সঙ্গিন প্রনয়াসক্তি পর্ব-২৯+৩০

0
14

#সঙ্গিন_প্রনয়াসক্তি 🍁🍁
#পর্বঃ২৯
#লেখনীতেঃsuraiya_rafa
[কপি করা নিষিদ্ধ 🚫]
[প্রাপ্তমনস্ক ও মুক্তমনাদের জন্য]

বন্ধুর আকাশ ছুঁই ছুঁই পর্বতমালার নিম্নভাগে জোছনা রাতের রুপোলী ঝকঝকে আলো এসে পৌঁছাতে পারেনা কোনোকালেই। সেথায় এখনো ঘোর আমাবস্যা বিরাজমান। চারিদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার আর তমসাচ্ছন্ন,শুধুমাত্র পাহাড়ের এককোণে গুহার মধ্যে যে গুপ্তঘরটা রয়েছে, সেখান থেকেই জেনারেটর চালিত বৈদ্যুতিক বাল্বের নিয়ন আলোর ছটা এসে ঠেকছে নরম সবুজ কচি ঘাসের উপর। অতীব সুন্দর সেই ম্যাজিকাল আলোছায়া আর ঘাসের আস্তরকে পায়ে মাড়িয়ে তরিৎ বেগে এদিক ওদিক পায়চারি করছে নিখিল। কপালে তার দুশ্চিন্তার গভীর ভাজ, শরীর ঘামে ভিজে চুপচুপা, শার্টের উপর পরা সফেদ রঙা এ্যাপ্রোনটার এথায় সেথায় শুকিয়ে যাওয়া র’ক্তের ছোপ ছোপ দাগ।
কুঁচকে রাখা ছোট ছোট চোখ দুটো দেখে মনে হচ্ছে, একটু আগেই কোনো অপকর্ম করে ধরা খেয়েছে সে।এদিক ওদিক পায়চারি করতে করতেই দাঁত দিয়ে নখ কাটতে কাটতে একমনে কি যেন বিরবির করছে একনাগাড়ে ।দেখলে মনে হবে কোনো কিছুর হিসেবে কষছে।

নিখিলের এমন উদভ্রান্তের মতো কর্মকান্ড দেখতে পেয়ে গুপ্তঘর থেকে হন্তদন্ত হয়ে বেরিয়ে আসে লিও। এক ছুটে বেরিয়ে আসাতে তার স্থুলকায় দেহটা হাঁপিয়ে ওঠে, সে নিখিলের সামনে দাড়িয়ে হাঁপাতে হাঁপাতে শুধায়,
—- কি হয়েছে, এখনো কাজ শুরু করছো না যে? রাত শেষ হয়ে যাবে তো।

কথাটা বলার সঙ্গে সঙ্গে ফট করে দু’হাতে লিওর কলার খা’মচে ধরলো নিখিল, অতঃপর চোয়াল শক্ত করে দাঁত খিচিয়ে বললো,
— তোমাকে আগেই বলেছিলাম এই কয়জনে হবেনা, সবকিছুর একটা পরিমাণ রয়েছে, পরিমাণের বাইরে ওদের শরীর থেকে অতিরিক্ত হরমোন বের করলে সবগুলো মা’রা পরবে। তখন ধনকুব হওয়ার বদলে জেলে পঁচে ম’রতে হবে আমাদের।

নিখিলের কথায় লিও শুষ্ক ঢোক গিলে ভয়ার্ত কন্ঠে শুধালো,
— এএখন কি করবো?

নিখিল পুনরায় পায়চারি করতে করতে বিড়বিড়িয়ে বলে,
— জানিনা, রাশিয়ান মাফিয়াদের থেকে এডভান্স ডলার নিয়ে ফেলেছি, যে করেই কাজ সম্পন্ন করতে হবে।

লিও মুখ কাচুমাচু করে বললো,
— কিন্তু এই সময় নতুন করে টিনএজ হরমোন কোথায় পাবো?

লিওর কথা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নিখিলের হাটার গতি সহসা থেমে যায়, ও আঙুল উঁচিয়ে পাহাড়ের চূড়ায় জ্বলতে থাকা ফেইরী লাইট আর মাঝ আকাশে উড়তে থাকা নিভু নিভু জ্বলন্ত ফানুস গুলো দেখিয়ে লিওকে শুধালো,
— ওখানে কি হচ্ছে?

লিও ঠোঁট উল্টে বললো,
— মেইবি কোনো গ্রুপ ক্যাম্পিং এ এসেছে।

নিখিল তৎক্ষনাৎ গটগটিয়ে যায়গা ত্যাগ করে, বড়বড় পা ফেলে উঠতে থাকে পাহাড়ের চূড়ায় ।ওর কান্ডে পেছন থেকে লিও হাঁক ছেড়ে ডেকে উঠে বললো,
— আরে কোথায় যাচ্ছো?

নিখিল যেতে যেতে পেছনে না তাকিয়েই ক্রুর হেসে বললো,
— সব কিছু রেডি করো, আসছি আমি।
*****************************************
আজকাল স্টুডেন্টরাও হয়েছে ফাজিল একেকটা, কথা নেই বার্তা নেই যখন তখন কল দিয়ে কনভার্সেশন শুরু করে দেয়, আর থামার নামই নেই। প্রথমে পড়াশোনা দিয়ে শুরু করবে, তারপর সুযোগ বুঝে ধীরে ধীরে ঢুকে যাবে ব্যক্তিগত আলাপে। আমেরিকান মেয়েরা এতো নির্লজ্জ আর বেহায়া কেন কে জানে?

স্টুডেন্টের বাড়তি প্যাচাল প্রথমে দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করলেও এক পর্যায়ে বিরক্ত হয়ে ফোনটাই বন্ধ করে দিয়েছে রগচটা, বদ মেজাজী ক্রীতিক। একেতো চড়ম মূহুর্তে কল দিয়ে মুডের বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে, তারউপর রাত বিরাতে কল দিয়ে ঢংয়ের আলাপ, অসহ্য।স্টুডেন্টদের কাছে ক্রীতিক বরাবরই চুপচাপ, হুম,হা ছাড়া উত্তর দেওয়া ওর ধাঁচে নেই, তাইতো কথা বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে মুখের উপর ফোন বন্ধ করে দিয়েছে একদম । এবার হাজারটা কল দিলেও আর ক্রীতিকের নাগাল পাওয়া যাবেনা, সে যতই প্রয়োজনীয় আলাপ হোকনা কেন।

কিছুক্ষন নিরিবিলি দাড়িয়ে থেকে, নিস্তব্ধ প্রকৃতির মাঝ থেকে একবুক বাতাস ভরে নিয়ে, ক্রীতিক পুনরায় এগিয়ে গেলো ক্যাম্পিং ভ্যানের দিকে। ওদিকে সবাই মহা আনন্দে ফানুস উড়াচ্ছে। ক্রীতিক ভাবলো অরুকেও দেখাতে হবে এই রোমাঞ্চকর দৃশ্যটা, নয়তো এতো দূরে ক্যাম্পিং এ আসার মজাটাই মিস করে যাবে মেয়েটা, তাই ভেতরে না গিয়ে বাইরে থেকেই অরুকে ডেকে উঠল ক্রীতিক,
— অরু বাইরে আয়,যাস্ট লুক সামথিং স্পেশাল ইজ হ্যাপেনিং হেয়ার। কাম ফাস্ট,অরুউউ?

ভেতর থেকে অরুর কোনোরূপ সারা শব্দ না পেয়ে এবার ক্রীতিক নিজেই ধীর গতিতে ক্যাম্পিং ভ্যানের ভেতরে প্রবেশ করলো।
.

চারিদিকে ফানুসের ছড়াছড়ি। একের পর এক উড়ন্ত ফানুসের টিমটিমে আলোয় পুরো পাহাড়টাকে অপার্থিব সুন্দর লাগছে। ক্যাম্প ফায়ারের পাশেই চাঁদের পাহাড় গান বেজে চলেছে সেই তখন থেকে, পুরোই এডভেঞ্চারাস পরিবেশ। পাহাড়ের এককোনে দাড়িয়ে এলিসা উরন্ত ফানুস গুলোকে সুক্ষ্ম নজর দিয়ে পরখ করছে। তা দেখে, অর্ণব একটা ফানুস নিয়ে এগিয়ে এসে এলিসাকে উদ্দেশ্য করে বললো,
—- এলি, ফানুস উড়াবি আয়।

এলিসা তৎক্ষনাৎ এগিয়ে এসে হ্যা সূচক মাথা নাড়িয়ে অর্ণবের হাতে হাত রাখে। তারপর দুজন মিলে এগিয়ে যায় ফানুসটাকে উন্মুক্ত করে দিতে। ফানুসের মধ্যে জ্বলতে থাকা সোনালী আলোয় এলিসার হাতের হিরে খচিত আংটিটা চকচক করছে করছে খুব। অর্ণব সেটার দিকে একবার পরখ করে ওর চোখের দিকে দৃষ্টিপাত করলো। এলিসার ধূসর চোখ দুটোতেও জ্বলন্ত ফানুসের নিদারুণ প্রতিচ্ছবি বিদ্যমান। স্থির চোখে মুখে ধামাচাঁপা পরে আছে একরাশ খুশির ঝিলিক। অর্ণব সেই খুশিকে আরও খানিকটা বাড়িয়ে দিতে ওর কানের কাছে মুখ নিয়ে হিসহিসিয়ে বললো,
— আই লাভ ইউ এলি। শুধু আজ বা কাল নয় জনম জনমের ভালোবাসা তুই আমার।

অর্ণবের কথার প্রতিউত্তরে এলিসাও লাজুক হেসে কিছু বলতে যাবে, তার আগেই কোথা থেকে যেন ছুটে এসে এক থা’বায় সায়রের কলার টেনে ধরে দাঁতে দাঁত পিষে ক্রীতিক বললো,
— আমার অরু কই?

সায়র বেচারা বসে পপকর্ন চিবুতে চিবুতে অর্ণব এলিসার সিনেমাটিক প্রেম নিবেদন দেখছিল, হঠাৎ এমন অতর্কিত আ’ক্রমণে তৎক্ষনাৎ পপকর্ন ওর গলাতেই আটকে গেলো। কাশি দিতে দিতে ক্রীতিককে ছাড়ানোর চেষ্টা করে কোনো মতে ফ্যাসফ্যাসিয়ে বললো,
— ছাড় ভাই, আমি সত্যিই জানিনা অরু কই। তোরা দুজন তো হুট করেই একসাথে উধাও হয়ে গেলি। তোরা স্বামী স্ত্রী তোদের প্রাইভেসির ব্যাপার আছে, ওই জন্য আর ডাকিও নি আমরা।

সায়রের কথায় ক্রীতিক নিজেকে সংবরণ করে ওর কলার ছেড়ে দেয়।তখনই ওপাশ থেকে এলিসা আর অর্ণব এগিয়ে এসে শুধালো,
— কি হয়েছে জেকে।

ক্রীতিক থমথমে মুখে এদিক ওদিক হালকা মাথা নাড়িয়ে বললো,
— ডোন্ট নো, অরু কোথাও নেই।

এলিসা উদ্বিগ্ন সুরে বললো,
— কোথাও নেই মানে? ও তো তোর সাথেই ছিল।

ক্রীতিক জিভ দিয়ে শুষ্ক অধর ভিজিয়ে চিন্তিত গলায় বললো,
— হ্যা তখন তো ছিল, আমি নিজেই ওকে ক্যাম্পিং ভ্যানে রেখে একটা ফোন কল রিসিভ করতে একটু দূরে গিয়েছিলাম আর তারপর…..

ক্রীতিক নিজের তেঁতো গলার অযথা সীকারোক্তি শেষ না করেই চট করে সায়রকে বললো,
— সায়র, তুইনা এলিসা অর্ণবের সারপ্রাইজ মোমেন্ট ধারণ করার জন্য হিডেন ক্যামেরা সেট করেছিলি?

সায়র হ্যা সূচক মাথা নাড়ালে,ক্রীতিক পুনরায় বলে,
—- কোথায় কোথায় সেট করেছিলি, সব গুলো বের কর, কুইক।

এবার শুধু সায়র নয়, ওর সাথে সাথে অর্ণবও পায়ে পায়ে এগিয়ে গেলো ক্যামেরা গুলো খুঁজে বের করতে।এই মূহুর্তে ক্রীতিকের মাথা ফে’টে যাচ্ছে দু’শ্চিন্তায়। অতিরিক্ত দু’শ্চিন্তার ফলে সুকৌশলী মস্তিষ্কটাও হ্যাং করছে বারংবার। রাতের আধারে এমন অচেনা অজানা পার্বত্য এলাকায় হঠাৎ করেই কোথায় চলে যেতে পারে মেয়েটা। তাও ক্রীতিককে না জানিয়ে?

কিছুক্ষণ আগেই তো সবকিছু কতোটা মসৃণ হয়ে উঠেছিল ওদের মাঝে। অরু বারবার বলেছিল,
— আমি শুধু আপনাকেই চাই। নিজ স্বামীরূপে আপনি ছাড়া অন্য কারও মুখ আমি কল্পনাও করতে পারিনা।

সেসব কথা ভাবলে এখনো ক্রীতিকের হৃদয়টা এক অজানা উষ্ণতায় ছেয়ে যায়।মস্তিষ্ক ঘীরে ধরে কাল্পনিক সুখের ভাবনারা।অথচ এখন এভাবে হুট করে হারিয়ে গিয়ে কেমন দুশ্চিন্তায় পাগ’ল বানিয়ে দিচ্ছে ওকে। এটা কি ঠিক হলো?খানিকক্ষণ আগে কাটানো ভালো সময় গুলোর কথা মনে পরতেই মূহুর্তের মধ্যে আ’গ্নেয়গিরির অ’গ্নি’স্ফুলিঙ্গ ছড়িয়ে পরলো ক্রীতিকের পুরো মস্তিষ্ক জুড়ে ।ও আর চুপচাপ দাড়িয়ে থাকলো না, ধাপ ধাপ পা ফেলে এগিয়ে গেলো ক্যামেরা গুলোর দিকে।

মনিটরের স্ক্রিনে একে একে সবগুলো ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ চেক করা হলে শেষ ক্যামেরাতে এসে চোখ আটকে গেলো ওদের সবার,শুধু চোখ আটকে গেলো বললে ভুল হবে রীতিমতো কাশাকাশি শুরু হয়ে গিয়েছে সবার। ভিডিওতে অরুর সাথে করা ক্রীতিকের একান্ত মূহুর্তের পাগলামি গুলো দেখে এলিসা, অর্ণব, সায়র তিনজনই ক্রীতিকের পানে অবিশ্বাস্য চাহনি নিক্ষেপ করে, একই সুরে বলে ওঠে,
— তোরা একটু আগে এসব করছিলি?

সায়র বড়বড় চোখ করে ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে বললো,
— সি, হি ইজ সো ডেস্পারেট, মেয়েটাকে শ্বাস পর্যন্ত নিতে দিচ্ছে না।
সায়রের কথায় এলিসা অর্ণব মুখ টিপে হেঁসে দিলো।

ওদের খিল্লি আর মজা মাস্তিকে এক ধমকে থামিয়ে দিয়ে ক্রীতিক বললো,
— জাস্ট শাট আপ, টেনশনে আমার মাথা ফে’টে যাচ্ছে, আর তোরা এখানে মজা নিচ্ছিস। তাছাড়া অরু আমার বিয়ে করা বউ, যা খুশি, যেভাবে খুশি,যেখানে খুশি করবো তোদের বাপের কি?

ওদের তর্কবিতর্কের মাঝেই ভিডিওর একটা যায়গাতে অর্নব পজ করে বললো,
— গাইস লুক।

তৎক্ষনাৎ ক্রীতিক সচকিত হয়ে এগিয়ে এসে স্ক্রিনে চোখ রাখলো। অর্ণবকে সরিয়ে দিয়ে , রিপিট করে ওই একই সিন টুকু বারবার টেনে টেনে দেখছে ক্রীতিক। চার সেকেন্ডের সেই ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, এ্যাপ্রোন পরা কেউ একজন এসে অরুর সাথে হেঁসে কুশলাদি বিনিময়ের মতো করে কথা বলছে, অতঃপর অরু তার পেছন পেছন অন্ধকারের মধ্যে মিলিয়ে গিয়েছে।

অর্ণব পাশে দাঁড়িয়ে ঠোঁট উল্টে বললো,
— কে হতে পারে এই এ্যাপ্রোন পরা লোকটা?

সায়র সহসা এগিয়ে এসে ভালো করে নজর বুলিয়ে বললো,
— আরে এটাতো নিখিল অরুর ক্রাশ।

— অরুর বাচ্চাআআআ!
অকস্মাৎ ক্রীতিকের গর্জনে কেঁপে উঠলো ওরা সবাই। ক্রীতিক উঠে দাড়িয়ে ভ্যানের সামনে রাখা স্টুলটাকে সজোরে লা’ত্থি মে’রে রাগে থরথরিয়ে কাঁপতে কাঁপতে বললো,
— ওকে একবার খুঁজে পাই, মে’রে ওর গাল ফা’টিয়ে দেবো আমি, তখন সারাজীবনের মতো ক্রাশ খাওয়া ভুলে যাবে।

অর্ণব এগিয়ে এসে ক্রীতিকের কাঁধে হাত রেখে বললো,
— ঠান্ডা মস্তিষ্কে ভাব জেকে, এটাকি আদৌও পসিবল? অরুতো তোর সাথে এসেছিল, একটু আগে তোরা কোয়ালিটি টাইম স্পেন্ড করছিলি, তাহলে হঠাৎ করে অরু কেন নিখিলের সাথে চলে যাবে? তাও কাউকে কিছু না জানিয়ে?
তাছাড়া অরু এডাল্ট, বিয়ের মর্ম কতটুকু সেটা ও ভালো করেই বোঝে,তাও তোকে না জানিয়ে কেন যাবে? আর সবচেয়ে বড় কথা।

অর্ণব কথা শেষ করার আগেই পাশ থেকে এলিসা গুরুগম্ভীর গলায় বললো,
— নিখিল এখানে কি করছে?

অর্ণব এলিসার দিকে তাকিয়ে বুক ফুলিয়ে বললো,
— রাইট, এই না হলে আমার সোনা।

অর্ণবের আহ্লাদী কথায় এলিসা দাঁত কিরমিরিয়ে উঠে বললো,
— চুপ করবি তুই? সিরিয়াস কনভার্সেশন চলছে এখানে।

ক্রীতিক ওদের কথায় কান না দিয়ে দ্রুত নিজের মোবাইল বের করে লোকেশন ট্র্যাকারে ঢুকে পরলো।
সায়র শুধালো
—কি খুঁজছিস?

ক্রীতিক কিছু একটা সার্চ করতে করতে বললো,
— কিছুদিন আগে আমি অরুকে মোবাইল ফোন কিনে দিয়েছিলাম, সেটার লোকেশনই আমার ফোনে কানেক্ট করে রেখেছিলাম।যদি কখনো প্রয়োজন হয় সেটা ভেবে।

সায়র দাঁত কটমটিয়ে বললো,
— সেটা আগে বলবিনা?

ক্রীতিকের এই মূহুর্তে কোনোকিছু ঠিক নেই, চোখ দুটো ঝাপসা লাগছে অগত্যাই, আঙুলের ভাঁজে ধরে রাখা ফোনটা তিরতিরিয়ে কাঁপছে। ও বারবার নিজের ফোকাস ধরে রাখতে চাইছে, কিন্তু কিছুতেই পারছে না।অনবরত হাতের পিঠ দিয়ে নাকের ডগা মুছছে, কিছুই নেই তবুও মুছছে। এলিসা, অর্ণব, সায়র সবাই ক্রীতিকের অতিরিক্ত অবসাদগ্রস্থতার কথা জানে, তার উপর অরু মিসিং ক্রীতিক নিশ্চয়ই এখন নিজের মধ্যে নেই। মাত্রাতিরিক্ত উদ্বেগে ক্রীতিকের বারবার ঘাড় ফুটানো আর নাকের ডগা মোছা দেখে এলিসা এগিয়ে শান্ত গলায় শুধালো,
—- কিছু পেলি? কোনো লোকেশন?

