লীলাবালি পর্ব-৩৪+৩৫+৩৬

0
374

#লীলাবালি🌺
#পর্ব_৩৪
আফনান লারা
.
শাড়ীটা মিশু ভাবী যেভাবে পরিয়ে দিয়েছিল ঠিক সেরকম করে পরতে না পারলেও মোটামুটি চলার মতন করে পরে কুসুম বের হয়েছে।মুখটা ধুয়ে নিয়েছে সাথে।রুমে অর্ণব নেই।মনে হয় নামাজ পড়তে গেছে।কুসুম টেবিলের উপর ওর ব্যাগটা দেখলো।কি যে আনন্দ হলে মনে।খুশিতে কি যে করতে ইচ্ছে করছে।
অর্ণব যে আসবে তা সে একেবারেই জানতোনা।জলদি করে রুম থেকে বের হয়ে দেখলো মা রান্নাঘরে কাজ করছেন সাথে কাছের একটা বাড়ির মেয়ে বেগম।বেগম বাড়ি বাড়ি কাজ করে।ওকে ডেকে আনা হয়েছে কাজের চাপ বেশি বলে।আগে তো মিশু ভাবী হাত লাগালে সব হয়ে যেতো কিন্তু এখন যে সাগর ভাইয়া এসেছে।মা কিছুতেই তাকে রুম থেকে বের হতে দিলেননা।
কুসুম সেখানে গিয়ে বললো সেও নাস্তা বানাবে।মা প্রথমে মানা করলেন পরে বললেন রুটি বানিয়ে দিতে পারে।
কুসুম সুন্দরমতন রুটি বানাতে বসে গেলো।
গরুর গোশত দিয়ে সাগর ভাইয়াকে রুটি খেতে দেবেন।
অর্ণব নামাজ পড়ে বাড়ি ফিরে এসেছে।বাড়িতে ঢোকার আগে সাগর ভাইয়াদের বারান্দায় তাদের দুজনকে একসাথে দেখে লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে এসেছিল সসে।ভাইয়া যদি তাকে ওখান দিয়ে আসতে দেখতো তাহলে নিজেই লজ্জা পেতো।গোসল করে বারান্দায় মিশু চুল মুছতেছিল, সেসময়ে সাগর ও হাজির হয়েছিল।
অর্ণব হাসিমুখে তার রুমে চলে এসেছে।কুসুম রুটি বানিয়ে বললো অন্য কাজ দিতে।মা বললেন আপাতত অর্ণবের হাতে চায়ের কাপ দিয়ে আসতে।

অর্ণব শুয়ে শুয়ে ফেসবুক দেখছিল।কুসুম কাপটা রেখে কি মনে করে এক চুমুক দিলো তারপর দৌড় দিয়ে চিনির কৌটা নিয়ে এসে চিনি মেশালো।এত কান্ড করার পর ওর মনে হলো সে তো চায়ে চুমুক দিয়ে ফেলেছে।তাই কাপটা নিয়ে আবার চলে যাওয়া ধরতেই অর্ণব বললো চায়ের কাপ দিয়ে যেতে।

“ইয়ে আসলে আমি তো চুমুক দিয়ে ফেলছি।আমার মনে হয়েছিল চিনি দি নাই।পরে খেয়ে দেখলাম সত্যি চিনি দিইনি।’

অর্ণব কপাল কুঁচকে চায়ের কাপটা নিলো তারপর বললো,’কেমন করে চুমুক দিছিলে?মানে চুমুক দেওয়ার ও তো অনেক ধরন আছে।জিভ লাগিয়েছিলে?’

কুসুম অর্ণবের হাত থেকে চায়ের কাপটা নিয়ে আরেকটা চুমুক দিয়ে বললো,’এই যে এমন করে খেয়েছি”

অর্ণব তব্দা হয়ে বসে আছে।এর কি উত্তর সে দেবে তা ওর নিজেরই জানা নাই।কুসুম কাপটা আবারও ওর হাতে দিয়ে জিজ্ঞেস করলো খাবে কিনা

-“না থাক।এই কাপ তুমিই খাও।যে দুবার চুমুক দিছো কাপে আর চা নেই।বাচ্চাদের মুখের খাবার খেলে একটা রোগ হয় শুনেছিলাম।নাম ভুলে গেছি’

-“আমি তো বাচ্চা নই’

-“ঠিক।তুমি তো বাচ্চা নও। তুমি বাচ্চার থেকে যদি ছোট কিছু হয়ে থাকে তবে সেটা তুমি’

কুসুম রাগ করে কাপটা নিয়ে চলে গেছে।বাহিরে বের হতেই সাগরের সামনে পড়লো।
ওকে সালাম দিয়ে চুপ করে থাকলো সে।সাগর সালাম নিয়ে কেমন আছে জিজ্ঞেস করলো।তারপর ভেতরের রুমে অর্ণবের কাছে গিয়ে বসেছে।অর্ণব ভাইয়াকে দেখে হেসে ঘুরে বসলো।

-‘তো বল কেমন লাগে বউরে?’

-“কেমন লাগে তা তো সবটাই তুমি জানো।ঘটা করে আর কি বলবো।’

সাগর অর্ণবের ঘাঁড়ে হাত রেখে মুছে দিয়ে বললো,’থাক ভাই।মেনে নে।বাবা তোর ভালো ভেবেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।’
—–
কুসুম ঐ চায়ের কাপ রেখে আরেকটা কাপ হাতে নিয়ে আসার সময় মিশুকে দেখলো আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে কি যেন করছিল।বারবার পাউডার গলায় লাগিয়ে ঘঁষছিল সে।কুসুম এগিয়ে গিয়ে বললো,’আপু কি করো?’

মিশু ভয় পেয়ে আয়নার সাথে পিঠ ঠেকিয়ে বললো,’না ঐ আসলে গলায় কি যন কামড় দিছিলো যার কারণে পাউডার দিছিলাম যেন না চুলকায়।’

কুসুম সাত পাঁচ না ভেবে এক দৌড় দিয়েছে।মিশু ভাবলো কুসুম হয়ত বুঝে গেছে তাই সে হাসলো মিটমিট করে।সাগর বাবার ঘরে গেছে এবার।অর্ণবের হাতে কুসুম চায়ের কাপ ধরিয়ে দিয়ে হন্তদন্ত হয়ে ড্রয়ারগুলোতে পাউডার খুঁজতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো।শেষে একটা পাউডার বের করে জয়ের হাসি দিয়ে ছোটা ধরতেই অর্ণব বললো,’দাঁড়াও!আমার পাউডার কোথায় নিয়ে যাচ্ছো?’

-“এটা দিলে পোকার কামড়ের দাগ ঠিক হয়ে যায় তাই না?’

-“হুম তো?’

-“তো মিশু ভাবীর গলায় পোকা কামড় দিছে।উনার কাছে এই পাউডার নেই।তাই এটা নিয়ে যাচ্ছি’

-“গলায় পোকার কামড় মানে!কিসের পোকা আসলো বাসার ভেতর।ওওওওওও!
এই যাঃ।দাঁড়াও কুসুম!!

কুসুম মিশু ভাবীর রুমের দিকে চললো।অর্ণব বিছানা থেকে নেমে ছুটে এসে ওর পথ আটকে দাঁড়িয়ে পড়েছে।হাত থেকে পাউডারটা কেড়ে নিয়ে বললো,’দেওয়ার দরকার নেই’

-“কেন?পোকা কামড়িয়েছে।আসেন আপনিও দেখবেন”

-“চুপ!কোনো পোকার কামড় না এটা।চলো আমার সঙ্গে।’

-“আশ্চর্য আমি নিজের চোখে দেখছি এই টুকুন করে লাল হয়ে ছিল।আপনার বিশ্বাস না হলে আপনি সহ চলুন।দেখবেন।’

অর্ণব মাথায় হাত দিয়ে বললো,’দেখতে হবেনা আমার।তুমি এ বিষয়ে আর একটা কথাও বলবেনা।যাও নিজের কাজে যাও’

-“পাউডারটা দিলে ভালো হতো’

-“তোমাকে দেওয়াবো আমি।যাও বলছি’

ধমক শুনে কুসুম রান্নাঘরের দিকে চলে গেছে।অর্ণব হাঁপ ছেড়ে বাঁচলো।
এই মেয়েটাকে কে বোঝাবে ওটা পোকার কামড় না।লাভ বাইট ছিল।ভাবীও না!!উনি পারতেন বোঝাতে।সেটা না বুঝিয়ে বাচ্চাকে বাচ্চার মতন করে বুঝিয়ে পাঠিয়ে দিয়েছে।আর একটুর জন্য আমাকে লজ্জার গোডাউনে ফেলে দিতো এ মেয়ে।
—-
অর্ণব কিছুক্ষণ পর বাজারে ঘুরতে গেছে।সাগর ভাইয়া আর মিশু ভাবী তাদের রুমে।বাবা মা উঠানে লাউশাকের পাতা নিতে নিতে আলাপ করছিলেন।রয়ে গেলো কুসুম।সে নিজের ফোন হাতে নিয়ে দেখে আবার রেখে দিলো।অর্ণব তো এখানেই।ভুলেই গিয়েছিল।এতদিন ফোন করতে করতে অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।এবার সারা বাড়িতে একা একা হাঁটছে সে।
আর কেনো কাজ নেই।নিজেকে বড় একা লাগে।আগে মিশু ভাবীর সাথে কথা বলে সময় কাটতো আর এখন মিশু ভাবীর ও খবর নাই।নিজেকে অসহায় মনে হয় অনেকৃ
অর্ণবদের বাসায় বেগম নামের যে মেয়েটা কাজ করে সে ভেটকি মেরে বললো,’তুমি তো এমনিতেও অসহায়’

কুসুম তার কথার মানে বুঝলনা।ছাদে এসে ফুলগাছগুলোকে ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখছিল।আজকাল সকাল হলেই প্রচণ্ড মাথা ধরে।এর আগে এমন ব্যাথা ছিলনা।কিন্তু বিগত কয়েক মাস ধরে এই সমস্যাটা হচ্ছে।সে কি ব্যাথা রাত পর্যন্ত রয়ে যায়।কিন্তু উনার সাথে কথা বললে ঐ ব্যাথার কথা আর মনেই থাকেনা!
ঐ তো কি সুন্দর একটা ফুল।তবে গন্ধ বিচ্ছিরি।একবার শুকে কি অবস্থা হয়েছিল।বাপরে!’
—-
অর্ণব বাজার থেকে এসে গোসল করে ছাদের দিকে আসছিল গামচা শুকাতে দিয়ে কিছুক্ষণ রোদে বসে থাকবে।ছাদে এসে দেখলো কুসুম ছাদের রেলিং ধরে বমি করছে।অর্ণব কাছে এসে বললো,’কি হইছে তোমার?এখানে কি করতেছো?’

কুসুম আঁচল দিয়ে মুখ মুছে বললো,’ঐ যে বললাম খেতে গেলে বমি পায়।আজ এসেই গেলো’

-“এখন আবার কি খেতে বসেছিলে?’

-“ফুলের মধু।এই ফুলটা দেখছেন?’

-“হ্যাঁ।লিচু ফুল’

-“এটার মধু মজা।আমি মুখে দিয়েছিলাম আর বমি এসে গেলো’

অর্ণব কুসুমের হাত থেকে ফুলটা নিয়ে মুখে দিয়ে চুষে বললো,’কই আমার তো বমি আসলোনা।তোমার সমস্যা আছে।ডাক্তারের কাছে যেতে হবে।হাবিজাবি খেয়ে পেট নষ্ট করছো।এখন ভালো জিনিসেও বমি পায় তোমার’

-‘আমি বাহিরের খাবার খাইনা।খেতে পারিনা বমি আসে’

-“ঐ তো!খালি পেটে তেতুল খেতে,কাঁচা আম খেতে তাই এমন অসুখ হয়েছে তোমার।’
চলবে♥

#লীলাবালি🌺
#পর্ব_৩৫
আফনান লারা
.
কুসুম আর কিছু বললোনা।অর্ণবকে ওর চোখে কি পরিমাণ মিষ্টি লাগছে তা প্রকাশ করার মতন না।মুখে হাসি ফুটিয়ে শুধু চেয়ে রইলো সে।ওকে এমন করে তাকিয়ে থাকতে দেখে অর্ণব সরে গেলো।
কুসুম এবার অর্ণবের পিঠের দিকে তাকিয়ে দাঁত কেলাচ্ছে।অর্ণব চেয়েছিল গামছা রোদে দিয়ে কিছুক্ষণ সময় কাটাবে।বসে রইবে,ফুল ধরবে,রেলিং ধরে নিচে তাকাবে কিন্তু কুসুমকে ওভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে ওর সব শখ মিটে গেছে।চলে গেলো ছাদ থেকে।
কুসুম আস্তে আস্তে ওর পিছু পিছু নেমে গেলো।অর্ণব তার রুমে যাবার সময় শুনতে পেলো কুসুমকে মা ডেকে বলছেন সে সকালের নাস্তা এখনও করেনি কেন।কুসুম জবাবে সেই আগের উত্তর দিলো।”বমি আসে”

তখনই অর্ণবকে মা থামিয়ে বললেন ওকে নিয়ে সময় করে একবার ডাক্তারের কাছে যেতে।যেটাই খেতে যায়,বলে বমি বসে।আঁতের সমস্যা হলো কিনা ডাক্তার ভাল বলতে পারবে।
অর্ণব বললো সে কাল সকালে চলে যাবে।ডাক্তারের কাছে যেতে হলে কুসুম যেন এখনই তৈরি হয়ে নেয়।
কুসুম ছুটে গিয়ে একটা নতুন বোরকা পরে নিলো।এই বোরকাটা ওকে অর্ণবের মা কিনে দিয়েছিলেন।
ওকে প্রথমে বোরকায় দেখে অর্ণব কিছুক্ষণ তাকিয়েছিল।অন্যরকম লাগলো অনেকটা।যেন অন্য একটা কুসুম।
অর্ণব সামনে সামনে হাঁটছে আর কুসুম পিছু পিছু।মা জোর গলায় বলে দিলেন যেন কুসুমকে একটু ঘুরিয়ে আনে।
অর্ণব কথাতে মন দিলোনা।মেইন রোডে এসে একটা রিকশা নিলো।
দুজনে একসাথে বসেছে রিকশায়।বিশ্বরোড দিয়ে যাচ্ছিলো বলে কুসুম অর্ণবের হাতটা শক্ত করে ধরে রাখলো।অর্ণব রিয়েক্ট করেনি তাতে।
হসপিটালে এসে একজন ডাক্তারের সিরিয়াল দিয়ে বসে রইলো দুজন।কুসুম মাথা ঘুরিয়ে হসপিটালটা দেখে অর্ণবকে ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করলো সুই ফুটাবে কিনা।অর্ণব দুষ্টুমি করে বললো হ্যাঁ ফুটাবে।
ব্যস হয়ে গেলো।কুসুম কপালের ঘাম মুছতে মুছতে শেষ হয়ে যাচ্ছে।
হাঁপাচ্ছে।অর্ণব ওর এমন অবস্থা দেখে বললো,’পানি খাবে?’

সাথে সাথে জবাব দিলো সে পানি খাবে।তাই ও পানি আনতে চলে গেলো সামনের একটা ফিল্টার থেকে।
এদিকে কুসুমের পাশে একজন ভদ্র মহিলা এসে বসলেন সেসময়ে।কুসুমকে তিনি হাসিমুখে জিজ্ঞেস করলেন ওর কি সমস্যার কারণে ডাক্তার দেখাতে এসেছে।

-“আমার খালি বমি পায়।কিছু খেতে পারিনা’

-“ঐ ছেলেটা তোমার বর?’

-“হুম’

-“তাহলে ডাক্তারের কাছে আসার কি দরকার ছিল?তোমার তো বাচ্চা হবে।তুমি গর্ভবতী।এটা বোঝোনা?হেহে।আমি তো বুঝে গেছি’

কুসুম চোখ বড় করে তাকালো।তারপর এক ছুটে অর্ণবের কাছে গিয়ে দাঁড়িয়েছে।অর্ণব পানির গ্লাসটা এগিয়ে ধরে বললো,’কি হয়েছে?’

