#শিশির_ভেজা_রোদ্দুর
#Part_44
#Writer_NOVA
এনাজ সেদিকে তাকিয়ে আর কোন কথা বললো না। বালুর মাঠেই তায়াং ভাইয়া ও নূর আপিকে দেখা যাচ্ছে। তাদের কিছুটা সামনে গিয়ে দেখলাম তায়াং ভাইয়া কানে ধরে দাঁড়িয়ে আপির রাগ ভাঙানোর চেষ্টা করছে। আমি তা দেখে জোরে হেসে উঠলাম। ভাইয়া আমাদের দেখে দ্রুত কান ছেড়ে এগিয়ে এসে বললো,
— সব দোষ তোর শাঁকচুন্নি। তুই ভিডিও কেন করছিস? করছিস ভালো কথা তা নূরকে দেখানোর কি দরকার ছিলো?
— একদম ঠিক করেছি। খাওয়ার সময় এসব কথা মনে ছিলো না।
— ভিডিও জলদী ডিলিট কর।
— একটুও করবো না। এগুলো প্রমাণ। তোরা যে কত ভালো মানুষ তার প্রমাণ রেখে দিয়েছি।
এনাজ কাঁদো কাঁদো মুখ করে বললো,
— ভাই, ভাবীর রাগ ভাঙছে?
— না, নূর কিছুতেই মানতাছে না।
— আমাকে দশবার কান ধরে উঠবস করাইছে। না করলে আমার সাথে কথাই বলতো না।
— এই ছেমরি যত নষ্টের মূল।
আমি রেগে দুই হাত কোমড়ে রেখে বললাম,
— একদম আমার সাথে রাগ দেখাবি না। নয়তো আগুনে আরো ঘি ঢালবো। নূর আপি ও নূর আপি। দেখো তায়াং ভাইয়া আমাকে বকছে। তোমাকে ভিডিও দেখাইছি বলে।
তায়াং ভাইয়া খাইয়া ফালামু লুক দিলো।তাতে আমি একটুও ভয় পেলাম না। নূর আপি গতকাল রাতে আমাদের সাথে ছিলো না। পরে আমি তাকে ভিডিওটা দেখিয়েছিলাম। তাতে আপি ভাইয়ার ওপর হেব্বি রেগে আছে। আমার মন বলে নূর আপিও ভাইয়াকে পছন্দ করে। কিন্তু প্রকাশ করে না। নূর আপি সামনে এসে বললো,
— কি হয়েছে নোভা?
— দেখো না নিজেরা খেয়েছে তাতে দোষ হয়নি। আমি ভিডিও করে তোমাকে দেখিয়েছি তাতে দোষ হয়ে গেছে।
— ছাইপাঁশ গেলার সময় মনে থাকে না। এখন ভিজে বেড়াল সাজা হচ্ছে।
তায়াং ভাইয়া আমার হাত ধরে অন্য দিকে টেনে নিয়ে গিয়ে নরম সুরে বললো,
— বোইন ভিডিওটা ডিলিট করে দে না।
— গলার স্বর এতো মিষ্টি কেন ভাইয়া? তুই ঠিক আছিস তো? তিতা করলা আজ মধুর মতো মিষ্টি লাগছে। কুছ তো গড়বড় হে 🤔।
— যা বলছি তা শুন।
— একটুও ডিলিট করবো না। খালুর ইমো তে পাঠিয়ে দিবো। তাকে দেখাতে হবে তো তার গুণধর ছেলে কিভাবে তার মুখ উজ্জ্বল করছে।
— এখন কি তোর পায়ে ধরতে হবে?
— কিছুই করতে হবে না।
— কত টাকা লাগবে তোর?
আমি রেগে বললাম,
— ঐ পাইছিস কি? সবসময় টাকার গরম দেখাস কেন?
— তুই ঘুষ নিস তাই আরকি।
— তুই কিন্তু আমায় ইনসাল্ট করছিস পাঠা।
—আচ্ছা চল এখুনি তোকে আর নূরকে নিয়া মাওয়া ঘুরতে যাবো। এখান থেকে তো সামনেই।তাও তুই ভিডিও ডিলিট করে দিস।
— তোর বাইক আনছিস?
