#লীলাবালি🌺
#পর্ব_৪০
আফনান লারা
.
মৃদুল বাসা থেকে বের হবার পর অর্ণবকে ফোন দিয়েছে।ওর থেকে বাসা ভাঁড়ার কথাশুনে বললো এত ইজি হবেনা তারপরও খুঁজে দেখবে।তবে একদিনে পাওয়া একেবারেই সম্ভব না।আপাতত হোটেলে দু তিনদিন থাকতে হবে।
অর্ণব মানিব্যাগ বের করে টাকা গুনছে।কুসুম একটু কাছে এসে বললো,”আমি না কাল রাত থেকে কিছু খাইনি।এখন
খিধে পেয়েছে।’
অর্ণব মাথা তুলে অবাক হয়ে তাকালো।তারপর মানিব্যাগ পকেটে নিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে বললো,’দুপুর আড়াইটা বাজে, তুমি এখন পর্যন্ত কিছুই খাওনি?’
-‘না’
অর্ণব চোখ রাঙিয়ে যেতে যেতে বললো,’দরজা আটকাও।আমি খাবার নিয়ে আসি ‘
কুসুম ছুটে এসে বললো,’আমি সহ যাবো।কখন আসবেন?’
-“হোটেলের নিচ তলায় যাচ্ছি।তোমায় যেতে হবেনা।বসে থাকো’
—
দরজা লাগিয়ে কুসুম নিজের আঁচলটা ধরে দেখলো।মা বলতেন স্বামীরা যখন স্ত্রীর আঁচলে মুখ মোছে সেটা একজন স্ত্রীর কাছে দারণ অনুভূতি হয়ে ফুটে ওঠে।মায়ের কথাটা আজ সে বাস্তবে দেখে বুঝতে পারলো,অনুভব করে নিতে পারলো।আঁচলটাকে মুঠো করে ধরে হাসছে সে।
অর্ণব হোটেলের নিচে এসে পড়লো বিপাকে।এই মেয়ে কি খাবে?জিজ্ঞেস করে আসা উচিত ছিল।এত বড় হোটেল অথচ একটা লিফট নেই।এখন আবার সেখানে যেতে হবে।একেবারে পাঁচ তলা!
আচ্ছা ও কি ফোন এনেছে?
বুদ্ধি করে কুসুমের নাম্বারে কল করে দেখলো সে।
রিং হচ্ছে।অনেকক্ষণ যাবত রিং হবার পর কুসুম রিসিভ করেছে।
-‘এতক্ষণ কই ছিলে?যাই হোক ভাল করেছো ফোন এনে, এবার বলো কি খাবে?আমি তো জানিনা তুমি কি খাও’
-“আপনি যেটা খাবেন’
-“আমি যদি কাঁচা মাছ খাই সেটাও তুমি খাবে?বোকার মতন কথা।মাছ খাবে নাকি মুরগী?যেটা বলবে সেটা কিনে আনবো ‘
-‘ইলিশ মাছ খাবো আর সাদা ভাত।’
—
খাবারের প্যাকেট নিয়ে অর্ণব আবারও হাঁটা ধরেছে।হাঁটতে তার কোনো সমস্যা হয়না কোনোদিনও।বরং হাঁটতে ভালোই লাগে।কিন্তু সিঁড়ি দিয়ে উঠতে এত বেশি খারাপ লাগা কাজ করে য়ে সিঁড়ি দিয়ে ওঠার নাম শুনলে ওর অন্য উপায়ের পেছনে দৌড়াতে ইচ্ছে হয়।
রুমে ফিরে কুসুমের হাতে খাবারের প্যাকেট ধরিয়ে দিয়ে বিছানায় লম্বা হয়ে শুয়ে পড়েছে সে।শুয়ে শুয়ে বললো,’সিঁড়ি দিয়ে ওঠার কষ্টের অনুভবতা আমার বৃদ্ধকালে আসার আগে জোয়ানকালেই এসে পড়েছে।পা শেষ!প্রচণ্ড ব্যাথা!! ‘
কথাটা শেষ করার দু মিনিটের মাথায় সে টের পেলো দুটো নরম হাতের ছোঁয়া পায়ের উপর।
মাথা তুলে চেয়ে দেখলো কুসুম ওর পা টিপছে।
এক ঝটকায় পিছিয়ে গেলো অর্ণব।চোখ বড় করে বললো,’এ্যাই তোমায় কে বলেছে পায়ে হাত দিতে?’
-“ব্যাথা করে যে বললেন, তাই’
-“না না।লাগবেনা, আমার পা ঠিক আছে এমনিতেই’
-“সমস্যা নেই।দিন আমি সুন্দর করে মালিশ করে দিলে ব্যাথা চলে যাবে’
-“তোমার না খিধে পেয়েছে?যাও খেতে বসো।পায়ে হাত দিবেনা একদম ‘
অর্ণব সোজা হয়ে বসে পড়লো।কুসুম হঠাৎ এমনটা করবে সে কল্পনাও করতে পারেনি।একটুর জন্য দম আটকে ছিল ওর।কুসুম খাবারের একটা প্যাকেট খুলে গোল হয়ে বসে বললো,’আপনি আমার সাথে খাবেননা?’
