রেড রোজ পর্ব-২৬

0
3

#রেড_রোজ
পার্ট [২৬]
#লেখিকা_ফারহানা_নিঝুম
(কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ)

সূর্যের তপ্ত রশ্মি মুখে পড়তেই নাক মুখ কুঁচকে নেয় ঐশ্বর্য।মুখ দিয়ে বেরিয়ে এলো “ছ” শব্দটি,পাশের বালিশ টেনে মুখে উপর চেপে ধরে ফের ঘুমানোর ট্রাই করলো ঐশ্বর্য। তৎক্ষণাৎ মস্তিষ্ক হা’না দেয় উৎসার কথা, বিছানায় হাতরে উৎসা কে খোঁজার ট্রাই করলো।
কিন্তু উৎসা বিছানায় নেই, ঐশ্বর্য উঠে বসলো। অ্যালার্ম ঘড়িতে দেখলো সবে দশটা বাজে। ঐশ্বর্য ঘুম জড়ানো কন্ঠে আওড়ালো।
“উফ্ রেড রোজ আরেকটু ঘুমাতে পারতো। কী দরকার ছিলো এত সকালে উঠার?”

ঐশ্বর্য বেশ বিরক্ত নিয়ে বিছানা থেকে নেমে দাঁড়ালো বাইরে যাওয়ার উদ্দেশ্যে।

রান্না ঘরে সবার জন্য চা কফি তৈরি করতে ব্যস্ত উৎসা। কিন্তু মন তার অন্য কোথাও!এই তো ভোরের দিকে রুম থেকে বের হতেই আফসানা পাটোয়ারী আচমকা এসে উৎসা কে টেনে নিয়ে গেল।
তার উপর ছুড়ে দিলো বি’শ্রী সব প্রশ্ন।
“কী রে এটা কী তুই বস্তি পেয়েছিস,যে যা ইচ্ছে করবি?”

উৎসা আফসানা পাটোয়ারীর কথায় তম্বা খেয়ে গেলো।
“কী বলছো এসব মামী?”

আফসানা পাটোয়ারী শা’সানোর সহিতে বলে।
“একদম ন্যা’কা’মি করবি না। ঐশ্বর্যের সঙ্গে রাত কাটিয়ে খুব ভালো লেগেছে বুঝি? এখন ওকে প’টানোর ধা’ন্দা করেছিস !”

উৎসার নিঃশ্বাস ভারী হয়ে আসছে, আফসানা কথায় ভেতর টা কেঁপে উঠছে তার।
“মামী আমি তোমাকে শেষ বারের মতো বলছি।আর কখনও আমাকে এসব বাজে কথা বলবে না।”

আফসানা পাটোয়ারী উৎসার দিকে তে’ড়ে আসে।সেই মূহূর্তে নিকি চলে এলো।
“মা স্টপ ইট,কী করছো তুমি?”

নিকি কে দেখে থেমে গেল আফসানা পাটোয়ারী।
“উৎসা তুই এদিকে আয়।”

নিকি উৎসা কে নিয়ে যেতে লাগল, আফসানা চেঁচিয়ে উঠলো।
“আর কত দিন বাঁচাবি তুই আর তোর ভাই ওকে?”

নিকি ফোঁস করে শ্বাস টেনে বলে।
“যত দিন তুমি এমন করবে, ঠিক ততদিন আমরা ওকে বাঁচাবো।”

আফসানা পাটোয়ারী দাঁতে দাঁত চেপে স’হ্য করছে।

উৎসার ভাবনার মাঝে নিকি হাঁক ছেড়ে বলে।
“উৎসা বনু সবাই কে চা গুলো দিয়ে দে।”

উৎসা ব্যস্ত হাতে চায়ের কাপ গুলো নিয়ে রান্না ঘর থেকে বের হয়।
এদিকে ঐশ্বর্য ঘুম থেকে উঠে ডিরেক্ট ড্রয়িং সোফায় এসে বসলো। ইতিমধ্যে বাকিরা উপস্থিত ছিলো ওখানে, শুধু আফসানা পাটোয়ারী আর শহীদ বাদে।
“রিক ব্রো ঘুম কেমন হলো?”

