সংসার পর্ব-৩৯+৪০+৪১

0
19

#সংসার
পর্ব ৩৯
ধারাবাহিক গল্প
নাহিদ ফারজানা সোমা

” কেমন আছিস সোনাই মনাই? কয়েকদিন আসিনি তোর কাছে। আসার শক্তি ছিলোনা। বাবা যখন মেয়েটার সাথে ঘনিষ্ঠ হতো, তোর মুখটাও কী বাবার মনে পড়তোনা? জৈবিক তাড়না কী অন্য সব অনুভূতি নষ্ট করে দেয়? আর মা কিনা বাবাকে ক্ষমা করে দিচ্ছে। ডিভোর্স ও দিবেনা। লুম্বিনী আর তুতুন নাকি বিরাট কষ্টে আছে। বাবা-মা একসাথে না থাকলে ওরা নাকি কষ্টে দুঃখে পাগল হয়ে যাবে। কি দারুণ সমাধান ! আসলে মায়ের ব্যাকবোন নাই। সেল্ফ রেসপেক্ট নাই। সেল্ফ কনফিডেন্স জিরো। নইলে এরকম স্বামীর সাথে আবার ঘর সংসার করার ডিসিশন নেয়? তুই থাকলে বাবাকে মেনে নিতে পারতিস? আমি কানাডা চলে যাবো। দুইদিন পরপর তোকে দেখতে আসতে পারবোনা। মন খারাপ করবিনা।নয়ন তোমায় পায়না দেখিতে,রয়েছো নয়নে নয়নে। তুই আমার নয়নে, মস্তিষ্কে, হৃৎপিণ্ডে,কলিজায়, রক্তে সবসময় আছিস, সবসময় থাকবি। তোর মাথার উপরে বিরাট সাইজের দুইটা গোলাপ ফুটে আছে। হালকা গোলাপি রং।তুইতো ধরা দিসনা, তাই বারবার ফুল দুটোকেই ছুঁয়ে দেখছি। ”

বুবুন রাজেশ্বরীর কবরের পাশে বসে মনে মনে কথা বলছিলো। মাথায় কারো আলতো স্পর্শ পেয়ে ঘুরে তাকালো।

বাবা! বুবুন কিছুক্ষণ নিশ্চুপ তাকিয়ে রইলো, তারপরে ঝট করে উঠে রওনা হলো।

“বুবুন, বাবাই। একটু দাঁড়াও বাবা।”

জেল থেকে ছাড়া পেয়ে আসিফ সরাসরি এসেছে মেয়ের কবর জিয়ারত করতে।

বুবুন দাঁড়ালো না। বড় বড় পা ফেলে হাঁটতে লাগলো।

আসিফ দৌড়ে এসে ছেলেকে ধরলো,

“বুবুন, বাবাকে ক্ষমা করে দে বাবা। আমার লজ্জা আর অনুশোচনার সীমা নেই, অনুতাপের কষ্ট অনেক বড় কষ্ট। আমি নিজেকে কোনদিন ক্ষমা করতে পারবোনা কিন্তু তুই আমাকে ক্ষমা করে দে।”

বুবুন শক্ত মুখে দাঁড়িয়ে রইলো। মনে তার অনেক কথা, ” এই বয়সে এসে কেন এমন করলে বাবা? কিসের অভাব ছিলো তোমার? আমার লক্ষী মা’টা সবসময় তোমার পাশে থেকেছে , তোমার বিপদে আপদে, দুঃসময়ে তোমার ঢাল হয়ে কাজ করেছে, তোমার সামান্য অসুখ বিসুখ হলে মা পাগল হয়ে যেতো, তোমার সেবাযত্ন করতো, এমন একটা দিন নেই যেদিন মা তোমার পছন্দের আইটেম মেন্যুতে রাখেনি, তোমাকে ফেলে মা কখনো নানার বাড়িতেও একটা রাত কাটায়নি, মায়ের এই ভালোবাসা তোমাকে ব্যাতিচার থেকে দূরে রাখতে পারলোনা? মায়ের ভালোবাসা,যত্ন এগুলোকে মূল্যবান মনে করোনি তুমি, ধরে নিয়েছো এগুলো তোমার পাওনা। মায়ের ভালোবাসার এতো বড় অমর্যাদা করলে তুমি? আমরা চার ভাইবোনও তোমাকে অধঃপতন থেকে রক্ষা করতে পারলামনা? কিসের অভাব ছিলো তোমার যে এতো নোংরা একটা কাজ করলে? ”

বুবুন কথা বলছিলো মনে মনে।কাকতালীয় ভাবে আসিফ এর উত্তর দিলো,” আমি কিভাবে আত্মনিয়ন্ত্রণ হারালাম, আমি নিজেও জানিনা বাবা।”

” আমি জানি। আমার মায়ের প্রতি কখনোই তোমার ভালোবাসা, শ্রদ্ধা ছিলোনা, মা’কে নিয়ে মাথাব্যথাই ছিলোনা তোমার। মা বা আমরা থাকলে থাকবো, না থাকলে না থাকবো, চিন্তাটা এমনই ছিলো তোমার।তাই বিশ্বাসঘাতকতা করতে তোমার ভয় বা টেনশন হয়নি, বিবেকের কথা বাদ দিলাম। বিবেক বস্তুটি তোমার নেই। ”

“না বাবা, তোমার চিন্তাগুলো ঠিক নয়।আমার বিবেক, সংযম নেই , এটা অবশ্যই ঠিক বলেছো। কিন্তু আমি তোমাদের আর তিতিরকে খুব বেশি ভালোবাসি।”

” আমাদের ভাইবোনদের হয়তো ভালোবাসো, কিন্তু মা’কে ভালোবাসো এই মিথ্যাটা বলোনা। ভালোবাসা থাকলে কেউ অন্য নৌকায় পা বাড়ায়না। ”

“আমি তোমার সাথে তর্ক করবোনা বাবা। নিঃসন্দেহে আমি চরম পাপ করেছি কিন্তু আমি তোমার মা আর তোমাদেরকে ভীষণ ভালোবাসি। পাপ হলো চোরাবালির মতো। একবার পা রাখলে আর উপায় থাকেনা, ডুবতেই হয়। ”

“একবারই বা পা রেখেছিলে কেন? কোন অভাব বোধ থেকে? শরীরের তাড়নায়? কেন,আমার মা তোমাকে সুখী করতে পারেনা যে সুখ খুঁজতে তোমাকে বেশ্যার কাছে যেতে হয়? মায়ের না হয় ঘেন্না পিত্তি নেই, তাই তোমাকে মেনে নিচ্ছে।কিন্তু আমি ঘেন্না করি তোমাকে। তোমার সাথে আমি কোন সম্পর্ক রাখতে চাইনা।”

বুবুন হনহন করে চলে গেলো।

এদিকে তুতুন বাসায় অধীর ভাবে অপেক্ষা করছে বাবার জন্য। কিছুতেই স্কুলে গেলোনা, দুপুরের ভাতও খাচ্ছেনা, কার্টুন বা খেলাধুলাও তাকে টানছেনা। প্রায় একমাস হতে চললো, বাবাকে সে দেখেনি।বাবা কোথায় গেছে তার কাছ থেকে বিদায় না নিয়ে, তাও সে জানেনা। আজ বাবা আসবে শুনে তুতুন ভোর পাঁচটায় ঘুম থেকে উঠেছে। সাবান -শ্যাম্পু দিয়ে গা মাথা ডলে ভালো করে গোসল করেছে, সুন্দর জামাকাপড় পরেছে, পরিপাটি করে চুল আঁচড়েছে, মুখে সুগন্ধি ক্রিম ঘষেছে। অথচ বাবা আসার নাম নেই।

আজ আবার অরণ্য -অরণীও আসেনি। তিতলীমনি নাকি অফিস থেকে তিনদিনের ছুটি নিয়েছে।

মায়ের গলা শুনতে পাচ্ছে তুতুন। ফোনে ভাইয়ার সাথে কথা বলছে মা, ” বুবুন, টেক এভরিথিং ইজি। নাওয়া খাওয়া ছেড়ে কোথায় ঘুরে বেড়াচ্ছো? কেন বুবুদের বাসায় থাকবে যেখানে নানা-বুবু এখানে? খালারা আছেন,তাতে কি হলো? চলে আসো বাবা। ”

ভাইয়াটার যে কি হয়েছে ইদানিং, বুঝেনা তুতুন। হাসিখুশি ভাইয়া, মাথায় তুলে রাখতো তুতুনকে, রাতে ঘুমানোর সময় মাথায় হাত বুলিয়ে দিতো, পিঠে সুড়সুড়ি দিতো, ভাইবোনদের নিয়ে আসর বসাতো, ভার্সিটি থেকে আসার সময় নিজের পয়সায় কিছু না কিছু খাবার নিয়ে আসতো, যখন তখন মায়ের কোলে মাথা রেখে সটান শুয়ে পড়তো, সেই ভাইয়া কতোদিন হলো, নিজের ঘরের মধ্যে গোঁজ মেরে বসে থাকে, ঠিকমতো খায়না, একটুতে রেগে অস্হির হয়ে যায়। বাবা চলে যাওয়ার পরে একরাতে তুতুন বালিশে মুখ গুঁজে কাঁদছিলো, প্রথমে নিঃশব্দে, ভাইয়া টের পাচ্ছেনা দেখে একটু মিহি সুরে, দুঃখের সময় স্বান্তনা পাওয়া দরকার, বুবুন জিজ্ঞেস করেছিলো, ” তুতুন, তুই কী কাঁদছিস? ”

“হ্যাঁ। ”

“কেন? ”

“বাবার জন্য। ”

বাবারে বাবা, ভাইয়া সিংহের মতো গর্জন করে হ্যাঁচকা টানে তুতুনকে বিছানা থেকে উঠিয়ে ওর ছোট্ট ঘাড় শক্ত করে চেপে ধরে ঘরের বাইরে বের করে ধড়াম করে দরজা আটকে দিলো। অন্ধকার স্পেসে ভয়ে তুতুনের আত্মারাম খাঁচাছাড়া। সে দৌড়ে মায়ের ঘরে চলে গেলো। সব শুনে মা ভাইয়াকে বকা দিতে এলে ভাইয়া মা’কে কড়া গলায় বললো, ” আমার ঘরে কেউ যেন না ঢুকে। ” তুতুনের নিজেরও ঘর আছে। কিন্তু একা ঘুমাতে ভয় লাগে। সেদিন থেকে তুতুন মায়ের কাছে ঘুমায়। লুম্বিনী আপু তার নিজের ঘরে, নানা-বুবু আরেকটা ঘরে।

বাইরের দরজা খোলার শব্দ হলো। তুতুন ছুটে গেলো। দরজা খুলেছে মা। বাবা ঘরে ঢুকলো। তুতুন ঝাঁপিয়ে পড়লো বাবার উপরে। বাবা কোলে তুলে নিলো তুতুনকে। চুমু খেতে লাগলো তুতুনের ফোলা ফোলা গালে, বোঁচা নাকে, ছোট্ট কপালে। তুতুনও অনেকগুলো চুমু খেলো বাবাকে। মুখে আকর্ণবিস্তৃত হাসি।

চলবে

#সংসার
পর্ব ৪০
ধারাবাহিক গল্প
নাহিদ ফারজানা সোমা

শ্বশুর-শাশুড়ি আসিফের সাথে এতো স্বাভাবিক আচরণ করলো যেন আসিফ সারাদিন হাসপাতালে থেকে বাসায় ফিরেছে। নিশাত -নাজমুলের সাথে ধীরে ধীরে আসিফ সহজ হয়ে গেলো। শুধু নিরালায় নিশাত স্নেহের স্বরে জামাইকে বললেন, “বাবা,ভুল মানুষ মাত্র ই করে। আর তোমার এই ভুল ছোটখাটো ভুল ছিলোনা। ভুল থেকে শিক্ষা নাও, কিন্তু একটা ভুল করেছো দেখে জীবন বরবাদ হয়ে গেছে এমন মনে করোনা। যেদিন তোমাকে প্রথম দেখেছি সেদিন থেকে তোমাকে সন্তানের আসনে বসিয়েছি। তোমার মায়ের অবর্তমানে আমি তোমার মা। বাবা,তুমি সত্যি করে বলো, তিতিরকে তুমি কী পছন্দ করো? পছন্দ না করলে স্পষ্ট বলো।ওর সাথে বাস করতে তোমার অনীহা থাকলে তুমি ওকে ডিভোর্স দাও বা ও তোমাকে ডিভোর্স দিক।আমার মেয়ে আমার কাছে মহা মূল্যবান। যথার্থ সম্মানের সাথে তাকে আজীবন সাহায্য করার ক্ষমতা আল্লাহ আমাদের দিয়েছেন। ওকে তোমার ভালো না লাগলে আমাকে স্পষ্ট বলো।”

“তিতিরকে আমি ভালোবাসি,মা। আর কখনোই আমার পক্ষ থেকে কোন অপরাধ হবেনা, আমি আপনাকে কথা দিলাম।নিশ্চিন্ত থাকেন।”

নিশাত -নাজমুল নিজেদের বাসায় ওই রাতে চলে গেলেন, কারণ আরিয়ান অর্থাৎ বুবুন ওখানে উঠেছে, সে এই বাড়িতে আসবেনা। ওখানে গৃহকর্মী খালারা তাকে মাথায় তুলে রেখেছেন ঠিকই, তাতে কি? বুবুন এখন অবুঝ, তার স্বাভাবিক বুদ্ধি লোপ পেয়েছে। সে এখন বেদনা,অপমান আর লজ্জায় কাতর এক অসহায় সদ্য তরুণ।বয়সটা ভালো নয়।

লুম্বিনী বাবার সাথে সহজ হতে পারছেনা একদম। ও সবকিছুই বুঝে। বাবাকে সে খুব ভালোবাসে, বাবা-নায়ের ছাড়াছাড়ি না হোক, এটাই তার চাওয়া, কিন্তু বাবার কৃতকর্ম সে ক্ষমা করতে পারছেনা। আর ঐ বেহায়া মেয়েটাকে একটাবার হাতের কাছে পেলে খুন করবে লুম্বিনী , এটা তার আন্তরিক সিদ্ধান্ত। বাবার প্রতি তার এখন যে অনুভূতি সেটার নাম কি সে জানেনা। গাঢ় অভিমান, ঘৃণা মেশানো ভালোবাসা?

মাথা নীচু করে বসে থাকা লুম্বিনীর দিকে তাকিয়ে আসিফের বুক ফেটে যাচ্ছে। দুই মেয়ের মিষ্টি যন্ত্রণায় অস্হির হয়ে থাকতো পুরো বাড়ি।আক্রমণ টা বাপের উপর দিয়ে বেশি যেতো। বাবার দুই পাশে গা ঘেঁষে বসে পা লম্বা করে দুই বোনের বিরতিহীন গল্প, নানা জিনিসের আবদার। কোমর দুলিয়ে দুলিয়ে বাবাকে নেচে দেখানো।গলা ছেড়ে বাবাকে গান শোনানো। মায়ের শাসন থেকে বাঁচার জন্য বাবার কোলে আশ্রয়। ছোট্ট রসগোল্লা তুতুনকে বাবা কোলে নিলেও দুই বোনের আপত্তি। বাবার কোল শুধু তাদের দুই বোনের জন্য।

সেই প্রচণ্ড ছটফটে, আদুরে লুম্বিনী বাবার সাথে কথা বলতে পারছেনা, তাকাতেও পারছেনা বাবার দিকে। শান্ত, নত মুখে বসে আছে।

“মা লুম্বিনী। আমার কাছে আসোতো মামনি।সবসময়ের মতো আমার কপালে একটা চুমু খাওতো মা।”

লুম্বিনী আরও মিইয়ে গেলো। ঘরে আর কেউ নাই। মা জোর করে তুতুনকে ধরে নিয়ে গেছে অন্য ঘরে, বাবাকে একান্তে লুম্বিনীর সাথে কথা বলার সুযোগ করে দিতে।

আসিফ এসে মেয়েকে বুকে জড়িয়ে ধরলো। মুখ ডুবিয়ে দিলো চুলে। লুম্বিনী কাঠের মতো শক্ত হয়ে বসে থাকলো। কি বলা উচিত, কি করা উচিত, কিছুই তার মাথায় ঢুকছেনা।

” মামনি, আমাকে ক্ষমা করে দাও। আমি চরম পাপ করেছি। আমাকে ক্ষমা করে দাও, মা।”

অনেক কাকুতিমিনতি ও অশ্রু বিসর্জনের পরে আসিফ তার কন্যার মন পেলো।লুম্বিনী বাবার চোখ মুছিয়ে বললো, ” আমার মা’কে আর কখনো অসম্মান করবেনা। আর ভাইয়া ভীষণ কষ্ট পেয়েছে। ওর অভিমান ভাঙাও বাবা।”

তুতুনের উচ্ছ্বাস -আনন্দ দেখে তিতিরের মনে হচ্ছে , আসিফকে ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত ভুল হয়নি। লুম্বিনীর চোখ-মুখে খুশির ঝিলিক।

রাতে তুতুনের বায়নায় চারজন এক ঘরে ঘুমালো। বাবা-মা দু’জন দুই পাশে, মাঝখানে বাচ্চারা। সারারাত তুতুন বাপের বুকে সেঁটে রইলো।

তিতলী মাঝরাতে বারান্দায় চুপ করে বসেছিলো। ওর একটা ভারি সুন্দর জীবনের স্বপ্ন ছিলো। টাকা-পয়সা , বাড়ি-গাড়ি নয়। ওরা দুই বোন ছোট বেলায় “ভালোমানুষ, ভালোমানুষ ” খেলা খেলতো। যেমন, তিতলী তিতিরের গালে আলতো একটা চড় মারলো। তিতির তখন বলতো ” আমি কিছু মনে করিনি বোন। কিন্তু আমার জানতে ইচ্ছা হচ্ছে কেন তুমি আমাকে মারলে? ” তিতলী রুক্ষ গলায় বলতো,” তুমি কতো ধনী। তোমাকে সবাই ম্যাডাম বলে ডাকে। আমি গরীব। কুঁড়েঘরে থাকি। সবাই আমাকে বুয়া বলে। ” তখন তিতির তিতলীকে জড়িয়ে ধরে বলতো, ” বোন, তোমার আর আমার মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। তুমিও যা,আমিও তা।আল্লাহ আমাকে বড়লোক বাবা-মায়ের ঘরে পাঠিয়েছেন, তাই আমার টাকা আছে।আল্লাহ যদি তোমার মায়ের পেটে আমাকে আর আমার মায়ের পেটে তোমাকে পাঠাতেন, তাহলে তুমি বড়লোক আর আমি গরীব হতাম।” তিতলী তখন কান্নার অভিনয় করতো,”কেন আমি গরীব ঘরে জন্মালাম? ”

” শোনো, জন্ম হোক যথা তথা কর্ম হোক ভালো। জন্ম যেখানেই হোক, তোমাকে সৎ কর্ম করতে হবে,সত্য বলতে হবে, পরিশ্রম করতে হবে, মানুষের উপকার করতে হবে।”

“খেতে পাইনা। পেটে খাবার না পড়লে ভালো কিছু করতে ইচ্ছা করেনা।তখন চুরি, ডাকাতি করতে হয়।”

“এমন কথা ভাববেওনা। পরিশ্রম করবে। যে কাজ পাবে, তা যদি ভালো হয় সেটা মন দিয়ে করবে। কোন সৎ কাজই ছোট নয়। কিন্তু চুরি,ডাকাতি, ছিনতাই, ঘুষ খাওয়া, আলসেমি করা ভীষণ ছোট কাজ।”

দুই বোন খেলার মাধ্যমে নিজেদের মনটাকে ফুলের বাগানের মতো সুন্দর, সুরভিত করেছিলো। ভালো কাজ করা আর মন্দ কাজ না করা, ভালো চিন্তা করা তাদের অভ্যাস হয়ে গিয়েছিলো। কিন্তু শাশুড়ি, ননদ, দেবর,জা’কে দেখলে, ওদের কথা ভাবলে তিতলীর চরম বিরক্তি লাগে।বিরক্তি, কখনো ঘৃণা,কখনো উন্মত্ত ক্রোধ। নেতিবাচক অনুভূতিগুলো তাকে ভালো থাকতে দিচ্ছেনা।

আজ রাতে খাওয়ার টেবিলে অনাবশ্যক ভাবে তিতলীর শাশুড়ি বললেন, “তিতলী, অনেক কপাল করে এসেছো তুমি। পুরুষ জাত শয়তানের জাত। দুলাভাই, দুলাভাই করে মুখে ফেনা তুলে ফেলতে, সেই দুলাভাই কি কাণ্ডটা করলো তোমার বোনের সাথে? ছি ! আমাদের বাড়িতে এসব হিস্ট্রি নাই।”

আফরা বললো, “আমি আসিফ ভাইয়ের খুব দোষ দিতে পারিনা। আমি বুঝেই উঠতে পারিনা, কি দেখে তিনি তিতির আপাকে বিয়ে করেছিলেন? উনার সাথে একদম মানায়না। ”

এতো মানসিক ক্লান্তি বোধ করছিলো তিতলী, কোন প্রতিবাদ করতে পারলোনা।

এর মধ্যে বোমা ফাটালো আদনান। গাঁক গাঁক করে বললো,” অরণী-অরণ্য আর স্কুল থেকে ঐ বাসায় যাবেনা। তিতলীর দুলাভাই পারভারটেড।অরণী এমনকি অরণ্যের সাথেও ব্যাটা অনেক কিছু করতে পারে। ”

তিতলী খাওয়া ফেলে টেবিল ছেড়ে উঠতে উঠতে বললো, ” আয়নায় তোমরা প্রত্যেকে নিজের চেহারা দেখো। প্রকৃত চেহারা দেখতে পেলে নিজেরাই বমি করে ফেলবে। আমার কোন ফ্যামিলি মেম্বারকে নিয়ে একটা কটু কথাও যদি আমার সামনে বলো, বিলিভ মি, আমি তার জিভ কেটে ফেলবো। ”

চলবে।

#সংসার
পর্ব ৪১
ধারাবাহিক গল্প
নাহিদ ফারজানা সোমা

পারিবারিক এক ঘনিষ্ঠ চিকিৎসক বন্ধুর কাছ থেকে নোমান -তমা ঘটনা শুনলো। এতোবড় ঘটনা, তাদেরকে কিছুই জানানো হয়নি। কিছুক্ষণ মাথা চেপে বসে থেকে নোমান মা’কে ফোন করলো, ” মা,কি শুনছি? ”

“কি শুনছো? ”

“কি শুনছি তুমি বুঝতে পারছোনা? আসিফের সব ঘটনা আমি আদিবের কাছ থেকে শুনলাম।”

“তো?”

“তুমি কী নরমাল ভাবে কথা বলা ভুলে গেছো? এতো বড় ঘটনা, এতোদিন ধরে চলছে, তোমাদের সাথে প্রতিদিন কথা হচ্ছে, কিন্তু এটা জানতে হলো বন্ধুর কাছ থেকে? ও বেড়াতে এসেছিলো, এই প্রসঙ্গ তুললো যখন, আমরা আকাশ থেকে পড়েছি। আমরা জানিনা দেখে সেও বিব্রত। আমাদের জানানোর দরকারই মনে করলেনা? ”

“না, করিনি। যেমন তুমি অস্ট্রেলিয়ার বাসিন্দা হওয়ার কথা আমাদের জানাওনি। তিতিরের দুর্ভোগ শুনে কি করবে তুমি? স্ক্যান্ডাল পাঁচ কান করার ইচ্ছা হয়নি। ”

” আমাকে জানানো আর পাঁচকান করা এক হলো? ”

“অবশ্যই এক।তুমি তোমার বৌকে বলবে, তোমার বৌ তার বাবা-মা -ভাই-বোনদের বলবে, বেশ সরস আলোচনা হবে, আমারতো এগুলো ভালো লাগার কথা নয়। তুমি তোমার মতো করে জীবন গুছিয়ে নিয়েছো, এখন আর পিছন ফিরে তাকিওনা। চাকরি করো, স্ত্রী -পুত্র -শ্বশুরকুল নিয়ে সংসার করো। ভালো থাকো।আমাদের নিয়ে মাথা ঘামিওনা।”

নোমান চিৎকার করে বললো, ” আমি একটু ভালো থাকার জন্য অস্ট্রেলিয়ায় আসায় তোমাদের এতো রাগ? আমার শ্বশুর -শাশুড়িরা আছেন দেখে তোমাদের এমন জ্বলুনি ? এতো সংকীর্ণ চিন্তাভাবনা তোমাদের? কেন, তমা তার শ্বশুর শাশুড়ি নিয়ে সংসার করেনি? তাতে অসুবিধা হয়না, একটা ছেলে তার শ্বশুর শাশুড়িকে নিয়ে থাকলে মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যায়? ”

” নোমান, চিৎকার করে আমার সাথে কথা বলবেনা। তুমি খুব ভালো জানো, কতো বড় অন্যায় তুমি করেছো। তমা আমাদের নিয়ে সংসার করেছে? হাসালে। আমরা অনেক বেয়াদবি, খবরদারি সহ্য করে তমাকে নিয়ে সংসার করেছি। তমা নিজের স্বার্থে আমাদের সংসারে থেকেছে। বাচ্চাদের সমস্ত ভার আমাদের উপরে দিয়ে চাকরি করেছে, বিদেশ ভ্রমণে গেছে, রাত দশটার আগে বাসায় ফেরেনি। আমার বা আমাদের কয়টা কাজে লেগেছে তমা, লিস্ট করে পাঠিয়ে দিও। তোমার শ্বশুর শাশুড়ি ঠারেঠুরে অনেক অপমান করেছেন আমাদের , আমরা তার জবাব দিইনি। প্রথমত, রুচিতে কুলায়নি। দ্বিতীয়তঃ, তোমার শান্তির কথা ভেবে।শ্বশুর -শাশুড়ি আর তোমরা একসাথে থাকবে, তা নিয়ে হিংসা করার মানুষ আমি, তোমার বাবা নই, খুব ভালো জানো তুমি। বাবা-মা সন্তান একসাথে থাকবে, এটাই কাম্য, সে পুত্র সন্তান হোক আর কন্যা সন্তান হোক।
কিন্তু চোরের মতো নিঃশব্দে, লুকিয়ে চুরিয়ে কেন? আমরা তোমার ঘাড়ে সওয়ার হতাম? ছেলের সংসারে থাকার বিড়ম্বনা আমরা নিতে যাবো কেন? কেন এতো গোপনে অস্ট্রেলিয়ায় সেটল করার বন্দোবস্ত করলে তুমি? বিয়ে করার পর থেকে আমাদের সাথে রয়েছো। তোমার স্ত্রীর অনেক ঔদ্ধত্য সহ্য করেছি। তোমার দুই ছেলেকে মানুষ করেছি আমি আর তোমার বাবা। তখন আমাদেরকে তোমাদের দরকার ছিলো। নিজেদের দরকার মিটে গেলো,উড়াল দিলে। অসুস্থ, বয়স্ক বাবা-মায়ের কথা ভাবলেনা। এসময়ে তাদের পাশে থাকা দরকার, ভাবলেনা। বোনের সংসার নিয়ে মাথা ঘামানোর কোন দরকার নেই। ”

“তাই বলে তিতির আসিফের সাথে আবার সংসার করবে? এতো ঘটনার পরেও?”

“করবে। এটা তিতিরের ডিসিশন। আসিফ চরম পাপ, অপরাধ করেছে এবং একবার করেই ট্র্যাপে পড়ে গিয়েছে। ট্র্যাপ থেকে বের হওয়ার সাহস তার ছিলোনা। তাই একই অন্যায় সে চালিয়ে গেছে। সে তার পাপের জন্য অনুতপ্ত। আমরাতো আসিফকে চিনি। তার অনেক ভালো দিক। তাকে একটা সুযোগ দেওয়া উচিৎ বলে আমার ধারণা। তোমার শ্যালিকা কিন্তু পরকীয়ায় জড়িয়েছিলো, স্বামী-শ্বশুরবাড়ি তাকে ক্ষমা করে দেয়। এখন তারা সুখে শান্তিতে আছে।বাচ্চা দু’জন ভালো জীবন পেয়েছে। তোমার শালীকে যদি বের করে দিতো প্রথম পাপেই, তাহলে সমস্যা আরও জটিল হয়ে যেতো।প্রথম ভুল করে সে আন্তরিক অনুতপ্ত হলে তাকে ক্ষমা করে দেওয়াই উচিত। দ্বিতীয় ভুলে ক্ষমা নেই। কাজেই তিতির যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সে আসিফকে ভালোবাসে। লুম্বিনী, তুতুন, বুবুন বাবা-মা’কে এক ছাদের তলায় দেখতে পাচ্ছে। রাজ মারা যাওয়ায় তাদের ট্রমা এখনো কাটেনি, এখন বাপ-মা আলাদা থাকলে বাচ্চারা মানসিক ভাবে একদম বিদ্ধস্ত হয়ে যাবে। আজকাল সেল্ফ রেসপেক্ট, গাটস এসব কথা খুব সস্তা হয়ে গেছে। যাহোক, ভালো থাকো।এদিকের সমস্যা নিয়ে টেনশন করোনা। ”

নোমান, তমা দু’জনেই আসিফকে খুবই পছন্দ করে। তার এই অধঃপতনের সংবাদে দু’জনেই বিস্মিত। তমা বললো, ” কিছু মনে করোনা, আসলেই আসিফ ভাইয়ের পাশে তিতিরকে মানায়না। একজন টল, আরেকজন শর্ট, বলতে একদমই শর্ট। একজন ফেয়ার, আরেকজন অলমোস্ট ব্ল্যাক। একজনের ফিগার এতো সুন্দর, আরেকজনা চৌকনা। একজনের মাথাভরা চুল, আরেকজন বলতে গেলে টাক। আমার মাথায় কিছুতেই ঢোকেনা আসিফ ভাই কি দেখে তিতিরকে বিয়ে করেছিলো? উনার ফ্যামিলির পক্ষেও মেনে নেওয়া টাফ।সত্যি বলোতো, তোমার বাবা-মা কী আসিফ ভাইকে মোটা অংকের যৌতুক দিয়েছিলেন? তোমাদের ফ্যামিলির মধ্যে আরতো কেউ অসুন্দর না? শুধু একজনই এতো অসুন্দর। তোমার বাবা-মা তিতিরকে কুড়িয়ে পেয়েছিলেন নাকি? ”

