#রেড_রোজ
পার্ট [০৭]
#লেখিকা_ফারহানা_নিঝুম
(কঠোর ভাবে প্রাপ্ত বয়স্ক এবং মুক্তমনাদের জন্য উ’ন্মুক্ত।)
“আমি পাইনি খুঁজে, আমি জানি না মিহি আপু এখন কোথায় আছে নিকি আপু।”
কথাটা বলতেই গলা ধরে আসে উৎসার, কান্নায় ভে’ঙে পড়ে সে। এদিকে নিকি সাবিনা পাটোয়ারীর রুমেই ছিলেন, সাবিনা পাটোয়ারী পলকহীন দৃষ্টিতে সিলিং ফ্যানের দিকে তাকিয়ে ছিলেন।
নিকি উৎসার কথায় অস্থির হয়ে বললো।
“কীঈ?মিহি কে পাস নি মানে কী?”
সাবিনা পাটোয়ারীর কানে কথাটি ঝং’কার তুললো।পেনিক করতে লাগলেন তিনি,চোখ দুটো উল্টো যাচ্ছে তার।নড়ার চেষ্টা করছে।
নিকি উৎসা কে কিছু বলতে যাবে তার পূর্বেই তার চোখ গেলো নিজের ফুপির দিকে।
“ফুপি!”
নিকি দৌড়ে সাবিনা পাটোয়ারীর কাছে গেলো, ফোন বিছানায় রেখে বললো।
“ফুপি কী হয়েছে তোমার?ফুপি এমন করছো কেন?”
উৎসা আঁতকে উঠলো,কী হয়েছে তার মায়ের? ঠিক আছে তো!
“হ্যালো আপু কী হয়েছে মায়ের?আপু শুনতে পাচ্ছো? হ্যালো আপু?”
নিকি ব্যস্ত কন্ঠে রুদ্র কে ডাকলো।
“ভাইয়া কোথায় তুমি?দেখো না ফুপির কী হয়েছে?”
সবাই সাবিনা পাটোয়ারীর রুমে ছুটে এলো, রুদ্র দ্রুত অ্যাম্বুলেন্স কে কল করে।
ওদিকে উৎসা কিছুই বুঝতে পারছে না, কিন্তু যতটা শুনলো তার মা কে হসপিটালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।উৎসা অধৈর্য হয়ে পড়লো।
এখানে থাকলে চলবে না,তাকে মায়ের কাছে যেতে হবে। উৎসা দ্রুত সিরাতের কাছে গান বললো তার ফ্লাইট বুক করে দিতে,সে বাংলাদেশ যাবে।
সিরাত শুনলো উৎসার কথা,সব কিছু রেডি করে দিতেই ঘন্টা খানেকের মধ্যেই বাংলাদেশের ফ্লাইট ধরলো উৎসা।
_____________
“ওহ্ হ্যলো ব্রো বের হো।রিক?এই রিক?”
জিসান আর কেয়া সেই কখন থেকে ঐশ্বর্যের দরজায় নক করছে।কেয়া ঠাস করে একটা কি’ক মা’রলো দরজায়, ঐশ্বর্য এলোমেলো অবস্থায় বেরিয়ে আসে।পিছন পিছন একটা ফর্সা মেয়েও বেরিয়ে এলো। কেয়া লজ্জায় ড্রয়িং রুমে চলে গেলো, ফর্সা মেয়েটা ঐশ্বর্যের গাল ছুঁয়ে বলে।
“বাই রিক, হ্যাভ অ্যা নাইস ডে।”
মেয়েটি বের হতেই ঐশ্বর্য ডাইনিং এ গিয়ে অ্যাপেল নেয়।
জিসান মলিন মুখে শুধায়।
“কবে তোর শেইম হবে বলতো?শেইম লেস ম্যান।”
ঐশ্বর্য বাঁ’কা হাসলো। জিসান তে’তে উঠল।
“সকাল সকাল মেয়ে নিয়ে?এত…
ঐশ্বর্য ভাবলেশহীন ভাবে জবাব দেয়।
“আই ক্যান্ট কন্ট্রোল মাই সেল্ফ।”
“ইয়াক।”
“আচ্ছা এত ইয়াক ইয়াক করিস না তো,চল ড্রয়িং এ যাই।”
ঐশ্বর্য আর জিসান ড্রয়িং রুমে গেলো,কেয়া ইতিমধ্যে টিভি অন করেছে। সোফায় বসে পড়ল, ঐশ্বর্য আর জিসান এসে ওর পাশে বসলো।মিস মুনা ওদের কে অরেঞ্জ জুস সার্ভ করলেন।কেয়া ফোন বের করে কেএফসি তে অর্ডার করছে।
“এই রিক বার্গার অর্ডার করি?”
“ওকে দে।”
কেয়া অর্ডার করে দিলো। ঐশ্বর্য জুস খেতে খেতে বলে।
“বাই দ্যা ওয়ে আমার নতুন কেয়ারটেকার কোথায়?”
জিসান ফিক করে হেসে উঠলো।
“মনে হয় তোর স্টুপিড ভাবনা বুঝে গেছে,তাই আসেনি।”
ঐশ্বর্য বাঁ’কা চোখে তাকায় জিসানের দিকে।
“আর ইউ শিওর? আচ্ছা তোর কী মনে হয় আমি ওকে ছেড়ে দেবো?নো ওয়ে।”
কেয়া ভ্রু উঁচিয়ে বলে।
” কিউট গার্ল কিন্তু খুবই সরল,সো ওকে হার্ট করার কথা ভাববিও না রিক।”
ঐশ্বর্য চোখ বুজে নিঃশ্বাস টেনে বলে।
“বেবী কাম ডাউন,জাস্ট ফান।”
“নো।”
ঐশ্বর্য দাঁত দেখিয়ে বলে।
“আই ক্যান ডু ইট।”
জিসান আর কেয়া দৌড়ে ঐশ্বর্যের পিছু পিছু গেলো।
“নো ওয়ে,সি ইজ ইনোসেন্ট।”
ঐশ্বর্য ছাদে দৌড়ে গেলো, কেয়া জিসান ওদিকেই গেলো।
____________
” মা।”
উৎসা নিজের মায়ের এমন করুন অবস্থা দেখে ফুঁপিয়ে উঠলো।এয়ার পোর্ট থেকে সোজা বাড়িতে না গিয়ে সিলেটের নর্থইস্ট মেডিকেলে গেলো। সাবিনা পাটোয়ারী কে ওখানেই ভর্তি করেছে রুদ্র।
নিকি উৎসা কে দেখে দৌড়ে ওর কাছে আসে,উৎসা শব্দ করে কেঁদে উঠলো।
“আপু মা কেমন আছে এখন?”
“এখন ঠিক আছে তুই কেনো এত তাড়াহুড়া করে আসতে গেলি?”
উৎসা কিছু বলতে যাবে তার আগেই আফসানা পাটোয়ারী বলে উঠে।
“নিশ্চয়ই ওখানে জায়গা হয়নি,আর না হলে কোনো কু’কীর্তি করে এসেছে।”
উৎসা গ’র্জে উঠে।
“প্লিজ মামী চুপ করো, আমার মায়ের এমন অবস্থা আর তুমি এসব বলছো?”
“তো কী বলবো?মা মেয়ে তো আমাদের জ্বা’লিয়ে শেষ করছিস।”
শহীদ আফসানার কথা শুনে বিরক্ত হয়ে বলল।
“আফসানা এবার থামো তুমি।”
“একদম কথা বলবে না তুমি,আর এই তুই কেরে আমাকে থামানোর? সত্যি কথা স’হ্য হয় না তাই তো?
“প্লীজ মামী, আমি রিকোয়েস্ট করছি তুমি একটু থামো।”
আফসানা পাটোয়ারী আর কিছু বললেন না।
উৎসা নিজের মায়ের সঙ্গে দেখা করলো।পেনিক অ্যা’টাক হয়েছে ওনার।
নিকি বুঝতে পারলো মিহির কথা শুনেই সাবিনার এমন অবস্থা হয়েছে। সূক্ষ্ম শ্বাস ফেললো নিকি,উৎসা কে শান্তনা দেওয়ার চেষ্টা করে। রুদ্র এসে উৎসার পাশে বসলো।
“চিন্তা করিস না সব ঠিক হয়ে যাবে?”
উৎসা রুদ্র কে জড়িয়ে ধরে কেঁদে উঠলো।
“ভাইয়া মায়ের কিছু হলে আমার কি হবে? আমার তো কেউই নেই।”
রুদ্র উৎসার মাথায় আদুরে হাত বুলিয়ে দেয়।
“কিচ্ছু হবে না ফুপির।আর কে বলেছে তুই একা?আমরা আছি না? চিন্তা করিস না।”
✨
রাতের দিকেই সাবিনা পাটোয়ারী কে হসপিটাল থেকে বাড়িতে নিয়ে আসা হলো।উৎসা বেশ চিন্তায় আছে, হোস্টেলের গার্ড কে তো কিছুই জানানো হয়নি। এখন যাওয়ার পর কী তাকে থাকতে দেবে?
