রেড রোজ পর্ব-১০

0
3

#রেড_রোজ
পার্ট [১০]
#লেখিকা_ফারহানা_নিঝুম
(কঠোর ভাবে প্রাপ্ত বয়স্ক এবং মুক্তমনাদের জন্য উ’ন্মুক্ত।)
বাড়ির বাইরে আসতেই বড়সড় মার্সিডিজ কার দেখে হতভম্ব হয়ে গেলো উৎসা, ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে।
“এই গাড়িটা আবার কার?”

ঐশ্বর্য উৎসা কে আড় চোখে দেখে, গায়ে কালো রঙের বোরকা পড়েছে, দেখতেও বেশ লাগছে।
জিসান খুশিতে বললো।
“রিকের।”

ঐশ্বর্য ভাব নিয়ে বললো।
“এখানের সো কল্ড অটোরিকশা আমি চলাচল করব রেড রোজ?”

উৎসা কিছুই বুঝলো না,নিজে যে বড়লোক এটা বুঝি সবাই কে দেখাতে হবে? ঐশ্বর্য গিয়ে গাড়িতে বসলো, পিছনের সিটে কেয়া আর জিসান বসলো।উৎসা ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে,সে কোথায় বসবে?
ঐশ্বর্য ভাবলেশহীন ভাবে বলে।
“এখন কী তোমাকে ইনভাইট করতে হবে বসতে?”

উৎসা মলিন মুখে ঐশ্বর্যের পাশের সিটে বসে পড়লো। ঐশ্বর্য দক্ষ হাতে ড্রাইভিং শুরু করে।

সিলেট চন্ডিপুলের দিকে আড্ডা ক্যাফেতে বসে আছে, সবাই। ঐশ্বর্য বিরক্ত হচ্ছে,এটা কোনো ক্যাফে?জাস্ট টু মাচ!
“দিস ইজ ক্যাফে?”

উৎসা মুখ বাঁকিয়ে বললো।
“তো এটা কী সিনেমা হল?”

ঐশ্বর্য ফুস করে শ্বাস টেনে বললো।
“গেট আপ।”

সবাই উঠে দাঁড়ালো, ঐশ্বর্য পা বাড়ায়।উৎসা দৌড়ে ওর সামনে চলে গেল।
“আরে ঐশ্বর্য ভাইয়া কোথায় যাচ্ছেন? আপনি তো এখানের কিছুই চিনেন না?”

“তোমার এই সো কল্ড ক্যাফেতে অ্যাটলিস্ট আমি থাকতে পারছি।”

উৎসার মুখ ভার হলো,সেও বললো।
“তাহলে কোথায় যাবেন বলুন? আমি নিয়ে যাচ্ছি।”

“লেটস্ গো।”

ঐশ্বর্যের পিছু পিছু হাঁটতে লাগলো সবাই, কিয়ৎক্ষণ পরেই গাড়ির কাছে এলো। ঐশ্বর্য ফোন বের করে কিছু একটা দেখছিল, সবাই এদিকে অপেক্ষা করছে।
“রিক খিদে পেয়েছে ব্রো?”

কেয়া অসহায় মুখে বললো।
ঐশ্বর্য হঠাৎ বলে উঠে।
“গ্রেট!লেটস্ গো। জিসান ড্রাইভ কর।”

ঐশ্বর্য জিসানের দিকে গাড়ির চাবি ছু’ড়ে দেয়। জিসান ক্য
ক্যাচ করে নেয়।
মিনিট পাঁচেক পরেই পানসী রেস্টুরেন্টে এসে থামলো ওরা। রেস্টুরেন্টটি বেশ বড় আর পরিষ্কার,খুব সুন্দর করে সাজানো।উৎসা মৃদু হাসলো,সে তো এই রেস্টুরেন্টের কথা ভুলেই গিয়েছিল।
ঐশ্বর্য সবচেয়ে বেস্ট টেবিলটা বুক করলো। সবাই বেশ আরাম করে বসলো,উৎসা নিজের মুখের নিকাব খুলে রাখে। ভীষণ গরম লাগছে তার,কেয়া উৎসা কে টিস্যু এগিয়ে দেয়।ঘেমে একাকার অবস্থা উৎসার। জিসান ওর মলিন মুখ দেখে শুধায়।
“মিস বাংলাদেশী তুমি এসব কেনো পড়েছো?লুক তোমার অবস্থা?”

উৎসা মৃদু হাসলো।
“বাংলাদেশের বেশীরভাগ মেয়েরাই বোরকা পরে চলাচল করে, আমিও তাই।এখানের মেয়েরা বাইরের দেশের মতো চলাচল করতে পারে না,লোকে মন্দ বলে।”

ঐশ্বর্য কপাল কুঁচকে বলে।
“রিয়েলি? তাহলে তুমি জার্মানিতে শর্ট জিন্স টপস্ ওগুলো পড়লে তখন?”

উৎসা ফের ভুবন ভোলানো হাসি মুখে টেনে বলে।
“আপনাদের ঐখানে তো জ্যাকেট ছাড়াই বের হওয়া যায় না, সেখানে আমি কী করে বোরকা পরে বের হবো?”

ঐশ্বর্য বিরক্ত নিয়ে বললো।
“বাংলাদেশের সব কিছুই চিপ,জাস্ট টু মাচ।”

উৎসা মুখ বাঁকালো, ওয়াটার আসতেই ঐশ্বর্য ম্যেনু কার্ড নিয়ে অর্ডার করলো।
“চিজ বার্গার,স্যুপ,ফ্রেন্স ফ্রাই,প্যান কেক।”

উৎসা তম্বা খেয়ে গেলো, দুপুরের খাবারে এসব খাবে ওরা?
“আরে আরে দাঁড়ান, দেখুন ওয়াটার ভাইয়া আপনি বরং চিকেন ফ্রাই, ফ্রাইড রাইস, চাউমিন উইথ চিলি চিকেন।”

ওয়াটার যেতেই ঐশ্বর্য উৎসা কে ধমক দিয়ে বললো।
“হোয়াট দ্যা হেল?এসব কী অর্ডার করেছো?”

উৎসা মিনমিনে গলায় বলল।
“দুপুরের খাবারে কেউ প্যান কেক,স্যুপ এসব খায়?”

জিসান বলে উঠল।
“উফ্ তোরা থাম, অ্যাম ভ্যারি এক্সাইটেড।”

ওয়াটার খাবার দিয়ে যেতেই কেয়া ফোন বের করে সেলফি নিতে লাগলো।
“গাইস সে চিজজ।”
সবাই এক সঙ্গে ছবি তুলে,উৎসা নিজের মতো খেতে শুরু করে। ঐশ্বর্য আড় চোখে তাকায় উৎসার দিকে,উৎসা অল্প অল্প করে খাচ্ছে। হিজাব বাঁ’ধার ফলে মেয়েটা কে আরো বেশি কিউট লাগছে।উৎসা আনমনে ঐশ্বর্যের দিকে তাকালো, চোখাচোখি হয় দু’জনের।উৎসা মাথা নুইয়ে নেয়,এই ঐশ্বর্য কে একটুও বুঝতে পারে না উৎসা।
_______________
সন্ধ্যায় সবাই মিলে বারান্দায় আড্ডা দিচ্ছে,উৎসা সবার জন্য চা নিয়ে এলো।
অনেক দিন পর ভাই বোন সবাই এক সাথে হয়েছে। বারান্দায় কুশান বিছিয়ে ছোট ছোট বালিশ নিয়ে গিয়ে রেখেছে উৎসা। সবাই এসে বসলো, ঐশ্বর্য আসতে চায়নি কিন্তু রুদ্র জোর করে নিয়ে এসেছে। সবার সাথে থাকলেও
কানে তার হেডফোন হাতে আইপ্যাড।
“এই যে সবার জন্য চা নিয়ে এসেছি।”

উৎসা চায়ের সঙ্গে কিছু স্ন্যাকস নিয়ে আসে।নিকি হাত বাড়িয়ে ট্রে নেয়,উৎসা একে একে সবাই কে চা দেয়। ঐশ্বর্যের কাছে যেতেই কান থেকে হেডফোন খুলে বললো।
“আই ডোন্ট লাইক ইট?”

উৎসা সূক্ষ্ম শ্বাস ফেললো।
“তাহলে ভাইয়া আপনার জন্য কী আনবো”

ঐশ্বর্য দাঁতে দাঁত চেপে বললো।
“ফার্স্ট ডোন্ট কল মি ভাইয়া, সেকেন্ড কিছু চাই না আমার।”

উৎসা মুখ বাঁকিয়ে বললো।
“অ্যাজ ইওর উইশ।”

ঐশ্বর্য ভ্রু বাঁকিয়ে বললো।
“ওকে, আমার জন্য কফি নিয়ে এসো ব্ল্যাক কফি উইথ আউট সুগার।”

উৎসা গাল ফুলিয়ে বসে,সে কী এই চৌধুরী সাহেবের চাকর নাকি?যখন যা ইচ্ছা হু’কু’ম করবে?উৎসা মুখ বাঁ’কিয়ে বললো।
“পারব না, আমি কী আপনার কাজের লোক?”

ঐশ্বর্য বাঁকা হাসলো,হাতের আইপ্যাড সোফায় রেখে উঠে সামনে এসে দাঁড়ায় উৎসার। পকেটে হাত গুজে বললো।
“এক্সুয়েলি ইয়েজ,ইউ আর মাই হাউজ কিপার।ভুলে গেলে জার্মানিতে কেয়ারটেকারের কাজ দিয়েছিলাম?”

উৎসা ফুস করে উঠে।
“তো?ওইটা জার্মানিতে ছিলো?এটা বাংলাদেশ।আর শুনুন আপনি আমার ভাইয়া হন, বুঝলেন?ভ আকার ভা ই য়া।”

“জাস্ট শাট ইওর ফা’কিং মাউথ। কফি নিয়ে এসো!”

উৎসা হনহনিয়ে চলে গেলো।মনে মনে হাজার টা গা’লি দিলো, অস’ভ্য লোক পঁচা লোক,শ’য়তা’ন লোক।

কিচেনে যেতেই উৎসার হাতের ফোন টুং টুং শব্দ করে বেজে উঠল।
“হ্যালো সিরাত বলো!”

“হ্যালো উৎসা তোমাকে একটা জরুরী কথা বলার ছিলো!”

উৎসা ফোন লাউড স্পিকারে দিয়ে কফি বানাতে বানাতে বলে।
“হ্যা বলো আমি শুনছি।”

সিরাত আমতা আমতা করে বলল।
“আসলে উৎসা ওই তোমাকে….

“কী হয়েছে?”

“উৎসা তোমাকে হোস্টেল থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে!”

উৎসা চমকে উঠে, হোস্টেল থেকে বের করে দিয়েছে মানে?উৎসা দ্রুত বেসিনে হাত ধুয়ে ফোন তুললো।
“মানে কি সিরাত? হোস্টেল থেকে বের করে দিয়েছে?”

সিরাত মলিন মুখে বলে।
“এক্সুয়েলি তুমি গার্ড কে বলেও যাও নি আর না পারমিশন লেটার জমা করেছো।ইভেন কলেজ থেকেও বের করে দেবে ওয়ান্ট করেছে।”

উৎসা ব্যস্ত কন্ঠে শুধায়।
“তাহলে কি হবে? না না আমি এভাবে কী করে……

“উৎসা রিল্যাক্স, তুমি বরং দু দিনের মধ্যে আসার চেষ্টা করো।আই থিংক প্রিন্সিপালের সঙ্গে কথা বলে দেখতে পারো।”

উৎসা ভাবলো তাকে জার্মানি যেতে হবে,মিহি কে খুঁজতে হবে।যদি মিহি ওর বয়ফ্রেন্ড এর সাথে না থাকে তাহলে কোথায় আছে?সব জানতে হবে!

“ওকে আমি তোমাকে কাল সকালে জানাচ্ছি।”

“ওকে।”

উৎসা ফোন রেখে দেয়,বেশ চিন্তায় পড়ে গেলো। এবার করবে টা কি? তাকে জার্মানি যেতে হবে আবার।

বাইরে থেকে দাঁড়িয়ে সিরাত আর উৎসার কথোপকথন শুনলো ঐশ্বর্য। আসলে কফি আনতে দেরী হচ্ছে তাই ঐশ্বর্য নিজে এলো কিচেনে, কিন্তু এখানে উৎসার বিষয়ে জেনে বেশ অবাক হলো। বিড়বিড় করে আওড়াল।
“রেড রোজ জার্মানি ব্যাক করবে?”

কিছু একটা ভাবলো ঐশ্বর্য,ফের হাসলো।
“হোয়াট অ্যাভার।”

ঐশ্বর্য ভেতরে গিয়ে উৎসার হাত থেকে কফি কাপ নিয়ে বেরিয়ে গেলো।উৎসা বুঝলো নিকির সঙ্গে কথা বলতে হবে।
উৎসা বের হতে যাবে পিছন ঘুরতেই আকস্মিক ভাবে ঐশ্বর্যের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে পুরো কফি ঐশ্বর্যের উপর ফেলে দেয়। আঁ’তকে উঠে উৎসা গরম ধোঁয়া উড়ানো কফি পড়েছে ঐশ্বর্যের বক্ষ স্থলে।
“এটা কী হলো,দেখি দেখি।”

উৎসা দ্রুত ঐশ্বর্যের বুকে হাত লাগলো,পুড়েছে কী না দেখতে? শার্টের বোতাম খুলতেই আঁ’তকে উঠে, জায়গাটা লাল হয়ে গেছে।উৎসা ফ্রিজ থেকে ঠাণ্ডা পানি বের করে ঐশ্বর্যের বুকে দেয়।ঘষতে লাগলো সে।
“জ্ব”লছে তাই না? অ্যাম স্যরি। এখুনি ঠিক হয়ে যাবে।একটু সবুর করুন।”

এদিকে ঐশ্বর্য নির্বাক, নিশ্চুপ ভঙিমায় উৎসার কান্ড দেখছে এক সময় উৎসা ঐশ্বর্যের পেটের দিকে হাত ছোঁয়াতেই ঐশ্বর্য ওর হাত চেপে ধরে।
উৎসা মুখ তুলে নিষ্পাপ চাহনিতে দেখে।
“হোয়াটস গোয়িং অন?”

উৎসা এতক্ষণে যেনো হু’শে ফিরলো। দ্রুত হাত সরিয়ে নেয়। লজ্জায় জর্জারিত হয়ে উঠে,হাত দুটো থরথর করে কাঁপছে। এতক্ষণ ধরে কী করলো তা ভাবতেই নিঃশ্বাস ভারী হয়ে আসছে,সে কী করলো? এভাবে কাউকে স্পর্শ করেছে ভাবতেই শেষ হয়ে যাচ্ছে।উৎসা কাঁপা কাঁপা গলায় বলল।
“অঅ্যাম স্যরি।”

কথাটা বলেই দৌড় লাগায় উৎসা। ঐশ্বর্য একই ভঙিমায় দাঁড়িয়ে আছে, ভেতরে তোলপাড় শুরু হয়েছে তার। যেখানে অন্য অন্য মেয়েদের ঘন্টা লেগে যায় তাকে উত্তে’জিত করতে সেখানে উৎসার সামান্য বুকে ছোঁয়াতে উ’ন্মা’দ লাগছে ঐশ্বর্যের। সে তো উৎসা কে বকা দিতে এসেছিল, কফিতে চিনি দেওয়ার জন্য। কিন্তু এভাবে নিজেই পাগল হয়ে যাবে তা ভাবতে পারেনি
ঐশ্বর্য কফি কাপ রেখে দ্রুত ফ্রিজ থেকে আইস কিউব নিয়ে রুমে যেতে লাগলো। আপাতত তার শান্তি চাই, সামথিং নি’ডস্। ঐশ্বর্য দ্রুত পায়ে এক প্রকার দৌড়ে রুমের দিকে গেলো।ঠাস করে দরজা লাগিয়ে দেয়।

চলবে…………….✨।