শুক্লপক্ষের পরিশেষে পর্ব-৪৮+৪৯

0
340

#শুক্লপক্ষের_পরিশেষে
#লেখনীতে_নবনীতা_শেখ
|৪৮|

প্রিয়-শরতের বিয়ের চতুর্থ দিনই তারা ঢাকায় শরতের ফ্ল্যাটে ফিরল। শরৎ আসার পথে বাইরে থেকে দুপুরের খাবারটা নিয়ে এসেছে। প্রিয় পুরোটা রাস্তা বেশ চুপচাপ ছিল। তার জার্নি করতে ভালো লাগে না। মাথাটা ভার হয়ে আছে। শরৎ একহাতে প্রিয়র হাত ধরে আছে, অন্যহাতে দরজা খুলল। খুলতে খুলতে একবার প্রিয়কে শুধাল,
-“ঠিক আছেন?”

মাথা নাড়ল সামান্য,
-“হুঁ।”
-“ওকে।”

দু’জনে ভেতরে প্রবেশ করল। যখন শরৎ এখান থেকে শান্তিকুঞ্জে গিয়েছিল, তখন এক প্রকার ব্যাচেলর ছিল বলেই ধরা যায়। তাই প্রিয়র ধারণা ছিল, বাসাটা বেশ অগোছালো, অপরিপাটি, অপরিচ্ছন্নসহ বিভিন্ন অ-উপসর্গযুক্ত শব্দ। তারপর তার ধারণাটা ১৮০ ডিগ্রী এঙ্গেলে উলটে গেল ভীষণ রকমের সুরুচিসম্পন্ন ফ্ল্যাটটা দেখে। হালকা রঙের আসবাবগুলো, লাইট পার্পেল ও ল্যাভেন্ডার রঙের মিশেলে দেয়াল, সাদা পর্দাসহ পুরো বাসা এক পলকেই প্রিয়র কেন যেন খুব মনে ধরে গেল। শরৎ বলল,
-“আমার ছোট্ট ঘরটা আজ আমাদের ঘর হলো। প্রথম কদমে আপনাকে একটা কথা জানাব, যদি আমার হয়ে থাকেন তবে সে-কথার হেরফের আপনি করবেন না।”

প্রিয় তার দিকে তাকিয়ে শুধাল,
-“বলুন।”
-“আমার সামনে আপনি দ্বিধা রাখবেন না। যে-কোনো কথা, যে-কোনো বিষয়ে আমাকে জানাতে সংকোচ করবেন না। আমার কোনো কাজে আপনার খারাপ লাগলে, ব্যাপারটা চেপে যাবেন না। সরাসরি আমাকে বলবেন। মিসআন্ডারস্ট্যান্ডিং বিষয়টা বড়ো খারাপ। আমাদের মধ্যে এরকম কোনো সিচুয়েশন তৈরি হলে, আমরা আলোচনায় আসব। একটা মুখোমুখি বৈঠক ম্যাক্সিমাম সমস্যার সমাধা করতে পারে। বুঝেছেন?
চাপা স্বভাবটা ভালো নয়। আমার ওপর রাগ হলে, প্রকাশ করবেন। রাগের বহিঃপ্রকাশ আমরা সবার ওপর করতে পারি না। যার ওপর করি, নিঃসন্দেহে সে আপন। আমাকে নিজের মনে করবেন সবসময়। নিজের আধিপত্য দেখাবেন আমার ওপর। বিশ্বাস করুন, আপনার প্রতি এতে অভিযোগ না, কেবল ভালোবাসা আসবে আমার। প্রিয়! আমি আপনার। শুধু এটুকু মনে রাখবেন। শুধু এটুকু যদি মেনে চলেন, আল্লাহ চাইলে মৃত্যুর আগ মুহূর্ত অবধি আমি আপনার হয়েই থাকব।”

প্রিয় মুচকি হেসে বলল,
-“নীরজ! আপনি মানুষটা বেশ জ্ঞানী।”
-“আর আপনি সাহসী।”
-“তাই নাকি?”
-“অবশ্যই। আপনি যেই সিচুয়েশনে ছিলেন, অন্য কোনো মেয়ে থাকলে সম্ভবত এখনও শ্বাস নিত না।”
-“আমিও ভীষণ যুদ্ধ করেছি, নীরজ। হসপিটালের বেড বেশিদিন ছেড়ে থাকতে পারিনি। গায়ে অনেক দাগ আছে। এখন ক্লান্ত। এত যন্ত্রণাও যখন আমি শ্বাস নিচ্ছি, বুঝে গেছি মৃত্যু সহজ নয়। সে কারণেই বেঁচে আছি। নীরজ, ভালো আছি আমি। তিন সত্যি।”

একহাতে আলতো করে বুকে জড়িয়ে নিল শরৎ প্রিয়কে। প্রিয় চোখ বুঁজে ফেলে বুক ভরে শ্বাস টানল। নাকে ভেসে এলো শরতের ম্যানলি পারফিউমের স্মেল। কী নেশালো! শরৎ সময় নিয়ে উষ্ণ চুমু আঁকল প্রিয়র সিঁথিতে। অনেকটা সময় পর বলল,
-“আমার রাজত্বে স্বাগত আপনাকে, রানীসাহেবা।”

গাল ভরে হেসে ফেলল প্রিয়।

____
-“ভাই রে, এই প্রহইর‍্যা! এই ছোকরা এই! বাঁচা আমাকে।”

আয়াতের কথা শুনে প্রহর ভ্রুকুটি করে ফেলল। আয়াত কল দিলো, প্রহর কল রিসিভ করল। আর সঙ্গে সঙ্গে আয়াতের থেকে এরূপ কথা? অবশ্য অবাক হওয়ার মতোও নয়। আয়াত মানেই তো উদ্ভট সব কাজ-কর্ম। প্রহর মোটেও বিচলিত হলো না। খেতে খেতে বলল,
-“মরে গেছিস?”

আয়াত জবাবে বলল,
-“হু।”
-“কীভাবে?”
-“কীভাবে মানে?”
-“মানে সুইসাইডাল কেইস নাকি মার্ডার নাকি এক্সিডেন্ট?”
-“ভাই, মনে তো হচ্ছে তিনটাই। লেট মি এক্সপ্লেইন। বাপজানের বন্ধু আমার বাপের কাছে আমার হাত চাইছে, সো ইট’স অ্যান এক্সিডেন্ট। বাপজান রাজি হয়ে আমার কাছে প্রস্তাব দিছে, তো আই থিংক ইট ওয়াজ এটেম্পট টু মার্ডার। আর ফাইনালি আমি সময় চাইছি। এখন তুই যদি সলিউশন না দিস, ভাই আই সোয়্যার, রমনাতে গিয়ে তোকে খুন করব, তারপর নিজে সুইসাইড এটেম্পট করব। পেপারে পেপারে ছাপাবে—বিশিষ্ট শিল্পপতির মেয়ে মেহেরিন আয়াত সাওদাহ্ একজন ফিলিংসলেস, ম্যানারলেস, লাভলেস পুরুষকে হত্যা করে নিজে মৃত্যুকে বুকে টেনে নিয়েছে; একবিংশ শতাব্দীর ভালোবাসা মানেই আয়াত-প্রহর। আমাদের প্রেমের পরিণতি না-হোক, অমর হবে। ওসবের প্ল্যান পরে। আপাতত তোকে নিয়ে হানিমুনে উগাণ্ডা যাইতে চাইছি। সলিউশন দে রে ব্যাটা।”

বলতে বলতে হাঁপিয়ে গেল আয়াত। তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে তাদের বাসার হেল্পিং হ্যান্ড রুমু। বয়স ১৭ এর কাছাকাছি। দেখতে মিষ্টি ও আয়াতের ভীষণ রকমের বিশ্বস্ত। আয়াত তাকে উদ্দেশ্য করে বলল,
-“রুমু রে, পানি দে।”

রুমু পানি দিলো। আয়াত গ্লাসে চুমুক দিতেই প্রহর বলে উঠল,
-“রিল্যাক্স। হাইপার হওয়ার কিছু নেই।”

মেজাজের চোদ্দটা বেজে গেল আয়াতের, সঙ্গে সঙ্গে রুমুকে বলল,
-“এই রুমু! আমারে মাটি দে।”

রুমু এদিক-ওদিক খুঁজল৷ সাধারণত আয়াত যা কিছু চাইতে পারে, ধারণা করে সবই হাতের কাছেই সে রেখে দেয়। খুঁজে দু-সেকেন্ডে যখন না পেল, তৎক্ষণাৎ মস্তিষ্কে ক্যাচ করল—মাটি কই পাবে? খুব অসহায় চোখে তাকাল আয়াতের দিকে। আয়াত রেগে আছে। রুমু তৎক্ষনাৎ পাশ থেকে হাত পাখা নিয়ে বাতাস করতে লাগল। শীতের সিজন চলছে, ভালোই শীত পড়েছে। এমন সময় এভাবে বাতাস করতে দেখে আয়াতের রাগ আরও বাড়ল। রুমুর দিকে তাকিয়ে বলল,
-“আমারে তোর মানুষ লাগে না? হাওয়া লাগানো বন্ধ কর, নইলে সোজা কিক দিয়ে মঙ্গলে পাঠায় দিব। তারপর মঙ্গল মঙ্গল কীর্তন করিস।”

রুমু দু-দিকে মাথা নেড়ে বাতাস করা বন্ধ করল। প্রহর আয়াতকে বলল,
-“আঙ্কেলকে জানিয়ে দাও আমার কথা। আমার প্রিভিয়াস মান্থে একটা জব হয়েছে। তোমার প্রয়োজন মেটানোর মতো সামর্থ্যটা আমার আছে। চিন্তা কোরো না।”

আয়াত বড়ো করে হাঁপ ছেড়ে রুমুকে বলল,
-“ফ্রিজ থেকে মিষ্টি নিয়ে আয়।”

রুমু দৌড় দিলো। আয়াত হুট করেই বলল,
-“প্রহর! ট্রাস্ট মি, আই ক্যান নট লিভ অ্যা সিঙ্গেল মোমেন্ট উইদাউট ইউ।”
-“বুঝলাম।”

আয়াত পুনরায় ক্ষেপে উঠল,
-“বুঝলাম কী রে? এই? প্রহরের বাচ্চারে! তুই শ্যাষ! কালিমা পড়তে থাক, আমি আসতেছি। আজ তুই প্রেমিকার হাতে শহীদ হবি।”

________
শরৎ শাওয়ার নিয়ে বের হওয়ার পর প্রিয়কে রুমে দেখতে পেল না। রুম থেকে বেরিয়ে প্রিয়র খোঁজ মিলল কিচেনে। শাড়ির আঁচল কোমরে গুঁজে রেখেছে, চুলগুলো হাতখোঁপা করে বেঁধেছে, সামনে দিয়ে ছোট চুলগুলো মুখে এসে পড়ছে। একহাতে খুন্তি, অন্যহাত কোমরে রাখা। সম্পূর্ণ মনোযোগ কড়াইয়ে ভাঁজতে থাকা ডিমের মধ্যে। যেন বিশ্বযুদ্ধে নেমেছে সে।

শরৎ কিছু বলল না, একটা আপেল নিয়ে দেয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়াল। প্রিয়র দিকেই তাকিয়ে আছে সে। প্রিয় তখন বলল,
-“আমি বাইরের খাবার খেতে পারি না। আমার পেটে সয় না। ওগুলো আপনিই গিলেন। আমি ডিমভাজি খাব।”

প্রিয় নিজের কম্ফোর্টজোনটা শরতের সামনে প্রকাশ করছে আস্তে-ধীরে, ব্যাপারটা শরতের বেশ মনে ধরল। সে ওভাবেই তাকিয়ে রইল। প্রিয় ডিম উলটে বলল,
-“প্রাণনাথ, শোনেন!”

ফিক করে হেসে ফেলে শরৎ বলল,
-“ইয়েস প্রাণনাশিনী, বলেন!”
-“ঘেমে গেছি দেখেন, একটু বউসেবাও তো করতে পারেন।”

শরৎ প্রিয়র গাল টিপে দিয়ে বলল,
-“আমার ঢঙ্গী বউ।”

প্রিয় হেহে করে হাসল। শরৎ পাশ থেকে একটা ন্যাপকিন নিয়ে প্রিয়র কপালের ঘাম মুছে দিলো, এরপর নাকের, চিবুকের, শেষে গলার। প্রিয়র মনোযোগ সরে যায় ডিম থেকে। শরৎ তৎক্ষনাৎ সরে দাঁড়ায়, তারপর উচ্চ আওয়াজে হো হো করে হেসে বলল,
-“ম্যাডাম, যুদ্ধে হেরে গেছেন। ফ্রিজ থেকে আরেকটা ডিম বের করেন।”

প্রিয় গ্যাসের সুইচ অফ করল। ডিমের একটা পাশে কালো আস্তরণ পড়ে গেছে! ইশ! কাঁদো কাঁদো হয়ে বলে,
-“এরপর থেকে আমি কিচেনে এলে আপনি আসবেন না। আমার সব মনোযোগ অন্যদিকে চলে যায়।”

শরৎ গা দুলিয়ে হাসতে লাগল। প্রিয় এর মধ্যে শরৎকে তিনবার গাল ফুলিয়ে নিজের প্রিয় শব্দগুলো বলল, “খারাপ খারাপ খারাপ!”

চলবে..

আমার প্রথম বই ‘সঞ্জীবনী’ পাওয়া যাচ্ছে বইমেলায় এবং যেকোনো বুকশপে। অর্ডার করতে কনট্যাক্ট করুন— বইবাগ – BoiBag বুকশপে।

বই হতে—

“আ-রে, সানু! দিন দিন সাদা হচ্ছিস কেন? ক্রিম-ফ্রিম মাখিস?”
“থাপ্পড় খাবি, বেয়াদপ! সানু কী রে? ভাবি লাগি! তোর বড়ো ভাইয়ের বউ আমি।”
“তো?”
“ডাক ভাবি। ভ আ-কার ভা, ব ই-কার বি; ভা-বি!”
“স আ-কার সা, ন উ-কার নু। সা-নুউউউউউ।”

“আচ্ছা, যা! মনে মনে ভাবি ডাকার জন্য তোর এই গুরুতর অন্যায়কে মাফ করে দিলাম। আমি আবার ভীষণ বড়ো মনের মানুষ কি না!”
“আমি তো তোকে মনে মনে ভাবি ডাকিনি।”
“ডাকিসনি?”
“একদম না।”
“ঠিক আছে,তবে আমি এবার তোকে মনে মনে চূড়ান্ত পর্যায়ের গালি দিলাম, কাটাকাটি!”
“সামনে দিতে ভয় পাস?”
“ভয় না। এটা হচ্ছে ভদ্রতা। যা তোর আর তোর অভদ্র ভাইয়ের মাঝে এই বিন্দু পরিমাণেরও নেই।”

“ভাই আবার কী করল এখানে?”
“কিছু করলে কি আর হায় হায় করতাম? করেনি বলেই তো যত কান্না আমার!”
“সিরিয়াস কিছু?”
“অবশ্যই। এই-যে, বিয়ের এতমাস গেল। হানিমুনে নিয়ে গেছে? আচ্ছা, নিয়ে না-ই বা গেল! জিজ্ঞেস অবধি করেছে—আমার কোন কোন জায়গা পছন্দ? করেনি না!”
“ইট’স করোনা টাইম, ব্রো!”

উদয়ের কথা শুনে সাঁঝ বাঁকা নজরে তাকিয়ে বলল, “হ্যাঁ, তো? আমার কি তাই হানিমুন পেতে পারে না? করোনাকে সাক্ষী রেখে বিয়ে করতে পারল, ঘুরতে নিতেই যত সমস্যা?”
“আচ্ছা, তুই চিন্তা করিস না। আমি ভাইয়ার সাথে কথা বলব।”
“সত্যিই?”

“হ্যাঁ, সত্যিই। তারপর ভাইয়ার সাথে বাসে দুইসিট পর পর, দু’জনে বসে চ্যাট করতে করতে আরামসে একটা লং জার্নি কাটিয়ে ঢাকা যাবি। একসাথে পিপিএ পরে প্রতিটি ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে রাউন্ড দিবি। তোর তো আবার মেডিসিনের স্মেল সয় না। ব্যাপার না ওটাও। মনে মনে সেটাকে তোর বরের স্মেল মনে করবি, এমনিতেও দুটো সেম সেম। দেখ, করিডোর দিয়ে হাঁটার সময় তোর হাতের ভাঁজে ভাইয়ার হাত থাকবে, যদিও সেই হাতের মধ্যে গ্লাভস থাকবে! সোশ্যাল ডিসট্যান্স থাকবে বেশি না, মাত্র তিন হাতের। তাও আবার শুধুই শরীরের। মনের মিলনই বড়ো মিলন। একে-অপরকে দেখে তখন এত শান্তি লাগবে যে, মুখে লাগা মুচকি হাসি সরবেই না; মুখে যতই মাস্ক থাকুক, মনে মনে তা দেখে নিবি। শোন, ভাইয়ার হাসি খুব চওড়া। আমি তোকে ফ্রেম করে পাঠিয়ে দেবো, ওকে? তো ইট’ল বি অ্যা গ্রেট মধুচন্দ্রিমা, তাই না?”

সাঁঝ ফোঁস করে শ্বাস ফেলল, “তুই একটা উন্নতমানের খারাপ।”
“আই নো। তার চেয়ে একটা ভালো আইডিয়া দিই। হানিমুনই তো, রাইট?”
“হুঁ।”
“ওকে। দেন, দুই গ্লাস মধু-জল নিয়ে ভাইয়ার সাথে ছাদে বসে বসে চন্দ্রবিলাস কর।”
“তোর ভাই তো পাক্কা নিরামিষ।”
“আমিষের ছোঁয়ায় নিরামিষ আর নিরামিষ থাকে না।”

সাঁঝের চোখ জ্বলজ্বল করে উঠল। উদয় আবার বলল, “চাঁদ দেখতে দেখতে বিলাসিনী হয়ে কেবল চাঁদই দেখে যাস না। মাঝে মাঝে ভাইকেও দেখিস। আমার যা ভাই! নিজে নাকের ডগায় ইগো নিয়ে ঘোরে, অথচ অন্যের ইগো দেখতে পারে না। সামান্য ইগনোর করবি, তো এক লাথি দিয়ে ছাদ থেকে ফেলে দেবে।”
“তাহলে ইগনোর করা মাস্ট!”
“কী?”
“আমের সুস্বাদু আচার বানানোর আগে তা ভালো করে রোদে শোকাতে হয়। লাইক প্রেম।”
“কী বললি?”

সাঁঝ অতি চমকপ্রদভাবে প্রসঙ্গ পালটাল, “আচার খেতে ইচ্ছে করছে। শাশুড়ি আম্মু দেখ গিয়ে আমার জন্য আচার বানিয়েছে, এক দৌড় দিয়ে নিয়ে আয়।”
“আমার ঠ্যাকা পড়েছে!”
“অবশ্যই পড়েছে। নয়তো আমি গিয়ে শাশুড়ি আম্মুকে বলে দেবো—তুই অনলাইন ক্লাসে জয়েন হয়ে ক্যামেরা অফ করে দিস, এরপর মিউট করে গেইম খেলিস।”
“এনে দিচ্ছি। শুধু আচার খাবি, না-কি আরও কিছু?”

“তোর ভাইকে খাব, এনে দিতে পারবি?”
“মুখের ভাষা তো দিনকে দিন আস্তাগফিরুল্লাহ হচ্ছে, মধু এনে দিই?”
“না, ওটা রাতে। চন্দ্রবিলাসের সাথে এক কাপ মধু আর তোর ভাই। আহা! এমন এক রাত আমার জনম জনম হোক।”
“হ্যাঁ, তারপর মেঘ করবে, বৃষ্টি নামবে। তোরা দুজনে ‘ইয়ে রাতে ইয়ে মসাম’ গানটা বাজিয়ে একে অপরের দিকে তাকাবি। রোমান্টিক ওয়েদারে ঠাস করে একটা ঠাডা পড়বে তোদের মাথায়। অকালেই দুইটা একত্রে পটল তুলবি। বৃষ্টি নামার সাথে সাথেই কালেমা পড়ে নিস, ওকে?”

#সঞ্জীবনী

#শুক্লপক্ষের_পরিশেষে
#লেখনীতে_নবনীতা_শেখ
|৪৯|

শরৎ ও প্রিয়, দু’জনেরই অফিসের ছুটি শেষ বলেই তারা ঢাকা ফিরে এসেছে। সকাল সকাল প্রহর প্রিয়র যাবতীয় দরকারি জিনিসগুলো দিতে ফ্ল্যাটে চলে এলো। প্রিয় ওকে দেখেই ছোট ছোট চুলগুলোয় হাত বুলিয়ে এলোমেলো করে বলল,
-“কী রে? কী খবর? দিনকাল সব ভালো?”

মাথা নেড়ে প্রহর বলে,
-“ভালো, আপু।”

থেমে নিয়ে আবার বলল,
-“আপু?”

প্রিয় মুচকি হেসে বলল,
-“বল।”

প্রহরের কণ্ঠ একটু নড়বড়ে,
-“ভালো আছিস?”

প্রহরকে আশ্বস্ত করে প্রিয় বলল,
-“ভীষণ।”

প্রহর সমস্ত ভয় ছাপিয়ে হাসল এখানটায়। তারপর যখন ফিরতে চাইল, তখন প্রিয় বলল,
-“রান্না করেছি ভাই, আমি। খেয়ে যাবি।”

প্রহর বাহানা দেখাল না কোনো, চুপিসারে ড্রয়িংরুমে গিয়ে বসে পড়ল। প্রিয় ওখানে এসে শুধাল,
-“বাড়ির সবাই ভালো আছে? আম্মু কেমন আছে? আব্বু?”
-“ভালো আছে।”
-“আম্মুকে নিয়ে আসতিস!”
-“নেক্সট টাইম আনব।”
-“ঠিক আছে। আয়াতের কী খবর? ও ভালো আছে?”
-“ভালো আছে, আপু।”
-“বিয়ে কবে করবি? তোর বয়স যেমন-তেমন, আয়াতের তো বাড়িতে ঘটকের যাতায়াত বেড়ে যাওয়ার কথা।”

প্রহর কিঞ্চিৎ হাসল,
-“ওরকমই।”

প্রিয় চুলগুলো হাতখোঁপা করে বেঁধে ফেলে প্রহরের পাশে বসল। তারপর বলল,
-“দুটো কথা বলি ভাই, শোন। ওরা বলে না? সঠিক সময়ের অপেক্ষায় আছে, সময় হলে হবে, সময় আসুক! বলে না এসব? সত্যি কী জানিস? সত্যি হচ্ছে, এই সঠিক সময় বলতে কিছু নেই, কিচ্ছু না। কারণ তুই জানিস না, কাল কী হতে যাচ্ছে। তোর এখন কিছু করতে ইচ্ছে করছে, তুই এখনই কর। আর, আমি মায়ের সাথে আয়াতের ব্যাপারে কথা বলি?”

প্রহর চুপচাপ রইল। প্রিয় জবাবের আশায় আছে। তারপর এক থমকানো লগ্নে প্রহর বলল,
-“আমি ভাগ্যে চরমভাবে বিশ্বাসী।”
-“সেটা ভালো। তবে তুই কি আয়াতকে চাস না?”
-“আমরা যা চাই, সব যদি পেয়েই যাই। আফসোস কখন করব, যদি না হারাই?”
-“আফসোস চাস?”
-“আয়াতকে চাই।”
-“তোর কথার ধরন তবে অমন কেন?”

প্রিয়র কণ্ঠে দ্বিধা! গম্ভীরভাবে হেসে উঠল প্রহর,
-“দেখা যাক, ভাগ্য আমাকে কী দেয়। যা দেবে, আমি তাতেই সন্তুষ্ট।”

প্রিয়র গলায় অসন্তোষ প্রকাশ পেল,
-“ভাই, পাবি কিংবা পাবি-না, কিছু একটায় বিশ্বাস রাখ৷ নয়তো হেরে যাবি।”
-“বিশ্বাস রেখেছি তো।”
-“কীসে?”
-“ভাগ্যে।”

প্রিয় উত্তেজিত হতে হতেও শান্ত থাকল,
-“তোর কি বাজে কিছু মাথায় আসছে? কোনো সমস্যা? খুলে বল আমাকে। আপু সব ঠিক করে দেবো, বল আমাকে।”

নরম হলো প্রহর,
-“তুই আম্মুর সাথে কথা বলতে পারিস আজ। নয়তো কাল আমিই জানাব।”

এতক্ষণে প্রিয়র কলিজায় পানি এলো। বুকে হাত রেখে শ্বাস ফেলে বলল,
-“শুধু শুধু ভয় দেখাস! বোস, নীরজকে ডেকে আনি।”

প্রিয় উঠে রুমে গিয়ে দেখল শরৎ উবু হয়ে শুয়ে ঘুমাচ্ছি। প্রিয় ডাক দিলো,
-“ওঠেন, বেলা হয়ে গেছে। খেয়ে অফিসে যেতে হবে। ওঠেন না রে।”

শরৎ চোখ-মুখ কুঁচকে বলল,
-“উঁম-হুঁ!”
-“কী উঁহু? লেট হবেন তো।”
-“হবোনে।”
-“অফিসে গেলে রেজিগনেশন লেটার ধরিয়ে দেবে।”
-“দিক।”
-“চাকরি?”
-“চাকরি বাদ।”
-“খাব কী তাহলে?”
-“চুমু খাবেন। আসেন প্রিয়, এদিকে আসেন। আমার চুমু পাচ্ছে।”
-“আর আমার কাজ পাচ্ছে, আপনিও ওঠেন, আপনারও কাজ পাবে।”
-“পাবে না, প্রিয়। আপনি শুয়ে পড়েন। আসেন, আমরা একত্রে ঘুমু যাই।”
-“আরেহ ভাই, ওঠেন এখনই। আমার ভাই আসছে। ৫ সেকেন্ডের মধ্যে না উঠলে ভাইয়ের সাথে বাপের বাড়ি চলে যাব।”

শরতের অর্ধ-অচেতন মস্তিষ্কে বিষয়টা ধরল দেরি করে। ততক্ষণে পাঁচ সেকেন্ড পেরিয়ে সেকেন্ডের কাটা সপ্তমে এলো। ধপ করে উঠে বসল শরৎ। ঘড়িতে বাজে ৮টা। শরৎ উঠে বসেই প্রিয়র একহাত চেপে ধরে রইলো। ভ্রু উঁচিয়ে প্রিয় শুধাল,
-“কী?”
-“যদি পরিকল্পনা বাপের বাড়ি যাওয়ার হয়, আমরা যাব। যদি একা যাওয়ার হয়, পা কেটে হাতে ধরে এখানে বসিয়ে রাখব। কোত্থাও যাবেন না, আমি থাকতে পারব না।”
-“বাহ রে! এতদিন যেন খুব দোকলা থাকতেন?”
-“এতদিন মনে মনে বউ ছিল, এতদিন কোলবালিশ ছিল। এখন বিকল্পে আপনি আছেন।”
-“জি সেটাই, আমি গেলে আমার বিকল্পে আবার তারা এসে যাবে।”

শরৎ ভ্রু কুঁচকে ফেলল,
-“আসবে না রে বাপ, আসবে না। মনের বউ তার সতিন মানে আপনার আগমনে পালিয়ে গেছে, আর কোল বালিশ নিজ হস্তে অন্যরুমে তালাবদ্ধ রেখে এসেছেন সে-রাতে। ভুলে গেছেন? সো চুপ্প! কোত্থাও যাওয়া চলবে না। আমি আপনাকে ছাড়া থাকব না থাকব না থাকব না, থাকতে পারব না, থাকার অবস্থা তৈরি হতেই দেবো না। শালাসাহেবের সাথে কথা বলেন গিয়ে, আমি ফ্রেশ হয়ে আসি।”

এক দমে শরৎ এতগুলো কথা বলে সোজা ওয়াশরুমে ঢুকে গেল। হতবিহ্বল হয়ে সেভাবেই দাঁড়িয়ে রইল প্রিয়। একবার এলোমেলো হয়ে থাকা বিছানায় কম্ফোর্টারের নিচে শরতের বালিশের এ-পাশটায় নিজের গতরাতের ওড়নার দিকে তাকাল, পুনরায় ওয়াশরুমের দরজার দিকে! পর পর দু-বার শ্বাস ফেলল। তারপর বিছানাটা কোনোরকমভাবে গুছিয়ে বাইরে এলো। প্রহর ফোন টিপছিল। প্রিয় ওকে খাবার টেবিলে বসিয়ে বলল,
-“এখন রান্না করতে ভালো লাগে, বুঝলি? নিজের ঘর, নিজের সংসার। সবকিছুর মালিকানা আমার। এই ব্যাপারটাও সুন্দর।”

প্রহর তৃপ্তির সাথে খেতে লাগল। এটাই তো সে দেখতে চেয়েছিল! চাওয়াগুলো কী চমৎকার পাওয়া হয়ে যাচ্ছে তার!

_____
প্রিয় অফিসে গিয়েছিল আজ। ফিরতে ফিরতে রাত হলো। তার কলিগরা সবাই বিয়ে উপলক্ষে একটা ছোটখাটো সেলিব্রেশনের ব্যবস্থা করেছিল। সেজন্যই দেরি হওয়াটা। রাত নয়টার দিকে রিকশা নিয়ে প্রিয় বাসায় চলে আসে। শরতের ফ্ল্যাটটা প্রিয়র অফিস থেকে বেশ কাছেই; মিনিট পনেরো এর রাস্তা মাত্র।

তবে আজ জ্যামটাও ছিল। প্রিয় বাসায় ফিরল সাড়ে দশটায়। লিফট্ সিক্সথ ফ্লোরে এসে থামতেই, সে হাঁসফাঁস করতে শুরু করল৷ এখন বাসায় গেলে শরৎ কেমন রিয়্যাকশন দিতে পারে, তা ভাবতে লাগল। ভেবে নেতিবাচক কিছু পেল না। তবুও ভেতর থেকে গুমরে উঠতে লাগল। দায়িত্ববোধ তো আছে তার কিছু। এসব থেকে সরতে পারে না সে। যদিও শরৎকে আগেই কল দিয়ে জানিয়ে দিয়েছিল, দেরি হবে। তবুও! ব্যাপারটা কেমন অস্বস্তিকর!

কয়েকবার দম ফেলে সে কলিং বেলে প্রেস করল। সেকেন্ড কয়েকের মধ্যেই দরজা খুলে গেল। ওপাশে হাসিমুখ করে শরৎ দাঁড়িয়ে আছে। মিষ্টি করে বলল,
-“ওয়েলকাম হোম, ম্যাডাম। খুব টায়ার্ড না আপনি? আসেন ভেতরে।”

প্রিয় ভেতরে ঢুকতেই নজর গেল ডাইনিং স্পেসে সাজিয়ে রাখা খাবারগুলোর দিকে। শরৎকে শুধাল,
-“খেয়েছেন?”

শরৎ হেসে বলল,
-“ফ্রেশ হয়ে আসুন, খাবার বেড়ে দেবেন, এরপর খাব।”

অনুশোচনায় ভুগতে লাগল প্রিয়। জলদি ফ্রেশ হয়ে ডাইনিংয়ে এলো। শরৎকে বসিয়ে খাবার বাড়তে বাড়তে বলল,
-“আপনাকে বলেছি, আমার ফিরতে দেরি হবে। তাও অপেক্ষা কেন? এটা মোটেও ঠিক না। আর এরকম করবেন না।”

শরৎ বিপরীতে কিচ্ছুটি বলল না। খাবার বাড়া শেষে প্রিয় শরৎকে খেতে বলতেই সে বলল,
-“বসেন, প্রিয়।”

প্রিয় বসল। শরৎ প্লেটটা ওর দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,
-“আপনি খান।”
-“আমি খেয়ে এসেছি তো।”
-“সদ্য বিবাহিতা নারী স্বামীকে ছাড়া রাতে বাইরে আটকে গেছে, চিন্তায় তার খাওয়া হবে। এটা কতটা যুক্তিসঙ্গত? প্রিয়, আর বাকিসব নারীদের ব্যাপারটা জানি না; তবে আপনার কী খাওয়া হয়েছে—ধারণা আছে আমার। এখন খান।”

ঠিক এ-খানটায় এসে প্রিয় আরও খানিকটা দূর্বল হয়ে গেল শরতের ওপর। নরম স্বরে শুধাল,
-“এই যে রাত করলাম ফিরতে, সত্যি বলুন তো—মনে ক্ষোভ জন্মেনি?”

শরৎ ভরসা জুগিয়ে বলল,
-“ক্ষোভ জন্মেনি, তিন সত্যি। আপনি ভুল কিছু করছেন না। করলেও ক্ষোভ আসত না। আপনাকে বোঝাতাম, বোঝাতাম আর সঠিকটা বোঝাতেই থাকতাম। আমার দায়িত্ব এখানেই। আমি রাগারাগিতে বিশ্বাসী নই।”

প্রিয় মুগ্ধতা নিয়ে তাকিয়ে রইল। শরৎ খাবার মাখিয়ে এক লোকমা প্রিয়র দিকে তুলে দিয়ে বলল,
-“আপনার স্বামী রেঁধেছে, চেখে দেখেন তো কেমন হয়েছে?”

প্রিয় খাবার মুখে তুলতেই শরৎ বলতে লাগল,
-“আপনি ওখানে আটকে গেছেন, স্বেচ্ছায় দেরি করেননি। নিজের ইচ্ছেতে দেরি করলেও আমার কিছু বলার থাকত না। জীবন আপনার, জীবন পরিচালনার ধরনটাও আপনার নিজের। আমার বিশ্বাস আছে, আমার স্ত্রী ভুল কিছু করবে না। সেই বিশ্বাস থেকে আমি আপনাকে আপনার মতো চলার সম্পূর্ণ অধিকার দিতে কার্পন্য করব না।”

প্রিয় মুগ্ধতার শীর্ষে পৌঁছাল। তার দু-চোখ ভর্তি স্বপ্ন, তা পরিলক্ষিত!

____
খাওয়ার পালা শেষে প্রিয় নাহারাকে কল দিলো। ভালোমন্দ জিজ্ঞেস করে সোজা কথায় এলো,
-“আম্মু, প্রহরের বিয়ের প্ল্যান নেই?”
-“এখনই? বয়সই বা কত ওর!”
-“যথেষ্ট! ছাব্বিশ চলছে। এখন বিয়ে-শাদি না করালে তুমি বেঁচে থাকতে নাতি-পুতি দেখতে পারবে না, আম্মু। বিয়ে দাও, নাতি-পুতির সংসারও দেখতে পারবে।”
-“বলছিস?”
-“হ্যাঁ।”
-“মেয়ে দেখি?”
-“আমার দেখা আছে।”
-“আচ্ছা, আমি তাহলে ছেলেটার সাথে কথা বলি। ওকে না জানিয়ে এত বড়ো সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললে যদি রাগ করে?”

প্রিয় তাকিয়ে দেখল পাশে শরৎ ঠোঁট চেপে হেসে যাচ্ছে। প্রিয় নিজেও কেশে নিয়ে নিজের হাসি আটকিয়ে বলল,
-“আমি কথা বলে নেব ওসবের। তুমি বাবার সাথে কথা বোলো। মেয়ে ফার্স্ট ক্লাস। দেখতে যেমন সুন্দর, চলনে-বলনেও সুন্দর। বাবা-মায়ের একমাত্র মেয়ে। বেশ আদরের। আমাদের প্রহরের সাথেও দারুণ মানাবে।”
-“আচ্ছা, ভালো তো। বয়স কত?”
-“বয়স ২৫।”
-“যাহ! মেয়ের বয়স বেশি তো। মাত্র এক বছরের বয়সের পার্থক্য ওদের! নাহ, অন্য মেয়ে দেখা লাগবে।”

প্রিয় নড়েচড়ে বসে বলল,
-“শোনো না, মা! আমার তো ২৭-এ বিয়ে হলো, ওর মাত্র ২৫। কী এমন সমস্যা?”

নাহারা শক্ত গলায় বলল,
-“নীরজ বাবার বয়স ৩৩+, সেই হিসেবে তোর সাথে ঠিকই আছে। স্বামী স্ত্রীর বয়সের পার্থক্য কম পক্ষে ৫ বছর থাকা লাগে। নয়তো বোঝাপড়া ঠিকমতো হয় না। এখানে ২৫-২৬! ওরা তো প্রায় সমবয়সী! সমবয়সীদের বোঝাপড়া থাকে না। দুইজনে রাগারাগি, মারামারি করবে সারাদিন। নাহ!”
-“আরেম্মাহ, ব্যাপার না তো। আমাদের প্রহর ম্যাচিউর আছে, ও সামলে নেবে। তাছাড়া মেয়ে আমার পছন্দের। লাখে একটা। বুঝেছ?”
-“তোর পছন্দ?”
-“হু।”
-“তাহলে দেখে আসবোনে।”
-“আচ্ছা, আমি কথা বলে ডেট জানাব।”

প্রিয় আর কিছু কথা বলে কল কেটে দিলো। আর তখনই শরৎ হো হো করে হেসে উঠল। প্রিয় শরতের বাহুতে মেরে বলল,
-“অমন হাসছেন কেন পাগলের মতন? কী হয়েছে?”

শরতের হাসি থামছে না। সে ওভাবেই বলল,
-“বিয়ে হতে না হতেই বউ ঘটকালি শুরু করেছে, সেখানে আমি পাগল হব না তো কে হবে? আপনার স্কিল দেখে আমি জাস্ট ইম্যাজিন করছি—কোনো এক বর্ষায় বৃষ্টি থামার পর মুহূর্তে শাড়ি কোমরে গুঁজে, একহাতে ছাতা ধরে কর্দমাক্ত রাস্তা দিয়ে এগোচ্ছেন। পান খাওয়া মুখে একে-ওকে দেখে হাসছেন। পানের পিক ফেলছেন রাস্তায়। রাস্তাঘাটে মেয়ে দেখে জিজ্ঞেস করছেন, ‘আম্মা, তুমি কোন বাড়ির? বাপের নাম কী? দাদার নাম কী? কীসে পড়ো? নাম কী?’

এসব শেষে মেয়েকে ছেড়ে আবারও রাস্তায় হাঁটা ধরেছেন। তারপর কোমরে গোঁজা বাটন ফোনটা বের করে কল লাগালেন আরেকজন মানুষকে। পান-খাওয়া দাঁত বের করে হেসে বলেছেন, ‘আরেহ খানসাহেব, একটা মেয়ে পাইছি হাতে। মেয়েটা লাখে এক। আপনার পোলার সাথে সেই মানাব্বে। বিয়েটা হইলে সারাদিন খালি এই প্রিয়বানুর নাম জপবেন যে, কী একটা মেয়ে জোগাড় করে দিছি এই যুগে আইস্যা।’

তারপর আবারও আগের অবস্থায় হাঁটা ধরবেন। ওহ নো প্রিয়! আমি ইম্যাজিন করেই শ্যাষ। আপনি করেছেন ইম্যাজিন? কী দারুণ লাগবে না আপনাকে? ওহ ম্যান!”

হাসতে হাসতে বিছানায় গড়াগড়ি খাচ্ছে নীরজ। প্রিয় ফুঁসতে ফুঁসতে মনেপ্রাণে চাইছে সিলিংয়ে ঝুলতে থাকা ফ্যানটা এই চরম খারাপ মানুষটার ওপর পড়ুক, আর সে অক্কা পাক!

চলবে…