— হ্যাঁ, সকালে ঢাকায় ফুল আনতে গিয়েছিলাম।তখন নিয়ে আসছি।
— ঠিক আছে মাওয়া ঘুরতে নিয়ে গেলে ভেবে দেখবো ভিডিও রাখবো নাকি রাখবো না। তবে নূর আপিকে রাজী করার দায়িত্ব তোর।
— আচ্ছা৷ তবে ভিডিও ডিলিট তোকে করতে হবে।
— আগে তো ঘুরতে নে তারপর।
ভাইয়া ও এনাজ অনেক কষ্ট করে নূর আপিকে রাজী করালো। আমরা বাড়ির দিকে গেলাম। বিদায়ের পালা ঘনিয়ে আসছে। মামী ওরফে ভাইয়ার শাশুড়ী কান্না জুড়ে দিতেই একে একে সব কান্না শুরু করলো। আমি সেদিক থেকে সরে এলাম। আমি এখানে থাকলে ইমোশন হয়ে যাবো। সব একে একে বেরিয়ে পরলো। রাস্তার আসার ভাবীকে ধরে তার দুই ভাই সেকি কান্না। আমার চোখ দুটো টলমল করে উঠলো। আমিও তো একদিন সবাইকে ছেড়ে এভাবে চলে যাবো। তায়াং ভাইয়া এক দৃষ্টিতে ভাই-বোনের কান্নার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি ওর সামনে গিয়ে বললাম,
— ভাইয়া, একদিন আমি ও তন্বীও তোকে ছেড়ে এভাবে চলে যাবো। সেদিন তুইও এভাবে কাঁদবি। এক হিসেবে তোর ভালো হবে। তোকে কেউ ডিস্টার্ব করবে না, জ্বালাবে না। তোর শান্তির দিন চলে আসবে। আদোও কি শান্তিটা তোর ভালো লাগবে?
ভাইয়া উত্তর দিলো না। গোমড়া মুখে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো। আমি চোখের কোণে থাকা পানিটা ওর আড়ালে মুছে এনাজের বাইকে উঠে বসলাম। হাইস, বাইক একসাথে চলতে লাগলো। শ্রীনগর মেইন রাস্তায় এসে হাইস পূর্বে বাড়ির দিকে ছুটলো। আর আমরা দক্ষিণে মাওয়ার দিকে। একটানে বাইক এসে থামলো মাওয়া ফেরি খাটে। বাইক পাশে রেখে আমরা চারজন নেমে দাঁড়ালাম।
মৃদুমন্দ বাতাস বইছে। সেই তালে পদ্মা নদীর ঢেউগুলো নাচছে। দুই হাত বাড়িয়ে ওড়নাটাকে মেলে দিয়ে টাইটানিক পোজে দাঁড়ালাম। পেছনে এনাজ দাঁড়িয়ে। সাথে নূর আপি। তায়াং ভাইয়া আমাদের জন্য কোল্ড ড্রিংকস আনতে গিয়েছে। একটু আগের মন খারাপ লেজ গুটিয়ে পালিয়েছে। নদীর বড় বড় ঢেউগুলো পাশে এসে আছড়ে পরছে।এনাজ সেদিকে তাকিয়ে বললো,
— ওয়েদারটা কি জোস তাই না? সন্ধ্যা হওয়ার আগ মুহুর্ত। পাখিরা তার নীড়ে ফিরছে। আবছা হালকা কুয়াশার চাদরে চারিপাশ ঢেকে আছে। আমার তো এমন ওয়েদার দেখে প্রেম প্রেম পাচ্ছে।
আমি ও নূর আপি মিটমিট করে হাসলাম। চোখ বন্ধ করে আবারো হাত দুটো মেলে দিয়ে বড় করে শ্বাস নিলাম। মনে হচ্ছে টাইটানিক জাহাজেই আছি। নদীর ঢেউগুলো উপভোগ করছি। তায়াং ভাইয়া চারটা সেভেনআপের ক্যান নিয়ে এসে বললো,
— আজকের ওয়েদারটা কিন্তু সেই লাগছে।
এনাজ তার সাথে গলা মিলিয়ে বললো,
— আমিও তাই মাত্র বললাম। এর আগেও কয়েকদিন তোর সাথে যে মাওয়া ঘাটে ঘুরতে এলাম তখন এতটা ভালো লাগেনি। আজ খুব ভালো লাগছে।
— ভালো লাগলেও বেশি সময় থাকতে পারবো না।
আমি ও নূর আপি একসাথে বলে উঠলাম
— কেন?
💖💖💖
তায়াং ভাইয়া আমাদের হাতে ক্যান দিয়ে নিজেরটা ভেঙে মুখে দিয়ে বললো,
—সামাদ ভাইয়া কল করেছিলো। আমরা কোথায় তাই জিজ্ঞেস করছে। বাসরঘর সাজার দায়িত্ব আমাদের। এখন না গেলে সারারাত লাগবে বাসরঘর সাজাতে। তাহলে বেচারা ভাইয়ের বাসরই মাটি।
আমি জিজ্ঞেস করলাম,
— বাসরঘর কে কে সাজাবে?
এনাজ বললো,
— তুমি, আমি, নূর আপি, তায়াং, অনন্যা, মুহিন।
— তাহলে তো অনেক মানুষ। বেশি সময় লাগবে না। আরেকটু থেকে যাই।
তায়াং ভাইয়া ক্যানের সবটুকু সেভেন আপ এক চুমুকে খেয়ে ক্যানটাকে লাথি মেরে দূরে ফেলে বললো,
— ওকে। তবে বেশি সময় নয়।
নূর আপি অপরাধী সুরে বললো,
— তন্বী যদি জানতে পারে ওকে ছাড়া আমরা মাওয়া ঘুরতে এসেছি তাহলে নির্ঘাত আমাদের সাথে রাগ করবে। ওকে কেউ ভুলেও বলেন না যে ঘুরতে এসেছি এখানে।
তায়াং ভাইয়া এনাজের হাত থেকে ক্যানটা ছোঁ মেরে নিয়ে দুই ঢোক খেয়ে বললো,
— জানলে জানবে। বলবা তোর বয়ফ্রেন্ড থাকলে তোকে নিয়ে যেতাম। কিন্তু তোর তো বয়ফ্রেন্ড নেই তাই তোকে নেইনি।
নূর আপি তায়াং ভাইয়ার দিকে রাগী চোখে তাকাতেই ভাইয়া বেক্কল মার্কা হাসি দিলো।আমি মিটমিট করে হেসে বললাম,
— তুই কি বড় ভাই নাকি অন্য কিছু?
— অবশ্যই বড় ভাই।
এনাজ পশ্চিম দিকে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে বললো,
— তায়াং চল ঐদিকটায় যাই।
আমরা পশ্চিম দিকে চলে গেলাম। নদীর পাড়ে নেমে লেহেঙ্গা উচু করে ধরে পানিতে পা ভেজাতে লাগলাম। ইস, কত দিন পর এতো মজা করতে পারছি।ভাবতেই মন খুশি হয়ে গেলো।খুশিতে বালুর ওপর কয়েকটা লাফও দিলাম।এনাজ তায়াং ভাইয়াকে উদ্দেশ্য করে বললো,
— তোর বোনকে টিডি পোকা কি আমি সাধে বলি? দেখ কেমন টিডি পোকার মতো লাফাচ্ছে। লেহেঙ্গা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে সেদিকেও খেয়াল নেই।
আমি জিহ্বা বের করে এনাজকে ভেংচি কেটে নদীর পাড়ে হাঁটতে লাগলাম। এনাজ আমাদের ছবি তুলছে। তায়াং ভাইয়া ও নূর আপির অনেকগুলো ছবি তুলে দিলো। তারপর তায়াং ভাইয়ার হাতে মোবাইল দিয়ে বললো,
— এবার আমাদের দুজনের ছবি তুলে দে।
আমার পাশে এসে দাঁড়ালো। আমি কিছুটা দূরে সরে যেতে চাইলে বাহুতে ধরে তার পাশে দাঁড় করে রাখলো। চারজন মিলে অনেক ছবি তুললাম। পশ্চিম আকাশে সূর্য ঢলে পরেছে সেই কবে। আজানও দিয়ে দিছে বহু আগে। বেশি দেরী না করে বাড়ির রাস্তা ধরলাম। বেশি রাত হয়ে গেলে সমস্যা। এখান থেকে যেতে ইচ্ছে করছিলো না। তবুও মাওয়াকে বিদায় জানিয়ে ফিরতেই হবে। মাওয়ার রাস্তাটা দিনের থেকে রাতে বেশি সুন্দর লাগে। দুইপাশের আলোক বাতি গুলো সৌন্দর্য দ্বিগুণ বাড়িয়ে দেয়।আসার সময় সারা রাস্তায় মন খারাপ ছিলো। এনাজ আমার মন খারাপ দেখে বাইক চালাতে চালাতে বললো,
— মন খারাপ করো না। আমরা আবার আসবো।
তার আশ্বাসেও মন ভালো হলো না। বাসায় আসতেই সামাদ ভাইয়া বকা শুরু করলো। এশারের আজান দিয়েছে কিছু সময় আগে। কোনরকম ফ্রেশ হয়ে তার বাসরঘর সাজাতে ঢুকলাম। তায়াং ভাইয়া, এনাজ শুধু কোর্টটা খুলে কাজে লেগে পরেছে। আমি ও নূর আপি ফ্রেশ হয়ে রুমে ঢুকতেই অনন্যা চেচিয়ে বললো,
— এই তোমাদের আসার সময় হলো? অন্য দিকে আমার ছোট মামা পাগল হইয়া যাইতাছিলো। ওরা আসে না কেন? কবে আসবো? আমার বাসরঘর কি সাজাইবো না ওরা।
আমি ফুলের মালায় গিট দিতে দিতে বললাম,
— বুড়ো বয়সে বিয়ে করলে যা হয় আরকি?
এনাজ স্টেন্ডে ফুলের মালা লাগিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
— কথাটা ঠিক নয়। নিজের ভালোবাসার মানুষটাকে বিয়ে করতে পেরেছে বলে তার এমন এক্সপেরিমেন্ট কাজ করেছে। বয়সের জন্য না।
এনাজের কথার মাঝেই তার পকেটে থাকা মোবাইল চিৎকার করে উঠলো। এনাজ মোবাইল বের করে তায়াং ভাইয়াকে বললো,
— ইমরান কল দিয়েছে।
তায়াং ভাইয়া ফুলে টেপ পেঁচাতে পেঁচাতে বললো,
— রিসিভ করে কথা বল। লাউড বাড়িয়ে দিস।
এনাজ কল রিসিভ করে লাউড স্পিকার বাড়িয়ে দিয়ে বললো,
— হ্যাঁ ভাই বল। কি অবস্থা তোর?
— তুই এখন কোথায়?
— গুলিস্তানে ওভার ব্রীজের নিচে ফুটপাতে বইসা জামা-কাপড়ের বেচতাছি। বাইছা নেন ১০০, বাইছা নেন ১০০ যেটা নিবেন সেটাই ১০০। তুইও আয়। একসাথে বিক্রি করি ভালো লাভ হবে।
— কবের থেকে শুরু করলি এই ব্যবসা?
— এই তো তিনদিন ধইরা।
— ভালো ভালো ব্যবসা কর তাহলে।
— কানের নিচে দুইটা দিয়া বয়রা বানাবো শালা। তুই জানিস না আমি কোথায় আছি?
আমি আর ওদের কথায় মনোযোগ দিলাম না। ইতিমধ্যে আমি, অনন্যা, নূর আপি হাসির প্রতিযোগিতা লাগিয়েছি। এনাজ ইমরান হাশমি ভাইয়াকে বেশ কিছু সময় ঝেরে কল কেটে দিলো। সাড়ে সাতটার সময় ঢুকেছি। এখন দশটার বেশি বাজে। তবুও মনে হচ্ছে শেষ হচ্ছে না কাজ। এরা একটা বোকামি করেছে। ফুলের মালা কিনে না এনে বস্তা ভরে ফুল কিনে এনেছে। সেগুলো মালা করতে গিয়ে সবার দফারফা। আমি ও নূর আপি তো মুহিন, এনাজ, তায়াং ভাইয়াকে মালা বানাচ্ছি আর বকছি। মুহিন বললো,
— আমাকে বকবি না। আমার কোন দোষ নাই। আমি তাদের বলছিলাম মালা কিনে আনতে। কিন্তু এরা আমার কথা শুনেনি।
আমি দাঁতে দাঁত চেপে বললাম,
— সবাই ভালোর ছালা। আমাদের হাত দুটো আর রইলো না। কতগুলো সুচের খোচা খাইছি। হাত এখন জ্বলতাছে।
এখন রাগ লাগছে। আমরা মেয়ে তিনজন মালা বানাচ্ছি আর ছেলে তিনটা সেগুলো দিয়ে সাজাচ্ছে। তন্বী,অর্থি, ইভার খবর জানি না। সেই যে সাতটায় ঢুকছি তারপর বাইরের সাথে আমাদের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। সবাই এখন বউ নিয়ে ব্যস্ত।তাই এদিকে তেমন কেউ আসেও না। সাড়ে এগারোটার নাগাদ রুম পুরো কমপ্লিট করে বের হলাম। বসে থাকতে থাকতে কোমড় ধরে গেছে। মুহিন, তায়াং ভাইয়া, এনাজ তিনটা ঘেমে গোসল করে ফেলছে। ওরা ফ্রেশ হতে চলে গেল। গরমে একেকটা সিদ্ধ হইছি। ফ্যানের সাথে গোল করে ফুলগুলো সাজানোর দরুন ফ্যান অফ ছিলো। এতে একেকটা গরমে শেষ। ১২ টা বাজে ভাবীকে বাসরঘরে বসিয়ে দিয়ে ভাইয়ার থেকে রুম সাজানোর পারিশ্রমিক নিয়ে তবেই তাকে ভেতরে ঢুকতে দিলাম।
ওরা তিনজন ফ্রেশ হয়ে আসতেই আমরা সবগুলোতে উঠোনে চেয়ার পেতে বসে গল্পের আসর জমালাম। এক পাশে মহিলারা আগামীকালের রান্নার জন্য পাটায় মসলা বাটছে, আরেক দিকে পেয়াজ, মরিচ কাটছে। উত্তরপাশে মুরগী জবাই করছে। সেখানে বসে আব্বু, চাচ্চুরা পুরনো দিনের গল্পের আসর বসিয়েছে। অপরপাশে আমরা।আজ দেরী করে ঘুমাবো। রাত দুটো অব্দি গল্প করে তারপর ঘুম। এর আগে নয়।
#চলবে
#শিশির_ভেজা_রোদ্দুর
#Part_45
#Writer_NOVA
বৌ-ভাতের দিন……..
শীতের সকালে গরম গরম খিচুড়ি খাওয়ার মজাই আলাদা। সকাল ৭টায় গোল করে আমরা সবগুলো মেয়ে খিচুড়ি খেতে বসেছি। আমাদের টেবিলের দায়িত্বে আছে এনাজ। পাশের টেবিলের দায়িত্বে তায়াং ভাইয়া। বেচারারা রান্নার জায়গা থেকে খিচুড়ির বোল নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করছে। আমরা সবাই হাসি-ঠাট্টায় খাচ্ছি। হঠাৎ এনাজ পাশে দাঁড়িয়ে এদিক সেদিক তাকিয়ে বললো,
— অনেক খুদা লাগছিলো। কেউ যদি একটু খাইয়ে দিতো তাহলে খুব উপকার হতো।
কথাগুলো যে আমাকে উদ্দেশ্য করে বলা তা বুঝতে বেশি সময় লাগলো না। একবার খাবার রেখে তার দিকে তাকাতেই দেখতে পেলাম মুখটা একটুখানি করে রেখেছে। সেই ভোর সকালে উঠেছে বেচারারা। এখনো কাজ করেই যাচ্ছে। তার দিকে তাকিয়ে কেন জানি আমার হাসি পাচ্ছে। হাসি আটকিয়ে রেখে আবার খাওয়ায় মনোযোগ দিলাম।আবারো সে বলে উঠলো,
— আল্লাহ, একটু খিচুড়ি খাইয়ে দিতে বলছি দেখে কেমন করে! খাইয়ে দিলে কি এমন ক্ষতি হয়ে যাবে?
বাকিগুলিতে মিটমিট করে হাসছে। আমি ওদের দিকে চোখ পাকিয়ে তাকাতেই অনন্যা বললো,
— একটু খাইয়ে দাও খালামণি। বেচারা আশা করছে তার আশাটা ভাঙা তোমার ঠিক হবে না।
আমি টেবিলের কোণা থেকে খালি প্লেট নিয়ে তার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললাম,
— এই যে প্লেট, এই যে বোলে খিচুড়ি আছে। যার মন চায় নিয়ে খেতে পারেন।
অর্থি খাবার খাওয়া রেখে বললো,
— একটু খাইয়ে দিলে কি হয় গো খালামনি?
আমি ওর দিকে কটমট করে তাকিয়ে বললাম,
— তোর যখন এত দরদ লাগছে তুই খাইয়ে দে।
— আমিই খাইয়ে দিতেছি। যাও তোমার দিতে হবে না। আঙ্কেল এদিকে এসো।
এনাজ খুশিমনে ওর দিকে যেতেই অর্থি তাকে খাইয়ে দিলো। মুখে খাবার নিয়েই এনাজ বললো,
— এই না হলে আমার মা-মণি। তোমাকে আমার ছেলের বউ করবো অর্থি। এমন কাজের মেয়ে আমি হাতছাড়া করছি না।
অনন্যা বললো,
— আঙ্কেল এদিকে এসো। তোমাকে আমিও খাইয়ে দিবো।
— ইস, আমার দুইটা মা থাকতে কেন যে আমি অন্যকে খাইয়ে দিতে বললাম। সেধে অপমান হলাম।
আমি তার দিকে ক্রুর দৃষ্টি নিক্ষেপ করে একটু জোরেই বললাম,
— যেচে অপমান হলে কারো কোন দোষ নেই।
— হইছে তুমি আর কথা বলো না টিডি পোকা। একটু খাইয়ে দিলে বোধহয় দুনিয়া উল্টে যেতো। যাও তোমাকে আর লাগবে না। আমি দুই মা পেয়ে গেছি।
আমি মুখ ভেংচি দিয়ে লেবুর টুকরো নিয়ে প্লেটে রস বের করতে লাগলাম। অর্থি, অনন্যা দুজনেই তাকে খাইয়ে দিচ্ছে। এর মধ্যে পাশের টেবিলে খাওয়া শেষ হতেই তায়াং ভাইয়া এসে হাজির। নূর আপির সামনে গিয়ে সেও এনাজের মতো করে বললো,
— কেউ যদি একটু খিচুড়ি খাইয়ে দিতো, তাহলে অনেক ভালো হতো।
নূর আপি ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললো,
— নিজের হাত দুটো কি কেটে ফেলে দিয়েছে নাকি? আমার কাছে এসে খাইয়ে দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে? দিব্যি সুস্থ, স্বাভাবিক মানুষ তো নিজের হাত দিয়ে খেতে পারে।
এনাজ আমার সামনে বিরবির করে বললো,
— বোনগুলো সব একিরকম।
আমি চোখ দুটো ছোট করে রাগী ভাবে তাকিয়ে তাকে বললাম,
— কি বললেন?
এনাজ দাঁত বের করে হে হে করে হেসে বললো,
— তুমি শুনে ফেলছো?
— জ্বি আমি শুনে ফেলছি।
তায়াং ভাইয়া নূর আপি কে উদ্দেশ্য করে আমাকে বললো
— খাইয়ে দিবে না ভালো কথা, এত কথা শোনানোর কি দরকার?
