#সংস্পর্শে_তুমি
#পর্ব_৫
#নাহিদা_ইসলম
শপিং মলে গাড়ি পার্কিং করে। আমাকে গাড়ি থেকে নামতে নিষেধ করলো,উফ বাঁচলাম। জুতা ছিড়ে গেছে বলে মনে হয় নিজে গিয়ে ই জুতা নিয়ে আসবে। আমার ভাবনা শেষ হওয়ার আগে ই আমাকে আবার কোলে তুলে নিলো। সবার সামনে দিয়ে আমাকে নিয়ে উপরে উঠছে আমি লজ্জায় আচল দিয়ে মুখ ঢেকে নিলাম। সবাই আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
–এভাবে নড়াচড়া করলে ফেলে দিবো কিন্তু
শপিং মলের ভেতরে ডুকে অহনাকে আগে জুতা কিনে দিলো। তারপর শুভ্র একা ই শাড়ি থ্রি পিস গাউন দেখছে এবং যেটা পছন্দ হচ্ছে সেটা কিনে নিচ্ছে।
কেনাকাটা শেষ করে বাড়ি ফিরতে ই দেখলো শায়লা সোফায় বসে আছে। হাতে এতোগুলো ব্যাগ দেখে শায়লা জিজ্ঞেস করলো ,
–বাবা কার জন্য এতো কিছু? নিশ্চয়ই আমার জন্য আর মৌয়ের জন্য।
–মা আজকে শুধু অহনার জন্য এগুলো আনলাম। এতোদিন তো তোমাদের শপিং করিয়ে দিয়েছি এখন তো আরেকজন এসেছে তাকে ও অল্প কিছু
কথা শেষ করার আগে ই শায়লা বললো,
–এটা অল্প কিছু যাকগে ছেলেরা বিয়ের পর পর হয়ে যায়।
কান্না কান্না ভাব করতে কথাগুলো শায়লা বললো। শুভ্র কথাটা শুনে রেগে গিয়ে বললো,
–এসব নেকা কথা বাদ দাও তো মা।
শুভ্র রেগে গেছে বুঝতে পেরে শায়লা আর কোনো কথা বলেনি। শুভ্র ও ব্যাগগুলো নিয়ে উপরে চলে গেছে।
উপরে গিয়ে ব্যাগগুলো রেখে ই অহনার মুখ চেপে ধরে,
–কি এক শাড়ি পরে বার বার ঘুরে বেড়াচ্ছিস। কি প্রমাণ করতে চাস। শাড়ির আচল সরে গেলে পোড়া দাগটা স্পষ্ট ফুটে উঠছে্। আমি বার বার যে কষ্টগুলো ভুলে থাকতে চাই তুই বার বার মনে করিয়ে দিস। এখন থেকে শাড়ি পড়বি না। এখানে গাউন আর থ্রি পিস আছে এইগুলো পড়বি।
অহনার বেশ রাগ হচ্ছে এমন অকারণে বার বার এসব সহ্য হচ্ছে না আর। ইচ্ছে করছে অবন্তীকে কষিয়ে দুটো থাপ্পড় মেরে জিজ্ঞেস করতে এই প্যাচের মধ্যে কেনো ফেলে দিয়ে গেলো। সে তো নিজে দিব্যি ভালো আছে।
ড্রেসগুলো দেখে অহনার বেশ কান্না পাচ্ছে। বিয়ের আগে এমন ড্রেসগুলোর দিকে তাকানো ও স্বপ্ন ছিলো। চাচি সব সময় তার মেয়েদের পুরানো ড্রেসগুলো অহনাকে পড়তে দিত। কয়েকবার টিউশনির টাকা জমিয়ে নতুন ড্রেস এনেছিলো কিন্তু চাচি তা পড়তে দেয়নি। সব চাকচিক্য তার মেয়েদের জন্য ছিলো। আর অহনার জীবনটা ছিলো অন্ধকার মোড়ানো। ভেবেছিলো বিয়ের পর হয়তো সেই অন্ধকার কাটবে কিন্তু তার চিন্তাগুলো ভুল প্রমাণ করে দিয়ে বিয়ের পর জীবনে আরো কষ্ট বেড়েছে।কষ্টে অপমানে জর্জরিত জীবন।
শুভ্র বাসায় নেই। আমি গোসল শেষ করে হোয়াইট একটা গাউন পড়ে নিলাম। গাউনটা বেশ সুন্দর হোয়াইট আর পিংকের কম্বিনেশন কাজ করা। চোলগুলো ছেড়ে রাউন্ড ব্যান্ড দিয়ে আটকে রেখেছি যেনো সামনে চুলগুলো না আসতে পারে। হাতে পিংক রেশমি চুড়ি আর পায়ে আমার শ্বশুর আব্বু দেওয়া নুপুরগুলো পড়ে নিচে যেতে ই আমার শ্বাশুড়িকে দেখলাম। নিশ্চিত আমার জন্য ই বসে আছে।
–তোমার কি বিয়ে হয়নি?
–আপনি কি স্মৃতি শক্তি হারিয়ে ফেলেছেন?
