#শিশির_ধোয়া_গোলাপ
#ইভান_ডালী
#পর্বঃ০৫
আরোহী রুম থেকে বের হতে নিলেই আদনান বললো,
– রুহি তোমাকে একটা কথা বলার ছিলো?
– বলুন, কি বলবেন?
আদনান একটু আমতা আমতা করে বলে, আমি-…
– আপনি কি??
– আমরা কি আজ বাসায় যেতে পারি?
আরোহীর মনটা নিমিষেই খারাপ হয়ে যায়। সে তো ভেবেছিলো আদনান অন্য কিছু বলবে। আরোহী নিজের মন খারাপ বুঝতে না দিয়ে বলল,
– আচ্ছা ঠিক আছে বলে রুম থেকে চলে গেল।
আরোহী না বুঝতে দিলেও আদনান বেশ বুঝতে পেরেছে আরোহীর যেতে মন চাইছে না। তাই খাবার নিয়ে আরোহী রুমে প্রবেশ করতেই আদনান বলল,
– রুহি তুমি চাইলে কয়েকদিনের জন্য থেকে যেতে পারো।তোমার যখন ইচ্ছে হবে আমাকে ফোন করে জানাবে।আমি এসে নিয়ে যাবো।
-আপনি এই অসুস্থ শরীরে একা….
– আমাকে নিয়ে ভাবার কিছু নেই।
– জ্বি না,অবশ্যই ভাবার আছে। আপনাকে তো এই অসুস্থ শরিরে একা দিতে পারি না।
– তোমার মন খরাপ হোক আমি চাই না।তোমার ইচ্ছা তুমি চাইলে যেতেও পারো আবার থাকতেও পারো।
– আরু তুই থেকে যা।দুলাভাই এসে পড়ে নিয়ে যাবে তোকে।বলল,নূর
নুরের কথায় আরোহী একবার আদনানের দিকে তাকালো আদনানো স্বাভাবিক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলো আরোহীর পানে।আরোহী তারপর থাকার জন্য রাজি হলো।আদনান কিছুক্ষণ পর খাওয়া দাওয়া করে তৈরি হয়ে চলে যায়।
আবরার চোধুরি আদনান কে একা দেখে জিজ্ঞেসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো।
– বাবা রুহি ওর বাসায় কয়দিনের জন্য থাকবে তাই রেখে এসেছি।
– ও থাকতে চাইলো আর তুই রেখে এসেছিস।মেয়েটা বাসায় না থাকলে বাসাটা কি রকম খালি খালি লাগে।
– কয়েকদিনের ই তো বেপার। আবার তো এসে পড়বে।মিস্টার ভাস্করের সাথে আমার একটা গুরুত্বপূর্ণ মিটিং আছে তাই আমি চলে আসলাম।
– তোমাকে তো বললাম,আমি সামলে নিবো।
– মিস্টার ভাস্কর বেশি সুবিধার না।ওনার সাথে আরেক বার আমাদের ডিল হয়েছিলো,কিন্তু উনি কথার খেলাপ করেছেন ওইবার ছেড়ে দিয়েছি। কিন্তু এবার উনার মেয়ে ওনার হয়ে এসেছেন এবার এদিক ওদিক হলে আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না।
– বি কেয়ার ফুল।
– ওকে বাবা। আমি আসি।
______________________________________________
আদনান তার তার কক্ষে ফাইল ঘাটছিলো ম্যানেজার এসে জানালো,
– স্যার ক্লাইন্ড এসে পড়েছেন ওনাদের কি ভিতরে ডুকতে দিবো?
– হ্যা,আর তুমিও প্রেজেন্ট থাকো।
– ওকে স্যার।
আদনান আবার নিজের কাজে মনোযোগ দিলো, পিছন থেকে এক মেয়ালি কণ্ঠ ভেসে আসলো।
– মে আই কাম ইন মিস্টার আদনান চৌধুরি।
– ইয়েস্ কাম ইন।
– ধন্যবাদ।
– প্লিজ টেক ইউর সিট।
– ইয়েছ,আই টেক ইট।
তো মিস্টার আদনান চৌধুরি আপনি আমার নাম জানেন?
– আপনি মিস্টার ভাস্করের মেয়ে জাস্ট এইটুকু নাম জানি না।
– যার সাথে ডিল ফাইনাল করছেন তার নাম জানেন না স্ট্রেন্জ। হাউ এভার, আমি এলিজা।এবার কাজের কথায় আসি।
– হ্যা নিশ্চই।
এলিজা আর আদনান কথা বলছিল এর মাঝে আরোহী চারবার ফোন করেছে।পাঁচ বারের সময় আদনান ফোন তুলে বলল,
– আমি মিটিং এ পরে কথা বলছি।আদনান ফোন কেটে দিতেই আরোহী ফোস করে বসে রইলো।
– এই তুই এতো জামাই পাগলি হলি কবে থেকে?
– ফোন করলেই বুঝি জামাই পাগলি হয়ে যায়।
– ফোনের দোহাই না দিয়ে বল জামাই ছাড়া ভালো লাগছে না।
– নূরের বাচ্চা চুপ করবি।আমার জামাই না হলেও চলবে।
– তাই নাকি দুলাভাই আসুক।
– তোর দুলাভাই কে বুঝি আমি ভয় পাই।
– আচ্ছা, দেখে যাবে।
নূর আর আরোহীর কথার মাঝে আদনানের কল আসলো আরোহী তড়িঘড়ি করে ধরেই বলল,
– আসসালামু আলাইকুম। কেমন আছেন?
– ওয়ালাইকুম আসসালাম। এটা বলতে ফোন করেছো?
– আপনি ঠিক মতো পৌছালেন কিনা এইটা জানার জন্য।
– আমি মিটিং এ ছিলাম তাই ফোন ধরতে পারিনি। আমি পরে কল বেক করছি।
আরোহী কে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে আদনান ফোনটা কেটে দিলো।
আরোহী মনে মনে আদনান কে নিরামিষ, আনরোমান্টিক বলে আবার নূরের সাথে গল্প করছিলো।
————————————————————————
এদিকে, এলিজা ইজি চেয়ারে বসে বলতে লাগলো,
মিস্টার আদনান চৌধুরি ভেবো না তোমার সাথে ডিল এমনি এমনি করছি।তুমি আমার বাবা কে এর আগে যে অপমান করেছো।তার যোগ্য জবাব তো তোমাকে দিতেই হবে।তোমার ব্যবসা কি করে লসের সম্মুখীন হয় সেটা শুধু দেখতে থাকো।আর তোমার জীবনটা বিষিয়ে কিভাবে তুলি সেটা শুধু দেখে যাও।কথাগুলো বলে একা রুমে হাসতে লাগলো।
আদনান নিজের বাসায় এসে রুমে প্রবেশ করতেই আরোহীর শূন্যতা অনুভব করছে।এই শূন্যতা আদনান কে ভিষন ভাবে প*ড়া*চ্ছে।আদনান ফ্রেশ হয়ে এসে ভাবলো আরোহী কে একটা ফোন করবে। ফোন করবে কি করবে না দ্বিধাদ্বন্দ্ব কাটিয়ে ফোন করেই বসলো,একবার রিং হতেই আরোহী ফোন তুললো,কারন আরোহী ফোন নিয়েই বসে ছিলো।আদনান আর আরোহী দুজনেই নিশ্চুপ হয়ে আছে,কেউই কথা বলছে না।কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর আদনান বলে উঠলো,
– তুমি ফিরবে কবে?
আরোহী কিছু বলবে তার আগেই ফোনটা কেঁটে দিলো।আরোহী বলল,কি অদ্ভুত মানুষ নিজেই রেখে গেল আবার বলছে কবে ফিরবে।কথাটা বিরবির করে বলছিলো পাশ থেকে নূর বলল,কিরে তোদের প্রেম শেষ?