উৎসা বেশ চিন্তায় আছে, এর মাঝে কেয়ারটেকারের জবটাও হয়তো এখন আর থাকবে না।আর না ঐশ্বর্য আর জিসানের ফোন নাম্বার আছে উৎসার কাছে।
কাউকেই কিছু জানাতে পারবে না সে।
আকাশ পাতাল ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে গেলো উৎসা।
সে জানেই না জার্মানি থেকে আসার পর তার জীবনে কি হতে চলেছে? হয়তো নতুন কিছুর সূচনা।
মাঝে মাঝে আমাদের ভবিষ্যৎ আমাদের চোখের সামনে ঘুরে বেড়ায় অথচ আমরা তা দেখেও না দেখার ভান করে থাকি। হয়তো কেউ কেউ বুঝতে পারে আবার কেউ বুঝে না। কিন্তু দিন শেষে যখন ভবিষ্যতের কথা ভেবে হতাশ হই।
মালয়েশিয়ার ট্রিপ শেষে জার্মানিতে ব্যাক করে ঐশ্বর্য জিসান আর কেয়া। কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার এরপর থেকেই ঐশ্বর্য উৎসা কে খুঁজছে,তার কোনো খবর নেই। মেয়েটা কে দেখতে পাচ্ছে না সে।
“ব্যাপার টা কী মিস বাংলাদেশীর তো দেখাই নেই।”
জিসানের কথায় বেশ ভাবনায় পড়ে গেলো ঐশ্বর্য। মেয়েটা আসলেই গেলো কোথায়?
ঐশ্বর্য উঠে রিং কি থেকে একটা গাড়ির কি নিলো।
“এখন কোথায় যাবি তুই?”
“মিস রেড রোজের হোস্টেলে।”
জিসান অবাক হলো, ঐশ্বর্য মিস বাংলাদেশীর পিছনে যেভাবে পড়েছে, তাতে এটা তো কনফার্ম আর ছাড়াছাড়ি নেই।
হোস্টেলে যাওয়ার পর সিরাতের সঙ্গে দেখা হয় ওদের।
“মিস উৎসা কোথায়?”
ঐশ্বর্যের সোজাসাপ্টা প্রশ্ন, কিন্তু সিরাত দুজনের মধ্যে কাউকেই তো চিনে না।
“আপনারা কে?”
জিসান ফুস করে শ্বাস টেনে বলে।
“হাই মি জিসান,আর হি ইউ রিক।”
সিরাত ভ্রু যোগল কুঁচকে নেয়।
“আপনাদের উৎসার সঙ্গে কী কাজ?”
ঐশ্বর্য কিছু বললো না তবে জিসান বলে।
“এক্সুয়েলি মিস বাংলাদেশী আমাদের বাড়িতে কেয়ারটেকারের কাজ নিয়েছে, কিন্তু উনি একদিন গিয়েছে। কাল আর যায়নি।”
সিরাত বুঝতে পারলো তাহলে উৎসা এগুলোকের বাড়িতে কাজ করে।
“ওহ্। কিন্তু উৎসা তো এদেশে আর নেই।”
দেশে নেই কথাটা মস্তিষ্কে বেশ প্রভাব ফেললো ঐশ্বর্যের।
“নেই মানে? কোথায় গিয়েছে?”
“আসলে ওর মায়ের পেনিক অ্যা’টাক হয়েছে আর উনি তো প্যারালাইসিস তাই উৎসা কাল রাতেই বাংলাদেশে চলে গেছে।”
ঐশ্বর্য যেনো কথাটা নিতে পারছে না।মেয়েটা কী করে যেতে পারে?হাউ?
যে ফিলিংস তার মনে আছে তা ফিজিক্যালি ক্লোজ করতে চায় ঐশ্বর্য। কিন্তু তার আগেই মেয়েটা চলে গেলো?
ঐশ্বর্যের প্রচন্ড রকম রাগ লাগছে।
“আচ্ছা তাহলে আমি আসি আমার লেইট হচ্ছে।”
সিরাতের কথায় জিসান বলে।
“ইয়া, থ্যাংক ইউ।”
সিরাত যেতেই ঐশ্বর্য গাড়ির ডিক্কিতে সজোরে হাত দি’য়ে ভারী দিলো।
“ড্যা’মেড।”
“কাম ডাউন রিক,কী হলো তোর?”
“হাউ ডেয়ার সি? এভাবে কী করে যেতে পারে?”
“হোয়াস্ট গোয়িং অন রিক?তোর হয়েছে টা কী?কি চাস তুই মিস বাংলাদেশীর থেকে? তুই কী ভালোবেসে ফেলেছিস না কি?”
“নো ওয়ে,জাস্ট সে’ক্সুয়াল নিডস্।”
জিসান বুকে হাত গুজে গাড়ির সঙ্গে হেলান দিয়ে দাঁড়ালো।
“তুই কি আমাকে বোঝাচ্ছিস? না কি নিজেকে।”
“আই ডোন্ট নো।বাট আমি ফিজিক্যাল নিডস্ সে’ক্সুয়াল নিডস্ ছাড়া কিছুই বুঝি না।নাথিং।”
“ওকে ফাইন।”
ঐশ্বর্য গাড়িতে উঠে বসে। তার মধ্যে আপাতত কী চলছে নিজেই বুঝতে পারছে না।
লাভ?এটা জাস্ট নিডস্ ছাড়া কিছুই নয়, আর এটা ঐশ্বর্য রিক চৌধুরী প্রুফ করে দেখাবে।
চলবে………….✨।