#সংস্পর্শে_তুমি
#পর্ব_১৯
#নাহিদা_ইসলাম
অহনা আর কথা বাড়ায় না। থ্রি পিস নিয়ে নিচে চলে যায়। অবন্তী থ্রি পিস দেওয়ার পর অবন্তী অহনার হাত ধরে বলে,
–অহনা আমি যদি এখন শুভ্রকে তোর কাছে চাই তাহলে তুই কি আমাকে দিবি
অহনা শুধু হাসলো কোনো উত্তর দিলো না। তমা, তিয়াস, মৌ শপিং থেকে ফিরেছে। বাসায় ডুকে অবন্তীকে দেখে বেশ অবাক হলো কারণ অবন্তীকে এই বাসায় দেখার কথা না।
তমা অবন্তীর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
–তুমি না বিয়ের দিন পালিয়ে গিয়েছো আবার আসছো কেনো। অহনা ভালো আছে প্লিজ এখন আবার তুমি কোনো অশান্তি শুরু করো না।
অবন্তী থ্রি পিস টা অহনার হাতে দিয়ে বললো,
–কেউ আমাকে এই বাড়িতে দেখতে চায় না। আমি চলে যাচ্ছি। তবে তোর কাছে যা চেয়েছি তা যদি দিতে পারিস এই বাড়িতে আবার ফিরে আসবো।
কথাটা বলে আর এক মুহুর্তে জন্য ও দেরি করেনি অবন্তী বাসা থেকে বের হয়ে যায়।
অবন্তী চলে যাওয়ার পর সবাইকে অবন্তী যা বলেছে সব শুনিয়েছে অহনা। সব শুনে মৌ বললো,
–বিয়ে করেছো ভাবি এখন মন দিয়ে সংসার করো। এখন আগে কে ভাইয়াকে ভালোবাসতো বা কাকে বিয়ে করতে চেয়েছিলো এসব সব ই অতীত।
মৌ কথাগুলো বলে নিজের রুমে চলে গেলো। অহনা ও ভাবছে সে কি করবে। দুতলায় যাবে,কয়েক সিঁড়ি উপরে উঠতে ই পা পিছলে পড়ে যায়। শুভ্র নিচে আসছিলো সিঁড়িতে নিচে দিকে তাকাতে দেখলো অহনা নিচে পড়ে আছে। শুভ্র দ্রুত গিয়ে অহনার মাথা তুললো, মাথার সাইডে কেটে রক্ত বের হচ্ছে এতো।
–এই কিভাবে পড়ে গেলে। আমাকে ডাকলে না কেনো?
অহনা নিশ্চুপ যেনো কথা বলার শক্তি হারিয়ে ফেলেছে শুধু চোখ দিয়ে অনবরত পানি পড়ছে। শুভ্র কোলে তুলে উপরে নিয়ে গেলো। বিছানায় শুয়ে দিয়ে কাটা জায়গায় ঔষুধ লাগিয়ে দিলো। চুলগুলো খোলা ছিলো তাই শুভ্র একটা হেয়ার ব্যান্ড দিয়ে আটকে দিলো। চোখ মুছে দিয়ে বললো,
–আমি জানতাম এমন কিছু হবে তাই আমি তোমাকে বলেছিলাম এই মেয়েকে তখন ই বের করে দিতে। কি বলেছে এই মেয়ে তোমাকে, যে তুমি এভাবে কান্না করছো।
অহনা কোনো উত্তর দিলো না। শুভ্র কাছে যেতে ই ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো।
–অহনা প্লিজ এমন করো না আমি তো তোমার সাথে কোনো খারাপ ব্যবহার করেনি।
–আমাকে একটু সময় দেন প্লিজ আমার থেকে দূরে থাকুন।
শুভ্র আর কথা বাড়ালো না রুম থেকে বের হয়ে গেলো। অহনার এমন ব্যবহারে তার খুব কষ্ট লাগছে।
★★★★
পরদিন সকাল সাড়ে নয়টা শুভ্রের ফোনে অনবরত কল আসছে চোখ খুলে মোবাইল হাতে নিতে ই দেখলো ছিয়ানব্বই টা কল আসছে আর অসংখ্য মেসেজ। টেলিগ্রামে একটা ভিডিও পাঠিয়েছে। শুভ্র ভিডিও টা ওপেন করতে দেখে ভিডিওতে অবন্তী হাত কেটে ফেলেছে আর অনেক রক্ত পড়ছে। আবার আরেকটা ভিডিও পাঠায়। ভিডিওটা ওপেন করতে ই অবন্তী বলে,” লোকেশন শেয়ার করছি এখন বাসায় এসো নয়তো কিছুক্ষণ পর আমার জানাজায় আসবে। এই বাসায় কেউ নেই আমি একা” শুভ্র ভিডিও দেখে দ্রুত গাড়ির চাবি নিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে যায়। অবন্তী রাত থেকে অনেকগুলো কল মেসেজ দিয়েছে। শুভ্র অবন্তী দেওয়া লোকেশন অনুযায়ী ই তার বাসায় পৌঁছে। বাসায় গিয়ে অবন্তীকে জ্ঞান হারানো অবস্থায় দেখে। শুভ্র দ্রুত অবন্তীকে হসপিটাল নিয়ে যায়। হসপিটালে এডমিট করার পর শুভ্র অবন্তীর বাবা মাকে কল করে কিন্তু তাদের ফোন বন্ধ পায়। তাদের প্রতিবেশী একজনকে কল করে জানতে পারে উনারা বাসায় নেই। শুভ্র কি করবে বুঝতে পারছে না।অবন্তীর কাজগুলোতে শুভ্র বেশ বিরক্ত হচ্ছে।
অহনা ঘুম থেকে উঠে শুভ্রকে দেখতে না পেয়ে শুভ্রকে কয়েকবার কল করার পর রিসিভ করলো। অহনা রাগ করে ই জিজ্ঞেস করলো,
–সকালে ঘুম থেকে উঠে ই তো না খেয়ে অফিসে যাননি। কোথায় গিয়েছেন এটা আমাকে বলে যাওয়া যেত না?