ক্রীতিক ভ্রু কুঁচকে বললো,
— লাস্ট লোকেশন দেখে তো এই পাহাড়েরই আশেপাশে কোনো একটা যায়গা মনে হচ্ছে।

তৎক্ষনাৎ অর্নব আর সায়র ছুটে এসে ওর হাত থেকে ফোনটা নিয়ে বললো,
— কই দেখি?

মোবাইলের লোকেশনটা ভালো মতো পরখ করে চোখ কপালে উঠে গেলো অর্ণবের,অবিশ্বাসের সুরে ক্রীতিককে শুধালো,
— এটা কি আসলেই অরুর লোকেশন?

ক্রীতিক ভ্রু কুঁচকে বললো,
— কেন কি হয়েছে?

অর্ণব শুষ্ক ঢোক গিলে বললো,
— আমার জানা মতে এই গুহাটা পরিত্যক্ত, বহুবছর আগে আমেরিকান একটা রিসার্চ টীম এখানে কিছু অ’বৈধ রিসার্চ চালাতো, ওরা টিনএজ ছেলেমেয়েদের হরমোন সংগ্রহ করে সেটাকে প্রসেস করে মৃ’তদেহের স্নায়ু সচল রাখতে ব্যবহার করতো। ইটস আ হিউজ ডে’ঞ্জার। পরবর্তীতে আমেরিকান গভমেন্টের নজরে এলে, তারা পুরোপুরি নিষেধা’জ্ঞা জারি করে দেয় এই রিসার্চের উপর। এছাড়া ওই টীমের সবাইকে শা’স্তির আওতায় আনা হয়েছিল তখন।

অর্ণবের কথা শেষ হতেই এলিসা চট করে বললো,
— অরুও তো টিনএজ? সি ইজ অনলি এইটিন প্লাস।

এলিসার কথাটা পুরোই বি’স্ফোরণের মতো গিয়ে হাম’লে পরলো ক্রীতিকের উদ্বিগ্ন মস্তিষ্কে। ওর সচিকত চোখ দেখে মনে হচ্ছে ও যেন দুইয়ে দুইয়ে চার মিলিয়ে ফেলেছে। দু-হাতে নিজের লম্বা চুল গুলো সজোরে টেনে ধরে, কিছু একটা ভেবে ক্রীতিক অস্ফুটে বললো,
— নিখিল ইজ আ বায়োলজিকাল সাইন্টিস্ট, ওহ নো! দিস মা*** ফা***বা***। ওকে আমি জ্য’ন্ত ক’বর দেবো আজ।

ক্রীতিকের চড়ম ক্ষীপ্রতায় উদ্বিগ্ন হয়ে ওরা তিনজন একই সুরে শুধালো,
— কি হয়েছে?

ক্রীতিক আর জবাব দিলোনা মোবাইলের লোকেশনে চোখ বুলাতে বুলাতে অন্ধকারের মাঝেই পাহাড়ি আঁকাবাকা সরু রাস্তা ধরে এগিয়ে যেতে লাগলো পরিত্যক্ত গুহার দিকে।

পেছনে আলো জালিয়ে রাস্তা পরিস্কার করে ওর পথ অনুসরণ করে স্ব গতিতে এগিয়ে আসতে লাগলো আরও তিন জোড়া পা। তারা আর কেউ না,ওর জীবন মর’নের বেস্টফ্রেন্ডস, ওর দুঃসময়ের সাথী অর্ণব, এলিসা আর সায়র।
*****************************************
পাহাড়ের ঢালে এসে গুহার মুখোমুখি হতেই থমকে গেলো ওরা। গুহার মুখে পাহারাদারের দাঁড়িয়ে আছে এক বিশালাকৃতির লৌহগেইট। তাতে আবার পাসওয়ার্ড লাগানো। অর্নব এলিসার হাতে মোবাইল ধরিয়ে দিয়ে বললো,
— জান ফ্ল্যাশ ধর আমি এটার ব্যবস্থা করছি।

সায়র পেছন থেকে ভীত স্বরে বলে ওঠে,
— আমার কেমন যেন ভ’য় করছে ভাই, যদি ওরা আমাকেও ধরে নিয়ে রিসার্চ করতে বসিয়ে দেয়।
অর্ণব পাসওয়ার্ডের গুষ্টি উদ্ধার করতে করতে বললো,
— তুই কি টিনএজ শালা? বয়স ত্রিশ পার হয়ে গেলো এখনো ভীতুর ডিমই রয়ে গেলি।

ক্রীতিক একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,
— তোরা প্লিজ তাড়াতাড়ি কর, দম আটকে আসছে আমার।

— হয়ে গিয়েছে।
পাসওয়ার্ড আনলকড এর পিক পিক আওয়াজ হতেই সবাইকে ঠেলে ভেতরে চলে গেলো ক্রীতিক। ক্রীতিকের পেছন পেছন ওরা তিনজনও ঢুকে পরলো গুপ্তঘরে। ঘরটাতে প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গে একটা উৎকট গন্ধে চোখমুখ কুঁচকে এলো ওদের সবার। শুধু মাত্র ক্রীতিকেরই কিছুতে কিছু হচ্ছে না। ও হন্তদন্ত হয়ে উদভ্রান্তের মতো চারিদিক হাতরে বেরাচ্ছে।

বাইরে থেকে যায়গাটাকে যতটা অন্ধকার আর ভুতুড়ে লাগছিল, ভেতরে তেমন কিছুই নয়, বাল্বের আলোয় চারিদিক ফকফকে পরিস্কার। রুমের মধ্যে যত্রতত্র বিভিন্ন মেশিন আর ক্যা’মিক্যালের শিশি দিয়ে পরিপূর্ণ। ক্রীতিকের অবশ্য এতোকিছুতে নজর নেই, ও একটা একটা করে পর্দা,সেলফ, মেশিন সবকিছু তচনচ করে অরুকে খুঁজছে। খুঁজতে খুজঁতে ভেতরের রুমে ঢুকতেই সেই উৎকট গন্ধটা যেন দিগুণ বেড়ে গেলো এবার।মনে হচ্ছে এখনই গলা দিয়ে খাবার উগড়ে আসবে। ক্রীতিক কোনো কিছুকে তোয়াক্কা না করেই সামনে এগিয়ে যায়। ভেতরের দিকে এগিয়ে গিয়ে চারিদিকে চোখ বুলাতেই দেখতে পায় কিছু কাচের তৈরি কফিন, যেগুলো স্বচ্ছ পানি দিয়ে ভর্তি, তারমধ্যেই ভাসছে অল্পবয়স্কা মেয়েদের দেহগুলো। একেকটা কফিনে একেকটা মেয়ে। পানির মধ্যে ভাসমান মেয়েগুলোকে দেখতে কি ভ’য়ানকই লাগছে।
—আচ্ছা এদের মধ্যে অরু নেইতো?

প্রশ্নটা মাথায় আসতেই ক্রীতিক হকচকিয়ে ছুটে এসে প্রত্যেকটা কফিন চেক করতে শুরু করলো। কিন্তু না একটাতেও অরু নেই।

স্বচ্ছ কাচের কফিন গুলো চেক করতে করতেই ওর কানে ভেসে এলো অস্পষ্ট এক গোঙানির আওয়াজ, হঠাৎ রিনরিনে আওয়াজে ক্রীতিক সচকিত হলো, ভাবতে থাকলো কোন দিক থেকে আসছে শব্দটা।রুমের মাঝ বরাবর টানানো পর্দার ওপাশ থেকেই আসছে বোধহয় আওয়াজটা। ক্রীতিক দ্রুত পায়ে সেদিকে এগিয়ে যাওয়ার আগেই অজানা আত’ঙ্ক আর মা’ত্রাতিরিক্ত উ’দ্বেগে কয়েক মূহুর্তের জন্য মস্তিষ্কটা হ্যাং করলো ওর, আবারও মাথাটা চক্কর দিয়ে উঠলো পুরোদস্তুর । চোখের সামনে সবকিছু ঝাপসা লাগছে, বারকয়েক চোখের পাতা ফেলে, দৃশ্যপট স্পষ্ট করে, দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে পুনরায় এগিয়ে গিয়ে একটানে পর্দাটা সরিয়ে ফেললো ক্রীতিক,সঙ্গে সঙ্গে পুরো দুনিয়া দুলে উঠলো ওর।

ক্রীতিকের থেকে কয়েক মিটার দূরত্বে পানি ভর্তি কাঁচের কফিনের উপর হাত পা, মুখ বে’ধে শুয়িয়ে রাখা হয়েছে অরুকে। কপালের দুপাশে লাগিয়ে রাখা হয়েছে কি সব যন্ত্রপাতি। কানের পাশে একটু খানি কা’টা দাগ।হাঁটু সমান লম্বাচুল গুলো কফিন ছাড়িয়ে মেঝেতে পরে আছে। চোখের সামনে নিজের হৃৎস্পন্দনের এমন বি’দ্ধস্ত রূপ দেখে বারবার যেন দুনিয়া দুলে উঠছে ক্রীতিকের।মুখের মাঝে কোনো তরল অবশিষ্ট নেই গলা ভেজানোর জন্য, এ্যাংসাইটি,ডিপ্রেশন, ওভার থিংকিং আর তীব্র ক্রো’ধ তিনে মিলে ক্রীতিকের গলা চেপে ধরেছে, সেই সাথে বাকশক্তি ও রোধ করে রেখেছে অজানা এক শক্তিবল। তবুও বহু চেষ্টার ফলস্বরূপ অস্পষ্ট সুরে ঠোঁট কাঁপিয়ে ক্রীতিক ডাকলো,
— হার্টবিট।

ক্রীতিকের কন্ঠস্বর শোনা মাত্রই, সেদিকে তাকিয়ে মুখ বাঁ’ধা অবস্থাতেই খু’নখুনিয়ে কেঁদে উঠলো অরু। তীব্র কান্নার জোয়ারে কেঁপে উঠলো ওর পুরো শরীর। সবচেয়ে কাছের মানুষের আগমনে নির্বাক কাতরতা, আর অভিমানী কান্নায় চোখের কার্নিশ ভিজে উঠেছে মেয়েটার। ক্রীতিক স্পষ্ট বুঝতে পারছে ওর চোখের ভাষা, যেখানে অরু বারবার ফুঁপিয়ে উঠে আকুতির সুরে বলছে,
— তুমি আসবে আমি জানতাম। কিন্তু এতো দেরি করে কেনো এলে? আমার বুঝি কষ্ট হয়নি?

অরুর চোখের সাথে চোখ মিলিয়ে নির্বাক ধ্বনিতে ক্রীতিকও একই সুরে জবাব দিল।
— আ’ম সরি হার্টবিট। আ’ম রিয়েলি সরি, খুব ভুল হয়ে গিয়েছে।

ওদিকে অরুর হঠাৎ বেড়ে যাওয়া কান্নার রোল শুনতে পেয়ে রিসার্চ রুম থেকে বেরিয়ে এসে অকস্মাৎ ওদের সবাইকে দেখে পিলে চমকে গেলো নিখিলের। একসাথে এভাবে এতো জনকে দেখে নিখিলের হা’র্টএ্যা’টার্ক হওয়ার উপক্রম। ও এখন সবার দিকে তাকিয়ে ভয়ার্ত ঢোক গিলছে শুধু। মনেমনে খুজছে পালানোর পন্থা।

নতুন করে কারোও পদচারনা টের পেয়ে, ক্রীতিক পেছনে ঘুরতেই নিখিলকে দেখতে পায়, ওকে দেখার সঙ্গে সঙ্গে দমে যাওয়া ক্রো’ধটা দিগুন হারে মাথা চাড়া দিয়ে উঠলো ক্রীতিকের । কপালের রগ গুলো ফুলে উঠে, চোখের সাদা অংশ র’ক্তিম হয়ে উঠলো আপনাআপনি। তীক্ষ্ণ ব্লে’ডের মতো ধারা’লো চোয়ালটায় গাম্ভীর্য টেনে ক্রীতিক তে’ড়ে এসে ওর কলার চেপে ধরে চোখমুখ খিঁচে উইথ আউট ওয়া’র্নিং একেরপর আ’ঘাত করতে থাকে নিখিলের নাক বরাবর। সেই সাথে অ’স্রাব্য গা’লি তো আছেই। ক্রীতিকের এই ভয়’ঙ্কর দানবীয় রূপটা সবাই দেখতে পায়না, হুটহাট বেরিয়েও আসে না, তবে যদি একবার বেরোয় তো সেটা জ্বলন্ত অ’ঙ্গারের মতোই বিভৎ’স আর নি’কৃষ্ট।
—- শু**** বাচ্চা তোকে আজ এই পরিত্যক্ত গুহার মধ্যেই জ্যন্ত কবর দেবো আমি, আর নয়তো আমার নাম জায়ান ক্রীতিক চৌধুরী নয়।

ক্রীতিক কি উত্তেজিত? মোটেই না, সবসময়ের মতোই বাচনভঙ্গিমা এখনো মসৃণ ওর, তবে গলার স্বরে ভয়ানক ক্ষী’প্রতা স্পষ্ট।
ক্রীতিকের করা প্রত্যেকটা আ’ঘাত একেবারে চোখে মুখে এসে হা’মলে পরছে নিখিলের। ও দম নেওয়ার ফুরসত টুকুও পাচ্ছে। এভাবে আর কিছুক্ষণ মা’র খেলে নিজের জীবন এখানেই খোয়াতে হবে,ব্যাপারটা বুঝতে পেরে,তৎক্ষনাৎ নিজের সর্বশেষ চালটা চাললো নিখিল, কোনো মতে হাতরে বেরিয়ে, হাতের কাছে থাকা সুইচবোর্ডটায় প্রেস করে অন্যদের মতো অরুকেও ফেলে দিলো ক্যা’মিক্যাল মিশ্রিত পানি ভর্তি কফিনের মধ্যে।

সঙ্গে সঙ্গে পানির মধ্যে পরে গিয়ে তীব্র ছটফটানি শুরু করে দিলো অরু। অকস্মাৎ এহেন কান্ডে পেছনে ঘুরে অরুকে ছটফট করতে দেখে নিখিলকে ছু’ড়ে মে’রে, অরুর নিকট ছুটে গেলো ক্রীতিক। তখনও বদ্ধ কফিনে গলা কাঁ’টা মু’রগীর মতোই ছটফট করছে অরু। পুরো কফিন জুড়ে মোটা স্বচ্ছ কাচের আস্তর কোথাও কোনো খোলার যায়গা নেই, ব্যাপারটা বুঝতে পেরে কফিনের সামনে হাটু গেড়ে বসে, কাচের আস্তরটাকে ভা’ঙার উদ্দেশ্যে কফিনের উপরই নিজের সর্ব শক্তি দিয়ে এলোপাথাড়ি পাঞ্চ বসাতে লাগলো ক্রীতিক। ওদিকে সময়ের ব্যবধানে অরু ধীরে ধীরে নিস্তেজ হয়ে যাচ্ছে।

ক্রীতিক সেদিকে নজর দিয়ে উদ্বিগ্ন কন্ঠে বললো,
— হোল্ড অন,ওয়ান মিনিট, যাস্ট ওয়ান মিনিট বেইবি। প্লিজ হোল্ড অন, আমি এটাকে এক্ষুনি ভে’ঙে গুড়িয়ে ফেলবো।

এভাবে ক্রমাগত পাঞ্চ করতে করতে ওর হাত থেঁ’তলে গিয়ে কখন যে পুরো কফিন র’ক্তাক্ত হয়ে উঠেছে তার হদিস নেই ক্রীতিকের, ওর দৃষ্টিতো কেবল স্থির হয়ে আছে অরুর নিভু নিভু চোখ দুটোর পানে। একনাগারে পাঞ্চ করতে করতে হাতের অবস্থা বেগতিক,তবুও এক সেকেন্ডের জন্যও থামেনি ক্রীতিক। যতক্ষণ না র’ক্তাক্ত কাচের আস্তরে ফা’টল ধরে চৌচির হয়েছে, ঠিক ততক্ষণ একই উদ্যমে অনবরত কাচের কফিনে আ’ঘাত করেছে সে।

অন্যদিকে অরুর জন্য ক্রীতিকের এমন উন্মাদনায় আবিষ্ট বেপরোয়া ভয়’ঙ্কর রূপ দেখে, ভ’য়ে জর্জরিত হয়ে নিজের আহত শরীরটাকে টেনেটুনে নিয়েই সুযোগ বুঝে কেটে পরলো নিখিল, ওর আফ্রিকান বন্ধু লিও পালিয়েছে বহুক্ষণ আগেই। তবে মনে হয়না এই শরীর নিয়ে বেশিদূর যেতে পারবে নিখিল। কারন ওর পিছু নিয়েছে এ্যাথলেটিক টম বয় খ্যাত গার্ল এলিসা ক্রিস্টিয়ান।

অবশেষে জায়ান ক্রীতিকের মতো বেপরোয়া,জিদি,রগচটা মানুষের কাছে হার মেনে নিয়েছে কাঁচের তৈরি কফিনটা। কফিনটাকে ভে’ঙে চৌচির করে তবেই ক্ষান্ত হয়েছে ক্রীতিক। কফিন ভে’ঙে যেতেই অরুকে টেনে বের করে ওর হাত পা মুখের বাঁ’ধন খুলে বারবার সিপিআর দিতে থাকে ক্রীতিক।

একনাগাড়ে সিপিআর দিতে দিতে একপর্যায়ে এসে অরু লম্বা করে দম নেয়। অরুর শ্বাসপ্রশ্বাসের আওয়াজ শুনতে পেয়েই, নিশ্বাসের শব্দ ক্ষীন হয়ে এলো ক্রীতিকের নিজেরও, তৎক্ষনাৎ অরুর মাথাটা কাছে টেনে এনে ওর ঠান্ডা ফ্যাকাশে ঠোঁটে অনবরত চুমু খেতে থাকে ক্রীতিক। নিঃশব্দে নির্লিপ্তে…..

তবে অরুর শরীরটা এখনো নেতিয়ে রয়েছে, চোখ মুখ ফ্যাকাশে বর্ণ ধারণ করে আছে ,দেখে মনে হচ্ছে শরীরে একরত্তিও শক্তি অবশিষ্ট নেই। শুধু আলতো করে চোখের পলক ফেলছে মাত্র। অরুর হালকাপাতলা নড়নচড়ন দেখে ক্রীতিক বুক ভরে সস্থির নিঃশ্বাস ছেড়ে ওকে কোলে তুলে দাঁড়িয়ে পরলো, সঙ্গে সঙ্গে পুনরায় মাথাটা চক্কর দিয়ে উঠলো ওর। অরুকে কোলে নিয়েই বারবার হাতের পেছন দিয়ে ডাকের ডগা ঘষছে ক্রীতিক। চোখের সামনে স্থীর দাঁড়িয়ে থাকা অর্ণব আর সায়র কে কেমন ঝাপসা লাগছে দেখতে, বারবার চোখের পলক ফেলেও সেই দৃষ্টি স্পষ্ট হচ্ছেনা মোটেই।তবুও অরুকে কোলে নিয়েই সামনে পা বাড়ালো ক্রীতিক। সামনে এগোতে এগোতে ক্রীতিক দেখলো, সায়র আর অর্ণব উদ্বিগ্ন নজরে ওর দিকে হা করে তাকিয়ে আছে, ওদেরকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে ক্রীতিক নাক টেনে বললো,
— কি হয়েছে? এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন?

— তোর নোজ ব্লে’ডিং হচ্ছে জেকে!

