#লীলাবালি🌺
#পর্ব_৪৩
আফনান লারা
.
মাওয়া ঘাটে মানুষ বেশিরভাগ সময় খুব ভোরে আসে।টাটকা ইলিশের খোঁজে।টাটকা ইলিশ পেয়ে কেউ বা ওখানের ছোটখাটো ঝুপড়ির রেস্টুরেন্ট গুলোতে খেতে বসে যায়।ধোঁয়া ওঠা গরম ভাত সাথে ইলিশ ভাজা,সঙ্গে আবার ইলিশ ভাজার সুস্বাদু সেই তেল।এরই পাশে যদি থাকে ইলিশের ডিম তাহলে জমে ক্ষীর।
কিন্তু এসবের মায়া ত্যাগ করে মৃদুল এই রাত এগারোটার সময় এসেছে মাছ নিতে।আজ রাত বারোটায় তাদের মেসের ছাদে ইলিশ পার্টি হবে।আইডিয়াটা ওরই ছিল।সবাই রাজি হলো,চাঁদা তোলা হলো।কিন্তু যেহেতু এই সুন্দর বুদ্ধিখানা সয়ং মৃদুল দিয়েছে তাই মাছ আনার দায়িত্বটাও ওর ঘাঁড়ে এসে পড়েছে।
চাদর গায়ে দিয়ে মাওয়া ঘটে এসে উপস্থিত সে।সাজানো ইলিশ মাছের ঝুড়ি দেখলেও সেখান থেকে সে নিতে চায়নি।তার ইচ্ছা একেবারে ট্রলার থেকে লাফানো মাছ নেবে।
পনেরো দশ মিনিট অপেক্ষার পর একটা ট্রলার আসতে দেখলো সে।দূর থেকে লঞ্চ,ট্রলারের আওয়াজ কানে আসছে সাথে ঐ ট্রলারটাও।
হাত ভাঁজ করে মৃদুল একটু কাছে এসে দাঁড়ালো।ট্রলার থামার পর জেলেরা এক এক করে মাছের ঝুড়ি এনে এনে নিচে রাখতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে।
মৃদুল মুচকি হেসে দেখছে মাছগুলোকে।বাতির আলোয় চকচক করছে।
দাম কড়া হবার পরও তাজা মাছ কিনতে পেরে সে বেশ খুশি মনে ফিরছিল।মেইন রোডে এসে একা একা পথ দিয়ে চলছিল, একটা সিনএনজি পেলে উঠে যাবে।সামনে একজন ফেরিওয়ালা দাঁড়িয়ে শনপাপড়ি বিক্রি করছেন একটা মেয়ের কাছে।মৃদুল এই দৃশ্য দেখে চমকে ঘড়িতে চোখ রাখলো।রাত তখন পনে বারোটা বাজে।এসময়ে একটা মেয়ে এরকম নির্জন রাস্তায় দাঁড়িয়ে একা একা শনপাপড়ি কিনছে?
শনপাপড়ি বোঝাই ব্যাগ দেখে মৃদুলেরও মন চাইলো শনপাপড়ি খেতে।তাই সে একটু এগিয়ে গেলো।
কিন্তু কাছে আসার পর মেয়েটার মুখ দেখে সে আরও অবাক হয়ে পড়েছে।এটা তো জুথি।জুথি ব্যাগ থেকে টাকা বের করে লোকটার দিকে ধরতে গিয়ে মৃদুলকে দেখে সে নিজেও চমকে গেছে।
-“তুমি এখানে এত রাতে কি করতেছো?’
-“আপনি এখানে কি করেন?’
-“ইলিশ কিনতে এসেছি।তুমি কি করতে এসেছো?মনে ভয় নাই?’
-“আছে।তবে আমি যথেষ্ট আত্ননির্ভরশীল একটা মেয়ে।নিজের সেফটি নিজেই দিতে জানি।তাছাড়া এই রোডটা আমার কাছে নির্জন মনে হচ্ছেনা।এটা মেইন রোড।প্রতি দশ সেকেন্ডে একটা করে দূর পাল্লার বাস যাতায়াত করে।’
-“তা নাহয় বুঝলাম।কিন্তু এত রাতে এখানে কেন আসা হলো তোমার?’
-“আমি আর দশদিন পর সিঙ্গাপুর চলে যাচ্ছি।আম্মুর অনেক অনেক ইচ্ছা বাংলাদেশের শনপাপড়ি খাবে।সিঙ্গাপুরে অনেক খুঁজেও পাননি।আব্বুর সাথে নাকি একবার এই মাওয়া ঘাটে ইলিশ খেতে এসে এই মামার থেকে শনপাপড়ি খেয়েছিলেন।অবশ্য আমাকে বলেছিলেন যেকোনো শপে পেলেই হবে।কিন্তু আমি কাহিনী শুনে ভেবে নিলাম শনপাপড়ি নিলে এই মামার থেকেই নেবো।রাতে আসা কারণ মামা এই সময়টায় তার জিনিসপাতি নিয়ে বের হোন।দিনে তার অন্য চাকরি।শ্রমিক।’
-‘বুঝলাম।তা আমাকে আনলে কি দোষ হয়ে যেতো?বা ফরহাদ অথবা আপনার বাবা?’
-“ফরহাদ ঘুমায়,বাবা এখনও ফেরননি।আর একা চলার হেবিট আমার আছে’
কথায় কথায় মৃদুল ও কিছু শনপাপড়ি কিনে নিলো।জুথি নিয়েছিল গোটা এক ডিব্বা।
দুজনে এবার হাঁটা ধরেছে।মৃদুলের হাতে ইয়া বড় বড় কয়েকটা ইলিশ দেখে জুথি বললো,’পার্টি দিবেন যখন আমাকে দাওয়াত করবেননা?গার্লস এলাউ না বুঝি?’
-“আসতে পারেন তবে চাঁদা দুইশ পঞ্চাশ টাকা তমালের হাতে দিতে হবে।আমার পকেট ফাঁকা নাহলে আমি পে করে দিতাম’
-“সমস্যা নেই।আমি বিনাপয়সায় দাওয়াতে যাইনা’
মৃদুল একটা প্রশ্ন করবে করবে ভেবেও করতে পারছেনা।শেষে বুক ফুলিয়ে প্রশ্ন করেই ফেললো।
-‘আচ্ছা একটা কথা জিজ্ঞেস করবো?তুমি কি অর্ণবের উপর রাগ করে চলে যাচ্ছো?’
জুথি মৃদুলের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললো,’রাগ?মানুষ কথা দিয়ে কথা রাখেনা, পরিস্থিতি তাকে দেওয়া কথা ভাঙ্গতে বাধ্য করে।এ কথাটা মা বলেছিল আমায়।আমি সে ভয়ে আজ পর্যন্ত প্রেম নামক জগৎয়ে প্রবেশ করিনি।অথচ অর্ণবের সাথে মেশার পর সব কিছু ভুলে গিয়েছিলাম।ভুলে গিয়েছিলাম মা আমাকে কি বলেছিল।এখানে দোষটা আমার।নিজের উপর নিজের বড্ড রাগ হয় এখন।এই রাগ কমাতে চলে যাচ্ছি।কারোর উপর আমার রাগ নেই।সবাই যার যার ভাগ্যের লিখন ফুলফিল করাতে ব্যস্ত ‘
কথাটা বলে জুথি একটা দীর্ঘশ্বাস নিলো।মৃদুল আবার বললো,’কবে ফিরবে?’
-‘জানিনা।যেদিন সব ভুলে যাবো সেদিন।’
-“আর যদি না ভুলো?’
-“তবে আর ফেরা হবেনা এদেশে’
মৃদুল মুখটা বাঁকিয়ে বললো,’আমায় মনে পড়বেনা তোমার?আমার জ্বালাতন মনে পড়বেনা?’
-‘মনে পড়লে একজনের বিরহে সেটা ধামাচাপা পড়ে যাবে’
—-
কুসুম খাটের এক কোণায় ঘুমাচ্ছে।তমাল ভিডিও কল দিয়ে পার্টির আয়োজন লাইভ দেখাচ্ছে অর্ণবকে।সে বসে বসে দেখছে আর ওদের সাথে উঞ্জয় করছে ভিউটা।
হঠাৎ সেখানে জুথিকে দেখে ওর মুখের হাসি চলে গেলো।সাথে মৃদুল ও আছে।তমাল ফোন সোজা করে রেখে গিয়ে মৃদুলের হাত থেকে ইলিশ নিয়ে দৌড় মেরেছে।জুথি একটা চেয়ার টেনে বসলো।মৃদুল ও ওর পাশে বসেছে।অর্ণব মুচকি হাসলো ওদের দুজনকে একসাথে দেখে তারপর ভিডিও কলটা কেটে ফোন রেখে দিয়ে পাশে তাকালো।কুসুম সকাল থেকে একবারও দু চোখের পাতা এক করেনি।
তাই এখন গভীর ঘুমের অতলে।এদিকে সারাদিন একটু একটু করে ঘুমানোর ফলে অর্ণবের চোখে ঘুম নেই।বন্ধুরা সবাই বলেছে কুসুমকে সঙ্গে করে নিয়ে হলেও পার্টিতে আসতে।কিন্তু সে যেতে চায়নি।মেস এখান থেকে দূরে।ফিরতে অনেক রাত হয়ে যাবে।রিস্ক নেওয়ার প্রয়োজন নেই।একজন তো বললো কুুসুমকে হোটেলে রেখে চলে আসতে।এটা করা মোটেও সম্ভব না।
হঠাৎ মনে পড়লো কুসুমের রিপোর্টের কথা।
-‘ইশ রে!মেয়েটা মনে হয় রিপোর্ট না নিয়েই ঢাকায় চলে এসেছে।আজ তো রিপোর্ট আসার কথা ছিল।এমন বেখেয়ালি হলে চলে?
জানার দরকার ছিল ওর কি অসুখ।কেন খাওয়ায় অরুচি।
আচ্ছা এক কাজ করবো, সুযোগ পেলে একদিন ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবো ওকে।’
—–
খুব ভোরে।যখন ঢাকা শহরের পথে এক দুজনকে দেখা যায় ঠিক সেসময়ে কুসুম জানালার গ্রিল মুঠো করে ধরে পাঁচ তলার নিচে চেয়ে গান ধরেছিলো।একা থাকলে সে প্রায়শ নিজের প্রিয় গানগুলো গায়,মনে শান্তি আনে।ভেবে নেয় তার আশেপাশে আপন মানুষের অভাব নেই।
এসময়ে ক্ষীণ গলায় গাইছিল।অর্ণব জেগে যাবে সে ভয়ে।
চুকিয়ে দেব বেচা কেনা
মিটিয়ে দেব গো, মিটিয়ে দেব লেনা দেনা
বন্ধ হবে আনাগোনা এই হাটে
তখন আমায় নাইবা মনে রাখলে
তারার পানে চেয়ে চেয়ে
নাইবা আমায় ডাকলে
তার এই গানের অন্তরা শুনে অর্ণব জেগে গিয়ে বিছানা ছেড়ে ছুটে এসে দাঁড়ালো কাছে।কুসুম পরের লাইন গাওয়া ধরতেই অর্ণব ওর হাত ধরে টান দিয়ে নিজের দিকে ফিরালো।কুসুম চমকে গিয়েছিল।অর্ণব ব্রু কুঁচকে বললো,’তোমাকে এমন বিরহের গানগুলো কে শিখিয়েছে?আমি আরও কদিন লক্ষ করেছি,যখন তখন একা একা বিরহের গান গুলো গাইতে থাকো।’
-‘কেন আপনার ভালো লাগেনা?’
-“ভাল লাগে তবে এগুলো সবসময় কেন গাইবে?’
-‘আমার গলা সুন্দর না?
-“সকাল সকাল ভূতে ধরেছে তোমায়?এমন আবেগী প্রশ্ন কেন করছো?’
-“আমি তো আজ নতুন বিরহের গান গাইনা।আমি তো রোজ এই গানগুলো একবার করে গাই।সময়ে- অসময়ে।হয়ত দু একদিন আপনি নিজের কানে শুনেছেন।তবে আজ কেন মানা করছেন?’
অর্ণব কুসুমের হাত ছেড়ে দিয়ে চলে গেছে।কুসুম মুচকি হেসে গ্রিলটা ধরে আবারও নিচে তাকিয়ে রইলো।অর্ণব সোজা ওয়াশরুমে গিয়ে মুখে অনবরত পানির ঝাঁপটা দিয়ে চুল টান দিয়ে ধরে চুপ করে থাকলো।
কুসুমের মুখে অঢেল হাসি।এই হাসির পেছনে লুকিয়ে আছে হাজারটা রহস্য।অথচ সেই সব রহস্যের সূত্র আজ কুসুমের একটা প্রশ্নে খোলসা হয়ে গেলো।যার উত্তর কেবল অর্ণব জানে।কিঞ্চিত কুসুম ও জানে।তবে সে অর্ণবের মুখ থেকে না শোনা অবধি পেশ করবেনা।মুচকি হাসছে কারণ তার ধারণা সত্যি রুপ পেয়েছে আজ এই মূহুর্তে।অর্ণব ভেজা মুখ নিয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হতেই কুসুম ছুটে এসে নিজের আঁচলটা এগিয়ে ধরলো।অর্ণবের হাতে কোনো উপায় নেই বলে আগের মতন এখনও কুসুমের আঁচলটা টেনে মুখ মুছে নিলো সে।
এরপর বিছানায় বসে ওকে বললো,’ব্যাগের যা যা বের করেছো ওগুলো গুছিয়ে নাও।নাস্তা করে আমরা মৃদুলের বাসায় যাবো’
চলবে♥
#লীলাবালি🌺
#পর্ব_৪৪
আফনান লারা
.
কুসুম মুখে হাসি ফুটিয়ে ব্যাগ গোছাতে মন দিয়েছে।অর্ণব এক দৃষ্টিতে ওর দিকে চেয়েছিল।এরকম কনকনে শীতের মাঝে ফ্যান চালিয়ে বসে আছে সে।কুসুম গোছানোর সময় কালীন বারবার দুহাত ঢাকছে শাড়ীর আঁচল দিয়ে।অর্ণব ওকে অস্বস্তিতে পড়তে দেখে কোনো রিয়েক্ট করেনি।
কুসুম তার একটা ওড়না বের করেছিল সেটা গুছিয়ে রেখে বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে থাকলো সেখানে।
-‘শীত করে?’
কুসুম মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ জানালো।অর্ণব আবার বললো,’ফ্যানটা বন্ধ করার অনুমতি দিতে পারি তবে তুমি আমায় একটা কথার জবাব দেবে।সেটা হলো, তুমি শেষে যে প্রশ্নটা আমায় করেছিলে সেটা দ্বারা বুঝিয়েছো আমি তোমায় পছন্দ করি বলে তোমার মুখে বিরহের গান শুনে তোমাকে হারানোর ভয় জেগেছে আমার মনে?এটা বোঝাতে চাইছো তাইতো?’
কুসুম জিভ দিয়ে নিচের ঠোঁটটা ভিজিয়ে ঢোক গিললো।জবাবে কিছুই বলছেনা শুধু ফ্যালফ্যাল করে অর্ণবকে দেখছে।অর্ণব বিছানায় আবারও শুয়ে পড়ে শোয়া অবস্থায় ওর দিকে ফিরে বললো,’জবাবটা আমি জানি।হ্যাঁ বা না শুনতে চেয়েছিলাম।না বলোনি তার মানে উত্তরটা হ্যাঁ হবে।তবে জেনে রাখো, আমি তোমায় পছন্দ করিনা।ছোট মাথায় বিশাল অনুভূতি ঢোকানোর চেষ্টা করবেনা মিছেমিছি।তুমি কেবল আমার দায়িত্ব। জানিনা কখনও তোমায় মেনে নিতে পারবো কিনা।তবে তোমার দায়িত্বে আমি কিপাটমো করবোনা সে ব্যাপারে নিশ্চিত থাকো’
কুসুম কিছুই বললোনা শুধু চেয়ে রইলো।অর্ণব মাথা তুলে আবার বললো,’কাল দুপুর বারোটার পর এই হোটেলের রুমটা নিয়েছিলাম।আজ বারোটা অবধি টাইম আছে।আরেকটু ঘুমিয়ে নাও।টাকা উঠাতে হবে মাশুলে। ‘
কুসুম এবার কাছে এসে বললো,’এখন যদি না ঘুমোই আমাদের লস হবে?’
-‘লস বলতে মনে হবে টাকা অর্ধেক পানিতে গিয়েছিল।তাই টাকার উশুল ওঠা অবধি শুয়ে থাকবো’
অর্ণব চোখ বুজে ঘুমাবার চেষ্টা করলো।
কুসুম হালকা করে দরজা খুলে করিডোরে পা রেখেছে।শূন্য করিডোর।এক পা, এক পা করে শেষ প্রান্তে এসে হাজির সে।
মোটা থাই গ্লাসের দরজা।ওপারে কেউ নেই।অথচ এখানে ম্যানেজার থাকার কথা।কাঁচ দিয়ে ঘুরঘুর করে কুসুম দেখছিল ওপারে কি কি আছে।হঠাৎ সেখানে নিচে বসে থাকা ওয়াচম্যান পেছনে ফিরে তাকাতেই কুসুম ভয় পেয়ে পিছিয়ে গেলো।লোকটা কত কি বললো কিন্তু কোনো আওয়াজ আসলোনা কানে।এদিকে কুসুম ভয়ে এক দৌড় মেরেছে।রুমে এসে দরজা লাগিয়ে অর্ণবের দিকে তাকালো সে।অর্ণব ঘুমে মনে হয়।
-‘এই লোকটা এত ঘুমাতে পারে!অথচ আমার কোনো ঘুম নেই, রাত ছাড়া ঘুমই আসেনা।উফ! এই মাথার যন্ত্রনায় একদিন হয়ত মরে যাবো!
একটা কথা বলবো!না থাক।
না থাক একবার বলেই দেখি।আচ্ছা শুনুন।বেলা বারোটা বাজতে কি খুব দেরি?আসলে আমার খিধে পেয়েছে।’
অর্ণব ঘুমায়নি।এমনিতে চোখ বুজে ছিল।কুুসুমের কথা শুনে উঠে বসে বললো ‘তোমার কি হয়েছে বলোতো?আগে তো কিছু খেতে পারতেনা।আর এখন তোমার শুধু খিধে পায়?এখন বমি পায়না?’
-‘পায় তবে আপনার মা বললো বেশি বেশি খেতে, তাহলে রুপ ধরে রাখা যাবে’
অর্ণব ফিক করে হেসে দিলো।হাসিটা একটু খানি থামিয়ে বললো,’তোমার রুপ এখন আছে বলে তোমার মনে হয়?’
-“জানিনা’
-“আমার কাছে মনে হয় বাঁশ গোড়া থেকে কেটে বারো মাস রোদে দিলে সাদা হয়ে যায় সেই রঙের একটা বাঁশ তার মধ্যে সিদ্ধ করা নুডলস এক প্যাকেট বসিয়ে দেওয়া।নুডুলসে আবার রামেনের সস ঢালা।লাল লাল কালো কালো’
কুসুম মুচকি হেসে বললো,’আমাকে দেখে আপনার খাবারের দ্রব্য মনে হয় বুঝি?এত ভালো লাগে?’
