#সঙ্গিন_প্রনয়াসক্তি 🍁🍁
#পর্বঃ২৩
#লেখনীতেঃsuraiya_rafa
[ক’পি করা নিষিদ্ধ 🚫]
[প্রাপ্তমনস্ক এবং মুক্তমনাদের জন্য]
নির্ঝঞ্জাট বিদ্যাপিঠ সানফ্রান্সিসকো স্টেট ইউনিভার্সিটি। সানফ্রান্সিসকোর মধ্যে সবচেয়ে সুপরিচিত এবং নামকরা হওয়াতে এই ভার্সিটিতে ফরেইনার শিক্ষার্থীদের অভাব নেই। সেই সাথে সাথে ফরেইনার প্রফেসরদেরও। তবে আজ ভার্সিটি ক্যাম্পাসে খুব একটা শিক্ষার্থীদের আনাগোনা নেই। এর কারন শীতের শেষ ভাগ চলছে যার দরুন সবাই সি’বিচ, জঙ্গল, পাহাড়, এথায় সেথায় ক্যাম্পিং এ গিয়েছে।
এখানকার শিক্ষার্থীরা বইয়ের পাতায় নয়, হাতে কলমে, কিংবা পর্যবেক্ষন করেও অনেক কিছু শেখে। সারাবছর তাদের ক্লাসরুমের বাইরেও অনেক কার্যক্রম থাকে। অরুও বিগত কয়েকমাসে অনেক কিছুই শিখেছে, অনেক কিছু লক্ষ করেছে,ভালোমন্দ দুটোই। আমেরিকার সংস্কৃতির মধ্যে এমন অনেক কিছুই আছে যা শুনলে বা দেখলে গা ঘিনঘিন করে ওঠে, তার মধ্যে নিখিল ভাইয়ের রিলেশন শীপ অন্যতম। এখনো ক্রীতিকের বলা কথাগুলো মনে পরলে নাক সিকোয় উঠে যাচ্ছে অরুর।
ভার্সিটির গেইট পেরিয়ে, নরম সবুজ ঘাসগুলোকে পায়ে মারাতে মারাতে হিজিবিজি ভাবনায় বিভোর হয়ে আছে অরু। ওর পরনে চিকন কারীর সফেদ রঙের লং কুর্তি আর লেগিংস। কুর্তির উপরে এটে আছে লেডিস ডেনিম জ্যাকেট। লম্বা চুলগুলো পোনিটেল করে গার্ডার নিয়ে বাঁধা। ধীরগতিতে হাঁটার জন্য মাথাটাও নিচু হয়ে আছে সেই কখন থেকে।ওই জন্যইতো সায়নী যে সেই কখন থেকে ওর সাথে সাথে হাঁটছে অরুর তাতে হদিস নেই। এতোক্ষণ ধরে পাশেপাশে হাঁটার পরেও মেয়েটা একবার মাথা তুলে তাকালো না অবধি, কি এমন ভাবছে ও? মনেমনে বিরক্ত হয়ে, সোজা গিয়ে অরুর সামনে দাড়িয়ে খানিকটা গাল ফুলিয়ে সায়নী জানালো,
— কি এমন ভাবছো বলোতো? সেই তখন থেকে তোমার সাথে সাথে হাঁটছি খেয়ালই করছো না।
অরু চট করে ভ্রম থেকে বেরিয়ে মাথা তুলে বললো,
— আরে সায়নী যে, কেমন আছো বলো?
— এতোক্ষণে জিজ্ঞেস করার সময় হলো?
— আ’ম সরি, একটু বেখেয়ালে ছিলাম।
সায়নী এবার বুঝতে পারার মতো করে হ্যা সূচক মাথা দুলিয়ে বললো,
— ইট’স ওকে, কিন্তু তুমি এতোদিন কই ছিলে?
কতদিন ক্যাম্পাসে আসোনা বলোতো?
সায়নীর কথায় অরুর মনে পরে যায়, সেই নিখিল ভাইয়ের সত্যি জানার পর থেকেই আর ভার্সিটির গেইট মারায়নি ও, তারপর আরও কত কিই’না হয়ে গেলো,জীবনটাই এখন এলোমেলো।
— আবার কি ভাবতে বসলে?
অরু না সূচক মাথা নাড়িয়ে ছোট্ট করে বললো,
— কিছু না।
সায়নী এবার হাসির দ্বারা ঠোঁট প্রসারিত করে বললো,
— এ্যাই অরু, জেকে স্যারের কি খবর?
অরু ঠোঁট উল্টে বললো,
— ওনার কথা আমি কি করে জানবো, ওনাকে গিয়েই বরং জিজ্ঞেস করো।
সায়নী এবার ভ্রুকুঞ্চিত করে বললো,
— তুমি ওনার স্টেপ সিস্টার ,তুমি জানবে নাতো কে জানবে? ঢং।
সায়নীর কথায় অরু কিঞ্চিত ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসলো, পরক্ষণেই সায়নী আবারও শুধালো,
— বলোনা একটু, এতোদিন স্যার ভার্সিটিতে কেন আসেনি?
— আমি যতদূর জানি উনি ব্যাংকক গিয়েছিলেন।
অরুর উত্তর শুনে সায়নী বেশ খুশি হয়ে যায়, খুশি হয়ে অরুর হাত জড়িয়ে ধরে বলে,
— এই না হলে আমার ননদিনী, তুমি জানো জেকে স্যারকে আমি অনেক পছন্দ করি, কিন্তু বলার সাহস হয়ে ওঠেনা, শুনেছি ব্যাক্তি জীবনে উনি অনেক বেশি রাগী,আসলেই কি তাই?
সায়নীর কথার বিপরীতে অরু কিছু বলতে যাবে তার আগেই ওর চোখ আটকে যায় ক্যাম্পাসের অন্যপাশে পুলসাইডে কিছু মানুষের ভীরের মাঝে, সেখানে নিখিল ভাই ও উপস্থিত। তারা সবাই কোনো কিছু একটা নিয়ে বেশ উল্লাসে মেতে আছে। কিন্তু কি নিয়ে? অগত্যাই সায়নীর দিকে তাকিয়ে উল্টে প্রশ্ন ছোড়ে অরু,
— আচ্ছা সায়নী ওখানে কি হচ্ছে?
সায়নী অরুর দৃষ্টিপাত অনুসরণ করে,সেদিকে একবার তাকিয়ে বললো,
— সাইন্টিস্ট ডিপার্টমেন্ট থেকে বাংলাদেশী নিখিল ভাই ওদের গ্রুপের টীম লিডার হয়েছে, সেটারই সেলিব্রেশন করছে বন্ধুবান্ধবদের নিয়ে।
— ওহ আচ্ছা।
অরুর কথার মাথায় সায়নী অবিশ্বাসের সুরে বলে,
— হি ইজ আ ভেরি ট্যালেন্টেড গাই। কত অল্প সময়েই কেমন টীম লিডার হয়ে গেলো। তারউপর দুই দুইটা সুন্দরী গার্লফ্রেন্ড সবদিক থেকে সোনায় সোহাগা, আহা।
অরু মুখ ভঙ্গিমায় বিরক্তির ছাপ টেনে বললো,
— একজন মানুষের আবার দুইটা গার্লফ্রেন্ড হয় কেমন করে?
সায়নী কুটকুটিয়ে হেঁসে বললো,
— হয় হয়, আমেরিকাতে সব হয়, চাইলে তুমিও….
সায়নীর কথা পুরোপুরি শেষ হওয়ার আগেই,পেছন থেকে ডেকে উঠল কেউ,
— অরোরা!
অরু জানে এটা কে হতে পারে, এই পুরো ক্যাম্পাসে অরোরা বলে ওকে একজনই ডাকে। কিন্তু ও এখন কিছুতেই এই মানুষটার মুখোমুখি হতে চায়না, তাই অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে, না শোনার ভান করে চোখ খিঁচে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো সেখানেই।
সায়নী পেছনে ঘুরে বললো,
— আরে নিখিল ভাই যে আপনি অরুকে চেনেন?
নিখিল হ্যা না কোনো উত্তর না দিয়ে স্মিত হেসে অরুর দিকে তাকিয়ে পুনরায় ডাকলো,
— অরোরা?
সায়নী সামনে দাড়িয়ে আছে,নিখিল ও এগিয়ে এসেছে, এবার আর ইগনোর করার সুযোগ নেই পেছনে ঘুরতেই হবে, কিছু করার নেই ভেবে নিখিলের মুখোমুখি হতে যাচ্ছিল অরু, এখনো পেছনে ঘোরেনি, ঘুরবে ঘুরবে ভাব, ঠিক তখনই কোত্থেকে যেনো বাজখাঁই কর্কষ আওয়াজ কানে ভেসে এলো ওর,
— অরুউউউ।
আচমকা ক্রীতিকের আওয়াজ পেয়ে কেঁপে উঠলো অরু, তরিৎ গতিতে চোখ দুটো খুলে এদিক ওদিক তাকিয়ে খুঁজতে লাগলো তাকে, খানিক্ষন খোজাখুজির পর দেখলো ভবনের দোতলার অফিসরুমের করিডোরে দাঁড়িয়ে ওর দিকেই কটমট করে তাকিয়ে আছে ক্রীতিক। ক্রীতিকের চোখের দিকে একপলক তাকিয়ে একটা শুষ্ক ঢোক গিলে সায়নীকে উদ্দেশ্য করে অরু বলে,
— চলো ক্লাসে যাই দেরি হয়ে যাচ্ছে।
এই বলে সায়নীর হাত ধরেই দ্রুত ক্লাসের দিকে পা বাড়ায় অরু।
পেছন থেকে নিখিল ডেকে বললো,
— আরে অরোরা কথাটাতো শুনে যাও। নিখিল এখনো অরুর যাওয়ার পানে তাকিয়ে আছে, তখনই অন্যদিক থেকে একজন এসে নিখিলের উদ্দেশ্যে বলে,
— আরে ভাই তুমি এখানে, তোমার গার্ল ফ্রেন্ডদের কেউ ধা’ক্কা মে’রে পুলে ফেলে দিয়েছে। একটাও তো সাঁতার জানেনা, দু’টোই হাবুডুবু খাচ্ছে ।
নিখিল আশ্চর্য হয়ে বললো,
— কি বলছো? কে ফেললো?
—তাতো জানিনা, ভীরের মাঝে কে কাকে ধা’ক্কা দিয়েছে বলা মুশকিল, তুমি তারাতাড়ি যাও।
নিখিল হ্যা সূচক মাথা নাড়িয়ে, দ্রুত সেখান থেকে প্রস্থান করে।
অরু, সায়নী, নিখিল সবাই যে যার মতো চলে গিয়েছে, যার ফলে নরম ঘাস আবৃত্ত যায়গাটা শূন্যই পরে আছে, দোতলার করিডোর দিয়ে ক্রীতিক এখনো সেই শূন্যস্থানের দিকে তাকিয়েই ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসছে।
*****************************************
পায়ের স্যান্ডেল দুটো আঙুলের ভাঁজে নিয়ে খালি পায়ে সাগরের কোল ঘেঁষে হাটছে অনু। প্যান্টটা একটুখানি গুটিয়ে গোড়ালি থেকে উপরে তুলে, প্রত্যয়ও অনুর পাশাপাশি হাঁটছে । সাগর পারের চারিদিকে শঙ্খচিল আর পানকৌড়ির চিউ চিউ আওয়াজ, অনু বাবল টিতে একটা করে সিপ নিচ্ছে আর চোখ বন্ধ করে পাখির কলরব শুনছে। সেই কখন থেকে ওদের মাঝে নিরবতা বিরাজমান, অনেকক্ষণের নিরবতা ভেঙে সর্বপ্রথম প্রত্যয়ই বলে ওঠে ,
— তুমি না মানে আপনি, ভারী অদ্ভুত জানেন? কখন যে রে’গে যান, আর কখন যে ঠান্ডা হয়ে যান আমি নিজেই বুঝতে পারিনা, এতো মুড সুইং কেন হয়?
প্রত্যয়ের কথায় অনু শব্দ করে হেসে বললো,
— ইউ ক্যান কল মি “তুমি”। এতো ইতস্তত কেন হচ্ছেন? আফটার অল উই কিসে’স ইচ আদার।
অনুর কথায় কালকের দৃশ্যপট ভেসে উঠলো প্রত্যয়ের চোখে, ও তৎক্ষনাৎ জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে বললো,
— ইয়ে মানে তোমার কিছু জানার নেই?
অনু গম্ভীর গলায় বললো,
— হুম আছেতো, অনেক কিছু জানার আছে,
প্রত্যয় শুধালো,
— বলো কি জানতে চাও? সব বলবো তোমায়।নো লুকোচুরি।
—আমাকে ইউজ করা কেন হলো শুনি?আপনার লং টাইম লাভ হিস্ট্রি। তাহলে আমার প্রতি দূর্বলতা অনুভব করারই বা কারনটা কি?
অনুর অনেকগুলো প্রশ্নের উত্তর একসাথে দেওয়ার জন্য প্রত্যয় একটু রয়েসয়ে বললো,
—প্রথমত তিন্নি আমার সাথে ভালোবাসার হাজারো প্রতিস্রুতি দিয়ে বছরের পর বছর চি’ট করেছে, জামাকাপড়ের মতো সুগার ড্যাডি চেঞ্জ করেছে, তাহলে ওর প্রতি আমার ভালোবাসাটা রইলো কোথায়? তাছাড়া ও হাইলি ড্রা’গ এডিক্টেড। এক কথায় বলতে পারও ওর জীবনে শুদ্ধ বলে আর কিছু অবশিষ্ট নেই। এসবের কারনে তিন্নির প্রতি আমার ঘৃ’ন্য মনোভাব তৈরি হয়েছে আরও কয়েকবছর আগেই। আর এখন তো ওকে মনে রাখার প্রশ্নই ওঠেনা। ওকে মাঝে মধ্যেই আমার পা’গল মনে হয়, জানো? এতোদিন খবর ছিলোনা, যেই আমি বছর খানিক ধরে একটু মুভ অন করেছি। এখন আবার আঠার মতো পেছনে লেগে আছে। ওর কাজই বোধ হয় আমার জীবনটাকে অগোছালো করে দেওয়া। তবে হ্যা এরপর ও যদি দ্বিতীয়বার এমন কিছু করে আমি যথাযথ ব্যাবস্থা নেবো, আই প্রমিস।
একটুখানি থেমে বুকের ভেতরের চাপা নিঃশ্বাসটা উগড়ে দিয়ে, প্রত্যয় আবারও বলে,
—এবার তুমি যদি বলো তুমিই কেন? সেটার উত্তর আমার জানা নেই। তোমাদের ভিসা টিকেট প্রসেসিং এ অসংখ্যবার তোমার ছবি দেখেছি আমি, তেমন কিছুই ফিল হয়নি, কিন্তু সেদিন ক্যাফেতে তোমার এক ঝলক হাসির মাঝে হারিয়ে গিয়েছিলাম আমি। উত্তাল ঢেউয়ের পানে চেয়ে একমনে কথাগুলো বলে অনুর দিকে তাকিয়ে প্রত্যয় শুধালো,
— প্রেম তো অনেকের সাথেই হয়, ভালোবাসার মানুষ কয়জন হতে পারে বলো? অনু, তুমি কি আমার শেষ ভালোবাসা হবে?
— জানিনা।
প্রত্যয়ের মুখের উপর কথাটা বলে সামনের দিকে হাঁটতে হাঁটতে ঠোঁট কামড়ে মুখ টিপে হাসছে অনু।
প্রত্যয় ওর পেছন পেছন হেঁটে এসে বললো,
— এ্যাই মেয়ে, এতো মুড সুইং হয় কেন তোমার?
অনু পেছনে ঘুরে শুধালো ,
— কেন ভ’য় করছে? সামলাতে পারবেন না?
প্রত্যয় ওর হাতের মাঝে হাত ঢুকিয়ে বললো,
— তুমি বিশ্বাস হয়ে থেকে গেলে, আমি নিঃশ্বাস দিয়ে হলেও সামলে নেবো।
*****************************************
গোধূলি বেলা চলমান, তবে আকাশের অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে আমাবস্যা রাত। পুরো আকাশ ঘুটঘুটে কালো মেঘে ছেয়ে আছে। বিদ্যুতের ঝলকানিতে ক্ষনে ক্ষনেই পশ্চিম আকাশ র’ক্তিম হয়ে চোখের সামনে ভেসে উঠছে। তারসাথে বাতাসের তান্ডব তো আছেই। ঝিরিঝিরি বৃষ্টি পরছে সেই বিকেল থেকেই রাতে বোধ হয় ঝড় আসবে।
ভার্সিটির গেইটের সামনে একটা কাক পক্ষিও অবশিষ্ট নেই। সবাই যে যার মতো চলে গিয়েছে। শুধু মাত্র অরুই ছাতা হাতে নিয়ে সেই কখন থেকে বাসের জন্য দাঁড়িয়ে আছে। শেষ বাসের এখনো সময় হয়নি, কিন্তু এই ঝড়ের মাঝে শেষ বাস আসবে কিনা সন্দেহ। ওদিকে বৃষ্টির তোপ ধীরে ধীরে বেড়েই চলেছে, হাতে ছাতা থাকা সত্বেও পায়ের দিকটা ভিজে গিয়েছে। অরু হাত দিয়ে জামা কাপড় থেকে বারবার বৃষ্টির পানিগুলো ঝেড়ে সরাচ্ছে। তখনই বিকট আওয়াজে হর্ন বাজিয়ে ভার্সিটির গেইট থেকে বের হয়, ক্রীতিকের কালোরঙা মার্সিটিজ। বাইরে ততক্ষণে ঝুম বৃষ্টি। ক্রীতিক অরুর সামনে গাড়ি দাঁড় করিয়ে, জানালার কাঁচ নামিয়ে নির্লিপ্ত কন্ঠে বললো,
— উঠে আয়, রাত হলে ঝড় আরও বাড়বে আজ আর বাস আসবে বলে মনে হচ্ছে না।
থাইল্যান্ড থেকে আসার পর থেকেই ক্রীতিকের উপর মহা বিরক্ত অরু, না পারতে কথা বলেনা। এখনো বলতে ইচ্ছে করছে না। তাই ও দাঁড়িয়ে না থেকে চুপচাপ হাঁটা ধরে বৃষ্টিস্নাত রাস্তার ফুটপাত ধরে। কেন যেন মনের মাঝে জিদ চেপে বসেছে, ক্রীতিকের কথাটা কিছুতেই শুনবে না আজ। সবসময় ক্রীতিকের জিদের কাছে পরাজিত হয়ে ক্লান্ত অরু। ক্রীতিকের জিদের বসে করা কর্মকান্ড মনে পরতেই হাঁটার গতি আরও বাড়িয়ে দিলো ও। পায়ের জুতা পানিতে ভিজে জপজপ আওয়াজ হচ্ছে, তবুও হনহনিয়ে হাঁটছে অরু। তবে বেশিদূর এগোনোর আগেই পেছন থেকে ওর ছাতাটা টান মে’রে নিয়ে নেয় ক্রীতিক। মাথার উপর থেকে ছাতা সরে যাওয়ায় কয়েকমূহুর্তের মাঝেই ঝুম বৃষ্টিতে কাক ভেজা হয়ে যায় অরু। ক্রীতিক ও তাই, ফর্মাল ড্রেসআপ, ব্ল্যাক সুজ,রিস্টওয়াচ সবকিছু ভিজে একাকার। হুট করে ছাতা কেড়ে নেওয়াতে অরু, ভ্রু কুঁচকে পেছনে ঘুরে দেখতে পায়, ওর হ্যালো কিটি ছাতাটার বেহাল দশা করে ছেড়েছে ক্রীতিক। সেটাকে দুমড়ে মুচড়ে ভে’ঙে ডাস্টবিনে ছু’ড়ে মে’রে ক্রীতিক বললো,
— এবার যা।
অরুও কম যায়না, ক্রীতিকের বাক্য শ্রবনের সঙ্গে সঙ্গে বৃষ্টির মাঝেই হাটা ধরে সামনের দিকে, তবে দ্বিতীয়বার স্পর্ধা দেখিয়ে আর পার পেলোনা অরু, সামনের দিকে এককদম দিয়েছে কি দেয়নি তার আগেই ওর বুকের কাছের জামাটা খামচে ধরে ক্রীতিক।এভাবে হঠাৎ আ’ক্রমণে কেঁপে উঠে অরু হকচকিয়ে বলে,
— কি করছেন জামাটা ছিড়ে যাবে তো।
ক্রীতিক ওর কথায় পরোয়া না করে, অরুর চোখের দিকে নিজের বাঁজপাখির মতো তীর্যক চাহনি নিক্ষেপ করে বললো,
— কথা শুনছিস না,অনেক সাহস বেড়ে গিয়েছে দেখছি,আমার সামনে তেজ দেখাতে এলে, সোজা গাড়িতে নিয়ে বাসর সেরে ফেলবো। আর তুই এটা ভালো করেই জানিস, আমি যা বলি তাই করি, তাই নিজের ভালো চাইলে চুপচাপ গাড়িতে গিয়ে বস।
ক্রীতিকের লাগামহীন কথার পাছে গলার স্বর মূহুর্তেই ক্ষীণ হয়ে এলো অরুর। বরাবরের মতো এবারও ক্রীতিকের জিদের কাছে হেরে গিয়ে ভেজা শরীর নিয়ে চুপচাপ গাড়িতে বসে পরলো ও। অরু গাড়িতে বসতেই ক্রীতিক এসে ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ি স্টার্ট দেয়।
.
বাইরের বৃষ্টির রিমঝিম আওয়াজ গাড়ির হাই কোয়ালিটির জানালা ভেদ মোটেই ভেতর আসতে পারছে না। চারিদিকে পিনপতন নীরবতা, শুধু একটু পরপর নিরবতা ভেঙে সশব্দে হাঁচি দিচ্ছে ক্রীতিক। হাঁচি দিতে দিতে চোখ, নাক লালচে বর্ণ ধারণ করেছে তার। সেই কখন থেকে মানুষটা একাধারে হাঁচি দিচ্ছে দেখে অরু একটু আগ বাড়িয়ে বলে,
— বৃষ্টিতে ভিজে আপনার ঠান্ডা লেগে গেলো বোধ হয়।
ক্রীতিক আবারও হাঁচি দিতে যেয়ে নিজেকে সংবরণ করে বলে,
— গত দুদিন ধরে জ্বর। তাই হয়তো বৃষ্টির পানিতে পুনরায় ঠান্ডা লেগে গিয়েছে।
ক্রীতিকের কথায় অরু বেশ অবাক হয়, একই বাড়িতে থাকে ওরা তিনজন, অথচ একটা মানুষের গত দুদিন ধরে জ্বর, ওরা সেটা জানেই না। আর ক্রীতিকই বা কেমন,জ্বর হলে মানুষ এতোটা সাভাবিক কি করে থাকতে পারে? মুখ দেখে বোঝার উপায় নেই যে মানুষটার শরীর খারাপ, সবসময় সেই রা’গী রা’গী ভাব।
*****************************************
উত্তাল প্রকৃতি রাত বাড়ার অপেক্ষা করেনি আর।সন্ধ্যা রাতেই শুরু করে দিয়েছে তীব্র ঝড়ের তা’ন্ডব। অনুর সাথে মাত্রই কথা হলো অরুর, সেও ঝড়ের মাঝে কোনো এক ক্যাফেতে আটকা পরেছে,সাথে অবশ্য প্রত্যয় আছে চিন্তা করার কারন নেই।
অনুর সাথে কথা হওয়ার পরপরই বিদ্যুৎ চলে গিয়েছে। এভাবে বিদ্যুৎ চলে যাওয়ায় অরু একটু ভরকে গেলো। অন্য সময় বিদ্যুৎ গেলেও বাইরে থেকে আসা সোডিয়ামের আলোয় আলোকিত থাকে হলরুম। অথচ আজ নিকোশ কালো ঘুটঘুটে অন্ধকার। ব্যাপারটা বোঝার জন্য কাঁচের দেওয়ালে উঁকি দিতেই অরু দেখতে পায়, বাড়ির বাইরের রাস্তায় কোথাও একফোঁটা আলো নেই। হয়তো ঝড় বৃষ্টিতে কোথাও বৈদ্যুতিক তাড় বিচ্যুত হয়ে এমনটা হয়েছে। কিন্তু এই মূহুর্তে চারিদিকের এমন তীব্র অন্ধকারে অরুর কেমন গা ছমছম করছে। ও কোনোমতে অন্ধকারে সিঁড়ি হাতরে ক্রীতিকের রুমের দিকে পা বাড়ায়। ক্রীতিক রুমেই আছে, অথচ ওর রুমটাও পুরোপুরি তিমিরে ঢাকা। একটু সময় নিয়ে খুজতে খুজতে ক্রীতিকের রুমের দরজার বাইরে কয়েকবার টোকা মে’রে অরু মিনমিনিয়ে বললো,
— একটু ফোনের ফ্ল্যাশটা অন করবেন ভ’য় করছে।
অরু বলার সঙ্গে সঙ্গে ক্রীতিক মোবাইলের ফ্ল্যাশ অন করে বললো,
— ভেতরে আয়।
অরু দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকেই মৃদু আলোতে দেখতে পায় ক্রীতিক কম্ফোর্টার মুড়ি দিয়ে শুয়ে আছে। আর গতানুগতিকের চেয়ে একটু জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিচ্ছে। অরু জানে ক্রীতিক কখন এমনটা করে, তাই ও এগিয়ে গিয়ে শুধালো
— জ্ব’র বেড়েছে? আমি কি একটু চেক করে দেখবো?
ক্রীতিক হাস্কি স্বরে জবাব দিলো,
— নিষেধ করেছি?
অরু এবার একটু সংকোচ নিয়ে ক্রীতিকের কপালে হাত ছোঁয়ায়,অতঃপর বলে,
— আপনার অনেক জ্বর কি করে ঠিক আছেন বলুন তো?
কথাটা বলে অরু মোবাইল হাতে নিয়ে উঠতে নিলে, ক্রীতিক নিজের তপ্ত হাত দিয়ে অরুর হাত টেনে ধরে শুধায়,
— কোথায় যাচ্ছিস?
অরু পেছন ঘুরে বলে,
— কাপড় ভিজিয়ে নিয়ে আসছি, মাথায় জলপট্টি দিলে ভালো লাগবে ততক্ষণ একটু অন্ধকারে থাকুন।
.
সন্ধ্যারাত গড়িয়ে ঘড়ির কাটা গিয়ে ঠেকেছে রাত দশটার কোঠায়। বিদ্যুৎ এখনো আসেনি। আর না অনু ফিরেছে । অরু সেই যে ক্রীতিকের শিওরে বসেছে এখনো বসেই আছে। বৃষ্টির রিমঝিম আওয়াজে চোখদুটো ভার হয়ে এসেছে ঘুমে। এবার মনে হচ্ছে যাওয়া দরকার, তাই ও ক্রীতিকের মাথার জলপট্টিটা উল্টে দিয়ে বললো,
— আমি এখন যাই, ঘুম পেয়েছে।
তৎক্ষনাৎ ওর হাতটা শ’ক্ত করে চেপে ধরে চোখ বন্ধ রেখেই ক্রীতিক বলে,
— কোথাও যাবিনা, এখানেই বসে থাক।
— বৃষ্টি কমেছে, বিদ্যুৎ, আপা দুটোই চলে আসবে। তাছাড়া আমার ঘুম পেয়েছেতো।
ক্রীতিক অরুর কথায় তোয়াক্কা না করে বললো,
— ঘুমাতে হবেনা।আমি বলেছি তুই যাবিনা, তার মানে যাবিনা, নয়তো সবাইকে বলে দেবো তুই আমার বউ।
অরু দাঁত কিরমির করে বিরক্ত হয়ে বললো,
— ব্লা’কমেইলটা আপনি খুব ভালোই করতে পারেন, সব আমাকে শা’স্তি দেওয়ার ধান্দা।
ক্রীতিকের সাথে কথায় না পেরে, অগত্যাই অরু ঘুমু ঘুমু চোখ নিয়ে টলতে টলতে ক্রীতিকের কাছেই বসে থাকে।
*****************************************
একটা শ্বাসরু’দ্ধ কর পরিস্থিতিতে পরে খুব ভোরে ঘুম ভেঙেছে অরুর। কেমন যেন গরম লাগছে সবকিছু, গলার কাছে গরমটা একটু বেশিই লাগছে। চোখ দুটো তখনও খোলেনি ও। তবে আশেপাশের সুঘ্রাণটা বারবার নাকে এসে সুড়সুড়ি দিচ্ছে, চন্দনকাঠের স্নিগ্ধ মন মাতানো সুবাস। একটা লম্বা শ্বাস টেনে সুবাসিত বাতাসটা ভেতরে পুরে নিয়ে নড়েচড়ে ওঠে অরু। কিন্তু একি নড়াচড়ার করার কোন উপায়ন্তর নেই। মনে হচ্ছে হাত পা কেউ বে’ধে রেখেছে। কিন্তু কে দেখাবে এই দুঃসাহস?নিজেকে এভাবে বাঁধনে আবিষ্কার করে, আচমকাই চোখ খোলে অরু। চোখ খোলার সঙ্গে সঙ্গে দুনিয়া দুলে ওঠে ওর।
অরু ক্রীতিকের বিছানায়, ক্রীতিকের সাথে ঘুমিয়ে আছে। ক্রীতিক নিজের হাত পা দিয়ে অরুকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে নিজের বুকের মধ্যে নিয়ে নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছে। অরুর লম্বা চুলগুলো ক্রীতিকের কালো টিশার্টের সাথে মিলেমিশে একাকার। এভাবে ক্রীতিকের পাশে নিজেকে আবিষ্কার করে অরু ঘাবড়ে গিয়েছে। মনেমনে ভাবছে,
— আপা জানলে কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে, আমার এক্ষুনি চলে যাওয়া উচিৎ।
ক্রীতিকের পিঠের নিচ থেকে নিজের চুলগুলো আস্তে করে টেনে বার করতে করতেই অরুর চোখ চলে যায় ক্রীতিকের ঘুমন্ত মুখের দিকে, এতো রা’গ, এতো জিদ, এতো বেপরোয়া সভাব কোনোকিছুর লেশমাত্র নেই ঘুমন্ত মুখটাতে। এখন যা রয়েছে সেটা কেবলই আকর্ষন, যে কেউ এই ঘুমন্ত মুখটা দেখলে তীব্র আকষর্ন অনুভব করবে। কি সুন্দর চেহারা, মাসআল্লাহ। ঘুমের মাঝে ক্রীতিক খানিকটা নড়েচড়ে উঠতেই ভ্রম ছুটে যায় অরুর। ও দ্রুত বিছানা ছেড়ে চুল গুলো হাত খোঁপা করতে করতে বেড়িয়ে যায়।যাওয়ার আগে কি ভেবে যেনো আরও একবার ফিরে এসে, ঘুমন্ত ক্রীতিকের কপালে হাত ছোঁয়ায়। অতঃপর মনে মনে নিশ্চিন্ত হয়ে বলে,
— যাক তীব্র জ্ব’রটা কমে গিয়েছে, এখন আমি দ্রুত ভাগি।
.
রুমে আসতেই পা’দুটো থমকে যায় অরুর, আপা এখনো ঘুমিয়ে আছে, এই ফাঁকে কিছু একটা অজুহাত বানাতে হবে, কিন্তু বানানো যায়?
অরু যখন অজুহাত ভাবতে ভাবতে দাঁত দিয়ে নখ কাঁ’টায় ব্যাস্ত, তখনই আড়মোড়া ভেঙে অনু বলে,
— কিরে এতো সকালে আবার কোথায় যাচ্ছিস?
অরু ধরা পরে যাওয়া চো’রের মতো আমতা আমতা করে বলে,
— ককোথাও না এখন আবার কোথায় যাবো।
অরুর কথায় গুরুত্ব না দিয়ে অনু পুনরায় শুধালো,
— হ্যারে, কাল কখন এসেছিলি ঘুমাতে?
অরু ভ্রু কুঁচকে বলে,
— কোথা থেকে আসবো?
— আরে তুই’তো কাল রাতে ক্রীতিক ভাইয়ার মোবাইল থেকে ম্যাসেজ দিলি আমায়, তুই নাকি পড়ছিস, খুবই ইম্পর্টেন্ট টপিক ঘুমাতে দেরি হবে। ওই জন্যই তো তোকে আর ডিস্টার্ব করিনি, রুমে এসে ঘুমিয়ে পরেছি।
অরু এতোক্ষণে বুঝলো ওর হয়ে ক্রীতিক ম্যাসেজ করেছে অনুকে। এবার ও একটু সস্থির নিঃশ্বাস ছেড়ে বললো,
— হ্যারে আপা, অনেক কঠিন পড়া ছিল, ওই জন্যই তো ক্রীতিক ভাইয়ার রুমে গিয়েছিলাম পড়া বুঝতে। বাড়িতে স্যার থাকলে যা হয় আরকি।
এক নিঃশ্বাসে কথাটুকু শেষ করে নিজের শরীরের গন্ধ নিলো অরু। পুরো শরীর জুড়ে স্যান্ডাল উড পারফিউমের গন্ধ মো মো করছে। যে কেউ কাছে কাছে এলে বুঝতে পারবে এটা ক্রীতিকের শরীরের গন্ধ। অরু উপায়ন্তর ভেবে না পেয়ে দ্রুত ওয়াশরুমে ঢুকে অনুর উদ্দেশ্যে বললো,
— আমি একটু শাওয়ার নিয়ে আসছি তুই থাক।
অনু হাই তুলে আবারও ঘুমাতে ঘুমাতে বললো,
— এতো সকালে শাওয়ার নেওয়ার কি আছে? পা’গল মেয়ে।
চলবে…..
#সঙ্গিন_প্রনয়াসক্তি 🍁🍁
#পর্বঃ২৪
#লেখনীতে_suraiya_rafa
[ক’পি করা নিষিদ্ধ🚫]
[প্রাপ্তমনস্ক এবং মুক্তমনাদের জন্য]
রোববারের সকাল। যান্ত্রিক জীবনে অভস্ত্য মানুষগুলোর আজ ছুটির দিন। বাইরে প্রখর রোদের পূর্বাভাস। গত কয়েকদিনের বৃষ্টি শেষে আজই বোধ হয় সূর্যের মুখ দেখতে পাবে ধরনী। ভেজা স্যাতস্যাতে পরিবেশ উবে গিয়ে শুকিয়ে যাবে পিচঢালা ঝকঝকে রাস্তাঘাট। তবে সেই রাস্তায় পদচারণার তাড়া আজ খুব একটা কারোরই নেই। ছুটির দিন বলে কথা।
যেহেতু ছুটির দিন সেহেতু আজ ভার্সিটি নেই। অরু আজ বেশ বেলা করে ঘুম থেকে উঠেছে। এতো বেলা করে উঠেও আজকাল চোখদুটো থেকে ঘুম কাটানো বড্ড দায়।কোনোমতে ঢুলুঢুলু পায়ে রোবটের মতো নিজের সকালের কাজ গুলো সেরে অরু চলে এসেছে হলরুমে। বাড়িতে অরু ব্যতিত কেউ নেই। শুধুমাত্র হলরুমের ডিভানে বসে লেজ নাড়ছে ডোরা। ডোরাকে এভাবে ডিভানের উপর বসে থাকতে দেখেই একঝটকায় ঘুম ছুটে গেলো অরুর। চোখের পাতায় কয়েকবার পলক ফেলে দাঁত দিয়ে জিভ কে’টে এগিয়ে গিয়ে ডোরাকে উদ্দেশ্য করে অরু বললো,
— কি করেছিস ডোরা? এটা জায়ান ক্রীতিকের বসার যায়গা। তুই এখানে বসেছিস জানলে,তোকে আমাকে দুজনকেই ঘাড় ধা’ক্কা দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দেবে প্রফেসর জেকে। ঘর বাড়ি হারিয়ে বনবাসী হতে না চাইলে তাড়াতাড়ি নাম।
অরুর তীব্র চোখ রাঙানো ধমকে বোধ হয় কাজ হলো, তৎক্ষনাৎ লেজ নাড়তে নাড়তে যায়গা ত্যাগ করলো ডোরা। ডোরা মুখ কাচুমাচু করে চলে যাওয়াতে অরু সেদিকে তাকিয়ে ফোঁস করে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,
— রাগ করার কি আছে?আমিতো যা সত্যি তাই বললাম। প্রফেসর জেকে কে তো আর তুই চিনিস না, তাই ওমন রাগ দেখাচ্ছিস। আমি চিনি,চিনবো নাই বা কেন বল? ক্লাসে ম্যাক্রোইকোনমিক্স পড়ায় তো।
ডোরা অরুর এতো হাবিজাবি কথা বুঝলো কি বুঝলোনা তা বোধগম্য নয়,সে চুপচাপ গিয়ে লেজ গুটিয়ে অন্যত্র যায়গা দখল করে নিলো।বসে পরলো কিচেন কাউন্টারের একপাশে। ডোরার কার্যক্রম খানিকক্ষণ পর্যবেক্ষন করে অরুর চোখ গেলো দোতলায় ক্রীতিকের ঘরের দিকে। আজ উইকএন্ড অথচ ক্রীতিক সকাল সকাল বাড়িতে নেই। কোথায় গিয়েছে সেটাও অরু জানেনা। জানার কথাও নয়, তবুও চোখ দুটো আজকাল হুটহাট তার খোজ করে বসে, কেন করে তা জানা নেই অরুর, মন মস্তিষ্কও তাতে একযোগে সায় জানায়,হৃদয়ের কোনোদিক থেকে কোনো বাঁধা নেই। তবুও অরুর ভ’য় হয় ভীষণ ভ’য়, সেই সাথে ক্রীতিকের উপর একরাশ বিরক্তি আর অভিমান তো আছেই,কি করে পারলো ওকে এভাবে জোর করে বিয়ে করতে? ওর মতামতের কি কোনোদাম নেই?
পরক্ষণেই মনে পরে যায় সেদিন রাতে ক্রীতিকের দেওয়া, গম্ভীর হৃদয় নিংড়ানো আশ্বাসটুকু,
—চিন্তা নেই পুরো দুনিয়া আমি দু’হাতে সামলে নেবো। তোর শরীরে কল’ঙ্কের আঁচ ও লাগতে দেবোনা।
কথাগুলো ছিল ভেলভেট মেঘের মতোই মসৃণ , অথচ প্রত্যেকটা কথায় উপচে পরছিল কি ভীষন পুরুষত্ব্য আর কতৃত্ব। যেন ক্রীতিকের জন্মই হয়েছে অরুকে দু-হাতে আগলে রাখার জন্য।সেদিনের বলা প্রত্যেকটা শব্দ তীব্র ঝঙ্কার তুলেছিল অরুর শরীরের রন্ধ্রে রন্ধ্রে, মাথার মধ্যে উপচে পড়া চিন্তার জলোচ্ছ্বাসেরা মূহুর্তেই গতিপথ বদলেছিল। চোখ বন্ধ রেখে বিশ্বাস করতে ইচ্ছে হচ্ছিল মানুষটা যা বলছে ঠিক বলছে। বিয়েটা যখন জোর করে করেছে তখন দায়িত্ব অবহেলা করার পাত্র জায়ান ক্রীতিক নয়।
কিন্তু সময়ের পরিবর্তনে আবারও মনে হতে লাগলো তাতে কি আসে যায়? ক্রীতিক যতই বলুক।ধর্মে যতই প্রাধান্য থাকুক সৎ ভাইয়ের সাথে বিয়ের সম্পর্ক কোনো সমাজই ভালো চোখে দেখবে না,কোনোদিন না, তারউপর মা আর আপাতো আছেই। অরু যখন নিজের অনিশ্চিত বৈবাহিক সম্পর্ক নিয়ে গভীর চিন্তায় মগ্ন হয়ে আছে, তখনই ল্যান্ড ফোনের তীক্ষ্ণ আওয়াজে ওর ভাবনার সুতো ছি’ড়ে যায়, ক্রীতিকের শূন্য ঘরের দিক থেকে চোখ নামিয়ে অরু তাকায় সেদিকে, মনেমনে ভাবে,
— ল্যান্ড লাইনে কল এসেছে তারমানে আমার কল। কিন্তু এই সময় কে কল দিলো?
অরু ঠোঁট কামড়ে ফোনের ওপাশের মানুষটাকে আন্দাজ করতে না পেরে সহসা এগিয়ে গিয়ে ফোন কানে ধরলো, ফোন কানে নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ওপাশ থেকে ভেসে এলো অনুর উচ্ছ্বসিত ক্রন্দনরত আওয়াজ, গলায় অসম্ভব খুশি আর চোখে অস্রুসীক্ত নোনাজল ধরে রেখে অনু বললো,
— অরু দ্রুত নার্সিংহোমে চলে আয়, মা তোকে দেখতে চাইছে।
অনুর কথায় চোখ দুটো বড়বড় করে, অরু অবিশ্বাসের সুরে দ্বিতীয়বার শুধায়,
— কি বলছিস আপা? সত্যিই মা আমাকে খুজছে?
— হ্যারে বোন মা তোকে খুঁজছে, এলেই দেখতে পাবি।
অনুর সঙ্গে সঙ্গে অরুও এবার ব্যাথাতুর খুশিতে ডুকরে কেঁদে উঠলো , হ্যা সূচক মাথা নাড়িয়ে বললো,
—আমি এক্ষুনি আসছি আপা।এক্ষুনি আসছি।
ওর কথায় সায় জানিয়ে অনু কল কেটে দিলে, অরু দ্রুত ব্যাস্ত হয়ে পরে রেডি হওয়ার জন্য। অ’পারেশনের পরে মায়ের জ্ঞান ফিরেছে বেশ কয়েকদিন আগেই, তবে তখনও এতোবড় অপা’রেশনের দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে পারেনি বলে কথা হয়ে ওঠেনি মায়ের সাথে। আজ বোধ হয় মা পুরোপুরি সুস্থ হলো। অসম্ভব খুশিতে পা’গল পা’গল লাগছে অরুর, আজ আবারও কতগুলো দিন পর মাকে সেই আগের মতো দেখতে পাবে অরু, না আর অপেক্ষা করা যাচ্ছেনা, কোনো মতে পরিপাটি হয়ে, হাতের পার্সটা নিয়ে, দরজা লক করে অরু দৌড়াতে দৌড়াতে বেড়িয়ে গেলো ক্রীতিকের আলীশান বাড়ি থেকে।
*****************************************
হসপিটালে এসে দৌড়াতে দৌড়াতে করিডোর পেরিয়ে মায়ের কেভিনের সামনে এসেই পা দু’টো থমকে গেলো অরুর। ভেতরে মা কথা বলছে, সুস্পষ্ট আওয়াজ, কতদিন পর মায়ের কথা কানে আসছে, হৃদয়টা গুমোট আবহওয়ার মতোই হাসফাস করছে ওর।মনে পরে যাচ্ছে শুরু থেকে সবকিছু।
অতোবড় ক্রীতিক কুঞ্জে দিনের পর দিন দু’বোনের কষ্ট করা, প্রতিদিন ইমেইল পাঠানো, ইমেইলের রিপ্লে না আসার একরাশ আক্ষেপ, গুছিয়ে নেওয়া,মানিয়ে নেওয়া, মামির ছুরিকা’ঘাতের মতো কথার ছোবল,শেষমেশ জায়ান ক্রীতিকের জোরজ’বস্তিতে রাজি হওয়া। এতোকিছুর বিপরীতে এখন এই মূহুর্তে মায়ের দুটো আওয়াজ শুনে মনে হলো সব দুঃখ ভ্যানিস। এ জীবনে দুঃখের কিছুই ঘটেনি। এই যে কেমন সুখ উপচে পড়ছে দুচোখের কার্নিশ বেয়ে। কাঁধ দুটো অসম্ভব হালকা লাগছে, বয়স কমে গিয়ে নিজেকে মায়ের ছোট্ট বাচ্চা মনে হচ্ছে। আর কি চাই?
খানিকক্ষণ কেভিনের বাইরে দাঁড়িয়ে থেকে নিজের ভলভলিয়ে ওঠা অশান্ত হৃদয়টাকে শান্ত করে তবেই দরজা ঠেলে ভেতরে প্রবেশ করলো অরু। চোখদুটো তখনও অভিমানী জলে টইটম্বুর ওর। কয়েকমিটার দুরত্বে বসে আছে মা, পরনে তার হসপিটালে বরাদ্দকৃত আসমানী রঙের পাজামা সেট। হাতের ক্যানোলা এখনও খোলা হয়নি, তবে চোখে মুখে স্নিগ্ধতার ছড়াছড়ি তার।এমন সুস্থতা দেখে মনে হচ্ছে নতুন করে জন্ম হলো তার। অরুর অবশ্য এমন মনে হওয়ারই কথা, কারণ ও খুব বেশি মায়ের ধারে কাছে থাকেনি। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত অনুর, ত্যাগ তিতিক্ষার কাছে, অরুর এই সামান্য কষ্ট কিছুই না।
আজমেরী শেখ বরাবরই রাশভারি গোছের মানুষ। খুব একটা আবেগ তিনি দেখাতে পারেননা। কিন্তু এরকম একটা মূহুর্তে নিজেকে ধরে রাখা দায়। তিনিও পারলেন না, একহাতে অনুকে আগলে রেখে অন্যহাত এগিয়ে দিলেন অরুর উদ্দেশ্যে। অরুও আর অপেক্ষা করলো না, ছুটে এসে জাপ্টে ধরলো মাকে।
তিন মা মেয়ের কান্নার রোল পরে গেলো পুরো কেভিন জুড়ে, এতোগুলো দিন পর অনুর মনে হচ্ছে ও আর একা নয়, ওকেও স্নেহ করার মানুষ আছে। এর চেয়ে প্রশান্তির আর কিইবা হতে পারে। আজমেরী শেখ দুই মেয়ের মাথায় চুমু খেয়ে বললেন,
— সব ঠিক হয়ে গিয়েছে, সব। আর দুঃখ নেই তোমাদের মা সুস্থ হয়ে গিয়েছে দেখো।
জবাবে অনু কাঁদতে কাঁদতে বললো,
—তুমি আবারও আমাদের বুকে টেনে নিয়ে আদর করছো এর চেয়ে সুখের আর কিই হতে পারে মা? আমরা পেরেছি, আমি আর অরু হাল ছাড়িনি, আমরা তোমাকে ফিরে পাবার আশা ছাড়িনি। ভবিষ্যতেও ছাড়বো না, তোমার শরীরের একটু ত্রুটিও হতে দেবোনা আমরা।
ওদের কা’ন্নাকাটির মাঝেই চেক-আপের উদ্দেশ্যে কেভিনে প্রবেশ করেন ডক্টর এডওয়ার্ড । ডক্টরের হঠাৎ আগমনে তিনজনেরই কা’ন্নাকাটিতে ভাটি পরলো এতোক্ষণে। তৎক্ষনাৎ ডক্টরকে যায়গা করে দিয়ে দুইবোন দুইদিকে সরে দাড়ালো ওরা।অতঃপর আজমেরী শেখকে ভালোমতো চেকআপ করে, ঠোটের কোনে একটা আন্তরিকতা জড়ানো হাসি ঝুলিয়ে ডক্টর বলেন,
— কনগ্রাচুলেশন, মিসেস, আজমেরী। আপনার অপা’রেশনের পর আপনি এখন পুরোপুরি ফিট আছেন। আজ বা কালকের মধ্যেই আপনাকে ডিসচার্জ করে দেওয়া হবে। তবে হ্যা, প্রথম দিকে প্রতি সপ্তাহে এবং পরবর্তীতে প্রতিমাসে একবার করে নার্সিংহোমে এসে হার্টের কন্ডিশন চেক-আপ করতে হবে আপনার , অন্তত ছয়মাস এটা ধারাবাহিক ভাবে করতে হবে। তাই অনুরোধ করবো আগামী ছয়মাসে দেশে না ফেরার। ছয়মাস পরে যখন আপনার হার্টের কন্ডিশন পুরোপুরি স্ট্যাবল হয়ে যাবে, তখন আপনি যে কোনো সময় দেশে ফিরতে পারবেন।
আজমেরী শেখ বরাবরই যথেষ্ট স্মার্ট এবং দক্ষ মহিলা, ইংরেজিতেও তিনি যথেষ্ট পারদর্শী। জামশেদ জায়ানের সাথে দেশবিদেশ ঘুরে ব্যাবসা সামলেছে পারদর্শী হওয়ারই কথা। তাই তিনি নিজ থেকেই ডক্টরকে শুধালেন,
— ডক্টর এডওয়ার্ড ? ছয়মাসই থাকতে হবে?
ডক্টর এডওয়ার্ড স্মিত হেঁসে জবাব দিলেন,
— উমম ডিপেন্ড অন ইউর হার্ট। হার্ট যত তারাতাড়ি আপনার শরীরের সাথে খাপখাওয়াতে পারবে, আপনি তত তাড়াতাড়ি ফিরতে পারবেন।
ডক্টরের কথায়, আজমেরী শেখ হ্যা সূচক মাথা নাড়ালে, ডক্টর অনুকে কিছু দিক নির্দেশনা দিয়ে কেভিন থেকে চলে যায়।
ডক্টর বেরিয়ে যাওয়ার কয়েক মিনিটের মাথাতেই একটা ফ্লাওয়ার বুকে নিয়ে কেভিনে ঢুকলো প্রত্যয়। অনু তখনও বসে বসে ডক্টরের বলা কথাগুলো নোট করছিল ডায়েরিতে, অরু মায়ের জন্য কমলার খোসা ছাড়াচ্ছিল। প্রত্যয় এক ঝলক অনুর দিকে তাকিয়ে সোজা গিয়ে আজমেরী শেখের সামনে দাড়িয়ে পরে, হাতের বুকেটা সম্মানের সাথে এগিয়ে দিয়ে বলে,
— কনগ্রাচুলেশন ম্যাম, আমি প্রত্যয় এহসান সি এফ ও অফ জেকে গ্রুপ।
আজমেরী শেখ বুকেটা গ্রহন করে বললেন,
— হ্যা জানি, জামশেদ আপনাকে ক্রীতিকের জন্য আমেরিকা পাঠিয়েছিল।
আজমেরী শেখের কথায় অরু অনু দু’জনেই প্রত্যয়ের মুখপানে দৃষ্টিপাত করলো। অনু প্রত্যয়কে দেখে একটু ইতস্তত হলো, কেমন যেন লজ্জা লাগছে ওর। ওদিকে অরু বেচারি ক্রীতিকের নামটা শোনা মাত্রই ভাবছে সারা সকাল ক্রীতিকের দেখা নেই, কোথায় গেলো লোকটা?
আজমেরী শেখের কথায় প্রত্যয় সম্মোহনী হাসি দিয়ে বললো,
— ইয়েস ম্যাম, আপনি ঠিকই ধরেছেন। আমি ক্রীতিক ভাইয়ের এসিসট্যান্ট। ওনার হয়ে কোম্পানির সকল দায়-দায়িত্ব আমিই সামলাই। উনি কখনোই জেকে গ্রুপে হস্তক্ষেপ করেননা। আর না উনি কোম্পানি থেকে কোনোরূপ সম্মানি গ্রহন করেন।
আজমেরী শেখ কিছু একটা ভেবে বললো,
— যাই হোক, আপনি এসেছেন ভালোই হয়েছে, আমার জন্য ইমিডিয়েট একজন এ্যাসিসট্যান্টের ব্যাবস্থা করুন, আর হ্যা হসপিটালের আসেপাশে একটা এপার্টমেন্ট রেন্ট করুন,যেহেতু আরও ছয়মাস থাকতে হচ্ছে সেহেতু আমি আমার মেয়েদের নিয়ে সেখানেই উঠবো, জায়ান ক্রীতিক চৌধুরী আমার অবর্তমানে, আমার মেয়েদের সাহায্য করেছে, থাকতে দিয়েছে, আমি তার প্রতি অন্তরের অন্তস্থল থেকে কৃতজ্ঞ, তবে তার সাথে একই ছাঁদের নিচে থাকতে আমি আগ্রহী নই।
প্রত্যয় রোবটের মতো দাঁড়িয়ে আজমেরী শেখের সকল হুকুম শুনে গেলো। অতঃপর ছোট্ট করে —ওকে ম্যাম।আমি সব কিছুর ব্যাবস্থা করছি।
বলে কেভিন থেকে বেরিয়ে যায়।
আজমেরী শেখের হুট করেই এতোগুলা সিদ্ধান্তে অনুর কোনোরূপ ভাবান্তর না হলেও, অরুর কেমন যেন ভেতরে ভেতরে সুক্ষ্ম চিনচিন ব্যাথা অনুভব হচ্ছে। চারদিকে সুখের জোয়ারে পরিপূর্ণ, তবুও কিসের অসম্পূর্ণতায় হৃদয়ের এই চিনচিন ব্যাথা জানা নেই অরুর।
*****************************************
দিনের আলো নিভে গিয়ে সন্ধ্যা হতেই বাইক রাইডিং ক্লাবগুলো পরিনত হয় নাইট ক্লাবে। উচ্ছনে যাওয়া বড়লোকের বাউন্ডলে ছেলেমেয়েদের সবচেয়ে প্রিয় যায়গা এটি। কলেজ, ভার্সিটি ফাঁকি দিয়ে সারাদিন রাইডিং এর মতো থ্রি’লিং গেইম উপভোগ করে সন্ধ্যা হতে না হতেই শুরু হয়ে যায় ডিস্কো পার্টি। সাদা ফকফকে আলো নিভিয়ে দিয়ে লাল,নীল, হলুদ ফেইরী লাইটের আলোয় ঝিকমিক করে ওঠে চারিপাশ, এক সাইডে বিভিন্ন দেশ থেকে আনা সারিসারি কাঁচের বোতলে সজ্জিত ব্রান্ডেট বার কাউন্টার। আর অন্যসাইডে ডিজে গানের ধুপধুপ কম্পিত আওয়াজের তালে তালে সকলের ডান্স পার্টি, অবশেষে সারারাত ধরে ম’দ্যপান আর নাচের শেষে ভোর রাতে চড়ম আনন্দে গা ভাসানো। আমেরিকানদের জন্য এরচেয়ে চিয়ারফুল যায়গা আর কোথাও নেই বোধ হয়।
এদের মাঝে ক্রীতিক হলো রাইডিং ক্লাবের সুপার স্টারের মতো, কখন আসে কখন যায় কেউ তা জানেনা। ও সাধারণত ম্যাচ শেষ হতেই নিজের ইচ্ছামতো চলে যায়, কিন্তু আজ কোনো এক অযাচিত কারনে, সন্ধ্যার পরেই ক্লাবে প্রবেশ করেছে ক্রীতিক। ওর সাথে অর্নবও রয়েছে। অর্নবের মুখ ভঙ্গিমা দেখেই বোঝা যাচ্ছে এইরকম একটা ফালতু যায়গায় ওকে জোর করে টেনেটুনে নিয়ে এসেছে ক্রীতিক। চারিদিকের মিউজিক আর হৈ-হুল্লোড়ে কান ঝালাপালা হয়ে যাওয়ার উপক্রম। অর্নব বিরক্ত হয়ে ক্রীতিককে বললো,
— এখানে কেন নিয়ে এলি? তোর যদি এতোই নাচার শখ হয়ে থাকে তো তোর বউকে নিয়ে আসতি, আমি কি তোর সাথে নাচবো নাকি?
— চুপ কর শালা।
ক্রীতিক অর্নবকে চুপ করিয়ে টান’তে টা’নতে নিয়ে গেলো বার কাউন্টারে। ওকে বার স্টুলে বসিয়ে দিয়ে নিজেও বসে পরলো পাশের টাতে। সামনে দাড়িয়ে থাকা ওয়েটারকে দুটো হুইস্কির অর্ডার দিয়ে ক্রীতিক ক্লাবের চারিদিকে চোখ বুলিয়ে বললো,
— এই ক্লাবের সিসিটিভি সিস্টেমটা হ্যা’ক করতে হবে অর্নব।
ক্রীতিকের কথায় অর্নব, ভ্রু কুঁচকে বললো,
— কিহ তুই আবারও ঝামেলা পাকাবি?
ক্রীতিক ঠোঁট কামড়ে অর্নবের চোখে তীর্যক দৃষ্টিপাত করে বললো,
— ঝামেলাতো পাকাতেই হবে ব্রো, রিভেঞ্জ নেওয়াটা যে এখনো বাকি। এই ক্লাবেরই একজন খুব দুঃসাহস দেখিয়ে আমার দূর্বলতায় হা’মলা করেছিল। তাঁকে একঝলক নিজের পৈশাচিক রূপটা না দেখালে হয় বল? আমিতো এতোটাও ভদ্রলোক নই।
অর্নব দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,
— তুই কি বলছিস আমি কিচ্ছু বুঝতে পারছি না, কি দেখাবি,কাকে দেখাবি?
অর্নবের কথার পাছে ক্রীতিক কিছু বলতে যাবে,তার আগেই সেখানে আগমন ঘটে ক্লাবের অন্যতম সদস্য জ্যাকসনের। যাকে মাসখানেক আগেই রাস্তায় ফেলে ইচ্ছে মতো মে’রেছিলো ক্রীতিক। তারপর অবশ্য সব সমস্যার সমাধান হয়েছে, ক্লাবের ম্যানিজিং কমিটি ওদের দুজনকে মিলিয়ে দিয়েছে, জ্যাকসন ক্ষমাও চেয়েছে নিজের কর্মকান্ডের জন্য। এখন সম্পর্কটা মোটামুটি ঠিকঠাক। তাইতো ক্রীতিককে দেখা মাত্রই এগিয়ে এসেছে সে। এগিয়ে এসে আরেকটা বারস্টুল টেনে বসতে বসতে ঠোঁটের ভাঁজে সুক্ষ্ম হাসির রেখা টেনে, অবাক হয়ে জ্যাকসন শুধালো,
— আরে জেকে ব্রো, আপনিতো কখনোই নাইট ক্লাবে থাকেন না, আজ হঠাৎ?
জ্যাকসনের কথায় ক্রীতিক নিজেও ঠোঁটের কোনে হাসি টেনে বললো,
— তোমাদের সাথে ড্রিংকস করতে মন চাইলো তাই থেকে গেলাম। ভালো করিনি?
— ওহ,দ্যাটস রিয়েলি গুড ব্রো। লেটস এনজয়।
ওদের মধ্যে জ্যাকসনই প্রথমে পান করা শুরু করে, এক পেগ, দু পেগ, তিন পেগ, অতঃপর অগনিত পেগ। ক্রীতিক আর অর্নব ও কিছুটা টাল হয়েছে, তবে জ্যাকসনের অবস্থা পুরোপুরি টালমাটাল। দুচোখ ঝাপসা, চোখের সামনে বসে থাকা একটা ক্রীতিককে দশটা মনে হচ্ছে, কি রোমাঞ্চকর।
— লেটস ডু আ রাইড জ্যাকসন।আ’ম শিওর এবার তুমিই চ্যাম্পিয়ন হবে।
জ্যাকসন যখন টলতে টলতে আরও হার্ড ড্রিংকসের অর্ডার দিচ্ছিল, তখনই ক্রীতিক ওকে অফারটা করে বসে।জ্যাকসনের মাথা ঠিক নেই, ওর মাথায় চ্যাম্পিয়ন হওয়ার ভুত বহু আগে থেকেই চড়ে বসে আছে, এই মূহুর্তে নিজের শরীরে একটা আলাদাই জোশ অনুভব করছে জ্যাকসন, মনে হচ্ছে ওর উপরে টেক্কা দেওয়ার মতো কেউ নেই, কেউ থাকতেও পারেনা, জেকে কে আজ ও সেটা দেখিয়েই ছাড়বে। ক্রীতিক বলার সঙ্গে সঙ্গে দাঁড়িয়ে পরে জ্যাকসন, নিজের শার্টের কলারে একটা ঝাড়া দিয়ে বাইকের হেলমেট নিয়ে বাইরে যেতে যেতে বলে,
— লেটস গো।
ক্রীতিক বাঁকা হেসে বললো,
— ওয়াও, এতো জলদি?
জ্যাকসন চলে গেলে, ক্রীতিকও নিজের হেলমেট নিয়ে ওর পেছনে পেছনে হাঁটা দিলে, অর্নব ওকে টেনে বলে,
— তুই কি পা’গল? ও তো পুরাই টাল হয়ে আছে, বাইক স্টার্ট দেওয়ার সাথে সাথে এ’ক্সি’ডেন্ট করবে।
ক্রীতিক দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
— সেটাই চাইছি। চল এবার।
পেছন থেকে অর্নব বললো,
— আর তুই? তুই নিজেও তো ড্রাংক।
— নিজের উপর কন্ট্রোল আছে আমার অর্নব,তুই চল।
.
নিজেদের সুপরিচিত রাইডিং ম্যাচের রাস্তায় এসে দুজনেই বাইক স্টার্ট করলো ওরা, চারিদিকে রাস্তাটা পুরোপুরি অন্ধকার নয়, আবার খুব আলোকিত ও নয়, সোডিয়ামের নিয়ন আলোয়, পুরোরাস্তা জুড়ে আলো ছায়া বিরাজমান।জ্যাকসনের মাথায় চ্যাম্পিয়ন হওয়ার ভুত কুন্ডলী পাকিয়ে মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে, আজ ও দেখিয়েই ছাড়বে জ্যাকসন কি জিনিস। ওদিকে ক্রীতিক প্রথমেই খুব ধীরগতিতে বাইক স্টার্ট দেয় ।
বাইক স্টার্ট দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জ্যাকসন হাওয়ার বেগে দৃষ্টি সীমার বাইরে চলে যায়। এই দেখে অর্নব ভয়ার্ত নজরে তাকিয়ে মনেমনে আওড়ায়,
— হয় ম’রবে, না-হয় মৃ’ত্যুকে খুব কাছ থেকে দেখে আসবে। কেন যে জেকের মতো পাগ’লের সাথে লাগতে এসেছিল। হু নোজ?
যেহেতু ক্রীতিক নিজেও ড্রাংক ছিল, তাই ও নিজেও কিছুদূর যেতেই উল্টে পরে যায়। পরে গিয়ে সেখানে বসেই শব্দ করে হাসতে থাকে ও। ক্রীতিক পরে গিয়েছে দেখে অর্নব ওর দিকে ছুটে এগিয়ে এসে বললো,
— আর ইউ ওকে? এটা কেন করলি ভাই? ছেলেটা খুব খা’রাপ ভাবে আ’হত হবে।
ক্রীতিক বাইকটাকে শরীরের উপর থেকে সরিয়ে আস্তেধীরে উঠতে উঠতে বললো,
— ওই বা’স্টা’র্ডটা আমার অরুকে মাঝরাস্তায় এ্যা’টা’র্ক করেছিল, শুধু মাত্র আমার উপর জিদ ফলাতে গিয়ে ও অরুকে ছু’ড়ি নিয়ে তাড়া করেছে। ইভেন আমি সময় মতো না এলে, কি না কিই হয়ে যেতো, সেটা একমাত্র উপর ওয়ালাই ভালো জানে। তাহলে তুই কি করে ভাবলি? এতো বড় একটা দুঃসাহস দেখানোর পরেও আমি ওকে এতো সহযে ছেড়ে দেবো। কখনো না। তাছাড়া আমি আর কিইবা করলাম, ও নিজেই তো বাইক নিয়ে চলে গেলো। এখন যদি ভালোয় ভালোয় বেঁচে যায় তো যাক। আর যদি না যায়, তাহলে ধরে নেবো ওর চ্যাম্পিয়ন হওয়ার নেশাই ওকে খোয়ালো।
শেষ কথাটা বলতে বলতেই একটা তীর্যক কপট হাসিতে প্রসারিত হলো ক্রীতিকের ডার্ক ব্রাউন ঠোঁট জোড়া।
*****************************************
অরুর বাড়ি ফিরতে ফিরতে বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা রাতে গিয়ে ঠেকেছে। অনু আজ আর ফিরবে না,সে মায়ের কাছেই থাকবে। অরুও ফিরতে চায়নি, অনু জোর করেই পাঠিয়ে দিয়েছে ওকে। বলেছে, একটা রাতই তো তারপর থেকে তো সবাই একসাথেই থাকবে ওরা, এখন কষ্ট করে হসপিটালে থাকার প্রয়োজন নেই।
অরুর মনটা বেশ ফুরফুরে, হাতের পার্সটাকে আঙুলে ঘুরাতে ঘুরাতে মাত্রই পাসওয়ার্ড টিপে ঘরে প্রবেশ করেছে ও। তবে হলরুমের কাউচে ক্রীতিককে বসে থাকতে দেখেই হাঁটার গতি থমকে যায় অরুর , এই তো সেই মানুষটা সারাদিন এতো আনন্দের মাঝেও যার কথা হুটহাট মনে পরেছে , বারবার মনে হয়েছে কোথায় সে?
কাউচের উপর গা ছড়িয়ে দিয়ে দু’পা টি-টেবিলের উপর রেখে বসে আছে ক্রীতিক। নির্ঘুম, নিস্প্রভ, কামুক চোখ দু’টো অরুর পানে নিবদ্ধ। ক্রীতিকের মুখের দিক থেকে চোখ সরিয়ে অরু দৃষ্টিপাত করে ওর পায়ের দিকে। থ্রী কোয়ার্টার প্যান্ট পরে আছে ক্রীতিক, যার দরুন ফর্সা লোমশ পা দুটোর এথায় সেথায় থেঁ’তলে গিয়ে র’ক্ত জ’মাট বাঁধা অংশ গুলো দৃশ্যমান, এমন দ’গদগে অবস্থা দেখে যে কারও হৃদয় কেঁপে উঠবে। অথচ ক্রীতিক কতোটা ভাবলেসহীন হয়ে র’ক্ত নিয়েই বসে আছে, যেন কিছুই হয়নি।
অরুকে একভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে ক্রীতিক হাস্কি স্বরে বললো,
— তোর জন্যই ওয়েট করছি, ট্রিট করে দে।
ক্রীতিকের পা দু’টো পর্যবেক্ষন করে, একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে এগিয়ে এসে অরু শুধালো,
— নিশ্চয়ই বাইক থেকে পরে গিয়েছেন?
ক্রীতিক দু’হাত দিয়ে নিজের চুলগুলো ব্যাকব্রাশ করতে করতে বললো,
— ঠিকই ধরছিস।
— ফাস্ট এইড বক্স কোথায়?
ক্রীতিক আঙুল দিয়ে নিজের রুমের দিকে দেখিয়ে দিলো। অরু নিজের পার্স্টটা রেখে বললো,
— থাকুন, নিয়ে আসছি।
এই যাবত ক্রীতিকের রুমে দুএকবার এসেছে অরু, সেদিন ক্রীতিকের রুমে কখন যে ঘুমিয়ে গিয়েছিল টের পায়নি ও নিজেও।তবে তখন তো ঘরময় অন্ধকার ছিল, কিছুই দেখার উপায় ছিল না, ওই জন্যই তো এখন ফাস্ট এইড বক্স খুঁজতে খুঁজতে হাঁপিয়ে উঠেছে অরু। রুমের কোথাও খুজে না পেয়ে একটানে ক্রীতিকের জামাকাপড়ের কাবার্ড খুলে ফেললো ও,কাবার্ডের ড্রয়ারেই ফাস্টএইড বক্স রাখা ছিল। অরু সেটাকে হাতে নিয়ে আরও একটা ছোট বক্স দেখতে পায়, সুন্দর কারুকাজ করা কাঠের বক্সটা ,
—কি আছে এর মধ্যে?
প্রশ্নটা মনের মাঝে উঁকি দিতেই, এদিক ওদিক তাকিয়ে অনেকটা বিস্ময় আর কৌতুহল নিয়েই বক্সটা খুললো অরু, অরু ভেবেই নিয়েছে এতো সুন্দর বক্সে হয়তো কোনো হিরে-জহরত থাকবে নিশ্চিত । কিন্তু অরুকে পুরোপুরি ভুল প্রমান করে দিয়ে বক্স থেকে বেড়িয়ে এলো একটা লম্বা চুল। অরু আশাহত নজরে চুলটাকে দেখে নাক সিটকে বললো,
— ইউউ! এটা আবার কি?
পরক্ষণেই ওই চুলটাকে নিজের চুলের সাথে মিলিয়ে অরু বললো,
— আরে এটাতো মনে হচ্ছে আমার চুল, উনি কি কালো জা’দুটাদু করেন নাকি?
— অরুউউউউ!
নিচ থেকে ভেসে আসা ক্রীতিকের ঝাঁজালো চিৎকারে লাফিয়ে উঠলো অরু। কোনোমতে যায়গার জিনিস যায়গায় রেখে ফাস্ট এইড বক্স নিয়ে সহসা নেমে গেলো নিচ তলায়। তারপর দৌড়ে এসে হাঁটু গেড়ে বসে পরলো ক্রীতিকের পাশে।
— এতোদিন ধরে এ বাড়িতে অাছিস। এখনো একটা বক্স খুজতে এতোক্ষণ সময় লাগে ?
ক্রীতিকের কথায় অরুর মনে পরে যায় ও আর এই বাড়িতে নেই। কথাটা ভাবতেই ঈশান কোনে মেঘ জমার মতোই মনের কোনে সুপ্ত হাহাকার জমে ওঠে অরুর।
অরু নিশ্চুপ বসে বসে ক্রীতিকের পায়ে হাত চালাচ্ছে দেখে ক্রীতিক ভ্রু কুঞ্চিত করে বললো,
— কি ভাবছিস?
অরু তার ছোট্ট ছোট্ট হাত দিয়ে অন-টাইম ব্যান্ডেজ গুলো লাগাতে লাগাতে বললো,
— ভাবছি আজকে যা বলার বলুন, আমিতো কাল চলেই যাচ্ছি।
ক্রীতিক ডিভানের গায়ে নিজের মাথাটা এলিয়ে দিয়ে বললো,
— আমায় ছেড়ে কোথায় যাবি তুই?
অরু এবার সিরিয়াস হয়ে ক্রীতিকের মুখের দিকে তাকিয়ে বললো,
— কাল চলে যাচ্ছি আমরা, মা সুস্থ হয়ে উঠেছেন, আমাদের জন্য সানফ্রান্সিসকোতে এপার্টমেন্ট রেন্ট করা হয়েছে।
অরুর কথাটা বলতে দেরি হলো, শ’ক্ত হাতে ওর গালদু’টো চে’পে ধরতে দেরি হলোনা ক্রীতিকের। হটাৎ চড়াও হওয়া তীব্র রা’গে বেশ শক্ত করেই অরুর গাল দুটো চে’পে ধরেছে ক্রীতিক।
এতোক্ষণের শান্ত মসৃণ রূপটা মূহুর্তেই ধারণ করেছে ভয়’ঙ্কর অ’গ্নিমূর্তি। অরুর মনে হচ্ছে ওর গালের হাড়গোড় এক্ষুনি ভে’ঙে যাবে। অসহিষ্ণু ব্যাথায় চোখ দুটো টলমলে হয়ে উঠলো ওর।তৎক্ষনাৎ অস্পষ্ট সুরে ক্রীতিককে বললো,
—খুব ব্যা’থা লাগছে ছাড়ুন।
ক্রীতিক ছাড়লো না, উল্টে ওকে কাছে টেনে নিয়ে হিসহিসিয়ে বললো,
— আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল কি জানিস? তোর প্রেমে পরা। সেই শুরু থেকে য’ন্ত্রণা দিতে দিতে লাইফটাকে হেল বানিয়ে ছেড়েছিস। এখনো দিচ্ছিস।
কথাটা বলে পায়ের নিচে থাকা টি-টেবিলটায় সশব্দে লা’ত্থি মারলো ক্রীতিক। সঙ্গে সঙ্গে ঝনঝন আওয়াজ করে টেবিলটা উল্টে পরলো অন্যপাশে। বোধহয় কাচগুলো ভে’ঙে গু’ড়িয়ে গিয়েছে। ক্রীতিক সেদিকে দৃষ্টিপাত না করে, অরুর এতোক্ষণ ধরে করা ব্যান্ডেজ গুলোকে টেনে হিঁচড়ে তুলে ফেললো। এভাবে নিজেকে কষ্ট দেওয়ার কি মানে হয়, অরু চেচিয়ে উঠলো,
— আরে কি করছেন, আবারও র’ক্ত বের হবেতো?
ক্রীতিক অরুর কথায় কর্ণপাত না করে ব্যান্ডেজ গুলো ছু’ড়ে ফেলে ওকে এক প্রকার ধা’ক্কা মে’রে সরিয়ে, হনহন করে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে যায়।
ক্রীতিক চলে যেতেই অরু ধপ করে মেঝেতে বসে পরে। নিজেকেই নিজে আশ্চর্য হয়ে প্রশ্ন করে,
— উনি কি বললেন? উনি আমার প্রেমে পরেছেন, কবে, কোথায়, কখন? যেই মানুষটা আমাকে দুই চোখে সহ্যই করতে পারেনা, সে কি করে আমার প্রেমে পরলো? আমিকি ঠিক শুনেছি?
আপনমনে কথাগুলো বলতে বলতেই অরুর হাত চলে যায় বুকের বাম পাশে। আবারও সেই তীক্ষ্ণ চিনচিন ব্যাথা, এটা কি তাহলে জায়ান ক্রীতিকের জন্যই হচ্ছে?
চলবে………