শত ঘৃণার পরেও ভালোবাসি পর্ব-২১

0
1129

#শত_ঘৃণার_পরেও_ভালোবাসি (এক ভালোবাসার গল্প)
#Maishara_Jahan
Part………..21

বলে কান্না করতে করতে চলে যায়। রিমান এখনেই দাঁড়িয়ে আছে, কিছু বলার শক্তি যেনো নেয়। রিমান খুশি হবে না দুঃখ পাবে কিছু বুঝছে না। একটু পরে রিমান বেডে বসে হাসতে থাকে।

আমি যে কারনে তোর থেকে দূরে দূরে থাকতাম সে কারনটাই তুই শেষ করে দিলি। তুই কি জানিস, শত ঘৃণার পরেও আমি তোকেই ভালবাসি। নিজেকে কতোটা কষ্ট করে আটকিয়েছি তোর কাছে না যাওয়ার জন্য সেটা আমিই জানি।

এখন তো নিজের উপরেই রাগ হচ্ছে, সত্যিটা না জেনেই এতোটা বছর তোকে কষ্ট দিয়ে আসছি। তোকে ঘৃণা করার কোনো কারন নেয় তাও ঘৃণা করে আসছি।তবে একটা সত্যি কথা কি জানিস, তুই যদি সত্যিটা আমাকে নাও বলতি তাও তোকে অন্য কারো বউ হতে দিতাম না।

ভেবেছিলাম বিয়ের দিন জামাই উঠিয়ে নিবো, এখন দেখি বউ উঠাতে হবে। ভালো ভাবে রাজি হয়ে গেলে ভালো না হলে আর কি করার। চল রিমান অনেক কাজ আছে।

বলে রিমান চলে যায়। বেরিয়ে দেখে রুহি গাড়ি নিয়ে চলে গেছে। কি আর করার রিমান রিকশা করে চলে যায়।
,,,,,,,,,,,,,,,,,

দিয়া,,,,,,,,,,,,, ওয়াও জায়গাটা তো অনেক সুন্দর, কোথাই এইটা।

,,,,,,,,,,, এটা জঙ্গল এলাকা। আমরা এখন জঙ্গলের ভিতরে আছি।

কথাটা শুনে দিয়া একটু আহানের কাছে আসে। আর হালকা ভয়ে বলে,,,,,,,,, তুমি আমাকে জঙ্গলে কেনো নিয়ে এসেছো।

,,,,,,,,, আরে ভিতু ভয় পাস না, আমি আছি তো, আর এখানে কোনো জঙ্গলী জানোয়ার নেয়,এরা ছোট একটা জঙ্গল যেখানে অনেক শান্তি আর ফাঁকা জায়গা আছে। এই জায়গা ছাড়া তুই যেখনেই যাবি সেখানেই মানুষ থাকবে।

,,,,,,,,,,, ত এখানে কেনো আসে না।

,,,,,,,,,কারন এখানে নাকি কিসব অদ্ভুত অদ্ভুত ঘটনা ঘটে। (দিয়াকে ভয় দেখিয়ে)

দিয়া ভয় পেয়ে আহানের এক হাত জরিয়ে ধরে বলে,,,,,,, চলো চলো এখানে থাকা লাগবে না।

আহান হাসতে থাকে আর বলতে থাকে,,,,,,, তুই যে এতো ভিতু এটা আমার জানা ছিলো না, আমি তো মজা করছিলাম, এটা শহর থেকে অনেক দূরে তাই ছুটি ছাড়া এখানে কেও আসে না।

দিয়া,,,,,,,, ওহহ,,, তাই বলো। (আহানের হাত ছেড়ে দিয়ে)

আহান,,,,,,,,,, তবে কোনো জ্বীন-ভূত থাকতেও পারে, এলাকাটা নিরিবিলি তো।

,,,,,,,,হেহহ তোমার কি মনে হয় আমি ভয় পায়। (সামনে এগিয়ে যেয়ে)

,,,,,,,,,,,, দিয়া ধরে এগোও, উপরে তাকিয়ে দেখো অনেক বড় বড় গাছ, আর এসব গাছেই থাকে কিন্তু।

,,,,,,,,,,, এই ভয় দেখাবা না।

,,,,,,,,,, তাহলে আমার হাত ধরে।

,,,,,,,,,, এটা বললেই হতো এতো না প্যাচিয়ে।

,,,,,,,,,,, কিছু কথা বুঝে নিতে হয়।

আহান এসে দিয়ার হাত ধরে এগোতে থাকে। দুজনে হাঁটছে, ঠান্ডা বাতাসে দুজনের চুল উরিয়ে দিচ্ছে। দুজনের মধ্যে একটা আজানা শান্তি বয়ছে। একটু পরে একটা ফাঁকা জায়গায় এসে থামে। দুজনে একটা গাছের নিচে বসে।

একটু পরে আহান তার মাথা দিয়ার কোলে রেখে শুয়ে পড়ে।

আহান,,,,,,,,,তুই জানিস আগে যখন আমি এখানে আসতাম তখন ভাবতাম একদিন তোকে এখানে নিয়ে আসবো আর এভাবেই তোর কোলে মাথা রেখে শুবো।

দিয়া,,,,,,,, আচ্ছা এতো আগে থেকে আমাকে ভালোবাসতে তাহলে আগে কোনো দিন বলোনি কেনো।

,,,,,,,,,,, সঠিক সময়ের অপেক্ষাই ছিলাম, আর এই অপেক্ষাতেই কতো কিছু হয়ে গেলো।

,,,,,,,,,, হুমম, এখন সব কিছু ঠিক হয়ে গেছে, আর অনেক দিন হলো ইয়াস ও বিরক্ত করছে না।

,,,,,,,,,,, আর কোনো দিন করবেও না। (চোখ বন্ধ করে)

,,,,,,,,,,কেনো।

আহান চোখ খুলে বলে,,,,,,, কেনো মানে, তুই কি চাস নাকি তোকে বিরক্ত করুক।

,,,,,,,,,, না আমি সেটা বলিনি,, আমি জানতে চাই তুমি ওর সাথে কি করেছো।

,,,,,,,,,,,, ও যে ফ্রট করে করে এতো টাকা করেছে সেটা ফাস করে দিয়ে পুলিশে ধরিয়ে দিয়েছি।

,,,,,,,,,, এতো সহজে পুলিশে ধরিয়ে দিয়োছো, এটা তো বিশ্বাস হচ্ছে না, এখনো কিছুটা বাকি আছে হয়তো, বলো বলো।

আহান তার চোখ বন্ধ করে বলে,,,,,,,,, তোর সাথে যেটা করেছে তার শাস্তি দিতে হবে না, বেশি কিছু না শুধু চার পাঁচ মাস হসপিটাল থেকে উঠতে পারবে না।

,,,,,,,,,,,,,, একদম ঠিক কাজ করেছো।

,,,,,,,,,, আচ্ছা ওর কথা বাদ দে তো, এতো ভালো মুডটাই নষ্ট করে দিলি।

,,,,,,,,,আচ্ছা কি করলে তোমার মুড ঠিক হবে।

আহান চোখ খুলে দিয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে, আহানের তাকানো দেখে দিয়া বুকে অদ্ভুত একটা ফিল আসতে থাকে। দিয়া আহানের থেকে চোখ ঘুড়িয়ে ফেলে। আহান তার হাত দিয়ার ঘাড়ে নিয়ে টান দিয়ে নিচে নামিয়ে ঠোঁট লাগিয়ে দেয়।

দিয়ার চোখ বড়ো বড়ো হয়ে যায়, একটু পর দিয়ার ও চোখ বন্ধ করে ফেলে, আহান দিয়াকে কিস করতে করতে উঠে বসে। একটু পর একটা আওয়াজ পেয়ে দুজন দুজনকে ছেড়ে বসে। দুজন দুদিকে ফিরে ঘন ঘন শ্বাস নিতে থাকে।

কারো দৌড় দেওয়ার মতো আওয়াজ আসছিলো। আহান আশে পাশে ভালো করে তাকায়। তাকিয়ে তাড়াতাড়ি উঠে দিয়াকে উঠায়।

দিয়া,,,,,,,,, কি হলো।

আহান,,,,,,,এখানে বেশি ক্ষন থাকা ঠিক হবে না, চল আমারা চলে যায়।

,,,,,,,,,,হুমম।

আহান দিয়াকে জঙ্গলের অন্য পাশ দিয়ে নিয়ে যায়। আহান দিয়াকে গাড়িতে উঠিয়ে তাড়াতাড়ি ড্রাইভ করতে থাকে।

দিয়া,,,,,,,,, আচ্ছা ওরা কি আমাকে ধরে মেরে ফিলবে।

,,,,,,,,, চুপ,,,,, ওদের আমি তোর কাছে আসতেই দিবো না। তোর দিকে নজর দিলে চোখ উঠিয়ে ফেলবো আমি।

,,,,,,,,, ডক্টর আমি আর অপারেশন এর কথা বলছো তুমি।

,,,,,,,,,, আমি ডক্টর এর বয়ফ্রেন্ড না তাই।

আহান আর দিয়া বাসায় যায়, দিয়া একটু সামনে যায়, আহান লাইট জ্বালাতেই দিয়ার সামনে রিমান এসে দাঁড়ায়। হঠাৎ করে দিয়ার সামনে এসে পড়ায় দিয়া ভয়ে চিৎকার করে। আহান ও দৌড়ে আসে।

রিমান,,,,,,,,,, দিয়া আমি রিমান।

দিয়া,,,,,,,,,, তুমি ভিতরে আসলে কিভাবে।

রিমান,,,,,,,,,, আমি দরজার পাসওয়ার্ড জানি।

আহান,,,,,,,,তোর কারনে দিয়া ভয় পেয়ে গেলো।

রিমান,,,,,,,,, তুমি আমাকে দেখে ভয় পেয়েছো, আমাকে দেখে। এতো হেন্সাম একটা চেহেরা দেখে কেও ভয় পায়, কথাটা কলিজায় লাগলো। (দুঃখ প্রকাশ করে)

আহান,,,,,,,কেনো আসছিস এটা বল,,, ও হ্যাঁ তুই না মেরিনকে বিয়ে করবি না বলতে গেছিলি,, বলা হলো।

রিমান,,,,,,,,, আরে না রে। তোর বোন এসে হাতে ব্যাথাও পেয়ে গেছে, তাই বলতে পারি নি।

আহান,,,,,,, মানে কিভাবে।

দিয়া,,,,,,, বেশি লাগেনি তো।

রিমান সবটা বলে।

দিয়া,,,,,,,,,, হাও রোমান্টিক, কোলে উঠিয়ে হসপিটালে নিয়ে যাওয়া।

আহান,,,,,,,,,তুই চাইলে আমিও তোকে উঠাতে পারি।

দিয়া,,,,,, সত্যি।

আহান,,,,,,, হুমম।

রিমান,,,,,,,,, আমি এখানে তোদের রোমান্স দেখতে আসি নি। আমি আমার প্রবলেম শেষ করতে আসছি।

রিমান,,,,,,,, আমি মেরিনদের বাসায় গিয়ে ওকে সব সত্যিটা বলে এসেছি আর ও বুঝেও গেছে।

আহান,,,,,,,,,, তুই যে বললি, ওকে বলতে পারিস নি।

রিমান,,,,,,, আরে গাধা আমি রেস্টুরেন্টে বলতে পারিনি, বাসায় গিয়ে বলে এসেছি।

আহান,,,,,,এটা সোজা সোজি বললে কি হতো। মেরিনকে বিয়ে করবি না তো কাকে বিয়ে করবি।

রিমান,,,,,,, তোর বোনকে।

আহান আর দিয়া রিমানের দিকে তাকিয়ে আছে।

রিমান,,,,,,,,, এমন তাকালে নজর লেগে যাবে আমার।

রিমান দুজনকে সবটা খুলে বলে।

দিয়া,,,,,,, এতো দিন শুধু শুধু আমার বান্ধবীটাকে কষ্ট দিলা।

আহান,,,,,,,,,, রুহিকে কষ্ট দিয়ে ও নিজেও কষ্ট পেয়েছে।

রিমান,,,,,,,, আচ্ছা সব কথা বাদ, তুই আমার সাথে তোর বাড়িতে থাকবি, আজ থেকে।

আহান,,,,,,,, তাহলে এখন আমরা কোথাই আছি, রাস্তায়।

রিমান,,,,,,,,, আরে মানে তোর বাবার বাসায় থাকবি।

আহান,,,,,,,, আমাকে পাগল কুকুরে কামড় দিছে নাকি।

রিমান,,,,,,,, কাল থেকে রুহির বিয়ে আয়োজন হবে, তুই বড় ভাই তোর একটা দায়িত্ব আছে না।

আহান,,,,,,, রুহির বিয়ের দায়িত্ব নিবানোর জন্য অনেকে আছে।

রিমান,,,,,,, আমি রুহির না আমার কথা বলছি। আমার বিয়ের দায়িত্ব ও তোর তাই না।

আহান,,,,,,,আমি এতো দায়িত্ব নিতে পারবো না।

রিমান,,,,,,, ঠিক আছে না নিলি, আমার তো কেও নেয়, তাই ভেবেছিলাম তুই আমার ফেমেলি, আর তুই ও না করে দিলি। দোস্ত, দোস্ত না রাহা, পেয়ার, পেয়ার না রাহা (গান গেয়ে)

আহান,,,,,,,,,,,,, ইমোশনাল অত্যাচার,, আর ড্রামা করতে হবে না। কি করতে হবে।

রিমান,,,,,,, আমার সাথে তোর বাপের বাড়িতে থাকতে হবে বাকিটা আমি সামলে নিবো। আর পরে কি করতে হবে আমি বলে দিবো। তুই থাকলে আমি ঐ বাড়িতে থাকতে পাবো।

আহান,,,,,,,আমি না গেলে মনে হয় তোকে ঐ বাড়িতে থাকতে দিবে না।

রিমান,,,,, তোর বোনকে তুই ভালো করে চিনিস, তাছাড়া তুই থাকলে একটু সাহস পাবো। চল চল।

আহান,,,,,,,,, আজকেই যেতে হবে।

রিমান,,,,,,, তোর বোনের বিয়ের বেশি দিন নাইরে। কেনো আমাকে দিয়ে উল্টা পাল্টা কাজ করাতে চাস।

আহান,,,,,, তোর মনে কোনো উল্টো পাল্টা বুদ্ধি নেয় তো আবার।

রিমান,,,,,,, হতেই পারে না, আমি এমন কিছু ভাবতে পারি বল। (বড় করে একটা হাসি দিয়ে)

আহান,,,,,,,সন্দেহ জনক লাগছে।

রিমান,,,,,,, আরে চল তো।

আহান,,,,,,,কাপড় তো নিতে দে।

রিমান,,,,,,, আগে গিয়া সব ঠিক করে নেই,, যদি তোকে লাথি দিয়ে বের করে দেয় তখন শুধু শুধু আবার কষ্ট করে কাপড় গুলো গুছাতে হবে।

আহান,,,,,,,, তুই কি বলতে চাস,,,হেহহ কার এতো বড় সাহস আমাকে লাথি দিয়ে বের করে দিবে।

রিমান,,,,,,,, তোর বাবার।

আহান,,,,,চল দেখা যাবে কে বের করে আমাকে।

রিমান,,,,,, সব্বাশ বাঘের বাচ্চা।

দিয়া,,,,,,,, এক্সকিউজ মি,, আমি কি করবো।

রিমান,,,,,,,,,, এই মিনি প্যাকেট কেও নিয়ে যাবো,চলো।

সবাই গাড়ি করে বাসার সামনে আসে। এসে ভিতরে যায়। সবাই তাদের দিকেই তাকিয়ে আছে।

রিমান,,,,,,,, আংকেল রুহির বিয়ের জন্য আমি আজকের এসে পড়েছি,, সব কিছু তো আমাকেই করতে হবে তাই না।

বাবা,,,,,,,,, ভালো করেছো। এই বাড়ির ছেলে বলতে তো তুই আছিস। আরেক জন কেনো এসেছে।

আহান,,,,,,,আমার বোনের বিয়ে আর আমি থাকবো না, এটা হতে পারে নাকি। আর হ্যাঁ কেও কিছু বলার আগে আমি বলে রাখছি হয়তো আমি এখানে থাকবো না হলে রুহিকে আমার বাড়িতে নিয়ে গিয়ে বিয়ে দিবো। এখন যার যেটা ভালো লাগে।

বাবা,,,,,,,, মোগের মুল্লুক নাকি।

আহান,,,,,,,সবাই জানে আমি যেটা বলি সেটাই করি।

মা,,,,,,, আহ তুমি চুপ থাকো না,, আমি কোনো গন্ডগোল চাই না।যা তুই তোর রুমে যা। সাথে রিমান তুইও যা।

দুজন যেতে থাকে,, মাঝখানে দিয়া কি বলবে খুঁজে পাচ্ছে না। ও শুধু চুপচাপ দাঁড়িয়ে ডেব ডেক করে তাকিয়ে আছে।

চাচি,,,,,, এও আবার এখানে থাকবে নাকি, আপদ।

আহান দাঁড়িয়ে যায়,পিছনে ফিরে চাচিদের দিকে তাকায়, তারা সবাই চুপ হয়ে যায়।

মা,,,,,,,, দিয়া তুই রুহির রুমে যা।

দিয়া,,,,,,, হুমম।

আহান তার রুমে গিয়ে অভাক হয়ে যায়, সব ঠিক আগের মতোই আছে, কিছুই বদলায় নি। একদম পরিষ্কার। রিমান তার বেগ নিয়ে আসে।

আহান,,,,,,কিরে তুই আমাকে আমার বেগ আনতে মানা করলি আর তোরটা নিয়ে আসলি কেনো।

রিমান,,,,,,, লাথি দিলে তোকে দিতো আমাকে না।

আহান,,,,,,,,,আমাকে লাথি দিয়ে বের করে দিলে তুই এই বাড়িতে থাকতি।

,,,,,,,,অবশ্যই,,, শুধু তোকে কেনো আমাকে লাথি মারলেও আমি থাকতাম।

,,,,,,,,,হাড়ামি।

,,,,,,আচ্ছা, থাক তুই আমি দেখি আমার তোতা পাখি কই।

চলবে,,,,,,,