এদিকে নানা-বুবুর বাসায় বুবুন সারাক্ষণ একটা ঘরে শুয়ে থাকে। মাঝেমধ্যে ইরফানের রেখে যাওয়া গীটার বাজায়। শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে, চোখ গর্তে ঢোকা। খেতে চায়না। এই নাতি নাজমুল -নিশাতের কাছে প্রাণের চেয়েও প্রিয়। আট নাতি নাতনির মধ্যে প্রথম। জন্মের পর থেকে বুবুনের খাওয়া, ঘুম, গোসল, তাকে পরিচ্ছন্ন করার কাজ সব নানা-নানি –মামা-খালারা করতো। ছোট্ট পুতুলটাকে নিয়ে কাড়াকাড়ি চলতো সবার মধ্যে। বুবুন কাঁদলে নিশাত আর তিতলীও কাঁদতে শুরু করতো।বুবুনের অসুখ হলে নাজমুল সাহেব, নিশাত, নোমান, তিতলী একেবারে ভেঙে পড়তো। সব নাতি নাতনিই আদরের, ভালোবাসার। তারমধ্যে বুবুন একটু বেশি। ওর অন্তরের জ্বালা -যন্ত্রণা খুব ভালো বুঝতে পারছেন নাজমুল নিশাত। নাতির কষ্ট দেখে তাঁরাও কষ্ট পাচ্ছেন খুব ।

“বাবুরে, নরমাল হ সোনা।”

“কথা বলোনা বুবু। আমার কথা বলতে, শুনতে ভালো লাগেনা।”

“তুই চাস বাবা-মায়ের ডিভোর্স হোক? মা আর তোরা তিন ভাইবোন একসাথে থাকবি? ”

“হ্যাঁ। তাই চেয়েছিলাম। কিন্তু এখন তোমার মেয়েকেও সহ্য করতে পারছিনা। আত্মমর্যাদাহীন, মেরুদণ্ড ভাঙা, ভীতু একটা সরীসৃপ। ”

” খুব অন্যায় চিন্তা মায়ের সম্পর্কে বুবুন। মাথা ঠান্ডা করে চিন্তা করলে বুঝবি, তোর মা কতোটা সুন্দর, মায়াবতী, নিঃস্বার্থ, কতো ভালো।”

” মানিনা। একটা এঁটো লোকের সাথে আবার সংসার করবে। ছিঃ! ”

” ভাতটা মুখে নে ময়না। ”

“বললামতো, খাবোনা ভাত। কেন আমাকে এতো জ্বালাও তোমরা? ঐ লোকের পয়সায় একটা দানাও খাবোনা আমি। এতোদিন যা খেয়েছি, তার যতো টাকা খরচ করেছি, পাইপাই করে হিসাব মিটিয়ে দিবো আমি।”

“এটাতো বাবার টাকায় কেনা খাবার না ভাইয়া। লক্ষী ছেলে, এই লোকমাটা নাও। আমার অবস্থা ভাবো? তোমার নানা অসুস্থ, আমারও নানা রোগশোক। তোমার মামা ঐভাবে চলে গেলো। ইরফান -আয়মান এখনো অ্যাডজাস্ট করতে পারছেনা।ডিরেইলড হয়ে যাচ্ছে। তোমার মায়ের কষ্ট, অপমান হাড়ে হাড়ে আমি বুঝতে পারছি। ভালো নেই তোমাদের তিতলীমনি। ভালো নেই তোমরা। ”

বুবুন হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো, ওর আর্তনাদ ছড়িয়ে গেলো চারিপাশে,

“আমার কিচ্ছু ভালো লাগেনা বুবু।আমার আত্মহত্যা করতে ইচ্ছা করে। কোন আমার ফ্যামিলি এতো অস্বাভাবিক? কেন আমি লম্পট বাপের ছেলে? কি বিশ্রী বিশ্রী ফটো আমাকে দেখানো হয়েছে বুবু। ওগুলো সারাক্ষণ চোখে ভাসে। সম্পূর্ণ ন্যাংটো মেয়ে, ঐ লোকটার কোলে বসা, এর চেয়েও অনেক বিশ্রী দৃশ্য। আমার পক্ষে ভোলা সম্ভব না বুবু, কিছুতেই ভোলা সম্ভব না। আর ঐ লোকটার মুখ আমি কিছুতেই দেখতে পারবোনা বুবু।তোমরা আমাকে জোর করোনা, আমি পাগল হয়ে যাচ্ছি বুবু আমি পাগল হয়ে যাচ্ছি। আমি মরে গেলে আমাকে রাজের কবরে শুইয়ে দিও।”

নাজমুল সাহেবের চোখ দিয়ে অবিরাম পানি বের হচ্ছিল। কি কষ্টে আছে তাঁর অতি আদরের মেয়েরা, নাতিরা। আল্লাহ, শান্তি দেন ওদের।

নিশাতের দু’গাল কান্নায় ভেজা। আসিফের উপরে প্রবল রাগ হচ্ছে , আর ঐ নাজলী মেয়েটির প্রতি চরম ঘৃণা। এই মেয়ের কঠিন বিচার আল্লাহ করুন। নিজের উলঙ্গ ছবি, রতিক্রিয়ার ছবি পার্টনারের ছেলেকে দেখানো? কতোটা নীচে নামতে পারে মানুষ ! মেয়েটার কঠিন কোন অসুখ হোক, তিলে তিলে সে কষ্ট পেয়ে পচে গলে মরুক। জীবনে প্রথম কাউকে অভিশাপ দিলেন নিশাত, আন্তরিক ভাবে। সেই সাথে এই চিন্তাও মাথায় এলো, বুবুনকে সাইকিয়াট্রিস্ট ও সাইকোথেরাপিস্ট দেখানো দরকার, যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব। চোখে চোখে রাখতে হবে বুবুনকে, এক মুহূর্ত চোখের আড়াল করা যাবেনা, যে কোন সময় নিজেকে শেষ করে দিতে পারে নাজমুল -নিশাতের প্রথম নাতি। সেই আঘাত কোনোভাবে সহ্য করতে পারবেননা নাজমুল -নিশাত।

তিতলীকে অফিস থেকে ট্রেইনিং এ পাঠাবে। হংকং। তিন মাসের জন্য। বাবা-মায়ের অসুস্থতা ও মানসিক কষ্ট, বুবুনের একেবারে ভঙ্গুর অবস্থা, আপার হাসির আড়ালে প্রবল বেদনা, অরণ্য -অরণীর প্রতি মায়া তিতলীকে বড় অস্থিরতায় ফেলেছে।কিন্তু ট্রেইনিং টা খুব দরকার। নিজের প্রমোশন , দক্ষতা বৃদ্ধি , সর্বোপরি দেশের স্বার্থে এই প্রশিক্ষণ নেওয়া একান্ত দরকার।বাচ্চারা খালা বা নানার বাড়ি থাকবে।

বাধ সাধলো স্বামী, শ্বশুরবাড়ি।

“তিন মাস? ঘরের বৌ তিন মাস বাড়ির বাইরে থাকবে? ”

“বেড়াতে যাচ্ছিনা। চাকরি করলে রুলস মানতে হবে। অরণ্য -অরণীকে বড় করা, লেখাপড়া শেখানো, স্কুলে ভর্তি করা, টিচারদের সাথে যোগাযোগ করা, ওদের খাওয়ার দিকে লক্ষ্য রাখা, এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাকটিভিজে এনগেজ করা একা আমি করেছি। আপনাদের সবাইকে রান্না করে খাওয়ানো,অসুখ হলে সেবা করা, হাসপাতালে থাকা সবই করেছি আমি সামান্যতম প্রতিদান ছাড়াই। এখন বাচ্চারা বড় হয়েছে। নানা-নানি -খালার কাছে দিব্যি থাকতে পারবে। সুতরাং, আমার পিছুটান নেই। আমি যাবো।”

“সাথে কী পুরুষ কলিগ যাবে? ”

“হ্যাঁ। সুখময়, আফতাব আর আমি। ”

“বাহ্, বাহ্। অফিসে আর মেয়ে নেই? ”

“আছে।তারা যখন এই ট্রেইনিং এর উপযুক্ত হবে, তখন যাবে। ”

“তুমি যেতে পারবেনা। হাসব্যান্ড হিসাবে এটা আমার নির্দেশ। তিনমাস ঘরের বৌ বাড়ির বাইরে থাকতে পারবেনা।”

“বিয়ের আগে কথা ছিলো, দু’জনেই পোষ্ট গ্র্যাজুয়েশন করবো, একসাথে হায়ার এডুকেশন নিবো। তুমিতো দিব্যি ইউএসএ থেকে এমএস করে এলে, কেন নিলেনা তখন আমাকে? তোমার মা খুব অসুস্থ , এই অজুহাত দিলে। বললে ফিরে এসেই আমার ব্যবস্থা করবে। তা ব্যবস্থা করেছিলে। পেটে বাচ্চা দিলে আমার অজান্তে, বাড়ির সবাই মিলে ঝি সরিয়ে সেই পোস্ট আমাকে দিলে, চাকরি ছাড়ার ব্যবস্থা করলে, তোমাদের সব অন্যায় মেনে নিলাম, এখন কোন বিবেকে বলছো আমি ট্রেইনিং এ যেতে পারবোনা? আমি যাবো। এবং ফিরে এসে এই সংসারে উঠবোনা।অরণ্য -অরণীকে নিয়ে আলাদা থাকবো।অনেক সহ্য করেছি। তোমার সাথে থাকা আমার পক্ষে সম্ভব নয়, আদনান। ”

চলবে।