#শ্রাবণ_ধারায় |২২+২৩|
#সাদিয়া_আক্তার_জ্যোতি
আমার আর বারিশের পরিচয় হয় বেশ অদ্ভুতভাবে।আমি বারিশের কোম্পানিতে ইন্টারভিউ দিতে গিয়েছিলাম আর তখনই আমাদের প্রথম দেখা হয়।আমি ভেবেছিলাম সেও আমার মতো এই কোম্পানিতে ইন্টারভিউ দিতে এসেছে।পরে জানতে পারলাম সে এই কোম্পানির মালিক। শোনা মাত্রই আমি তৎক্ষণাৎ সেখানে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলাম।আসলে যাকে ক্যান্ডিডেট ভেবে যাকে মালিকের নামে এতোকিছু বললাম সে যে মালিক তা হঠাৎ শুণতেই মাথার ভিতরটা কেমন গুলিয়ে উঠলো।মস্তিষ্কের জট ছাড়াতে না পেরে জ্ঞান হারিয়ে ফেলি।চোখ খুলে আমি আর বারিশকে দেখতে পাইনি।তবে তার অফিসের স্টাফদের কাছ থেকে শুনেছি আমাকে নাকি সে-ই এখানে এনেছে।চাকরিটা সেবার আমার হয়নি।তাই আমি আমার দেশের বাড়িতে ফিরে আসি।বাবা মা আমার জন্য ছেলে দেখা শুরু করে। ঘটকেরর সাহায্য জানা যায় শহরের এক ঘরের ছেলের জন্য পাত্রী খোঁজা হচ্ছে। তাদের বংশীয় ও শিক্ষিত মেয়ে দরকার।ঘটক বাবাকে তার ঘর খবর দিলে বাবা কিছুদিন সময় নেয় ভাবার জন্য।কিছু ভেবে বাবা ছেলের সম্পর্কে জানতে চায়।আমি পর্দার আড়াল থেকে যতটুকু শুনেছি ছেলেটি একটি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির পরিচালক।ছেলের পরিবার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে জানা গেল।ছেলের পরিবারের সবাই অস্ট্রেলিয়া থাকে।ছেলেও বিদেশ থাকত তিনবছর আগে দেশে এসে ব্যবসা শুরু করে।এ দেশে ছেলের সাথে তার মা এবং ভাই থাকে।সব শুনে ও বিচার বিশ্লেষণ করে বাবা সিদ্ধান্ত নেন তাদের সাথে সরাসরি কথা বলবেন।কিছুদিনের মাথায় তাদের সথে সরাসরি কথা বলা হয়।যদিও সেখানে আমি ছিলাম না।তাই পাত্র কে তা জানাও হলো না।পরবর্তীতে অবশ্য বিয়ের কথা যত এগিয়েছে ততই আমাকে পাত্রকে দেখার জোর করা হয়েছে।কিন্তু ঐ যে লজ্জা নারীর ভূষণ!আর সেই লজ্জার জন্যই আমি কখনো চোখ তুলে পাত্রকে দেখতে পাইনি।আঁড়চোখে যতটুকু দেখতাম তা হলো পাত্রের প্রশস্ত শক্ত বুক।এর উপরে আর চোখ তুলতে পারিনি।পা থেকে বুক অবধি দেখার পরই লজ্জায় কেমন যেন মাথাটা ভোঁ ভোঁ করা শুরু করতো।তবে আমি মাথা নত করে থাকলেও বুঝতে পারতাম পাত্র আমাকে এক নিষ্পলক দেখে চলে।এক পর্যায়ে আমি তে ভাবতে শুরু করলাম লোকটার বুঝি ক্যারেক্টারে একটু সমস্যা আছে।তা না হলে একটি মেয়ের দিকে কেউ এভাবে এক দৃষ্টিতে শ্বাস আঁটকে দেখে?লজ্জার মাথা খেয়ে মাকে একবার বলেই ফেললাম,
– তোমরা এ কার সাথে আমাকে বিয়ে দিচ্ছ?সে তো আমার দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে।যদিও আমি তাকাই না কিন্তু আমি বুঝতে পারি।ঠিক করে খোঁজ খবর নিয়েছ তো?ছেলেটার চরিত্রে কোনো সমস্যা নেই তো?
মা উত্তর দিবে তার আগেই পাশ থেকে আমার মামাতো বোন চোখ মেরে আমাকে ধাক্কা দিয়ে রসিকতা করে বলল,
– আ..!তোর দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকবে না তো কার দিকে থাকবে?তুই তার হবু বউ তোকেই তো দেখবে তাই না ফুপি?
ওমা!আমার মাও আমার মামাতো বোনের সাথে সায় দিয়ে বলে,
– হ্যাঁ তাই তো তাই তো।তোর দিকেই তো তাকিয়ে দেখবে।এখন তাড়াতাড়ি শাড়িটা পরে রেডি হয়ে নে ওরা এখনই চলে আসবে আংটি পরাতে।
আজ আমার আর পাত্রের আকদ। আর আমি ঠিক করে নিয়েছি পৃথিবী উল্টে গেলেও আজ আমি পাত্রের মুখ দেখেই ছাড়বো।অনেক হয়েছে চওড়া বুক দেখা।এবার মুখ দেখতেই হবে।মনে মনে নিজেকে প্রস্তুত করলাম হবু বরের সোনার মুখটি দেখার জন্য।শাড়ির আঁচলটি মাথায় টেনে ছোট ছোট কদমে সবার সামনে এসে দাঁড়ালাম। বিনয়ী ও ধীর কন্ঠে সবাইকে সালাম দিলাম।সবাই সালামের উত্তর দিলো।কিন্তু একটা কন্ঠ কানে খুব বাজল।এত গভীর কন্ঠ আমি এর আগে একবার শুনেছি।কিন্তু সে কন্ঠ আর এই কন্ঠ একই ব্যক্তির কিনা বুঝতে পারলাম না।কন্ঠের উৎসের দিকে আঁড়চোখে দৃষ্টি রাখতেই দেখলাম শুভ্র পাঞ্জাবিতে সেই সুঠাম দেহের চওড়া বুক।বুঝতে পারলাম সে আমার হবু বর।শুঁকানো ঢোক গিললাম আমি।মাথাটা আরেকটু তুলে মুখটা দেখবো দেখবো এমন সময় মামি আমার হাত ধরে তাদের দিকে তাকিয়ে হেসে বললেন,
– তাহলে শুভ কাজটি শুরু করা যাক?
ইশশ!মামিরও এখন আসতে হলো?আরেকটু হলে পুরো মুখটা দেখে ফেলতাম।তবু যাক আজ তার নতুন একটি জিনিস দেখলাম।তার খাঁজ ওয়ালা থুতনি।সেটা চোখের সামনে ভাসতেই আরেকটি শুঁকনো ঢোক গিললাম আমি।চোখ বন্ধ করে শ্বাস টেনে পাত্রের পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম। মামি আমার হাতটি পাত্রের সামনে এগিয়ে দিলো।পাত্র আলতো হাতে আমার হাতের নিচে একটি হাত দিয়ে অন্যহাতে আমার অনামিকায় চকচকে ডায়মন্ডের আংটিটি পরিয়ে দিলেন।সবাই এ দৃশ্য দেখে তৃপ্তি স্বরে বললেন “মাশাল্লাহ।খুব সুন্দর লাগছে আংটি চিনির হাতে”। এবার আমার পালা।আমার শরীর কাঁপতে শুরু হলো।মাথাটাও আবার এই সময়ই ভোঁ ভোঁ করে শুরু করলো।বুঝিনা আমার শরীর সবসময় সিরিয়াস পরিস্থিতিতে আমার সাথে বেইমানি শুরু করে কেন?এখন এসব কাঁপা কাঁপির কোনো মানে আছে?হৃৎপিণ্ডটাও অস্বাভাবিক গতিতে ওঠানামা করছে।আমাকে কাঁপতে দেখে সে তার ভারি কন্ঠে বলল,
– পানি খাবে?
বারবার কেন যেন মনে হচ্ছে এই কন্ঠ আমি আগেও শুনেছি।কিন্তু এখন মনে পড়ছে না।আমি ধীরে বানে বামে মাথা নাড়ালাম। সে তার হাত আমার দিকে এগিয়ে দিলো।আমি আমার কাঁপতে থাকা হাতটি তার দিকে এগিয়ে নিয়ে গেলাম।কাঁপতে কাঁপতেই তার অনামিকায় রূপার আংটিটি পরিয়ে দিলাম।সবার আগেই সেই বলে উঠলো,” আলহামদুলিল্লাহ।”সবাই তো বেশ অবাকই হলো।জীবনের প্রথম বোধ শুনছি পাত্রী আংটি পরিয়ে দেওয়ার পর সবার প্রথম আলহামদুলিল্লাহ বলে পাত্র।বিস্মিত চোখে মাথা তুলে তাকালাম।চোখ তুলে বারিশের চেহারা দেখতেই চোখ বড় বড় হয়ে গেল।সব হিসেবে কেমন যেন তালগোল পাকিয়ে গেল। তর্জনি বারিশের মুখের সামনে তুলে হিসেব মেলাতে লাগলাম।কিন্তু হিসেব মিলল না!মিলবেই বা কিভাবে আমি তো অংকে বরাবরই কাঁচা।আমাকে চোখ তুলতে দেখে সে তপ্ত শ্বাস ফেলে বলল,
– অবশেষে!
আকদ শেষে যাওয়ার সময় বারিশ আমার থেকে কৌশলে নম্বরটি নিয়ে গেল।তারপর থেকে শুরু হলো রাতদিন নিয়ম করে দুইবেলা কলে কথা বলা।প্রথম প্রথম আমি বিরক্তির ভান করলেও বারিশের যত্নের সাথে বলা এক একটা কথা শুনে আমি আর সে অভিনয় বহাল রাখতে পারলাম না।আমি তার কথার প্রেমে পড়লাম! আর এর থেকে ভয়ংকর কিছু বোধহয় পৃথিবীতে নেই।তারপর এলো বিয়ে দিন।বারিশের ইচ্ছা সে তুরস্কে গিয়ে বিয়ে করবে।কিন্তু সবাই তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে। কারণ বিয়েতে অনেক পুরোনো আত্মীয় স্বজনের সাথে দেখা হয়।দেশের বাইরে বিয়ে হলে তারা আসতে পারবে না।কয়জনই বা টাকা খরচ করে ভিসা পাসপোর্ট টিকিট কেটে মাইলকে মাইল পাড়ি দিয়ে বিয়ে খাওয়ার জন্য যাবে?তাই বারিশের ইচ্ছাটাকে দমিয়ে ঠিক করা হলো আমাদের বিয়ে দেশেই হবে।এবং একটি মাত্র অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বিয়ের রীতিনীতি শেষ করা হবে।সে অনুযায়ী সব আয়োজন শুরু হলো।বারিশ আমার জন্য সাদা গাউন ও নিজের জন্য সাদা কালো সুট কোট নির্ধারণ করলো বিয়ের পোশাক হিসেবে।
বিয়ের দিন আমাকে নির্ধারিত পোশাক অর্থাৎ সাদা গাউন ও ডায়মন্ডের অলংকার পরানো হলো।সবার কানাঘুঁষা করতে শুরু করলো,
– চিনির তো কপাল ফেটে গেল রে!দেখেছিস কিভাবে রাজ রাণী সাজিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
কথাগুলো আমার কানে এসেছিল তবে আমি তা না শোনার ভান করে চুপ করে বসে থাকি।আমাকে ক্লাবে নেওয়ার কিছুক্ষণ পরই সাদা কালো সুট কোটে ক্লাবে প্রবেশ করে কাঙ্খিত সেই পুরুষ।একগুচ্ছ সাদা গোলাপ হাতে সে গুটি গুটি পায়ে আমার দিকে এগিয়ে আছে।হলুদ ফর্সা মুখটা আজ একটু বেশিই উজ্জ্বল লাগছে।ঠোঁটে লেগে আছে চওড়া হাসি।এক কদম দুই কদম করে সে যত এগিয়ে আসনে তার চোখ ততই ছলছল করছে।হয়তো হাজার বছরের সাধনার ফল পেয়েছেন সে।টলমলে চোখে সে এগিয়ে আসে আমার দিকে।সাদা গোলাপের গুচ্ছটি এগিয়ে দেয় আমার দিকে..
এতোটুকু লিখে কলম থামিয়ে দেয় চিনি।বড় একটি শ্বাস ফেলে সামান্য ফোলা পেটে হাত দিয়ে মেরুদণ্ড সোজা করে।পিঠে কেমন ব্যাথা করছে।পেটে হাত বুলাতে বুলাতে নড়েচড়ে সে।এদিকে ওদিকে তাকিয়ে দেখে বারিশ পিঠ ডলতে থাকে।ঘুম আসছে খুব।এই হয়েছে আরেক জ্বালা!যেদিন থেকে সে জানতে পেরেছে সে মা হবে সেদিন থেকে তার ঘুমের অভাব যেন বেড়েই চলেছে।এতো ঘুমাচ্ছে তবু তার ঘুমের অভাব পূরণই হচ্ছে না।সে ভাবল এখন একটু খাটে গিয়ে শিরদাঁড়া সোজা করে কিছুক্ষণ শুয়ে থাকা যাক।তাহলে যদি ব্যাথাটা লাঘব হয়।ফোমের চেয়ারটি থেকে উঠতে যাবে তখনই কেউ কড়া কন্ঠে বলল,
– এই তোমাকে না বলেছি ঘন্টার পর ঘন্টা এভাবে চেয়ারে বসে থাকবে না।একটা কথাও তুমি শোনো না আমার।
সে কন্ঠস্বর লক্ষ্য করে পিছনে তাকাল চিনি।বারিশকে তার দিকে অগ্নিচক্ষু নিয়ে তাকিয়ে থাকতে দেখে ঢোক গিলল।মনে মনে বিড়বিড়িয়ে বলল,”আজও ধরা খেয়ে গেলাম!”
মুখে আমতা আমতা করে বলল,
– কই ঘন্টার পর ঘন্টা বসেছি?আমি তো মাত্রই এসে বসেছি।
চিনির কথায় যেন আরো বেশি ক্ষিপ্ত হলো বারিশ।কটমট করে বলল,
– আমাকে বোকা বানাবে তুমি?আমি জানি না তুমি কখন এসে বসেছ?কখন থেকে এখানে বসে ডায়েরি লিখছ?
চিনি মাথা নত করল।মুখ ফুলিয়ে বলল,
– কি করবো তা সারাদিন? কোনো কাজ নেই!আপনিও বাড়িতে থাকেন না।বোবার মতো একা একা বসে থাকবো নাকি?তাই ডায়েরির সাথে কথা বলি।এতেও আপনার সমস্যা হলে বলেন ডায়েরির সাথেও আর কথা বলবো না।ওকেও দূরে ফেলে দিবো।কাউকে লাগবে না আমার।
চিনও কথাগুলো বলছে আর তার চোখ দিয়ে টপটপ করে অশ্রু ঝরছে।চিনিকে কাঁদতে দেখে থতমত খেয়ে গেল বারিশ। কি করবে কিছু বুঝে উঠতে না পেরে এগিয়ে গেল চিনির কাছে।চিনির সামনে এক পায়ের হাঁটু ভেঙে বসে চিনির মুখটি নিজের হাতের আদলে নিলো।দুইহাতে বৃদ্ধ আঙুলের সাহায্যে চিনির চোখের পানি মুছিয়ে দিলো।নরম কন্ঠে বলল,
– সরি তোমার সাথে রেগে কথা বলেছি।আমি তো তোমাকে শুধু এতটুকু বলতে চেয়েছি যে এখন পাঁচ মাস চলছে এখন কোনো ভুল স্টেপে বেবি এবং তোমার দুইজনেরই ক্ষতি হতে পারে।এই সময় বেবি নড়াচড়া করে।তাই তোমাকে বারবার বলি এভাবে ঘন্টার পর ঘন্টা এক জায়গায় বসে না থেকে একটু হাঁটা চলা করো।কিন্তু তুমি আমার কথা শুনবেই না।আর কিছু বললে ঠোঁট ফুলিয়ে কান্না কাটি শুরু করবে।চলো এখন ঘুমাবে।
বলেই হাতে টান দিলো বারিশ।চিনি ঠাঁই বসে রইলো।ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো বারিশের দিকে।যা দেখে বারিশের ভ্রু কুঁচকে এলো। বারিশ নিজেকে একবার দেখে চিনির উদ্দেশ্যে বলল,
– কি হয়েছে এভাবে কি দেখছ?
চিনি দাঁত বের করে বিগলিত হাসে।যে হাসি একদমই পছন্দ হয়না বারিশের।সে ভ্রুযুগল কুঞ্চন রেখেই তীক্ষ্ণ স্বরে বলে,
– কি হয়েছে বলবে তো?
চিনি বারিশের মুখটা দুহাতের মধ্যে নিলো।গাল ধরে টানতে টানতে বলল,
– আমার না এখন মেকআপ করতে খুব ইচ্ছা করছে!
বারিশ চোখ ছোট ছোট করে বলল,
– এই রাত দুপুরে?
চিনি উপর নিচ মাথা নাড়িয়ে।বারিশ বলল,
– আচ্ছা তাহলে করো।
কথাটি বলেই উঠে যাবে বারিশ।চিনি বারিশের গাল টেনে ধরলো। বারিশকে তার সামনে আবারও বসিয়ে দিলো।বারিশ গালে ব্যাথা পেয়ে মুখ থেকে মৃদু শব্দ বের করল,
– আহ্!