-“পরে।তুমি খাও’
সে খাওয়া শেষ করে যখন অর্ণবের দিকে আরও একবার তাকালো দেখতে পেলো সে হাতের উল্টো পিঠ কপালের উপর রেখে ঘুমায়।
বিছানা ছেড়ে নেমে হাত ধুয়ে এসে ওর পায়ের কাছে বসে আস্তে করে পা টিপতে লাগলো সে।
সাধারণত যার পা টিপা হয় তার তৃপ্তি পাবার কথা অথচ তৃপ্তি পাচ্ছিল কুসুম।মুখে মিষ্টি হাসি ফুটিয়ে বড়ই স্নেহের সাথে পা টিপে যাচ্ছে সে।
অর্ণব ঘুমের ঘোরে টের পেয়েছিল তার পায়ে কেউ হাত লাগিয়েছে।বিকেলে চোখ খোলার পর পায়ের আশেপাশেও কুসুমকে সে পেলোনা।কুসুম জানালার গ্রিল ধরে নিচে তাকিয়ে দেখছিল।চোখ ডলে উঠে দাঁড়িয়ে সে জিজ্ঞেস করলো কুসুম কি পা টিপেছিল?
কুসুম মাথা নাড়িয়ে বললো,’না তো’
-‘ওহ!আচ্ছা তুমি থাকো।আমি আমার মেস থেকে ঘুরে আসি’
-‘কখন আসবেন?আপনি তো দুপুরের খাবারও খাননি’
-“ওটা থাকুক।আমি ঢাকায় আসলে দুপুরে চেয়েও খেতে পারিনা।অনেক সময় ইচ্ছেই করেনা।এগুলো থাকুক।’
-“কখন আসবেন?’
অর্ণব কিছু না বলেই বেরিয়ে গেছে।সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে অনেক ভেবে দেখলো।
এটা তো বাসা নয়,এটা হোটেল।কুসুমকে একা রাখা কি ঠিক হবে?
যখন সে সিদ্ধান্তে আসলো এটা ঠিক হবেনা তখব চেয়ে দেখলো সে নিচ তলায়।আবার উপরে কে যাবে?কোমড়ে হাত রেখে সিঁড়ি বাইতে গিয়ে ফোন বের করে কল করলো কুসুমকে।
-‘হ্যালো কুুসুম।দরজা লক করে জলদি নিচে চলে আসো, আমি অপেক্ষা করছি’
-“কি?কেন?’
-‘যেটা বললাম করো’
-“আমি তো তৈরি না’
-“যে শাড়ীটা পরা আছে ওটাই যথেষ্ট। নিচে আসো আমার পক্ষে পাঁচ তলায় এখন উঠা পসিবল না।মরে যাব আর একবার উঠতে গেলে’
কুসুম দরজাটা বাহিরে দিয়ে আটকে চাবি ঘুরিয়ে লক করে ছুটলো।অর্ণবের কার্যকলাপে আজ সে বারবার অবাক হচ্ছে।সে তাকে একা ছাড়তে চায়না বলে এখন বুঝি ডেকে পাঠালো?
এই মানুষটা প্রথমে না না করলেও পরে ঠিক মেনে যায়।
কয়েকটা সিঁড়ি নামার পর কুসুম হঠাৎ থেমে গেলো।
“মেনে যায় মানে সব বাধ্য হয়ে করছেন আর আমি খুশি হয়ে তাল মেলাই?ছিঃ!এতদিন কেন ভাবলাম না!’
—
অর্ণব দেয়ালের সঙ্গে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে কুসুমের।বারবার হাতের ঘড়ি দেখছে আর বিল্ডিংয়ের দিকে তাকাচ্ছে।
ওর সামনে বিশাল ব্যস্ত রাস্তা,প্রাইভেট কার,ট্যাক্সি,রিকশাতে জট বেঁধে আছে।তার ভেতর জ্যামে থেকেও যানবাহন গুলো ক্যাঁচপ্যাঁচ করে শব্দদূষণ করতে যেন প্রতিযোগিতায় নেমেছে।
সেসময়ে কুসুমের কল দেখে সঙ্গে সঙ্গে রিসিভ করে বললো,’কই তুমি?কল করলে কেন?’
-‘আমি আসছিনা।আপনি যান।আমি একা থাকতে পারবো’
-‘মানেহ!একা থাকতে পারবে নাকি পারবেনা সেটা আমি বুঝবো,তোমাকে জিজ্ঞেস করিনি।জলদি নামো।সেই কখন থেকে দাঁড়িয়ে আছি আমি আর তুমি এত সময় পর এসে বলছো আসবেনা?’
“আপনি যান।আমি ঘুমাবো”
“না আমি যাবোনা।আচ্ছা তুমি কি চাইছো আমি পায়ের ব্যাথা নিয়ে পাঁচ তলায় উঠতাম?’
“ঠিক আছে আসছি”
কুসুম রুম অবধি চলে গিয়েছিল।অর্ণবের কথা শুনে আবারও ছুটলো।নিচে নেমে মাথা নিচু করে ওর সামনে এসে দাঁড়ালো সে।
অর্ণব কোমড়ে হাত রেখে দেখছিল ওকে তারপর এক ধমক দিয়ে হাঁটা শুরু করেছে।কুসুম আঁচল মাথায় টেনেটুনে বললো,’আমরা কোথায় যাই?’
-‘ঘুরতে’
—-
মৃদুল আজ বিকেলে চায়ের আড্ডাতে ছিল।চা খেতে খেতে রেসাল্ট কবে আসবে, কেমন আসবে তা নিয়ে আলোচনা করছিল সবাই মিলে।চায়ে সবেমাত্র এক চুমুক দিয়েছিল তখনই কল আসলো জুথির ভাই ফরহাদের।সে জানালো জুথি নাকি রেডি হয়ে বেরিয়ে গেছে।যাবার সময় নিজের জমানো সব টাকাও নিয়ে গেছে।
মৃদুল বললো,’আমার নাম্বার কই পেলে?’
-‘মৃদুল সোহিব কোচিং সেন্টার”নামের একটা কার্ড থেকে।এই কার্ডটা জুথি বুবুর রুমে পেয়ে নাম দেখে চিনেছি আমি’
কল কেটে ফরহাদের কথায় মৃদুল প্রথমে হাসলো তারপর জুথিকে কল করতে করতে চায়ের কাপ রেখে হাঁটা ধরেছে যেখানে জুথিকে পাওয়া যাবে সেই গন্তব্যের দিকে।
চলবে♥
#লীলাবালি🌺
#পর্ব_৪১
আফনান লারা
.
জুথি বাসায় তার যা জমানো টাকা পয়সা ছিল সব নিয়েছে ঠিকই তবে শুরুতেই বিয়ার কিনতে ছোটেনি।হেঁটে হেঁটে লেকের কাছে এসে থেমেছে।স্থান রবীন্দ্র সরোবর। এখানে অর্ণবের সাথে একবার হাঁটা হয়েছিল।ঐ তো সেদিনই।গোলাপ ফুল দিয়েছিল অর্ণব।দেখতে দেখতে মাঝখানে এসে দাঁড়িয়ে পড়েছে জুথি।তার আশেপাশে শত শত মানুষ।যে যার কাজে ব্যস্ত। কেউ ফ্রেন্ড সার্কেল সাজিয়ে আড্ডা পাতিয়েছে,কেউ বা প্রেমিক-প্রেমিকা যুগল হাতে ফুল কিংবা লাভ শেপ গ্যাস বেলুন নিয়ে নাড়াতে নাড়াতে মিষ্টি আলাপ করছে।
কোণায় দেখা যায় স্বামী স্ত্রী আর তাদের দু বছরের ছোট্ট বাবু।বাবুটার হাতে এরোপ্লেনের বেলুন।
কেউ খেয়াল করছেনা জুথিকে।জুথির চোখ আকাশের দিকে।খোলা চুল দেরি করে আসা বাতাসে উড়ছে বারবার।গায়ে তার ধুসর রঙের জামদানি। হাতে মোটা বালা।আর কোনো অতিরিক্ত সাজ দেখা গেলোনা তার মাঝে।হঠাৎ নিজের সোজা লম্বা চুলের আগায় কেউ কিছু একটা করলো মনে হলো।কিন্তু কি করলো বোঝা গেলোনা শুরুতেই।কয়েক সেকেন্ড পর সে খেয়াল করলো তার চুল সহ আকাশের দিকে চলে যাচ্ছে।একটা লাল টুকটুকে লাভ শেপের বেলুনের সুতা আটকানো ওর চুলের সাথে।বেলুনটা কয়েক ইঞ্চি উপরে গেলো যতদূর জুথির চুল উপরে গেছে ঠিক ততদূর।
জুথি চোখ মেলে দেখছে বেলুনটাকে।তার চুল ধরে রেখেছে বেলুনটা।
অনেকক্ষণ তাকিয়ে থেকে হাত বাড়িয়ে চুল থেকে বেলুনটা ছুটিয়ে নিলো সে তারপর বেলুনটা ছেড়ে দিলো।মৃদুল সঙ্গে সঙ্গে বেলুনটাকে ধরে ফেলে বললো,’আরে করছো কি!এত সুন্দর একটা মোমেন্ট উপহার দিলাম আর তুমি সব নষ্ট করে ফেলছো?’
-‘আপনি এখানে কি করেন?’
-‘তুমি যেখানে আমি সেখানে’
-‘আমি এখানে সে কথা কে বললো আপনাকে?’
-“এদিক দিয়ে যাবার সময় খাম্বার মতন দাঁড়িয়ে থাকা এক তরুণীর চুল দেখেই চিনে ফেললাম।আর কিঞ্চিত ফর্সা পেটের ঝলক।না চিনে যাবো কই?’
জুথি চমকে পেটে হাত দিয়ে শাড়ী টেনে দিয়ে এদিক ওদিক তাকালো ভয়ার্ত চোখে
মৃদুল হাসি দিয়ে বললো,’ভয় নেই।এত বড় বড় চুলের ঝাড়ের নিচে ঐ সাদা পেট মৃদুলের চোখে পড়লেও বাকিদের চোখে পড়বেনা।মৃদুল খুঁজতে জানে খাঁটি সোনা!!”
জুথি হাঁটা ধরলো সোজা।মৃদুল সঙ্গে আসতে আসতে বললো,’আরে আবার কই যাচ্ছো?’
-“ফ্লার্ট করছেন?নাকি অর্ণব আপনাকে পাঠিয়েছে আমাকে জ্বালাতন করতে?’
-“নাহ।ও কেন পাঠাবে?আমি যা করি নিজ থেকে করি।চা খাবে?’
-‘আপনি যান এখান থেকে।আমাকে একা থাকতে দিন দয়া করে’
মৃদুল থেমে গেলো।জুথি কিছুদূর গিয়ে সেও থামলো।তারপর পেছনে তাকালো
মৃদুল বেলুনটা ঘুরাতে ঘুরাতে অন্যদিকে চলে গেছে।জুথি ওর চলে যাওয়া দেখছে দাঁড়িয়ে।পাক্কা দু মিনিট ধরে পেছনে তাকিয়ে থেকে জুথি যখন চুলে হাত দিলো দেখলো তার সব গুলো চুলের আলাদা আলাদা অংশ করে তিনটা বেলুন লাগানো।সেগুলোও উড়ছে।এটা দেখে রাগ করবে নাকি হাসবে এসব না ভেবে এদিক ওদিকে সে মৃদুলকে খুঁজতে লাগলো।মৃদুল দুহাতে চায়ের কাপ নিয়ে এসে বললো,’এইবার বেলুন কিন্তু আমি লাগাইনি।জনবল লাগিয়ে করিয়েছি।ঐ যে পিচ্চি বাবুগুলা দেখছো ওরা করেছে।অবশ্য জনপ্রতি দশটাকা করে দিতে হয়েছে।সে যাই হোক, হাসি ফোটাতে আমার লাখ টাকা গেলেও টের পাবোনা’
জুথি এক এক করে বেলুনগুলো খুলে বাচ্চাগুলোকে ফিরিয়ে দিয়ে বসলো চেয়ারে।মৃদুল ও বসলো।তবে চুপচাপ অবস্থায় চায়ের কাপটাও এগিয়ে ধরেছে সে।জুথি কাপটার দিকে তাকিয়ে বললো,’আপনি এরকম কেয়ার কেন করেন?পছন্দ করেন আমায়?নাকি অন্য কিছু?’
-‘পছন্দ কি জিনিস?অনেক আগে একটা মেয়েকে পছন্দ করতাম। সে এমন চিট করেছে যে আমি পণ করেছি আর কোনো নারীকে সেভাবে পছন্দ করবোনা।আসলে আমি অনেক বছর ধরে একাকিত্বে ভুগেছি।জানি এটার মতন খারাপ লাগা বুঝি আর কিছুতে নেই।তো ভাবলাম তোমাকে এমন সিচুয়েশন থেকে বাঁচিয়ে তুলবো।
তোমার একাকিনী ভাব যাবে সাথে আমারও।’
জুথি মৃদুলের কথায় কান দেয়নি।চা খেতে খেতে পাশে বসা একটা কাপলকে মনযোগ দিয়ে দেখছিল।দেখে মনে হয় যেন কালই তাদের বিয়ে হয়েছে।মেয়েটার মুখের হাসির কোনো অন্ত নেই।হাত ভর্তি মেহেদি।বারবার ঘোমটা টানছে।
আর ছেলেটার চোখ মেয়েটার থেকে নড়ছেইনা।কি সুন্দর এক দৃশ্য।মৃদুল জুথির চাহনি দেখে নিজেও তাকালো।জুথি কি ভালো লাগা খুঁজে পেয়েছে সে বুঝলোনা।এমন কাপল সে বহু বার দেখেছে।তাই ভেংচি কেটে মানিব্যাগ বের করে চায়ের টাকা দিয়ে আসলো।এসে দেখলো জুথি তার জায়গায় নেই।কপালে হাত দিয়ে এবার এক দৌড় দিলো সামনের দিকে।অনেকক্ষণ যাবত খোঁজার পর পেলো জুথিকে।সেই বাচ্চাগুলো একজোট হয়ে জুথির হাতে বেলুনের সুতো গিট্টু দিয়ে দিচ্ছে আর জুথি হাসছে ওদের সাথে।মৃদুল এগিয়ে এসে চোখ মারলো বাচ্চাগুলোর দিকে তাকিয়ে।
——
অর্ণব কুসুমকে সাথে নিয়ে একটা শপিংমলে এসেছে।সেখানে খাবারের অর্ডার করে বসে আছে এখন।কুসুমের হাতে একটা আইস্ক্রিম।কিছুক্ষন আগে অর্ণব কিনে দিয়েছিল।আইস্ক্রিম খেতে খেতে কুসুম এখানকার মানুষগুলোকে দেখছিল হা করে।কি সুন্দর মানুষগুলো।কিছু কিছু মেয়ের পোশাকে অভিনবতা দেখে মাঝে মাঝে সে তার শাড়ী টেনেটুনে ঠিক করছে তো আবার চুল ঠিক করছে।অর্ণব বিষয়টা বুঝতে পেরে বললো,’আমি বললাম না শাড়ীতে ঠিক আছে।এরকম বোধ করছো কেন?নরমাল হও’
কুসুম হঠাৎ করে প্রশ্ন করলো মৃন্ময়ী কেমন আছে।
অর্ণবের মাথাতেই ছিলনা জুথির কথা।কুসুমের প্রশ্ন শুনে ওর মুখের দিকে দু মিনিট তাকিয়ে থেকে বললো,’আমিও জানিনা।আচ্ছা মৃদুলকে কল করে দেখছি’
মৃদুল জুথিকে নিয়ে ঐ শপিংমলেই এসেছে।এমনিতে ঘুরতে।
অর্ণব ওকে কল করায় ফোন বের করে কানে ধরে সামনে তাকাতেই দেখলো ওরা দুজন বসে আছে ওখানে।মৃদুল চোখ বড় করে পাশে তাকালো।জুথি একটা প্লাস্টিকের ফুলের টব দেখছিল হাত দিয়ে ছুঁয়ে।এখনি ওদের দেখেনি।
মৃদুল চট করে ওর হাত ধরে টেনে অন্যপাশে নিয়ে আসলো।
-‘আজব!কি হলো?হাত ছাড়ুন!’
জুথি হাত ছাড়িয়ে ব্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে।ওদিকে অর্ণব কলে হ্যালো হ্যালো করে যাচ্ছে।
-“ভাই তোরে আমি পরে কল করছি”
-“আগে বল জুথি কেমন আছে?’
-“ভালো’
-‘কই তুই?যে গান আমাদের পাশে বাজতেছে সেটা দেখি তোর পাশ থেকেও শোনা যায়।তুই সীমান্ত সম্ভারে নাকি?’
-“নানানানা।কে বললো?গান তো একটা দোকানে বাজছে।’
—
জুথি সোজা চলে গেছে অনেকদূর।মৃদুল কল কেটে আবারও ছুটলো সামনের দিকে।অর্ণবের সন্দেহ হলো বলে সে উঠে একটু এগিয়ে দেখতে গেলো।
মৃদুল হন্তদন্ত হয়ে জুথিকে খুঁজতে ব্যস্ত। এদিকে কুসুম অর্ণবকে যেতে দেখে সেও গেলো।কিন্তু এত এত গলির মাঝে সে নিজেই হারিয়ে গেছে।এখন অর্ণবকে কোথাও পাচ্ছেনা।সবুজ রঙের পাঞ্জাবি পরা কাউকেই নজরে আসছে না তার।
কুসুমের চোখে পানি এসে গেছে।এত এত মানুষের ভীড়ে কোত্থাও কাছের মানুষটার ঝলক না দেখে।হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে চোখ মুছে হাঁটার গতি বাড়িয়ে ছুট লাগালো সে।
ওদিকে অর্ণব মৃদুলকে কোথাও না পেয়ে যখন ফিরে আসলো তখন সিটে কুসুমকে না দেখে তার মনে হলো পায়ের তলার মাটিটাই বুঝি সরে গেছে।এবার সে কুসুমকে খুঁজতে ছুটলো।
মৃদুল আর খোঁজ পাবেনা ভেবে জুথি একটা শপের সামনে দাঁড়িয়ে মিটমিট করে হাসছিল ঠিক সেসময়ে হাঁপাতে হাঁপাতে কুসুম ওর সামনে দিয়ে গেলো।ওর মুখ দেখেই চিনেছে জুথি।ওকে ছুটতে দেখে সেও পিছু পিছু গেলো।দু কদম হাঁটার পর তার হাঁটার গতি নিঃশেষ হয়ে পড়েছে।সে দেখলো কুসুম কিছুদূর যেতেই অর্ণবের সামনে দাঁড়িয়ে কেঁদে কেঁদে ওকে জড়িয়ে ধরলো হঠাৎ।এই দৃশ্য দেখে জুথির মুখের হাসি নিরুদ্দেশ হয়ে গেলো। চুপ করে শুধু দেখছে সে।অর্ণব প্রথমে ইতস্তত বোধ করলেও পরে কুসুমের মাথায় হাত বুলিয়ে ওকে কাঁদতে মানা করলো।
আশেপাশের মানুষেরা তাদের কাজ ফেলে দেখছে ওদের দুজনকে।
অর্ণব দুহাত দিয়ে কুসুমের চোখ মুছে হাতটা শক্ত করে ধরে চলে গেছে।জুথি এখনও ওখানে দাঁড়িয়েছিল।ওরা চলে যাবার পর মুখটা ফ্যাকাসে করে পিছনে ফিরতেই মৃদুলকে সামনে পেলো সে।
ও রাগান্বিত হয়ে আছে।রেগে রেগে বললো,’কি সমস্যা তোমার?আমি তোমার খেয়াল রাখছি বলে সবসময় আমায় দৌড়ের উপর রাখবে?আশ্চর্য! আর একবার এমন লুকোচুরি খেললে থাপ্পড় মেরে দেবো দু গালে দুইটা।এরকম সীমা অতিক্রম করা মেয়ে আমি এর আগে দেখিনি।অনামিকাও এত বেয়াদব ছিলনা।আমার হাতে চড় খেয়েও দাঁত কেলাতো’
জুথি চোখ নামিয়ে যেতে যেতে বললো,’তাই সে আজ আপনার না,অন্য কারোর।সবসময় হাসির মূহুর্ত কাটানো মানুষটা নিজের হয়না।দিনশেষে যেমন সে দাঁত কেলায় দিনশেষে সে অন্য কারোর হতে একদিন সময় লাগায়না।’
মৃদুল কোমড়ে হাত রেখে বললো,’প্লিজ আবার যেওনা।ওকে আমি সরি!!খাবে কিছু?’
চলবে♥
#লীলাবালি🌺
#পর্ব_৪২
আফনান লারা
.
আজ নিজের অজান্তেই পরিস্থিতির চাপে পড়ে কুসুম অর্ণবকে জড়িয়ে ধরেছিল এটা মনে পড়লো তার কিছুক্ষণ পরেই।মনে পড়ার পর ভয়ার্ত চোখে অর্ণবকে বারবার করে দেখছিল সে।
অর্ণব ধরে নিয়েছে কুসুম ভয় পেয়ে জড়িয়ে ধরেছিল তখন, ইচ্ছে করে তো ধরেনি।তাই বিষয়টাকে সে ওতোটাও গুরুত্ব সহকারে নিলোনা।
হোটেলে ফেরত যাবার সময় রাতে খাবে বলে কুসুমের জন্য কিছু খাবার কিনে নিলো সে।
রুমে ফেরার পরপরই ফোন নিয়ে পিঠ ঘুরিয়ে শুয়ে পড়লো।কুসুম রিমোট নিয়ে টিভি অন করে ওর পাশে বসে চুপচাপ দেখছে।
সেসময়ে হালকা নড়চড়ে খোঁপার কাঁটা খুলে পড়ে যাওয়ায় ওর খোঁপার সব খাণি চুল এলোমেলো হয়ে খুলে গেছে।তার থেকে কস্কো সাবানের তীব্র ঘ্রান অর্ণবের নাকে আসতেই সে ঘুরে তাকালো।সেই কোঁকড়ানো চুল দেখে তার মনে পড়ে গেলো সেই স্বপ্নর দৃশ্যের কথা।সঙ্গে সঙ্গে মুখটা আবারও ঘুরিয়ে নিলো সে।তারপর ফোনের দিকে তাকিয়ে থেকে বললো,’তুমি চুলে সাবান দেও?’
-“হ্যাঁ।কেন?’
-“শ্যাম্পু করলে চুল ভালো থাকে আর সুগন্ধি ছড়ায়।এখন থেকে শ্যাম্পু দিবে।’
কুসুম মাথায় হাত দিয়ে কিছু চুল নাকের সামনে ধরে শুঁকে বললো,”ওটা দিলে আমার চুল রশির মতন ছুটে আসে হাতে।একবার দিয়ে যে ভুল করেছিলাম।তারপর থেকে কখনওই দিই নাই।’
কথাটা বলে কুসুম তার হাতের চুল ছাড়ার পর দেখলো হাতে কতগুলো চুল ছুটে চলে এসেছে।
তাই আবারও অর্ণবের দিকে ফিরে বললো,’দেখুন এখনও উঠে এসেছে।মনে হয় চুলে আর কিছুই দেওয়া যাবেনা’
অর্ণব পেছনে ফিরে কুসুমের হাতের দিকে তাকিয়ে চোখ বড় করে বললো,’একি অবস্থা।চুল আঁচড়াওনা তুমি?’
-“আঁচড়ালে মাথায় আর চুল থাকবেনা।আমি তিনদিন পর আঁচড়াই।আজ দুইদিন হলো’
-‘যাও চিরুনি আনো।আমি আঁচড়ে দেবো।তুমি হয়ত আঁচড়াতে জানোনা’
কুসুম যেন একটা বিরাট খুশির খবর শুনেছে।ছুটে নিজের ব্যাগের ভেতর থেকে একটা চিরুনি বের করে এনে অর্ণবের কাছে ছুটে গেলো।অর্ণব চিরুনি দিয়ে ওর এলোমেলো কোঁকড়া চুলগুলোকে আস্তে করে আঁচড়াতে যেয়ে দেখলো চুল শুধু শুধু উঠে আসছে।
তা দেখে সে কুসুমকে বললো,’চুলের যত্ন নাও না বলেই এখন সব চুল উঠে যায় তোমার।আমি একটা তেল এনে দেবো।ওটার সঙ্গে নারকেল তেল মিশিয়ে চুলে দিবা,
দুপুরে শ্যাম্পু করবে দেখবে চুলের গোড়া মজবুত হয়ে চুল আর ঝরবেনা’
কুসুম মাথা নাড়ালো।অর্ণব কুসুমের চুলে বেনি করে দিয়েছে।
কুসুম বেনি ধরে বললো,’আপনি বেনি করতে জানেন?’
-“ইউটিউবে দেখেছি।এই আর এমন কি!’
কুসুম খুশি হয়ে আয়নার সামনে গিয়ে ঘুরে ঘুরে নিজের চুলের বেনি দেখছিল।
সেসময়ে অর্ণবের ফোনে কল আসলো মৃদুলের।মৃদুল বাসা ভাঁড়ার খোঁজ পাচ্ছেনা।দেরি হবে জানালো।
-‘ভাই কিছু একটা কর।হোটেলে এতদিন থাকা সম্ভব না।নড়তে পারিনা, চড়তে পারিনা।একটা রুম অথচ ভাঁড়া দু হাজার’
-‘শোন একটা কাজ করতে পারিস।মহাখালীতে আমার বাসার দোতলায় থাকতে পারিস।খালি আছে এখন যতদূর জানি।
জানিস তো বাবার সঙ্গে আমার মিল বেশি একটা নেই।তুই গিয়ে আমার পরিচয় দিলে হয়ত বাবা তোকে রাখবে।আমি নাহয় সব ভুলে বাবাকে ফোন করে বুঝিয়ে দেবো।যেহেতু বাবার সাথে আমার ভাল সম্পর্ক নেই সেক্ষেত্রে তোকে ভাঁড়া দিয়ে থাকতে হবে’
-“আরে বাসা পেলেই হলো।ভাঁড়া দেওয়া চিন্তার বিষয়না’
-‘তাহলে তোরা কাল সকালে রওনা হোস।আমি বাবার সাথে কথা বলে নেবো।ততদিন দেখি এদিকে বাসা পাই কিনা।তাহলে তোরা এখানে চলে আসিস’
-“থ্যাংক ইউ সো মাচ !!’
—
জুথি বাসায় ফিরে জানতে পারলো তার আর দশ দিন পর সিঙ্গাপুর যাবার ফ্লাইট।বাবা সব রেডি করে তারপর ফিরেছেন বাসায়।জুথি কাগজপত্র আর পাসপোর্ট নিয়ে একটা ব্যাগে ঢুকিয়ে নিয়েছে।মায়ের কাছে তার ওয়েস্টার্ন সব ড্রেস আছে।সুতরাং এখান থেকে বারতি জামা নিয়ে যেতে হবেনা।ফরহাদ জেদ ধরেছে সেও যাবে।কিন্তু বাবা ওকে যেতে মানা করলেন।কারণ দুই ভাইবোন চলে গেলে তার একা থাকা অনেক দুঃখের হয়ে দাঁড়াবে।
জুথি ব্যাগটা একপাশে রেখে বিছানায় বসে থাকলো।
-‘কুসুম যেভাবে তখন অর্ণবকে ধরেছিল তাতে মনে হয় ওদের মাঝখানে কোনো কিছুই আর বাদ নেই।অর্ণব এত সহজে সব ভুলে যেতে পারলো,আর আমি বোকা কিছু ভুলতে পারছিনা।
কেন পারিনা?
পারতাম অবশ্যই কিন্তু আমি তেমন স্বভাবের না যে আরেক ছেলের সহায় নিয়ে অতীত ভুলে যাব।মৃদুলকে আমি ইউস করতে চাইনা।আমাকে দিয়ে আর কাউকে ভালোবাসা হবেনা।
শুধু শুধু আমার সাথে সময় কাটিয়ে সে আমার প্রতি উইক হয়ে পড়বে অথচ এটার কোনো ফিউচার নেই।আমার পক্ষে সম্ভব না অর্ণবের বেস্টফ্রেন্ডের সঙ্গে প্রেম জাতীয় কোনো সম্পর্ক গড়ে তোলা।কিন্তু তাকে তো মানা করলেও শোনেনা।’
—–
মৃদুল বসে বসে তার ফোনে আজকের তোলা কিছু ছবি দেখছিল জুথির।
-‘কি প্রাণবন্ত একটা মেয়ে!এরকম মেয়েদের সাথেই কেন এসব ঘটনা ঘটে।তারপর তারা চুপচাপ হয়ে যায়?কেন এমন হয় তাদের সাথে?