–এতো বেয়াদব মেয়ে আবার আমার মুখে মুখে তর্ক করো। বাচ্চাদের মতো এসব গাউন পড়েছো কেনো? বউ তুমি এ বাড়ির মৌ পড়লে মানায় কিন্তু তুমি।
–আমি পড়তে চাইনি আপনার ছেলে বলেছে পড়ার জন্য।
এটা শোনার পর মুখখানা বন্ধ হয়ে গেছে। কিন্তু পায়ের দিকে চোখ যেতে ই চোখগুলো বড় বড় করে করে বললো,
–এই নুপুর কোথা থেকে?
–আমার শ্বশুর দিয়েছে।
–এগুলো খুলে আমাকে দেও।তুমি হারিয়ে ফেলবে।
–বাবা নিষেধ করেছে তাই দিতে পারবো না মা। যতই হোক আমার শ্বশুরের দেওয়া প্রথম উপহার।
–কি কি এনে দিয়েছে আমার রুমে নিয়ে এসো।
পারবো না বলে উপরে চলে এসেছি।
আজ শুভ্র অফিসে আসেনি। তবে তাদের রূপনগর শোরুমে গিয়েছে একথা লামিয়ার কানে আসতে বেশি সময় নেয়নি। সাথে একটা মেয়ে ছিলো তারমানে অহনা। রুমে পায়চারি করছে আর এসব ভাবছে লামিয়া। না কিছুতে ই এভাবে ভেঙ্গে পড়লে চলবে না।আগে ও তো শুভ্রেরের অনেক কাজে কষ্ট পেয়েছে সেগুলো তো সহ্য করে নিয়েছে তাহলে এখনকার কষ্টগুলো সহ্য হচ্ছে না কেনো? নিজেকে নিজে প্রশ্ন করছে লামিয়া। তার কাছে ভালোবাসা মানে ই শুভ্র আর কষ্ট মানে ও শুভ্র ই কারণ তার লাইফে পাওয়া সবচেয়ে বেশি কষ্ট শুভ্রের কাজে ই পেয়েছে।
রাত দশটা, অহনা খাবার টেবিলে বসে আছে শুভ্র মাত্র ই বাসায় ঢুকলো। শুভ্রকে ফ্রেশ হয়ে নিচে নামতে দেখে শায়লা বেগম ও এসে খেতে বসলো। অহনা উঠে গিয়ে তাদের খাবার বেরে দিতে ই শুভ্রর চোখ পড়লো অহনার দিকে। আড় চোখে তাকিয়ে দেখলো একটু বেশ সুন্দর লাগছে।
কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর নিরবতা ভেঙ্গে শুভ্র বলে উঠলো,
–অহনার চাচি কল দিয়েছে কালকে ওদের বাসায় যাচ্ছি আমরা।
কথাটা শুনে মনে মনে রাগ হলে ও উপরে তা প্রকাশ করেনি শায়লা।
অহনার তো কথাটা শুনে ই খুশিতে আত্মহারা হয়ে গেছে। সে নিজের বাড়িতে যাচ্ছে। বিয়ের দ্বিতীয় দিন বাবার বাড়িতে যাওয়ার প্রচলিত নিয়ম থাকলে ও শুভ্র তা মানেনি। না মেনে ভালো ই করেছিলো অহনার তো আর নিজের বাবার বাড়ি নাই আছে চাচার বাড়ি সেখানে গেলে ও নানান কথা শুনতে হবে। অহনার বিয়ের দিনের কথা মনে পড়ে গেলো।
ফ্লাশব্যাক,
রাসু বেগম অহনাকে টেনে হিঁচড়ে ঘর থেকে বের করে অহনাকে। বাহিরে এসে দাড়াতে ই দেখলো শুভ্র সাথে আর কাজী। অহনার চাচা নির্বাক হয়ে তাকিয়ে আছে। তিনি হয়তো বুঝে উঠতে পারছে না কি হচ্ছে অহনার সাথে। কাজী যখন বিয়ে পড়ানোর কবুল বলতে বলছিলো অহনা তখন না বলার কারণ বেশ কয়েকটা থাপ্পড় মারে। যখন গলায় মধ্যে হাত দিয়ে চেপে ধরে তখন আর উপায় না পেয়ে সেদিন কবুল বলেছিলো অহনা।
সেদিন অবন্তীর বিয়তে ও পালিয়ে যাওয়ার পর সবাই যখন আমার উপর দোষ চাপাতে ব্যস্ত তখন আমি খুব কষ্টে বিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে বাসায় চলে আসি। তার ঘন্টাখানের মধ্যে ই শুভ্র এসে হাজির। চাচিকে কি বুঝিয়েছে তা অজানা কিন্তু চাচি বলেছিলো দোষ যখন অহনা করেছে শাস্তি ও তাকে ই পেতে হবে।
–এই মেয়ে কি ভাবছো এতো। সবকিছু গুছিয়ে রাখো।
শায়লা রহমানের কথায় ভাবনার জগৎ থেকে বের হলো অহনা সব কিছু গুছিয়ে উপরে যেতে ই দেখলো শুভ্র বসে ফোন দেখছে। অহনা গিয়ে দরজা বন্ধ করতে ই তার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। হঠাৎ শুভ্র দাড়িয়ে অহনার দিকে আসতে লাগলো। আস্তে আস্তে অনেক কাছে চলে আসতে ই অহনা চোখ বন্ধ করে ফেলে…….
চলবে
[ভুলক্রটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন ]