#শান্তি_সমাবেশ
#সাইয়্যারা_খান
#পর্বঃ১০
–তোমার মাথা ঠিক আছে আব্বু? সমাবেশে ঐ বো*মা হামলা আমি করাই নি।
সাফারাত নিজেকে নির্দোষ দাবি করলো বাবা সোয়েব মির্জা’র কাছে। ভ্রুতে কিঞ্চিৎ ভাজ করলো সোয়েব মির্জা’র। গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠলেন,
— পরিকল্পনা ছিলো তোমার যে বো*মা হামলা করাবে তুমি। আমি না করার পরও জেদ চেপেছিলো তোমার। জানি তুমি মিথ্যা বলছো না। তাহলে কে করবে এই কাজ?
সাফারাত বাবা’র বিশ্বাস অর্জন করতে পেয়ে দম নিলো। মাথা ঝিমিয়ে উঠেছিলো তার গত কাল থেকে। তার দলের লোক কয়েকজন হাজতে। তার মধ্যে বাবা’র ডাক। সব মিলিয়ে তুঙ্গে ছিলো সে। ছিলো বলতে আছে এখনও। মাথাটা ডিভানে হেলিয়ে দিয়ে চিন্তায় মগ্ন হলো সে। অতঃপর মাথা ঘুরিয়ে বাবা’র দিকে তাকিয়ে রইলো। সন্দিহান গলায় বাবা’কে জানালো,
— আমি ভেবেছিলাম হামলাটা করব। লোকজন সব সেট ছিলো। পূর্ণ’র ভাষণ শেষ হওয়ার পর যখন মন্ত্রী’রা চলে যেত তখন করাতাম হামলা। কিন্তু তার আগেই সব লন্ডভন্ড হয়ে গেল। জানি না কে বা কারা বো*ম মারলো। মুহূর্তে ধোঁয়া আর অন্ধকারে ছেঁয়ে গেলো। আমার চাল উল্টে দিলো একদম।
— পূর্ণ’র দলের নেতৃত্ব ছিলো গত কাল। যে এই কাজ করেছে সে নিশ্চিত পূর্ণ’র শত্রু।
— শত্রুর শত্রু পরস্পর বন্ধু আব্বু।
— পরম বন্ধু।
কথাটা বলেই উচ্চস্বরে হেসে উঠলেন সোয়েব মির্জা। পরপর হাসি থামিয়ে গম্ভীর স্বরে আদেশ করলেন মাহিন মিয়া’কে,
— খবর লাগাও মাহিন। কে জন্মালো ধরণীর বুকে যে আমার শিকার’কে থাবা মারলো।
মাহিন মিয়া একদম বাধ্য গোলামের ন্যায় জ্বি বলে সরলো সেখান থেকে। সাফারাত দুই হাতে চোখ মুদিত করলো। পরপর উঠে দাঁড়িয়ে গেল সটান হয়ে। একটু বিশ্রাম দরকার এখন। তার ছেলে-পুলেদের জেল থেকে ছুটানোর ব্যাবস্থা করা হয়েছে। এখন লম্বা গোসল নিয়ে ঘুম দরকার। নিজের বলিষ্ঠ দেহ নিয়ে সিড়ি বেয়ে রুমে ঢুকলো সে। গা থেকে সাদা রঙের পাঞ্জাবিটা খুলে কাউচে রেখে পা বাড়ালো সাওয়ার নিতে। ঝর্ণার ঠান্ডা পানিতে কিছুটা শান্ত হলো তার শরীর। ফর্সা চওড়া কাঁধ বেয়ে গড়িয়ে পরলো পানির অবাধ্য বিন্দু কণা। চাপ দাঁড়িতে আটকা পরলো কিছু পানি। সাফারাত একহাতে দাঁড়িতে থাকা পানিগুলো ঝেড়ে নিয়ে টাওয়াল পেচিয়ে বের হলো। ঠান্ডা শরীরে এসির বাতাসটা যেন রিমিঝিমিয়ে উঠালো তার পুরুষ দেহ। ভেজা চুল গুলো ঝেড়ে টিশার্ট জড়ালো গায়ে। আলস্য তাকে জেঁকে ধরলেও নামাজটা বাদ দেয়া পছন্দ নয় তার তাই তো তীব্র মাথা ব্যাথা নিয়েও সুন্দর ফরজ টুকু আদায় করে নিলো। এখন একটা ঘুম দিলেই সে চাঙ্গা হবে তা সে জানে। তাই টিশার্ট খুলে উবুড় হয়ে শুয়ে পরলো। ফর্সা পিঠের মাঝ বরাবর তার জন্মদাগটা যেন যে কাউকেই আকর্ষিত করে তুলবে।
_____________________
ধৈর্য পূর্ণ’র অনেক। সহজে রাগ উঠে না। ঝামেলা হলো রাগ উঠলে আবার দমন ও করতে পারে না সহজে। যেমনটা হচ্ছে এখন। রাগ উঠছে তার। অধৈর্য হয়ে পরেছে সে। এই মেয়ে পেয়ে বসেছে একদম পূর্ণ’কে। তার মধ্যে কাঁদছে। সহ্য শক্তি ক্রমে ক্রমে কমে যাচ্ছে পূর্ণ’র। কেন কাঁদছে এতটা পূর্ণময়ী? কারণটা হাজার বার জিজ্ঞেস করেও উত্তর মেলে নি। এবার বাঁধ ভাঙলো পূর্ণ’র। ধৈর্যের বাঁধ। তবুও তার মৃত্ত’কে বরাবরের মতো ধীর কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো,
— মৃত্ত আমার বলুন কি হয়েছে? কেউ কিছু বলেছে আমার মৃত্ত’কে?
মাথা দুলালো মৃত্তিকা। রাগে ফেটে পরে সোজারে ঘুষি মারলো পূর্ণ কাঁচে’র অংশে। দরজার মাঝ বরাবর থাকা কাঁচটা মুহূর্তেই ঝনঝন শব্দে ভেঙে পরলো। মৃত্তিকা ভয়ে সিটিয়ে দূরে সরলো। পরক্ষণেই নজর গেলো পূর্ণ’র হাতে। টপটপ করে র*ক্ত পরছে সেখান থেকে। সকল ভাবনা বাদ দিয়ে মৃত্তিকা ঝট করে পূর্ণ’র কাটা হাতটা ধরলো। আতঙ্কিত গলায় চিন্তা শুধালো,
— ক…কি করলেন? হাত কেটে…
কথাগুলো যেন আটকে আটকে আসছে। জড়িয়ে যাচ্ছে বারংবার। নিজের কান্না ভুলে ব্যাগ থেকে রুমালটা বের করে চেপে ধরার আগেই হাত সরিয়ে নিলো পূর্ণ। মৃত্তিকা ছলছল চোখে তাকাতেই গম্ভীর কণ্ঠে পূর্ণ বলে উঠলো,
— আমি এই কাচের ভাঙা টুকরো গুলোর ন্যায়ই মৃত্ত। আমাতে হাত দিলে র*ক্তাক্ত হবেই।
–হোক।
দৃঢ় জবাব দিয়েই পূর্ণ’র হাতে রুমাল চেপে বললো,
–চলুন এখান থেকে।
— আগে বলুন তখন করিডরে কেন কাঁদছিলেন?
— আআ…
— তোতলানো বন্ধ করুন মৃত্ত। সোজা কথা জিজ্ঞেস করেছি সোজা উত্তর দিন।
মৃত্তিকা দ্বিধায় পরলো। কেন কাঁদতে গেলো? এখন যে ফাঁসলো? পূর্ণ’র হাতে রুমাল চেপে সেই হাতটা তখনও মৃত্তিকা’র দুই হাতের মুঠোয়। নত মস্তিষ্কে মৃত্তিকা গড়গড় করে বলে দিলো,
— সিনিয়র আপুরা আমাকে দেখে মজা নিচ্ছিলো। আমি কালো আর আপনি সুন্দর। এটাই বলছিলো৷ আপনি আমাকে নিয়ে মজা নিচ্ছেন পরে….
–পরে? পরে কি?
খুবই শান্ত গলায় জিজ্ঞেস করলো পূর্ণ। মৃত্তিকা ঢোক গিললো। ঘুরিয়ে নিলো কথা। সজালো নিজের মতো। বলে উঠলো,
— বলেছে আপনি রাজনীতি করেন তাই যাতে আপনার থেকে দূরে থাকি।
কথাটা বলেই দম নিলো। পূর্ণ সন্দেহের অবকাশ রইলো না। এই মৃত্ত’কে ওর চেনা। এই কথার কারণে সে কাঁদে নি। পুণরায় কিছু জিজ্ঞেসাবাদ করার আগেই মৃত্তিকা অনুরোধের সুরে বললো,
— দয়া করে চলুন।
পূর্ণ নিজের জন্য না হলেও মৃত্তিকা’র জন্য গেলো। এমন ছোট খাট কত ব্যাথা পেয়েছে আগে অথচ এই ব্যাথার মেডিসিন লাগাতে হবে নাহলে তার মৃত্ত যে শান্তি পাবে না।
মৃত্তিকা মুখে না বললেও তার চোখ বলেছে অনেককিছু। খবর পূর্ণ’র কানে সময় নিবে না৷ তাই আপাতত প্রিয়তমার ভয় কমাতে হাতে একটা পট্টি বাঁধতেই হবে।
__________________
–দেখ হিমু সব কিছুর একটা লিমিট থাকে।
— এভাবে বলছিস কেন?
উজ্জ্বল এবার মহা বিরক্ত হলো। একটা মানুষ কতটা ঠিক কতটা হ্যাংলা হলে ঐ ঘটনার পরও একটা ঠকবাজ মেয়ের পিছনে ঘুরে? তাকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখানো হচ্ছে তবুও বান্দা নাছর। কারো কথা তার কানে ঢুকছে না। আজকে যাচ্ছে পার্কে। রুপা নাকি দেখা করবে। উজ্জ্বল এবার একটা গালি দিয়ে বললো,
— ম’র তুই শ্যালা ঝুঁনা কাঠ।
বরাবরের মতোই কোন গালি বা কটু কথা গায়ে মাখলো না হিমু৷ পাঞ্জাবীটা পড়ে বেহায়ার মতো উজ্জ্বলের কাছে গিয়ে বললো,
— দোস্ত তোর ওই চকলেট ফ্লেভারের পারফিউম টা দে না।
— শ্যালা ছেঁচড়া। যা সর।
দাঁত কেলিয়ে একটু ফুসফুস করে পারফিউম লাগালো হিমু। আয়নায় নিজেকে সপ্তমবারের মতো দেখে বললো,
— টেনশন নিস না। পার্কে আর কি ই খাবে? বাদাম, মুড়ি আর ফুচকাই থাকে।
উজ্জ্বল ফোন থেকে নজর সড়ালো না। এমন ফালতু ছেলে আগে দেখে নি ও৷ মরুক ও। মনে মনে বলে ফোন ঘাটা শুরু করলো।
হিমু বেরিয়ে গেলো। দীর্ঘ শ্বাস ফেলে উজ্জ্বল আবার ক্যাম্পাসে গেলো। এসেছিলো মাথামোটা হিমু’কে বুঝাতে যার পুরোটাই বৃথা।
.
পূর্ণ’র হাতে ব্যান্ডেজ হয়ে গিয়েছে। আপাতত দুইজন তাদের বিখ্যাত বট গাছের গোড়ায় বসে আছে। তখনই একটা ছেলে দৌড়ে এসে কিছুটা হাঁপাতে হাঁপাতে ডাকলো,
— ভাই।
পূর্ণ মৃত্তিকা’র দিকে একপলক তাকিয়ে বললো,
— পুরোটা শেষ করুন। আসছি দুই মিনিট।
মাথা নাড়ালো মৃত্তিকা। তার হাতে একটা স্যান্ডউইচ। টিফিন বাবা দিলেও সে সেটা জোর করে পূর্ণ’কে খেতে দিয়েছিলো যাতে পেইন কিলার নিতে পারে। পূর্ণ’র ক্ষুধা থাকায় সে পুরোটাই খেয়েছে কিন্তু পেট ভরে নি। চড়ুই সমান তার মৃত্ত। খাবার ও খায় ততটুকু। পূর্ণ’র মনে হয় খাবার যতটুকু খেয়েছে তা পেটের কোন এক কোণায় গিয়ে পরে আছে। তাই আবার চারটা স্যান্ডউইচ ক্যান্টিন থেকে নিয়ে এখানে এসেছে। পূর্ণ দুটো খেয়ে ফেললেও মৃত্তিকা একটা শেষ করতে পারে নি। বাধ্য হয়ে তৃতীয়টাতেও পূর্ণ ই কামড় বসিয়েছে।
ছেলেটা আড় চোখে একবার মৃত্তিকা’র দিকে তাকিয়ে বললো,
— ভাই আপনার ক্লাস মেট ইশিতাই বাজে কথা বলেছে ভাবী’কে। পুরো গ্যাং নিয়ে অপমান করেছে।
— কি বলেছে?
— ভাবীর গায়ের রং নিয়ে অনেক কথা বলসে। আপনি নাকি দুই দিন খেয়ে ছেড়ে দিবেন তাকে আর হুমকি ধামকি ও দিয়েছে যাতে আপনার থেকে দূরে থাকে। এছাড়াও বাপ-মা তুলে কথা শুনিয়েছে। ডিপার্টমেন্টের সবার সামনে অপমান করেছে।
হাত দুটো মুঠ করে নিলো পূর্ণ। তার সাদাসিধা মৃত্ত’কেএত জঘন্য কথা শুনানোর মশুস তো দিতেই হবে ইশিতা’কে। মেয়েটা বার বেরেছে অনেক।এতদিন কিছু না বললেও আজ ঐ মেয়ের ঠিকানা ঠিক করে ছাড়বে।
হেটে মৃত্তিকা’র সামনে পুনরায় এসে মৃত্তিকা’র ব্যাগ থেকে পানি নিয়ে ঢোক ঢোক করে অর্ধেক খেয়ে বললো,
— এতটা কান্না কিসের জন্য ছিলো মৃত্ত? বাপ-মা তুলে কথা বলায় নাকি আমাকে তুলে বলায়?
মুখে থাকা খাবার টুকু আর চিবোনো হলো না মৃত্তিকা’র। পূর্ণ কেন রেগে এমন প্রশ্ন করলো তা বোধগম্য নয়।
#চলবে…..