শত ঘৃণার পরেও ভালোবাসি পর্ব-১৪

0
1129

#শত_ঘৃণার_পরেও_ভালোবাসি (এক ভালোবাসার গল্প)
#Maishara_Jahan
Part………..14

আহান দুহাত দিয়ে দিয়াকে জরিয়ে ধরে, এভাবেই কেবিনের ভিতরে নিয়ে যায়। সবাই কেবিনে উঁকি ঝুঁকি মারছে। আহান পা দিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়।

দুজন দুজনকে শক্ত করে জরিয়ে ধরে আছে।

আহান কিছু না ভেবে দিয়াকে জরিয়ে ধরে, নিজের অজানতে আহানের ঠোঁটে হাসি চলে আসে। কিছু ক্ষন পর দিয়া আহানকে ছেড়ে দেয়, কিন্তু আহান চোখ বন্ধ করে ধরে আছে। দিয়া ছাড়তে নিয়েও পারে না।

দিয়া,,,,,,,,,, আহান হয়ে গেছে।

,,,,,,ওহহ

আহান দিয়াকে ছেড়ে দিয়ে ঠিক করে দাঁড়ায়। তারপর বলে,,,,,,, কেনো জরিয়ে ধরেছিস আমাকে।

,,,,,,,,, আমার ধরার কারন আছে, আপনি কেনো আমাকে জরিয়ে ধরেছেন আগে এটা বলেন।

,,,,,,,,,, তুই ধরেছিস তাই আমিও ধরেছি, হিসাব বরাবর।

,,,,,,,,এটা কোনো কথা।

,,,,,,,,,, আচ্ছা এটা বলো কেনো জরিয়ে ধরেছিস।

,,,,,,,,আগে আপনি আমাকে এটা বলেন,আপনি তো আমাকে ঘৃণা করতেন তাই না।

,,,,,,,,এই কথা এখন হঠাৎ।

,,,,,,,,,আগে বলেন আপনি ঘৃণা করতেন তো নাকি (আহানের কাছে এসে)

আহান পিছনে টেবিলের সাথে লেগে যায়, একটা ডোগ গিলে বলে,,,,,,,,হুমমম।

,,,,,,,প্রচুর ঘৃণা করতেন তাই তো।

আহান দিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে, কিছু বলছে না।

,,,,,,,কি হলো বলেন।

,,,,,,,,হুমম করতাম তো।

,,,,,,,,,, তারপরেও এতো ভালোবাসতেন।

,,,,,,,,,,মানে,, আমি কাওকে ভালোবাসতাম না।

,,,,,,,,আচ্ছা তাহলে, বিদেশে যাওয়ার পরেও আমার উপর কেনো নজর রাখতেন।

,,,,,,,, আমি কারো উপর নজর রাখি নি।

,,,,,,,,আচ্ছা তাহলে এই তিন বছরে আমি কোথায় আছি কি অবস্থায় এসবের পিক কেনো আপনার কাছে হুমম।

,,,,,,,,কে বলেছে আমার কাছে তোর পিক আছে।

,,,,,,,, আপনার লেপটপ দেখলেই বুঝা যাবে। আর আমার পড়াশোনার খরচ কেনো দিতেন৷ শুধু পড়াশোনা না আমার খাওয়া দাওয়া সব কিছুর খরচ দিতেন তাও আবার বাবার নামে।

,,,,,,,, তোকে এসব কে বললো।

,,,,,,,,, আমি জানতে পেরেছি, বলেন দিতেন কিনা (আহানের আরো কাছে গিয়ে আঙুল দেখিয়ে)

,,,,,,,,,, হুমম দিতাম তো।

,,,,,,,কেনো দিতেন।

,,,,,,,, আমার মন চাইছে তাই, এখন কি তোকে জবাব দেওয়া লাগবে আমার। (জোরে রেগে যাওয়ার বান করে)

,,,,,,,,অভিনয় করে লাভ নেয়, আমি জানি আপনি রেগে নেয়,আপনার আসল রাগ আমি বুঝি। তাই শুধু শুধু রাগের অভিনয় করে লাভ নেয়।আপনি এখানে কেনো হঠাৎ এসেছেন, একটু বলেন তো আমাকে।

,,,,,,,কেনো এসেছি মানে, এমনি এসেছি, এটাও কি এখন বলতে হবে নাকি৷

,,,,,,,হুমম হবে,,আপনি এমনি এমনি আসেন নি,, আপনি হঠাৎ করে টাকা পাঠানো বন্ধ করে দিলেন, তার মধ্যে আমাকে হোস্টেল থেকেও বের করে দিলো বিনা করনে। এসবের পিছনে নিশ্চয় কোনো কারন আছে বলেন, বলেন তাড়াতাড়ি।

,,,,,,,,, কোনো কারন নেয়।

,,,,,, আপনি চোখ লুকাচ্ছেন, নিশ্চয়ই কোনো কারন আছে, বলেন না পিল্জ।

,,,,,,,,,তুই যে আকাম করেছিস তার জন্য এসেছি আমি।

,,,,,,,,,, আমি আবার কি করলাম।

,,,,,,,, কি করেছিস,,, তোকে মারার জন্য যে কতো লোক লাগানো হয়েছে জানিস,, কতো কষ্টে তাদের আমি সামলিয়েছি। দূর থেকে বেশি কঠিন হয়ে গেছিলো তাই কাছে এসেছি।

,,,,,,,, মানে কি, আমার পিছনে কেনো কেও লাগবে।

,,,,,,,, কয়েক মাস আগে তুই একটা মলে গিয়েছিলি রাইট,আর সেখানে ছয়জনের মৃত্যু হয়, আর তাদের মধ্যে একজন মন্ত্রীর ছেলেও ছিলো।

,,,,,,,হ্যাঁ কিন্তু আমি তাদের মারিনি।

,,,,,,,,,, এটা আমি জানি,, কিন্তু যারা মেরেছে তাদের তুই দেখেছিস তাই তো।

,,,,,,,,, না,, তাদের আমি দেখিনি।

,,,,,,আমি সিসি ক্যামেরায় দেখেছি তুই ওয়াশ রুম থেকে দৌড়ে ভয়ে বের হয়ে এসেছিস,, তারপরে খুনিনা বের হয়ে আসে৷ কিন্তু তাদের মুখ দেখা যায় না৷ সবার মুখ ঢাকা ছিলো।

,,,,,,আরে আমি তাড়াহুড়োই ভুলে ছেলেদের ওয়াশ রুমে ঢুকে গেছিলাম, এটা খেয়াল করার পর তাড়াতাড়ি বেরিয়ে আসি, চোখ বন্ধ করে।

,,,,,,,তারমানে তুই কিছু দেখিস নি।

,,,,,,,, না,,, আর সিসি ক্যামেরাতে এমন দেখা লেগে পুলিশ আমাকে জিজ্ঞেস করেনি কেনো।

,,,,,,, কারন তাদের আমি আটকিয়েছি। কিভাবে জেনো ঐ খুনিদের কাছে সিসি ক্যামেরার ফুটেস পৌঁছে যায়, আর তারা মনে করে তুই সব দেখেছিস আর শুনেছিস, তাই তোর পিছনে লেগে আছে।

,,,,,,,, কিন্তু তারা কারা।

,,,,,,,সেটাই তো জানা লাগবে।

,,,,,,, ওহহ তাই আপনি আমাকে এতো সাবধানে রাখতেন। কেও কাওকে এতো ঘৃণার পরেও কিভাবে ভালোবাসতে পারে।

,,,,,,,, আমি কখনো বলেছি যে, আমি তোকে ভালোবাসি।

,,,,,,,, আপনার রুমে থাকা ডাইরি পরে আমি সব জানতে পারি।

,,,,,,,,,,তুই আমার ডাইরিতে কেনো হাত দিয়েছিস।

,,,,,,,,আমি হাত দিয় নি, আমার সামনে পড়ে গেছে।

,,,,,,,,, কি কি পড়েছিস।

,,,,,,,,যা যা ছিলো।

,,,,,,সব পড়ে নিয়েছিস।

,,,,,,,হুমম,,,আর সেখানে সব কিছু পড়ে আমি আপনাকে আমার মনের মাঝে খুঁজে পেয়েছি।

,,,,,,,,,,, মানে।

,,,,,,,,,, মানে, আপনি যতোটা আমাকে ভালোবাসেন তার থেকে বেশি ভালোবেসে ফেলেছি।

আহান হা করে দিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে, কি বলবে বুঝছে না।

দিয়া,,,,,,, আপনাকে ভালোবাসার মতো আমার কাছে অনেক কারন আছে। কিন্তু আমাকে ভালোবাসার কি কারন আছে আপনার কাছে।

,,,,,,,,,,জানি না। (অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে আহান হাসতে থাকে)

,,,,,,,,, এখনো ঘৃণা করেন আমাকে,, আমাকে আর ভালোবাসেন না। ভালো না ভাসারি কথা, আমি আপনার ভালোবাসার যোগ্য না। (মন খারাপ করে)

আহান দিয়ার দিকে তাকিয়ে, তার দুহাত দিয়ার গালে ধরে বলে,,,,,, শত ঘৃণার পরেও আমি তোকেই ভালোবাসি। অনেক চেষ্টা তোকে ভুলতে কিন্তু পারিনি, হয়তো আমি চাইনি তোকে ভুলতে। আর এসব কিছুর মধ্যে ভুলটা আমারো ছিলো। তোকে এতোটা ভালোবাসি যে তোকে অন্য কারো সাথে দেখে নিজের হুশশ হারিয়ে ফেলেছিলাম সরি।

দিয়া,,,,,,,, আচ্ছা একটা কথা জিজ্ঞেস করার ছিলো আমার।

,,,,,,,,হুমম বল।

,,,,,,আচ্ছা আপনি তো আমাকে ভালোবাসেন কিন্তু কালকে আপনার শার্টে লিপস্টিকের দাগ ছিলো সেটা কেনো আপনি কি,,,,,,

আহান হালকা হেঁসে বলে,,,,,,, ছেলে তার সব কিছু দিয়ে দিলেও তাদের মন থেকে সন্দেহ কোনো দিন যাবে না। পেটি আমার সাথে জোরাজোরি করেছিলো তাই লেগে গেছে।

,,,,,,,,, ওহহ,,কিছু করেন নি তো।

,,,,,,,, পাগল তুই,, কি করবো। আর পুরার গন্ধটা একটু বেশি আসছে।

দিয়া কিছু না বলে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে, আহান হঠাৎ করে দিয়াকে টান দিয়ে জরিয়ে ধরে, দিয়াও কিছু বলে না, সেও আহানকে জরিয়ে ধরে।

এমন সময় রিমান চলে আসে,,,এসে তাড়াতাড়ি দরজা বন্ধ করতে নিয়ে আবার খুলে ফেলে। দরজা খুলার এমন আওয়াজ শুনে আহান চোখ খুলে তাকিয়ে রিমানকে দেখে তাড়াতাড়ি দিয়াকে ছেড়ে সরে যায়।

রিমান হা করে তাকিয়ে নিজের চোখ কচলাতে কচলাতে বলে,,,,,,,,, আমি কি দিনের বেলায় স্বপ্ন দেখছি নাকি। আহান আমি কি দেখলাম।

আহান,,,,,,,,কি দেখছস কিছু না।

রিমান,,,,,,,,, হ আমার তো চোখ পিছনে, না না আমি তো আজ চোখ ঘর থেকে আনতেই ভুলে গেছি দেখবো কিভাবে। আমার পিছনে পিছনে তোরা এগুলো করিস।

আহান,,,,,,,, আরে তেমন কিছু করছিলাম না।

রিমান,,,,,,, হ তেমন কিছু না শুধু একজন আরেকজনকে আস্টে পিস্টে ধরে ছিলি। এটা এমন আর কি তাই না।

আহান,,,,,,,, এখানে একা মেয়ে আছে একটু তো বুঝে শুনে কথা বল।

দিয়া লজ্জায় টেবিলের এক কোনায় দাঁড়িয়ে আছে।

রিমান,,,,,,,,, এতো লজ্জা পাওয়ার কিছু নাই দিয়া,,যা হওয়ার তা হয়ে গেছে আর আমার যা দেখার দরকার ছিলো না তাও আমি দেখে ফেলেছি। এখন বলো তোমাদের মধ্যে সব ঠিক ঠাক আছে।

আহান,,,,,,,,,, হুমম,,

রিমান,,,,,,,,,,, যাক শুনে খুশি হলাম,,,

আহান,,,,,,,ওহ ভালো কথা,, তোর প্রজেক্ট এতো ভালো হয়েছে আমাকে বলিস নি কেনো। কেমন বন্ধ তুই।

রিমান রাগে আহানের দিকে তাকিয়ে আছে,,, আহান রিমানের তাকানো দেখে একটু পিছিয়ে বলে,,,,কি হয়েছে এভাবে কেনো তাকিয়ে আছিস।

রিমান,,,,,,,,, কেনো তাকিয়ে আছিস জানিস না,, কাল আমাকে কিছু বলার সুযোগ দিছস,, আর আমি কিছু বললে তা কানে ঢুকিয়েছিস। দেখ ভালো মন নিয়ে এখানে এসেছি, মুডটা আমার খারাপ করিস না।

দিয়া,,,,,,,,, আচ্ছা তোমার মন আজ অনেক ভালো।

রিমান,,,,,,,,, হুমম

দিয়া,,,,,,,, ওহহ কিন্তু একজনের মন আজ একটু বেশিই খারাপ, প্রথম কান্না করতে দেখলাম একজনকে। যাক ভালো লাগছে তোমার সফলতার কথা শুনে, কংগ্রাচুলেশনস।

রিমান চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে, কিছু বলে না,, আহান কিছু না বুঝে জিজ্ঞেস করে,,,,,,, মানে কার কথা হচ্ছে এখানে।

দিয়া,,,,,,,,, কারো না,, যার বুঝার কাজ সে বুঝে গেছে। আর আমরা তো এমনি কথা বলি মজা করে।

আহান,,,,,,মনে হয় রিমানের সাথে সাথে তুমিও পাগল হয়ে গেছো। আচ্ছা রিমান বল কি বলার আছে।

রিমান,,,,,,,,, কালকে পার্টি আছে আমার বাসায়, সেটাই বলতে এসেছি, আর কার্ড দিতে এসেছি। (মন খারাপ করে)

আহান,,,,,,, তাহলে দে।

রিমান আহান আর দিয়াকে কার্ড দেয়।

দিয়া,,,,,,,, রুহির কার্ড কোথায়।

রিমান আরেকটা কার্ড তার কোর্টের পকেট থেকে বের করে দেয়।

দিয়া,,,,,,,, আমাদের দিচ্ছো কেনো। আমি একটু পরে আহানের সাথে বাসায় চলে যাবো। আমাদের এতো সময় নেয়। কার্ডটা তুমি গিয়ে রুহিকে দিয়ে আসো, ও বেশি খুশি হবে।

রিমান,,,,,,,,, ঠিক আছে, আমি দিয়ে আসবো।

দিয়া,,,,,,,, ভুলে যেয়ো না আবার তাহলে তার অবস্থা কেমন হবে বুঝতেই পারছো।

রিমান হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়িয়ে চলে যায়।

আহান,,,,,,চলো বাসায় চলে যায়, আমরা।

,,,,,,,, কেনো আপনার অফিস আছে না।

,,,,,,,, আজ কাজে মন লাগবে নাকি। তার থেকে ভালো চলো চলে যায়।

,,,,,,,,ঠিক আছে চলেন।

আহান আর দিয়া হাত ধরে বের হয়, আবারও সবাই ওদের দিকে আড় চোখে তাকিয়ে আছে।
,,,,,,,,

রিমান হসপিটালে যায় রুহিকে দাওয়াত দেওয়ার জন্য। সে গাড়ি থেকে নেমে হসপিটালের ভিতরে গিয়ে দেখে রুহি সৌরভের সাথে কথা বলছে, তাও আবার অনেক হেঁসে হেঁসে।

রিমান চলে যেতে নিয়ে আবার রুহির দিকে যায়। গিয়ে রুহিকে জোরে ধমকের সুরে ডাক দেয়, রুহি চমকে যায়। তাকিয়ে রিমানকে দেখে খুশি হয়ে রিমানের কাছে আসে।

রুহি,,,,,,, আরে তুমি না মানে আপনি,, এখানে আমার কথা মনে পড়ছিলো।

রিমান,,,,,,,, কি হচ্ছিলো এখানে।

,,,,,,কই কিছু না তো। এমনি কথা বলছিলাম।

,,,,,,,সেটা তো দেখতেই পারছি, এমনি কি কথা হচ্ছে।এ নে তোর কার্ড, কাল পার্টি আছে, চলে আসিস। (কার্ড দিয়ে)

রুহি,,,,,,,,আরে যাবো না মানে,, জমজমাট পার্টি হবে, অনেক মজা হবে, অনেক আনন্দ করবো।

সৌরভ,,,,,,,, রুহি ক্লাসে তাড়াতাড়ি আসো, তোমাকে ছাড়া লেকচার শুরু করবো কিভাবে।

রুহি,,,,,,,, দু মিনিট আসছি।

রিমান,,,,,,,,, কেনো তোকে ছাড়া লেকচার শুরু করা যাবে না কেনো,, তুই কি ওকে কিভাবে লেকচার দিবে সেটা শিখিয়ে দিবি নাকি।

,,,,,,,,আরে এমন কিছু না, গুরুত্বপূর্ণ ক্লাস তো তাই। আচ্ছা চিন্তা করো না, আমি ঠিক সময়ে পৌঁছে যাবো।

এই মুহূর্তে সৌরভ এসে রুহির হাত ধরে নিয়ে যেতে যেতে বলে,,,,, সরি বাট জরুরি।

রুহি,,,,,,,ওকে বায়।

রিমান রাগে কি করবে বুঝছে না, বাহিরে এসে নিজের গাড়িতে কয়েকটা লাথি দেয়, রাগে ফসতে ফসতে বলে,,,,ওর সাহস কি করে হলো রুহির হাত ধরার। কি সম্পর্ক ওদের মধ্যে। যা মনে চায় তা সম্পর্ক থাক তোর তাতে কি।

রিমান গাড়ি নিয়ে চলে যায়।

চলবে,,,,,,,