শুধু তুই পর্ব-০৫

0
64

#শুধু_তুই
#পর্ব_৫
#লেখনীতে_উদন্তিকা_নাথ_বর্ষা

হলুদের অনুষ্ঠান শেষ হয়েছে কিছুক্ষণ আগে। ছেলের বাড়ি থেকে যারা এসেছিলো তারা চলে গেছে। ডাইনিং রুমে খেতে বসেছে আদ্রিক, রিয়াদ, সিয়াম।পাশেই দাঁড়িয়ে আছে আয়েশা আর রজনী। বৃষ্টি বেগম, জাফর মির্জা রুমে চলে গেছে তারা ঘুমানোর জন্য। অনেক রাত হয়েছে। টিয়া ফ্রেশ হয়ে পানি নেওয়ার জন্য নিচে নেমে আসে। সিয়াম খেতে খেতে সিরির দিকে চোখ যায়। আদ্রিককে ফিস ফিস করে বলে, এই মেয়েটা কে হয় তোর? ”
আদ্রিক জবাব দিলো, আমার ছোট চাচার মেয়ে।”
“তোর ছোট চাচার মেয়েটা কিন্তু হেব্বি দেখতে।”
আদ্রিক ভুরু কুঁচকে তাকিয়ে বলে, তোর মাথায় কিছু চলছে।”
সিয়াম আদ্রিকের কথা শুনতেই গ্লাস নিয়ে পানি ঢকঢক করে খেয়ে বলে, বন্ধুকে হেল্প করবি না।”
” পটিয়ে নে।”
সিয়াম এবার লাফিয়ে উঠে বলে, এই না হলে বন্ধু।”
আশেপাশে যারা ছিলো সবাই সিয়াম কে দেখছে। রিয়াদ কিছু বুঝতে না পেরে বলে, কি হলো, খেতে বসে বাদরের মতো লাফাচ্ছিস কেনো? ”
সিয়াম দাঁতে দাঁত রেখে বলে, খাওয়া করে উঠে তোকে এমন কেলানি দিবো না।”
টিয়া ফ্রিজ থেকে পানি নিচ্ছিলো, তাদের কথা টিয়ার কান অব্দি চলে গেছে। নিজের হাসি চাপিয়ে রাখতে না পেরে হিহিহি করে হেসে দেয়। তিন জনেই পিছন ঘুরে দেখে টিয়া হাসছে। টিয়ার চোখ আদ্রিকের দিকে যেতেই হাসি গায়েব। সেখানে এক মুহুর্ত দাঁড়িয়ে না থেকে ভোঁদৌড়।
হাসতে হাসতে রুমে ঢুকছে। তার যেনো হাসি আর আটকাচ্ছে না। রিয়া কিছু বুঝতে পারে না খালি দেখছে। রিয়া কৌতূহল মেটানোর জন্য টিয়াকে বলে কি হলো এভাবে হাসছিস কেনো? ” তখনি রুমের ভিতর তরু আসে। মাথায় তার তোয়ালে পেছানো। সবে মাত্র গোসল করেছে। কিছু জিনিস দিতে এসছিলো। সেও এসে টিয়াকে হাসতে দেখে বলে, কি ব্যাপার এভাবে হাসছো কেনো? ”
টিয়া এবার হাসি চাপিয়ে রেখে সব কথা বললো। রিয়া এগিয়ে এসে বলে, তারমানে ওই ছেলেটা তোকে পছন্দ করেছে টিয়া।”
“ধুর এমন কিছুি না।
এমনটাই তুই দেখেনিস। কি বলিস তরু।
হ্যাঁ, আমাদের টিয়া রানী কিউটের ডিব্বা তাকে পছন্দ করবে না তো কাকে করবে।”
তরু রুম থেকে বেরিয়ে সিরির কাছে আসতেই আদ্রিককের সাথে দেখা হয়ে যায়। তরুর কেমন লজ্জা লাগছে। রুমে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালে আদ্রিক বলে,
” আগে আমায় ছাড়া কিছুই বুঝতিস না আর এখন আমায় দেখলেই দূরে যাস।”
তরু তপ্ত শ্বাস ফেলে বলে, তেমন টা না।”
“তাহলে কারণ টা কি? আদ্রিক এগিয়ে আসতে আসতে বলে।” তরু এক পা পিছিয়ে যায়। তার কেমন অস্তিত্ব লাগছে, আবার বুক ধুকপুক করছে। তরু আর এক মুহুর্ত দাঁড়িয়ে না থেকে রুমে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দেয় টুপ করে। আদ্রিক আলতো হেসে নিজের রুমে চলে গেলো।
আয়না ভিডিও কলে কথা বলছিলো হবু বরের সাথে। তরুকে এভাবে দরজা লাগিয়ে হাঁপাতে দেখে বলে উঠলো, কিরে হাঁপাচ্ছিস কেনো?
তরু কি জবাব দিবে বুঝতে পাচ্ছে না। লজ্জায় মুখ লাল হয়ে আসছে। তবে আয়নার বুঝতে দেড়ি হলো না। সে খুব ভালো করেই জানে এর পিছনের কারণ আদ্রিক৷
আয়না কল কেটে এগিয়ে আসলো তরুর দিকে। তারপর বলতে শুরু করলো, লজ্জা পেতে হবে না। আমি সব কিছু জানি। আয় বস এখানে।
তরুকে বেডে বসিয়ে দিয়ে আবার বলতে শুরু করে,
আচ্ছা তরু তুই তো আদ্রিককে ভালো বাসিস তাই না।
ধর হুট করেই তোদের বিয়ে হয়ে গেলো, তখনকার অবস্থাটা কি হবে ভাব।
আয়না যে ইচ্ছে করেই লজ্জা দিচ্ছে তরু বেশ বুঝতে পাচ্ছে। তাকে লজ্জা পেলে চলবে না, চঞ্চল তরুকে তার প্রমাণ দিতে হবে কোনো লজ্জা নেই। তাই সাহস নিয়ে বলে, হুম বাসি তো খুব ভালোবাসি তাকে আমি।”
কথাটা বলেই তরু বেডের একপাশে শুয়ে পরে। আয়না হাসতে হাসতে তরুর পাশে শুয়ে পরে।
____

সকাল সকাল ঘুম ভেঙে গেলো কোলাহলে। চারিদিকেই টুংটাং আওয়াজ হচ্ছে। আবার চেঁচামেচি তো আছেই। বিয়ে বাড়ি বলে কথা। আদ্রিক চোখ মুখ খিঁচে উঠে পরে। তারপর ওয়াশরুম চলে যায়। কিছুক্ষণ পর বের হয়ে আসে। সকাল সকাল এক কফি না খেলেই নয়। তাই নিচে চলে যায়। আদিবা বেগম কফি নিয়ে ছেলের রুমেই আসছিলেন কিন্তু মাঝপথে দেখা হয়ে যায়। আদ্রিক কফি হাতে নেয়। আদিবা বলে, আদ্রিক।”
বলো।”
বলছি তোর বাবা আসবে না।”
কফিতে একটা চুমুক দিয়ে বলে, আসবে কি না শিয়র না।
ওহ।”
আচ্ছা মা, বাবা বাড়ি আসতে চায় না কেনো? আমি অনেক জোর করেছি আসার জন্য বাট বাবা আসতে চাইলো না। আমার তো মনে হয় কারণ আছে। তুমি কি জানো এর কারণটা।”
আদিবা কিছুক্ষণ চুপ থেকেই বলে, তোর যখন দুই বছর বয়স তখন তোর বাবার ঢাকায় চাকরি হয়। এতে তোর বাবা খুশি হলেও তোর দাদা খুশি নয়। আর আমিও না। তোর দাদা চেয়েছিলো, তোর বাবা ভাইদের সাথে ব্যবসা করবে। কিন্তু তোর বাবার এটা মোটেও পছন্দ ছিলো না। এদিকে তোর দাদা আমাকে ঢাকায় আসতে দিবে না। এই নিয়ে একটু বেশি ঝামেলা হয়। শেষে তোর বাবা বাড়ি” থেকে বেরিয়ে যায় আর বলেছে এ বাড়িতে আর আসবে না।” কথা গুলো বলেই আদিবা দীর্ঘ শ্বাস ফেললেন।
আদ্রিক তার মায়ের কষ্ট বুঝতে পারলো৷ এতো দিন স্বামীকে ছাড়া ছিলো নিশ্চয়ই ভিতরে প্রচন্ড রকম যন্ত্রণা হয়েছিলো কিন্তু কখনো মন খুলে কথা গুলো প্রকাশ করতে পারে নি। মাকে জরিয়ে ধরলো আদ্রিক। আদিবা ছেলের এমন কান্ডে কান্না করে দিলো।
“তুমি এসব আগে কেনো বলোনি মা৷ আদ্রিক বললো।
