#রিটেক
#বিনতে_ফিরোজ
পর্ব:১৪
হাসপাতালের করিডোরে বসে আছে ফাহাদ। ইতোমধ্যেই আনোয়ারা বেগম, ফাহিমা এবং দীপ্তির বাবা-মাকে খবর দেওয়া হয়েছে। মাথার দুপাশে হাত দিয়ে রেখেছে ফাহাদ। শিরাগুলো দপ দপ করছে। চোখ বন্ধ করলেই দীপ্তির র-ক্তমাখা মুখটা চোখে ভাসছে। ফাহাদ সহ্য করতে পারছে না। যে মানুষটার সাথে কোনরকম মানসিক বন্ধন তৈরি হয়নি তার এমন দৃশ্য কষ্ট দেওয়ার মানে কি। একটা পবিত্র বন্ধনের জোর কি এতই!
কাঁধে কারো স্পর্শ পেয়ে মাথা উঠিয়ে তাকালো ফাহাদ। নীরবকে দেখতেই দাঁড়িয়ে জাপটে ধরলো তাকে। নীরব আগলে নিলো বন্ধুকে। ফাহাদের অস্থিরতা টের পেলো স্পষ্টভাবে। পিঠে আলতো চাপড় দিয়ে বলল,
– কিরে? দীপ্তিকে তো ডিভোর্স দিয়ে দিবি তাহলে আবার এতো টেনশন কিসের?
নীরব জানে এমন কথা বলার পরিবেশ এটা না। বন্ধুকে একটু হালকা করতে চাওয়াই তার উদ্দেশ্য। ফাহাদ নীরবকে ছেড়ে দাঁড়ালো। রুদ্ধ কণ্ঠ বলল,
– ডিভোর্স এখনো হয়নি। ও এখনও আমার স্ত্রী নীরব। এসব কথা বলার জন্য এসে থাকলে তুই চলে যা।
বন্ধুর অভিমান ভরা কথা নীরব বুঝলো। আর কিছু বলার আগেই অভিভাবকেরা এসে উপস্থিত হলেন। একমাত্র কন্যার অসুস্থতার খবরে দীপ্তির বাবা মা দুজনেই আতঙ্কিত। নিঃশব্দে সকলে অপেক্ষা করল টেস্টের ফলাফলের আশায়।
•
দলের মাঝে উৎসব উৎসব আমেজটা কেঁটে গেছে। হিমেল ভেবে পেলো না রূপা তাকে না জানিয়েই কিভাবে চলে গেলো। মেজাজ গরম হলো হিমেলের। রূপাকে ফোন দিয়ে সেই উত্তাপ মেটাতে চাইলো। কিন্তু পরক্ষণেই কি মনে হতে নিজেও ছুটলো ঢাকার পথে।
•
দীপ্তির টেস্ট শেষ হয়েছে। আসমার সাথে কথা বলার চেষ্টা করছে রূপা। মেয়েটা তার দিকে ঘুরেও তাকাচ্ছে না। দীপ্তিকে তাদের কলেজের হাসপাতালেই নিয়ে আসা হয়েছে। তার ইনচার্জ ডাক্তারের সহযোগী হিসেবে কাজ করছে আসমা। রূপা ছটফট করছে দুটো কারণে। আসমার সাথে কথা বলার জন্য এবং দীপ্তির টেস্টের ফলাফল জানার জন্য। কিন্তু কোনভাবেই আসমাকে বাগে আনতে পারলো না রূপা। মেয়েটার জেদ ভয়ঙ্কর।
ফোনের রিংটোনে রূপার ধ্যান ছুটলো। কামরুন্নাহার ফোন করেছেন। রূপা তাকে জানিয়ে দিলো তার চলে আসার কথা। দীপ্তির কথা শুনে কামরুন্নাহার আফসোস করলেন। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন, “মানুষের জীবন!” ফোন রেখে রূপা আবার আসমার পেছনে ছুটলো। কেয়া তার সাথে কথা বলছে অনুভূতিহীন মানুষের মত করে। আর আসমা তো কিছু বলছেই না। জীবন থেকে এই মানুষগুলোকে হারাতে চায় না রূপা। কোনোভাবেই না।
বন্ধুর পাশেই ছিলো নীরব। এদিক ওদিক তাকাতেই দুই বান্ধবীর ছুটোছুটি চোখে পড়ল। সে দেখেছে মূলত আসমা এবং রূপাকে। রূপা আসমার পিছু পিছু ছুটছে। একটু কথা বলার চেষ্টা করছে। কিন্তু আসমা কোনোভাবেই ধরা দিতে নারাজ। ঢেকে রাখা মুখের প্রতিক্রিয়া বোঝা না গেলেও চোখ দুটো দিয়ে যেনো ভস্ম করে দিতে চাইছিল রূপাকে। নীরবেই সেই চোখদুটো দেখে গেলো নীরব।
অনেকক্ষণ পর দীপ্তির টেস্টের ফলাফল দেওয়া হলো। ডাক্তার আশাহত হয়ে উষ্মা প্রকাশ করলেন ফাহাদের উপর।
– পেশেন্টের হাজবেন্ড হিসেবে আপনার উচিত ছিল তার যাবতীয় খবরাখবর নেওয়া। একদম অবহেলায় একটা ছোট্ট জিনিসকে আপনারা জটিল রূপ দিয়েছেন।
– স্যার! কি হয়েছে আমার মেয়ের?
দীপ্তির বাবা ব্যাকুল হয়ে পড়েছেন।
– কোলন ক্যান্সার। আজকালের মাঝে হয়নি। সিম্পটম অনেকদিন আগে থেকেই দেখা গেছে কিন্তু প্রপার ট্রিটমেন্ট না দেওয়ার কারণে এটা ছড়িয়ে গেছে।
“ক্যান্সার” শব্দটা যেনো সকলের মাথায় বাজ ফেলল। জায়গায় স্থির হয়ে গেলেন দীপ্তির মা।
– আমাদের এখন করণীয় কি ডক্টর?
– আমাদের টেস্ট অনুযায়ী পেশেন্টের হাতে আর বেশি সময় নেই। খুব বেশি হলে দুই মাস। এটুকু সময় আপনারা পেশেন্টকে ভালো রাখার চেষ্টা করুন। উৎফুল্ল রাখার চেষ্টা করুন। দ্যাটস অল।
ডাক্তার প্রস্থান নিলেও অনেকক্ষণ কেউ কিছু বলতে পারলো না। দীপ্তির মা জ্ঞান হারালে যেনো সকলে জ্ঞান ফিরে পেলো। ফাহাদের মাথায় শুধু একটা কথাই ঘুরছে। “খুব বেশি হলে দুই মাস”। ফাহাদ বুঝলো না এখন তার কি করা উচিত। কিভাবে যাবে সে দীপ্তির সামনে? কিভাবে বলবে তার জীবনের আয়ু আছে আর মাত্র দুই মাস? কিভাবে?
ফাহাদের বেদনা ভরা মুখের দিকে তাকিয়ে ছিল রূপা। লোকটা স্ত্রীর অসুস্থতার খবর শুনে কিভাবে ভেঙে পড়েছে! নিশ্চয়ই অনেক ভালোবাসে। রূপার লোভ হলো। এমনভাবে কি হিমেল তাকে ভালবাসে? চোখ সরাতেই হিমেলকে দেখত পেলো সে। তবে ঐ মুখে রাগের আভাস বুঝতে বেগ পেতে হলো না। হিমেল কিন্তু রূপাকে দেখে থামলো না। নিজের এবং তার রাগের অস্তিত্বের খবর রূপার পর্যন্ত পৌঁছে দিয়ে সে নিজের কাজে চলে গেলো। রূপা অস্থির হয়ে গেলো। আসমার সাথে কথা বলার চিন্তা উড়াল দিলো মুহূর্তেই। ভাবনারা চলে গেলো হিমেলের দখলে। চিন্তার সাথে সাথে রূপা নিজেও হিমেলের পিছু নিল।
অপরাধীর মত নত মস্তকে দাঁড়িয়ে আছে রূপা। হিমেল তাকে বকছে ইচ্ছেমত।
– আমাকে একটাবার বলে আসার প্রয়োজন মনে করলে না! নাকি আমি সেরকম গুরুত্ত্বপূর্ন কেউ নই? যাক ভালো।
– সরি হিমেল। আমার আসলে যে কি হয়ে গিয়েছিল.. এক্সট্রেমলি সরি।
নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করলো হিমেল। ঠান্ডা স্বরে বলল,
– কাল আমার রাতের ডিউটি। আসলেই সরি হয়ে থাকলে পরশুদিন আমার ফ্ল্যাটে থাকবে।
– হিমেল! দেখো এভাবে..
– এভাবে কিভাবে? বিয়ে হয়নি?
– তুমি বলেছিলে এখানে এসে সব অফিসিয়ালি হবে।
– বলেছি যখন তখন হবে। এত উতলা হওয়ার কি আছে? বুঝলাম! এই তোমার সরি।
– আমি সত্যিই সরি। আচ্ছা যাও যাবো।
পরের সময়গুলো নদীর শান্ত স্রোতের মত বয়ে গেলো। শক্ত কথা বলার শক্তি ফুরিয়ে গেলো দীপ্তির। ফাহাদ আজকাল তাকে মায়া মায়া চোখে দেখে। তার খুব মায়া লাগে। এই মেয়েটাকে, তার স্ত্রীকে আর কিছুদিন পরই সে হারিয়ে ফেলবে? কি আশ্চর্য! মাঝে একদিন নীরব বলেছিল,
– কী রে? তুই না ডিভোর্স দিবি?
– কাকে ডিভোর্স দিবো নীরব? যে দুনিয়া থেকে চলে যাচ্ছে তাকে আর আলাদা করে নিজের জীবন থেকে সরানোর কি মানে?
বন্ধুর ভগ্ন কণ্ঠ নীরবকে দুঃখ দিয়েছিল। কিন্তু কিই বা করার আছে তার?
রূপা আজকাল বেশি ক্লাস করার সময় পায় না। হিমেলের রাতের ডিউটির চললে দিনের বেলা রূপা থাকে তার ফ্ল্যাটে। কামরুন্নাহার আজও জানেন না রূপা কিভাবে কোথায় পৌঁছেছে। তবে রূপা ভয়ে থাকে। সত্য উন্মোচিত হওয়ার ভয়। প্রায়ই সে হিমেলকে অনুরোধ করে। এভাবে আর কতদিন? হিমেল শোনেনা। নাকি শুনেও বোঝে না?
চলমান।
#রিটেক
#বিনতে_ফিরোজ
পর্ব:১৫
নিস্তব্ধতার জাল ছিন্ন করছে কোনো এক নিশাচর পাখির করুন সুর। থামছে না এক পল। জালটাকে টুকরো টুকরো করে তবেই ক্ষান্ত হচ্ছে। হঠাৎ আসা বাতাসের ধাক্কায় ঝরে যাওয়া পাতাগুলো মরমরিয়ে উঠলেও থমকে যায় না পাখিটা। সবুজ সতেজ পাতার ঝরে পড়ার দৃশ্য তাকে থামায় না। সে যে রোজ দেখে। পুরোনো ডালে নতুন পাতা গজানোর দৃশ্য তার কাছে বড়ই স্বাভাবিক। তবে ঝরে যাওয়া পাতাগুলোর কথা কেউ মনে রাখে না। ভুলে যায় তারাও কখনও অদম্য বাতাসের তালে নিজেদের দুলিয়েছে, সাজিয়েছে সবুজ পৃথিবী।
সবাই ভুললেও ফাহাদ ভোলেনি। তার জীবনে সবুজ পাতার ঝরে যাওয়ার ঘটনা রোজ ঘটে না। তার বক্ষপটে সজোরে ধাক্কা দিয়ে নিজ বিদায়ের খবর জানায় না। তাই দীপ্তি নামক সতেজ পাতার প্রস্থান তাকে নড়বড়ে করে দিয়েছে। তার পালতোলা নৌকার পাল ছিঁড়েছে, বৈঠা হারিয়েছে। বাতাসের তাণ্ডবেও তাই সে নির্বিকার। মাঝ দরিয়ায় সঙ্গীর প্রস্থান তাকে জীবনের সুর ভুলিয়ে দিয়েছে।
সেদিনটাও বাকি দিনগুলোর মতোই ছিলো। দীপ্তি তার মেয়ে কাছে ছিল। হঠাৎ জেদ ধরলো ফাহাদের কাছে যাবার। বাবা মা রাজি ছিলেন না। অসুস্থ মেয়েটার দেখভাল করবে কে? ফাহাদ দায়িত্ব নিল। তার স্ত্রী তার কাছে আসতে চাইছে। অন্য কেউ না করলেই শুনবে কেনো? দীপ্তির হাত ধরে নিয়ে এসেছে নিজেদের কুটিরে। ঠিক প্রথম দিনের মত।
তবে আজকের দীপ্তি ছিল অন্যরকম। সে জানেনা তার ক্যান্সার হয়েছে। তবে ধারণা করতে পারছে রোগটা বড়। কোনো চিকিৎসা হয়তো নেই। আয়নার সামনে দাঁড়ালে আজকাল নিজেকে তার কাছে অচেনা লাগে। শুকিয়ে এতটুকুন হয়েছে। চেহারার শ্রী হারিয়েছে ভিন গ্রহে। কিন্তু এই চেহারার দিকেই যখন ফাহাদ এক আকাশ মায়া নিয়ে তাকায় দীপ্তির আশ্চর্য লাগে। বড়ই আশ্চর্য লাগে। ঐ মায়াটুকু ছেড়ে যেতে মন কাঁদে। সে বিস্মিত হয়। এই কান্না কিসের? ফাহাদের জন্য নাকি জীবনের জন্য?
ফাহাদ তার যত্ন করে। গল্প করে। কতো কথা বলে!
– ফাহাদ!
দীপ্তির ডাকে ফাহাদকে থেমে যেতে হয়।
– বলো।
– তুমি অনেক ভালো।
দীপ্তির মুখের করুন হাসি ফাহাদকে দুঃখ দেয়। সেটুকু দুঃখ সে যত্ন করে লুকিয়ে ফেলে। মুখে দেয় স্মিত হাসির পর্দা।
– আমাকে বলো।
– কি বলব?
ফাহাদ প্রশ্ন করে।
– আমি ভালো না?
– অবশ্যই ভালো।
– আমি খারাপ হলেও আমার উপর রাগ রেখো না কেমন? তোমার রাগ নিয়ে যেতে চাই না।
ফাহাদের হাত ধরে বলে দীপ্তি।
– এসব কি কথা? তুমি কোথায় যাবে?
– জানিনা। মনে হচ্ছে এই বেশিদিন বাঁচবো না।
– দীপ্তি এসব কথা..
– একটু শোনো। আবার বলতে পারি নাকি না পারি।
– কি শুরু করলে বল তো!
– শোনো! তুমি বেশিদিন একা একা থেকো না। ভালো একটা মেয়ে দেখে বিয়ে করে নিও। কিন্তু আমার একটা রিকোয়েস্ট আছে।
– আচ্ছা আমার বিয়ের কথা কেনো আসছে দীপ্তি? আমার কিন্তু ভালো লাগছে না!
– ভালো না লাগলেও শোনো প্লিজ। তুমি অন্য বাড়িতে বিয়ে করো। তোমাদের গ্রামের বাড়ি অথবা অন্য কোথাও। তারপর একটা বাড়ি ভাড়া নিও। এটা ছেড়ে দিও।
– তোমার উল্টাপাল্টা কথা আমি কিছুই বুঝছি না দীপ্তি।
– বুঝতে হবে না। তুমি এটুকু করো। আর শোনো। আমার জন্য অনেক দুআ করবে আচ্ছা?
ফাহাদ সেদিন উত্তর দেয়নি। যদি জানতো সেটাই ছিল দীপ্তির শেষ কথা তাহলে বোধহয় বারবার বলতো, “করবো দীপ্তি। তোমার জন্য আমি অবশ্যই দুআ করবো।”
পরদিন সকালে দীপ্তির অসুস্থতা বাড়লো। তাৎক্ষণিকভাবে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হলো। দুইদিন আই সি ইউ তে থাকার পর তার চিরপ্রস্থান ঘটলো। ফাহাদ দাঁড়িয়ে দেখলো তার সঙ্গীর বিদায়। চির বিদায়।
•• •• •• ••
হন্তদন্ত হয়ে ছুটছে রূপা। আঁধার রাতে গলিগুলো অচেনা লাগছে। তবুও সই। তারা পথ, পথিক নয়। অচেনা পথিকের ভয় আছে। পথের তো নেই। দৌড় না থামিয়েই পিছু ফিরলো রূপা। অমানুষগুলো তার পিছু ছাড়েনি। আজ ফিরতে দেরি হয়েছে। অন্ধকারের মাঝে স্ট্যান্ড থেকেই তার পিছু নিয়েছে চার জন ছেলের একটা দল। বলা বাহুল্য সে ফিরছে হিমেলের ফ্ল্যাট থেকে। বাড়িতে যদিও ক্লাসের অজুহাতে বোঝানো যায় কিন্তু এদের বোঝাবে কি দিয়ে?
নিরিবিলি একটা এলাকায় চলে এলে তার ভয় বাড়লো। মোটা একটা থামের আড়ালে লুকিয়ে পড়লো সে। হাত দিয়ে মুখ চেপে রাখলো যেনো নিশ্বাসের শব্দটুকুও কেউ না শোনে। বিধি বাম। তার চাপা দেওয়া হাতের উপরেই শক্ত দুটো হাত তার মুখ চেপে ধরলো। চিৎকার করার সুযোগটুকু পেলো না রূপা। ভাইকে জানাতে পারলো না বিপদের কথা। সেই ব্যক্তিকেও জানাতে পারলো না যে সময়ে অসময়ে তাকে একা চলতে বলেছে, বলেছে পেছনে ভাই নামক ফেউ না লাগাতে। নিজের মতো করে চলতে, স্বাধীন ভাবে বাঁচতে। বলতে পারলো না।
•
ক্লোরোফর্মের প্রভাব কাটতে বেশিক্ষণ লাগলো না। মস্তিষ্ক সজাগ হতেই রূপা বুঝতে পারলো তাকে পুরোনো কোনো বাড়িতে রাখা হয়েছে। হাত ঘড়িতে সময় দেখলো। এগারোটা বাজতে তের মিনিট বাকি। পরক্ষণেই আশ্চর্যরকম খুশি হলো সে। তার হাত পা বাঁধা নেই। চারদিকে তাকিয়ে দরজা খুঁজতে লাগলো। স্যাঁতসেঁতে মেঝে থেকে উঠে আলোর উৎসের কাছে গেল সে। বাইরের ঘরে একটা হলুদ আলো জ্বলছে। আশপাশে কোনো মানুষের অস্তিত্ব টের পেলো না রূপা। আরেকটু হাঁটতেই নিজের হাত ব্যাগটা পেলো। লুফে নিলো সেটা। তখনই চারজনের আওয়াজ ভেসে এল। আশপাশ দেখে একপাশে রান্নাঘরে ঢুকে পড়ল সে। চুপ করে বসে রইলো।
– এই! মাইয়া গ্যালো কই?
ছেলেটার কণ্ঠ রূপার কাছে স্বাভাবিক লাগলো না। নিশ্চিত মাতাল। আরেকজন উত্তর দিলো সেভাবেই। রূপার খোঁজ শুরু হলো। অন্ধকার রান্নাঘরের কথা তাদের মাতাল মাথায় এলো না। হতাশ হয়ে একজন বলল,
– অনেকদিন পর একটা পাইসিলাম। এইডাও গ্যালো।
রূপা বুঝতে পারল তারা স্বাভাবিক অবস্থায় নেই। থাকলে পুরো বাড়ি তল্লাশি করে হলেও তাকে খুঁজতো। সুযোগটা কাজে লাগালো রূপা। খুব আস্তে বের হলো। ছেলেগুলো তখনও জড়ানো স্বরে গালি দিয়ে যাচ্ছে। কাকে দিচ্ছে কে জানে। খুলে রাখা দরজা দিয়ে বের হয়ে হাঁটতে শুরু করলো সে। ব্যাগ হাতড়ে ফোনটা নিলো। অনেকগুলো কল। মা,ভাইয়া,ভাবি,আসমা,কেয়া,অর্পি কেউ বাদ নেই। আচ্ছা হিমেল কই? খুঁজে খুঁজে হিমেলকে ফোন দিলো সে।
– হ্যালো রূপা।
– হিমেল! আমি একটা জায়গায় আটক পড়েছি। তোমার কাছে লোকেশন পাঠাচ্ছি। একটু আসো তো।
হিমেল কিছু বলার আগেই রূপা কল কেঁটে দিলো। ডাটা অন করে লোকেশন শেয়ার করতেই হিমেলের ফিরতি কল এলো।
– তুমি এত রাতে ওখানে কি করছো?
রূপা বিস্তারিত বলতেই হিমেলের গম্ভীর আওয়াজ পাওয়া গেলো।
– আমার আজকে রাতের ডিউটি এটা নিশ্চই ভুলে যাও নি? আমি আসতে পারবো না।
হিমেলের স্পষ্ট বাক্য রূপাকে বাকহারা করে দিলো। হঠাৎ করেই তার মাথায় সমীকরন তৈরি হয়ে গেলো। হিমেল কি আগেও এমন ছিলো নাকি তার পরিবর্তন হঠাৎ হয়েছে? সে কেনো আজকাল রূপার প্রতি বিশেষ ধ্যান দেয় না? কেনো তাকে শুধু ফ্ল্যাটেই স্ত্রী মনে করে? কেনো দুনিয়ার সামনে সে লুকিয়ে বেড়ায় আগের চেয়েও বেশি? সমাধান মিললেও রূপা মানলো না। ভাইকে ফোন দিলো। রিমন জীবন হাতে নিয়ে ছুটে এলো। ভাইয়ের হাত ধরেও রূপার কাছে জোৎস্নার রাতটা অমাবস্যাই মনে হলো।
চলমান।