আমি এনাজের দিকে তাকিয়ে শয়তানি হাসি দিয়ে বললাম,
— তায়াং ভাইয়া আয় তোকে আমি খাইয়ে দেই।
আমার কথা শুনে এনাজ রেগে আমার দিকে তাকালো। আমি সেই চাহনি তোয়াক্কা করে তায়াং ভাইয়ার দিকে এক লোকমা খিচুড়ি বাড়িয়ে দিতেই ভাইয়ার আগে এনাজ মুখে দিয়ে ফেললো।ঘটনার আকস্মিকতায় আমি বোকা বনে গেলাম। বাকি সবাই একসাথে হো করে চিৎকার করে উঠলো। আমি এখনো অবাক হয়ে যেভাবে ছিলাম সেভাবেই আছি।এনাজ কানের সামনে এসে ফিসফিস করে বললো,
— আমার অধিকার আমি আদায় করে নিতে জানি।সো কুল ডাউন মাই লাভ।
আমি বিস্মিত চোখে তার দিকে তাকাতেই সে এক চোখ মেরে অনন্যার সামনে চলে গেল। ইভা তায়াং ভাইয়াকে বললো,
— ভাইয়া আসেন আমি খাইয়ে দেই।
ইভার সাথে সাথে তন্বীও গলা মিলিয়ে বললো,
— ভাইয়া এদিকে আয়। আমিও খাইয়ে দিবো।
তায়াং ভাইয়া আফসোসের সুরে বললো,
— যার কাছে খেতে চাইলাম সে তো দিলো না। তোরা যখন দিবি তাহলে আর মানা করবো কেন? দে খাইয়ে দে। একটা প্রবাদ আছে, “সাধলে যে খায় না সে নাকি পরে চাইলেও পায় না।” তাই এখন খেয়ে নেওয়া বেটার।
আমি এদিক সেদিক তাকিয়ে তায়াং ভাইয়াকে জিজ্ঞেস করলাম,
— সামাদ ভাইয়া কি আজ বের হবে না? নাকি সারাদিন ভাবীর সাথেই থাকবে?
অনন্যা মুখ টিপে হেসে বললো,
— আরে বুঝো না কেন খালামণি,বুড়ো বয়সে বিয়ে করছে। বউ রেখে কি বের হতে মন চাইবে?
তায়াং ভাইয়া ফট করে বলে উঠলো,
— সামাদ ভাই বোধহয় ফরজ গোসল না করে দশটার আগে বের হবে না।
ভাইয়ার কথা আমরা যে কয়জন বুঝলাম তারা সবাই লজ্জায় এক হাতে মুখ ঢেকে ফেললাম। অর্থি ও ইভা শুধু বুঝেনি। তাই ওরা বোকার মতো আমাদের দিকে তাকিয়ে রইলো। এনাজ জিহ্বায় কামড় দিয়ে অন্য দিকে ঘুরে গেলো।তায়াং ভাইয়া আমার পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলো। আমি জোরে ওর পায়ে একটা লাথি দিয়ে বললাম,
— মুখে কি পর্দা নাই তোর পাঠা? পাঠা কি তোকে সাধে বলি আমি😤? বড় ভাইয়ের নামে ছোট বোন, ভাগ্নীর সামনে কি বলিস? মাথার স্ক্রু কি ঢিলা হয়ে গেছে?
নূর আপি বললো,
— মাঝে মাঝে লাজ শরম হাওয়া হয়ে যায় তার। কোথায় কি বলে ফেলে তা নিজেও জানে না।
শাহিনুর আপু আমাদের দিকে আসতেই বিষয়টা ঢাকা পরে গেলো।শাহিনুর আপু খিচুড়ির বোল নিয়ে ঘরে যাওয়ার সময় এনাজ, তায়াং ভাইয়াকে ডেকে বললো,
— ভাই তোমরা একটু সময় করে খেয়ে নিও। নিজের বাড়ির অনুষ্ঠান মনে করে খেয়ে নিবা। কারো জন্য অপেক্ষা করবা না। কি বললাম শুনছো!
এনাজ আশ্বাসের সুরে বললো,
— চিন্তা করবেন না আপু। আমরা সময় মতো খেয়ে নিবো। আমাদের নিয়ে আপনি একটুও টেনশন করেন না। আমরা আপনাদের নিজেদের মানুষই।
— এখন কি খাইছো তোমরা? না খেলে জলদী খেয়ে নাও। সবদিকে তো নজর দিতে পারছি না ভাই। তোমরা থাকায় ঝামেলা একটু কম সামলাতে হচ্ছে আমার। তোমরা খেয়ে নিও।
তায়াং ভাইয়া বললো,
— আপু, আমাদের নিয়ে আপনি নিশ্চিন্তে থাকেন। আমাদের খুদা লাগলে খেয়ে নিবো।
— আচ্ছা ভাই। কোন শরম পাবা না। যা খেতে মন চাইবে হাত দিয়ে নিয়ে খেয়ে ফেলবে।
শাহীনুর আপু চলে গেল। আমি প্লেটে আঁকিবুঁকি করছি। কিন্তু খাবার মুখে দিচ্ছি না। তায়াং ভাইয়াকে ইভা, তন্বী খাইয়ে দিচ্ছে। আমি অনেক ভেবে আরেক লোকমা নিয়ে এনাজের দিকে বাড়িয়ে দিলাম। এনাজ চোখ দুটো রসগোল্লা বানিয়ে খাবারটুকু মুখে নিলো। তারপর তায়াং ভাইয়াকে উদ্দেশ্য করে বললো,
— ভাই, আমাকে ধর। আমার মাথা ঘুরছে। এটা আমার টিডি পোকা হতেই পারে না।
আমি মুচকি হেসে এক হাতে মুখ ঢেকে ফেললাম। নূর আপিও সেম কাজ করলো। তায়াং ভাইয়াও অবাক। ওদের দুই বন্ধুর মুখ দেখে আমি ও নূর আপি ফিক করে একসাথে হেসে উঠলাম।
💖💖💖
সকালের শিশির ভেজা ঘাসে খালি পায়ে হাঁটার মতো মজা আর কিছুতেই নেই। অন্যরকম একটা ভালো লাগা কাজ করে। জুতা খুলে খালি পায়ে শিশির ভেজা ঘাসে হাঁটছি। পূর্ব দিগন্তে সূর্যটা বহু আগে উঁকি দিয়েছে। সেই রোদ্দুরে শিশির ভেজা ঘাসে অন্য রকম অনুভূতি উকি দিয়েছে। বাড়ির পশ্চিমপাশে ছোট মাঠের মতো খালি জায়গা আছে। সেখানকার দূর্বা ঘাসগুলো না কাটার কারণে বড় হয়ে গেছে। সেখানে আমি ও অনন্যা শিশিরে পা ভিজিয়ে হাঁটছিলাম। হঠাৎ শাহিনুর আপু অনন্যাকে ডাকতেই ও বাড়ির দিকে রওনা দিলো। আমি একা একা পা ভিজিয়ে হাঁটতে লাগলাম। শিশিরগুলো যখন পা ছুঁয়ে যাচ্ছে তখন একটু সুড়সুড়ি লাগছিলো। যার দরুন মনটা ভালো হয়ে যেতেও বেশি সময় লাগেনি।
♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♥♥♥♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪
আমি এমন একটা তুমি চাই, এমন একটা তুমি চাই,
যে তুমি আমি ছাড়া অন্য কেউ নাই।
আমি এমন একটা তুমি চাই, এমন একটা তুমি চাই,
যে তুমি আমি ছাড়া অন্য কেউ নাই।
তুমি একবার বলো যদি,
আমি পাড়ি দিবো খরস্রোতা নদী।
তুমি একবার বলো যদি,
আমি পাড়ি দিবো খরস্রোতা নদী।
ভালোবাসা দিবো পুরোটাই।
আমি এমন একটা তুমি চাই, এমন একটা তুমি চাই,
যে তুমি আমি ছাড়া অন্য কেউ নাই।
আমি কত ছলে কৌশলে তোমায় ভালোবাসে যাই
এতো করে চাই আমি বলো, আর কি ভাবে বোঝাই
আমি কত ছলে কৌশলে তোমায় ভালোবাসে যাই
এতো করে চাই আমি বলো, আর কি ভাবে বোঝাই
তুমি একবার বলো যদি,
আমি পাড়ি দিবো খরস্রোতা নদী।
তুমি একবার বলো যদি,
আমি পাড়ি দিবো খরস্রোতা নদী।
ভালোবাসা দিবো পুরোটাই।
♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♥♥♥♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪
পেছন থেকে গানের কন্ঠ পেতেই থমকে দাঁড়ালাম। মাথা ঘুরিয়ে পেছনে তাকিয়ে দেখি এনজিও সংস্থা।তার পকেটে থাকা মোবাইলে গান বাজছে। পকেট থেকে মোবাইল বের করে গান বন্ধ করো সে আমার পাশে এসে দাঁড়িয়ে বললো,
— কি করছো টিডি পোকা?
— চা বানাচ্ছি, খাবেন?
—😒😒
— এভাবে তাকিয়েন না। দেখছেনই তো কি করছি তাহলে জিজ্ঞেস করেন কেন?
— তোমার মুখ থেকে শুনবো তাই।
— আমি বলবো না। আপনি দেখে নিন।
— দেখেছি তবুও তোমাকে বলতে হবে।
— আচ্ছা জ্বালাচ্ছেন তো আমায়।
— অনেকটা তাই।
— না, আমাকে শান্তিতে কেউ একটু একাও থাকতে দিবে না।
— তুমি কি কাউকে শান্তিতে থাকতে দাও?
আমি কোমড়ে হাত দিয়ে তার দিকে ঘুরে বললাম,
— এই মিয়া এই, আপনি কি বলেন হুম?
— তুমি তো নিশ্চয়ই শুনতে পেয়েছো। আচ্ছা, এখন আমায় বলো তো তুমি খালি পায়ে হাটছো কেন? সেলোয়ার যে শিশিরে ভিজে যাচ্ছে। সেদিকে খেয়াল আছে তোমার?
— জুতা খুলে শিশির ভেজা ঘাসে একটু হাঁটুন। দেখবেন আপনারও ভালো লাগবে।
— ইচ্ছে নেই।
— প্লিজ, প্লিজ জুতা খুলে একটু হাঁটুন।আপনার অনেক ভালো লাগবে। আপনি একবার ট্রাই করে দেখুনি।
— ওকে তুমি যখন বলছো তাহলে ট্রাই করছি।
এনাজ জুতা খুলে আমার পাশাপাশি খালি পায়ে হাঁটতে লাগলো। কয়েক কদম হাঁটার পর এনাজ আমার দিকে বিস্মিত চোখে তাকিয়ে বললো,
— অনেক ভালো লাগে তো এভাবে শিশির ভেজা ঘাসে হাঁটতে। অন্যরকম একটা ভালো লাগা ছেয়ে গেলো সারা মন জুড়ে। শিশির ছোঁয়া পায়ে লাগতেই মনটা ফুরফুরে হয়ে গেলো।
— আপনি তো করতেই চাচ্ছিলেন না। আমি মাঝে মাঝে খালি পায়ে মাটিতে ও শিশির ভেজা ঘাসে হাঁটি। এতে নিমিষেই মন ভালো হয়ে যায়। সাথে একরাশ ভালো লাগা সারা মনে ছেয়ে যায়।
এনাজ কোন কথা না বলে তার প্যান্টের নিচ দিক দিয়ে কয়েকটা ভাজ দিয়ে আবারো আমার সাথে হাঁটতে লাগলো। অনেকখন ধরে আমরা চুপচাপ হাঁটছি। সামনের জারুল ফুল গাছ থেকে দুটো পাখি কিচিরমিচির ডেকে একসাথে ডানা ঝাপটে দূর আকাশে চলে গেল। মিষ্টি রোদ্দুরে পা ভিজিয়ে হাঁটতে কি যে ভালো লাগছে তা বলার মতো নয়। চুপচাপ পরিবেশটাকে উপভোগ করছি আমরা দুজন।কেউ কথা বলে এতো সুন্দর নিরিবিলি প্রাকৃতিক পরিবেশটাকে উপভোগ করায় ব্যাঘাত ঘটাতে চাইছি না। পাশাপাশি হাঁটতে খারাপ লাগছে না। হাঁটতে হাঁটতে মুগ্ধ চোখে এনাজের দিকে তাকালাম। সে নিচের দিকে তাকিয়ে ধীরে ধীরে আমার সাথে তাল মিলিয়ে পা ফেলছে। নিচের থেকে চোখ উঠিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে নিচুস্বরে বললো,
— কিছু বলবা?
আমি মাথাটাকে দুইপাশে নাড়িয়ে না বুঝালাম। সে একটু হেসে আমাকে বললো,
— পায়ের নিচে শিশির ভেজা ঘাস আর মাথার ওপর মিষ্টি রোদ্দুর আর সাথে ভালোবাসার মানুষ। সব মিলে একটা অন্য রকম ভালো লাগা সৃষ্টি করেছে। জানো সেই ভালো লাগার নাম কি?
আমি চোখে প্রশ্নবোধক চিহ্ন রেখে তার দিকে তাকালাম। সে আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বললো,
— সেই নামটা হলো শিশির ভেজা রোদ্দুর। সুন্দর না নামটা?
— হ্যাঁ, খুব সুন্দর।
— পছন্দ হয়েছে নামটা?
— অনেক।
— আমার ইচ্ছে করছে সময়টা এখানেই আটকে রাখতে। তুমি আমি আর শিশির ভেজা রোদ্দুর। আর কিছু লাগবে না।
আমি মুচকি হেসে নিচে নজর দিলাম। উনি হালকা করে আমার হাতটা ধরলো। আমি চমকে তার দিকে তাকালাম। সে আগের থেকে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। তার চোখের দিকে তাকিয়ে থাকতে পারলাম না। দৃষ্টি নামিয়ে ফেললাম। হাতটা সরিয়ে নিতে চাইলে আরো শক্ত করে ধরলো।আমি আর তার হাতের থেকে হাত সরালাম না।
— এনাজ একটু এদিকে আয় তো।
তায়াং ভাইয়া দূর থেকে এনাজকে ডাকলো। এনাজ হাত উপরে উঠিয়ে জোরে চেচিয়ে বললো,
— আসছি তুই যা।
তায়াং ভাইয়া চলে যেতেই আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
— তুমি থাকো আমি আসছি।
উনি হাত ছেড়ে বাড়ির পথ ধরলো। তবে যাওয়ার আগে কানে ফিসফিস করে বললো,
— Thanks এত সুন্দর একটা সময় আমাকে উপহার দেওয়ার জন্য। আই লাভ ইউ টিডি পোকা। আই এম রিয়েলি লাভ ইউ। ইউ আর মাই লাইফ এন্ড লাভ।
কথাগুলো এক নিঃশ্বাসে বলে সে দৌড়ে বাড়ির দিকে যেতে লাগলো। আমি এখনো ঘোরে আছি। তার যাওয়ার পানে অবাক চোখে তাকিয়ে রইলাম। কানের মধ্যে এখনো তার কথাগুলো বারি খাচ্ছে। হুট করেই মুখে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠলো। এই প্রথম সে নিজের মুখে ভালোবাসার কথা বলেছে। আমার কাছে মনে হচ্ছে এটা আজকের দিনে সবচেয়ে বড় পাওয়া।
#চলবে