–আমি আসছি তুমি রাগ করো না।
–রাগ করবো কেনো কোথায় গিয়েছেন জানতে পারি তো?
–বলার মতো হলে এতোক্ষনে বলে দিতাম।
কথাটা বলে ই শুভ্র কল কেটে দিলো। অহনা শুভ্রের এমন ব্যবহারে খুব কষ্ট পেলে। ঘুম থেকে উঠার পর ই মাথা ব্যথায় কাতরাচ্ছে অহনা। মনে হচ্ছে কেউ মাথাটা মেসাজ করে দিলে একটু ভালো লাগতো। সবাই সবার মতো কাজ করছে। আর শুভ্র তো বাসায় ই নাই। তারউপর শুভ্র এভাবে মুখের উপর কল কেটে দিতে অহনা বেশ কষ্ট পেয়েছে।
দুপুরে অহনা রান্নাঘরে কাজ করতে করতে হঠাৎ মাথা ঘুরে পড়ে যায় জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। তমা চিৎকার করে তিয়াসকে ডেকে আনে। মাথায় আগে যেখানে ব্যথা পেয়েছিলো ঐজায়গায় এখন পড়ে গিয়ে আবার ব্যথা পেয়েছে অহনা। অনেক রক্ত ঝড়ছে কিছুতে ই রক্ত বন্ধ না হওয়ার অহনাকে নিয়ে তিয়াস আর তমা হসপিটালে যায়। হসপিটালে যাওয়ার পর অহনার জ্ঞান ফিরে। জ্ঞান ফেরার পর ই অহনাকে যে টেস্টগুলো ডক্টর লিখেছিলো সবগুলো টেস্ট শেষ করে যখন বাসায় চলে যাবে তখন হঠাৎ শুভ্রের সাথে দেখা হলো। শুভ্রর সাথে অবন্তীকে দেখে অহনা অনেকটা অবাক হয়েছে। কাঁপা কাঁপা গলায় বললো,
–এইজন্য ই তাহলে আমাকে তখন বলতে চাননি কোথায় এসেছেন।
শুভ্র তিয়াসকে জিজ্ঞেস করছে অহনার কি হয়েছে। শুভ্র তিয়াসকে বলে অবন্তীকে বাসায় পৌঁছে দিতে শুভ্র এসে অহনার হাতে ধরে। কিন্তু অহনা বার বার হাত সরিয়ে দিচ্ছে। যতবার হাত সরিয়ে দিচ্ছে শুভ্র ততবার অহনার হাত আবার ধরছে। বাসায় এসে নিজের রুমে যেতে ই দেখলো অহনা সোজা হয়ে শুয়ে আছে। শুভ্রকে দেখে ই অহনা অন্যদিকে ফিরে যায়।অহনা অন্যদিকে ফিরে যেতে ই শুভ্র বললো,
–আমাকে ভুল বুঝো না অহনা।আমি কখনো তোমার সাথে কোনো অন্যায় করবো না।
অহনা বললো,
–প্লিজ আমাকে কিছু বলতে আসবেন না। আপনি যদি অবন্তীকে বিয়ে করতে চান আমার কোনো আপত্তি নেই। ভালোবাসা তো জোর করে হয়না মন থেকে আসতে হয়। আপনার যদি এখনও অবন্তীর জন্য কোনো ফিলিংস কাজ করে তো প্লিজ চলে যান।
শুভ্র অহনার পাশে গিয়ে বসে অহনার দুহাত নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে সকাল থেকে সকল ঘটনা বললো। অবন্তী কি করেছে সব শোনার পর অহনা বললো,
–আমাকে বলেননি কেনো?
–তুমি রাগ করতে কষ্ট পেতে এটা আমার সহ্য হতো না।
–এখন আপনার কি মনে হয় আমি আপনার সাথে রাগ করিনি?
শুভ্র অহনাকে অনেকক্ষণ বুঝালো। অহনার মন একটু ও নরম হয়নি।
অবন্তী বেডে শুয়ে হাতের বেন্ডেজটার দিকে তাকিয়ে আছে। শুভ্র তো তার ই ছিলো কিন্তু হঠাৎ নিজের নির্বুদ্ধিতা কারণে শুভ্র এখন অন্যকারো। শুভ্রকে অহনার সাথে দেখলে সহ্য হয় না অবন্তীর। আজ দুপুরের ঘটনার পর থেকে বুঝে গেলে সে শুভ্রের জীবনের অতীত ছাড়া আর কিছুই না তার কোনো মূল্য ই শুভ্রের জীবনে নাই।অহনাকে সে অনেক ভালোবাসতো কিন্তু এখন অহনাকে দেখলে রাগ হয় কষ্ট লাগে।
★★★★
সকাল সকাল অহনা হসপিটাল এসেছে। আজকে তার টেস্টগুলোর রিপোর্ট দিবে। অহনা শুভ্রকে না বলে এসেছে। শুভ্রকে বললে ই একা আসতে দিতো না,তাই আর বলেনি। রিপোর্ট ডেলিভারি কাউন্টার থেকে রিপোর্ট গুলো নেওয়ার পর অহনা রিপোর্টগুলো দেখে কান্না করে দেয়। প্রেগ্ন্যাসির টেস্ট দিয়েছিলো ডক্টর এবং রিপোর্ট পজেটিভ এসেছে…..
চলবে,
[ভুলক্রটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন ]