাকে ছেড়ে দিলেন। মাথা চুলকে সবার দিকে তাকিয়ে বললেন,

___” ওকে গাইস। পরের ডেয়ার কাকে বলো।”

সবাই মিলে আবারো বসে পড়লাম। আমি খেয়াল করলাম, অয়ন বেশ অনেকক্ষণ ধরেই আমার দিকে তাকিয়ে আছে। ওর দিকে তাকিয়েই আমার মুখের হাসি মিলিয়ে গেলো। ওর চোখজোড়া ছলছল করছে। কিন্তু কেনো? মিশমির কান্ডে তোর কষ্ট পাওয়ার কথা নয়। আর আমাকে এভাবে দেখারই বা কি আছে? আমি মুখ ঘুরিয়ে সাদির দিকে তাকিয়ে আস্তে করে বললাম,

___” আপনি একটা চরম অসভ্য।”

উনি যথাসম্ভব অবাক হওয়ার চেষ্টা করে বললেন,

___” কেনো?”

___” এইযে সবার সামনে এসব কীর্তি করছেন। সবাই কি ভাববে?”

উনি সকলের অগোচরে আমার কোমড় চেপে নিজের কাছে টেনে নিলেন। কানের কাছে ঠোঁট নিয়ে ফিসফিস করে বললেন,

___” কে কি ভাবলো তাতে আমার কিচ্ছু যায়-আসে না ধানিলংকা। আমি তোকে ভালোবাসি আর তুই আমাকে।এটাই সত্যি।”

এর পিঠে আর কিছু বলার সাহস হলো না। শুধু মুচকি হাসলাম। সবাই সবাইকে বিভিন্ন ডেয়ার দিচ্ছে।দেখতে দেখতে কখন যে ঘুমিয়ে গেলাম খেয়ালই নেই।

.

সাদির কাঁধে মাথা রেখে ঘুমিয়ে আছে তার অনুপাখি। সে আলতো হাতে তার মাথায় হাত বোলাতে ব্যস্ত। সামনে বসে আছে অয়ন-মিশমি। বাকি সবাই নিজেদের তাঁবু গুছাতে ব্যস্ত। ঘুম পেয়ে গেছে সবারি।মিশমি সাদিকে ওভাবে বসে থাকতে দেখে বললো,

___” এভাবে বসে না থেকে জাগিয়ে দিলেই তো পারেন।”

সাদি তার প্রিয়তমার মাথায় চুমু দিয়ে বললো,

___” না,ওর ঘুমটা নষ্ট না করাই ভালো।”

মিশমি ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললো,

___” আপনার ইচ্ছে।”

ঠিক তখনই অয়ন কেমন গম্ভীর গলায় বললো,

___” মিশমি! যাবা তুমি?”

মিশমি উঠে চলে গেলো তাঁবুর ভিতর। সাদি অয়নকে উদ্দেশ্য করে হেসে বললো,

___” তুমিও গিয়ে শুয়ে পড়ো।”

অয়ন নিচের দিকে তাকিয়ে নিঃশব্দে হাসলো। তারপর বললো,

___” আমার ঘুম নেই। আপনারা?”

___” আমাদের তাঁবু প্রান্তি গুছিয়ে দিবে বলেছিল কিন্তু আমার মন চাইছে আজ এভাবেই সারারাত কাটিয়ে দিই। চাঁদ দেখতে দেখতে।”

তারপর কিছুক্ষণ নিরবতা।অয়ন হঠাৎ চাপা স্বরে বললো,

___” খুব ভালোবাসেন অনুকে, তাই না?”

সাদি তার ধানিলংকার দিকে তাকিয়ে কপালের চুলগুলো কানের পিছনে গুঁজে দিতে দিতে বললো,

___” নিজের থেকেও বেশি।আমাকে মেরে ফেললেও নিজের থেকে ওকে আলাদা করবো না।”

অয়ন দীর্ঘশ্বাস ফেললো। নিম্ন স্বরে বললো,

___” অনুর একটা অতীত ছিলো জানেন তো?”

___” সেটা কি তোমাকে বলতে হবে অয়ন? তুমি জানো যে সে অতীতটা তুমি।”

অয়ন চমকালো। খানিকটা ভড়কেও গেলো। অবাক হয়ে বললো,

___” আপনি জানেন?”

___” জানবো না কেন?!

___” না কিছু না।”

এরপর আবারো নিরবতা। সাদি আচমকা অনুকে কোলে তোলে নিলো। অয়ন সেদিকে তাকিয়ে ঢোক গিললো। এ দৃশ্যগুলো তার সহ্য হচ্ছে না। তারপরেও সহ্য করতে হচ্ছে। সাদি অয়নকে উদ্দেশ্য করে বললো,

___” আমার ধানিংকার লাইফে আরেকবার কোনো কিছু করতে চাইলে আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না।”

বলেই সে মুচকি হেসে তাঁবুর ভেতরে চলে এলো।অয়ন সেখানেই দাঁড়িয়ে রইলো। আকাশের পানে তাকিয়ে ভাবলো,

___” জীবনের এ কোন মোড়ে তুমি আমায় ফেললে আল্লাহ? আমার অপরাধটা কি এতটাই বেশি যে অনু আমাকে দেখতেও চায় না!”

.

.

সকাল কয়টা বাজে জানি না। ঘুম ভেঙে সাদিকে পাশে পেলাম না আমি।তাঁবু থেকে বের হতেই দেখলাম সবাই সামনে বসে বসে কফি খাচ্ছে। আমাকে কেউ ডাকলোও না? সানি আমাকে দেখে হেসে বললো,

___” আসুন মহারাণী আসুন। আপনার জন্যই অপেক্ষায় ছিলাম।”

রুশও তাল মিলিয়ে বললো,

___” চল, রিসোর্টে ফিরতে হবে।কত্ত যে ঘুমাস! আল্লাহ মালুম।”

আমি নিরব দর্শক। সামনে থাকা সাদির দিকে এগিয়ে গিয়ে বললাম,

___” ডাকলেন না কেন?”

উনি চুল ঠিক করে দিয়ে বললেন,

___” ঘুমটা ভাঙতে চাইনি। চল এবার।রিসোর্টে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিস।”

আমি মাথা নাড়ালাম। সবাই জিনিসপত্র নিয়ে এগুতে লাগলো। আমি সাদির হাত ধরে আস্তে আস্তে হাঁটছি। ঠিক তখনই পিছন থেকে মিশমি বলতে লাগলো,

___” ইশ,একটু তাড়াতাড়ি হাঁটতে পারো না?”

আমি দাঁড়িয়ে গেলাম। পিছনে ঘুরে বললাম,

___” তোমার তাড়া থাকলে আগে যাও।”

মিশমি চটে গিয়ে বললো,

___” পা’টা দ্রুত চালালেই তো হয়।”

___” আমি অসুস্থ।পারবো না।”

মিশমি রেগে গিয়ে বললো,

___” যত্তসব নাটক। এভাবে হাতে হাত বেঁধে হাটলে তো সময় লাগবেই। হাতটা ছেড়ে হাঁটো।”

আমি ভ্রু কুঁচকে বললাম,

___” আমার বরের হাত। আমি যেভাবে ইচ্ছে ধরে হাঁটবো। তুমি বলার কে?”

এবার অয়ন চুপ থাকলো না।কিছু বলতে যাবে তার আগেই আমি হাত উঁচু করে থামিয়ে দিয়ে বললাম,

___” আগের অনু নাই যে মুখ বুঁজে সব সহ্য করবে। এবার আমায় কিছু বলতে এলে মুখে তার দিয়ে সেলাই করে দিবো।বলে দিলাম!”

অয়ন মুখ ঘুরিয়ে বললো,

___” আমি আমার বউয়েই সামলাচ্ছিলাম।”

এবার সাদি মুখ খুললো। হেসে বললো,

___” এই কাজটা আগে করলে হয়ত সবটা অন্যরকম হত।”

এদিকে মুখ সেলাইয়ের কথা শুনে মিশমি গেলো রেগে। রাগে গজগজ করতে করতে বললো,

___ “হাউ ডেয়ার ইউ? আমার বাপীকে চেনো তুমি?”

বলেই আমার দিকে তেড়ে আসছিলো। সাদি হঠাৎ আমার সামনে এসে দাঁড়ালো। হাতে হাত ভাজ করে বললো,

___” তোমার বাবা জয় খানকে খুব ভালো করেই চিনি আমরা। সেটা তোমাকে আর বলতে হবে না।”

অয়ন গম্ভীর গলায় বললো,

___” মিশমি, চলো। কেন যে লাগতে যাও।এত ঝগড়া করা ভালো না বলেছি না?”

মিশমি তেতে অয়নের দিকে তাকিয়ে বললো,

___” ও তাই না? এতদিন পর নিজের প্রেমিকাকে দেখে অনুভূতি জেগে জেগে উঠছে তাই তো? এখন তো আমার কথা খারাপ লাগবেই।টাকাগুলা তো গুণেই নিছিলা।”

অয়ন চুপ করে রইলো।সাদি মিশমিকে ঘুরিয়ে একটা চড় মেরে দিলো। আমি ওনাকে আটকাতে গিয়েও পারলাম না। মিশমি গালে হাত দিয়ে চোখ-মুখ কুঁচকে বললো,

___” হাউ ডেয়ার ইউ।”

বলতেই আরেকটা পড়লো গালে। আমি মুখে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছি। এই লোক পাগল হয়ে গেছে। মিশমি আবারো রেগে বললো,

___” ইউউউউ..”

বলতে বলতে আরেকটা পড়লো। এবার আমি ওনাকে আটকালাম।নয়তো আজ মিশমি শেষ। অয়নও আজ কিছু বলছে না। কারণটাও জানি না। এর তো এতক্ষণে রেগে যাওয়ার কথা। আগে য করেছিলো? সাদি আঙুল উঁচিয়ে বললো,

___” আপনার মত নাটকবাজ আমি সাদি বহুত দেখেছি মেডাম। এবার তো সময় হলো,নিজেকে বদলান। নয়তো আমি কি করতে পারি আপনার কোনো আইডিয়াই নেই।”

মিশমি কাঁদতে কাঁদতে রাগো লাল হয়ে বললো,

___” আপনার নামে আমি পুলিশ কেস করবো। আমাকে চড় মারার স্পর্ধা হলো কীভাবে আপনার?”

তারপর অয়নের দিকে তাকিয়ে বললো,

___” আর তুমি? তুমি কিছু বললা না? আমি বাপীর কাছে তোমার নামে কম্প্লেইন করবো অয়ন।”

অয়ন কিছু না বলে ভ্রু কুঁচকে সেখান থেকে চলে গেলো। আমিও সাদির পিছন থেকে বের হয়ে বললাম,

___” মিশমি, এখনো সময় আছে বুঝছো। ভালো হয়ে যাও। নয়ত এর ফল ভালো হবে না।”

মিশমি রেগে বললো,

___” তুমি চুপ করো। তোমার বরের নামে আমি পুলিশ কেস করবো দেখে নিও।”

সাথে সাথে আরেকটা পড়লো গালে। আমি এবার নিজের গালেই হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছি। বাপরে এ লোকের কি তেজ। সাদি হালকা চেঁচিয়ে বললো,

___” যা করার করে নেন। আপনার মত মেয়েও আমি ভিষণ দেখেছি। আর পুলিশের কাছে যাবেন তো যান। আমাদের মেডিকেলেও অনেক সিসিটিভ আছে। ওখানের একটা ক্লিপে আমার বউকে গালি-গালাজ করার একটা রেকর্ডও রয়েছে। আমিও এটা পুকিশকে দেখিয়ে হ্যারেসমেন্টের দায়ে জেলখানায় ঢুকিয়ে বসিয়ে রাখবো। অবশ্য এটা দিয়ে না হলে তোমার বাবার জাল ব্যবসা…”

মিশমির চোখ বড় বড় হয়ে গেলো। কিছু না বলে সেখান থেকে চলে গেলো। আমি ওনার দিকে তাকিয়ে বললাম,

___” এটা কি ছিল?”

___” তুই বুঝবি না রে গাধী।চল।”

বলেই উনি আমার হাত ধরে নিয়ে যেতে লাগলেন রিসোর্টের দিকে। আর আমি মনে মনে ভাবছি,

___” অয়নকে কিসের টাকা দিসিলো মিশমি?আবার মিশমির বাবা জাল ব্যবসাও। আর সাদি যে সিসিটিভির কথাটা বললো সেটা যদি তখন আমার মাথায় আসতো তাহলে তখনই অয়নকে দেখাতে পারতাম।”

চলবে……❤️

(ভুলক্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন।)