রোদরঞ্জন পর্ব-৪+৫

0
183

#রোদরঞ্জন
#পর্ব_৪
#আসরিফা_মেহনাজ_চিত্রা
.
জেহফিল চাদর হাতে ঘ্রাণ নিয়েই যাচ্ছে গত দুই ঘন্টা ধরে। এই চাদরে ইনানের ঘ্রাণ লেগে আছে..
তারপর নেশাগ্রস্তের ন্যায় বালিশটা হাতে নিলো যেটায় ইনান মাথা রেখেছিল। গভীরভাবে টেনে নিলো সকল ঘ্রাণ। কী মিষ্টি.. কী স্নিগ্ধ ঘ্রাণ!! ইনান স্বশরীরে উপস্থিত না থাকলেও সে যেন তার শরীরের ঘ্রাণ ছেড়ে গেছে…জেহফিলের কাছে। মিষ্টি সুবাস ভেসে বেড়াচ্ছে পুরো রুমটায়। জেহফিল বালিশটা আর চাদরটা ধরে মুখের সামনে আনে। অনবরত চুমু খেতে থাকে যেখানে যেখানে ইনানের স্পর্শ লেগেছিল। আর ভাবে, ইনানের কয়েক ঘন্টার উপস্থিতিতে রুমটা নেশাতুর ঘ্রাণে মাতোয়ারা চারিদিক। আর যখন ইনান চিরস্থায়ীভাবে এই রুমটায় থাকবে তখন কেমন হবে? স্বর্গ হয়ে যাবে রুমটা!! সুবাসিত হবে তার ঘর..তার মন..

জেহফিলের চোখ চকচক করে উঠে। তার বাটারফ্লাই আসবে.. তার এই নরক জীবনকে স্বর্গে পরিণত করবে.. তার কাছাকাছি থাকবে… সবসময়.. সারাজীবন…উফফ!! আর ভাবতে পারছে না জেহফিল! কেমন‌ শীতল বাতাসে তার ভেতরটা তোলপাড় হয়ে যাচ্ছে। অদৃশ্য কিন্তু তীব্র অনুভূতিতে প্রগাঢ় হয়ে উঠছে তার হৃদয়। ইনানকে কাছে পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা সেই সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়েই চলছে। চাদর আর বালিশ নিজের বুকে শক্ত করে চেপে ধরে সে, যেন ইনানকে জড়িয়ে ধরেছে।

‘বাটারফ্লাই..আমার বাটারফ্লাই..ইনান…’ পাগলের মতো বিড়বিড় করে চলেছে জেহফিল, যেন প্রয়োজনীয় কোনো মন্ত্র পাঠ করছে, যেটা পড়া বন্ধ করলেই তার জীবন শেষ।

হুট করে জেহফিল চোখ খুলল, যেন তার খুব গুরুত্বপূর্ণ কথা স্মরণে এসেছে। সে বালিশটা শক্ত করে এক হাতে চেপে ধরে রুমের বাহিরে আসলো। ব্যস্ত চোখে চারিদিকে নজর বুলালো। এই ঘরটাতে চারটা বেডরুম, ড্রয়িং, ডাইনিং রুম আর কিচেন। ঘরের সবকিছু এলোমেলো। জায়গামতো কোনো কিছুই নেই। কবে সে ঘরের যত্ন নিয়েছে? মনে পড়ে না জেহফিলের। হয়তো কোনোদিনই না। তার বাটারফ্লাই যখন আসবে তখন কী সে নাক সিঁটকাবে না? জেহফিলকে বকা দিবে? নাহ! সে তার বাটারফ্লাইয়ের কোনো কষ্ট হতে দেবে না। পরীর জায়গা তো স্বর্গে, তাহলে ইনান কীভাবে এই নরকে থাকবে! সব গুছাতে হবে, সব। ইনানের যাতে কোনো কষ্ট না হয় তার সব ব্যবস্থা করতে হবে। কিচেন কাউন্টার হতে জুতার ক্যাবিনেট সব সাজাতে হবে।

জেহফিল কাজে লেগে পড়ল। যে কিনা কোনোদিন ড্রয়িং রুমের লাইট পর্যন্তও জ্বালায়নি সে আজ সোফার নিচেও পরিস্কার করা বাদ দিলো না। ইনান যদি এমন অগছালো ঘর দেখে ক্ষুব্ধ হয়? যদি রেগে যায় তার উপর? না, তা হতে দিবে না সে।

জেহফিলের চুল উস্কখুস্ক, ধূসর মণিজোড়ায় মাদকতা, ভারী নিঃশ্বাসের সঙ্গে একাধারে একটাই নাম জপ করছে আর ঘর গুছাচ্ছে। এ এক অন্য জেহফিল যেন.. যার দুনিয়া সম্পর্কে কোনো ধ্যানজ্ঞান নেই, যার ধ্যান ধারণা জুড়ে আছে ইনান..ইনান এবং শুধুই ইনান।

.

.

শরৎ মাথা নিচু করে চুপচাপ বসে আছে। এইমাত্র তার গালে সপাটে চড় পড়েছে। সামনেই তার বড় বোন রুহি কোমড়ে হাত দিয়ে ফুঁসছে।

চাপা চিৎকার করে উঠে রুহি, ‘তোর এসব কাণ্ড যদি আম্মু আব্বু শুনে তাহলে কী হবে ভাবতে পারছিস? ঘাড় ধাক্কা দিয়ে ঘর থেকে বের করে দিবে। বাড়ির সম্মান সব ধুলোয় মিশবে যদি এসব জানাজানি হয়।’

শরৎও উল্টো চেঁচিয়ে উঠে, ‘তুই যদি কাউকে না বলিস তাহলে কার বাপের সাধ্য আছে এসব জানা..’

শরৎ এর কথা শেষ করতে দিলো না রুহি, তার আগেই আরেকটা চড় পড়ল শরৎ এর গালে।

‘একদম মুখে মুখে তর্ক করবি না বেয়াদব! বাজে কাণ্ড ঘটিয়ে আবার বড় বড় কথা! ভার্সিটি উঠেছ বলেই কি ছাড় পেয়ে গেছ নাকি? ডানা গজিয়েছে তাই না? কেমন ফ্রেন্ডদের সাথে মিশছো আমার খুব ভালো করেই জানা আছে। গত এক সপ্তাহ ধরে এইজন্যই বাড়ি ফিরোনি তাই না? ফ্রেন্ডের বাসার নাম করে এসব করে বেরাচ্ছ? আব্বুকে বলে যদি পকেটমানি কেটে ফেলি তাহলেই একটা শিক্ষা হবে তোর, জানোয়া’র!’ ক্রোধান্বিত গলায় বলল রুহি।

এবার একটু দমলো শরৎ, স্তিমিত গলায় বলল, ‘আব্বুকেকে কিছুই বলবে না তুমি আপু। প্লিজ!’

‘তাহলে এসব বাজে আড্ডা ছাড়ো। মদ গাঁ’জা হাতে পুলিশের কাছে ধরা খেয়ে মার খেয়েছো, এটা যদি আব্বু জানে তোমাকে আস্ত রাখবে বলে ভেবেছ?’ দাঁতে দাঁত চেপে বলল রুহি।

‘আস্তে আপু আস্তে, প্লিজ দোহাই লাগে, এত চিৎকার করো না, আম্মু শুনতে পাবে।’ দুহাত জোড় করে অনুরোধ করল শরৎ।

রুহি ফোঁস ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেলে নিজেকে শান্ত রাখার চেষ্টা করল। এক আঙুল তুলে শাসালো ভাইকে, ‘আমি যদি আর কখনোও দেখি তোকে ওসব ছেলেদের সাথে মিশতে, তাহলে মাথায় রাখিস, আমিও রুহি চৌধুরী, তোকে ঠিক পথে আনতে আর ঘরের সম্মান বাঁচাতে যা করার লাগে সবটা করব।’

‘আচ্ছা, আচ্ছা বুঝেছি। এখন তুমি শান্ত হও আপু। আম্মু যদি শুনতে পায়, মে’রে ফেলবে। প্লিজ আপু।’

‘মনে থাকে যেন।’ রুহি হুমকি দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেল।

শরৎ বিরক্ত মুখে গিয়ে দাঁড়ালো আয়নার সামনে। তার কপালে ব্যান্ডেজ, ঠোঁটে কাটা, এক চোখ লাল। তার হ্যান্ডসাম ফেসটার বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে শালার পুলিশ। রাগে হাত মুঠো করে দেয়লে আঘাত করল। তার শরীর কাঁপছে ক্রোধে। এই বয়সে একটু আধটু এসব করেই, তাই বলে মা’রা লাগবে!! তিনদিন হয়ে গেছে তাও তার মা’রের দাগ যায়নি! ছাড়বে না সে কাউকে!

কলিংবেলের শব্দ পেয়ে রুহি যায় দরজা খুলতে। দরজা খুলতেই দেখে ইনান আর ফারা দাঁড়িয়ে আছে। তারা পরিচয় দিলো শরৎয়ের ফ্রেন্ড হয়। রুহি হাসিমুখে তাদের ভেতরে আসতে বলল।

ইনান রুহিকে দেখেই একটু ধাক্কা খেল প্রথমে‌। এত সুন্দর মেয়ে হয় কীভাবে? কী নিখুঁত স্কিন! না আছে কোনো ব্রণ না আছে কোনো স্পট! চুলগুলো কাঁধ পর্যন্ত ছাঁটা, নিচের অংশ বাদামী রং করা।

ইনান মুগ্ধ হয়ে বিড়বিড় করে বলল, ‘মনে হচ্ছে ভুলে কোনো নায়িকার ঘরে এসে গেছি!’

ফারা ইনানের এমন আজগুবি কথা শুনে তার পেটে কনুই দিয়ে আঘাত করল, ‘আরে ছাগী, উনি নায়িকাই বলতে গেলে, মডেল উনি, টিভিতে অ্যাড দেখোস না?’

ইনানের চোখ কোটর থেকে বেরিয়ে আসার উপক্রম। তাইতো বলে সে, এত চেনা চেনা লাগে তবুও কেন অচেনা! বিস্ময়ে তার হাত মুখের কাছে চলে গেল, ‘ও গড! উনিই কি সেই রুহি চৌধুরী যে রামেনের একটা অ্যাড করেছিল?’

‘হ্যাঁ, এখন গাধীর মতো আচরণ করা বন্ধ কর। এত গলে যাস না, তাহলে তোর দাম কমে যাবে।’

ইনান কাশি দিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়ায়। রুহি তাদের সোফায় বসতে বলে।

‘আমি শরৎয়ের বোন, রুহি। তোমরা নিশ্চয়ই একই ডিপার্টমেন্টের?’

‘জি আপু, আজ আমাদের একটা প্রোগ্রাম ছিল, কিন্তু শরৎ গত এক সপ্তাহ ধরেই ভার্সিটি আসেনি আর না ফোন করে পাওয়া গেছে। তাই ওর খোঁজেই এসেছিলাম।’ স্মিত হেসে জবাব দিলো ইনান।

রুহির নজর বারবার ইনানের দিকেই যাচ্ছিল। খুঁটে খুঁটে দেখছিল সে ইনানকে। ইনানকে সে চিনে, ভালো করেই চিনে।

শরৎ সেই মুহুর্তে রুম থেকে বেরিয়ে আসলো। তার মুখ থমথমে। ফারাদের দেখে সে কেমন নীরসভাবে বলল, ‘তোরা এখানে কেন?’

ইনান আর ফারা দুজনেই শরৎকে দেখে কিছুটা অবাক হয়, ‘তোর কী হয়েছে? মুখে ব্যান্ডেজ কেন?’

শরৎ থতমত খেয়ে বলল, ‘ওই ইশে, হালকা পাতলা অ্যাক্সিডেন্ট করেছিলাম। বাদ দে। তোরা হঠাৎ?’

‘আজকে যে প্রোগ্রাম আছে ভুলে গেছিলি?’

‘ওহ, আমি যাবো না, তোরা যা। ভাল্লাগতেছে না।’ এই বলে শরৎ রুমে ফেরার জন্য পা বাড়াল। তারপর হঠাৎ কী মনে করে থমকে দাঁড়াল। ঘাড় ঘুরিয়ে পেছনে তাকিয়ে বলল, ‘আচ্ছা আসবোনে, বিকেল তিনটায় থাকবো জায়গামতো।’

.

.

ইনান, ফারা, টয়া, মুগ্ধ, শরৎ একজোট হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তাদের হাত সাইকেলের উপরে আর কাঁধে ছোট্ট ব্যাগ, এমন মাঝেমধ্যেই তারা এদিকসেদিক ঘুরতে বেরোয়।‌ তবে আজ তারা সাইকেল নিয়ে যেদিকে দুচোখ যায় সেদিকে ঘুরবে‌। অ্যাডভেঞ্চার বলা চলে এক প্রকার। ইনান কালো টপ আর জিন্স পরে মাথায় হেলমেট চড়িয়ে সাইকেলে বসল।

‘ফাঁকা কোনো রাস্তায় সাইকেল চালালে ভালো হয়।’

শরৎ ঠেস মেরে বলল, ‘ভয় পাস নাকি? পাছে কোনো গাড়ি ঠুয়া মেরে দেয়?’

ইনান চোখ রাঙায়, ‘বাজে বকিস না, ছোটোবেলা থেকেই রাস্তাঘাটে সাইকেল চালানোর অভ্যাস আছে আমার, আমি বলছি কারণ সবাই একসাথে পাশপাশি চালাতে পারবো, ভিডিও করতে সুবিধা হবে।’

ফারা তাড়া দিলো, ‘তোরা ঝগড়া বাদ দে তো। আকাশের অবস্থা ভালো ঠেকছে না।’

সবাই আকাশের দিকে তাকালো। কালো মেঘ ধীরে ধীরে নীল আকাশকে ঢেকে দিচ্ছে।

‘মেঘ কেটে যাবে বোধহয়, প্যারা নিস না।’ ইনান বলল।

মেঘ সরে যাবে এই আশায় সবাই শুরু করল সাইকেল চালানো। চালাতে চালাতে তারা হঠাৎ জঙ্গলে চলে আসলো, লতাপাতা চাকায় পিষ্ট করে একে একে যেতে লাগল অদূরে। বাতাসের ঝাপটায় ইনানের মন পুলকিত হয়, নতুন অভিজ্ঞতায় রোমাঞ্চিত অনুভব করে। প্যাডেলে পা চালিয়ে যত দ্রুত যাওয়া যায় সেই চেষ্টা করতে থাকে সে। পেছনের বন্ধুরা কে কী বলছে কিছুই মাথায় ঢুকে না তার।

ইনান ছাড়া বাকি সবাই এক জায়গায় দাঁড়িয়ে পড়েছে।

‘এই মেয়ে কি কালা হয়ে গেল নাকি, এত করে ডাকছি শুনে না কেন?’ ফারা বিরক্ত গলায় বলল।

‘ও তো অ্যাডভেঞ্চার ফ্রিক, নেইচার দেখেছে এখন তাই মাথাও আউলিয়ে গেছে।’ টয়া বলে।

‘আকাশের অবস্থা একদমই ভালো না। আই ডোন্ট থিংক আমাদের বেশিদূর যাওয়া উচিত হবে। অলরেডি গুড়িঁগুড়িঁ বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে। উই শ্যুড গো ব্যাক।’ ফারা চিন্তিত গলায় বলল।

শরৎ বলে উঠে, ‘তোরা ব্যাক কর। এইখান থেকে মেবি মেইন রাস্তায় যাওয়া যাবে, ওইখানেই বোধহয় ইনান থাকবে। আমি যাচ্ছি ওর কাছে। একা একা যাওয়াটা ওর জন্য রিস্ক।’

মুগ্ধ বলল, ‘যেতে পারবি? নাকি সাথে যাওয়া লাগবে?’

‘নো প্রব, তুই এই দুটো চুন্নিকে নিয়ে চলে যা, আমি আরেক চুন্নিকে নিয়ে আসছি। আর তোরা সোজা তোদের বাসাতেই চলে যা। ওয়েট করা লাগবে না।’

ফারা বলে,’তুই ইনানকে দেখতে পেলে কল দিয়ে জানাস আমাদেরকে। বাড়িতে পৌঁছালেও কল দিস।’

‘আচ্ছা, গেলাম। বাই‌।’

শরৎ সাইকেল টান দিলো ইনানের যাওয়ার পথে। বাকিরা সব ফিরে গেল আকাশের বেগতিক অবস্থা দেখে।

বিকেল পাঁচটা, ঝুম বৃষ্টি পড়তে আরম্ভ করল। হঠাৎ হঠাৎ বিদ্যুৎ চমকে উঠছে। ভেজা মাটির রাস্তায় সাইকেল চালাতে বেশ বেগ পোহাতে হলো ইনানের।‌সাইকেল আরেক হাতে ধরে ছাতা মাথায় সাবধানে হাঁটতে লাগল। শরৎ একটু আগে ফোন করেছে তাকে, বলেছে যেখানে আছে সেখানেই থাকতে, বাকিরা নাকি সব চলে গেছে। ইনানের অবশ্য তাতে মাথা ব্যথা নেই। সে যে উপভোগ করছে এটাই মেইন কথা। তবে এবার সত্যিই যাওয়ার সময় হয়ে এসেছে। শরৎ সেই কখন আসবে বলেও আসছে না। আবার তাকে ধোঁকা দিয়ে চলে গেল কিনা কে জানে! নেটও নেই এই জঙ্গলে। এর চেয়ে ভালো মেইন রাস্তায় গিয়ে দাঁড়ানো, একটা গাড়ির সন্ধান পেলেই হয়েছে। ইনান হাঁটতে হাঁটতে কোথায় চলে এলো জানে না, তবে মাটির রাস্তাটা যেদিকে গিয়েছে সেই পথেই যাচ্ছে সে। আরেকটু হাঁটতেই অদূরে পাকা রাস্তা দেখতে পেল সে।

এপাশের মাটির রাস্তাটা ঢাল বেয়ে নিচে চলে গেছে। কিছুটা পাহাড়ের মতো। অসাবধানে পা ফেললেই কুপোকাত। বৃষ্টিও বেড়ে চলেছে ক্ষণে ক্ষণে। ধীরে ধীরে আঁধারে ছেয়ে যাচ্ছে চারপাশ। এই নিঝুম নীরব জঙ্গলে হঠাৎ একা হয়ে যাওয়াতে ইনানের কেমন ভয় ভয় শুরু করল। গাছের বড় বড় পাতাগুলোতে বৃষ্টির পানি পড়ার আওয়াজ তার ভয়কে আরো বাড়িয়ে দিচ্ছিল। বারবার মনে হচ্ছে কেউ তাকে ফলো করছে, পেছন ফিরে তাকাচ্ছে হে বারবার। কিন্তু এই ঘন ঝোপের কারণে কাউকেই নজরে আসছে না। অজানা আশঙ্কায় ইনানের সারা শরীর কেঁপে উঠল। তাও নিজেকে সামলে হাঁটতে শুরু করল।

বড় রাস্তার দিকে সে যতই এগিয়ে যাচ্ছিল ততই রাস্তার পাশের গাছগুলো কেমন চেনা চেনা লাগছিল। আকাশ ছোঁয়া গাছ, যেগুলো রাস্তাকে আড়াল করে রেখেছে দিনের আলো হতে।

হাঁটার মাঝেই ইনান পেছনে কারো উপস্থিতি টের পেলো। পেছনে ফেরার সময়টুকু না দিয়েই পেছনে থাকা আগন্তুক ধাক্কা মেরে ফেলে দিলো ইনানকে। গগন কাঁপিয়ে চিৎকার করে উঠল ইনান। গাছের খোঁচা খোঁচা ডালের উপর গড়িয়ে গড়িয়ে নিচে পড়ে যাচ্ছে ইনান। এতকিছুর মাঝেও ইনান আগন্তুককে দেখতে পেল না ঠিকভাবে, শুধু দেখল অন্ধকারে বৃষ্টিতে ভেজা এক অবয়বকে।

.
.
চলবে..

#রোদরঞ্জন
#পর্ব_৫
#আসরিফা_মেহনাজ_চিত্রা

[প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য]
.

শরীরে অসহনীয় ব্যথা অনুভূত হতেই কঁকিয়ে উঠলো ইনান। জ্ঞান‌ ফিরে পাওয়ার পর এক মুহুর্তের জন্য ব্রেইন ব্লাংক হয়ে গেল তার। বুঝতে পারল না কী হচ্ছে বা হয়েছিল।‌ পায়ে ঠান্ডা কিছুর ছোঁয়া লাগতেই শিরশিরানি দিয়ে উঠে শরীর। ব্যথাতুর আওয়াজ তুলে চোখমুখ খিঁচে নেয়। ব্যথায় চোখ দিয়ে স্বচ্ছ নোনতা জল গড়িয়ে পড়ে।

‘ঠিক হয়ে যাবে, একটু সবুর করো। ঠিক হয়ে যাবে..’

কারো চিন্তিত কণ্ঠ শুনে চোখ মেলে তাকায় ইনান। এক কণ্ঠটি তার চেনা। ঝট করে মানুষটির দিকে চায় সে। জেহফিল তার পায়ের কাছে বসে আছে। হাতে তার এইড বক্স। দক্ষ হাতে ইনানের পায়ের ব্যান্ডেজ করে দিচ্ছে সে।

ইনান বুঝতে পারে যে সে জেহফিলের রুমে আছে, কেননা ঠিক একই ভাবে এর আগেও এই অবস্থাতে ছিল সে। দুর্বল গলায় ডেকে উঠল, ‘জে..জেহফিল!’

ইনানের জ্ঞান ফিরতেই প্রাণ ফিরে পায় যেন জেহফিল। অস্থির হয়ে ইনানের মাথার কাছে আসে। চুলে হাত বুলিয়ে দেয় আলতোভাবে। অস্বস্তি বোধ করে ইনান, জেহফিলের ছোঁয়াতে। মাথাটা হেলিয়ে নেয় বিপরীত পাশে। ইনান জেহফিলকে সরিয়ে দিতে চাইছে বুঝতে পেরে ইনানের মাথার কাছে রাখা হাত মুষ্টিবদ্ধ হয়ে যায়। নিজের ভেতর ক্রোধানলকে কষ্টে দমিয়ে রাখে। এখনই সময় নয়!

ইনান উঠে বসার চেষ্টা করে। জেহফিল ধরতে গেলেও সে থামিয়ে দেয়, ‘আমি পারবো।’

জেহফিলের মুখ থমথমে হয়ে যায় এরূপ প্রত্যাখ্যানে। চোয়াল শক্ত হয়ে উঠল ধীরে ধীরে। তাও নিজেকে সামলে ভালো মানুষীর মুখোশ টেনে আনল চেহারায়।

ইনান পা নাড়াতে পারল না। বাম পায়ের হাঁটু থেকে নিচ অবধি ব্যান্ডেজ। অতিরিক্ত ব্যথায় ইনান আন্দাজ করতে পারল না পায়ের কতটুকুতে আঘাত পেয়েছে। ভয় পেয়ে বলল, ‘পায়ে এতো ব্যান্ডেজ কেন?’

‘ডোন্ট অরি। সিরিয়াস কিছু না। গাছের ডালে লেগে লম্বা হয়ে কেটে গেছে, আর গোড়ালিতে কাটা ঢুকেছে। ততটাও গভীর না। কয়েকদিন রেস্ট নিলে ঠিক হয়ে যাবে।’

ইনান মৃদু শ্বাস ছাড়ল। সে তো ভেবেছিল সে বুঝি পঙ্গু হয়ে গেছে! ইনানের জামা কাপড়ে কাঁদা শুকিয়ে লেগে আছে। হাতে গালে যেগুলো ছিল সেগুলো বোধহয় জেহফিল পরিষ্কার করে দিয়েছে।

‘আপনি‌ আমাকে কীভাবে পেলেন?’ ইনানের হঠাৎ প্রশ্ন।

জেহফিল জানালার বাহিরে গভীর জঙ্গলটায় ইশারা দিলো, ‘ওই যে দূরে জঙ্গলটা দেখছো না? আমার বাসা থেকে দেড় মিনিটের পথ। ভাগ্যক্রমে আমি রাস্তায় ছিলাম, তোমাকে জলাশয়ের কাছে পড়ে থাকতে দেখেই তুলে এনেছি।’

ইনান ভাবল সে কি জিজ্ঞেস করবে যে তাকে যে ধাক্কা দিয়েছে সেই মানুষটিকে জেহফিল দেখেছে কিনা? নাকি না! ইনান আর সেই প্রসঙ্গে গেল না। পরে বাবাকে পুরো ঘটনা খুলে বলবে খোঁজ নিতে।

‘আমার মোবাইল কোথায়?’

‘জানি না, মে বি জঙ্গলেই হারিয়ে গেছে!’

ইনান‌ জানালা দিয়ে বাহিরে তাকাল। অঝোর ধারায় বৃষ্টি পড়েই চলেছে। আরেকটু পর সন্ধ্যা নামবে। ক্ষণিক বাদে বাদেই বিকট আওয়াজ তুলে বজ্রপাত পড়ছে। ইনানের মনে হলো সে যেনো অতীতে চলে এসেছে। সেই একইভাবে মোম‌ের আলো জ্বালানো, সেই একই অনুভূতি, যখন সে আরো একবার এভাবেই জেহফিলের বাসায় ছিল!

বাহিরে দৃষ্টিপাত করেই ইনান বললো, ‘আমাকে একটু কষ্ট করে বাসায় দিয়ে আসবেন?’

ইনানের দিকে নিষ্পলক চেয়ে জবাব দিলো জেহফিল, ‘গাড়ি নষ্ট হয়ে গেছে। মেকানিক কাল বিকেলে আসবে।’

‘তাহলে আপনার মোবাইলটা একটু দিন।‌ বাবাকে বলব আসতে।’

‘রাস্তার অবস্থা ভালো না, দুই কি.মি. দূরে তিন চারটে গাছ ভেঙে রাস্তা ব্লক হয়ে গেছে। এখন কয়টা ভেঙে পড়েছে কে জানে! কীভাবে আসবে তোমার বাবা?’

ইনানের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল। রাস্তা ব্লক হয়ে আছে তাহলে সে যাবে কীভাবে? একজন অচেনা পুরুষের বাসায় থাকা তো অসম্ভব!

‘আপনি মোবাইলটা দিন আগে, কথা বলে নিই।’

জেহফিল বিনা বাক্যে মোবাইল হাতে দিলো ইনানের। প্রায় তিন চার বার কলের পর ওপাশ থেকে মোবাইল তুলল।

‘হ্যালো বাবা। আমি ইনান।’

‘এটা কার নাম্বার?’

ইনান বাবার কণ্ঠের বদলে আরেকজন পুরুষের কণ্ঠ পেয়ে মোবাইল সামনে এনে দেখল নাম্বার ঠিকাছে কিনা! নাম্বার তো ঠিকই আছে, তাহলে ধরল কে!

‘ইনান! কথা বলছো না কেন? এটা কার নাম্বার?’

এ তো পলক! ইনান মোবাইল কানে নিলো দ্রুত, ‘বাবা কোথায়? বাবাকে দিন তো।’

‘আমি আর স্যার শহরের বাইরে আছি, কাজে। বৃষ্টি দেখে মনে হচ্ছে না কাল সকালের আগে বাসায় পৌঁছাতে পারব। এটা জানানোর জন্যই কল দিতে যাচ্ছিলাম তোমাকে।’

নেটের জন্য বারবার কথা কেটে কেটে আসছিল। ইনান বুঝতে পারল না কী বলবে এখন। যদি সে তার অবস্থার কথা বলে তাহলে বাবার তো অবস্থা খারাপই হয়ে যাবে। একে তো এখানে আসতে পারবে না, তারউপর আরো টেনশন করবে। পুওর কানেকশনের কারণে কল কেটে যায়।

‘কী বলেছে তোমার বাবা? আসছে?’ জেহফিল বলল, যদিও সে কান খাড়া রেখে সবটা শুনেছে।

‘না।’

জেহফিলের বাসায় থাকা উচিত হবে না বলে সে যেকোনো ফ্রেন্ডকে কল করতে চাইছিল। বাট তাদের কারোর নাম্বারই মুখস্থ নেই।

‘আপনার এফবি আইডি আছে?’

‘নাহ!’

ইনানের অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে চাইল।‌ এই যুগে এসে এফবি চালায় না এমন মানুষ দুনিয়াতে কমই আছে।

‘সিরিয়াসলি!! ইন্সটা? টুইটার আছে?’

‘না’

‘আপনি কি ব্যাকডেটেড নাকি?’

জেহফিল আরেকটা মোম ধরাতে ধরাতে বলল, ‘আমার এসব ভাল্লাগে না।’

ইনানের মাথায় হাত পড়ল। সে এখন কীভাবে বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ করবে? তার নিজের এফবি পাসও তো মনে নেই।

‘হয়েছে?’

বিভ্রান্ত চোখে তাকাল ইনান,’কী?’

‘মোবাইল। আমার মোবাইল অন্য কারোর হাতে বেশিক্ষণ থাকাটা আমি পছন্দ করি না।’

ইনান মোবাইল ফিরিয়ে দিলো। বিড়বিড় করে বলল, ‘নাটক!’

.

‘আমি এখন কী করব বলুন তো?’

‘রেস্ট নিবে।’

‘সেটা না। বাসায় যাব কীভাবে?’ ইনানের গলায় চিন্তার সুর।

‘বাসায় গেলে কাল বিকালেই যেতে হবে।’

‘ততক্ষণ পর্যন্ত কি আমি এখানেই থাকব নাকি?’

‘তোমার যাওয়ার আর কোনো জায়গা আছে নাকি?’

ইনান দমে গেল। তর্ক করে তো লাভ নেই। আসলেই তো এখন করার কিছু নেই। আজ রাতটা কোনোভাবে কেটে গেলেই হলো।

‘মোবাইলটা আরেকবার দিন তো।’

‘কেন?’

‘বাবাকে আবার কল দিব।’

আবারও কল ধরল পলক।

‘আমি আমার ফ্রেন্ডের বাসায় আছি। বৃষ্টি দিয়ে যেতে পারব না। বাবাকে বলে দিয়েন। কাল বিকেলের মধ্যে পৌঁছে যাবো।’

.
জেহফিল পাঁচটা মোম জ্বালিয়ে দিলো। তিনটা ইনানের বেডের দুপাশে রেখে বাকি দুটো নিয়ে সে কিচেনে চলে গেল। ইনান রুমটায় ভালো করে চোখ বুলালো। রুমে যত আসবাবপত্র আছে সবগুলো অ্যান্টিকের। দেয়ালে জেহফিলের আঁকা ড্রাগনের ছবি টানানো। প্রায় ছয় ফিটের। ছাদ পর্যন্ত বড় একটা বুকশেল্ফ রুমের দেয়ালজুড়ে। তাতে নানা ধরনের ইংরেজী সাহিত্যের বই। ইনান চোখ ছোটো ছোটো করে বইগুলোর নাম পড়ার চেষ্টা করল। এখানে প্রায় সাত আট হাজারের মতো বই আছে। ইনান যতগুলোর নাম পড়তে পারল সবগুলোই তার উইশলিস্টে রাখা বইগুলো। দুই তিন বছর ধরে খালি লিস্টেই লিখেছে এই বইগুলো, তবে কেনা হয়নি। বাবা গল্পের বই তেমন কিনে দেয়নি একাডেমিক পড়া নষ্ট হবে বলে।

বুকশেল্পের সামনেই বড় একটা সিঙ্গেল আয়না রাখা। আয়নার দিকে চোখ পড়তেই দেখল, একজন বলিষ্ঠদেহী সুদর্শন সুপুরুষ সটান দাঁড়িয়ে আছে, ব্রিটিশদের মতো চেহারা, শক্ত চোয়াল, ধূসর গাঢ় চোখ, মুখে চাপ দাড়ি। তার গায়ের সাদা শার্ট ফোল্ড করে রাখা। বই পড়ার সময় যেই ধরনের হ্যান্ডসাম নায়ক কল্পনা করে ইনান, সেই নায়ক যেন কল্পনার জগত হতে বাস্তবে চলে এসেছে! ইনান মুগ্ধ চোখে চেয়ে রইল আয়নার দিকে। আবেশিত দৃষ্টিতে পুরুষটির আপাদমস্তক পরখ করছে সে। চলে যায় কয়েক মিনিট। ঠাস করে বিজলি চমকানোর আওয়াজে ইনানের আত্মা কেঁপে উঠে হঠাৎ। চৈতন্য ফিরে পায় আবেশিত মন। সে আয়না দেখছিল!! আয়নায় থাকা পুরুষটি দরজায় হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ইনান এবার ঝট করে দরজার দিকে তাকায়।

জেহফিল!!‌ শিট! সে তাহলে তার গল্পের নায়ককে দেখছিল না! সে দেখছিল জেহফিলকে? অস্বস্তিতে, লজ্জায় ইনানের কান গরম হয়ে গেল। পা যাওয়ার সাথে সাথে কি তার মাথাও গেছে নাকি!

জেহফিল গত কয়েক মিনিট ধরেই দরজায় দাঁড়িয়ে তার বাটারফ্লাইকে দেখছিল। ইনানের মুগ্ধ দৃষ্টি চকিতেই বুঝে গেল সে। তাই তো ইচ্ছে করেই দরজায় হেলান দিয়ে নিজেকে আরো আবেদনময় করে উপস্থাপন করছিল।

ইনানের দৃষ্টি তার থেকে সরার সাথে সাথে ঠোঁটে বাঁকা হাসির রেখা ফুটে উঠে তার। হাতে থাকা সালাদের বাটি নিয়ে রাখে বেডসাইড টেবিলে। তারপর বসে ইনানের সামনাসামনি। ইনান এদিক ওদিক তাকিয়ে অস্বস্তি কাটানোর চেষ্টা করছিল। জেহফিলকে বেডে বসতে দেখে জড়তা নিয়ে কাঠ হয়ে বসল।

‘স্বপ্নের রাজকুমার বাস্তবে এসে ধরা দিয়েছে তাই না?’

ইনান আমতা আমতা করে টপিক চেঞ্জ করার চেষ্টা করল, ‘আ..আপনার তো দেখি বইয়ের অভাব নেই। কিছু বই ধার দিয়েন আমাকে।’

ইনানের ইতিউতি করা দেখে জেহফিল ঠোঁট কামড়ে হাসে, ‘যত ইচ্ছা নিতে পারো, সাথে তাদের মালিককেও চাইলে নিতে পারো।’

শেষ বাক্যটা জেহফিল ধীরে বলেছিল বিধায় ইনান শুনতে পায়নি।

‘তাহলে এখন একটা বই দিন, সময় কাটছে না।’

জেহফিল উঠে গিয়ে বুকশেল্পের কাছে দাঁড়ালো। তার হাঁটার ভঙ্গিমা এতো ম্যানলি যে ইনান না চাইতেও বারবার তাকাচ্ছিল।

.
বই হাতে নিয়ে থাকলেও ইনানের পড়ায় মনোযোগ নেই। তার খুব অস্বস্তি লাগছিল, কেননা জেহফিল সামনাসামনি ডিভানে বসে আছে। না, তার দিকে তাকিয়ে নেই। বরং জেহফিলের হাতেও বই। সে মনোযোগ সহকারে পড়ছে। ইনান যখনই বইয়ে নজর দেয় তখনই মনে হয় জেহফিল ওকে দেখছে, কিন্তু জেহফিলকে দেখে মনে হয় সে বইয়ে ডুবে আছে, যেন ইনানের দিকে তাকানোর সময় নেই তার।

এভাবে ইনান বইয়ে মনোযোগ দিতে পারছে না। শেষে হাল ছেড়ে দিলো। চাদর টেনে হেডবোর্ডে হেলান দিয়ে বসে রইল। তারপর মনে হলো জামা বদলানো দরকার। শুকনো কাঁদা মাটি লেগে থাকা জামা পরে থাকতে গা কেমন খুঁতখুঁতে করছে। কিন্তু কী জামা পড়বে? জেহফিল থেকে ধার চাইবে?

‘শুনুন…’

ইনান জেহফিলকে বলবে তার আগেই আবিষ্কার করল জেহফিল একটা টি শার্ট আর থ্রি কোয়ার্টার হাতে ইনানের সামনে দাঁড়িয়ে। এই ছেলেটা কি মাইন্ড রিডার নাকি! মনের কথা কীভাবে বুঝে?

জেহফিল ইনানের সামনে জামা রেখে শান্ত গলায় বলল, ‘চেঞ্জ করে নাও, আমি গিয়ে ডিনার রেডি করছি।’

যাওয়ার সময় জেহফিল দরজা আটকে গেল। ইনান দুইটা মোম নিভিয়ে পরনের টপ খুলে ফেলল। পা দিয়ে প্যান্টটা বেশ সময় নিয়ে সাবধানে পরতে হলো তাকে।

ব্যস্ত ইনান খেয়াল করল না রুমের উপরে কোণায় থাকা গ্লাস ভেদ করে দুটো চোখ মোহাবিষ্টের ন্যায় ইনানের শরীরের প্রতিটি ভাঁজে নজর বুলাচ্ছিল, আর উন্মাদের মতো কিছু একটা বিড়বিড় করছিল।

.

.

জেহফিল দরজায় নক করল।

‘আসুন।’

ডিনার হাতে জেহফিল ভেতরে প্রবেশ করল। ইনান নিজের দিকে তাকাল একবার। জেহফিলের টিশার্ট তার হাঁটু ছুঁই ছুঁই। থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট ইনানের ফুল প্যান্টের সমান। খুব অদ্ভুত দেখাচ্ছে তাকে।

‘ইউ আর লুকিং সো প্রীটি!’ জেহফিল বিমোহিত গলায় বলে।

ইনান মুখ বাঁকা করে বলে, ‘থ্যাংকস।’

.
‘এগুলো আপনি বানিয়েছেন?’

‘আমি ছাড়া আর কেউ আছে এখানে?’

ইনান‌ খেতে খেতে বলল, ‘একটা কথা বলি?’

‘শুনছি।’

ইনান থেমে থেমে বলল, ‘আপনার বাবা মা নেই?’

জেহফিল স্বাভাবিক সুরেই বলল, ‘না।’

‘মানে…বলতে চাইছিলাম, তারা কী..’

নির্বিকার গলায় বলল‌ জেহফিল, ‘মা’রা গেছে।’‌

ইনান বিষম খেল কিছুটা। জেহফিল অস্থির হয়ে পানি এগিয়ে দিলো, ‘ধীরে খাও। খাবার কোথাও যাচ্ছে না।’

জেহফিল তাহলে একা? এই নির্জন জায়গায় একা থাকে! কীভাবে থাকে? একা বাস করা কারো পক্ষে আদৌ সম্ভব!! তবে ইনান জেহফিলের বাবা মা সম্পর্কে আর কথা বাড়ালো না, চুপচাপ খেতে লাগল।

.
খাবার শেষে ইনানের প্রচণ্ড ঘুম পেল। মাত্র দশটা বাজে, এত তাড়াতাড়ি সে স্বভাবত ঘুমায় না। তবে আজ একটু বেশিই ঘুম পাচ্ছে।

‘জেহফিল, আমার ঘুম পাচ্ছে। আপনি ঘুমাবেন কখন?’ হাই তুলে বলল ইনান।

‘এগুলো গুছিয়েই ঘুমাবো।’

‘আচ্ছা, ভেতর থেকে দরজা আটকিয়ে যাবেন প্লিজ।’

এই বলে ইনান গায়ে চাদর টেনে দিলো। জেহফিল দরজা আটকে চলে গেল। দু মিনিটের মাথায়ই ইনানের চোখে ঘুম চলে আসলো।

বাহিরে ঝড় বইছে। বাতাসের ঝাপটায় দুনিয়া উল্টানোর পথে। ইনানের রুম অন্ধকার। ক্যাড়ক্যাড় আওয়াজে ইনানের রুমে দরজা খুলে গেল আচমকা। জেহফিল মোম হাতে রুমে ঢুকল। তার চোখের চাহনিতে কেমন উন্মাদনা। ইনান গভীর ঘুমে তলিয়ে আছে। জেহফিল মোম টেবিলে রেখে ইনানের পাশে বসে মুখের কাছে ঝুঁকে এলো। ইনানের গালের কাছে এসে লম্বা শ্বাস টানল সে। তারপর কাঁপা কাঁপা ঠোঁটে চুমু খেল গালে। ইনানের মসৃণ ত্বকে আঙ্গুল দিয়ে স্পর্শ করতে শুরু করল। কী নরম! কোমল!

ইনানের গায়ের চাদর সরিয়ে দিলো জেহফিল। ঘাড় কাত করে সে ইনানকে দেখছে। ইনানের শ্বাস প্রশ্বাসের সাথে সাথে তার বুক পেট উঠানামা করছিল। জেহফিল আলতো হাতে ইনানের টিশার্ট উঠিয়ে দিলো। তুলার মতো নরম উদরে জেহফিল তার শক্ত হাত ছোঁয়ালো। তার ভেতরের উন্মত্ততা ক্রমশ জেগে উঠতে লাগল। দৃষ্টিতে তার মাদকতা। জেহফিল ইনানের পেটে হাত বুলাতে বুলাতেই পরনের শার্টের বোতাম একটা একটা করে খুলতে লাগল। ঠোঁটে তার বাঁকা হাসি। তার বাটারফ্লাইকে পার্মানেন্টলি নিজের কাছে রাখার ব্যবস্থা খুব শীঘ্রই করতে চলেছে সে।

.
.
চলবে…