– এমন নিরামিষ মানুষ দিয়ে প্রেম তো ভালো প্রেমের প সম্ভব না। সারাদিন পর ফ্রী হয়ে বউকে কল দিলো কোথায় বউকে কল দিয়ে দুটো মিষ্টি কথা বলবে তা না তুমি ফিরবে কবে কথাটা বলেই কেঁটে দিলো।একটু যে প্রেমালাপ করবে সেটাও করতে পারে না। এ রকম ঢেঁড়সের সাথে আমার বিয়ে হয়েছে।
– ঢেঁড়স, ভালো নাম দিয়েছিস দেখা যায়।
– আমার জামাই আমি ঢেঁড়স, আনরোমান্টিক, নিরামিষ যা ইচ্ছা বলবো।কিন্তু তোর দুলাভাই সো তুই রেসপেক্ট দিয়ে কথা বলবি।
– এতো ভালোবাসা। কলেজ লাইফে তো কোনো ছেলের দিকে ফিরেও তাকাস নি, আর এখন নিজের জামাই হয়ে কথা বলছিস।
– কলেজ লাইফ তো কলেজ লাইফ এখন সে আমার একমাএ অধিকার।
– হইছে বোন চুপ যা।আমি তোর জামাই নিয়া যাচ্ছি না।
– তুই নিতে চাইলেই আমি দিবো নাকি।এদিক থেকে আমি সেলফিশ।
এর মধ্যেই আরোহীর ফোন সশব্দে বেজে উঠলো।ফোন স্কিনের দিকে তাকিয়ে দেখলো মিস্টার আনরোমান্টিক নামটা জ্বলজ্বল করছে।কোনো কিছু না ভেবেই ফোনটা রিসিভ করতেই ওপাশ ব্যস্ত কণ্ঠে আদনান বলল,
– আমার ব্লু রঙের টিশার্ট টা কোথায়?
– দুই নাম্বার কাভার্ড এ রাখা আছে।আর আপনি এতো রাতে শুরু মাএ একটা টিশার্টের জন্য কল করেছেন?
আদনান আমতা আমতা করে বলল,
-না এটাই পড়তে চেয়েছিলাম কিন্তু খুঁজে পাচ্ছিলাম না তাই ভাবলাম ফোন করে জেনে নেই।
– হ্যা এখন তো কিছুই খুঁজে পাবেন না।বিয়ের আসর থেকে যখন কবুল বলে চলে গিয়েছিলেন তখন মনে ছিলো না টিশার্ট খুঁজে দিবার জন্য একটা বউয়ের প্রয়োজন।
আদনান সাথে সাথে ফোনটা কেঁটে দিলো।একটু ফোন করেছি বলে কতো কথা শুনিয়ে দিলো,ধুর ফোনটা কেন যে করতে গেলাম।কে বলেছিলো এই মেয়েটাকে মিস করতে। থাকলো দুরে সরাতে পারিনা আবার এখন নেই তাও কি রকম ফাঁকা লাগছে।আদনান ফোন টা বেড সাইটে রেখে ওয়াশরুমে চলে গেল চেঞ্জ করতে।
আরোহী এদিকে ফোনের দিকে তাকিয়ে খিলখিল করে হাসতে লাগলো।
নূর বললো,কি হলো হাসছিস কেন?
– আজ বেটা আনরোমান্টিকের বস্তা কে ভালোই জব্দ করেছি।
– তুই যে কখন কি করিস আমি বুঝতেই পারি না। তবে এটা ঠিক বুঝেছি তোকে আদনান নামক প্রেমের ভুতে ধরেছে।
আরোহী হাসতে হাসতে বলল,আমি চাই এই ভুত যেন সারা জীবন আমার ঘাড় থেকে না নামে।
নূর আরোহীর গলা জড়িয়ে বলল,
– নামবে তো নাই বরং আস্তে আস্তে তোর মাথাটাই খেয়ে নিবে।
– সে আমার হৃদয় জুড়ে, প্রতিটি অনুভুতি তে, আমার মস্তিষ্কের নিউরনে নিউরনে বসবাস করে।
এর মধ্যে আরোহীর ফোনে একটা মেসেজ টোন বেজে ওঠলো……..
#চলবে