-‘আমার নাকি বাচ্চা হবে’

-“কিহহ!কে বললো এটা?’

-“ঐ খালা বলেছেন’

অর্ণব কুসুমের হাত ধরে অন্য সিটে এনে বসিয়ে দিলো।তারপর চোখ বড় করে ঐ আন্টিটার দিকে তাকিয়ে থাকলো।আন্টির কথাগুলো যদি এখন জুথি শুনতো নির্ঘাত মারামারি বাঁধিয়ে দিতো।
কুসুম পেটে হাত দিয়ে বললো,’আচ্ছা সত্যি বাচ্চা হবেনা তো?’

অর্ণব ওকে একটা ধমক মেরে বললো,’তোমার কিসের বাচ্চা হবে তুমি তে নিজেই একটা বাচ্চা।আর আমি তোমারে ছুঁইছি এখনও যে তোমার বাচ্চা হবে?’

কুসুম ফিসফিস করে বললো,”ছুঁয়েছেন তো”

অর্ণব কপাল কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো কবে!

-“কবে মানে!আমার হাত কতবার ধরছেন মনে আছে আপনার!’

অর্ণবের মনটা চাইলো মাটি খুঁড়ে তার ভেতর ঢুকে যেতে।এই মেয়ে কয় কি!হাত ধরলে বাচ্চা হয় কেমনে?
শোনো! তোমার কোনো বাচ্চা-টাচ্চা হবেনা।এটা জাস্ট একটা অসুখের কারণে বমি বমি ভাব ফিল হয়।ব্যস এই টুকুই।

১০/১৫মিনিট পর কুসুমের সিরিয়াল নাম্বার আসলো।অর্ণব ও সাথে ঢুকলো রুমে।
ডাক্তার প্রশ্ন করলেন কুসুমের কি কি সমস্যা।

সে বললো তার খেতে বসলেই বমি পায়।

-‘প্রেগন্যান্সি টেস্ট দিব?আপনি কি বিবাহিত?কদিন ধরে বমি বমি ভাব হচ্ছে??’

অর্ণব চমকে বললো, আরে না না।ওই টেস্ট লাগবেনা।আমরা বিবাহিত ঠিক তবে এখন ওসব নিয়ে ভাবছিনা।শুধু শুধু টেস্ট করানোর প্রয়োজন নেই।

-‘হুম।উনাকে দেখে মনেও হয় না প্রেগন্যান্ট। সিওর হতেই জিজ্ঞেস করলাম।অনেক সময় কিছু কিছু ডিসিএসের লক্ষণ আর প্রেগন্যান্সির লক্ষণ একই হয়’

ডাক্তার রুচির ট্যাবলেট আর বমি ভাব বন্ধের ঔষুধ লিখে দিলেন আর নতুন করে খাবারের রুটিন ও লিখে দিয়েছেন।এরপর আবারও জিজ্ঞেস করলেন আর কোনো সমস্যা আছে কিনা

-“হ্যাঁ।মনে পড়েছে,আমার কয়েক মাস ধরে সকাল হলেই অনেক মাথা ব্যাথা করে।একদম রাত পর্যন্ত মাথা ব্যাথা থাকে’

ডাক্তার আশ্চর্য হয়ে বললেন কেন সে আগে কথাটা বলেনি।তারপর কয়েকটা টেস্ট করাতে দিলেন উনি।রিপোর্ট কাল আসবে।
তাই টেস্ট গুলো করিয়ে অর্ণব কুসুমকে নিয়ে বাড়ির দিকে চললো।
ঐ পথে দাঁড়িয়ে একটা ছেলে হাওয়াই মিঠাই বিক্রি করে।কুসুম ওগুলো দেখে দাঁড়িয়ে পড়েছে।

অর্ণব বললো,’খাবে?’

-“এটা খায়?’

-“হ্যাঁ।’

অর্ণব দুইটা কিনে দিলো ওকে।কিন্তু আফসোস। মুখে দিতেই বমি এসে গেলো ওর।কিন্তু এবার অর্ণব ওকে আগলে রেখেছে।সকাল থেকে কিছু খায়নি বলে এতটাই দূর্বল ছিল সে যে মাটিতে বসে পড়েছিল।
অর্ণবের খুব চিন্তা হলো।কি এমন রোগ হতে পারে ওর??কিছু না খেতে পারলে তো আরও অসুস্থ হয়ে যাবে।

চিন্তা করতে করতে একটা ফার্মেসীর দোকান থেকে অমিডন নামের একটা ঔষুধ কিনলো সে।অন্তত এটা খেলে বমি ভাবটা যাবে।
রিকশায় কুসুম হাওয়াই মিঠাই জোর করে খাচ্ছিলো।খুব ইচ্ছে করছিল খেতে।বমি ভাবকে তোয়াক্কা না করে খেয়ে যাচ্ছে সে।
বাড়ি ফিরার পর অর্ণব তার রুমে চলে গিয়েছিল।কুসুম মায়ের কাজে সাহায্য করতে তার কাছে এসেছে।টেবিলে খাবারের প্লেট সাজিয়ে দেবার পর বাবা সবাইকে ডেকে নিজেও বসলেন।কুসুম খেতে চায়না।অর্ণব খেতে বসে সবাইকে খেতে দেখলেও ওকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বারবার তাকাচ্ছিল।বাবা সেটা দেখে ওকেও বসতে বললেন কিন্তু সে রাজিনা।তার নাকি খিধে নেই।
ঠিক ঐ সময়ে সবাইকে অবাক করে দিয়ে অর্ণব আজ একটা ধমক দিলো কুসুমকে।তাও খেতে বসার জন্য।বাবা মনে মনে খুশি হলেন কুসুমের প্রতি ওর এত রক্ষণশীলতা দেখে।কুসুম বসলো মায়ের পাশে।অর্ণবের ভয়ে মুখে লোকমাও তুললো।
বাবা অর্ণবের কাছে জানতে চাইলেন রিপোর্টে কি এসেছে।

-“রিপোর্ট কাল আসবে বাবা।বাসায় এসে দিয়ে যেতে বলেছি।আমি তো চলে যাব।কে যেতো রিপোর্টের জন্য তাই বলেছি যেন বাড়ি দিয়ে যায়।এক্সট্রা চার্জ ও নিয়েছে’

-“ভালে করেছিস’
—-
দুপুরের খাবার খাওয়ার পর্ব শেষ হতেই যে যার রুমে চলে গিয়েছে।কুসুম সেই আবারও অসহায়ের মতন ঘুরঘুর করছিল বাড়ির বাহিরে।একটা হাওয়াই মিঠাই তখন খেয়েছিল এখন বাকিটা খাবে।তাই হাতে নিয়ে ঘুরছে বাড়ির সামনে।অর্ণব বারান্দায় এসে রকিং চেয়ারে বসার আগে ওকে বাহিরে ঘোরাঘুরি করতে দেখে আবার রুমে চলে এসেছে।সে খুব ভালে করে জানে কুসুম ওকে দেখলে কাছে এসে ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে রইতো।
—–
জুথির শরীর অনেক খারাপ।খারাপ বলতে তার কারণেই খারাপ হয়েছে।
গোপনে ড্রিংক করা জুথির পুরোনে অভ্যাস।বিদেশে খেয়ে নেশা ধরিয়েছিল।
এখন সেই মদের অনেক দরকার ছিল তার।যার কারণে অনেকগুলো বোতল কালেক্ট করে খাটের তলায় জমিয়েছে।বাবা বাসা থেকে বের হলেই দরজা বন্ধ করে একটা করে বোতলের মদ শেষ দিতো আর অচেতন হয়ে পড়ে থাকতো।কদিন ধরে দুটো বোতল শেষ দিতে গিয়ে তার শরীর খারাপ হয়ে গেছে।এতটাই খারাপ হয়েছে যে বাবা ডাক্তার বাসায় নিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছেন।ডাক্তার ওর বাবার সামনে জিজ্ঞেস করে বসলন সে মদ খায় কিনা।
সে জবাব দিলো খায়।
বাবা আশ্চর্য হলেননা।কারণ এর আগেও জুথিকে তিনি মদ খেতে ধরেছিলেন।বকাঝকার পর ভাবলেন হয়ত ছেড়ে দেবে।কিন্তু নাহ!তার অভ্যাসটা এখনও রয়ে গেলো।
ডাক্তার মদ খেতে কড়া নিষেধ করে কিছু ঔষুদের নাম লিখে চলে গেছেন।জুথি শোয়া থেকে উঠে বসে খিলখিল করে হাসছে।হাসতে হাসতে বললো,’আরও খাবো।কষ্ট দূর করার উপায় মনে পড়ে গেছে।আর মৃন্ময়ী অর্ণবনের কথা ভাববেনা।মৃন্ময়ী ভাল থাকার উপায় পেয়ে গেছ।সে আর কাঁদবেনা।শুধু ঘুমাবে।শুধু ঘুম…’

কথাটা বলতে বলতে বাবার কোলে শুয়ে পড়লো সে।বাবা ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছিলেন।এ কদিন ধরে জুথির যে হাল হচ্ছে তা আর সহ্য করতে পারছেননা তিনি।অর্ণব কি এমন করেছে যে তার একমাত্র মেয়ের এমন অবস্থা হলো।
-‘আহারে কি হাসিখুশি ছিল আমার মেয়েটা।আর এখন তার মুখে হাসিই পাইনা আমি।কেন এমন হলো?অর্ণবকে একবার ডেকে আনতে হবে।জুথি হয়ত ওকে দেখলে এসব থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে।নাহলে আমার মেয়েটাকে যে বাঁচাতে পারবোনা’

-‘আমার ওকে চাইনা বাবা।ও আমার না,অন্য কারোর।তুমি ওরে ডাকবানা।আম্মুর কাছে চলে যাব।ব্যবস্থা করো।আমি আর এখানে থাকতে চাইনা বাবা।জীবনের প্রথম প্রেম এত কষ্ট দেয় জানলে আমি এই ভুলটা করতাম না।পরিচয় অল্প সময়ের অথচ আমি তারে ভুলতে পারছিনা।কেন পারিনা বাবা!লোকে কেন বলে আবেগ??আবেগ হলে এত কষ্ট কেন হয় আমার?
সে তো আমায় ভালোবাসেনা।একটিবার ফোন ও করেনা।খবর নেওয়া তো দূরে থাক।
আচ্ছা একটা দিনে মানুষ এত বদলে যেতে পারে?তাহলে আমি বদলে যেতে পারছিনা কেন?’
চলবে ♥

#লীলাবালি🌺
#পর্ব_৩৬
আফনান লারা
.
কুসুম হাওয়াই মিঠাইটা শেষ দিয়ে বাড়ি ফিরে এসেছিল যখন সেসময়ে অর্ণব ঘুমাচ্ছিলো।ওর ঘুম যেন না ভাঙ্গে তার কারণে সে রুমে ঢোকেনি।এদিকে সবার রুমের দরজা বন্ধ।কারেন্ট নেই বলে টিভিও দেখা যাবেনা।তাই কুসুম টিভির ক্যাবিনেট থেকে কিছু ম্যাগাজিন বের করে ওগুলো নিয়ে ফ্লোরে গোল হয়ে বসলো।সবগুলোতে মডেলের ছবি আর গাদা গাদা ইংরেজীতে রচনা।কুসুম ওগুলোতে হাত বুলিয়ে ভাবছে যারা পড়াশুনা জানে তারা কতইনা ভাগ্যবান।
পড়াশুনা কত বড় উন্নতিতে আসে যারা জানেনা তারাই বোঝে।
-‘ইশ যদি আমি একটুখানি পড়াশুনা জানতাম তাহলে হয়ত এখন এগুলো পড়তে পারতাম।সুন্দর সুন্দর মেয়েগুলোর পাশে নিশ্চয় তাদের ব্যাপারে কথা লেখা আছে।আচ্ছা আমি কি এখন পড়তে পারবোনা?চাইলে?

-‘হ্যাঁ নিশ্চয় পারবে!’

অর্ণবের বাবার কথা শুনে কুসুম ঘাঁড় ঘোরালো।তিনি বললেন এই মহৎ কাজ একমাত্র অর্ণবই করবে।তার নির্দেশ তিনি দিবেন।অর্ণব ভালো শেখাতে পারে।
এসএসসি পাশের পর অনেক ছাত্রছাত্রী সে পড়িয়েছে।বিশেষ করে বাংলা ব্যাকরণ। কুসুমকে পড়াতে তার বেশি সময় লাগবেনা।কুসুমের মুখে বিশ্ব জয় করবার মতন হাসি প্রথমবার ফুটলেও শেষকক্ষণে মনটা খারাপ হয়ে গেলো।
বাবা জিজ্ঞেস করলেন কি কারণে সে মুখটা ফ্যাকাসে করে ফেলেছে।
কুসুম জবাব দিলোনা।তার জবাব হয়ত বাবাও জানেন।আর তা হলো অর্ণব ওকে পছন্দ করেনা,পড়ালেখা শেখাতে যাবে কোন দুঃখে?তাছাড়া ও তো এখানেই থাকেনা।
“”””””কত কারণ আছে কুসুমের মন খারাপের।ওর মন খারাপের কারণ হাজারটা থাকলেও, ওর মন ভালো করবার একটা কারণ তিনি খুঁজে পেলেনা না””””””
মেয়েটা কেন এত কষ্ট পাবে?তার কি দোষ?যদি ওকে পছন্দই না করে তাহলে কেন অর্ণব ওকে বিয়েটা করলো?সব গোলকধাঁধার মতন ঘুরপাক খাচ্ছে।
আচ্ছা কুসুম তুমি জানো অর্ণব তোমায় কি কারণে সেদিন এত ব্যস্ত হয়ে বিয়ে করেছিল?’

কুসুম দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে উঠে দাঁড়িয়ে বললো,’আমার কারণেই,পুরোটা বাধ্য হয়েই’

বাবা ওর কথার মানে বুঝলেননা।চলে গেছেন বাড়ি থেকে মসজিদের দিকে।
কুসুম ওদের রুমের দরজার কাছে এসে অর্ণবকে দেখছে।বালিশ বুকে জড়িয়ে ঘুমোয় সে।সে কি মায়া তার মুখে।
এই মায়া প্রথম যেদিন সে দেখেছিল সেদিনই বুঝেছিল তার এত বছরের অপেক্ষা সার্থক।
পা টিপে টিপে অর্ণবের কাছে এসে বসে দেখছে এবার।
-‘যখন তিনি আমায় পড়াবেন তখন কতই না ভালো সময় আসবে আমার জন্য।ভাবতেই ভালো লাগা কাজ করে।পড়াতে বসলে না জানি কত ভালে লাগবে।’

এবার ওর চোখ গেলো অর্ণবের হাতের উপরের পশমগুলোর দিকে।আস্তে করে ওগুলোতে হাত লাগাতেই ওর খুব হাসি পেলো।অর্ণবকে না জানিয়ে তার হাতের পশম ধরেছে কেমন একটা লুকোচুরি ভাব চলে এসেছে বলে হাসিটা একটু জোরে আওয়াজ করেই বেরিয়ে গেলো মুখ থেকে।অর্ণব জেগে গেছে ওর হাসির আওয়াজে।কুসুম মুখে হাত দিয়ে দূরে সরে দাঁড়ালো।অর্ণব উঠে বসে ওর দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো।হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে গেলেও এখনও ঘোর থেকে বের হতে পারেনি সে।
কুসুম এক পা এক পা করে বেরিয়ে যাচ্ছে ওখান থেকে।ঠিক সেসময়ে অর্ণবের ধমক শুনে থেমে গেলো।

-“আমি ঘুমালে সেটা থেকে তুলে দেবার জন্য তোমাকে কেউ টাকা দেয়?ঘুম থেকে হুট করে তোলা একেবারে ভালো অভ্যাস না।এটা আর কোনোদিন যদি করছো তো ধুরুম করে কিল বসিয়ে দেবো পিঠে।আমাকে যতটা সহজসরল মনে করো আমি অতোটাও না।যথেষ্ট রাগ আমার ভেতরে আছে।আর তোমার প্রতি তো আমার মনে সেই শুরু থেকেই রাগের গোডাউন তৈরি হয়ে আছে।’

-“আমি তো আপনাকে সহজসরল ভাবিনা।’

-“সে যাই ভাবো!’

-“কিছুই ভাবিনা’

-“উফ!যাবে এখান থেকে??যাও!আমাকে ঘুমাতে দাও।জেগে থাকলে জ্বালাবে,তারপর ঘুমালে সেখান থেকে উঠিয়ে আবার জ্বালাবে’
—–
কুসুম রান্নাঘরের দিকে গেছে খাওয়ার কিছু আছে কিনা দেখবে বলে।দুপুরে ভাত কম খেয়েছিল বলে খিধে পেয়ে গেছে এখন।
এসময়ে রান্নাঘরে এসে যে দৃশ্য সে দেখলো তাতে মাথা ঘুরে গেছে।
সাগর সরে দাঁড়ালো,মিশু ও মুখ ঘুরে অন্যদিকে ফিরে গেছে।কুসুম ওখান থেকে ছুটলো রুমের দিকে।অর্ণব সবেমাত্র বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়িছিল অজু করে নামাজ পড়তে যাবে বলে।কুসুম ছুটে এসে রুমে ঢুকতেই ওর সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে গেলো।
অর্ণবের মনে হলো গলার নিচের হাঁড়টা মনে হয় ভেঙ্গে দু টুকরে হয়ে গেছে।গলা মুছতে মুছতে কুসুমের দিকে তাকালো সে।কুসুম ব্রু কুঁচকে কপাল ঘঁষছে ওর দিকে চেয়ে।

-“কি??তোমাকে না বললাম আমাকে এত জ্বালাবে না।এত জোরে ধাক্কা দিলে কেন?বাঘে তাড়া করেছিল তোমায়?কম বয়সে আমার হাঁড়ভাঙ্গতে চাও?কি শক্ত কপাল তোমার!’

-“শক্ত তো আপনার গলার নিচের হাঁড়টা।আমার কপাল দেবে গেছে দেখুন একবার’

-“টসটসে মাংস যুক্ত দেহে বাড়ি দিলে সেটা দেবে গিয়ে আবার আগের মতন ফুলে ওঠে।এই আর এমন কি!ঘরে ভূত দেখে ওমন ছুটছো নাকি আবারও ইচ্ছে করে আমাকে জ্বালাতে ধাক্কা দিলে?’

-‘কককককক…’

-“তোতলাও ক্যান? ক তে কি?’

-“কিছুনা’

-“দেখি সরো’

অর্ণব কুসুমকে সরিয়ে রুম থেকে বের হতেই দেখলো মিশু আর সাগর মিটমিট করে হাসতে হাসতে তাদের রুমে চলে যাচ্ছে।
অর্ণব পেছনে তাকালো এবার।কুসুম জিভে কামড় দিয়ে বারান্দার দিকে দৌড় মেরেছে।
-‘কি এক ঝামেলা!ভাইয়া এসব কি শুরু করলো!বাচ্চা মেয়েটার সামনে ইজ্জতের আর কিছু অবশিষ্ট থাকলোনা।কি ভাবছে!কি দেখছে কে জানে!এগুলো দেখে দেখে শিখবে তারপর আমার দিকে ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থাকবে আশায়!’

-‘এই এদিকে এসো’

ডাক শুনে বারান্দা থেকে এসে কুসুম মাথা নিচু করে অর্ণবের সামনে দাঁড়ালো।

-‘আসরের নামাজ পড়ো গিয়ে।’

-“আজান দেওয়ার পরই পড়েছি আমি’

-‘তাহলে যাও ছাদ থেকে আমার গামছা নিয়ে এসো।’

কুসুম মাথা নাড়িয়ে চলে গেছে।ওকে কাজে ব্যস্ত রাখলে যা কিছু দেখেছে ওসব ভুলে যাবে একেবারে।মনে না থাকাই ভালো।’

কুসুম অর্ণবের গামছাটা মাথায় দিয়ে পুরো ছাদে ঘুরছে।অর্ণব অজু করে বসেছিল গামছার জন্য।ও এখনও আসছেনা দেখে সে নিজেই ছাদের দিকে গেলো এবার।ওখানে এসে দেখলো কুসুম রেলিংয়ে উঠে লিচুগাছের ঢাল ধরে ফুল নেওয়ার চেষ্টা করছে।অর্ণব ভয় পেয়ে ছুটে এসে ওর হাত ধরে বললো,’মাথা গেছে তোমার?এখান থেকে পড়লে তো মরবা!’

-“আমি এত সহজে মরবোনা।বয়স কম না?মানুষ তো মরে বৃদ্ধ হলে’

অর্ণব কুসুমকে নিচে নামালো হাত টেনে।এরপর ওর মাথা থেকে নিজের গামছাটা নিয়ে বললো,’জোয়ানরাও মরে।পার্থক্য আয়ুর।যার আয়ু যতদিন সে ততদিন বাঁচে।আয়ুকাল ঠিক করে রাখেন আল্লাহ”

কুসুম পিছু পিছু আসতে আসতে বললো, তো আমার আয়ু যদি এখন শেষ হয়ে যায় আমি এখন মরে যাবো এমনি এমনি?’

অর্ণব থেমে গিয়ে ওর দিকে অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললো,’এত মরার কথা বলছো কেন?মরার শখ জাগছে তোমার? কেন এতো জ্বালাও?”