অর্ণব এবার বিরক্ত দেখিয়ে বললো,’মোটেও না।আচ্ছা ওসব ভুলে যাও।ঠিক আছে তুমি রুপবতী।এই রুপ ধরে রাখতে ঠিকমত খওয়া দাওয়া করো।মায়ের কথাই উপরে থাকুক।
ভাল কথা মনে পড়লো এতক্ষণে।তোমার রিপোর্ট আনোনি তাইনা?’
কুসুম এক ছুটে ব্যাগের কাছে গিয়ে হাতিয়ে হাতিয়ে ভেতর থেকে একটা রিপোর্ট খুঁজে বের করে এনে অর্ণবের হাতে দিলো।অর্ণব নড়েচড়ে রিপোর্টটা মেলে ধরেছে।বেশ অনেকক্ষণ দেখে বললো,’ঐ ডাক্তারকে বলেছিলাম প্রেগন্যান্সি টেস্ট যেন না দেয়।তাও দিছে।যাই হোক নেগেটিভ আসছে।আর বাকিগুলোর আগামাথা কিছুই বুঝলাম না।আমি হলাম মানবিকের ছাত্র।সাইন্সকে ভয় পেতাম এখন আমি এসব কি করে বুঝি?তাও দেখে মনে হয় আল্ট্রাসনোগ্রাফি।তো ডাক্তারকে এই রিপোর্ট দেখাতে হবে।প্রেসক্রিপশনের শেষে যে টেস্ট দিয়েছিল সেটা তো করায়নি,খুঁজে পেলাম না।কেন করায়নি বুঝলাম না।ডাক্তারকে ফোন করতে হবে’
কুসুম আল্ট্রাসনোগ্রাফির রিপোর্টের দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়েছিল।ওটাতে হাত রেখে বললো,’এটা আমি আরও আগে একবার কোথায় যেন দেখেছিলাম।ও হ্যাঁ মনে পড়েছে।আমাদের পাশের বাড়ির রজিনা গর্ভবতী হবার পর ওকে ডাক্তার এই পরীক্ষা দিয়েছিল।তখন এমনটা দেখেছি।কিন্তু আমি তো!!’
-“থাক।তোমাকে আর গবেষণা করতে হবেনা।সব গুছিয়ে নিলে চলো আমরা যাই।আমার আর টাকা উঠিয়ে কাজ নেই’
—
দুজনে এবার সকালের নাস্তা সারতে হোটেলের নিচ তলায় চলে আসলো।ততক্ষণে শহরে মানুষের ভীড় বেড়ে আসছে ধীরে ধীরে।বাচ্চাদের স্কুল ড্রেস পরিয়ে,পিঠে ব্যাগের বোঝা চাপিয়ে সঙ্গে তাদের বাবা অথবা মা ‘রা ছুটে চলেছেন গন্তব্যের দিকে।
অর্ণব সেই দৃশ্য দেখে বললো,’জানো সকালবেলায় স্কুলে যেতে হয় কেন?কারণ হলো বাচ্চাদের সকালে ওঠার অভ্যাস তৈরি করার জন্য’
কুসুম কথার বিরোধীতা করে বললো,’আমি যখন ভারতে ছিলাম সেসময়ে দেখতাম দুপুরের দিকে ছোট ছোট বাচ্চারা পড়তে যায়।তাহলে তাদের কি সকালে ওঠা শেখানো হয়না?
-“ওটাকে বলে ডে শিফট।অর্থাৎ দিবা।মানে স্কুলে শিক্ষার্থী বেশি হয়ে গেলে শ্রেণী দুভাগ হয়ে যায়।এক শ্রেণী ভোরে আর এক শ্রেণী বেলায়।যদি এত বেশি না হতো তাহলে সকাল থেকেই ক্লাস শুরু হতো’
কুসুম দুহাত গালে রেখে একটু ঝুঁকে আস্তে করে বললো,’আচ্ছা আমাকে লেখাপড়া শেখাবেন?মানে ধরুন লিখতে পারবো সেরকম’
-“আমার আর কাজ নেই?তোমাকে সামান্য কথা বুঝাতে আমার দিন শেষ হয় এখন আবার পড়ালেখা শেখাবো?পারবোনা।’
ধমকমাখা জবাব শুনে কুসুম মুখ কালো করে বসে রইলো।
—-
জুথি সকাল সকাল ছাদে এসে আকাশ দেখছিল।
-‘মৃদুল ভাইয়ার মাথা প্রচণ্ড রকম ভাবে ঘুরে গেছে।একটা ছেলেকে রুপ আর মন কিছু দিয়ে ধরে রাখতে পারলাম না আর এই ছেলেটা আমার কোনোকিছুকেই তোয়াক্কা না করে আমার জন্য পাগল হয়ে বসে আছে।
সে কি বোঝেনা আমি এসবে ইন্টারেস্টটেড না?
কতটা পাগল হলে ইলিশ মাছের কাঁটা বেছে দেয় একটা মেয়েকে।এই কথা আমি যাকে বলবো সে বলবে ছেলেটা তোর প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে।অথচ একই প্রশ্ন আমি যখন তাকে করলাম।তিনি জবাব দিলেন,’প্রেম ভালো জিনিস।হাবুডুবু খাওয়া আরও ভাল জিনিস।না ডুবলেই হইলো।তাছাড়া মা, বাবা, ভাই, বোন, আত্নীয়স্বজন ও তো কাঁটা বেছে দেয়।তাদের প্রেমেও পড়া যায় এই আর এমন কি”
আমি বলেছি এই প্রেম সেই প্রেম না।জবাবে তিনি আবার বললেন,’আমাকে প্রেম শেখাচ্ছেন ম্যাডাম?আমি প্রেমে এমবিবিএস করেছি’
আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞেস করেছিলাম মানুষ প্রেমে পিএইচডি করে শুনে ছিলাম।এমবিবিএস করে সেটা এই প্রথম শুনলাম।এরপর তিনি যেতে যেতে শুধু বলে দিলেন,’মৃদুলের সাথে থাকলে আরও কত কি শুনতেন।আফসোস জ্ঞানের বোঝা ভারী হবার আগেই সাদা চামড়ার দেশে পাড়ি দিবেন।আপনাকে আর কিছু বলছিনা’
আমি চলে যাব বলে যে উনার খুব জ্বলছে তা বেশ বুঝতে পেরেছি।এবার হয়ত সামনা সামনি বলতে হবে যেন উনি আমার থেকে দূরে থাকেন।এমনটা করলে আমার থেকে ওনাকে সরাতে অনেক কষ্ট হয়ে যাবে।আমি চাইনা কাউকে মিথ্যা মায়ায় জড়াতে।আজই সময় করে একবার কল করে বলে দিব যেন আমাকে আর কল না করে,দেখা না করে,মেসেজ না করে।এত কেয়ার করতে হবেনা।আমি ঠিক আছি।আমি শক্ত মজবুত।
বোকাটার মুখের দিকে তাকালে কড়া কথা মুখ দিয়ে বের হয় না, সেটাই যত নষ্টের গোড়া।এমন ভাবে তাকিয়ে থাকে যেন কে.জি তে পড়া শিশু।এটাও মানা করে দেব।বলবো আমার দিকে তাকালো ম্যাচিউর ভাব নিয়ে তাকাবেন।যেমন আপনার বয়স তেমন বিহেভ করবেন।’
চলবে♥
#লীলাবালি🌺
#পর্ব_৪৫
আফনান লারা
.
সকালের নাস্তা খাওয়ার পর্বটা শেষ করে শুরু হলো দুজনের পথচলা।সিএনজি নিতে হলে ওপাশে যেতে হবে রাস্তা পার করে।এতক্ষণ অর্ণব আগে আগে আর কুুসম পিছে পিছে আসছিল কিন্তু এখন তাদের হাত ধরা বড়ই জরুরি হয়ে দাঁড়ালো।
কুসুম একবার ডানে তাকায় আবার বামে।অর্ণব পাশেই দাঁড়িয়েছিল।রাস্তাটা ফাঁকা হতেই খপ করে কুুসুমের হাতটা সে ধরে নিয়ে হাঁটার গতি বাড়িয়ে দিয়েছে।এপাশে এসে হাত না ছেড়েই একটা সিএনজি আলা মামার সঙ্গে দাম নিয়ে দরকষাকষি শুরু করলো সে।কুসুম তার হাতটার দিকে তাকিয়ে আছে।অর্ণবের হাতের পশমগুলো ওর হাতে লেগে কেমন একটা অনুভূতি হয়।সুড়সুড়ি না তবে সেরকম।যেন তুলোর ছোঁয়া।কুসুমের মুখে হাসি ফুটলো।অর্ণব অন্য সিনএনজির কাছে গিয়ে দামাদামি করে শেষে ওটাতে উঠবে বলে ঠিক করে কুুসুমের দিকে চেয়ে বললো উঠতে।কুুসুম হাতটা উপরে তুলে বললো,’না ছাড়লে উঠবো কি করে?’
অর্ণব যেন খুব লজ্জা পেলো।সাথে সাথে হাত ছেড়ে মুখটা অন্যদিকে ঘুরিয়ে নিয়েছে।কুসুম ভেতরে গিয়ে বসলো তারপর সে নিজেও বসেছে।
কুসুম হঠাৎ অর্ণবের দিকে ফিরে বললো,’আচ্ছা আমরা যেখানে থাকতে যাব সেখানে রান্নাঘর থাকবে?হাঁড়ি পাতিল?’
অর্ণবের মুখটা গেলো কালো হয়ে।গালে হাত দিয়ে বললো,’আমিও তো ভেবে দেখলাম না।সব রুম তো থাকবে কিন্তু আসবাবপত্র কই পাবো?কি বিপদ!বাবা আমাকে সবসময় বিপদে ফেলে’
কুসুম নিচের ঠোঁটটা উল্টো করে বললো,’কলা পাতায় খেতে পারেন? ভাত?’
অর্ণব কপাল কুঁচকে বললো,’ঢাকায় কলাগাছ কই পাবে তুমি?অনেক খুঁজে তারপর পাওয়া যাবে’
কুসুম আর কিছুই বললোনা।সে খেয়াল করেছে, যাই বলছে তাতেই অর্ণব ভেংচি মারছে।ওর মনে হয় মাথা অনেক গরম।কি আর করার।চুপ থাকাই শ্রেয়।
মহাখালীতে এসে মৃদুলকে কয়েকবার কল করেও পেলোনা অর্ণব।এদিকে যে এড্রেসে তারা এসেছে সেখানে একসাথে তিনটা দোতলা দালান, একই রঙের।কোনটা মৃদুলদের সেটাই মাথায় ঢুকতেছেনা।বাড়িগুলোর নাম মালিকের নামে না।
একটার নাম “রঙিন তরী”,আরেকটার নাম”নির্মলতা ”
অন্যটির নাম “টারশিয়ারী”
প্রথম দুটো ভাল আর স্বাভাবিক নাম মনে হলেও শেষেরটা শুনে অর্ণবের মনে হলো সে খিস্টাব্দ পূর্বে চলে গেছে।
যে পথে তারা দাঁড়িয়ে ছিল ঐ পথ দিয়ে খুব বেশি মানুষের আনাগোনা তাও কিন্তু না।
তবে আছে কিঞ্চিত। সেসময়ে একজন বয়স্ক লোক হাতে লাঠি নিয়ে যাচ্ছিলেন ওদের সামনে দিয়ে।গায়ে কালো পাঞ্জাবি।গলা থেকে পা অবধি লম্বা।মাথায় কচ্ছপ টুপি।হাতের লাঠিটা ঈষৎ কালো তবে যেন ঝকঝক চকচক করে।
অর্ণব তাকেই থামলো।প্রথমে সালাম দিয়ে জিজ্ঞেস করলো এখানে মৃদুলদের বাসা কোনটি?’
বুড়ো লোকটা ওদের দুজনকে ভালো করে একবার দেখে নিয়ে বললেন,’তোমরা দুজন বিবাহিত? নাকি একজন বড় ভাই আরেকজন ছোট বোন?বোনকে হাই স্কুলে ভর্তি করাতে এসেছো?’
অর্ণব হালকা কেশে বললো,’নাহ।ও আমার স্ত্রী। আপনি মৃদুলদের বাসা চিনেন?’
-“এখানে তো মৃদুল থাকেনা।সে তো ধানমন্ডি থাকে।এখানে থাকে ওর বাবা,ওর মায়ের সঙ্গে’
-“হুম সেটাই।আসলে মৃদুলের বাবার নাম ভুলে গেছি তো।আপনি চেনেন বাসাটা?দয়া করে একটু দেখিয়ে দেবেন?’
লোকটা চশমা ঠিক করে বললেন,’মৃদুলের বাবার নাম সুলতান শাহ’
অর্ণব ব্রু কুঁচকে বললো,’ওহ আচ্ছা তাহলে নিশ্চয় অদ্ভুত নামের বাসাটাই উনার’
-“এই ছেলে দাঁড়াও।অদ্ভুত কেন বললে?তোমার কাছে কোন দিক দিয়ে অদ্ভুত লাগে?
বলবা এক্সট্রা অর্ডিনারি।মানে হলো অসাধারণ’
কুসুম মাথা বাঁকিয়ে বললো,’বাসাটা আপনার বুঝি?’
-“ইয়েস মা।এই তো ধরে ফেলেছো।অথচ তোমার গাধা বুড়ো স্বামী ধরতে পারেনি।যাই হোক তোমরা যাও বাসার দিকে।আমি একটু দোকানে যাচ্ছি। ইশবগুলের ভুষি শেষ হয়ে গেলো কিনা’
অর্ণব হা করে লোকটার চলে যাওয়া দেখলো।কুসুম দাঁত কেলিয়ে বললো,’বুঝলেন কি করে যে এই মৃদুল ভাইয়ের বাসা ওটা?’
-“টারশিয়ারি কিনা! সাথে আবার সুলতান শাহ”
—-
দুজনে বাসার সামনে এসেছে এবার।অর্ণব দরজার পাশের কলিংবেলে কয়েকবার ক্লিক করার পর একটা যুবতী মেয়ে এসে দরজা খুলে দিয়ে বললো,’কাকে চাই?’
-“মৃদুলের ফ্রেন্ড আমি।’
-“ওহ আপনারা!আসেন বসেন’
মেয়েটা বসতে বলে চলে গেলো।অর্ণব কুুসুমকে নিয়ে সোফায় বসেছে।মেয়েটা কিছুক্ষন পর শরবত আর বিসকুটের ট্রে নিয়ে এসে ওদের সামনে রেখে আবার চলে গেলো।
সুলতান শাহের আসার নাম নেই।বেশ অনেকক্ষণ কেটে যাবার পর তিনি আসলেন।অর্ণব কুুসুমের সামনে একটা চেয়ারে বসলেন তিনি।
তিনি আসার পরপরই মেয়েটা চায়ের কাপ দিয়ে গেলো।
এমন কি তিনি আসার পর তার স্ত্রী মিজুয়ানা ও এসে হাজির।মানে দেখে মনে হলো সবাই সুলতান শাহের আসার অপেক্ষা করছিল।
উনি চায়ের কাপটা হাতে নিয়ে অর্ণব আর কুসুমের দিকে একবার তাকিয়ে সেই মেয়েটার দিকে তাকালেন যে চা দিয়ে গেছিল তারপর দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে কাপটা রেখে বললেন,’তোমরা এখন চা খেও না।জাহান??চিনি তো দাওনি মনে হয়’
জাহান নামের মেয়েটা জিভে কামড় দিয়ে রান্নাঘর থেকে চিনির বোয়ামটা নিয়ে ছুটে এসে সব কাপে চিনি দিতে লাগলো।অর্ণব চোখ বড় করে জিজ্ঞেস করলো উনি জানলেন কি করে চিনি দেওয়া হয়নি।
-‘এই মেয়েটা আমাদের বাসায় কাজ করে দীর্ঘ সাত বছর ধরে।তার সব ঠিক আছে তবে কাজল দেওয়ার অনেক শখ তার।এই কাজল দিতে যায় সেসময়ে যখন তার চা বানানোর সময় থাকে।তো কাজল ঠিকঠাক দিয়ে ফেললেও জীবনেও সে চিনি দেয়না চায়ে।’
কুসুম ফিক করে হেসে ফেললো।অর্ণব ওর হাত খাঁমছে ধরে চুপ থাকতে বললো।
মিজুয়ানা রহিম চুপ করে কুসুমকে দেখছিলেন শুধু।
চায়ে চুমুক দিয়ে সুলতান বললেন,’উপরের তলাটাও আমাদেরই বাড়ি।মৃদুলের নামে সেটা।কত শখ করে সাজিয়েছি সব।কিন্তু একদিন সে আমার কথার অবাধ্য হয়ে চলে গেলো মেসে।ঢাকাতে।
তারপর ওর সাথে জেদ ধরে আমি বাসা ভাড়ার দেওয়া হবে লেখা সেই সাইনবোর্ড ঝুলিয়েছিলাম বাড়ির সামনের মেহগনি গাছটায়।
কিমতু আফসোস, এখন পর্যন্ত আমার মনমত কোনো ভাঁড়া টিয়া পেলাম না।বুড়া বুড়ি পেয়ে জ্বালিয়ে খায় আমাদের।যাই হোক।তোমরা নিশ্চিন্তে থাকতে পারো।আমার সমস্যা নেই।
তবে আমার যেহেতু ব্যবসায় লাল বাতি সেহেতু আমি তোমাদের থেকে বাসা ভাড়াটা নেবো।:
-‘আঙ্কেল ওসব নিয়ে চিন্তা করিয়েননা।আমি দিয়ে দেবো’
-‘আচ্ছা উনি হলেন আমার স্ত্রী। মিজুয়ানা।আমাদের মেয়ে আছে মম।তাকে তো চেনোই হয়ত।সে হোস্টেলে থাকে, ছুটিতে আসে।আর মৃদুলের তো বছরেও খবর নাই।চলো তোমাদের বাসাটা দেখিয়ে আসি।’
—-
অর্ণব আর কুসুম সুলতান শাহের পিছু পিছু চললো এবার।
-“জানো অর্ণব মৃদুলকে আমি প্রচুর ভালোবাসি।তবে সে একটু জেদি।কি যেন নাম।হ্যাঁ মনে পড়েছে।অনামিকা।তার বাসা তো এইখানেই।ঐ মেয়েটা ওকে ধোকা দেবার পর থেকে কেমন যেন হয়ে গেছে।প্রথম প্রথম কথা তো ছোঁয়ানোই যেতোনা।ছ্যাঁত করে উঠতো।তার স্বভাবে পরিবর্তন আসতে অনেক সময় লেগেছিল।তারপরও আমি যখন বললাম পড়াশুনা করতে ওর বিদেশে যাওয়া উচিত তখনই রেগে গেলো।জোরাজুরিতে একেবারে বাসাই ছাড়লো।আজকালকার ছেলেরা রাগ করলে এটাই জানে।আমিও রেগে আছি ওর উপর।তবে সে যদি সরি বলে তবে মাফ করে দেবো।’
অর্ণব মুচকি হেসে বললো,’বলবে সরি।আপনারই তো ছেলে।কতদিন আর রাগ করে থাকবে’
সুলতান শাহ দরজা খুলে বললেন,’যাও ঘুরে দেখো।আমার কাজ আছে।চালের আড়ৎ তো।সকাল সকাল একবার গিয়ে দেখে আসতে হয়’
চলবে♥