জিসান আর কেয়া শব্দ করে হেসে উঠলো, ঐশ্বর্য বেশ ভালোই বুঝতে পারছে জিসান তাকে ঠিক কী বোঝাতে চাইছে?তবে ঐশ্বর্য কিছুই বললো না, হাত দিয়ে চুল গুলো ব্রাশ করতে লাগলো।চোখ ভর্তি এখনও ঘুম,তবে তার এখন ঘুমালে চলবে না।
ড্রয়িং রুমে এলো উৎসা,হাতে তার চায়ের ট্রে।চোখ গেলো সোফার দিকে, ঐশ্বর্য কে দেখে পিলে চমকে উঠে তার।
চোখাচোখি হয় দু’জনের,উৎসা তৎক্ষণাৎ দৃষ্টি সরিয়ে নেয়।রাতের কথা মনে পড়তেই সর্বাঙ্গ কেঁপে উঠল তার।ভাবতেই অবাক লাগছে,এই লোকটা সারা রাত বকবক করেছে। একটুও থামেনি! আশ্চর্য একটা মানুষ, এখন দিব্যি আয়েশ করে ঘুম থেকে উঠেছে।
উৎসা এগিয়ে গিয়ে সবার হাতে চায়ের কাপ তুলে দিলো।নিকি বলে।
“কী রে ভাইয়ের কফি আনিস নি?”

উৎসা এক পলক ঐশ্বর্য কে দেখে বললো।
“আমি ভেবেছিলাম হয়তো ঘুম থেকে উঠেনি। এক্ষুনি নিয়ে আসছি।”

উৎসা দ্রুত পায়ে রান্নাঘরে গেল, এইদিকে ঐশ্বর্য উঠে আবারও দুতলার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।

কিচেন ঘরে গেল নিকি, রুদ্র,কেয়া , জিসান।
উৎসা সবাই কে এক সঙ্গে দেখা ভ্রু কুঁচকে নেয়।
“কী হয়েছে? সবাই এক সঙ্গে কিচেনে কী করছো?

নিকি গলা খাঁ’কা’রি দেয়।
“উঁহু উহু, শুনলাম কেউ না কি কারো জন্য একে বারে জার্মানি থেকে ছুটে এসেছে! আচ্ছা ব্যাপার টা কি?”

উৎসা অস্বস্তিতে পড়ে গেল,কী বলবে বুঝতে! আমতা আমতা করে বলল।
“ককই?কী সব বলছো আপু?”

নিকি বুকে হাত গুজে দাঁড়ালো, রুদ্র ভ্রুকুটি করে বলে।
“আচ্ছা তাহলে তুই এভাবে বলবি না তাই তো!”

উৎসা পিটপিট করে তাকালো, রুদ্র কেয়ার দিকে তাকালো। কেয়া বড়সড় টা’স্কি খেলো, এখন কী তাকে চেপে ধরবে নাকি?
“হোয়াট হ্যাপেনিং গাইজ? তোমরা আমাকে ওভাবে কেন দেখছো?”

রুদ্র সুঁ’চালো দৃষ্টিতে ফেলে বলে।
“এই যে ফ্লা’র্টিং বা’জ তাড়াতাড়ি বলো তো ব্যাপারটা কী?”

রুদ্রর কথায় থতমত খেয়ে গেল কেয়া।
“আমি সত্যি জানি না।”

নিকি তুড়ি মে’রে জিসান কে কাঠ কাঠ কন্ঠে বলে।
“এই যে ইংরেজ সাহেব বলেন তো কাহিনী টা কী?”

জিসান কিছুই বললো না,সে যেনো পণ করেছে একটা কথাও বলবে না। রুদ্র কেয়ার দিকে দু কদম এগিয়ে যেতেই কেয়া পিছিয়ে গেল। ভয়ে হাত-পা কাঁপছে, রুদ্র মনে হচ্ছে এক্ষুনি তাকে মে’রে দেবে।
“ওদের বিয়ে হয়ে গেছে,গড প্রমিজ এর বেশি আমি কিছু জানি না।”

রুদ্র থমকে গেল, এদিকে কিচেনে মিহি প্রবেশ করছিল। কিন্তু বিয়ের কথা শুনে চক্ষু চ’ড়কগাছ।
“কার বিয়ে হয়েছে?”

সবাই দরজার দিকে তাকালো,উৎসা শুকনো ঢুক গিললো।মিহি ভেতরে প্রবেশ করে, কেয়ার মুখের দিকে তাকায়।
“কী হচ্ছে এখানে?আর কেয়া কার বিয়ে হয়েছে?”

কেয়া কাচুমাচু করে বললো।
“এক্সুয়েলি….

