#রেড_রোজ
পার্ট [১৫]
#লেখিকা_ফারহানা_নিঝুম
(কঠোর ভাবে প্রাপ্ত বয়স্ক এবং মুক্তমনাদের জন্য উ’ন্মুক্ত।)
কুয়াশা কিছুটা ধরে আসছে,আজ তিনদিন ধরে সূর্যি মামার দেখা নেই,তবে আজ হয়তো সূর্যের দেখা মিলবে।
শুরু হয়েছে মানুষের চলাচল,গায়ে গরম কাপড় জড়িয়ে কেউ বা যাচ্ছে কলেজে তো কেউ বা যাচ্ছে অফিসে!
কলিং বেল বেজে উঠলো, কিন্তু কেউ দরজা খুললো না। জিসান বুঝতে পারলো মিস মুনা এখনো আসেন নি।
জিসান ঐশ্বর্য কে ডাকতে লাগল।
“রিক?রিক রিক ওপেন দ্যা ডোর!”
কিছুক্ষণ ডাকার পরেই ঐশ্বর্য এসে দরজা খুলে দেয়। জিসান ঐশ্বর্য কে দেখে থতমত খেয়ে গেল। ঐশ্বর্যের সিল্কি চুল গুলো উষ্কখুষ্ক হয়ে আছে,গায়ে কিছুই নেই শর্ট জিন্স ছাড়া।
জিসানের টনক নড়ে উঠে, তার একটা কথাই মনে হচ্ছে মিস বাংলাদেশী কোথায়?”
জিসান হুড়মুড়িয়ে ঢুকে পড়লো।
“মিস বাংলাদেশী?মিস বাংলাদেশী কোথায় তুমি?”
ঐশ্বর্য ডোর লক করে ভেতরে এলো। জিসান দ্রুত ফোন বের করে বলে।
“তাড়াতাড়ি বল কোথায়?, অ্যাম ড্যাম শিওর নিশ্চয়ই মিস বাংলাদেশীর কিছু একটা হয়েছে।”
ঐশ্বর্য ভাবলেশহীন ভাবে গিয়ে ফ্রিজ থেকে ঠাণ্ডা পানি বের করে বোতলে মুখ লাগিয়ে খেতে লাগলো।
” বল না রিক?কোন কোথায় আছে মিস বাংলাদেশী?”
ঐশ্বর্য বোতল যথা স্থানে রেখে এসে কাউচের উপর বসলো।
“সকাল সকাল বিরক্ত করা ছাড়া তোর কী?”
“বাট রিক…..
“ভাইয়া!”
উৎসার কন্ঠস্বর শুনে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো জিসান, ঐশ্বর্যও মাথা খানিকটা ত্যা’ড়া করে তাকায়।
লাল রঙের ট্রি শার্ট তার সঙ্গে লেডিস জিন্স এবং গলায় ছোট একটা ওড়না দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে উৎসা। জিসান উৎসা কে দেখে যেনো প্রাণ ফিরে পায়।
” মিস বাংলাদেশী আর ইউ ওকে?”
উৎসা মাথা দুলিয়ে বলল।
“আমি ঠিক আছি।”
জিসান বুকে হাত দিয়ে শ্বাস টেনে নেয়, ঐশ্বর্যের অবস্থা দেখে জিসানের এক মূহুর্তের জন্য মনে হয়েছে উৎসার অবস্থা হয়তো শেষ!
ঐশ্বর্যের দিকে তাকাতেই ঐশ্বর্য বাঁ’কা হাসলো। জিসান বুঝতে পারলো সেই হাসির মানে।
উৎসা জিসানের কানে ফিসফিসিয়ে বললো।
“ভাইয়া আপনার এই বন্ধু পুরোটাই পাগল।”
জিসান শব্দ করে হেসে উঠলো, ঐশ্বর্য আড় চোখে তাকায় উৎসার দিকে।উৎসা নাক মুখ কুঁচকে নেয়, জিসান গিয়ে ওর পাশে বসলো।
উৎসা গেলো কিচেনে,আজ মিস মুনা আসবেন না বলেছেন,সেই জন্য সকালের ব্রেকফাস্ট উৎসাই তৈরি করতে লাগলো।
সকাল সকাল পায়েস আর সাথে পিঠে বানিয়ে নিলো ঝটপট। তাদের বাংলাদেশে তো শীত আসলেই কত রকম পিঠে তৈরি হয়। শীতের সবচেয়ে আকর্ষণীয় হলো পিঠে উৎসব।এসব ভাবতে ভাবতেই পিঠে বানিয়ে নেয় উৎসা।
জিসান ঐশ্বর্যের দিকে তাকিয়ে বলে।
“রিক ইউ আর টু মাচ ইয়ার! আমি পুরোই ভয় পেয়ে গেছিলাম।”
ঐশ্বর্য শব্দ করে হেসে দেয়, জিসান বলে।
“ও শিট তোকে যা বলতে এসেছি সেটাই তো বলা হয়নি!”
“কী?”
ঐশ্বর্য হাত বাড়িয়ে আইপ্যাড নিতে নিতে বলে। জিসান কপাল চুলকে বলে।
“আরেহ আজকে কেয়ার বার্থ ডে।”
ঐশ্বর্য কিঞ্চিৎ চমকে উঠে।
“শিট শিট ভুলেই তো গেছি।”
“সেইম আমারও মনে ছিলো না,সকাল সকাল এই দেখ কেয়া ম্যাসেজে কী লিখেছে?
জিসান ফোন বের করে ঐশ্বর্য কে দেখায়,কেয়া কাদু কাদু ভাবে লিখেছে।”তোরা কেমন ফ্রেন্ড আমার বার্থ ডে ভুলে গেলি?শেইম অন ইউ, তোদের সঙ্গে আর কখনও কথা বলব না।”
ঐশ্বর্য হাসলো,মনে মনে ঠিক করলো কেয়া কে সারপ্রাইজ দেওয়া যাক। ঐশ্বর্য আর জিসান প্ল্যান করছে সারপ্রাইজের, তৎক্ষণাৎ উৎসা পিঠে আর পায়েস নিয়ে এলো।
“এই যে আপনাদের জন্য।”
উৎসা বেশ ফুরফুরে মেজাজে ট্রে টেবিলের উপর রাখলো। জিসান ঐশ্বর্য দু’জনেই ভালো করে দেখতে লাগলো আসলে এগুলো কী?”
ঐশ্বর্য পিঠে একটা হাতে তুলে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে শুধায়।
“হোয়াট,,ইজ দিস?”
উৎসা দু’জনের দিকেই তাকায়, ওরা কী কখনো পিঠে খায়নি? অবশ্য খাবেই বা কী করে?এদেশে আদেও এসব কিছু হয় কি না সন্দেহ!
“এগুলো পিঠে, আমাদের দেশে শীতের সকালে সবাই পিঠে খায়।আর ওখানে পিঠে উৎসব পালন করা হয়।”
ঐশ্বর্য আর জিসান দু’জনেই ভালো করে উৎসার কথা গুলো শুনলো। জিসান পায়েসের বাটি দেখিয়ে বলে।
“এগুলো কি?”
উৎসা চটজলদি সোফার পাশে বসে পড়লো।পায়েস বাটিতে ঢালতে ঢালতে বলে।
“এটা পায়েস, অনেক মিষ্টি খেতে । খেয়ে দেখুন।”
দুই বাটি দুজনের হাতে তুলে দেয় উৎসা। ঐশ্বর্য টেস্ট করে দেখলো, সত্যি মিষ্টি খেতে। জিসানও খেলো।
“মিস বাংলাদেশী ইটস্ রিয়েলি গ্রেট।কী বলিস রিক খেতে কেমন?”
ঐশ্বর্য ঠোঁটে তর্জনী আঙ্গুল রেখে বলে।
“নট ব্যাড তবে এর থেকেও মিষ্টি আছে।”
জিসান উৎসা দুজনেই অবাক চোখে তাকায়।
উৎসা কিছু বুঝলো না, জিসান শুধোয়।
“কী?”
ঐশ্বর্য ঝুঁকে উৎসার নরম গালে আঙুল ছুঁয়ে দেয়। ঘটনার আকস্মিকতায় হতভম্ব হয়ে গেলো উৎসা ঠোঁট কিঞ্চিৎ ফাঁক করে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। ঐশ্বর্য তর্জনী আঙ্গুল উৎসার গালে ছুঁয়ে বললো।
“মিষ্টি মেয়ে ”
জিসান নড়েচড়ে বসল।
“উহু উহু রিক বিহেভ ইওর সেল্ফ”
ঐশ্বর্য উঠে হাত পা টেনে রুমের দিকে গেলো। জিসান উৎসার দিকে তাকালো,উৎসা মেকি হাসি দিয়ে দ্রুত কিচেনে চলে যায়।
জিসান হুঁ হুঁ করে হেসে উঠলো, কেনো জানি তার মনে হচ্ছে ঐশ্বর্য ভালোবেসে ফেলেছে। এখন যদি শিওর হওয়া বাকি।
__________________
ভীষণ সুন্দর করে ঐশ্বর্যের আলিশান বাড়ি সাজানো হয়েছে, প্রথম বার এই বাড়িতেই পার্টি হবে। উৎসা এর আগে কখনও এত্ত চা’কচি’ক্য দেখেনি।
সকাল থেকে এই আয়োজন,কত শত ডিস রান্না হচ্ছে। অনেক মানুষ আসবে, অনেক ফ্রেন্ড তাদের জন্য মিনিবার।
“জিসান ভাইয়া মিনিবার কেনো?”
জিসান ফোনে কথা শুনছিল উৎসার প্রশ্ন শুনে ফোন রেখে বলে।
“এগুলো অন্যদের জন্য, তুমি কিন্তু ভুলেও টাচ করবে না।”
উৎসা নাক মুখ কুঁচকে নেয়।
“ছিহ্ ছিহ্ এসবে আমি নেই।”
জিসান নৈঃশব্দ্যে হাসলো।
সন্ধ্যা ঘনিয়ে এসেছে,ছোট ছোট ডিম লাইট জ্ব’লে উঠলো।একের পর এক গেস্ট ভেতরে প্রবেশ করছে, অনেক গুলো সিকিউরিটি ওদের নিয়ে আসছে সার্ভেন্টরা সবাই কে জুশ কোল্ড ড্রি’ঙ্কস সার্ভ করছে।
ব্ল্যাক স্যুট ভেতরে অফ হোয়াইট শার্ট পড়েছে। সিল্কি চুল গুলোতে জে’ল দেওয়া আছে,হাতে চকচক করছে ব্র্যান্ডেট ঘড়ি।বেশ স্মার্ট দেখাচ্ছে তাকে। জিসানও সেইম,তবে তার স্যুট নেভি ব্লু কালারের, ভেতরে অফ হোয়াইট শার্ট।
মিস মুনার কাছে বসে আছে উৎসা, ওনাকে হেল্প করছে। এদিকে মিস মুনা কখন থেকে বলছে উৎসা কে গিয়ে রেডি হতে।
“ম্যাম আপনি গিয়ে রেডি হয়ে নিন।”
উৎসা বিরক্ত হলো,মিস মুনা সবসময় ওকে আপনি আপনি আর ম্যাম বলে সম্বোধন করে।
“ওহো মিস মুনা আমি রেডি হয়ে কী করব?”
মিস মুনা স্বভাব সুলভ হাসলো।
“স্যার তো কখন বলেছেন আপনাকে এসব করতে হবে না।”
উৎসা বেসিনে হাত ধুয়ে বলে।
“আমি রেডি হয়ে কী করব? আমি তো কেয়ারটেকার তাহলে আপনাদের স্যারের এত কিসের টেনশন আমাকে নিয়ে?”
উৎসা কথাটা শেষ করতেই ঐশ্বর্য এসে উৎসা কে টেনে দুতলায় যেতে লাগলো।
“আরেহ ভাইয়া? মানে চৌধুরী সাহেব কী করছেন? প্লিজ লিভ!”
ঐশ্বর্য উৎসা কে তার রুমে নিয়ে গেলো।
হাত ছাড়তেই উৎসা নিজের হাত ধরে ঘষতে লাগলো।
“উফ্ হাত না অন্য কিছু কত্ত ব্যথা করছে!”
ঐশ্বর্য বুকে হাত গুজে দাঁড়ালো,উৎসা এতক্ষণে ঐশ্বর্য কে ভালো করে লক্ষ্য করলো। ঐশ্বর্য নিতান্তই সুদর্শন পুরুষ, অসম্ভব সুন্দর দেখতে। যে কারো গলা শুকিয়ে আসবে তাকে দেখে,উৎসা আচমকা অনুভব করলো তার হৃদয় স্পন্দনের দ্রিম দ্রিম শব্দ শুনতে পাচ্ছে নিজে।
“সুইটহার্ট ডোন্ট লুক অ্যাট ইট লাইক দিজ ,ইট হার্টস।”
উৎসার কান গরম হয়ে উঠলো, নিজের কাজেই লজ্জা লাগছে।
“আচ্ছা আপনি এত উঠে পড়ে লেগেছেন কেন আমাকে নিয়ে? আমি তো কেয়ারটেকার!”
“নো নো ইউ আর মাই গার্লফ্রেন্ড।”
উৎসা চমকে উঠে।
“কীঈ? গার্লফ্রেন্ড? কবে, কখন?”
ঐশ্বর্য দু পা এগিয়ে গিয়ে বললো।
“এখন এই মূহুর্ত থেকে।”
উৎসা লজ্জায় মিশিয়ে যাচ্ছে।
“ছিহ্ ছিহ্।”
ঐশ্বর্য বাঁকা হাসলো।
“উফ্ রেড রোজ উই আর লেইট।”
উৎসা দ্রুত কাভার্ড খুলে কাপড় খুঁজতে লাগলো। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত জিনিসটা খুঁজেই পাচ্ছে না,একে একে সব কাপড় বের করতে লাগল।
উৎসা পিছন ঘুরে দেখে ঐশ্বর্য এখনো দাঁড়িয়ে আছে।
“আআপনি যান আমি চেঞ্জ করব।”
ঐশ্বর্য দরজায় হেলান দিয়ে দাঁড়ালো।
“ওয়াশ রুম ওদিকে, তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে আসো ।”
উৎসার রাগ লাগছে,সে যা খুঁজছে তা খুঁজেই পাচ্ছে না।সোফা থেকে শুরু করে বিছানার নিচে সব জায়গায় খুঁজতে লাগলো। ঐশ্বর্য বেশ বিরক্ত নিয়ে হাত ঘড়িটা দেখলো।
“উফ্ হোয়াটস গোয়িং অন সুইটহার্ট?কী খুঁজছো তুমি?”
উৎসা মিনমিনে গলায় বলল।
“ককই কিছু না তো?”
“তাহলে এগুলো কী করছো?”
“না মানে কাপড় খুঁজছি।”
ঐশ্বর্য এগিয়ে গিয়ে উৎসার হাত টেনে ধরে।
“কী প্রবলেম?বলো কি খুঁজছো?”
উৎসা ঠোঁট কাম’ড়ে ধরে,কী ভাবে বলবে?
“আসলে আমি ফ,, মেয়েদের জিনিস পত্র জেনে আপনি কী করবেন?”
ঐশ্বর্য কপাল কুঁচকে নেয়।
“হোয়াট?”
উৎসা ঐশ্বর্যের কুঁচকানো মুখের দিকে তাকিয়ে বলল।
“ছিহ্ কত নাটক করেন।”
“নো নো সত্যি কী খুঁজছো তুমি?”
“মেয়েদের জামা খুঁজছি,হয়েছে শান্তি ?”
“সিরিয়াসলি।”
“যান যান সরুন।”
উৎসা আবারো কাভার্ডে খুঁজতে লাগল, ঐশ্বর্য কী একটা ভেবে দুষ্টু হাসি হাসলো,উৎসার কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বললো।
“উহু সুইটহার্ট আর ইউ টকিং অ্যাবাউট ইনা…..?”
উৎসার কান গরম হয়ে উঠে।
“বেশরম লোক, বের হন।”
“আরে আমি কী করলাম? আশ্চর্য!”
উৎসা ঐশ্বর্য কে এক প্রকার ঠেলে রুম থেকে বের করতে লাগলো। ঐশ্বর্য শব্দ করে হেসে উঠলো,উৎসা পাগলী একটা।কী বলে কী না বলে কিছু মনে থাকে না।আর এখন তাকেই বের করে দিচ্ছে!
উৎসা মনে মনে গা’লি দেয়।
“অস’ভ্য রিক চৌধুরী ছিহ্ ছিহ্ বেশরম।”
চলবে………….✨।