সায়রের কথায় ক্রীতিক এবার হাতের পিঠ দিয়ে নাকে ঘষা দিয়ে চোখের সামনে এনে দেখলো, ওর নাক থেকে ফি’নকি দিয়ে র’ক্ত গড়িয়ে পরছে।

ক্রীতিক হাতের পিঠ দিয়ে র’ক্তটুকু পরিষ্কার করতে করতে বললো,
— ইটস ফর এ্যাংসাইটি। কিচ্ছু হবে না চল।

কথাটা বলে দুকদম এগোতেই হাঁটু গেড়ে ধপ করে মেঝেতে বসে পরলো ক্রীতিক। ওর কোলে এখনো অরুর নেতিয়ে পরা ছোট্ট শরীরটা। নিজে বসে পরলেও অরুকে শক্ত করে ধরে রেখেছে বুকের মধ্যে ।এবার সত্যিই সামনের সবকিছু পুরোপুরি ঝাপসা হয়ে গিয়েছে। অসার হয়ে আসছে শরীরের মাংসপেশি গুলোও, ক্রীতিকের নোজ ব্লে’ডিংএর ঘটনা নতুন কিছু নয়, প্রথম প্রথম আমেরিকায় আসার পরে অতিরিক্ত অব’সাদগ্রস্থতা, আর দু’শ্চিন্তার ফলে প্রায়ই এমনটা হতো। ডাক্তার বলেছিল মাত্রাতিরিক্ত মানসিক চাপে এমনটা হচ্ছে। কিন্তু গত কয়েকবছর দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসার ফলস্বরূপ এটা পুরোপুরি বন্ধ ছিল, অথচ আজ অরুর একটুখানি বিপ’দে, এতো বছর ধরে একটু একটু করে উন্নতি করা ক্রীতিকের মানসিক স্বাস্থ্যে ধস নেমে এলো মূহুর্তেই । তাহলে ক্রীতিক আদতে কতোটা ডেস্পারেট ওর এইটুকুনি হাটুর বয়সী সৎ বোনের জন্য? এ কেমন প্রেম আর কেমন আসক্তি? সেটাই আপাতত দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভাবছে অর্ণব আর সায়র।

ক্রীতিক হাঁটু গেড়ে বসে নাক থেকে গড়িয়ে পরা র’ক্তগুলো হুডির হাতায় মুছতে মুছতে অস্পষ্ট সুরে বললো,
— অর্ণব, আমি বোধহয় সে’ন্স লেস হয়ে পরবো। তুই অরুকে কোলে নে। প্রাইমারী ট্রিটমেন্ট দিয়ে ওকে সেইফলি বাসায় পৌঁছে দিবি, আর সায়র তুই ভুলেও অরুকে টাচ করবি না। জ্ঞান ফিরে আমি যদি শুনেছি তুই অরুকে টাচ করেছিস, তাহলে তুই আর এ জীবনে বাচ্চার বাপ হতে পারবি না, সেই ব্যবস্থা আমি নিজ হাতে করবো।

সায়র একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,
— টাচ করবো না তোর অরুকে, কিন্তু এটলিস্ট তোকে তো ধরতে দে। পরে যাচ্ছিস তুই।

ক্রীতিক সে কথা আদৌও শুনেছে কি শোনেনি কে জানে?
*****************************************
চলবে…..

#সঙ্গিন_প্রনয়াসক্তি🍁🍁
#পর্বঃ৩০
#লেখনীতে_suraiya_rafa
[ক’পি করা নিষিদ্ধ 🚫]
[প্রাপ্তমনস্কও মুক্তমনাদের জন্য]

পাহাড়ের নিরিবিলি পরিবেশ আর নিরিবিলি নেই। সকাল সকালই শান্ত,প্রানজুড়ানো,নিরিবিলি পরিবেশ ধারণ করেছে বিধ্বং’সীরূপ।প্রচন্ত বাতাসের তান্ডব আর বৃষ্টিতে ঝাপসা হয়ে গিয়েছে চারিপাশ, সেই সাথে গাছপালা ভে’ঙে পরার মরমর আওয়াজ তো আছেই। তবে নির্জন পাহাড়ি এলাকা ছাড়িয়ে গাড়ি করে শহরের দিকে এগিয়ে আসতেই বাতাস, বর্ষন দুটোই উধাও, যদিও পাহাড়ী ঝড়ের তান্ডবে চারিদিকের পরিবেশ গুমোট হয়ে আছে, সেই সাথে ভ্যাপসা গরমটাও বেড়েছে আজ। অতিরিক্ত ভ্যাপসা গরমে অরু হাসফাস করছে দেখে অর্ণব সহসা বাটন প্রেস করে গাড়ির টিন্ডেট জানালার কাঁচটা নামিয়ে দিলো। সঙ্গে সঙ্গে নিদারুন মেঘ ভেজা বাতাস এসে আঁচড়ে পরলো অরুর চোখেমুখে।এবার সত্যিই একটু শান্তি লাগছে। ঠান্ডা বাতাসে একটা বড়সড় নিঃশ্বাস ছেড়ে অর্ণবকে উদ্দেশ্য করে অরু বলে,
—- ধন্যবাদ।

অর্ণব অরুর কথায় নিঃশব্দে হ্যা সূচক মাথা নাড়ালে,অরু পুনরায় শুধালো,
— উনি এখন কেমন আছেন?

অর্ণব স্টিয়ারিংএ দক্ষ হাত চালাতে চালাতে বললো,
— জ্ঞান ফেরেনি এখনো, জ্ঞান ফিরলে সুস্থ হয়ে যাবে, ইটস নট আ বিগ ডিল, দুশ্চিন্তা করোনা।

অর্ণবের কথায় অরু আড়ালে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বিড়বিড়িয়ে বললো,
— নিজের প্রতি এতো কেয়ারলেস কেন উনি?

অরুর আনমনে বলা কথাটা বোধহয় অর্ণব শুনেছে, তাই ও সামনে তাকিয়েই বললো,
— নিজের প্রতি কেয়ারলেস হতে পারে, তোমার প্রতি নয়।

অর্ণবের কথায় অরু সচকিত দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো ওর পানে, পরবর্তীতে কথার পাছে কিছু বলতে যাবে তার আগেই অর্ণব বললো,
— এসে গিয়েছি।

চলে আসার দরুন,অরুর আর কথা বাড়ানো হলোনা,তাই চুপচাপ নেমে গেলো গাড়ি থেকে। গাড়ি থেকে নেমে অর্ণব কে বিদায় জানিয়ে অপটু পায়ে ধীরে ধীরে এগিয়ে গেলো ভবনের লিফটের দুয়ারে।

শরীরে প্রচন্ড জ্বর আর মাথাব্যাথা। হাত পা গুলো শক্তিহীন অসার হয়ে আছে। সুন্দর লম্বা চুলগুলো জটলা পাকিয়ে কোনোমতে পিঠে পরে আছে, সুন্দর মাখনের মতো মসৃন মুখটা ফ্যাকাশে বর্ণ ধারন করেছে , চোখদুটো ঢুকে আছে কোটরে।শরীরের এহেন অবস্থা নিয়েই লিফট থেকে বেরিয়ে, এগিয়ে এসে এ্যাপার্টমেন্টের বাইরে দাঁড়িয়ে কলিংবেল চাপলো অরু।

তবে কলিংবেল চাপার সঙ্গে সঙ্গেই সদর দরজা খুলে বেরিয়ে এলেন একজন মধ্যবয়স্কা মহিলা আর তার পেছন পেছন আজমেরী শেখের নতুন এসিস্ট্যান্ট রাজ। হুট করেই নিজের বাসা থেকে অপরিচিত কাউকে বেরোতে দেখে অরু খানিকটা অপ্রস্তত হয়ে পরলো, কারন ওর মাথা থেকে পা অবধি সবকিছু এলোমেলো আর অগোছালো । হুট করে কেউ প্রথম দেখে পাগল বলে সম্মোধন করলেও ভুল কিছু হবেনা বৈকি। কিন্তু অরুকে একটা বিশাল ঝটকা দিয়ে, ওর অযাচিত চিন্তায় একবালতি জল ঢেলে মহিলাটি অরুর চিবুকে আদুরে হাত ছুয়িয়ে বললো,
— মাস আল্লাহ।

বয়স্ক মহিলার এহেন কথায় চোয়ালঝুলে পরলো অরুর। মনেমনে ভাবলো,
— আমি কি ঠিক শুনলাম? নাকি জ্বরের ঘোরে আসতাগফিরুল্লাহ কে মাসআল্লাহ শুনলাম?

অরু যখন বাইরে দাড়িয়ে একমনে হিজিবিজি ভাবছিল, তখনই মহিলা দ্বিতীয়বার মুখ খুললেন, নিজে নিজেই আগ বাড়িয়ে বললেন,
— আসি তাহলে মা? আগামী রোববার দেখা হবে।

মহিলার কথার আগামাথা বুঝতে না পেরে অগত্যাই জোরপূর্বক হেসে হ্যা সূচক মাথা নাড়ালো অরু। অরুর সম্মতি পেয়ে মহিলাটি চলে গেলে পেছন থেকে রাজ এসে হিসিয়ে উঠে বললো,
— একি অবস্থা তোমার? একটু পরিপাটি হয়ে চলা যায়না?

এমনিতেই অরুর মানসিক অবস্থা বিদ্ধ’স্ত, তারউপর রাজের এমন অধিকার দেখিয়ে কথা বলা, ব্যাপারটা মোটেই সহ্য হলোনা অরুর, মাথার মধ্যে অযাচিত রাগটা হুট করেই কুন্ডলী পাকিয়ে উঠলো কেন যেন। মূহুর্তেই মেজাজ হারালো অরু, রাজের দিকে তাকিয়ে দাঁত খিঁচে বললো,
— আমি কিভাবে চলবো না চলবো সেটাও আপনি আমাকে শিখিয়ে দেবেন? কে হই আপনার? দেখুন রাজ, অযথা গায়ে পরা স্বভাব আমার একদম পছন্দ নয়। ছেলেমানুষের এতো গদোগদো ভাব মানায় না, এটলিস্ট আমার চোখে তো বি’চ্ছিরি লাগে।

অরুর কাঠকাঠ কথাগুলো বোধ হয় রাজের গা থেকে পিছলে চলে গেলো, ও অরুর দিকে তাকিয়ে মারাত্মক হেঁসে বললো,
— কেমন ছেলে পছন্দ তোমার? আমিকি হতে পারিনা তেমনটা?

