#সংস্পর্শে_তুমি
#পর্ব_১৮
#নাহিদা_ইসলাম
অহনা সোফায় শুয়ে আছে শুভ্রের কোলে মাথা রেখে। তমা তিয়াস আর মৌ শপিং এ গিয়েছে। অহনার ভয় কিছুটা কাটলে ও শুভ্র সব সময় ভয় পায় অহনাকে নিয়ে। মেইন গেইটে কেউ নক করেছে অহনা উঠে গিয়ে দরজা খুলেতে ই দেখলো অবন্তী দাড়িয়ে আছে। এতোদিন পর অবন্তীকে দেখে কি করা উচিত অহনা বুঝতে পারছে না অবন্তী এসে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দেয়। অহনা সোজা হয়ে দাড়িয়ে আছে তার কোনো রিয়াকশন নাই।
শুভ্র অহনাকে ডাকছে কোনো সারা দিচ্ছে না দেখে উঠে দরজার সামনে আসতে ই অবন্তীকে দেখলো। অবন্তীকে দেখে শুভ্র জোরে চিৎকার করে বলে,
–এই মুহূর্তে আমার বাসা থেকে বের হয়ে যাও অবন্তী।
শুভ্রের চিৎকার শুনে অবন্তী অহনাকে ছেড়ে দিয়ে বললো,
–প্লিজ শুভ্র আমার কথাটা শোনে না হয় এভাবে চিৎকার করো।
শুভ্র এবার আরো জোরে চিৎকার দিয়ে বললো,
–নিজে থেকে বের না হলে আমি ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিবো আর তুমি এ বাসায় ডুকলে ই কেমন করে।
শুভ্রকে এমন রূপে দেখে অবন্তী সহ্য করতে পারছে না। এই শুভ্র ই তো তাকে ভালোবাসতো তাকে কেয়ার করতো তার সব আবদার পূরণ করতো। এই কি সেই শুভ্র। এসব ভেবে লাভ কি এমন হওয়াটা ও অস্বাভাবিক নয়।
–শুভ্র প্লিজ আমার কথাগুলো শোনো তারপর না হয় আমাকে এসব বলো।
–বের হয়ে যাও তোমার কোনো কথা আমি শুনতে চাই না।
শুভ্র অবন্তী দিকে যেতে ই অহনা শুভ্রের হাত ধরে বললো,
–আমি শুনতে চাই অবন্তী কথা এবং আমরা দুজন তার কথা এখন শুনবো। আশা করি আপনি আমার মতামতকে সম্মান করবেন।
অহনা অবন্তী নিয়ে সোফায় বসায়। মুখের দিকে তাকিয়ে বলে,
–খেয়েছিস কিছু মুখ এমন শুকনো লাগছে কেনো।
অবন্তী বললো খায়নি তাই অহনা খাবার রেডি করতে যাবে ঠিক সে সময় অবন্তী অহনার হাত ধরে বললো,
–বস না আমার কাছে তোকে দেখি কতদিন দেখেনি।
বলে ই কান্না করে দেয়। অহনার চোখে ও পানি। চোখ মুছে বললো,
–কেউ তোর কথা না শুনলে ও আমি শুনবো অবন্তী। আমরা দুটি মানুষ ছিলাম বটে তবে আত্মা এক ই ছিলো এটা আমি ভাবতাম।
–আমার বিশ্বাস, কেউ আমাকে বিশ্বাস না করলে ও তুই করবি।
–জানিস অবন্তী আমি ঠিক এই ভয় টা ই পাচ্ছিলাম জানতাম কোনো না কোনো দিন আমরা তিনজন একত্রিত হবো। এমন মুখোমুখি আমাদের কথা হবে। আজকের পর আমাদের তিনজনের লাইফ ই বদলে যেতে পারে। তবে তোর আর শুভ্রে ভালোর জন্য আমাকে যা করতে হয় করবো তুই ভয় পাস না। তোর মতো আমাকে কেউ বুঝতো না অবন্তী। বিয়ের প্রথমে ভেবেছিলাম দেখা হলে তোকে কষিয়ে কয়টা থাপ্পড় দিয়ে জিজ্ঞেস করবো এমন জীবনে কেনো রেখে গেলি। কিন্তু বর্তমান ভাবনার পরিবর্তন হয়েছে।
অহনার কথাগুলো মন দিয়ে শুনছে অবন্তী। হঠাৎ শুভ্র বললো,
–অহনা প্লিজ এই মেয়েকে বের করো। আমি আমার অতীত ভুলে গেছি।
অবন্তী বললো,
–আমার কথাগুলো শোনার পর যদি শুভ্র তোমার মনে হয় আমার অপরাধ তাহলে তুমি আমাকে বের করে দিয়ো।
অবন্তী বলতে শুরু করলো,
লামিয়া বিয়ের দিন আমাকে পালাতে সহায্য করে। আমাদের বিয়ে ঠিক হবার কিছুদিন পর আমাকে লামিয়া আর তোমার কিছু ছবি দেখায় যেখানে তোমরা একসাথে দাড়িয়ে বসে ছবি তুলেছো। লামিয়া তোমার গা ঘেঁষে ছবি তুলেছে এবং বলেছে তোমাদের মধ্যে প্রেম চলছে তুমি আমাকে ঠকাচ্ছো। প্রথমে বিশ্বাস করেনি কিন্তু যখন দেখলাম আমাকে যা গিফট করছো তাকেও সেই জিনিস গিফট করেছো প্লাস রেস্টুরেন্টে গেলে ও লামিয়াকে আমাদের সাথে নিতে। তাকে তুমি বেশ প্রাধান্য দিতে। তখন আমার মনে হয়েছে তুমি সত্যি লামিয়ার সাথে সম্পর্কে জড়িয়েছো। আমি তোমাকে ইগনোর করা শুরু করি। তুমি ও কেমন জানি হয়ে গেলে। আমার মন খারাপ হতে শুরু করে হঠাৎ একদিন অচেনা নম্বর থেকে কল আসলো একজন ছেলে। অচেনা এই ছেলেটার নাম অয়ন। অয়নের সাথে কথা বলতে বলতে আমি তার সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে যাই। বিয়ের দিন ঘনিয়ে আসে। আমি কিছুতে ই তোমাকে বা বাসায় বিয়ে ভাঙার ব্যাপারটা বলতে পারিনি। বিয়ের সপ্তাহখানেক আগে লামিয়া আমার সাথে দেখা করে এবং প্ল্যান করি আমি বিয়ের দিন পালিয়ে গিয়ে অয়নকে বিয়ে করবো এবং লামিয়া তোমাকে। চিরকুটে অহনার নাম লিখে দিবো জেনো কেউ লামিয়াকে সন্দেহ না করে। কিন্তু আমি বিয়ের দিন লুকিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে অয়নের সাথে তার বাসায় যাই তখন জানতে পারি অয়ন আমাকে ভালোবাসে না বিয়ে ও করবে না। কারণ অয়নকে লামিয়া টাকা দিয়ে এতোদিন প্রেমের অভিনয় করিয়েছে। আসলে একটা গেইম খেলা হয়েছে। আমি বের হতে চাইলে ও অয়ন আমাকে আটকে রেখেছে। আমাকে বলেছে তুমি অহনাকে বিয়ে করেছো তাই যতদিন না তোমার আর লামিয়ার বিয়ে হয় ততদিন আমাকে আটকে রাখবে।আমি অয়নে মাথায় আঘাত করে তার বাসা থেকে বের হয়ে এসেছি।
এতোক্ষণ সব শুনে শুভ্র বললো,
—আমাকে বিশ্বাস করোনি লামিয়াকে বিশ্বাস করেছো এবং একটি ছেলের সাথে পালিয়ে গেছো কোন মুখ নিয়ে আমার সামনে আবার এসেছো? নিজেকে কি মনে করো এখানে আমি তোমার দোষটা ই বেশি দেখতে পাচ্ছি। যে যা বলে তোমাকে তাই করতে হবে নাকি?
অহনা শুভ্রকে থামিয়ে দিয়ে বললো
— আপনি রুমে যান। অবন্তী আমার গেস্ট। আপনি তাকে কিছু বলতে পারবেন না।
–অহনা প্লিজ অনেক ঝামেলা সহ্য করেছি আর ঝামেলায় পড়তে চাই না।
কথাটা বলে ই শুভ্র চলে যায়। শুভ্র চলে যেতে ই অবন্তী আবার কান্না শুরু করে। অহনা অবন্তীর পাশে বসে বললো,
–অহনা তুই আমাকে ক্ষমা করে দিস। আমি তোকে এই পরিস্থিতিতে ফেলতে চাই নাই।
–বাদ দে তো অবন্তী এসব কথা তোর উপর দিয়ে অনেক বিপদ গিয়েছে। ফ্রেশ হয়ে খেয়েনে তারপর বাকি কথা বলবো।
অহনা উপরে নিজের রুমে থেকে নিজের একটা থ্রি পিস নেয়। অহনা রুমে ডুকেছে দেখে ই শুভ্র গিয়ে অহনাকে জড়িয়ে ধরে।
–কি হচ্ছে ছাড়ুন।
–অহনা শান্ত হয়ে দাড়াও। আমার রাগ হচ্ছে অনেক তোমাকে জড়িয়ে ধরলে রাগ কমে যায়। আমাকে রাগ কমাতে সাহায্য করো।
–কেনো রাগ হচ্ছে শুনি
অহনাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে শুভ্র বললো,
–তোমাকে আমি হারাতে পারবো না আর। কতকিছুর পর একটু শান্তি পেয়েছি কিন্তু এখন আবার এই মেয়ে কোথা থেকে হাজির।
–এই মেয়ে বলছেন কেনো?
–ওর নাম নিতে ও আমার খারাপ লাগে। ও আমার অতীত তুমি বর্তমান। আর আমি তোমাকে ভালোবাসি অহনা।
–পরিস্থিতি অনেক সময় নিজের অনূকূলে থাকে না।আপনি ভয় পাচ্ছেন কেনো তাই বুঝতে পারছি না।
–তোমাকে হারানোর ভয়। তুমি এটা বুঝবে না। আমি কোনো তৃতীয় ব্যাক্তি আমাদের মধ্যে চাচ্ছি না। তুমি এই মেয়েকে যেতে বলো।
–অবন্তী যদি ঐদিন আমার নাম টা ঐ চিরকুটে না লিখতো তাহলে কি আপনি আমাকে বিয়ে করতেন?
–বিয়ে আল্লাহ যার সাথে লিখে রাখছে তার সাথে ই হবে এখন যেভাবে ই হক।
অহনা আর কথা বাড়ায় না। থ্রি পিস নিয়ে নিচে চলে যায়। অবন্তী থ্রি পিস দেওয়ার পর অবন্তী অহনার হাত ধরে বলে,
–অহনা আমি যদি এখন শুভ্রকে তোর কাছে চাই তাহলে তুই কি আমাকে দিবি………..
চলবে,
[ভুলক্রটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন]