রুপালির রূপ পর্ব-১৩

0
273

রুপালির রূপ

সাইয়্যেদাতুন নেছা আফনান

পর্ব:-১৩

সন্ধ্যা হয়েছে কিছুক্ষণ আগেই। আজান দেয়ার পর এখান থেকে রওনা হয় রুপালি-রাদ। রুপালি ভয়ে অস্থির। যদি জিজ্ঞেস করে কোথায় ছিল কি জবাব দিবে? চিন্তায় মাথা ফেটে যাচ্ছে। রাদ বিরক্ত হচ্ছে রুপালির কান্ড দেখে। মেয়েটাকো হাজারবার নিষেধ করা সত্বেও চিন্তা করছে। এবার ধমক দিয়ে বললো,

– রুপালি! কি শুরু করেছো? শশুড়আব্বা বেশী রেগে গেলে বলে দিবে আমরা বিয়ে করে ফেলেছি।

রুপালি চোখ বড় বড় করে তাকায়। বলে,

– এহহহ! শখ কত! থাপড়াইয়া দাঁত ফালায়া দিবে।

– শোনো বউ, ফাহিম ভাই আছেন উনি সামলে নিবেন। খামোখা টেনশন করিও না তো!

রুপালি চুপ করে বসে থাকে। বাতাস ছুঁয়ে যাচ্ছে রুপালির মুখ। সন্ধ্যা তারা মিটমিট করছে। আচমকা গাড়ি থেমে যায়। শহর থেকে এখনো বহুদূরে। আশেপাশটা একদম নিরিবিলি! রাদ কয়েকবার চেষ্টা করে গাড়িটা স্টার্ট দেয়ার কিন্তু ব্যর্থ হয়। রুপালি এবার কেঁদে দেয়। কোথায় থাকবে বাসায় কি বলবে এসব ভেবে পাগল পাগল লাগছে। রাদ গাড়ি রেখে রুপালিকে বাইরে বের হতে বলে। রুপালি হেঁচকি তুলতে তুলতে গাড়ি থেকে বের হয়। রুপালিকে কাছে টেনে চোখের পানি মুছে বলে,

– এই বোকা মেয়ে! আমাকে বুঝি একটুও ভরসা করো না?

– করি তো!

– তাহলে কাঁদছো কেন? তুমি কাঁদলে ভালো লাগে না রূপ। তুমি রূপের মতো উজ্জল থাকো কেঁদো না দয়াকরে।

রুপালি শান্ত হয় তবে চিন্তা কমে না। রাদ ফোন বের করে ফাহিমকে ফোন দেয়।

-আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া, আমি রাদ।

– ওয়ালাইকুমুস সালাম, কই তোমরা? সন্ধ্যার আগে রুপালির বাসায় থাকার কথা! এখন সন্ধ্যা পার হচ্ছে!

– ভাইয়া, আমরা কিছু পথ আসার পরে গাড়ি স্টার্ট হচ্ছে না। আজ রাতে গাড়ি সারাতে না পারলে আসা সম্ভব না সাথে রাত করে রুপালিকে নিয়ে বাইরে থাকা রিস্ক হবে। কাল ভোরে গাড়ি সারিয়ে আসতে হবে।

– আচ্ছা, রুপাকে চিন্তা করতে নিষেধ করো,আমি এদিকটা সামলে নিবো। তোমরা সাবধানে থেকো।

– ভরসা রাখুন আমার উপর।

রাদ ফোন কেটে নিজের প্রিয়তমার কাছে এসে বলে,

– এই বউ, এবার চিন্তা কমেছে গো?

রুপালি মাথা নাড়ায়। রাদ হাসে। রুপালির হাত ধরে সামনে এগোয়। রাদ এখানে প্রায়ই আসা-যাওয়া করে বিধায় এখানের সবই চিনে। সামনেই একটা ছোট্ট রিসোর্ট আছে। আপাতত সেখানেই যাওয়া।

———-

মিসেস রেহানা পায়চারি করছেন আর রুপালির ফোনে ফোন দিচ্ছেন কিন্তু ফোনটা বন্ধ। ফাহিম মায়ের রুমে আসছিলেন রুপালির কথা জানাতে। এসে দেখে এই অবস্থা! ফাহিম মা’কে ধরে বিছানায় বসিয়ে বলে,

– কি হয়েছে মা?

– আচ্ছা, তোর কি ভাই হিসেবে চিন্তা হচ্ছে না রুপালিকে নিয়ে? সেই সকালে বেরিয়েছে এখন সন্ধ্যা হতে চললো এখনো আসছে না!

– চিন্তা করবো কেন? রুপা তো পিয়াসার বাসায়।

– ওই বেয়াদব মেয়ের বাসায় কেন?

– আহা! ওরা বেস্টফ্রেন্ড। পড়াশোনার জন্য গ্রুপ-স্টাডি করতে গিয়েছে। এ জন্য এত চিন্তা করছো? আমাকে জিজ্ঞেস করেছো একবার?

– যাক, সে ভালো। চিন্তা কমলো। এবার বল তুই কেন এসেছিলি?

– চাচ্চুদের বাসায় যেতে ইচ্ছে করছে না, তুমি আব্বুকে বলো চাচ্চুদের আমাদের বাসায় ইনভাইট করতে।

– কেন? সে বাসায় সমস্যা কি?

– আমার লজ্জা লাগছে… আমি ব্যাপারটা বুঝাতে পারবো না মা, প্লিজ।

মিসেস রেহানা কিছু বললেন না। কিছু সময় ছেলের দিকে তাকিয়ে বললো,

– আচ্ছা শোন, রাদদের ব্যাপারটা কি করবো বল তো! এভাবে ঝুলিয়েও বা কতদিন রাখা যায়? সেদিন একজন ভদ্র-মহিলা এসেছিল তার ছেলের জন্য প্রস্তাব নিয়ে।

– আরে সব বাদ দাও, রুপাও রাজি রাদের ব্যাপারে। আর রাদও খুব আন্তরিক রুপার প্রতি।

– রুপাকে জিজ্ঞেস করা লাগবে।

– আরে দরকার নেই।

– দরকার আছে, ওর সম্মতি সবার আগে।

ফাহিম কিছু না বলে মুচকি হেসে বেরিয়ে যায়।

———-

রুমে এসেছে মাত্র রাদ-রুপালি। রুপালি এসেই ওয়াশরুমে আসে। শাওয়ার নেয়ার শেষে মনে পরে এটা তো বাড়ি না! এটা তো রিসোর্ট সাথে কোনো জামা-কাপড়ও নাই। কপাল চাপড়ে দরজা অল্প খুলে বলে,

– এই শুনছেন?

– জি বউ শুনছি।

– আপনার কাছে মেয়েদের কোনো ড্রেস আছে?

– আজব! আমি ছেলে মানুষ মেয়েদের ড্রেস নিয়ে কি করবো?

– আমি ভুলে শাওয়ার নিয়ে ফেলেছি। এখন?

– সমস্যা কি? আমি তোমার স্বামি।

– এই ফাজলামি করছি না। আমি কিন্তু সারারাত এখানেই বসে থাকবো ভিজে কাপড় নিয়ে।

– থাকো।

রাদ এই বলে বেড়িয়ে পরে রুম থেকে।লক করে গাড়ির কাছে আসে। কয়েকজন স্টাফ নিয়ে যেয়ে গাড়িটাকে ঠেলে নিয়ে আসে রিসোর্ট এড়িয়ায়। গাড়ির ভিতর থেকে কয়েকটা শপিংব্যাগ নিয়ে রুমে আসে।

দরজায় টোকা দিয়ে রাদ বলে,

– এই বউ, নাও তোমার ড্রেস।

রুপালিকে স্বর্ণের দোকানে বসিয়ে রেখে শপিংমলে এসেছিল রাদ। রুপালির জন্য কিছু ড্রেস আরেকটা শাড়ি কিনেছিল। শাড়িটা নিজের কাছে রেখেছিল যাতে বিয়ের প্রথম রাতে শাড়িটা রুপালিকে পরাতে পারে। রাদ ভাবেও নি সেই রাতটা আজই!

প্যাকেট খুলে শাড়ি, ম্যাচিং ব্লাউজ সাথে পেটিকোট দেখে হতাশ হয় রুপালি। ভেবেছিল টি-শার্ট বা কমফোর্টেবল কিছু।

কিছু করার নেই ভেবে শাড়ি পরে বের হয়ে আসে।

রাদ মোবাইল ঘাটছিল। আচমকা ওয়াশরুমের দরজা খুলতেই সেদিকে তাকায়। সদ্য শাওয়ার নেয়া রুপালিকে দেখতে সত্যিই অপূর্ব লাগছিল। তোয়ালে নিয়ে এগিয়ে আসে রুপালির দিকে। চুল মুছতে মুছতে ঘোর দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে রুপালির দিকে। রুপালি লজ্জায় মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে।

রাদ রুপালিকে ছেড়ে ওয়াশরুমে চলে যায়। ফ্রেস হয়ে এসে দেখে ডিনারের টাইম হয়ে গিয়েছে। খাবার রুমে পাঠিয়েও দিয়েছে। ডিনার শেষে খোলা বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ায় রুপালি। রাদও পাশে এসে দাঁড়ায়।

রুমে আলো আঁচড়ে পরছে বারান্দায়। রুপালির দিকে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকে রাদ। রুপালি বলে,

– ধুর, এত তাকিয়ে থাকেন কেন? আমার লজ্জা লাগছে।

– লজ্জা ভাঙবো নাকি?

রুপালি আরো লজ্জায় নুইয়ে পরে। রাদ আবারো বলে,

– এই এই, চুপ থাকা সম্মতির লক্ষণ!

রুপালি লজ্জায় মাথা লুকায় রাদের বুকে। আর রাদ! সে তো প্রেয়সীর নতুন রূপে মুগ্ধ হয়ে নিজের ভালোবাসায় রাঙাতে ব্যস্ত।

চলবে,