— না পারেন না, তার নখের যোগ্যতাও আপনার নেই,এটলিস্ট পুরুষ মানুষ হিসেবে তো নেই।

অরুর ছু’রির ফলার মতো ধা’রালো কথা শেষ হলে রাজ পুনরায় কিছু বলতে যাবে তার আগেই ভেতর থেকে ছুটে আসে অনু। এগিয়ে আসতে আসতে উদ্বিগ্ন সুরে বলে,
— কি ব্যাপার কার সাথে তর্ক করছিস বাইরে দাড়িয়ে? মা শুনতে পাচ্ছে তো।

অনু চলে আসাতে অরু ভেতরে যেতে যেতে রাজকে উদ্দেশ্য করে বললো,
— রিডিকিউলাস।

রাগে ফোঁসফাস করতে করতে সদর দরজা ঠেলে অরু ভেতরের রুমে দু’কদম দিয়েছে কি দেয়নি তার আগেই গম্ভীর গলায় ডেকে উঠলেন আজমেরী শেখ।
— অরু দাঁড়াও।

অরু ভ’য়ে তটস্থ হয়ে আছে বহুক্ষণ আগে থেকেই। তবে এই মূহুর্তে মেজাজটাও বিগড়ে আছে ওর, তাই কোনোরূপ হাপিত্যেশ না করেই পেছনে ঘুরে মায়ের দিকে চাইলো ও। আজমেরী শেখ মোটা থানের ছাই রঙা শাড়ী আর কালো রঙের চুড়িহাতা ব্লাউজ পড়ে আছেন। চোখে তার মোটা ফ্রেমের চশমা। শাড়ীর প্রত্যেকটা ভাঁজ অত্যন্ত সুনিপুণ ভাবে সেট করা, দেখে মনে হচ্ছে যেন কোনো টিভিসেটের সংবাদ পাঠিকা।
অরুর চোখে অবশ্য এটা নতুন কিছু নয়, আজকাল মা প্রায়ই এভাবে পরিপাটি হয়ে অফিসে যান। নিজের মরচে পরা আধিপত্যতে একটু খানি ঝালাই করে দিতে।

সাইড ব্যাগটাকে শক্ত হাতে চেপে ধরে মাথা নিচু করে সেই কখন থেকে দাঁড়িয়ে আছে অরু,আজমেরী শেখ ওর আগাগোড়া পরখ করে স্পষ্ট আওয়াজে শুধালেন,
— কোন ছেলের সাথে গিয়েছিলে?

মায়ের কথায় অরুর পিলে চমকে উঠলো,নিজের সুপ্ত ভ’য়টাকে দূরে সরিয়ে মায়ের দিকে চোখ তুলে তাকিয়ে গলায় আত্মবিশ্বাস নিয়ে অরু বললো,
— কি বলছো মা? ককোন ছেলের সাথে আবার যাবো? আমি কাউকে চিনি নাকি এখানে?

আজমেরী শেখ অরুর দিকে নিখুঁত দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললেন,
— এক বছর অসুস্থ ছিলাম আমি,মা’রা যায়নি, তাতেই মিথ্যে কথা শিখে গেলে?

অরুর না সূচক মাথা নাড়িয়ে বলে ওঠে,
— মা বিশ্বাস করো…

আজমেরী শেখ ওকে হাতের ইশারায় থামিয়ে দিয়ে বললেন,
—- রাজ খোঁজ নিয়েছে, তোমাদের ক্লাস থেকে কোনো গ্রুপ ক্যাম্পিং এ যায়নি, তাহলে গত চব্বিশ কোথায় ছিলে তুমি?

এখানেও রাজ, বিরক্ত লাগছে অরুর তবুও মাথা নিচু করে গলা খাদে নামিয়ে অরু বললো,
— আসলে মা, আমি অন্য গ্রুপ…

— থাক।
আজমেরী শেখ এবারও সহসা থামিয়ে দিলেন অরুকে। অতঃপর বললেন,
— আমি আর মিথ্যে অজুহাত শুনতে চাইছি না অরু, আর না আমার এসব চেঁচামেচি কৈফিয়ত দেওয়া নেওয়া পছন্দ। আমি শুধু সময়ের কাজ সময়ে করতে পছন্দ করি।

মায়ের রহস্যেঘেরা কথার আগামাথা কিছুই বুঝতে পারছে না অরু। তবে ওর মা যে একশো তে একশো পাক্কা খিলাড়ী সেটা অরু ভালো করেই জানে। কখন কোন চালে আটকে ফেলবে সেটা অরুর কল্পনাতীতই থেকে যাবে। এবারও তাই হলো।আজমেরী শেখ হঠাৎ করে অরুর সামনেই অনুকে ডেকে পাঠিয়ে বললেন,
— এখন এই মূহুর্তে অরুর পুরো ঘর তল্লাশি করে ওর কাছ থেকে সমস্ত ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস গুলো নিয়ে নাও। আর হ্যা আজ থেকে অরুর সাথে সর্বক্ষন থাকবে তুমি। আমি যদি ঘুনাক্ষরেও শুনেছি বোনের প্রতি দরদ দেখিয়ে আমাকে বোকা বানাচ্ছো তাহলে তোমার ব্যাবস্থাও আমি করবো। নাও সার্চ হার।

মায়ের কথায় অরু ফুপিয়ে কেঁদে উঠে অাহত সুরে বললো,
— মা, কি বলছো?

অনু একটু সাহস করে মাকে বললো,
— মা, মাত্রই তো এলো একটু ফ্রেস হয়ে নিক, তারপর না হয়…

আজমেরী শেখ থমথমে গলায় বললেন,
— ফ্রেস হওয়ার অনেক সময় রয়েছে, আগে ওকে সার্চ করো।

মায়ের কঠোর আদেশ, অনুর আর কিছু করার ছিলোনা অগত্যাই অরুর ব্যাগ হাতরে আইফোন ফিফটিন প্রো-ম্যাক্স মোবাইলটা নিয়ে নিলো অনু। যদিও মোবাইলটা বন্ধ ছিল। তবুও অনুরও এবার ভেতরে ভেতরে সন্দেহের দানা প্রখর হয়, মনেমনে ভাবে,
— হুট করে এতো দামি ফোন কোথায় পেলো অরু? তাহলে কি মা’ই ঠিক? অরু খারাপ কোনো পথে পা বাড়িয়েছে?

ফোনটা ছিনিয়ে নিয়ে গেলে অরু ব্যাগটাকে ফ্লোরেই ছু’ড়ে মে’রে হনহনিয়ে রুমে চলে যায়।অরু চড়ম কষ্ট পেয়েছে ভেবে, অনু মায়ের দিকে তাকিয়ে অসহায় মুখ করে বললো,
— মা অরুতো ছোট ভুল করতেই পারে, তাই বলে এতোটা কঠোর হওয়া কি ঠিক হবে?

অনুর কথায় আজমেরী শেখ বললেন,
—আপাতত যেটা বলেছি সেটা করো। সময় হলে সব কিছু আমি নিজেই আবার আগের মতো করে দেবো। কিন্তু এখন নয়।

*****************************************
সারাদিন রুম আটকে ম’রার মতো পরে থাকলেও সন্ধ্যা হতে না হতেই অরুর একা থাকার শখ ঘুচিয়ে দিয়ে রুমে প্রবেশ করে অনু। অনুর অবশ্য কিছু করার নেই মায়ের আদেশ আসতেই হতো। অনু আসতেই অরু মুখ ফিরিয়ে অন্যদিকে ঘুরে শুয়ে পরলো। অনুর হাতে খাবারের থালা। ও সেটাকে বেডসাইড টেবিলে রেখে দিয়ে নরম গলায় বললো ,
— অরু খাবার এনেছি, খাবি আয়।

অরু নির্লিপ্ত কন্ঠে জবাব দিল,
— খিদে নেই, নিয়ে যা।

— সারাদিন না খেয়ে, রুম আটকে পরে আছিস, তাও খিদে নেই? কি হয়েছে বলতো তোর?

অনুর কথায় অরু শক্ত গলায় বললো,
— না নেই, আর কি হয়েছে, কি হয়েছে, এই প্রশ্নটা করা বন্ধ কর আপা। কি হবে আমার?

অনুও এবার ঝাঁজিয়ে উঠে বললো,
— কিছু না হলে, মিথ্যে বলে কোথায় গিয়েছিলি? আর অতো দামি ফোনই বা কোথায় পেলি?

অরু এবার শোয়া থেকে উঠে , অনুর মুখোমুখি হয়ে বসে কন্ঠে দৃঢ়তা নিয়ে বললো,
— তোর কি মনে হয় আমি খারাপ মেয়ে?

অরুর কথার পাছে অনু বললো,
— এখন আর মনে হওয়া না হওয়া দিয়ে কি যায় আসে? যা করার তাতো মা করে ফেলেছে।

অনুর একটু কথার আঁচে অরুর হৃদয় কামড়ে উঠলো, ওর পরনে এখনো ক্রীতিকের কিনে দেওয়া সিল্কের পাজামা সেট। মাথার চুলগুলো এলোমেলো ভাবে পাঞ্চ ক্লিপ দিয়ে আটকানো, বুকের মধ্যে অজানা আত’ঙ্কের দল হাতুড়ি পেটা করছে খুব, তবুও একটা শুষ্ক ঢোক গিলে বুকের মাঝে সাহস সঞ্চয় করে অরু শুধালো,
— কি করেছে মা?

অনু দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে জানায়,
— আগামী রোববার রাজ তার পরিবার সমেত তোকে দেখতে আসছে। আজকেই তো ওর মা এসে আমাদের মায়ের সাথে কথা বলে গেলো।

অনুর কথায় অরুর মাথায় যেন আকাশ ভে’ঙে পরলো। দুনিয়া দুলে ওঠার মতোই আচমকা ঘুরে উঠলো মাথাটা। অরু ভেবেছিল মা ওর জন্য কোনো কঠিন শা’স্তির ব্যাবস্থা করেছে, হয়তোবা ভার্সিটিতে যেতে দেবে না, কিংবা নজরবন্দি করে রাখবে সারাক্ষণ , তাই বলে এমন কিছু? অরুর কল্পনার ও বাইরে ছিল এটা। অরু তৎক্ষনাৎ বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে পরলো। অবিশ্বাসের সুরে অনুকে শুধালো,
— কি বলছিস আপা এটা? তুই থাকতে আমি কেন?

অরুর কথায় অনুর মেজাজ চড়ে এলো, ও রুষ্ট কন্ঠে বললো,
— আমি থাকতে মানে? তুই প্রত্যয় সাহেবের কথা জানিস না? তাছাড়া রাজ তোকে পছন্দ করেছে আমাকে নয়।

অনুর কথায় একটা অসহ্য য’ন্ত্রনা ছড়িয়ে পরলো অরুর শরীরের রন্ধ্রে রন্ধ্রে। অকস্মাৎ ফ্লোরে ধপ করে বসে হুহু করে কান্নায় ভেঙে পরলো অরু, শরীরে ব্যাথা, হৃদয়ে ব্যাথা, মস্তিষ্কে ও একরাশ য’ন্ত্রনা, সবকিছু মিলমিশে অরুর এক করুন অবস্থা এই মূহুর্তে । মেঝেতে বসে কাঁদতে কাঁদতে মনে মনে হাজারবার আহাজারি করতে করতে অরু বললো,
— তোকে আমি কি করে বোঝাই আপা, তোর যেমন প্রত্যয় সাহেব আছে, আমারও তো একজন আছে, সে আমার স্বামী, জায়ান ক্রীতিক চৌধুরী। আমি বিবাহিত, আমার শরীর মন সবকিছুর দখলদারী শুধু মাত্র তার। আমি তাকে মেনে নিয়েছি। তার ভালোবাসাকে গ্রহন করেছি। তাহলে কিভাবে আমি অন্য একজন পুরুষের সামনে গিয়ে আইবুড়ো সেজে বসবো? কি করে?
এই কথার একটু খানি আঁচ ও জায়ান ক্রীতিকের কানে গেলে সবকিছু তচনচ করে ফেলবে সে। সেই সাথে আমাকেও কে’টে টুকরো টুকরো করে ফেলবে। আমি এখন কি করবো? কিভাবে সবাইকে বলবো যে আমি আমার সৎ ভাই জায়ান ক্রীতিকের বিয়ে করা বউ?

অরু সেই কখন থেকে মেঝেতে বসে শব্দ করে কাঁদছে দেখে অনু আড়ালে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,
— এতো কাঁদছিস কেন অরু? দেখতেই তো আসছে, বিয়ে তো আর হয়ে যাচ্ছে না? ভালোয় ভালোয় সবটা মিটে গেলে তুইও তো বেঁচে যাবি। মা আর তোকে সারাক্ষণ নজরদারিতে রাখবে না।

কথাটা শেষ করে কম্ফোর্টার গায়ে জড়িয়ে শুয়ে পরলো অনু। অনুর মাত্র বলা কথাগুলো বারবার মস্তিষ্কে বারি খাচ্ছে অরুর।
—দেখতেই তো আসছে, বিয়েতো আর হচ্ছে না।

“বিয়ে”শব্দটা অসংখ্যবার প্রতিধ্বনিত হয়ে কানে এসে লাগছে অরুর,ওর তো বিয়ে হয়ে গিয়েছে সেবার থাইল্যান্ড বসেই। ধর্মীয়, সামাজিক দুইভাবেই বিয়ে হয়েছে জায়ান ক্রীতিকের সঙ্গে। তাহলে এখন আর নতুন করে কিভাবে বিয়ে হবে? আর তাছাড়া চোখ দুটো বন্ধ করলে স্বামী রুপে ওই সুদর্শন মানবের মুখটা ছাড়া আর কিছুই তো কল্পনায় আসছে না।

মনেমনে হাজার কথা ভাবতে ভাবতেই অরু চলে গেলো টানা বারান্দায়। বাইরে ভারী বর্ষন হচ্ছে। আকাশ বাতাস ছাপিয়ে মেঘ গলিয়ে বৃষ্টি নেমেছে ধরনীতে। বাতাসের তোপে বৃষ্টির ছাট এসে লাগছে অরুর চোখে মুখে, তবুও সেখানেই হাঁটু মুড়ে বসে পরলো ও।

উদাসীন বারীধারার পানে চেয়ে ভাবতে লাগলো নিজের থেকে বয়সে গুনগুনে বারো বছরের বড় সুদর্শন পুরুষটির কথা, যে ওর ব্যক্তিগত পুরুষ। কোনোদিন কি অরু কল্পনা করেছিল ওর সাথে এমনটা হবে? আমেরিকাতে কেউ ওর জন্য এভাবে দিনের পর দিন অপেক্ষার প্রহর গুনবে? এরকম হুট করেই নিজের নামের পাশে মানুষটার টাইটেল এঁটে যাবে? ভাবেনিতো, কল্পনাতেও ভাবেনি। কিন্তু ভবিতব্য এটাই ছিল।
অরু মেনে নিয়েছে নিজের ডেসটিনি। অবশ্য না মেনে কোথায় যাবে? কি নেই জায়ান ক্রীতিকের? সবচাইতে যেটা বেশি আছে, সেটা অরুর প্রতি এক আকাশসম আসক্তি। মানুষটার পাগলামি, আসক্তি, রাগ, বিরক্তি, একান্ত গোপনীয় চাহিদা সবকিছু অরুকে ঘীরেই। তাহলে অরু কীভাবে ক্রীতিকের মায়ায় না পরে থাকতো? অরুর কাছে ক্রীতিকের মায়ায় জড়ানোর প্রথম ধাপ ছিল ওদের বিয়ে।

হয়তোবা বিয়ের পরে উপরওয়ালা প্রদত্ত একধরনের টান তৈরি হয়ে যায় হৃদয়ে, অরুর বারবার মনে হতে থাকে,একটা মাত্রাতিরিক্ত সুদর্শন পুরুষ, আধুনিক ভাষায় বলতে গেলে হ্যান্ডসাম। লম্বা, চওড়া, গৌড় বর্ণের কথায় কথায় ভ্রু কুঁচকানো লোকটা ওর স্বামী। এই কথাটা দিনের আলোর মতোই সত্যি। অরুর স্পষ্ট মনে আছে বিয়ের পরে সবার জোরাজোরি তে স্বামী রুপি ক্রীতিকের দু-হাতে চুমু খাওয়ার কথা। তখন তো অরুও হৃদ মাঝারে ভীষণ টান অনুভব করেছিল।

বিয়ের কথা মাথায় আসতেই অরু চলে গেলো সেদিনের ভাবনায়,যেদিন নিজের সবটুকু ক্রীতিকের নামে লিখে দিয়ে এসেছিল ও। জায়ান ক্রীতিক ওয়েডস অরু। ভাবতে ভাবতেই এক চিলতে হাসি ফোটে অরুর ঠোঁটে।

আজকের মতো সেদিন বৃষ্টি ছিলোনা, এশিয়ান দেশ হওয়াতে আমেরিকার মতো কনকনে শীতও ছিল না ব্যাংকক শহরে । তবে আবহাওয়াটা বেশ গুমোট ছিল।অনুর সাথে রাগ করে অরুর করা চড়ম বোকামির ফলসরূপ ওর উপর বেজায় চটেছিল ক্রীতিক। চোখেমুখে সে কি রাগ তার।যে রাগের কাছে প্রত্যেকবারই হার মেনে যায় অরু। সেবারও মেনেছিল।
সকাল বেলা ওকে আটকে রাখলেও বিকালে এসে কোনোরূপ কথাবার্তা না বলেই টা’নতে টান’তে অরুকে নিয়ে বাইকে বসায় ক্রীতিক। ওদের পেছনে মুখ কাচুমাচু করে দাঁড়িয়ে ছিল এলিসা, অর্ণব আর সায়রও। অরু কিছু বুঝে উঠতে না পেরে কাঁদতে কাঁদতে এলিসাকে বললো,
— কি ব্যাপার আপু, কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন উনি আমায়?

এলিসা অরুকে আস্বস্ত করে ওর কানের পেছনে চুল গুঁজে দিতে দিতে বলে,
— ইটস ওকে, আমরাও আসছি, ভয় পেওনা, ও তোমাকে কিচ্ছু বলবে না।

এলিসার কথার পাছে অরু আর কিছু বলার সুযোগ পেলোনা, তার আগেই বাইকে টান দেয় ক্রীতিক। অগত্যাই নিজেকে সামলানোর জন্য ক্রীতিকের জ্যাকেট টেনে ধরলো অরু।
ক্রীতিক সামনে ফোকাস করেই অরুকে ডেকে বললো,
— অরু, তুই কি জানিস আজ তোর মায়ের অপা’রেশন?

অরু হ্যা সূচক মাথা নাড়ালে ক্রীতিক পুনরায় বললো,
— তুই কি এটা জানিস আমি ডক্টরকে বলে তোর মায়ের সব ট্রিটমেন্ট বন্ধ করে রেখেছি।
আমি না বলার আগ পর্যন্ত ওরা তোর মায়ের অ’পারেশনে হাত ও ছোঁয়াবে না।

ক্রীতিকের কথায় অরুর মুখ থেকে যেন র’ক্ত সরে গেলো। ও বাইকে বসেই স্তম্ভিত গলায় বললো,
— আপনি কি মজা করছেন?

— তোর কি মনে হয় আমি মজা করার মুডে আছি?

অরু নাক ফুলিয়ে বললো,
— তাহলে এসব কথা কেন বলছেন?