কি করে বলতাম বল। তুই কখনো জানতে চেয়েছিস।”
আদ্রিক মায়ের অভিমান বুঝতে পারলো।” সরি মা। আমি সেরকম সময় পায়নি।”
তখন তরু এসে পাশে দাঁড়িয়ে বলে, আম্মু বড় আম্মু ডাকে।”
আদিবা চলে যায়। তরু চলে যেতে ধরলেই আদ্রিক হাত টেনে ধরে। তরু আদ্রিকের পানে তাকায়। আদ্রিক এক নিমিষেই তরুর গালে কিস করে চলে যায়। তরু মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে আছে। তার যেনো বিশ্বাস হচ্ছে না। গালে হাত দিয়ে আলতো হেসে মুখটা ঢেকে নেয়। ইশ এই লোকটা ঠোঁট কাটা স্বভাবের কবে হলো।”
তরু একমুহূর্ত আর থাকলো ছুটে চললো নিজের কাজে।”
__

কফি খেতে খেতে চারিদিকটা ঘুরে দেখছে আদ্রিক। তারপর বাগানে চলে যায়। সব কিছুই দেখলো না সব ঠিক আছে। তারপর গাছের পিছন থেকে কারো কথা ভেসে আসছে, আরে সত্যি আমি একটু ব্যস্ত বুঝছো। বিয়ে বাড়ি বুঝতেই পাচ্ছো আমাকেই সব কিছু সামাল দিতে হচ্ছে। তুমি একটু বোঝার চেষ্টা করো৷ বিয়েটা শেষ হোক না। পাক্কা সময় দিবো৷ আবার কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে, সত্যি জান আমি কোনো মেয়ের দিকে তাকাইনি৷”
হুম সত্যি। আচ্ছা এখন রাখি।
কলটা কেটে পিছন দিকে ঘুরতে ভুত দেখার মতো চমকে উঠে ফাহিম। বুকে থুথু দিয়ে বলে, আরে ভাইয়া তুমি।”
“হুম আমি। প্রেমিকা ছিলো।”
ফাহিম কি বলবে বুঝতে পাচ্ছে না সে তো ধরা পরেই গেছে। এখন মিথ্যা বলতেও পারবে না। তাই মনে মনে ঠিক করে নেয়, সে সত্যি টা বলবে। ” হ্যাঁ ভাইয়া।”
কতদিন থেকে?
ওই তো দুই বছর।”
বাড়িতে জানে।”
না ভাইয়া কেউ জানে না। প্লিজ তুমি কাউকে বলিও না। মা জানলে কান মলে দিবে৷ বাবা জানলে তো বাড়ি থেকে বের করে দিবে।”
” ঠিক আছে। আমি যা বলবো তোকে কিন্তু করতে হবে।”
” হ্যাঁ ভাইয়া আমি তাই করবো।”

দেখতে দেখতে বিকেল গড়িয়ে আসলো। তরু অনেকক্ষণ থেকে আদ্রিককে দেখেনি। দেখবেই বা কি করে সে তো বাড়িতে নেই। কোথাও একটা চলে গেছে।
ঘন্টা খানিকের মধ্যে বর চলে আসবে। নিচ থেকে সিয়াম ডাকছে, এই তরু নিচে আসো।”
তরু নিচে নেমে যায়।” কিছু বলবেন ভাইয়া।”
হ্যাঁ এক গ্লাস ঠান্ডা পানি দেও।”
তরু ঠান্ডা পানি এনে দিলো। আদ্রিক রিয়াদ আর সিয়াম কে কাজে লাগিয়ে দিয়েছে। দুজনের নাজেহাল অবস্থা তার উপর প্রচন্ড গরম। সিয়াম পানি খেতে খেতে বলে, আচ্ছা টিয়াকে দেখছি না কোথাও গেছে নাকি।”
“হ্যাঁ আয়না আপুর সাথে পার্লারে গেছে।
তুমি যাওনি কেনো?”
” আদ্রিক ভাইয়া মানা করেছে।”
” ওহ আচ্ছা।”
আয়না টিয়া রিয়া সবাই পার্লারে চলে গেছে। আশরাফুল আদ্রিককে বলেছে আসার সময় তাদেরকে নিয়ে আসতে। এক ঘন্টার মধ্যে সবাই বাড়ি চলে আসে। একটু পর বর আসবে। আয়না নিজের রুমে চলে যায়। রিয়া আর টিয়া গেট তো ধরবে বলে ঠিক করেছে। কিন্তু জাফর মির্জা বলেছে কোনো দরকার নেই। রিয়া আর টিনা মন খারাপ রুমে চলে যায়। আদিবা আদ্রিককে খুঁজছে। ছেলেটা খায়নি এখনো। তরুকে বলেছে খোঁজ নিতে কিন্তু তরুর কাছে ফোন ছিলো না। আয়না ওর ফোন টা নিয়ে চলে গেছিলো। এখন বাড়িতে এসেছে কিন্তু তরু অন্য কাজে ব্যস্ত। ছেলেকে খুঁজতে খু্ঁজতে বাইরে চলে যান। সবাই মিলে গল্প করছে এক জায়গায়। আদ্রিক মাকে দেখে এগিয়ে যায়। আদিবা বলে, আদ্রিক বাবা খাবি না।”
হুম খাবো, তুমি খেয়েছো? ”
না খায়নি। তরুও খায়নি। চল একসাথে খাবো।”
আদ্রিক মায়ের সাথে ভিতরে চলে যায়। যেতে যেতে মায়ের কানে ফিস ফিস করে বলে, বাবা আসছে।”হলুদের অনুষ্ঠান শেষ হয়েছে কিছুক্ষণ আগে। ছেলের বাড়ি থেকে যারা এসেছিলো তারা চলে গেছে। ডাইনিং রুমে খেতে বসেছে আদ্রিক, রিয়াদ, সিয়াম।পাশেই দাঁড়িয়ে আছে আয়েশা আর রজনী। বৃষ্টি বেগম, জাফর মির্জা রুমে চলে গেছে তারা ঘুমানোর জন্য। অনেক রাত হয়েছে। টিয়া ফ্রেশ হয়ে পানি নেওয়ার জন্য নিচে নেমে আসে। সিয়াম খেতে খেতে সিরির দিকে চোখ যায়। আদ্রিককে ফিস ফিস করে বলে, এই মেয়েটা কে হয় তোর? ”
আদ্রিক জবাব দিলো, আমার ছোট চাচার মেয়ে।”
“তোর ছোট চাচার মেয়েটা কিন্তু হেব্বি দেখতে।”
আদ্রিক ভুরু কুঁচকে তাকিয়ে বলে, তোর মাথায় কিছু চলছে।”
সিয়াম আদ্রিকের কথা শুনতেই গ্লাস নিয়ে পানি ঢকঢক করে খেয়ে বলে, বন্ধুকে হেল্প করবি না।”
” পটিয়ে নে।”
সিয়াম এবার লাফিয়ে উঠে বলে, এই না হলে বন্ধু।”
আশেপাশে যারা ছিলো সবাই সিয়াম কে দেখছে। রিয়াদ কিছু বুঝতে না পেরে বলে, কি হলো, খেতে বসে বাদরের মতো লাফাচ্ছিস কেনো? ”
সিয়াম দাঁতে দাঁত রেখে বলে, খাওয়া করে উঠে তোকে এমন কেলানি দিবো না।”
টিয়া ফ্রিজ থেকে পানি নিচ্ছিলো, তাদের কথা টিয়ার কান অব্দি চলে গেছে। নিজের হাসি চাপিয়ে রাখতে না পেরে হিহিহি করে হেসে দেয়। তিন জনেই পিছন ঘুরে দেখে টিয়া হাসছে। টিয়ার চোখ আদ্রিকের দিকে যেতেই হাসি গায়েব। সেখানে এক মুহুর্ত দাঁড়িয়ে না থেকে ভোঁদৌড়।
হাসতে হাসতে রুমে ঢুকছে। তার যেনো হাসি আর আটকাচ্ছে না। রিয়া কিছু বুঝতে পারে না খালি দেখছে। রিয়া কৌতূহল মেটানোর জন্য টিয়াকে বলে কি হলো এভাবে হাসছিস কেনো? ” তখনি রুমের ভিতর তরু আসে। মাথায় তার তোয়ালে পেছানো। সবে মাত্র গোসল করেছে। কিছু জিনিস দিতে এসছিলো। সেও এসে টিয়াকে হাসতে দেখে বলে, কি ব্যাপার এভাবে হাসছো কেনো? ”
টিয়া এবার হাসি চাপিয়ে রেখে সব কথা বললো। রিয়া এগিয়ে এসে বলে, তারমানে ওই ছেলেটা তোকে পছন্দ করেছে টিয়া।”
“ধুর এমন কিছুি না।
এমনটাই তুই দেখেনিস। কি বলিস তরু।
হ্যাঁ, আমাদের টিয়া রানী কিউটের ডিব্বা তাকে পছন্দ করবে না তো কাকে করবে।”
তরু রুম থেকে বেরিয়ে সিরির কাছে আসতেই আদ্রিককের সাথে দেখা হয়ে যায়। তরুর কেমন লজ্জা লাগছে। রুমে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালে আদ্রিক বলে,
” আগে আমায় ছাড়া কিছুই বুঝতিস না আর এখন আমায় দেখলেই দূরে যাস।”
তরু তপ্ত শ্বাস ফেলে বলে, তেমন টা না।”
“তাহলে কারণ টা কি? আদ্রিক এগিয়ে আসতে আসতে বলে।” তরু এক পা পিছিয়ে যায়। তার কেমন অস্তিত্ব লাগছে, আবার বুক ধুকপুক করছে। তরু আর এক মুহুর্ত দাঁড়িয়ে না থেকে রুমে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দেয় টুপ করে। আদ্রিক আলতো হেসে নিজের রুমে চলে গেলো।
আয়না ভিডিও কলে কথা বলছিলো হবু বরের সাথে। তরুকে এভাবে দরজা লাগিয়ে হাঁপাতে দেখে বলে উঠলো, কিরে হাঁপাচ্ছিস কেনো?
তরু কি জবাব দিবে বুঝতে পাচ্ছে না। লজ্জায় মুখ লাল হয়ে আসছে। তবে আয়নার বুঝতে দেড়ি হলো না। সে খুব ভালো করেই জানে এর পিছনের কারণ আদ্রিক৷
আয়না কল কেটে এগিয়ে আসলো তরুর দিকে। তারপর বলতে শুরু করলো, লজ্জা পেতে হবে না। আমি সব কিছু জানি। আয় বস এখানে।
তরুকে বেডে বসিয়ে দিয়ে আবার বলতে শুরু করে,
আচ্ছা তরু তুই তো আদ্রিককে ভালো বাসিস তাই না।
ধর হুট করেই তোদের বিয়ে হয়ে গেলো, তখনকার অবস্থাটা কি হবে ভাব।
আয়না যে ইচ্ছে করেই লজ্জা দিচ্ছে তরু বেশ বুঝতে পাচ্ছে। তাকে লজ্জা পেলে চলবে না, চঞ্চল তরুকে তার প্রমাণ দিতে হবে কোনো লজ্জা নেই। তাই সাহস নিয়ে বলে, হুম বাসি তো খুব ভালোবাসি তাকে আমি।”
কথাটা বলেই তরু বেডের একপাশে শুয়ে পরে। আয়না হাসতে হাসতে তরুর পাশে শুয়ে পরে।
____

সকাল সকাল ঘুম ভেঙে গেলো কোলাহলে। চারিদিকেই টুংটাং আওয়াজ হচ্ছে। আবার চেঁচামেচি তো আছেই। বিয়ে বাড়ি বলে কথা। আদ্রিক চোখ মুখ খিঁচে উঠে পরে। তারপর ওয়াশরুম চলে যায়। কিছুক্ষণ পর বের হয়ে আসে। সকাল সকাল এক কফি না খেলেই নয়। তাই নিচে চলে যায়। আদিবা বেগম কফি নিয়ে ছেলের রুমেই আসছিলেন কিন্তু মাঝপথে দেখা হয়ে যায়। আদ্রিক কফি হাতে নেয়। আদিবা বলে, আদ্রিক।”
বলো।”
বলছি তোর বাবা আসবে না।”
কফিতে একটা চুমুক দিয়ে বলে, আসবে কি না শিয়র না।
ওহ।”
আচ্ছা মা, বাবা বাড়ি আসতে চায় না কেনো? আমি অনেক জোর করেছি আসার জন্য বাট বাবা আসতে চাইলো না। আমার তো মনে হয় কারণ আছে। তুমি কি জানো এর কারণটা।”
আদিবা কিছুক্ষণ চুপ থেকেই বলে, তোর যখন দুই বছর বয়স তখন তোর বাবার ঢাকায় চাকরি হয়। এতে তোর বাবা খুশি হলেও তোর দাদা খুশি নয়। আর আমিও না। তোর দাদা চেয়েছিলো, তোর বাবা ভাইদের সাথে ব্যবসা করবে। কিন্তু তোর বাবার এটা মোটেও পছন্দ ছিলো না। এদিকে তোর দাদা আমাকে ঢাকায় আসতে দিবে না। এই নিয়ে একটু বেশি ঝামেলা হয়। শেষে তোর বাবা বাড়ি” থেকে বেরিয়ে যায় আর বলেছে এ বাড়িতে আর আসবে না।” কথা গুলো বলেই আদিবা দীর্ঘ শ্বাস ফেললেন।
আদ্রিক তার মায়ের কষ্ট বুঝতে পারলো৷ এতো দিন স্বামীকে ছাড়া ছিলো নিশ্চয়ই ভিতরে প্রচন্ড রকম যন্ত্রণা হয়েছিলো কিন্তু কখনো মন খুলে কথা গুলো প্রকাশ করতে পারে নি। মাকে জরিয়ে ধরলো আদ্রিক। আদিবা ছেলের এমন কান্ডে কান্না করে দিলো।
“তুমি এসব আগে কেনো বলোনি মা৷ আদ্রিক বললো।
কি করে বলতাম বল। তুই কখনো জানতে চেয়েছিস।”
আদ্রিক মায়ের অভিমান বুঝতে পারলো।” সরি মা। আমি সেরকম সময় পায়নি।”
তখন তরু এসে পাশে দাঁড়িয়ে বলে, আম্মু বড় আম্মু ডাকে।”
আদিবা চলে যায়। তরু চলে যেতে ধরলেই আদ্রিক হাত টেনে ধরে। তরু আদ্রিকের পানে তাকায়। আদ্রিক এক নিমিষেই তরুর গালে কিস করে চলে যায়। তরু মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে আছে। তার যেনো বিশ্বাস হচ্ছে না। গালে হাত দিয়ে আলতো হেসে মুখটা ঢেকে নেয়। ইশ এই লোকটা ঠোঁট কাটা স্বভাবের কবে হলো।”
তরু একমুহূর্ত আর থাকলো ছুটে চললো নিজের কাজে।”
__

কফি খেতে খেতে চারিদিকটা ঘুরে দেখছে আদ্রিক। তারপর বাগানে চলে যায়। সব কিছুই দেখলো না সব ঠিক আছে। তারপর গাছের পিছন থেকে কারো কথা ভেসে আসছে, আরে সত্যি আমি একটু ব্যস্ত বুঝছো। বিয়ে বাড়ি বুঝতেই পাচ্ছো আমাকেই সব কিছু সামাল দিতে হচ্ছে। তুমি একটু বোঝার চেষ্টা করো৷ বিয়েটা শেষ হোক না। পাক্কা সময় দিবো৷ আবার কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে, সত্যি জান আমি কোনো মেয়ের দিকে তাকাইনি৷”
হুম সত্যি। আচ্ছা এখন রাখি।
কলটা কেটে পিছন দিকে ঘুরতে ভুত দেখার মতো চমকে উঠে ফাহিম। বুকে থুথু দিয়ে বলে, আরে ভাইয়া তুমি।”
“হুম আমি। প্রেমিকা ছিলো।”
ফাহিম কি বলবে বুঝতে পাচ্ছে না সে তো ধরা পরেই গেছে। এখন মিথ্যা বলতেও পারবে না। তাই মনে মনে ঠিক করে নেয়, সে সত্যি টা বলবে। ” হ্যাঁ ভাইয়া।”
কতদিন থেকে?
ওই তো দুই বছর।”
বাড়িতে জানে।”
না ভাইয়া কেউ জানে না। প্লিজ তুমি কাউকে বলিও না। মা জানলে কান মলে দিবে৷ বাবা জানলে তো বাড়ি থেকে বের করে দিবে।”
” ঠিক আছে। আমি যা বলবো তোকে কিন্তু করতে হবে।”
” হ্যাঁ ভাইয়া আমি তাই করবো।”

দেখতে দেখতে বিকেল গড়িয়ে আসলো। তরু অনেকক্ষণ থেকে আদ্রিককে দেখেনি। দেখবেই বা কি করে সে তো বাড়িতে নেই। কোথাও একটা চলে গেছে।
ঘন্টা খানিকের মধ্যে বর চলে আসবে। নিচ থেকে সিয়াম ডাকছে, এই তরু নিচে আসো।”
তরু নিচে নেমে যায়।” কিছু বলবেন ভাইয়া।”
হ্যাঁ এক গ্লাস ঠান্ডা পানি দেও।”
তরু ঠান্ডা পানি এনে দিলো। আদ্রিক রিয়াদ আর সিয়াম কে কাজে লাগিয়ে দিয়েছে। দুজনের নাজেহাল অবস্থা তার উপর প্রচন্ড গরম। সিয়াম পানি খেতে খেতে বলে, আচ্ছা টিয়াকে দেখছি না কোথাও গেছে নাকি।”
“হ্যাঁ আয়না আপুর সাথে পার্লারে গেছে।
তুমি যাওনি কেনো?”
” আদ্রিক ভাইয়া মানা করেছে।”
” ওহ আচ্ছা।”
আয়না টিয়া রিয়া সবাই পার্লারে চলে গেছে। আশরাফুল আদ্রিককে বলেছে আসার সময় তাদেরকে নিয়ে আসতে। এক ঘন্টার মধ্যে সবাই বাড়ি চলে আসে। একটু পর বর আসবে। আয়না নিজের রুমে চলে যায়। রিয়া আর টিয়া গেট তো ধরবে বলে ঠিক করেছে। কিন্তু জাফর মির্জা বলেছে কোনো দরকার নেই। রিয়া আর টিনা মন খারাপ রুমে চলে যায়। আদিবা আদ্রিককে খুঁজছে। ছেলেটা খায়নি এখনো। তরুকে বলেছে খোঁজ নিতে কিন্তু তরুর কাছে ফোন ছিলো না। আয়না ওর ফোন টা নিয়ে চলে গেছিলো। এখন বাড়িতে এসেছে কিন্তু তরু অন্য কাজে ব্যস্ত। ছেলেকে খুঁজতে খু্ঁজতে বাইরে চলে যান। সবাই মিলে গল্প করছে এক জায়গায়। আদ্রিক মাকে দেখে এগিয়ে যায়। আদিবা বলে, আদ্রিক বাবা খাবি না।”
হুম খাবো, তুমি খেয়েছো? ”
না খায়নি। তরুও খায়নি। চল একসাথে খাবো।”
আদ্রিক মায়ের সাথে ভিতরে চলে যায়। যেতে যেতে মায়ের কানে ফিস ফিস করে বলে, বাবা আসছে।”

#চলবে?