আমাকে যখন একটা মেয়ে ধোকা দিয়েছিল সেসময়ে আমি ছিলাম চুপচাপ,ভদ্র স্বভাবের।এরপর ধোকা খেয়ে আমি হয়ে গেলাম মজার একটা মানুষ।ছটফটে।
দুজন মানুষ দুরুপে পরিণত হয়েছে চিট হবার পর।
আমার খুব ইচ্ছে হয় জুথির খারাপ লাগাগুলোকে দূর করে দেই।তাকে আমার মতন হাস্যজ্জ্বল জীবন উপহার দিই।তার মলীন মুখটা দেখলে খারাপ লাগে অনেক।এই মেয়েটা সেদিনই তো ওরিয়েন্টেশন ক্লাসে কতইনা দুষ্টুমি করেছিল আর এখন সব থাকলেও তার মাঝে চঞ্চলতা নেই।’
—
অর্ণব ফোন রেখে ঘুমাচ্ছিল।মেসে থাকলে বই পড়তো এসময়ে।কুসুম বসে থাকতে থাকতে একেবারে বোর হয়ে গেছে।অর্ণব ওর সাথে অতিরিক্ত কথা বলেনা কখনও।দরকার পড়লে বলে তারপর আবার মুখ ঘুরিয়ে রাখে।
ব্যাগে চিরুনিটা রাখতে গিয়ে একটা কাগজ হাতে আসলো।এটা হলো ওর রিপোর্ট।আজ সকালেই হাসপাতালের একজন লোক এসে দিয়ে গেছে।তাড়াহুড়োতে ছিল বলে সে ব্যাগে পুরে নিয়েছিল।কাগজটা মেলে ধরে উল্টে পাল্টে দেখলো কিছুক্ষণ। সব ইংরেজীতে লেখা।এগুলো তো বোঝার কথানা।অর্ণবকে একদিন সময় করে দেখাবে ভেবে কাগজটা গুছিয়ে আবার সে ব্যাগে ঢুকিয়ে রাখলো।
অর্ণব এপাশ ওপাশ করতে যেয়ে খানিক চোখ খুলে দেখতে পেলো কুসুম বসে বসে বেনি খুলছে মুখটা কালো করে।
এটা দেখে সাথে সাথে উঠে বসে সে জিজ্ঞেস করলো এমনটা করার কারণ কি।
-“আমার প্রচণ্ড মাথা ধরেছে।মনে হয় মরে যাবো।মাথাটা বুঝি ছিঁড়ে যাচ্ছে।নাহলে বিশ্বাস করুন! এই বেনি আমি খুলতাম না ‘
-‘চা খাবে?’
-“নাহ।’
কুসুম আবারও বেনি খুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। অর্ণবের মন চাইলো চা খেতে।কিন্তু পাঁচ তলা থেকে নেমে চা খেয়ে আবার পাঁচ তলায় উঠার মন মানসিকতা তার আপাতত নেই।মেসে থাকলে এতক্ষণে হাজার কাপ চা খাওয়া হয়ে যেতো।হোটেলে আসে যারা দূরে থাকে তারা।আর আমি এই অঞ্চলের মানুষ হয়ে কিনা হোটেলে থাকছি এত কষ্ট করে।
হঠাৎ সে দেখতে পেলো কুসুমের চোখে পানি।হুট করে কান্না কেন করছে তার মানে বুঝতে না পরেে জিজ্ঞেস করলো কারণ টা কি।কুসুম জানালো সে বেনি খুলতে পারছেনা,মাথা ব্যাথায় কষ্ট হচ্ছে তার।
অর্ণব এগিয়ে গিয়ে ওকে সামনে বসতে বলে নিজেই বেনি খুলতে লাগলো।কুসুম বারবার চোখ মুছে যাচ্ছে।
অর্ণব বেনি খুলে চুলে সিতা কেটে দিতে দিতে বললো,’তোমার মাথায় তেল লাগবে।তেল দিলে ব্যাথা চলে যাবে সব।চুলের গোড়াও মজবুত হবে।এরকম ছোট কারণে কান্না কেন করতেছো?তুমি তো সহজে কাঁদোনা।আজ পর্যন্ত তোমায় কত কি বললাম তাও কাঁদতে দেখলাম না আর সামান্য মাথা ব্যাথায় কাঁদছো?’
কুসুম মাথা ঘুরিয়ে বললো,’আপনি মাথা টিপে দিয়েছেন এখন বেশ ভালো লাগছে।আচ্ছা আমার সাথে চড়ুই পাখি খেলবেন?’
-‘সেটা কিভাবে খেলে?’
কুসুম ঘুরে বসে অর্ণবকে তার দুহাত বিছানায় রাখতে বললো।তারপর নিজের একটা হাত রেখে বাকি হাতের আঙ্গুল দিয়ে অর্ণবের হাতের আঙ্গুল গুনতে গুনতে বললো,’চড়ুই পাখি বারোটা,ডিম পেড়েছে তেরোটা,একটা ডিম নষ্ট, চড়ুই পাখির মনে বড় কষ্ট।এবার এই আঙুলটাকে গুজে রাখেন’
অর্ণব ফিক করে হেসে বললো,’এরপর সব আঙ্গুল শেষ হলে ধুরুম করে বাড়ি দিবা তাইনা?তবে জেনে রাখো এই গেম আমি জিতবো।হেহে!!’
অর্ণবের হাসি দেখে কুসুম ও হেসে ফেললো।
চলবে♥