#শূন্যেরে_করিব_পূর্ণ (পর্ব ৪)
নুসরাত জাহান লিজা
শ্রাবণীর ভীষণ মেজাজ খারাপ। ওর বান্ধবী মিরা একটা ছবি ফেসবুকে আপলোড দিয়েছে। সেখানে মিরা ছাড়া আর কাউকেই ভালো লাগছে না দেখতে। শ্রাবণীকে দেখে মনে হচ্ছে ঘুমিয়ে পড়েছে। এটা নিয়ে মিরাকে বললে উত্তর দিয়েছে,
“আরে দোস্ত, আমারে ভালো লাগতেসে। আমি আশেপাশে খেয়াল করি নাই রে। দেখ এতগুলো লাইক কমেন্ট আসছে, এখন কেমনে ডিলিট করি!”
“তুই ভালো আসলেই ওই ছবি তুই ফেসবুকে দিবি? আমার আর নীলার ছবি যে দিলি, তুই জিজ্ঞেস করছিলি?”
এই বলে কল কেটে দিয়েছে শ্রাবণী। উত্তর শোনার ধৈর্য হয়নি। মেজাজ খারাপ নিয়ে ঘরের বাইরে এলো সে। সৌম্য আর সূচি খেলছিল বাইরে। এরা মিরানের বিশাল ভক্ত। বাচ্চা হলেও বেশ মুডি। বিশেষ করে সৌম্য।
“কী কোরো তোমরা?”
“খেলা করি।” সূচি উত্তর দিয়ে আবার খেলায় মনোযোগ দিল। প্রচুর খেলনা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। সেসব রেখে সৌম্য মোবাইলে গেমিং করছে, সেটাই গভীর মনোযোগ দিয়ে দেখছে সূচি।
“আমাকে নেবে খেলায়?”
“তুমি খেলবে?”
“হ্যাঁ। চলো একটা কম্পিটিশন হয়ে যাক। যার স্কোর বেশি হবে সে জিতবে।”
কম্পিটিশনের কথা শুনে নড়েচড়ে বসল সৌম্য। সূচি অবশ্য তেমন কিছু বুঝল না।
“তোমরা জিতলে আমি তোমাদের.. আচ্ছা তোমার প্রিয় খাবার কী?”
“আইসক্রিম। কিন্তু আম্মু খেতে দেয় না।”
“তোমরা জিতলে আমি খাওয়াব আইসক্রিম।”
“আর তুমি জিতলে?”
“আমি জিতলে আমার ছোট্ট একটা কাজ করে দিলেই হবে। মজার কাজ, রাজি? খেলা হবে তিনবার। যে দুইবার জিতবে সে উইনার।”
“রাজি।”
সৌম্য একবার আর শ্রাবণী দুইবার জিতে গেল। সৌম্যকে বলল, “মন খারাপ কোরো না সোনা। আমি তোমাদের আইসক্রিম খাওয়াব। আমি বাইরে যাব আর নিয়ে আসব।”
“আমরা কী করব আন্টি?”
শ্রাবণী তাদের কী করতে হবে বলল, সৌম্য চিন্তিত গলায় বলল, “কিন্তু ছোটকা যদি রেগে যায়?”
“আমি আছি তো। কিচ্ছু হবে না। তোমরা কি চাও আমি এই বাড়িতে থাকি নাকি চলে যাই?”
“তুমি থাকবে আন্টি।” সূচি উত্তর দিল। সৌম্য মাথা নেড়ে সহমত প্রকাশ করল।
“তাহলে এই আন্টি তোমাদের কাছে ছোট্ট হেল্প চাইছে।”
এরপর তিনজনে হাত মিলিয়ে দুরভিসন্ধি বাস্তবায়নের কৌশল নিয়ে বসল। শ্রাবণীর মেজাজ খারাপ নিমিষেই হাওয়া হয়ে গেল। বাচ্চাগুলো চমৎকার। ভীষণ আদর করতে ইচ্ছে করে।
***
মিরান আবারও অফিসে যেতে শুরু করেছে। যদিও এদিকে বরাবরের মতো ওর মন নেই। হিমু সে চাইলেও হতে পারছে না। শ্রাবণীর বেঁধে দেয়া সাত দিন চলে যাচ্ছে। আর দুইদিন বাকি।
মনে মনে কী সে হার মেনে নিয়েছে! মস্তিষ্ক মানতে না চাইলেও অবচেতন মন যেন হার-ই চাইছে। ‘হার মানা হার ওগো পরেছি গলে’ এই গানটা কেন যেন আচমকা মনে বেজে উঠল। অথচ সে এখন অফিসে। ভীষণ সিরিয়াস একটা কাজ করছিল। এরমধ্যে এমন ভাবনা মাথায় ঘুরঘুর করার কোনো মানে হয়! ধূর!
তুড়ি মেরে সেই ভাবনাকে পাশ কাটাতে চাইলেও নচ্ছার ভাবনা এত সহজে কী পিছু ছাড়ে। মেয়েটার বাস্তবের মতো কল্পনাতেও মহা ফাজিল। তবে জীবনের কোনো এক সময় যখন প্রথম অনুভূতি বুঝতে শিখেছিল, তখন কীভাবে যেন শ্রাবণীকেই অন্য চোখে দেখেছিল। কেন সে জানে না। মেয়েটা ভীষণ অকপট। তবুও যেন দুর্বোধ্য। ঠিক পড়া যায় না। এই মেয়েকে চাইতেও সাহস লাগে, ফিরিয়ে দিতে আরও বেশি সাহসী হতে হয়।
সেদিক থেকে চিন্তা করলে মিরান সাহসী তো বটেই।
বসের ঝাড়ি আজও খেয়েছে, এরপর বাসায় এসে এমন অত্যাশ্চর্য ঘটনার সাক্ষী হতে হবে মিরান কল্পনাও করেনি। এই মেয়ের অসাধ্য কিছু নেই, সাথে পুঁচকে দুটোকেও কেমন হাত করে নিয়েছে!
……
(ক্রমশ)