শেষ পাতার তুমি পর্ব-২৮ এবং শেষ পর্ব

0
1486

#শেষ_পাতার_তুমি
#ফারিয়া_আফরিন_ঐশী
#পর্বঃ২৮ (অন্তিম পর্ব)

শান্ত গাড়ি নিয়ে রায়ানদের বাড়ির সামনে এসে থামলো।

বাড়ি এসে বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়ে গাড়ি নিয়ে আবারও চলে গেলো।

শান্ত পাগলের মতো রায়ানকে খুঁজে চলেছে।

অপরদিকে,

গুলশানের বাড়িতে,

রায়ানকে ধরে কাঁদছে তার মা।

বাড়িতে আগুন লাগার আগেই জুবায়ের এর লোকজন তাদের অন্য জায়গায় নিয়ে গিয়েছিলো তারপর জুবায়ের এখানে নিয়ে এসেছে।

আয়ানার সেন্স ফিরেছে কিছুক্ষণ আগে।

রায়ান রেশমিকে শান্ত করে বলল–আর কেঁদো না মা।সব ঠিক আছে।

আরও বেশ কিছু আলোচনার পর রায়ান আর আয়ানাকে রেখে বাকিরা চলে গেলো অন্য ঘরে।

রায়ান আয়ানার পাশে বসে তার কপালে হাত দিয়ে বলল–জ্বরটা নেই।

আয়ানা রায়ানের বাহু জড়িয়ে কাঁধে মাথা দিয়ে বলল–আমার জন্য আপনাদের কতো কষ্ট পেতে হলো আর এখন দেশও ছাড়তে হবে।

রায়ান–তোমার জন্য সব ছাড়তে রাজি আমি।

আয়ানা হুহু করে কেঁদে দিলো।

রায়ান আর বাঁধা দিলো না।একটু কান্না সবারই প্রয়োজন।

৭ দিন পর,

শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সবাই দাঁড়িয়ে আছে।

এই ৭ দিন খুব ভয়ে ছিলো রায়ানরা।

আজ জুবায়ের এর সাহায্য নিয়ে বিমানবন্দরে চলে এসেছে।

শান্তকে জেলে রাখা হয়েছে তবে খুব সম্ভব কালই ছাড়া পেয়ে যাবে।

রাত ১.৩০ টার ফ্লাইটে উঠে রায়ানরা রওনা হলো তাদের গন্তব্যে।

রায়ানের কাঁধে মাথা রেখে প্লেনের জানালা দিয়ে রাতের আকাশ দেখতে ব্যস্ত আয়ানা।

রায়ান–এতো চিন্তা করো না,সব ঠিক হবে এবার থেকে।

আয়ানা মাথা তুলে মুচকি হেসে আবারও আকাশ দেখতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো।

দীর্ঘ ১৩ ঘন্টার জার্নি আর কাগজপত্রের কাজ শেষ করে কানাডিয়ান সময় বিকাল ৪ টায় রায়ানরা পৌঁছালো কানাডার টরেন্টো শহরে।

তাদের এয়ারপোর্ট থেকে নিতে এসেছে জুবায়ের-এর বোন।

গাড়িতে উঠেই দাদী–কি ঠান্ডা রে বাপু এহানে?টিকুম কেমনে?

রায়ান–আরে টিকে যাবা, সমস্যা নাই।

জুবায়ের এর বোন সারার বাড়িতে রায়ানরা উঠেছে আপাতত।

বেশ সুন্দর গোছানো বাড়ি, সারা আর সারার ছেলেই থাকেন এ বাড়িতে।

বেশ জার্নি করে আসায় রায়ানরা খেয়ে রেস্ট নিতে চলে যায়।

পরদিন,

সকাল বেলা জুবায়ের এর ফোনে জানতে পারে শান্ত জেল থেকে ছাড়া পেয়েছে তবে ওরই কোনো লোক ওর ওপর এ্যাটাক করেছে, এখন হাসপাতালে ভর্তি।

বেশ গুরুতর অবস্থা।

কথাটা শুনে বাড়ির সবাই দীর্ঘশ্বাস নিলেও মনে মনে স্বস্তি পেলো।

আজকের সকালটা তাদের জীবনে এক নতুন জীবনের আগমনী বার্তা।

প্রায় বছরখানিক পর,,

রায়ান সারার সাহায্য নিয়ে এখন কানাডার এক স্বনামধন্য কোম্পানিতে বেশ ভালো পর্যায়ে চাকরি করছে।

আয়ানা পড়াশোনা করছে,রেশমি আর রেদোয়ান বেশ আছে,সারাদিন বিদেশী শহর ঘুরে,বাড়িতে কাজ করে সময় যায় তাদের।

দাদি এখন আগের মতো হাঁটতে পারেন না।তাই তিনি সকাল হলেই কারো সাহায্য নিয়ে বাঙালি মহিলারা যেখানে নানা হস্তশিল্পের কাজ করেন সেই ট্রেনিং সেন্টারে চলে যান।

রাতে খাবার টেবিলে,

রেদোয়ান –বাবু,তোর আর আয়ু মা র তো ৩য় বিবাহবার্ষিকী তো সামনে।গত ২ বার ঝামেলাতে কোনো উদযাপন হয়নি।এবার তো কিছু করি আমরা।

রায়ান–আমিও ভেবেছি বাবা।

দাদি–দ্যাশের কথা খুব মনে পরে রে।মরার আগে একবার যাইতে পারলি ভালো হইতো।

রেশমি–মা,এভাবে বলবেন না।আমরা যাবো দেশে।

আয়ানার মা–চিন্তা করবেন না খালা,শান্ত টার শুনেছি যাবত জীবন কারাদন্ডের ঘোষণা দিয়েছে।

রায়ান–তাও এই মুহূর্তে না যাওয়া ই ভালো কারণ শান্তর তো লোকের অভাব নেই।

দাদি–শয়তান ছেড়া।।জেবনডা তেনা তেনা কইরা দেলো।।দাদু তুই যা দেখ ওই মাইয়াডা আবার ঘরে ঘুম।

রায়ান–হুমম দাদি।

রায়ান ঘরে এসে দেখে আয়ানা মুখের ওপর বই রেখে বেঘোরে ঘুমাচ্ছে।

রায়ান–এই মেয়ের বলে সপ্তাহবাদে পরীক্ষা, দেখো কেমনে ঘুমাচ্ছে।

রায়ান কাছে গিয়ে আয়ানার মুখ থেকে বই সরিয়ে আয়ানাকে ঠিক শুইয়ে কপালে ঠোঁট ছুয়ে দিয়ে আলো নিভিয়ে শুয়ে পরলো।

পরেরদিন,

আয়ানা দ্রুত রেডি হচ্ছে আর রায়ান সোফাতে বসে চা খাচ্ছে আর তা দেখছে।

আয়ানা ব্যস্ত সুরে–তুমি বসে আছো কেনো?অফিস যাবে তো নাকি?

রায়ান উঠে এসে আয়ানাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে কাঁধে মুখ গুজে দিলো।

আয়ানা আরও ব্যস্ত হয়ে–আজব তো! ভার্সিটি যাবো আমি ছাড়ো।তোমারও তো অফিস আছে।

রায়ান ফিসফিস কন্ঠে বলল–আজ সানডে আয়ু।

আয়ানা খানিক থমকে দাঁড়িয়ে, মুখ কাচুমাচু করে বলল–এটা রেডি হওয়ার আগে বলতে,আমি আরও খানিক ঘুমিয়ে নিতাম।

রায়ান আয়ানার কাঁধে ঠোঁট ছুয়ে দিয়ে বলল–ম্যাডামের তো আজকাল কোনোদিকে নজর নেই,,আমি বেচারা স্বামী কতক্ষণ বসে আছি তার খেয়ালই নেই।(বাচ্চাদের মতো মুখ করে)

আয়ানা ফিক করে হেসে বলল–আহারে! খুব কষ্ট তো আমার বরের।

রায়ান–অনেক! দাও এখন আদর করে আমার কষ্ট দূর করে দাও।

আয়ানা–মোটেই না।রেডি যখন হয়েছি তখন ঘুরতে নিয়ে চলো আমায়।আমি গিয়ে মা,বাবা কে রেডি হতে বলি।

বলেই রায়ানকে জোর করে ছাড়িয়ে চলে গেলো।

রায়ান ও একটু ফ্রেস হয়ে রেডি হতে চলে গেলো।

বাড়ির সবাই মিলে আজ এসেছে টরেন্টো থেকে একটু দূরে নায়াগ্রা জলপ্রপাত দেখতে।

অবাক নয়নে চেয়ে দেখছে সবাই বিশাল এই জলরাশির খেলা।

সারাদিন ঘোরাফেরার পর বাড়িতে ফিরলো সবাই।

রায়ান আর আয়ানা ফ্রেস হয়ে কফি নিয়ে তাদের বারান্দাতে বসে আছে।

আয়ানা রায়ানের কোলে বসে আছে।

আয়ানা–একটা কথা বলবো তোমায়?

রায়ান আরও একটু গভীর করে জড়িয়ে ধরে বলল–পারমিশনের কি আছে?বলো তুমি।

আয়ানা–আমি একটা বেবি চাই রায়ান।

আয়ানাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে হাতের মাঝে মুখটা নিয়ে বলল–কিন্তুু আমি যে চাই তুমি পড়াশোনা করে,নিজের পরিচয় গড়ে তোলো।এখনি বাচ্চা নিয়ে তোমাকে ঘরে আটকাতে চাই না আমি।

আয়ানা দ্রুতগতিতে মাথা নাড়িয়ে বলল–কোনো অসুবিধা হবে না।বাড়িতে মা- বাবা তো আছেই বেবিকে সামলাবে।

রায়ান–আয়ু,সবাই সামলায় কিন্তুু পরিশেষে একটা বাচ্চার কিন্তুু মা কে সবচেয়ে বেশি দরকার।পড়াশোনা করতে গেলে বাচ্চাকে অবহেলা করা হবে আবার বাচ্চা দেখতে গেলে পড়াশোনার ক্ষতি হবে।আর তাছাড়া অনেক সময় আছে।

আয়ানা মনটা খারাপ করে রায়ানের বুকে মাথা দিয়ে পরে রইলো।

রায়ান বুঝেও চুপ করে রইলো।

বেশ ব্যস্ত সময় কাটিয়ে সবাই প্রায় হাপিয়ে উঠেছে।

আয়ানা পুরো হাত পা ছড়িয়ে পরে আছে বিছানাতে পরীক্ষা শেষ হয়েছে তার।

বিছানাতে শুয়ে দাদির কথাগুলো কিভাবে রায়ানের সামনে বলবে তা ভাবছে।

এরই মাঝে দরজা ঠেলে রায়ান ভেতরে এলো।

আপেল মুখে পুরে বলল–কি ব্যাপার?এভাবে শুয়ে আছো কেন?

আয়ানা চোখ পাকিয়ে তাকিয়ে আবারও ঘুরে শুয়ে পরলো।

রায়ান–আজব তো! রাগ দেখাচ্ছো কেন?

আয়ানা একটু কড়া কন্ঠে বলল–জানো না কেন?

রায়ান এগিয়ে এসে আয়ানাকে কোলে নিয়ে বলল–জানি তো মিসেস।

আয়ানা–নামাও আমায়।

রায়ান কোনো কথা ছাড়া৷ আয়ানাকে নিয়ে গেস্টরুমের বারান্দার দিকে গেলো।

বারান্দাতে এসে আয়ানাতো পুরো থ!

বারান্দাটা বেলুন দিয়ে সাজানো।ছোট ছোটো মোমবাতি জ্বলছে।

ছোট্ট একটা কেক রাখা।

আয়ানাকে নামিয়ে রায়ান জড়িয়ে ধরে বলল–হ্যাপি এ্যানিভার্সারি আয়ু।

আয়ানাও মুচকি হেসে রায়ানকে উইশ করলো।

মুখটা ফুলিয়ে বলল–খানিক পরই ১২ টা বাজবে আর বিবাহবার্ষিকী শেষ, উনি সারাদিন পর এখন আয়োজন করেছেন।

রায়ান–তুমি তো আমার চিরদিনের সাথী।রোজই আমাদের বিবাহবার্ষিকী কারণ নিত্যদিন নতুন করে আমি তোমায় পেতে চাই।কারণ আমার ডায়েরির শেষ পাতায় শুধু তুমিই।আমার #শেষ_পাতার_তুমি

আয়ানা রায়ানকে জড়িয়ে ধরলো।

আয়ানা–আমিও তোমায় পেতে চাই সবসময়।

#সমাপ্ত।