রেড রোজ পর্ব-৪০ এবং শেষ পর্ব

0
2

#রেড_রোজ
পার্ট [৪০]
#লেখিকা_ফারহানা_নিঝুম
(কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ)
(কঠোরভাবে প্রাপ্ত বয়স্ক এবং মুক্তমনাদের জন্য উন্মু’ক্ত)

“বাবা আমার, বোনটাও তাহলে আমার। সেই হিসেবে ও যাকেই পছন্দ করবে তার সঙ্গে বিয়ে। বুঝলেন?”

আজ দুপুরে পাত্র পক্ষ দেখতে এসেছে নিকি কে, কিন্তু আচমকা ঐশ্বর্য,উৎসা, জিসান এবং কেয়া বাড়িতে প্রবেশ করে। ওদের দেখে পিলে চমকে উঠে আফসানা পাটোয়ারীর। শহীদ নির্নিমেষ তাকিয়ে আছে।
নিকি বসা থেকে পাত্রের সামনে দিয়েই দৌড়ে গিয়ে ঐশ্বর্য কে জড়িয়ে ধরে।

“ভাইয়া।”

ঐশ্বর্য নিকির মাথায় হাত রাখলো, অস্ফুট স্বরে বলে উঠে নিকি।

“ভাইয়া দেখো না মা জোর করে আমাকে…

“নিকি,, এদিকে এসো তুমি!”

আফসানা গ’র্জে উঠে। ঐশ্বর্য গিয়ে বেশ আরাম করে সোফায় বসলো, পাত্র কে গাঢ় চোখে দেখে নেয়। কেমন অদ্ভুত! কোনো রকম ম্যানলি ভাব নেই।

“আপনারা যদি এখন চলে যান তাহলে আমার জন্য ভালো হবে, এক্সুয়েলি আমার কিছু কথা আছে মিসেস মহিলার সঙ্গে।”

পাত্র পক্ষ আ’হা’ম্মক বনে গেল, আফসানা পাটোয়ারী তে ড়ে এলো ঐশ্বর্যের দিকে।

“ঐশ্বর্য এসব কী রকম বেয়াদবি?”

ঐশ্বর্য ক্রূর হাসলো।

“বেয়াদবির কী দেখেছেন?এই যে আপনাদের বলছি কানে কথা যায়নি?আই সেইড গেট আউট।”

শেষের বাক্য কিছুটা কি’ড়’মিড় করে বলল ঐশ্বর্য।লোক গুলো আর অপেক্ষা করলো না, দ্রুত স্থান ত্যাগ করে।

“তুমি কী নিজের ছেলে কে কিছু বলবে? আমার মেয়ের বিয়েতে ও কেন নাক গলাচ্ছে?”

শহীদ দীর্ঘ শ্বাস ফেললো।

“প্লিজ আফসানা এখন অন্তত থামো? তোমার এসব আর নেওয়া যাচ্ছে না।”

“মিসেস মহিলা আপনার লজ্জা বলতে কী আদেও কিছু আছে?ছিহ্ শেইম অন ইউ।”

আফসানা তাচ্ছিল্য করে বলে।

“হাহ্ লজ্জা এটা কী তোমার আছে?”

ঐশ্বর্য বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো।

“আপনার মতো চিপ মহিলা আমি দু’টো দেখেনি।”

শহীদ হতাশ স্বরে বললেন।

“আর কত? এবার তো কিছুটা লজ্জা করো! তুমি আজ পর্যন্ত যা করেছো তাতে কী একটুও অপরাধ বোধ আছে?”

আফসানা চিৎকার করে বলে।

“না নেই,যা করেছি বেশ করেছি।আজ পর্যন্ত যা যা করেছি, তোমার আর মনিকার সম্পর্ক ভাঙতে সব বেশ করেছি।”

ঐশ্বর্য ক্রূর হাসলো।

“এক্সুয়েলি এত দিন আমি মিস্টার শহীদ কে ভুল ভেবেছি,আসল দোষী তো আপনি যে কী প্রেগন্যান্সির মিথ্যে ড্রা’মা করে ওনাকে বিয়ে করেছেন।”

রুদ্র আর নিকি স্তম্ভ হয়ে গেল,এসব কী শুনেছে নিজের মায়ের সম্পর্কে?

“মা এসব কী বলছে ভাইয়া? তুমি মিথ্যে……

“হ্যা হ্যা আমি মিথ্যে প্রেগন্যান্সির নাটক করে শহীদ কে বিয়ে করেছি। কারণ আমার জ্ব’লছে, আমার বয়ফ্রেন্ড কে কেন অন্য কেউ নিবে, যা করেছি বেশ করেছি।”

নিকি নিশ্চুপ, নিজের কান কে বিশ্বাস করতে পারছে না। শহীদ তাচ্ছিল্যের হাসি টেনে বলে।

“আদতেও তুমি না না পারলে ভালো স্ত্রী হতে আর না ভালো মা। এই দেখো নিজের সন্তানের দিকে তাকিয়ে,ওরা তোমাকে এখন থেকে ঘৃ’ণা করে।”

আফসানা বিরক্ত প্রকাশ করলো। ঐশ্বর্য আফসানার সামনাসামনি দাঁড়ায়।

“আপনার মতো মানুষ আমার ভাই-বোনদের আশেপাশে থাকবে তা আমি চাই না। জানেন এত দিন আমি এখানে কেন আসতাম?কেন সম্পর্ক রেখেছি সবার সঙ্গে? আমার মাম্মা চেয়েছিল যাতে আমি নিজের বাবার কাছাকাছি,ভাই বোনের কাছে থাকি। ইভেন উনি এটাও চেয়েছিলেন আপনার সঙ্গে সম্পর্কটা থাকুক।আহ্ মাম্মা আদেও জানতো না আপনি কতটা নি’র্দয়। ”

আফসানা পাটোয়ারী তাচ্ছিল্য করলেন।

“তোমার মা আসলেই বোকা ছিল তাই বোকামি করেছে, কিন্তু আমি তো বোকা নই!”

ঐশ্বর্য এবার নিজেকে পরিবর্তন করে নেয়, অত্যাধিক রাগ নিয়ে বলে উঠল।

“আমিও বোকা নই, এত দিন আপনাকে এই বাড়িতে রেখে সত্যি খুব বড় ভুল করেছি
কিন্তু কিন্তু এখন আর তা হবে না,গেট আউট।”

ঐশ্বর্যের আচমকা চিৎকার শুনে চমকে উঠে উপস্থিত সবাই। তবে আফসানার এমনই হওয়া উচিত, যেখানে স্বামী সন্তান তার উপর থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। আফসানা বলে উঠে।

“এটা আমার বাড়ি, একদম যাবো না।তোমরা সবাই বেরিয়ে যাও।”

ঐশ্বর্য আফসানার হাত শক্ত করে চেপে টানতে টানতে সদর দরজার বাইরে ঠেলে দিল।

“এই বাড়ি আমার, একবার যখন এই ঐশ্বর্য রিক চৌধুরী বলে দিয়েছে তাহলে আর কে কী করবে করুক? কোন আদালত আইন দিয়ে আপনি বাড়িতে ঢুকতে পারেন আমিও দেখবো।”

আফসানা দাঁতে দাঁত চিবিয়ে বলে।

“ঐশ্বর্য আমি কিন্তু….

“গেট আউট।”

ঐশ্বর্য মুখের উপর সদর দরজা বন্ধ করে দেয়।নিকি হুঁ হুঁ করে কেঁদে উঠলো,বুক ফে টে যাচ্ছে।এই মানুষটা তার মা?অথচ কারো কথাই ভাবে না, এত এত পাপ করে বেড়িয়েছেন।

ঐশ্বর্য নিজের রাগ সামলাতে না পেরে ড্রয়িং রুমে থাকা সব কিছু একে একে ছু ড়ে ফেলে দিল। উপস্থিত সবাই কেঁপে উঠল, জিসান ঐশ্বর্য কে থামাতেই পারছে না।

“রিক স্টপ কী করছিস এসব?”

ঐশ্বর্য শুনলো না, ফ্লাওয়ার বাস ফেলে দেয়।

“আমি ওই মহিলা কে ঘৃ’ণা করি।”

কেউই পারছে না ঐশ্বর্য কে থামাতে,উৎসা আচমকা ঐশ্বর্য কে জড়িয়ে ধরে।

“শান্ত হন না প্লিজ!”

ঐশ্বর্য থামলো,চমকে উঠে।বুক কাঁপছে তার,হাত পা পুরোপুরি অসাড় হয়ে আসছে।

“আমার কষ্টের কারণ ওই মহিলা, আমার ফ্যামিলি আজ নেই। আমার মাম্মা আজ বাবার সঙ্গে নেই ওনার জন্য। আমি ঘৃ’ণা করি খুব।”

উৎসা ঐশ্বর্যের পিঠে আলতো করে হাত বুলিয়ে দেয়, লোকটা খুব কষ্টে আছে অথচ কাউকে বুঝতে দেয় না!
_________________
প্রায় আজ তিন মাস কে’টে গিয়েছে।আজ এ বাড়িতে উৎসব আছে, রিসেপশন পার্টি।কেয়া এবং রুদ্রর বিয়ে শুধু ওরা না আরো একটি জুটি জিসান ও নিকি।
আনন্দ উল্লাসে পুরো বাড়ি মে’তে আছে, অতিথিদের আসা যাওয়া লেগেই চলেছে।

“ফাইনালি ভাইয়া তোমাকে বিয়ে করেই নিল তাই না কেয়া?”

নিকির কথা শুনে খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো উৎসা,কেয়া মৃদু হাসলো। রুদ্র বেশ ভাব নিয়ে বললো।

“সিনিয়র বিয়ে করা এতটা সহজ নয়,যে করেছে সে জিতেছে।”

কেয়া বেজায় রেগে গেল রুদ্রর উপর।দুম করে পিঠে বসিয়ে দিল।

“একদম বাজে কথা বলবেন না।”

রুদ্র চোখ টিপলো।নিকি বেশ ভাব নিয়ে বললো।

“এই যে জিসান আপনি শুকরিয়া আদায় করুন আমার মতো হিরে পেয়েছেন!”

জিসান ভাবলেশহীন মুখে বলে।

“অ্যাংরি বার্ড বিয়ে করে কপাল গেল।”

সবাই খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো,নিকি চোখ গরম করে তাকালো।এত এত কিছুর বিড়ে উৎসা আশেপাশে তাকাচ্ছে। তার চোখ দুটো ঐশ্বর্য কে খুঁজছে,নিকি খোঁ’চা মে’রে বলে।

“আহা আমাদের উৎসা রাণী তো ভাইয়া কে খুঁজতে ব্যস্ত।”

উৎসা লাজুক হাসলো।
উৎসা খুশি ঐশ্বর্যের সঙ্গে বেশ ভালো আছে সে।এই তো জার্মানিতে আসা যাওয়া চলে তার, জিসান ঐশ্বর্য, রুদ্র তিনজন মিলে ব্যবসা সামলে নেয়। ইদানিং ঐশ্বর্য আর শহীদ পাশাপাশি বসে অল্প বিস্তর কথা বলে।ছেলের সঙ্গে সহজ হওয়ার চেষ্টা করে শহীদ, আফসানার জন্য ইদানিং মনটা তার খারাপ লাগে। আফসানা পাটোয়ারী সেদিন বেরিয়ে বড়সড় এক্সিডেন্ট করেছেন। এখন তিনি প্যারালাইসিস হয়ে পড়ে আছেন। মাঝে মাঝে সবাই ওনাকে দেখতে যায়, খারাপ লাগে। হয়তো এটাই তার পাপের শাস্তি।

ভাবনার মধ্যে আনমনে দুতলার দিকে তাকাল উৎসা। হালকা বেগুনী মধ্যে ট্রি শার্ট এবং ম্যাচিং করা ট্রাউজার পড়ে রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছে।
চোখ দিয়ে ইশারা করছে উপরে আসছে,উৎসা লজ্জায় মিইয়ে যাচ্ছে।এই লোকটা ভারী অস’ভ্য, সবসময় তাকে জ্বা’লায়।যখন তখন কাছে ডাকে, হিমশিম খায় উৎসা এই পুরুষ কে সামলাতে।
ঐশ্বর্যের প্রচন্ড রাগ হচ্ছে তার ওয়াইফ অথচ তার কাছেই আসতে চায় না! এদিকে দহনের আ’গু’ন জ্ব’লছে বুকে ঐশ্বর্যের। ঐশ্বর্য ছোট ছোট চোখ করে আবদার করছে উপরে আসতে। কিন্তু উৎসা মুখ ঘুরিয়ে নিল, ঐশ্বর্যের রাগ লাগল। পিঙ্কি ফিঙ্গার কা’ম’ড়ে ধরলো সে, অতঃপর চুল গুলো ডান হাত দিয়ে ব্রাশ করে পিছনে ঠেলে দিয়ে বিড়বিড় করে আওড়াল।

“রোজ একবার আয় তারপর কাঁচা চি’বিয়ে খাব গড প্রমিজ।”

ঐশ্বর্য বাঁকা হাসলো।

সব কিছু গুছিয়ে আসতে আসতে রাত ১২.৩৪ বেজে গিয়েছে উৎসার।রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে উঁকি দিল, ঐশ্বর্য কোথায়?চোখ গেল তার ডিভানের উপর আধশোয়া হয়ে বসে আছে ঐশ্বর্য।

“কী হলো এভাবে বসে আছেন যে?”

উৎসা প্রশ্ন করলো তবে উত্তর পেলো না, আচমকা হাতে টান পড়ে। ঐশ্বর্য উৎসা কে কে টেনে কোলে তুলে নেয়।

“মিস ইউ।”

ঐশ্বর্য পরপর দু’টো চুমু খেল উৎসার ঠোঁটে। ঐশ্বর্যের চোখ দুটো অন্য রকম হয়ে আছে, কেমন জানি লাল!

“আপনাকে এমন দেখাচ্ছে কেন?কী হয়েছে আপনার?”

ঐশ্বর্য মিহি হাসলো,উৎসা নিচের দিকে তাকাতেই দেখলো সিরিঞ্জ ফেলা। উৎসা দীর্ঘ শ্বাস ফেললো, লোকটা আবারও পাগলামি করছে।

“এত পাগল কেন আপনি? সবসময় পাগলামি করেন!”

ঐশ্বর্য উৎসার ঠোঁটে কা’ম’ড় বসায়, মৃদু কঁ’কিয়ে উঠলো উৎসা।

“তুমি আশেপাশে থাকলেই ম্যাড হয়ে যাই, সুইটহার্ট ইউ নো না আই কান্ট কন্ট্রোল মাই সেল্ফ।”

উৎসা হাঁসফাঁস করছে, ঐশ্বর্যের লাগামহীন কথা এবং বেসামাল স্পর্শে নাজেহাল অবস্থা।

“ইস্ ছাড়ুন।”

উঁহু।”

ঐশ্বর্য কবে কার কথা শুনেছে?আদেও কী কখনও শুনে?
উৎসা কে নিয়ে বেডে চলে যায়, আলতো করে শুয়ে ওষ্ঠাদয় আঁ’ক’ড়ে ধরে। ঐশ্বর্যের উ’ন্ম’ত্ত কাজ গুলো সত্তা নাড়িয়ে দেয় উৎসার।

“আপনাকে খুব ভালোবাসি।”

উৎসার মিনমিনে গলায় বলা কথাটা বেশ কানে লাগলো ঐশ্বর্যের।মুখ তুলে তাকায় উৎসার দিকে।

“আই লাভ ইউ ইনফিনিটি সুইটহার্ট।”

উৎসা ঝাপটে জড়িয়ে ধরে ঐশ্বর্য কে, মূহুর্তে এলোমেলো হয়ে যায় দুজনেই। ঐশ্বর্য নিজের আদুরে স্পর্শে কাঁদিয়ে ছাড়ে উৎসা কে।

রাতের শেষ প্রহর, প্রিয় পুরুষের বুকে ভিজে লেপ্টে আছে উৎসা।হ্যা দুজনেই জানালার কাছে বসে আছে, ঐশ্বর্য খুব যত্ন করে উৎসা কে বুকে আগলে রেখেছে। কপালে পর পর চুমু খায়,এই মেয়ে কে কষ্ট দেওয়া যাবে না।ওর মাঝে ঐশ্বর্যের সব শান্তি লুকিয়ে আছে, উৎসার নিষ্পাপ মুখশ্রী ঐশ্বর্য কে ভালোবাসতে বারংবার বাধ্য করে।
কথা গুলো ভাবনার মাঝেই ঐশ্বর্যের হাতের বাঁধন দৃঢ় হয়।উৎসাও জড়িয়ে আছে ঐশ্বর্য কে,বুক বরাবর চুমু এঁকে দেয়।
“আহ্ আপনি কি কখনো ভালো হবেন না?”

“উঁহু কখনো না। এক্সুয়েলি রোজ ইউ নো হোয়াট আমি না খারাপ থাকতে চাই। খারাপ থাকলে যদি তোমার মতো সুন্দরী পেয়ে থাকি তাহলে সামনে আরো খারাপ হবো যাতে তোমার সাথে বাকিটা জীবন এভাবে পিচফুলি থাকা যায়।”

উৎসা ফিক করে হেসে উঠলো।
“ক্যারেক্টারলেস মানুষ।”
“হুঁ।”
“আমি খুব খারাপ।”
“আমি খারাপ বাট আমার হার্ট তো ভালো তাই না?”
উৎসা বুঝে গেল ঐশ্বর্য তাকে বলছে , ঐশ্বর্য ফের উৎসার চিবুকে ওষ্ঠা ছুঁয়ে দেয়।

❝ভালোবাসা এমন অনুভূতি যা একজন শুদ্ধ পুরুষ কে যেমন অশুদ্ধ বানাতে পারে! ঠিক তেমনি অশুদ্ধ পুরুষ কে শুদ্ধ পুরুষ বানাতে পারে। শুধু সঠিক মানুষটির অপেক্ষা।❞

❝ সমাপ্ত❞