চিনি বারিশের খোঁচা খোঁচা দাঁড়িগুলোই আলতো করে ছুঁয়ে দিতে দিতে বলল,
– আমি বলেছি আমি মেকআপ করবো। নিজের মেপআপ করবো বলিনি।আমি বলছি আমি আপনার মেকআপ করবো।
বারিশ কোনোকিছু না ভেবেই উত্তর দিলো,
– ও আচ্ছা।
পরক্ষণেই চিনির কথার গভীরে যেতেই চোখ কপালে উঠে যায় তার।অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে সে চিনির দিকে। চট করে সে বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে আমতা আমতা করে বলল,
– কি বলছ এসব?পাগল হয়েছ তুমি? রাত দুপুরে এসব ভয়ংকর কথাবার্তা বলে তুমি আমার ঘুম হারাম করছ কেন হ্যাঁ?চলো ঘুমাতে চলো।
বলতে বলতে হাত ধরে উঠিয়ে চিনিকে বিছানার দিকে নিয়ে গেল বারিশ। চিনি নারাজ স্বরে একটি কথায় বলে চলেছে,
– না আমি এখন ঘুমাবো না।আমি আপনাকে সাজাবো।দেখুন বারিশ,আমি আপনাকে বেশি সাজাবো না একটুখানি সাজাবো।প্লিজ রাজি হয়ে যান।জানেন আমি কত সুন্দর করে সাজাতে পারি?আপনি নিজেকে চিনতেও পারবেন না।
বারিশ চোখ গরম করে তাকায় চিনির দিকে। দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
– তোমার কি মাথা ঠিক আছে? কি বলছ তুমি নিজে জানো?বারিশ মৃধা এখন রাত দুপুরে মেয়ে সাজবে?
চিনি বেশ অনুনয় করে বলল,
– প্লিজ বারিশ কেউ জানবে না বিশ্বাস করেন।আপনি যদি না সাজেন তাহলে আমি আজ সারারাত ওখানে বসে ডায়েরি লিখতে থাকবো।
– এসব আজগুবি জিনিস ঢুকিয়েছে কে তোমার মাথায়?যা খুশি কর তুমি বারিশ মৃধা যখন বলেছে সে সাজবেনা তখন সে সাজবে না। তাই ফোর্স করে কোনো লাভ নেই।
কথা শেষ করে বারিশ নিজের ফাইল খুলে তার ভিতরে থাকা কাগজগুলো পড়তে শুরু করলো।এদিকে গোমড়া মুখে আড় চোখে বারিশকে দেখছে চিনি।বারিশ বুঝতে পেরেছে যে চিনি তার দিকে করুণ চোখে তাকিয়ে আছে। তবু সে চুপচাপ তার কাজ শুরু করে।কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে বারিশের মুখের দিকে চেয়ে থেকে টেবিলের চেয়ারে বসে চিনি।সেদিকে তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকে ফেলে বারিশ।বোঝার চেষ্টা করে চিনি কি করছে।মনে মনে বলে, “মেয়েটা কি সত্যি সত্যি সারারাত এভাবে বসে থাকবে নাকি?উফ্!এলে নিয়ে আর পারা যায় না।”
শক্ত কন্ঠে বলল,
– এই মেয়ে ঐখানে বসলে কেন আবার?
কোনো উত্তর দিলো না চিনি।গুম হয়ে বসে আছে সেখানে।ছোট একটা শ্বাস ছাড়ে বারিশ।হতাশ কন্ঠে বলে,
– আচ্ছা ঠিক আছে আমি সাজবো।
সঙ্গে সঙ্গে চেয়ার থেকে লাফিয়ে ওঠে চিনি।খুশিতে এগিয়ে এসে বারিশের গাল টেনে বলে,
– সত্যি আপনি সাজবেন?আপনি জানেন আপনার এই ছোট ছোট চোখ,ছোট সরু নাক,ছোট ছোট পাতলা ঠোঁট সাজালে কত সুন্দর লাগবে দেখতে!
কটমট চোখে তাকায় বারিশ। চিনি তা দেখে মুখে হাত দিয়ে হাসি থামিয়ে বলে,
– দাঁড়ান আমি এখনই মেক-আপ কিটসগুলো নিয়ে আসছি।
বারিশ রাগি চোখে চিনির দিকে তাকিয়ে বিড়বিড়িয়ে বলে,
– চিন্তা করা যায়?বারিশ মৃধা রাত দুপুরে তার বউয়ে আবদারে মেয়ে সাজে!নেহাৎই আমার বাচ্চাটা পেটে নিয়ে ঘুরছ।নাহলে রাত দুপুরে এসব ফাজলামি করার শখ মিটিয়ে দিতাম।থাপ্পড়িয়ে দাঁত সবগুলো হাতে ধরিয়ে দিতাম।ফাজিল একটা।
চলবে…