“আমি বলছি।”

উৎসা মাঝখান থেকে বলে উঠে। সবাই উৎসার মুখ থেকে শোনার জন্য তাকিয়ে আছে।
উৎসা একে একে সব কিছু খুলে বললো সবাই কে। ঐশ্বর্য আর উৎসার বিয়ের কথা শুনে, সবাই রিতিমত নির্বাক।
কারো মুখেই কোনো কথা নেই, আচমকা নিকি চেঁচিয়ে উঠলো।
“ও মাই গড সত্যি ভাইয়ের সঙ্গে তোর বিয়ে হয়েছে? ইয়ে অ্যাম সো হ্যাপি।”

মিহি কিছুটা ভাবনায় পড়ে গেল। ঐশ্বর্যের সম্পর্কে উৎসা যতটুকু বলেছে তাতে একটু ভয়ে আছে মিহি। কোথাও ঐশ্বর্য উৎসা কে ছেড়ে দেবে না তো!
“আপু প্লিজ তোমরা কেউ এখন বিয়ে নিয়ে আলোচনা করো না।”

রুদ্র আশ্চর্য হয়ে বললো।
“কেনো বোন তুই আর ভাই বিয়ে করেছিস এটা তো ভালো কথা।এটা লুকানোর কী আছে?”

উৎসা মলিন মুখে আওড়ালো।
“ওইটা ঐশ্বর্য ভাইয়ের সমস্যা।কে জানে কী করছে? অদ্ভুত!”

জিসান কেয়া খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো, জিসান বললো।
“তোমরা চলো আমি সবাই কে বলছি কেন লুকাচ্ছে মিস বাংলাদেশী?”

সবাই জিসানের সঙ্গে বাইরে গেলো।
____________________
প্রায় দুপুর দেড়টার কাছাকাছি, বেলকনিতে দাঁড়িয়ে ফোনে কথা বলছে ঐশ্বর্য। মিস্টার রাজেশ চৌধুরী কল করেছে তাকে।
“হোয়াট আর ইউ ডোয়িং ঐশ্বর্য? তুমি বাংলাদেশ গেছো? তাও দুবার!আনটিল ইউ টেল মি!”

“উফ্ কাম ডাউন আঙ্কেল ,হোয়াই আর ইউ প্যানিকিং সো মাচ?”

মিস্টার রাজেশ চৌধুরী হতাশ হলেন।
“ঐশ্বর্য তুমি জানো তো ওই মহিলা ওখানেই আছে! সো হাউ ক্যান ইউ গো?”

ঐশ্বর্য বাঁকা হাসলো।
“প্রবলেম নেই আঙ্কেল।ওই মহিলা কে এবার আমি ঠিক করেই যাবো।”

রাজেশ চৌধুরী ঐশ্বর্য কে নিয়ে টেনশনে পড়ে গেলেন। ছেলেটা তার বোনের এক মাত্র ছেলে, সেই তো দায়িত্ব পালন করছে।যদি ঐশ্বর্যের কিছু হয় তাহলে সে সত্যি কষ্ট পাবে।
ঐশ্বর্য আরো কিছুক্ষণ মিস্টার রাজেশের সঙ্গে কথা বললো। অন্তত বুঝতে চাইলো সে সেইফ আছে।

“আপনাকে খেতে ডাকছে।”

রুমে প্রবেশ করে ঐশ্বর্য কে বেলকনিতে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে, মিনমিনে গলায় বলল উৎসা।
ঐশ্বর্য ঘাড় বাঁ’কিয়ে তাকালো,উৎসা কে মাথা থেকে পা পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করে। আচমকা ঠোঁট কা’ম’ড়ে হাসলো। হাসির কারণ বোধগম্য হলো না উৎসার।
“আপনি হাসছেন কেন?”

ঐশ্বর্য বুকে হাত গুজে বলে।
“তোমাকে দেখে।”

উৎসা থতমত খেয়ে গেল। আমাকে দেখে!
উৎসা নিজের ঘাড় গাল, হাত এসব দেখতে লাগল। কোথাও কোনো সমস্যা হয়েছে নাকি?
উৎসা কপাল কুঁচকে নেয়।
“কী আ’বোলতাবোল বকছেন? মাথা কী পুরোই খারাপ হয়ে গেছে?”

