#শান্তি_সমাবেশ
#সাইয়্যারা_খান
#পর্বঃ৩৪
আবছা কুয়াশায় আচ্ছন্ন চারিদিকে। ডিসেম্বর বলে কথা। শীত এবার আসতে বেশ কৃপণতা দেখালো। আসি আসি করে মাঝ ডিসেম্বর ঠেকালো। পাখির কিচিরমিচির শব্দটা এদিকটাতে বেশি৷ সামনের বিল থেকে আসা পানির শব্দ যেন মন দুয়ারে তরঙ্গ উঠাতে সক্ষম। পূর্ণ এদিক ওদিক তাকালো। গতরাতে সে শশুর বাড়ী ই থেকে গিয়েছিলো। বউয়ের আবদার। ফেলা সম্ভব হয় নি। হাজার হোক পূর্ণ’র অর্ধ না বরং সম্পূর্ণ অঙ্গ সে। যাকে খুব যতনে পালন করে পূর্ণ। একদম বুকের ভিতর রেখে রেখে পলন করে সেই সত্তাটাকে।
হঠাৎ আরো আগমনে দৃষ্টি ভটকালো। পূর্ণ সরল চোখে তাকালো। সাফারাত এসছে। বেশ অগোছালো লাগলো তাকে অথচ সব সময়ের ন্যায় ছেলেটা পরিপাটি ই আছে। ঠিক আগের সাফারাত। চঞ্চলতা যার শিরায় উপশিরায়। ছটফটে স্বভাবের ছেলেটা। যদিও বয়সে পূর্ণ থেকে বড় সে তবুও তাদের বন্ধুত্বটা একদম জমঝমা ছিলো৷ কালের ক্রমে তা নষ্ট হলো। যেই সেই নষ্ট হলো একদম বিচ্ছিরি একটা অবস্থা হলো। ধ্বংস হলো কেউ। সেই ধ্বংসে হারালো কারো সহায় সম্বল। ভাটা পড়লো তাদের সুখের জীবনটাতে।
সাফারাত এগিয়ে এসে পূর্ণ’র পাশে বসলো ধপ করে। বাস্তবে ফিরে পূর্ণ। মুখ, চোখ শক্ত করার চেষ্টা করে। গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠে,
— তারাতাড়ি বল এরপর বিদায় হ।
সাফারাত হাসলো। ও জানে পূর্ণ’র মনের কথা এটা নয়। মোটেও নয় বরং পূর্ণ এখন একটা শক্ত হাগ চাইছে। যা মুখে বলছে না। এগিয়ে এসে সাফারাতই জড়িয়ে ধরলো। পূর্ণ আজ থামালো না৷ কেন জানি সেই রাগটা ধরে রাখতে পারে না। কোথায় গিয়ে যেন তারও মনটা বলে, না সাফারাত দোষী না৷ আবার মস্তিষ্ক বলে, সাফারাত ব্যাতিত কেউই দায়ী না।
মস্তিষ্কের শুনে পূর্ণ। ধাক্কা দিয়ে ছাড়িয়ে নেয় নিজেকে। রোষপূর্ণ গলায় বলে,
— গা ঘেঁষা ঘেঁষি বন্ধ কর।
দুষ্ট হাসে সাফারাত। সেভাবেই বলে,
— কেন মৃত্তিকা বুঝি ছেলেদের সাথে ও ঘেঁষাঘেঁষি করতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে?
গরম চোখে পূর্ণ তাকাতেই সাফারাত দমে যায়। পূর্ণ’র গলা শুনা যায়,
— নিজেকে ক্ল্যারিফাই করবি? কিভবে? প্লিজ সাফারাত এটা বলিস না যে তুই নির্দোষ। তোর কোন দোষ নেই।
— উহু। দোষ আমার। ওকে একা ছাড়ার দোষ আমার। পাগলের মতো চাওয়াটা ও আমার দোষ। সকল পাগলামি আমার দোষ। এই যে আমি সাফারাত এটাও আমার দোষ। তবে আমার সবচেয়ে বড় দোষ কি সেটা জানতে চাইবি না?
পূর্ণ জবাব দেয় না। পুণরায় সাফারাত বলে,
— সাফারাত শোয়েব মির্জা’র ছেলে এটাই তার সবচেয়ে বড় দোষ পূর্ণ।
.
কানাডার ঠান্ডা শহরে হেটে চলছে দুই জন ছেলে একজন মানবী। ঠান্ডার প্রকোপ সেখানে এতটাই যে ছেলে দুজন ফুল হুটি টুডি পড়ে তার উপর ওভার কোর্ট পড়ছে অথচ তাদের সাথেই হেটে যাচ্ছে একজন বিশ একুশ বছর বয়সী সুন্দর রমণী। পরণে তার ফিনফিনে গোলাপি একটা শাড়ী। ঠান্ডার প্রকোপে তার মায়াবী ফর্সা মুখখানা ফ্যাকাসে হয়ে যাচ্ছে অথচ রাগে লাল হয়ে আছে তার গাল দুটো। রাগ লাগার কারণটাও বিশাল। যেখানে সে মেয়ে হয়ে এমন পাতলা শাড়ী পড়ে আছে সেখানে দুই দুটো জোয়ান ছেলে কিভবে কাঁপছে তার সামনে। লজ্জা কি নেই এদের?
পূর্ণ থেমে গেলো। সে আর যাবে না। সাফারাত অনুনয়ের চোখে তাকালো। না গেলেই বিপদ। তার একান্ত নারীটা বড্ড জেদী। না জানি কখন রেগে যায়? যদিও সে রেগে আছে এটা বুঝা যাচ্ছে কিন্তু সাফারাত সেই রাগটাকে বাড়াতে চাইলো না। নিজের পেছনে দুই জনের অস্তিত্ব না পেয়ে পেছনে ঘুরলো মাশরুহা। না তার পালিত গাঁধা দুটো পেছনে নেই। অদূরে ই দাঁড়িয়ে নিজেদের মধ্যে কথা বলে যাচ্ছে। রাগে এবার ফেটে পড়ার উপক্রম তার। ধুপধাপ পা ফেলে এগিয়ে এলো সে। শাড়ীর সাথে পড়নে তার ক্যাস নাহলে এত দ্রুত হাটাও তার পক্ষে সম্ভব নয়। এসেই নিজের লাল গাল দুটো নাড়িয়ে বলা শুরু করলো,
— আই জাস্ট কান্ট বিলিভ দিস!
সাফারাত এগিয়ে এসে মাশরুহা হাতটা ধরতেই তা ঝাঁড়া দিয়ে ফেলে দিলো মাশরুহা। ব্যাথিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে সাফারাত ডাকলো,
— রুহা? জান!
— স্যাট আপ রাত। পূর্ণ তুই যাবি কি না?
মাথা নাড়ে পূর্ণ। যাবে না সে। সাফারাত তারাতাড়ি একহাতে পূর্ণ’কে ধরে অনুনয়-বিনয় করে বললো,
— দোস্ত জান আমার। চল না। প্রমিস ওখানে গিয়েই গরম গরম কিছু খাওয়াব তোকে। একদমই শীত লাগবে না।
–কয়টা জান তোর?ওখানে যেতে যেতেই জমে যাব আমি। শালা ভাগ।
মাশরুহা এবার তেঁতে উঠে,
— লজ্জা লাগে না। এত কিছু পড়েও বলছিস শীত লাগে। আমার দিকে তাকা। দেখ কি পড়েছি। পাতলা এই শাড়ী! তোদের ন্যাকামি তে এখন গা জ্বলে উঠছে আমার।
— এই তো তোমার গা জ্বলছে মানে শীত লাগছে না।
পূর্ণ’র কথায় এবারও জ্বলে উঠে মাশরুহা। হাত পা বাড়িয়ে ধুম করে মা’রে সাফারাতে’র পিঠে। ব্যাথাকাতুর শব্দ তুলে সাফারাত। অভিযোগ করে,
— কলিজা! আমার কি দোষ?
মাশরুহা কথা বলে না। গাল দুটো রাগের প্রকোপে লাল হচ্ছে বেশি বেশি। সেই লাল হওয়া গাল নিয়ে চোখ দু’টো ও লাল করে নিয়ে বললো,
— ইটস দ্যা লাস্ট টাইম আ’ম আসকিং ইউ পূর্ণ। উইল ইউ আ’ম আর নট?
— লেটস গো।
কথাটা বলেই হাটা দিলো পূর্ণ। পেছনে সাফারাতও মাশরুহা’কে একহাতে আগলে নিয়ে আদুরে গলায় বললো,
— রাগে না বার্ড। হি ইজ গোয়িং ইউথ আস। মুড ঠিক করো। দেখি আরেকটু কাছে আসো। দেখো বরফ পড়ছে। কেন যে শাড়ী….
মাশরুহা’র গরম চাহনিতে থমকালো সাফারাত। চুপচাপ আরেকটু আগলে নিয়ে হাটা দিলো সামনের দিকে।
কানাডার বড়সড় একটা চার্চের সামনে দাঁড়িয়ে আছে তারা। এখানেই মাফরুহা’র এক কাছের বান্ধবী’র বিয়ে আজ। মেয়েটা খ্রিস্টান। পূর্ণ নিজের ওভার কোর্ট’টা খুলে ভেতরে না ঢুকে সাইডে বেঞ্চে বসলো। মাশরুহা তাকাতেই সাফারাতও ওর কপালে চুমু খেয়ে বললো,
— তুমি যাও বার্ড। আমরা বাইরে আছি। আর শুনো ওখানের কিছু মুখে দিও না। অ্যালকোহল মিক্স থাকে সবকিছুতে।
— তুমি ও চলো না প্লিজ। সত্যি বলছি…
কথাটা আটকে দিয়ে আলতো করে মাশরুহার ঠোঁটে চুমু দিয়ে সরে গেলো সাফারাত। মাশরুহা জানে এটা কিসের সংকেত। কথা না বাড়িয়ে চার্চে’র ভেতরে গেলো সে। এই চুমুটাও সাফারাত খেতো না৷ এখানে থাকতে থাকতে কালচারগুলো কিছুটা অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। সেই যে দশম শ্রেণি পাশ করার পর বাবা পাঠালো আর ফেরা হলো না।
সাফারাত গিয়ে বসলো পূর্ণ’র পাশে। পূর্ণ খোঁটা দিয়ে বললো,
— কোথায় শরীর না গরম করিস তুই?
— শালা ছোঁচা।
–এত যে শালা ডাকিস বোন কি এখনও বিয়ে দিয়েছি? বেশি করলে কিন্তু বোন দিব না তখন বুঝবি মজা।
— পাগল হয়ে এই কানাডায় ঘুরবে থালা হাতে আমাকে না পেলে।
— অসভ্য।
বলেই উঠলো পূর্ণ। রাস্তার পাশেই গরম গরম স্যান্ডউইচ আর ক্যাপিচিনো হচ্ছে। সেখানে দাঁড়িয়ে দুইজন খাওয়া ধরলো। পালাক্রমে এত বড় বড় স্যান্ডইউচ দুইজন তিনটা করে খেলো। সাফারাত একটা প্যাক করয়ে নিয়েছে। তার বার্ড নিশ্চিত না করাতে ওখানের কিছু ছুঁয়ে ও দেখবে না।
তারও প্রায় ঘন্টা খানিক পর বেরিয়ে আসে মাশরুহা। হাসি হাসি তার মুখ। মেয়েটা এত কেন খুশি? হাতে একটা বুকে। এটা ব্রাইডের বুকে দেখেই বুঝা যাচ্ছে। তবে কেন না মাশরুহার হাতে?
রুহা দৌড়ে এসে ঝাঁপিয়ে পড়ে সাফারাতে’র বুকে। দুইহাতে জড়িয়ে একটু উঁচিয়ে ধরে সাফারাত৷ তার কাঁধে মাথা দিয়ে পূর্ণ’র দিকে তাকিয়ে হাতের বুকে টা দেখিয়ে রুহা বলে,
— দেখ পূর্ণ আমি পেলাম।
— ফেলে দাও।
— চুপ থাক। জানিস এটা কি?
সাফারাত থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিলো রুহা। উচ্ছাসিত কন্ঠে বললো,
— ব্রাইড পেছনে ফিরে বিয়ের পর এটা ছুঁয়ে মা’রে। যে ক্যাচ ধরে তার বিয়ে তারাতাড়ি হয়। এটা আমার হাতে এসেছে রাত। এরমানে আমাদের ও বিয়ে হবে। চল না বিয়ে করে ফেলি।
কি সুন্দর আবদার। পূর্ণ উঠে দাঁড়িয়ে বলে,
— লেটস গো ব্যাক। আম্মু-আব্বু অপেক্ষা করছে।
ছলছল করা চোখ রুহা’র। সাফারাতের কষ্ট লাগে। দেখতে পারে না এই নারীর অশ্রু। তার যেন মরণ হয় এমন দশায়। কান্নারত গলায় মাশরুহা বলে,
— উইল ইউ ম্যারি মি রাত? টেল? প্লিজ না।
— বিডি’তে ব্যাক করি আগে বার্ড। করব তো বিয়ে।
— এখন কেন নয়?
পূর্ণ মাঝখান থেকে তাঁড়া দিতেই কেঁদে ফেলে রুহা। যা সহ্য করার ক্ষমতা দুইজন পুরুষেরই নেই। যদিও পূর্ণ মাশরুহা থেকে প্রায় আড়াই বছরের ছোট । রুহা কাঁদতে কাঁদতে বললো,
— আর ইউ চিটিং ইউথ মি রাত?
ব্যাস সাফারাতের আত্নহুতি এখানেই হলো। হাতটা চেপে ধরে মাশরুহা’র। হাটা দেয় অন্য পথে। দীর্ঘ শ্বাস ফেলে পূর্ণ ও তাদের পিছু নেয়। মসজিদের কাছে এসে দাঁড়িয়ে শাড়ীটা দিয়ে সুন্দর করে মাথা ঢেকে দেয় রুহা’র। রুহা তখনও বোকা চোখে তাকিয়ে। ওদের অবাক করে দিয়ে পূর্ণ ইমাম নিয়ে হাজির হলো। কানাডার ঠান্ডা বরফের মাঝে বিবাহিত বন্ধনে আবদ্ধ হয় দুইজন বাঙালি মুসলিম। সাক্ষী রইলো মেয়ের ছোট ভাই এবং বরের বেস্ট ফ্রেন্ড পূর্ণ। বাঁধা পরলো সাফারাত মির্জা এবং মাশরুহা ওয়াহাজ।
.
এতোদিন পর অতীত হাতড়ে হতড়ে ক্লান্ত হলো সাফারাত, পূর্ণ। মুখে তাদের রা নেই। ফোনটা তখনই সশব্দে বেজে উঠে। স্ক্রিনে ভাসছে “মৃত্ত”। গা ঝেড়ে দাঁড়িয়ে যায় পূর্ণ। সাফারাত তখন ও বসে। গা ছেড়ে দিয়ে বসে আছে সে। কেমন যেন অগোছালো ভাব তার মাঝে। পূর্ণ তাকে টেনে তুলার চেষ্টা করে। লাভ হয় না। হঠাৎ পাগলের মতো সাফারাত পূর্ণ’র পা জড়িয়ে ধরলো। আকুতি করতে লাগলো সশব্দে,
— ওকে এনে দে পূর্ণ। ওকে দে। আমার বার্ড এনে দে না পূর্ণ। ও কোথায়? পূর্ণ! এই কথা বল না৷ আমাকে এনে দে না।
শক্ত পূর্ণ যেন ভেঙে পরবে। নিজেও বসে এত বছর পর নিজ থেকে জড়িয়ে ধরে সাফারাত’কে। সান্ত্বনা দিতে পারলো না। না নিজেকে না সাফারাত’কে।
___________________
বাড়ী ফিরতেই দেখা মিললো মৃত্তিকা’র। টেবিলে হাত রেখে বসে আছে। পূর্ণ ভেতরে ঢুকে ঠিক তার পাশে বসে। ঘড়িতে সকাল নয়টা। কিচেন থেকে মৃন্ময় হাওলাদার বেরিয়ে এসেই পূর্ণ’কে দেখে বললো,
— কখন এলে?
— মাত্র ই আব্বু।
চমকে তাকালো মৃত্তিকা। সে টের পায় নি। মৃন্ময় হাওলাদার নিজের কফিটা পূর্ণ’কে দিয়ে মিঠি’র মা’কে ডেকে বললো আরেকটা কফি দিতে। মিঠি’র মা কফি রাখতেই তিনি সন্দিহান গলায় জিজ্ঞেস করলেন,
— মিঠি ইদানীং সকাল সকাল কোথায় যাচ্ছে?
— জানি না তো।
— জিজ্ঞেস করবে ওকে? এত সকালে বাইরে কি ওর? আমার কাছে পাঠাবে রাতে। কথা আছে ওর সঙ্গে।
মিঠি’র মা মাথা নেড়ে চলে যায়। মৃত্তিকা বাবা, পূর্ণ’কে খাবার বেড়ে দিলো। খেতে খেতে পূর্ণ জানালো,
— আব্বু। আগামী কাল এই এলকায় আসছি। ভোট চেয়ে রাখলাম।
হাসলেন মৃন্ময় হাওলাদার। মৃত্তিকা অবাক স্বরে বললো,
— আব্বু’র কাছে কেন চাইতে হবে?
— আব্বু কি বাংলাদেশের নাগরিক না?
মৃত্তিকা কথা বাড়ালো না। বাড়িয়েও লাভ নেই। কথায় পারে না ও। মৃন্ময় হাওলাদার পূর্ণ’কে বলেন,
— আগামী কাল বাসায়ই আছি। আসো। এদিকে পরিচিত কিছু লোক আছে আমার। কাজে লাগাও। আশা রাখছি সহজ হবে।
— ধন্যবাদ আব্বু।
.
রাতে আজ শশুর শাশুড়ী’র রুমে তাদের খাটে বসে বসে বাইরের খাবার খাচ্ছে মৃত্তিকা। শশুড় রোজই তার জন্য হাতে করে নিয়ে আসবে। ঠান্ডা বলে আর লিভিং রুমে না বসে মৃত্তিকা’কে ডেকে নিয়েছে। খাটের মাঝে তাকে কম্বলের ভেতর ঢুকিয়ে, মাথায় একটা উলের টুপি পড়িয়ে পুতুল বানিয়ে বসিয়ে রেখেছে। তাদের পুতুলই এটা। খেতে খেতে শশুড়’কে আর্জি জানালো মৃত্তিকা,
— আমরা ঘুরতে যাব না বাবা? আমার তো পরিক্ষা শেষ?
— হ্যাঁ মামুনি যাবে তো। তোমার ঘ্যাড়ত্যারা জামাই আসুক। কথা বলব আমি।
ওর শাশুড়ী ও মতামত দিলো। তবে পূর্ণ’কে দিয়ে নির্বাচনের আগে ভরসা পাচ্ছেন না তারা।
পূর্ণ ফিরলো আজ রাত দশটা নাগাদ। নিজের রুমে না গিয়ে আগেই বাবা-মা’র রুমে এলো। নজর আটকালো গাল ফুলিয়ে বসে থাকা মৃত্তিকা’র পানে। কপাল কুচকে মা-বাবা’র দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
— আমার বউ’কে কি বলেছো?
ওর বাবা বাঁকা চোখে তাকিয়ে বললেন,
— যার বউ সে জিজ্ঞেস করুক।
ওর মা মুখ টিপে হাসলেন যাতে ভ্রু জোড়া আরো কুচকালো পূর্ণ। মৃত্তিকা’কে জিজ্ঞেস করলো,
— মৃত্ত? কি হয়েছে?
— ঘুরতে যাব।
— কোথায়?
এবার মৃত্তিকা’কে বলতে না দিয়ে ওর বাবা বললো,
— হানিমুনে যাও।
— সম্ভব না।
— কেন?
— নির্বাচনের কাজ চলছে। জেনে ও বোঁকা সেঁজো না আব্বু। আমার বউকে উস্কানো বন্ধ করো দুজন।
কথাটা বলেই কম্বলের নীচ থেকে টেনে টুনে মৃত্তিকা’কে বের করে নিয়ে চলে গেল। ওর বাবা এবার বউয়ের কাছে কম্বলের নীচে আসলো। পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বললো,
— ওরা না যাক। চলো আমরা যাই।
— সরো। যত্তসব ঢং। আসো আমার সাথে। খাবার গরম দিব। হাতে হাতে সাহায্য করবে।
.
রুমে ঢুকেই মৃত্তিকা’কে নিয়ে একমদ খাটে শুয়ে পরলো পূর্ণ। মৃত্তিকা তখন হাসছে। পূর্ণ গম্ভীর কণ্ঠে বললো,
— জ্বালাতন কেন করছেন মৃত্ত?
— কোথায়?
— কোথায় না?
কথাটা বলেই মৃত্তিকা’র গলায় মুখ দিলো। মৃত্তকা অল্প শব্দ করে। পূর্ণ ওভাবেই অস্পষ্ট স্বরে বললো,
— আঠারো হয়েছে না?
— হু।
— ভোট দিবেন?
— হু।
— কাকে?
— যোগ্য প্রার্থী কে।
— আমাকে দিবেন?
— জানি না।
— কেন?
— চেয়েছেন?
পূর্ণ মুখ তুলে। মৃত্তিকা দুষ্ট হাসছে। পূর্ণ বুঝে তার পূর্ণময়ীর দুষ্টামি। দুই হাতের আঙুল গুলো গালে দাবিয়ে সশব্দে চুমু খায় ওষ্ঠে। মৃত্তিকা হাসফাস করতেই পূর্ণ ওর গলায় মুখ রেখে বলে,
— এই অধম আপনার নিকট ভোট প্রার্থী বউ। আমাকে ভোট প্রদান করে এই বার এমপি পদে আসন্ন করার আকুল আবেদন করছি।
— ভেবে দেখব।
— ঘুরতে না যাবেন?
— হু।
— হানিমুন। রাইট?
— হু।
— এটার জন্য ঘুরতে কেন যেতে হবে? বললেই হয়। আ’ম অলওয়েজ রেডি না মৃত্ত?
কথাটা বলেই হামলে পড়লো। বেকায়দায় পড়ে মৃত্তিকা। না চাইতেও সাড়া দেয়। মেতে উঠে তাদের সুখের রাজ্যে। সেই রাজ্যের একমাত্র রাণী মৃত্তিকা হাওলাদার।
#চলবে….