শ্রাবণ কিংবা ফাগুন একটুখানি বর্ষণ পর্ব-১৯+২০+২১

0
575

#শ্রাবণ_কিংবা_ফাগুন_একটুখানি_বর্ষণ
প্রভা আফরিন
[১৯]

গাট্টাগোট্টা, আভিজাত্যপূর্ণ মহিলাটির নাম শায়লা। সম্পর্কে প্রিয়ার চাচি হয়। মধ্যবয়স্ক হলেও শরীরের গাঁথুনি মজবুত। চেহারা ক্ষুরধার। তিনি ছোটো জা মুনিরা বেগমের শিয়রে বসে আছেন। অবজ্ঞার চোখে দেখছেন চারিদিক। মুখভঙ্গি বলে দিচ্ছে এমন স্থানে তিনি জীবনেও পা রাখেন না। আজ চারমাস পর হুট করে ছোটোজায়ের সংসার দেখতে ইচ্ছে হলো। তাই সাতসকালে চলে আসা।
সাড়হীন দুটি পা নিয়েই মুনিরা উনার বড়ো জাকে যথাসাধ্য আপ্যায়ন করার চেষ্টায় মত্ত। প্রিয়াকে নির্দেশ দিলেন বড়ো চাচিকে সকালের নাশতা দিতে। প্রিয়া সকালের রান্না ইতিমধ্যে করে ফেলেছে। ভাত, আলুভর্তা, ডাল। বিলাসী বড়ো চাচির মুখে তা রুচবে না জানা সত্ত্বেও সাধল। শায়লা বললেন,
“খাব না বউ। বাড়ি থেকে খেয়ে বের হয়েছিলাম। তোমাগো টানাটানির সংসার। আমার জন্য খরচ করার দরকার নাই। হাবিবটা যে লোভে পইড়া কি ভুল করল। চাঁন্দের মতো দুই মেয়ের ঠাঁই হলো বস্তিতে! গুষ্টির মাঝে জীবনে যা না হইছে।”

কথাগুলো শুনে মুনিরা অধোবদন হলেন। ক্ষীণ স্বরে প্রতিবাদ করে বললেন,
“ভাবী, আপনি তো জানেন উনি এমন না।”
“থাক বউ, তুমি আর শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা কইরো না। পুলিশ তো আর ঘাসে মুখ দিয়া চলে না। দোষ করছে বলেই ধরে নিয়ে গেছে। আসলে দোষটা হইল লোভের। এই রিপু মানুষরে ধরলে আশেপাশের মানুষেরও নিস্তার নাই।”

প্রিয়া তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে কথাগুলো শুনছিল। মায়ের মিনমিনে স্বভাবটা তার বিরক্ত লাগছে। চাচি সম্পর্কের এই জাদরেল মহিলাটি সারাটা জীবন সংসারে একা ছড়ি ঘুরিয়েছে। তার মাকে দমিয়ে রেখেছে। আর এই মহিলার কূটকৌশলেই আজ তারা বাড়ি ছাড়া। বাবার কর্মকাণ্ড ছিল বাহানামাত্র। কোটি টাকার সম্পত্তি একা গলাধঃকরণ করতে ছোটো জা’কে ছেলেমেয়েসহ বাড়ি ছাড়া করেছেন। একটা আসবাব পর্যন্ত সঙ্গে দেয়নি। এখন এসেছেন লোভের ফিরিস্তি দিতে! মানুষ অন্যের দিকে একটা আঙুল তোলার সময় নিজের দিকের চারটে আঙুলের কথা বেমালুম ভুলে যায়।
প্রিয়া ভেজা চুল মুছতে মুছতে ভাবলেশহীন গলায় বলল,
“ঠিকই বলেছেন চাচি, লোভ যে কখন কাছের মানুষের কদর্য চেহারা দেখিয়ে দেয় ভাবা যায় না। ভাগ্যিস আমাদের লোভ নেই। তাই স্বার্থপরতা করতে পারি না। আবার শ’ত্রুকেও সৌজন্যতা দেখাতে ভুলি না।”
মুনিরা মেয়ের কথা শুনে ধমকে উঠলেন,
“এত কথা কীসের? দিয়া কই গেছে দেখ গিয়ে। স্কুলে যাওয়ার সময় হলো।”

শায়লা প্রিয়ার কথায় যেন দেশলাইয়ের মতো দপ করে জ্ব’লে উঠলেন। সঙ্গে সঙ্গে নিজেকে সামলেও নিলেন। বললেন,
“সকাল সকাল গোসল দিছিস কেন? কোনোখানে যাবি?”
“আমার তো আর বাবার কামাই নেই, শ্বশুরের কোটি টাকার সম্পত্তিও নেই যে সবাইকে বঞ্চিত করে জীবনভর ভোগ করব। তাই সংসারের হাল নিজের কাঁধে তুলে নিতে হয়েছে।” কথাটা বলতে গিয়েও গিলে ফেলল প্রিয়া। মুখে মুখে তর্ক করাটা সে এখনো শেখেনি। ছোটো করে বলল,
“কাজে যাব, চাচি।”
শায়লা ঠেস দিয়ে বললেন,
“তা কি কাজ করিস? গার্মেন্টসে যাস? নাকি অন্যকাজ?”
“হালাল উপার্জন করি, হালাল খাই।”
“কয়দিন বস্তিতে থেকেই ত্যারা সুরে কথা বলা শিখে গেছিস?”

মুনিরা বেগম মেয়ের ওপর আরেকদফা বিরক্ত হয়ে জাকে কাজের ফিরিস্তি দিলেন। শুনে শায়লা হায় হায় করে উঠলেন,
“এত উঁচু বংশের মেয়ে কিনা বাবুর কেয়ারটেকারের কাজ করে! গুষ্টির গৌরব সম্মান আর রইল নারে বউ।”
প্রিয়ার ঠোঁটে তাচ্ছিল্যের হাসি উঁকি দিয়েও সংবরণ হয়ে যায়। বলল,
“গৌরব তো আমাদের খেয়ে-পড়ে বাঁচতে দেয়না, চাচি। তাই সম্মানটা ধরে রেখে বেঁচে থাকার তাগিদে ছুটছি।”

প্রিয়া স্বভাবের অশিষ্টতা সংবরণ করে ঘর ত্যাগ করে কাজে রওনা হলো। ওকে চলে যেতে দেখে শায়লা যেন আরাম পেলেন। প্রথমে একটু শঙ্কিত ছিলেন এরা উনাকে সহজভাবে মেনে নেবে কিনা। মুনিরা তাকে এখনো আগের মতোই মান্য করে এটা বুঝতে অসুবিধা নেই। তিনি মুনিরার হাত ধরে বললেন,
“শুনো বউ, ভাগ্যের লিখন কেউ খন্ডাইতে পারে না। তোমার ভাগ্যে এই বস্তির বাস লেখা ছিল, তাই এখানে আইসা পড়ছো। কিন্তু তোমার দুইখান মেয়ে আছে। একজন যুবতী। আরেকজনও প্রায় ডাঙ্গর হইয়া সারল। বস্তির অজাতকুজাত মানুষের বিশ্বাস নাই। তারওপর তোমাগো উপরে পুরুষের ছায়াও নাই। বিপদ হইতে সময় লাগব না। তাই সম্মান থাকতে পদক্ষেপ নেও। আমার ভাইস্তা বদরুল তোমার মেয়েরে পছন্দ করছে। চাহিদা থাকতে বিয়াটা দিয়ে দাও।”

মুনিরা অবাক হয়ে বললেন,
“বদরুল? ওর না আগে একটা বিয়ে আছে।”
“তালাক হইছে, তাতে কী? বাপ জে’ল খাটা জানলে কেউ তোমার মেয়ে ঘরে তুলব মনে হয়? কানা খো’ড়াও জুটব না। বদরুল প্রিয়ারে ছোটোকাল থেকে পছন্দ করে দেখেই বিয়া করতে চাইছে। বনেদি বাড়িঘর। বাপের মাছের খামার আছে, দুইটা ধানের মিল আছে। প্রিয়ার সাথে বিয়া হইলে তোমাগোও আর বস্তিতে পইড়া থাকা লাগব না। ভাইবা দেখ বউ।”
শায়লার কথা শেষ হলেও মুনিরা কোনো শব্দ উচ্চারণ করলেন না। একটু সময় নিয়ে বললেন,
“ভেবে দেখি।”
________________

টুকটুকির চোখদুটি র’ক্তলাল। চোখের কোটর ফুলে আছে। যে কেউ দেখলেই বুঝে যাবে মেয়েটা সারারাত কেঁদেছে। কাঁদারই কথা। গতরাতে রিতা আন্টি তার বাবা-মায়ের সঙ্গে কথা বলে বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার পরও উনারা কেউ টুকটুকির সঙ্গে বাক্যালাপ করেনি। অদ্ভুত নিরবতা চারিদিকে ছেয়ে গেছে যেন। টুকটুকি গতরাতেই দেখেছিল মায়ের সজল চোখ। তার বেখেয়ালি কাজের জন্য মা কেঁদেছেন। বাবাও নিশ্চয়ই আহ’ত হয়েছিলেন। হুট করে ঘটানো কাজটার প্রতিক্রিয়া ঠিক কতটা সুদূরপ্রসারী সেই আন্দাজ তার মাথায় ছিল না। অনুতাপে সারাটি রাত কেঁদেও যেন নিজেকে বোঝাতে পারছে না। রিতা আন্টি সকালে আবারো এলেন টুকটুকির খোঁজ নিতে। গতরাতের ওর পরিবারের শীতল ব্যবহার পেয়েই মন বলছিল মেয়েটা ভীষণ কষ্টে আছে। উনাকে দেখেই টুকটুকি আবারো কেঁদে উঠল।
“আমার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে, আন্টি। বাবা-মা আমার সঙ্গে কথা বলছে না। আদর করছে না, বকছেও না। আমার দমবন্ধ লাগছে।”

টুকটুকির বাবা-মায়ের রাগের কারণ রিতা আন্টি ভালো মতোই বোঝেন। মেয়ের দস্যিপনার কারণে পাত্রপক্ষের সামনে হেয় হতে হয়েছে। সেই সঙ্গে বাতাসে রটেছে নিশীথের সঙ্গে পালিয়ে যাওয়ার সংবাদ। মূল ভুক্তভোগী যেন মেয়েরই পরিবার। দুই বছর আগে স্থায়ী হওয়া প্রতাপশালী রাজনীতিবিদের বোন রিতার সঙ্গে স্থানীয়রা মুখ খুলে কথা বলতে না পারলেও অপর স্থায়ী বাসিন্দাকে বাঁকা কথা বা দৃষ্টি কোনোটাই দিতে কার্পণ্য করছে না। যদিও মিথ্যা রটনা কিন্তু একটি মেয়ের জন্য এর ফলাফল মোটেও সুখকর নয়। টুকটুকির কান্নায় ফুলে ফুলে আসা পিঠে হাত বুলিয়ে রিতা আন্টি ঠিক সে মুহূর্তেই কোনোরূপ পরামর্শ বা মতামত ছাড়াই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিলেন। ফোন করে ডাকলেন নিজের মেয়র ভাইকে। সেদিন বিকেলে দুই পরিবারের বৈঠক হলো। বৈঠকের মধ্যমনি ছিলেন নিশীথের মামা জহিরুদ্দিন হাওলাদার। কিছু অবরুদ্ধ সময় পার করে, ছেলে-মেয়ে ও দুই পরিবার দিক বিবেচনা করে রিতা ভাইয়ের মাধ্যমে ছেলের জন্য টুকটুকির হাত চেয়ে প্রস্তাব রাখলেন। মেয়েপক্ষকে ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত জানাতে সময়ও দিলেন।

নিশীথ সেই সংবাদ শুনে সবিস্ময়ে বলল,
“একটা মিথ্যা রটেছে। সেটাকে চাপা দিতে তোমরা শেষমেষ মিথ্যাটাকেই সত্যের সমান জোরাল করে দিচ্ছো মা! লোকে ভাববে কিছু ঘটেছে বলেই বিয়ে হচ্ছে।”
“একটা বাড়ি তৈরি করতে দিনের পর দিন সময় লাগে কিন্তু ভাঙতে একটা বি’স্ফো’রণই যথেষ্ট। ঠিক তেমনই সম্মান, মর্যাদা গড়তে বছরের পর বছর লেগে যায়। কিন্তু দুর্নাম হতে সময় নেয় মুহূর্তকাল মাত্র। আজ তুই টুকটুকিকে বিয়ে করতে অনায়াসে মানা করতে পারবি। প্রতিবেশীরা আড়ালে ফিসফাস করে শান্ত হয়ে যাবে। কিন্তু দুর্নামের ঘা কিন্তু গা থেকে যাবে না। সময় সুযোগ পেলেই অন্যরা খুঁ’চিয়ে তুলবে। তোর বিয়ে নিয়ে আমায় ভাবতে হবে না। কারণ আমরা শক্ত। কিন্তু তোর নাম জড়িয়ে অন্য একটা মেয়ের জীবনে বারবার ঘা’য়ের সৃষ্টি হবে। কারণ ওরা নরম। এবার এই ঘা’য়ের উপশম যদি আমার সিদ্ধান্তের চেয়েও ভালো উপায়ে করতে পারিস তবে বলিস। কিন্তু মনে রাখিস তোর যেকোনো সিদ্ধান্ত টুকটুকির জীবনের ওপর একটা দীর্ঘস্থায়ী প্রতিক্রিয়া বয়ে আনবে।”
কথা শেষ করে রিতা চলে গেলেন। বাবার মৃ-ত্যুর পর আজ অনেকদিন বাদে নিশীথ তার মাকে শক্ত শক্ত কথা বলতে শুনল। সে শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। এই পরিস্থিতির উপশম যে তারও জানা নেই।
_________________

নন্দিনীর হসপিটালে দ্বিতীয় দিন আজ। দিগন্ত সারাদিন ওর পাশে ছিল। টেস্ট করিয়ে আরো দুটো মেডিসিন এড করা হয়েছে প্রেসক্রিপশনে। অনুভব একটু আগেই বাড়ি ফিরে গেছে। নন্দিনীর পাশের বেডের একটা মেয়ের কড়া গলা শোনা যাচ্ছে। বয়স আঠারো কি উনিশ হবে। মাথা ফাটিয়ে এডমিট হয়েছে। কথার ধরনেই বোঝা যাচ্ছে ভিডিও কলে বয়ফ্রেন্ডকে ঝারছে। নন্দিনী ও দিগন্ত তখন টুকটুকির চিন্তায় মশগুল ছিল। চিন্তায় বাধা পড়ল আচমকা মেয়েটির কথা শুনতে পেয়ে। সে ব্যাক ক্যামেরা ওদের দিকে তাক করে বলল,
“দেখো, বয়ফ্রেন্ড এমন দায়িত্ববান হওয়া উচিত। ভাইয়াটা এক মুহূর্তের জন্যও আপুকে চোখের আড়াল করছে না। মুখে তুলে খাইয়ে দিচ্ছে। পাশে বসে গল্প করছে যেন আপুটার লোনলি ফিল না হয়। ওরা কত্ত সুইট, কেয়ারিং কাপল। আর তুমি আছ নিজের লাইফ নিয়ে। এই তোমার ভালোবাসা?”

নন্দিনী আর দিগন্ত একে অপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করল। এরপর যে এক্সপ্রেশন দিল তাতে একটু আগে তাদের প্রশংসা করা মেয়েটাও ভড়কে গেল। দিগন্ত লাফ দিয়ে বেড থেকে উঠে গেল। এরপর নন্দিনীর দিকে তাকিয়ে বিদঘুটে মুখ করে বমি করার ভান করল।
“আমার রুচি এতটাও নষ্ট না, ইয়াক!”
অনুরূপ ভঙ্গি নন্দিনীও করল। যেন একটু আগে গিলে নেওয়া সব খাবার নাড়ি উল্টে চলে আসবে। নাক চেপে গন্ধ দূর করার চেষ্টা করে বলল,
“আরে ইয়ার, লেভেল বইলা একটা ব্যাপার আছে। এইসব খা’চ্চর মার্কা পোলাপাইনের লগে… কল্পনাও ভয়ং’কর!”

দিগন্তের গায়ে লাগল কথাটা। তেড়েমেড়ে আবারো কাছে এলো। চোখের সামনে তর্জনী নাচিয়ে বলল,
“খুলনার মেয়ে আমারে লেভেল চেনাস? তোরা নামেই খুলনা, খুল্লামখুল্লা স্বভাব তো হবেই। আর আমাদের জেলার নামই ঢাকা। তাই আমাদের আচরণও খানদানি, শালীন, পর্দাশীল।”
নন্দিনী হাত তালি দিয়ে হাসল,
“নাইস জোক, হালুইম্মা। ঢাকার পর্দা বি লাইক, মনের পর্দাই বড়ো পর্দা। হা হা!”
দিগন্ত দমে গেল না, “আর তুই খা’চ্চ’রমার্কা কাকে বললি? আমার মতো শুদ্ধ, নম্র, ভদ্র চরিত্রের তোর একটা এক্স দেখাইতে পারবি?”
“আমার এক্সগো চরিত্রে গন্ধ থাকলেও গায়ে অন্তত দুর্গন্ধ আছিল না। চকবাজারের দুই নাম্বার বডি স্প্রে মাখলেও ঘামের গন্ধ পাইতে দেয় নাই। আর তুই হালা কোটিপতির পোলা হইয়া বগলে গন্ধ লইয়া ঘুরোস। এইবার বুচ্ছি, কিপটামি কইরা টেকার মালিক হইছোস। শিকুরে দেইখাও তো কিছু শিখবার পারোছ। ফকির হইলেও এমন ভাব লইয়া চলে যেন মন্ত্রীর পোলা।”
“নি’ম’কহারাম, বে’ই’মান, অকৃতজ্ঞ! তোর পেছনে ছোটাছুটি করে ফ্রেশ হওয়ার সুযোগটা পর্যন্ত পাইনি। আর তুই লু’লা ঠ্যাং নিয়ে গন্ধের খোঁটা দেস! সকালে যে দাঁত মাজোস নাই, দাঁতের রঙ হলুদ হয়ে আছে। আমি কি বলছি? বলি নাই। কারণ আমার সহবত জ্ঞান আছে।”
নন্দিনী মুখ বিকৃত করে ভে’ঙচিয়ে বলতে লাগল,
“ওরে আমার সহবতের শরবতওয়ালা। আমি যদি একসপ্তাহ দাঁত না মাজি তবুও ঠোঁটে চুম্মা খাওয়ার মানুষের অভাব হইব না। আর তুই চব্বিশ ঘন্টায় গোসল না করলে মাইয়া তো দূর আশেপাশের পোকামাকড়ও টিকতে পারব না। হালা খ’বিশ!”

উভয়ের দৃষ্টি শাণিত, জেদে টইটম্বুর। কেউ কাউকে একচুলও ছাড় দিতে নারাজ। দিগন্ত এবার নন্দিনীর মুখের ওপর ঝুকে এলো। দাঁতে দাঁত চেপে উচ্চারণ করল,
“ম’দ তো চিনিসই। বাংলা ম’দ অনেকদিন পচিয়ে বানানো হয়। গন্ধ অনেক। তবুও নে’শারু, মা’তালরা অমৃতের মতো খায়। তোর ঠোঁটও ওইরকম।”
বলে দিগন্ত আর এক মুহূর্তও দাঁড়াল না। তার অভিজ্ঞতা আছে নন্দিনী রেগে গেলে এমন কথাও বলতে পারে যে লজ্জায় মুখ লাল হয়ে যাবে। তবে অনেকদিন পর ঝ’গড়ায় মাত দিতে পেরে নিজেই নিজের পিঠ চাপড়ে দেয় দিগন্ত। এই খুশিতে নিজেকে ভারসাচি কিংবা স্পাইসবম্ব ভিক্টর অ্যান্ড রলফ এর নিউ পারফিউম এডিশন গিফট করবে ভাবছে।

পাশের বেডে মাথায় ব্যান্ডেজ করা মেয়েটি তখন স্তব্ধ। বয়ফ্রেন্ডকে পুনরায় কল করে আদুরে স্বরে বলল,
“হ্যালো জান, তখনকার ব’কাব’কির জন্য সরি। তুমি যে আমার সঙ্গে তর্ক করো না এরজন্য স্পেশাল একটা থ্যাংকস তোমার প্রাপ্য…”

চলবে…

#শ্রাবণ_কিংবা_ফাগুন_একটুখানি_বর্ষণ
প্রভা আফরিন
[২০]

প্রিয়া ফুটন্ত তেলে জলের ছিঁটে পড়ার মতো ছ্যাঁত করে উঠল। দুঃখে কান্না পাচ্ছে। তার চেয়েও বেশি রাগ হচ্ছে মায়ের ওপর। বড়ো চাচির এহেন প্রস্তাব তিনি কী করে আশকারা দিলেন প্রিয়ার বুঝে আসছে না। প্রিয়ার নধর দেহে যখন সদ্য কৈশোরের স্পর্শ লেগেছে তখন থেকেই ল ম্প ট বদরুলের নজর তার ওপর। লোকটির চারিত্রিক বৈশিষ্টের জন্য তার উপস্থিতিতে মেয়েদের তিন নম্বর অদৃশ্য চক্ষু সর্বদাই সচেষ্ট থাকে। বড়ো বংশে বিয়ে দিয়ে বউ এনেছিল। কিন্তু দু’শ্চ’রিত্রতায় সংসার টেকেনি। এখন চাচি বলির পাঠা হিসেবে তাড়িয়ে দেওয়া দেবরের মেয়েকেই আগে পেয়েছে। প্রিয়া আগেই বুঝেছিল স্বার্থবিনা যিনি এক গ্লাস পানি কাউকে এগিয়ে দেন না তিনি বিনা মতলবে এই স্যাঁতসেঁতে, চিপাগলি মাড়ায়নি।
দিনের সূর্য ডুবুডুবু হতেই প্রিয়া ক্লান্ত দেহে বাড়ি ফিরে গায়ের জামাটাও ছাড়েনি, এসব শুনে মেজাজ স্থির রাখতে পারল না। উষ্ণ কণ্ঠে বলল,
“ভেবে দেখবে মানে? ওই মহিলা সমানে বাজে কথা বলে গেল আর তুমি জি হুজুর জি হুজুর করে গেলে?”

মুনিরা বেগম অসহায়। সারাজীবন সংসারে যে জায়ের মতামতকে তিনি শিরোধার্য মনে করে এসেছেন আজ হুট করে তার মুখে মুখে কথা বলার সাহসটা তিনি করে উঠতে পারেননি। চিত্ত গুড়িয়ে দেওয়া মর্মর আ’ঘা’ত সহসাই অভ্যাসকে ভাঙতে পারে না। তাই বড়ো জায়ের অ’ন্যায়ের পরও মুনিরা পারেনি কঠোরতা প্রদর্শন করতে। নিজের ব্যর্থতা হিসেবেই মানলেন তিনি। বললেন,
“বে’য়া’দবি করলে আমার আর উনার মাঝে ফারাক কোথায়, প্রিয়া? নাকি অকথ্য গা লি গালাজ করলে আমাদের আগের দিন ফেরত আসবে? তোর বাবা সুযোগ দিয়েছে বলেই উনি আমাদের ওপর অ’ন্যায় করতে পেরেছে। আল্লাহ পা’পের শা’স্তি কিংবা ধৈর্যের পরীক্ষা কখন কোন দিক থেকে নেয় আমরা জানি না। শায়লা ভাবী অ’ন্যায় করেছেন, সৃষ্টিকর্তা দেখেছেন। বিচার নাহয় উনিই করুক। আমাদের সেই ক্ষমতা যখন নেই শুধু শুধু অন্যকে ক্ষে পিয়ে দিয়ে নাজুক সময়ে নিজের বিপদ না ডাকাই মঙ্গলজনক। আমি কোনো মহীয়সী বলবান নারী নই যে নিজের সন্তানদের রক্ষা করতে পারব। নিজেকে রক্ষা করার ক্ষমতাও আমার নেই।”

সারাজীবন মুনিরা আদর্শ গৃহিনী হওয়ার চেষ্টা করেছেন। সন্তানদেরও আদর্শবান বানাতে চেয়েছেন। অথচ উনার সংসারেই আদর্শের চরম ঘাটতি দেখা দিল। তাছাড়া বছর চারেক আগে কোমড় হতে পা অবদি প্যারালাইজড হওয়ার পর মুনিরা নিজেকে অসহায় ভাবেন। প্রিয়া ঠান্ডা চোখে মায়ের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল,
“তুমি কী এই অসহায়ত্ব থেকে মুক্তি পেতে আমাকে ওখানে বিয়ে দেওয়ার চিন্তা করছ?”

“এতটাও অসহায় নই যে নিজের মেয়েকে দোজখে ঠেলে দেব। হারাম মাং স-পোলাউয়ের চেয়ে হালাল নুনভাতেও শান্তি। সামনাসামনি মানা করলে তোর চাচি চ্যাচামেচি করত। প্রতিবেশীর সামনে লজ্জার আবরণ খুলে দিতো। আমি নাহয় ঘর থেকে বের হই না। আমার সন্তানের দিকে কেউ খারাপ নজরে তাকাক তাও চাই না। দিয়ার বালিকা বয়স। সারাদিন এদিক সেদিক ঘোরে। এইটুকু বয়সে এমনিতেই যা দেখল… মানুষের বিদ্রুপ হজম করার মানসিকতা এখনো হয়নি। তারচেয়ে ফোনে কথা বলা উত্তম। তুই আজদিন বাদে ওই বাড়ি ফোন করিস। আমি মানা করে দেব।”

প্রিয়ার নাসারন্ধ্র পিছলে প্রলম্বিত এক স্বস্তির শ্বাস নির্গত হয়। অনুশোচনা হয় একটু আগে মানুষটাকে ভুল বোঝার জন্য। ছলছল চোখ লুকাতে সে ঝাপিয়ে পড়ে মায়ের বুকে।
_______________

“এক কোটি বছর হইয়া গেল প্রেম করি না।”

নন্দিনীর আক্ষেপে নিক্ষেপ করা শব্দে দিগন্ত অবাক হয়ে তাকায়। একটু আগেই ঘষেমেজে গোসল করে হসপিটাল ফিরেছে সে। গায়ে মেখেছে মনমাতানো সুবাস। পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় যে কেউ এই ঘ্রাণের আলিঙ্গন থেকে নিস্তার পাবে না। নন্দিনীর কথায় তাচ্ছিল্য করে বলে,
“আটচল্লিশ ঘন্টাও পুরোপুরি হয়নি।”
“কস কি মামা! প্রেম ছাড়া এক একটা মিনিটও বছরের সমান। আমার দিনগুলা কচ্ছপের গতিতে যাইতাছে। ইশ, নতুন মুরগী জুটানোর আগেই পাও টা ভাঙল!”

দিগন্ত সে কথায় পাত্তা দিল না। প্রেম নিয়ে চরম ফ্যান্টাসিতে ভুগেও আজ অবদি মন দিয়ে একটা নিখাঁদ প্রণয় যার দ্বারা হয়নি সে আদৌ প্রেমিককে ভালোবাসে নাকি শুধু প্রেম নামক শব্দটাকে তা নিয়ে দ্বিধা আছে। আবার মাঝে মাঝে মনে হয় মেয়েটা আসলে প্রেমকে তাচ্ছিল্য করতেই প্রেম করে। অদ্ভুত সব ব্যাখ্যাহীন কর্মকাণ্ড এই রমনীর। দিগন্ত নন্দিনীর পাশ ঘেঁষে বসে ওর নাকের সামনে হাত ছুড়তে ছুড়তে বলে,
“আজকের ওয়েদারটা সুন্দর না?”
“সাদা দেয়ালে ওয়েদার ফোরকাস্ট দেখায় নাকি? ওয়েট আ মিনিট…”
নন্দিনী লম্বা শ্বাস নিল। দিগন্ত প্রসন্নচিত্তে ঠোঁট এলায়। হাত উঁচিয়ে ইশারা করে বলে,
“আয় আজকে বগলের তলে। দেখ তোর এক্সগো চকবাজারের দুই নাম্বার বডি স্প্রের চাইতে বেটার কিনা।”
নন্দিনী অবহেলায় হেসে বলল,
“ইন্দুরের গায়ে দামী সেন্ট মাখলেই কি আর ইন্দুরওয়ালা ঘ্রাণ দূর করা যায়? তয় ধামাচাপা দিতে পারছোস। তুই পাস। আমারে এক শিশি হাওলাত দিস। নতুন বয়ফ্রেন্ডরে গিফটামু। বেরেকাপ হইলে আবার ফেরত নিয়া আমু।”
দিগন্ত সে কথায় পাত্তা না দিল।না। চোখ ছোটো ছোটো করে বলল,
“জীবনে একবার আমার প্রশংসা করে দেখছোস?”
“তুই মনে হয় প্রশংসার সাগরে দুইবেলা ডুবাস আমারে!”

দিগন্ত দুইগালে হাত রেখে আহ্লাদী হয়ে বলল,
“তোর লুলা ঠ্যাংটা সেই কিউট লাগতাছে। তোর উচিত মাসে মাসে ঠ্যাং ভাঙা। নে প্রশংসা করলাম।”
নন্দিনী আবেগে আপ্লুত হওয়ার ভঙ্গিতে বলে,
“হে দিগন্তসম বিশাল হৃদয়ের অধিকারী হইতে গিয়া আলমারির চিপা সমান হৃদয়ধারী হালুম। এটা কোন জাতের প্রশংসা আল্লাহ মালুম।”

তর্কের ছন্দপতন হলো। পায়েল এসেছে অনুভবের সঙ্গে। নন্দিনী কটমট করে চাইল বন্ধুর পানে। অনুভব হাত তুলে আত্মসমর্পণের ভঙ্গিতে ফিসফিস করল,
“আমি জানাইনি। হল থেকে খবর পেয়েছে।”
পায়েল নন্দিনীর পাশে বসে হালচাল জিজ্ঞেস করল। সমবেদনা জানাতেও ভুলল না। নন্দিনী শীতল চোখে চেয়ে বলল,
“পায়েল, একটা শব্দও যেন খুলনা না পৌঁছায়। মনে রেখ তুমি আমার জুনিয়র। খুলনাতেও, ঢাকাতেও, ক্যাম্পাসেও।”
সে স্বরে হুমকি ছিল বা সতর্কতা, তবে কাজ হলো। একই পাড়ায় বাড়ি কিংবা প্রতিবেশী হলেও দীর্ঘদিনের একটা দূরত্ব ও যোগাযোগহীনতা থাকায় এমনিতেও তাদের সম্পর্ক স্বতঃস্ফূর্ত ছিল না। এই মুহূর্তে তা আরেকটু প্রকট হলো। পায়েল যেন হসপিটালে থাকার আগ্রহ হারাল। পরবর্তীতে আর বাক্যালাপ হলো না তাদের। পায়েল ক্লাসের বাহানায় বিদায় নিয়ে চলে গেল।

বেলা বাড়তেই টুকটুকি এলো হসপিটালে। সেও একা নয়। রিতা আন্টি তাকে বগলদাবা করে নিয়ে এসেছেন নন্দিনীকে দেখতে। সঙ্গে বাড়ি থেকে রান্না করে খাবারও এনেছেন। নন্দিনী যেন বেঁচে গেল খাবার দেখে। হাঁপ ছেড়ে বলল,
“আন্টি, তোমার তুলনা হয় না। এরা আমাকে আজেবাজে খাবার খাইয়ে মে রে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কতদিন বাদে ঘরের খাবারের গন্ধ পেলাম।”

টুকটুকি প্রতিবাদ করে বলল,
“মোটেও তোকে কেউ আজেবাজে খাবার খাওয়ায়নি। তিনবেলা ভাজাপোড়া খেয়ে তোর পেটটাই ফাস্টফুডের দোকান হয়ে গেছে।”

রিতা আন্টি বললেন,
“তোমার বাড়ির লোক আসেনি? একা আছো হসপিটালে?”
নন্দিনী চামচ দিয়ে খাবার মুখে পুড়ে বলল,
“একা কই। এইযে আমার বন্ধু বাহিনী। পরিবারের চেয়ে কম না তো।”
নন্দিনী যে কথা এড়াতে চাইছে রিতা আন্টি বুঝলেন। তাই এ বিষয়ে আর কথা বাড়ালেন না।

টুকটুকি আজ চুপচাপ। অন্যদিনের মতো চঞ্চলতা নেই। ওর সম্পর্কে সবাই অবগত। তার জীবনে এখন শ্রাবণ চলছে। কালো মেঘের শ্রাবণ। এর বর্ষণ যেন কান্না না হয় সেই চিন্তাই সকলের। অতি আবেগপ্রবণ মানুষ শিশুর মতো সংবেদনশীল হয়। ধাক্কা সহজে সামলাতে পারে না। রিতা আন্টির উপস্থিতিতে সেই বিষয়ে কেউ কথা বলতে পারল না। টুকটুকির বিষন্ন মুখটা দেখে দৃষ্টি দ্বারা আশ্বাস দিল শুধু। নন্দিনীর পাশে রিতা আন্টি দুপুর অবদি থাকলেন। অনেক অনেক গল্প করলেন। ছুটির দিন হওয়ায় নিশীথ এসেছিল মাকে নিতে। তিনি গেলেন না। টুকটুকিকে ছেলের সঙ্গে চলে যেতে বলে ছুটলেন ভাইয়ের বাড়িতে। সেখানে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা আছে। আলোচনার বিষয়বস্তু কি হতে পারে তা সহজেই অনুমেয়। ওরা কেউ কথা বাড়াল না।

“কেমন আছ নিশীথ?”
গাড়িতে ওঠার সময় অনাকাঙ্ক্ষিত নারীর কণ্ঠস্বরে নিশীথ চমকে উঠল। পরক্ষণেই গম্ভীর কন্ঠে আরেকটু গাম্ভীর্য ফুটিয়ে উত্তর দিল,
“ভালো আছি, তুবা। তোমার কি খবর?”
“আছি ভালো। সামনের মাসে বিয়ে। এরপর জার্মানি চলে যাচ্ছি।”
“ওহহ শুভেচ্ছা!”

টুকটুকি পেছন থেকে বিষয়টা অবলোকন করল। তুবা নামের অতিশয় সুন্দরী মেয়েটি কেমন সংকোচে দেখছে নিশীথকে। নিশীথের দৃষ্টি অবশ্য ভাবলেশহীন। কিন্তু তাদের কথাবার্তায় কেমন একটা চাপা অস্বস্তি খেলে বেড়াচ্ছে, যা টুকটুকির বোধগম্য নয়। তুবা টুকটুকির দিকে নির্দেশ করে বলল,
“ও কে?”
“প্রতিবেশী।” নিশীথের সংক্ষিপ্ত জবাব।
“তুমি বিয়ে করোনি এখনো?”
“না করে আর উপায় কী। করব শীঘ্রই। যাইহোক আজ আসি।”

তুবাকে পাশ কাটিয়ে নিশীথ চলে গেল। গাড়িতে উঠে টুকটুকি নিরবতা খন্ডন করল,
“উনি কে ছিল?”
নিশীথ শক্ত মুখে বসে আছে। গরমে তার কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে। রুমাল দিয়ে মুছে অনাগ্রহে উচ্চারণ করল,
“প্রাক্তন।”

যেন কানের কাছে বজ্রধ্বনি হলো। টুকটুকি চকিতে তাকাল নিশীথের দিকে। এত ভারী শব্দ যেন সে আগে শোনেনি। অনেকটা সময় পর জড়তা ঠেলে উচ্চারণ করল,
“ব্রেকাপ হলো কেন?”
প্রশ্নটা করে টুকটুকি দ্বিধায় পড়ল ব্যক্তিগত কথা জিজ্ঞেস করা উচিত হলো কিনা। তবে নিশীথ জবাব দিল কড়া গলায়।
“কারণ তুবা রিলেশনশিপ নিয়ে ফ্যান্টাসিতে ভুগত। আমি বাস্তব দুনিয়ার মানুষ। ভালোবাসার বদলে ভালোবাসতে জানলেও, প্রেমের নামে আহ্লাদীপনা জানি না। তাই দুই মাসে মাথায় নিজে থেকেই ইস্তফা দিয়েছি। অপরিণত মস্তিষ্কের মেয়েদের ফ্যান্টাসি আমার খুবই অপছন্দ। অথচ লাইফটা আমার শেষমেষ অন্যের ফ্যান্টাসির শিকার।”

কথাগুলো গাড়ির ইঞ্জিনের শ্রুতিকটু শব্দ ও উদ্দাম হাওয়ার সঙ্গে মিশে টুকটুকির কর্ণকুহরে ঝড় তুলল যেন। অন্য সময় হলে টুকটুকি এই সুক্ষ্ম অপমানকে মোটেও ছেড়ে দিত না। তর্কে তর্কে আবারো কোনো অ নামক ট্যাগ ধরিয়ে দিত। কিন্তু আজ পরিস্থিতি ভিন্ন। বিগত দুটি দিনে চেনা পৃথিবীতে বিস্তর বদল এসেছে। কিছু দোষ, ভুলের দায়ে পাশে বসা এই কঠিন মানবটির সঙ্গে বিয়ের কথা উঠেছে। টুকটুকির বাড়ি থেকে এগোলেই চারহাত এক হবে। এমন সময় নিশীথের চোয়ালের কাঠিন্য এবং মুখ নিসৃত বাক্যগুলোর স্পষ্টতা যেন অনেককিছু পরিষ্কার করে দিল। টুকটুকি স্বাভাবিক থাকতে চাইল। কিন্তু চোখদুটি তা মানল না। অবাধ্যতা করে কোটর হতে ছলকে পড়তে লাগল নোনা জল। সে কেন রূপকথার মতো আশা করল সবকিছু? ঠিক সেই মুহূর্তে নিজেকে সংযত করে টুকটুকি দৃঢ়চিত্তে সিদ্ধান্ত নিল। আবেগে ভেসে করা ছোটো ছোটো ভুলের মূল্যতে নিশীথকে জড়াবে না সে।

চলবে…

#শ্রাবণ_কিংবা_ফাগুন_একটুখানি_বর্ষণ
প্রভা আফরিন
[২১]

আজ তিনমাস পর নন্দিনী ডান পায়ের ওপর পূর্ণ ভর দেওয়ার অনুমতি পেয়েছে। একটু একটু করে হাঁটছিল সপ্তাহ দুই ধরে। ডাক্তারের স্বীকৃতি পেতেই পাখির মতো ছটফট করে উঠল তার চঞ্চল সত্ত্বা। সুগন্ধিযুক্ত শ্যাম্পুতে গোসল করে অনেকদিন পর ত্বকের যত্নে মনোযোগী হলো। সুন্দর করে সেজেগুজে, আকাশী রঙা শাড়ি পরে বেলা এগারোটায় নিচে নামল সে। মনে হলো প্রীতিলতা হল থেকে এক টুকরো স্নিগ্ধ আকাশ নেমে এলো। খোলা চুল যেন সেই আকাশে এলোমেলো ঘুরে বেড়ানো মেঘেদের দল। চলনের মাধুর্যতা, চাহনির ঝংকার তাকে অন্যদের থেকে আলাদা করে অনায়াসে। নন্দিনী অনুভবের বাড়াবাড়ি সৌন্দর্য সহ্য করতে না পেরে মাঝেমধ্যে নিজের উজ্জ্বল তামাটে রঙ নিয়ে একটু আফসোস করে বটে। কিন্তু টুকটুকির মনে হলো এই রঙটাই ওকে দৃষ্টিমোহন করেছে। টুকটুকি মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে থাকে। নির্মেদ, নিখুঁত গড়নের সুন্দর মুখ, টিকালো নাক, পাতলা ঠোঁটের অর্ধচন্দ্রখচিত হাসি ও সরু চোয়ালের চপলতায় গায়ের চাপা রঙের জন্য তাচ্ছিল্য করার সুযোগ নেই। নন্দিনী আজ দুচোখ ভরে কাজল দিয়েছে। তিনবন্ধু ওকে ঘিরে ধরে ঘুরে ঘুরে দেখে। অনুভব শিশ বাজিয়ে গায়,
“কে তুমি নন্দিনী আগে তো দেখিনি
চলেছো এই পথে রূপে যে রঙ্গিনী
কিন্তু আমরা জানি তুমি আস্ত এক ঢঙ্গিনি…”

দিগন্ত গানের সুর ধরে বলে,
“সামনে যা দেখি জানি না সেকি
আসল কি নকল সোনা
আসল সোনা খুঁজতে গিয়ে পেলাম
ময়দা মাখা সোনা…”

এবার টুকটুকি গানের সুর ধরে,
“জীবনে কি পাব না ভুলেছি সে ভাবনা
ওহে ললনা তোমার রূপে আমি হইলাম দিওয়ানা
ও নন্দিনী তোমারে পাইতে কেন ছেলে হলাম না…”

রাস্তার মাঝে দাঁড়িয়ে তিনজন ছেলেমেয়েকে বেসুরো শব্দে ভুলভাল গান গাইতে দেখে অনেকেই চোখ ফিরিয়ে তাকায়। সিসিমপুর দলের অবশ্য সেদিকে খেয়াল নেই। তারা বন্ধুর সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে ওঠার খুশিতে স্থানকাল ভুলে হইহই করছে। টুকটুকির গানের উত্তরে অনুভব বলল,
“ওই ইচ্ছা করিস না। তাইলে তোরে ইকরির এক্স হওয়া থেকে কেউ ঠেকাতে পারত না।”
“আমি ছেলে হলে ওরে তুলে নিয়ে গিয়ে মাথায় ব ন্দু ক ঠেকিয়ে বলতাম, কবুল বল নয়তো দুরুম করে গু-লি মে-রে দারুম করে খুলি উড়িয়ে দেব। এরপর পাখি পালাবে কোথায়।” টুকটুকি ফু দিয়ে চোখ থেকে চুল সরায়।
দিগন্ত মাছি তাড়ানোর ভঙ্গিতে হাত নেড়ে বলল,
“এইসব দুরুমদারুমে কাম হবে না। এই মাইয়ার প্রেম হলো মেড ইন চায়না। বেশিদিন টিকে না। বিয়ে দিলে জামাইয়ের জন্য আমার বেশি টেনশন হবে।”

নন্দিনী বিজ্ঞের ন্যায় মাথা দোলায়। কাচের চুড়িতে টুংটাং শব্দ তুলে বলে,
“হের লইগ্যাই কই তোর ভাইটারে সেটিং কইরা দে। আমি তোগো বাড়ির বউ হইলে আমার জামাই লইয়া তোর আর আলাদা কইরা টেনশন করা লাগব না। তোর বাপের তো প্রাইভেট কোম্পানি আছে। আমিও একখান এক্স সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেড খুলমু। দেশকে এক্সে স্বয়ংসম্পূর্ণ করে বিদেশেও রপ্তানি করমু। তুই আমার পার্টনার হবি। ফিফটি-ফিফটি।”

দিগন্ত কটমট করে তাকায়। বলে,
“আমার ভাই কেন, চৌদ্দ গুষ্টির কেউ তোরে বিয়ে করতে আসলে সতর্ক করে দেবো। তাছাড়া বলা যায় না বিয়ের সময় দেখলি তোর দেবর, ভাসুর সব তোর এক্স। উফ যা হবে না!”

“ধুর কিসের বিয়া বিয়া লাগাইছস! সংসার ফংসার তোগো মতোন গৃহপালিত মানুষের লইগ্যা। আমি তো বন্যপাখি।”
বলে নন্দিনী দুইহাত দিকে প্রসারিত করে ওড়ার ভঙ্গিতে তিন বন্ধুকে প্রদক্ষিণ করে একবার পাক খায়। অনুভব আমোদিত হয়ে বলল,
“এই বন্যপাখিরে বনবাসে পাঠালে জঙ্গলের বাসিন্দারা অতিষ্ট হয়ে জঙ্গল থেকে বনবাস নেবে নিশ্চিত।”

টুকটুকি সবার কথা থামাতে হাত উঁচু করে ভাষণ দেওয়ার ভঙ্গিতে গম্ভীর গলায় বলল,
“থামো সবাই। আজকে কোনো যু দ্ধ নয়। আজ শান্তির সাদা পতাকা উড়াও। নন্দিনীর অনারে সকলে আজ শুধু ঘুরব, খাব আর চিল মা রব।”

তিনটি মাসে বন্ধুদের জীবনে অনেক কিছুই ঘটে গেছে। শুধু যা একই রয়েছে তা হলো তাদের নির্মল অনুভূতিগুলো।
নন্দিনীর পায়ের ওপর দিয়ে বাইক চালিয়ে যাওয়া শাহীন নামের মাছটিকে ছাই দিয়ে ধরতে গিয়ে তার সম্বন্ধে খোঁজ চালায় দিগন্তরা। কেচো খুড়তে বেরিয়ে আসে গাঁ জা। শাহীন ও তার বন্ধুদের গ্যাং ক্যাম্পাসে গাঁ জা সাপ্লাই দিত। সেই সঙ্গে শাহীনের মেয়েবাজি তো ছিলই। দিগন্ত সরাসরি এই বিষয়ে হস্তক্ষেপ করেনি। এরা দেখতে সাধারণ হলেও কর্মকাণ্ডে নৃ শং স হতে পারে। দিগন্ত তার ভাইয়ের বন্ধু পুলিশে কর্মরত তরুণ এসআইয়ের কাছে খুলে বলেছিল। তদন্তে নেমে সত্যতা পেয়ে আইনও সরব হয়েছে। ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি যখন সরগরম হয়ে উঠেছিল তখন আরেকটু হাওয়া লাগল শাহীনের আপত্তিকর ফটো ভাইরাল হয়ে। নারীলি’প্সুক ও মা দক চালানকারী শাহীনকে পুলিশ প্রমাণসহ ধরলে ভার্সিটি থেকেও তাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এখন সে আইনের জিম্মায়। ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি এখনো উত্তপ্ত। অথচ এত বড়ো ঘটনার সূত্রপাত যার থেকে সেই নন্দিনী সকলের অগোচরে রয়ে গেছে। ভাবখানা এমন যে সে এসব বিষয়ে চুল পরিমাণ অনবগত। ভাঙা পায়ের য’ন্ত্র’ণায় হাঁটতে না পারলেও ফূর্তি তার সামান্যতম কমেনি।

চারবন্ধু দুটি রিক্সা নিল। এক রিক্সায় টুকটুকি ও নন্দিনীকে উঠিয়ে দিয়ে অনুভব সতর্ক করে বলল,
“আঁচল সামলে রাখিস তোরা। চাকায় বেধে গেলে কিন্তু নির্ঘাত আজরাইল দর্শন। কয়েকদিন আগেই আমার ক্লাসমেট শিরিনের ওড়না চাকায় গিয়ে গলায় ফাঁ স লেগে গেছিল। অল্পের জন্য বেঁচে গেছে। কিন্তু ভোকাল কর্ডের ক্ষতি হয়েছে। মেয়েটার গানের গলা এত চমৎকার অথচ এখন কথাই বলতে পারে না।”

দিগন্ত মুখ ঝামটা দিয়ে বলল,
“দুইটার সাজের বহর দেখ। চুল সামলাবে নাকি আঁচল?”

টুকটুকি বলল,
“এই সাজে দুইটা বাচ্চাও সামলাতে পারব। তোরা ভাগ।”

অনুভব রিক্সায় গিয়ে বসেছে। দিগন্ত এক-পা এগোতেই নন্দিনীর ফোনের ম্যাসেজ টোন পাওয়া গেল। স্ক্রিনে ইমন নামটা জ্বলজ্বল করছে। নন্দিনী সেদিকে ঠোঁট টিপে তাকিয়ে রইল।

কথায় আছে ঢেকি স্বর্গে গেলেও ধান ভানে। তারই আধুনিক দৃষ্টান্ত নন্দিনী। পা ভেঙে হসপিটালে এডমিট হয়েও নিজের কারিশমা দেখাতে ছাড়েনি। একই মেডিকেল কলেজ হসপিটালের ফাইনাল ইয়ারের এক বান্দার সঙ্গে পা ভাঙার গল্প করতে গিয়ে ফেইসবুক আইডি আদান-প্রদান হয়ে গেছে। হয়েছে গভীর দৃষ্টিবদল। বলাই বাহুল্য নন্দিনীর ওপর ছেলেটি যারপরনাই মুগ্ধ, অতিশয় বিগলিত। প্রতিদিন একবার নক করতে ভোলে না। নন্দিনীর ইচ্ছে হলে উত্তর দেয় অনিচ্ছায় দেয় না। এই মুহূর্তে সে উত্তর দেবে না বলেই মনস্থির করল। টুকটুকি বলল,
“ইমন ছেলেটা অনেকদিন ধরে তোর পেছনে পড়ে আছে। ধৈর্য আছে বান্দার। দেখতে শুনতেও মন্দ না। এত সময় তো কাউকে দিস না। তাহলে কি এটাকে একটু স্পেশাল ভাবতে পারি?”

নন্দিনী উত্তর দেওয়ার আগেই দিগন্ত ফোনটা কেড়ে নিল ওর হাত থেকে। দাঁতে দাঁত চেপে ফরমান জারি করে গেল,
“আজকে শুধু ফ্রেন্ডটাইম। কাজেই ফোন নিয়ে নো তিড়িংবিড়িং। এটা আমার কাছে থাকবে। তুই এইসব চুল, আঁচল, লতা, পাতা সামলা।”
“আরে এইটা কিরম কথা হালুইম্মা!”

নন্দিনীর কথা শোনার আগেই দিগন্ত রিক্সায় উঠে গেছে। দুটি রিক্সা পিচ ঢালা পথের বুকে চলতে শুরু করেছে। রাস্তার ধারের শিমুল গাছে টকটকে লাল ফুলের শোভা, ঠান্ডা বাতাবরণে ওদের দেহে শিহরণ খেলে যায়। হঠাৎ মনে পড়তেই টুকটুকি বলল,
“আসার পথে শপিংমলে যাব একবার।”
“কেন?”
“কাল ঝুমঝুমির জন্মদিন। গিফট কিনব।”
“অনেক দিন তো হইলো। এবার বাড়ি গিয়া মনের সঙ্গে সঙ্গে সম্পর্কের জড়তাও দূর কর।”
“ওহহ এখন তো ঠ্যাং সেড়ে গেছে তাই আমাকে কাজেও লাগে না, ভালোও লাগে না।”
টুকটুকির অভিমানী কন্ঠের কম্পন নন্দিনীর মাঝে উদ্রেক সৃষ্টি করতে ব্যর্থ। ঝারি দিয়ে বলল,
“মাইনষেরে প্রেমের জ্ঞান দিতে গিয়া নিজে যে পিছলা খাইয়া হাত-পাও ভাইঙ্গা একটা লেডি বাপ্পারাজ হইয়া গেছোস সেই খেয়াল আছে? এই জন্যই সিরিয়াস ভালোবাসা আমার না পাছান্দ।”

টুকটুকি তুতলে উঠে বলল,
“কিসের বাপ্পারাজ, কিসের পিছলে পড়া! সিরিয়াস কেন, আমি কোনো ভালোবাসাতেই নেই।”
“লা ত্থি দিয়া রিশকাত্তে ফালাইয়া দিমু। আমার লগে ঢঙ করোস, শা লী!”
টুকটুকি চুপসে গেল। হৃদয়ের টানাপোড়েন সামলাতে সামলাতে সে ক্লান্ত। নন্দিনী মাথা ঠান্ডা করে ওকে একহাতে জড়িয়ে ধরে বলে,
“আত্মসম্মানরে প্রাধান্য দিছোস আমিও তাতে খুশি। কিন্তু বেইব, জীবনটা অনেক সুন্দর। এক জিনিস ভেবে বারবার মনমরা হয়ে সেই সুন্দর সময় নষ্ট করা বোকামি। ব’লদ হইলেও তুই খুব ভালো একটা মেয়ে। মনের মাঝে টক্সিক চিন্তাভাবনা নাই। আল্লাহ তোর জন্য হয়তো আরো ভালো কিছু রাখছে।”
টুকটুকি দীর্ঘশ্বাস আড়াল করে বিড়বিড় করল,
“হয়তো।”
_____________

কুয়াশার চাদরের ভাজে এক চিলতে পেলব রোদ্দুর উঁকি দিয়েছে সবে। হিমশীতল হাওয়ার তোরে গুটিয়ে যাওয়া প্রকৃতি ধীরে ধীরে আড়মোড়া ভাঙছে। নিশীথ অফিসের জন্য তৈরি হয়ে বাড়ি থেকে বের হয়েছে সবে। ঝুমঝুমি হাত নেড়ে তার মনোযোগ আকর্ষণ করল। ছুটে এসে বলল,
“এই যে জাতীয় দুলাভাই, একটা বার্তা আছে।”
নিশীথ স্মিত হাসল। বলল,
“কী বার্তা এনেছ জাতীয় শালিকা?”
ঝুমঝুমি বিনুনি দুলিয়ে বলল,
“উহু, এমনি এমনি তো বলা যাবে না।”
“তাহলে?”
“একটা আইসক্রিম চার্জ লাগবে।”
“শীতকালে আইসক্রিম খেলে ঠান্ডা লাগবে। তোমার না দুদিন বাদে বোর্ড এক্সাম?” নিশীথের কড়া সুর।
ঝুমঝুমি কান খুঁচিয়ে বলল,
“সেই কথা বাসি হয়েছে নতুন কিছু বলুন।”
“পড়তে বসো গিয়ে।”
“আচ্ছা গেলাম তাহলে। আপনার শুনতে ইচ্ছে না করলে আমার কীসের দায়।”
ঝুমঝুমি ঘুরে দাঁড়ায়। নিশীথ পরাস্ত হয়ে মাথা নত করে,
“আইসক্রিম খেয়ে আমায় ধন্য করুন, পাকা মেয়ে।”

রাস্তার মোড়ের দোকান থেকে একটা চকবার কিনে দিল নিশীথ। তাতে কামড় বসিয়ে শীতে কাঁপতে কাঁপতে ঝুমঝুমি বলল,
“বার্তা খুবই অসাধারণ। আজকের দিনে এক বুদ্ধিমতি, সুন্দরী, দুষ্টু, মিষ্টি, চমৎকার মেয়ের জন্ম হয়েছিল। যেই মেয়ের জন্ম হয়েছিল বলেই আপনি জাতীয় দুলাভাই ডাক শুনে নিজেকে ধন্য করতে পেরেছেন।”
নিশীথ চওড়া হেসে বলল,
“শুভ জন্মদিন, ইঁচড়েপাকা দুষ্টু মেয়ে।”
“আর এই আইসক্রিমটা হলো আমার জন্মদিনের গিফট। আপনি বোঝার আগেই নিয়ে নিলাম। দেখলেন আমি কত্ত স্মার্ট! অবশ্য আরো একটা বার্তা আছে। সেটা অতি নগন্য।”
নিশীথের দৃষ্টিতে ভাবান্তর না হলেও শ্রবণেন্দ্রিয় উদগ্রীব হয়। ঝুমঝুমি চোরা হেসে বলে,
“আপু আজ বাড়ি ফিরছে।”

চলবে…