কুসুম অর্ণবের মুখে জমে থাকা পানি দেখছিল।চিলেকোঠার ফাঁক দিয়ে যে বিকালের রোদ ছিল তা এসে পড়ছিল ওর মুখে।ওর কোনো কথাই সে কানে নিলোনা।আগ্রহ দিয়েছিল শুধু ওকে দেখার খাতিরে।
অর্ণব চলে গেলো।কুসুম ও চলেছে।
অর্ণব কুসুমের মাথা থেকে গামছা নিয়ে কখন যে নিজের মাথায় রেখেছিল তা জানতোনা।কুসুম বিষয়টা খেয়াল করে ফিক করে হেসে ফেললো।পুনরায় আবার থেমে কুসমের দিকে তাকিয়ে বকতে যেতেই রান্নাঘরের পাশে ভেসিনের মিররে চোখ পড়ে দেখলো গামছা ওর মাথায়।

চুপচাপ গামছটাকে হাতে নিয়ে চলে গেলো সে।
কুসুম হাসতে হাসতে ওর সাথে রুমে ঢুকেছে।অর্ণব মুখ মুছে টুপি পরে চলে গেলো।
আশ্চর্য হলো কুসুমও ওর সঙ্গে সঙ্গে যাচ্ছে।অর্ণব আর সহ্য করতে পারছেনা।কুসুমকে ধমকাতে ধমকাতে এখন আর ধমক আসলোনা।ওর দিকে তাকিয়ে শুধু জিজ্ঞেস করলো ও অনুকরণ কেন করছে।

-“কই আমি অনুকরণ করছি?আমি তো বেগমদের বাড়িতে যাচ্ছি ওকে ডাকতে।আপনিই তো শুধু পেছনে তাকিয়ে দেখেন আমি আসছি কিনা’

অর্ণবের গাল লাল হয়ে গেলো কথাটা শুনে।চোখ নামিয়ে হাঁটার গতি বাড়িয়ে দিয়ে চলে গেছে।
কুসুম বেগমদের বাড়িতে এসে ওর নাম ধরে ডাকলো কয়েকবার।বেগমের সাথে কিছু সময় কথা বললো ওর বাড়ির লোকদের নিয়ে।।বেগম অনেকবার করে কিছু মুখে দিতে বলেছে কিন্তু কুসুম মানেনি।
সে চলে আসার আগে বেগমের ভাই বের হয়েছিলো ঘর থেকে।
তবে সে কিছু বলেনি শুধু কুসুমকে খারাপ নজরে দেখছিল।কুসুম সেটা বুঝতে পেরে বেগমকে জলদি বাড়িতে আসার কথা বলে তাড়াহুড়ো করে চলে আসলো ওখান থেকে।
ঐ ছেলেটাও এদিকেই আসছে।কুসুমের এবার ভয় হলো।মনে পড়ে গেলো রাখালের সেই চাহনির কথা।
ভয়ে গলা শুকিয়ে গেছে।বাড়ি কতদূরে মনে হলো।পথ যেন শেষই হয়না।
ওদিকে ছেলেটা মশকরা করে বললো,’কে গো তুমি?এই এলাকায় নতুন?বিয়ে হইছে তোমার?’

কুসুম কিছু না বলে ছুটছে।অর্ণব সেসময়ে নামাজ পড়ে বাড়ি ফিরছিল।সে দূরে ক্ষেতের কিণারা দিয়ে আসছিল বলে ছেলেটাকে খেয়াল করেছে কুসুমকে ফলো করতে দেখে।
তাই সে জলদি করে হেঁটে ঐ ছেলেটার পথ আটকে দাঁড়ালো।
ছেলেটা ওকে চিনতে পেরে বললো,”কেমন আছেন অর্ণব ভাইয়া?’

-“বেশ ভালো।ওরে চিনো তুমি?’

কুসুম একটু দূরে দাঁড়িয়েছিল।অর্ণবকে দেখে সেসময়ে থেমে গিয়েছিল সে।
ছেলেটা জবাবে বললো চেনেনা।

-“ও আমার বউ হয়।আর কিছু জানতে চাও?’

ছেলেটা মাথা নাড়িয়ে চলে গেছে কিছু না বলেই।কুসুম মুচকি হেসে কিছু বলার আগেই অর্ণব কাছে এসে বললো,’তোমাকে না বললাম এমন টইটই করে ঘুরে বেড়াবেনা?তুমি জানো এখানে কত খারাপ মানুষ আছে?নিজে সেল্ফ ডিফেন্সের আগামাথাও জানেনা।
সবসময় আমি থাকবো বাঁচানোর জন্য?’

-‘থেকে আসছেন তো’

কুসুমের বলা শেষ কথাটা শুনে অর্ণব আবারও তার কথা হারিয়ে ফেলেছে।
-‘এই মেয়েটা কেন এত বিশ্বাস করে?তার মনে কি ভয় নেই?বা আমাকে অপছন্দ করতে ইচ্ছা করেনা?এত করে বকাঝকা করি।অপমান করি তারপরেও ঘুরেফিরে মুগ্ধতার চোখে তাকিয়ে থাকবে সবসময়।যেন এর আগে আমার মুখ থেকে সে মিষ্টি কথা শুনেছে।অথচ আজ পর্যন্ত আমি একটা মিষ্টি কথাও তাকে বলিনি!মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে বলতে যে আমায় এত বিশ্বাস করতে হবেনা।আমি সবসময় থাকবোনা এমন বিপদে বাঁচাতে।’

চলবে♥