ঐশ্বর্য সেকেন্ডের মতো ফোঁস করে শ্বাস টেনে নেয়।উৎসার কাছাকাছি গিয়ে মুখে লেগে থাকা ময়দা মুছে দেয়।উৎসা ঐশ্বর্যের কান্ড কারখানা কিছুই বুঝতে পারছে না।
“ডান।”

উৎসা নিজের গালে হাত বুলানো, কিছুক্ষণ আগেই রুটি বেলে শেষ করেছে।তাই হয়তো কিছুটা ময়দা লেগে গিয়েছে।

উৎসা ধরা গলায় বলল।
“থ্যাংকস।”

ঐশ্বর্য ঠোঁট টিপে হাসলো।
“রেড রোজ কে কিন্তু হলুদ রঙে একদম মানায় না। লালেই বেশ লাগে।”

উৎসা মৃদু কেঁপে উঠলো।কপাল কুঁচকে নেয়।
“সরুন তো!ভালোবাসতে তো পারেন না সবসময় আজেবাজে কথা বলতেই পারে।”

উৎসা রাগ নিয়ে বেরিয়ে গেল। ঐশ্বর্য অস্থির হয়ে উঠে।
“লাভ,আদেও কি কিছু আছে?কই ভালোবাসা যদি থাকতো তাহলে মিস্টার শহীদ তার মা কে হার্ট করতে পারতো না।”

দীর্ঘ শ্বাস ফেললো ঐশ্বর্য।যে সত্যি কনফিউজড,রেড রোজ কে কী সে লাভ করে?

দুপুরে খাওয়া দাওয়া শেষে কেয়া সবাই কে নিয়ে উৎসাদের বাগানে গেলো। অনেক রকম গাছ আছে, বিশেষ করে ফুল গাছ। উৎসা আর সাবিনা পাটোয়ারী মিলে বেশিরভাগ ফুল গাছ লাগিয়েছেন। এখন সাবিনা পাটোয়ারী অসুস্থ হওয়ার পর থেকে উৎসা গাছ গুলোর যত্ন নেয়।
ঐশ্বর্য কানে ইয়ারফোন লাগিয়ে গান শুনছে।কেয়া বাগানবিলাস গাছের দিকে গেলো।
“ওয়াও,সো বিউটিফুল।”

কেয়া ফোন বের করে কয়েকটা ছবি তুলে নেয়। তৎক্ষণাৎ রুদ্র ওর কাছে চলে এলো।
“হেই ফ্লার্টিং বা’জ।”

কেয়া পুরুষালী কন্ঠস্বর শুনে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে। রুদ্র তাকে কী সুন্দর অ’পমান করে দিলো।
“দেখুন মিস্টার হ্যান্ডসাম ভালো হয়ে যান। আমাকে এভাবে ইন্সাল্ট করতে পারেন না।”

রুদ্র ঠোঁট টিপে হাসলো।
“ফ্লার্টিং বা’জ কে ফ্লার্টিং বা’জ বললেও দোষ?”

কেয়া এক প্রকার তে’তে উঠল।
“এই যে শুনুন আমি আপনার সিনিয়র। সম্মান দিয়ে কথা বলুন।”

রুদ্র আগের ন্যায় হাসে।
“ও হ্যাঁ, আমি শুনলাম তুমি আমার এক বছরের সিনিয়র। ইশ্ সো স্যাড।”

কেয়া মুখ বাঁ’কালো। রুদ্র কেয়া কে বিরক্ত করে বেশ মজা পায়।

“লিসেন নিকি, প্লিজ রাগ করো না।”

জিসান অনেক সময় ধরে চেষ্টা করছে নিকির সঙ্গে কথা বলার। কিন্তু নিকি পাত্তাই দিচ্ছে না।সে মূলতঃ রেগে আছে ওর উপর, অবশ্য রাগ করাটা জায়েজ আছে।পর পর দু দিন নিকির ফোন আর না ম্যা’সেজ কোনোটার রি’প্লাই করেনি জিসান।
“যান তো,একদম ডিস্টার্ব করবেন না।”

নিকি নাক মুখ কুঁচকে কথাটা বললো। বেচারা জিসান অসহায় ফেইস করে তাকালো। নিকি পাত্তা না দিয়ে হনহনিয়ে বাগান থেকে বেরিয়ে গেলো।
বেচারা জিসান ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইল।

ফুল গাছ গুলোতে পানি দিয়ে দেয় উৎসা। তৎক্ষণাৎ লক্ষ্য করে ঐশ্বর্য ওর দিকেই এগিয়ে আসছে। উৎসা ধপসা করে গাছের পিছনে লুকিয়ে গেল।যত যাই হোক এই লোকটার সামনে একদম যাবে না সে।
“হ্যালো বেইবি।”

পিছন থেকে আচমকা ঐশ্বর্যের কন্ঠস্বর শুনে নিজের ভারসাম্য হারিয়ে কাঁদায় মাখো মাখো হয়ে গেল।
“ইয়াক ইয়াক।”

ঐশ্বর্য উৎসার এমনতর অবস্থা দেখে, শব্দ করে হেসে উঠলো।
“রেড রোজ ইউ আর লুকিং সো ফানি।”

উৎসা ফুঁসে উঠলো।

চলবে………………।✨