ক্রীতিক একটা পুরাতন গলির মাথায় বাইক থামিয়ে অরুর হাত ধরে বললো,
— বলছি চল।

অরু চারিদিকে তাকালো, দুপাশে পুরাতন ইটের চালার ঘর,তার মাঝ দিয়ে সরু রাস্তা, ঘর গুলোর মধ্যে বেশির ভাগই থাইল্যান্ডের স্থানীয় মানুষজনের পুরাতন দোকানপাট, ছোটখাটো স্ট্রীট মার্কেট,হকারী আর ঐতিহ্যবাহী কাপড়ের দোকান দিয়ে ভর্তি গলিটা। সরু রাস্তা দিয়ে হাটতে হাটতে অরু খেয়াল করলো আশেপাশের সবাই ওদের দিকে অদ্ভুত নজরে তাকিয়ে আছে। যেমনটা আমরা ভিনদেশীদের দেখলে করি। অরু বড়বড় চোখ করে এদিক ওদিক দৃষ্টিপাত করলেও ক্রীতিক সোজা হাটছে। হাটছে তো হাটছেই। ক্রীতিকের পুরুষালী কদমের সাথে পা মিলিয়ে হাটতে হাটতে অরুর পা ব্যথা করছে এখন। গোড়ালি ভে’ঙে মাটিতেই বসে পরতে ইচ্ছে করছে, উপায়ন্তর না পেয়ে অরু শুধালো,
— আর কতদূর?

ক্রীতিক ক্রুর হেসে বললো,
— বাবাহ এতো তাড়া?

— কিসের তাড়া? আর আপনি একটু আগে কি বললেন? আমার মায়ের অপা’রেশন বন্ধ কেন করেছেন? কি সমস্যা বলুন?

ক্রীতিক যেতে যেতে বললো,
— সমস্যা তো তুই।

— মানে?

গলির শেষ প্রান্তে একটা পুরাতন মসজিদের সামনে দাড়িয়ে ক্রীতিক একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,
— ভেতরে গিয়ে যা করতে বলবো,যেভাবে করতে বলবো, তাই করবি,নয়তো তোর মায়ের অ’পারেশন আর হচ্ছে না।

অরু তৎক্ষনাৎ ক্রীতিকের থেকে নিজের হাতটা ঝটকা মে’রে ছাড়িয়ে বললো,
— মশকরা পেয়েছেন? অপা’রেশন হবেনা মানে? আপনি বলবেন আর অপা’রেশন হবে না এতো সোজা?

ক্রীতিক কপট হেসে অরুর দিকে ঝু্ঁকে এসে বললো,
— ছোট্ট মানুষ মেমোরি লস হতেই পারে।কোনো সমস্যা নেই, আমি মনে করিয়ে দিচ্ছি, মনে আছে আমার এপ্রোভালের জন্য তোর মা দীর্ঘ একবছর বাংলাদেশে পরেছিলো?

অরু এবার গলার স্বর কিছুটা খাদে নামিয়ে বললো,
— কি বলতে চাইছেন?

ক্রীতিক সামনে তাকিয়ে বললো,
— আজ, এই মূহুর্তে এখানে আমাদের বিয়ে হবে।

ক্রীতিকের কথায় অরুর মাথা ঘুরে উঠলো। কি বলে এই লোক? জীবনটা কি ছেলে খেলা?যাকে ইচ্ছে হলো তাকে ধরে আনলাম আর জিদ দেখিয়ে বিয়ে করে নিলাম। ক্রীতিকের উপর মেজাজ চড়াও হয়ে গিয়েছে অরুর, ও হিং’স্র বাঘিনীর মতো গর্জে উঠে বললো,
— আপনি একটা পা’গল, উন্মা’দ, সাইকো।
নয়তো নিজের সৎ বোনের জীবন নিয়ে এভাবে ছেলে খেলা করতে পারতেন না।

অরু কথাটা উচ্চারণ করার সঙ্গে সঙ্গে এক থা’বায় ওর বুকের কাছের জামাটা খা’মচে ধরলো ক্রীতিক। ফিনফিনে জামাটায় একটান দিয়ে নিজের কাছে টেনে এনে অরুর দিকে চোখ রাঙিয়ে ক্রীতিক দাঁত খিঁচে হিসহিসিয়ে বললো,
— তুই আমার কেমন বোন? কোন হিসেবে বোন, উত্তর দে? তোর বাপ আর বাপ এক নয়, তোর মা আমার মা এক নয়, তাহলে নিজেকে আমার বোন দাবি করিস কোন সাহসে ?

শেষ কথাটা বলে অরুকে ধা’ক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয় ক্রীতিক। ক্রীতিকের যুক্তির কাছে হেরে গিয়ে অরুও এবার চুপ হয়ে যায়। চোখ মুখে অসহায় ছাপ টেনে, গলার মাঝে কান্না আটকে রেখে টলমলে চোখে ক্রীতিককে বলে,
— তাই বলে আপনি আমাকে জো’র করে বিয়ে করবেন? সমাজ কি বলবে? দুনিয়া কি বলবে?
আপনার সাথে আমি সেটাও কি সম্ভব? কোন ভুলের রা’গ ঝাড়ছেন আমার উপর, বলুন তো?

ক্রীতিকের দৃষ্টিতে কোনো করুনার ছিটে ফোঁটাও নেই, ও এগিয়ে এসে পুনরায় অরুর হাত চেপে ধরে বললো,
— উপর ওয়ালা যার প্রাধান্য দিয়েছে সমাজ তাতে বাঁধা দেওয়ার অধিকার রাখেনা, আর না আমি এসবে পরোয়া করি।

অরু পুনরায় নিজের হাত ছাড়িয়ে বললো,
— আমার জীবনটা এভাবে কেন নষ্ট করছেন? কি করেছি আমি?

ক্রীতিক অরুর দিকে তাকিয়ে হাস্কিস্বরে বললো,
— বিলিভ মি অরু, একটা সময় আসবে, যখন তুই এই সম্পর্কটার জন্য জীবন দিয়ে দিতেও রাজি থাকবি। তখন তুই নিজ মুখে বলবি সেদিন যা হয়েছিল খুব ভালো হয়েছিল। আমি এখন পরিপূর্ণ । আর সেই দিন বেশিদূরে নয়। এখন চুপচাপ ভেতরে চল।

অরু তেতে উঠে বললো,
— আমি যাবোনা, মা আপাকে না জানিয়ে এভাবে লুকিয়ে চুরিয়ে বিয়ে আমি জীবনেও করবো না।

— জায়ান ক্রীতিক লুকিয়ে চুরিয়ে কিছু করেনা, আমার মন চেয়েছে আমি এখন এই মূহুর্তে তোকে বিয়ে করবো, মানে করবোই। যদি বেশি বাড়াবাড়ি করিস,তাহলে তোর মাকে আজই প্লেনে করে বাংলাদেশ পাঠিয়ে দেবো। ইভেন উইথ আউট এনি ট্রিটমেন্ট।

–নাহ!

ক্রীতিকের শেষ কথাতে অরু শব্দ করে না বলে ওঠে।

অরুকে কাঁদতে দেখে ক্রীতিক ওর হাত ধরে ভেতরে প্রবেশ করতে করতে বললো,
— মায়ের ভালো চাইলে ভেতরে চল। তুই শুধু তোর নামটা আমার নামে লিখে দিবি ব্যাস। বাকিটা জীবন তোকে সামলে নেওয়ার দায়িত্ব শুধু আমার।

অরু কাঁদতে কাঁদতে হেঁচকি টেনে বললো,
— আগে ডক্টর কে কল করে বলুন মায়ের ট্রিটমেন্ট শুরু করতে।

ক্রীতিক যেতে যেতে বললো,
— ফোন রিসোর্টে ফেলে এসেছি, বিয়েটা হয়ে যাক অর্ণবের ফোন থেকে কন্ট্রাক্ট করে বলে দেবো।

— ততক্ষণে যদি মায়ের কোনোক্ষতি হয়ে যায়?

ক্রীতিক এবার হাটার গতি থামিয়ে অরুর দিকে তাকিয়ে চোখ পাকিয়ে বললো,
— আমি বলেছি যখন পরে, তারমানে পরেই, আগে বিয়ে হবে, তারপর সব।

**************************************
পুরাতন ছোট্ট মসজিদটার ইটের চালা ক্ষয়ে যায়যায় অবস্থা। ধর্মভিত্তিক দেশ না হওয়াতে এদেশে হুজুর কিংবা মুসলিম খুজে পাওয়া বেশ কষ্ট সাধ্য। তবুও কোথা থেকে যেন অর্ণব আর সায়র মিলে একজন ইন্দোনেশিয়ান হুজুর খুজে এনেছে।
অরু আর ক্রীতিক ভেতরে ঢুকতেই অর্ণব ঝাঁজিয়ে উঠে বললো,
— এতোক্ষণ লাগে তোদের? সেই কখন থেকে অপেক্ষা করছি।

ক্রীতিক ভাবলেশহীন কন্ঠে বললো,
— বউকে রাজি করাতে দেরি হয়ে গেলো। তা তোর লইয়ার আর হুজুর কই?

ক্রীতিকের কথায় অর্ণব পাশে সরে গিয়ে বললো,
— এই যে আমেরিকান লইয়ার।যেহেতু তুই অরু দুজনই আমেরিকা থেকে বিলোং করিস তাই উনিই তোদের রেজিস্ট্রি ম্যারেজটা আমেরিকান কোর্টে তুলবে।

অর্ণবের বুদ্ধি দেখে সায়র এগিয়ে এসে বললো,
— ওরে শালা,এই ব্যাংকক বসে আমেরিকান লইয়ার কই পেলি তুই?

অর্ণব নিজের কাঁধ ঝাড়া দিয়ে একটু ভাব নিয়ে বললো,
— পেয়েছি, পেয়েছি, টাকা থাকলে বাঘের চোখও মেলে বন্ধু।

সায়র নাক সিকোয় তুলে বললো,
— তা এতোই যখন টাকা তাহলে একটা বাঙালি হুজুর ধরে আনতে পারলি না? এ কোন দেশী হুজুর নিয়ে এলি, কথা বুঝিনা কিছুনা। কবুল কোন ভাষায় বলবে ওরা?

অর্ণব দাঁত কিরমিরিয়ে বললো,
— আহাম্মক, বিয়ের সময় সব দেশেই কবুল বলে, তোর এতো চিন্তা করতে হবেনা হুজুর হলেই হলো, তাছাড়া এলিসা মোটামুটি ইন্দোনেশিয়ান ভাষা জানে।

সায়র হ্যা সূচক মাথা নাড়িয়ে পাশে সরে গেলে ক্রীতিক বিরক্ত হয়ে বললো,
— তোদের গবেষণা শেষ হয়েছে? তাহলে এবার বিয়েটা করি?

সায়র ভ্রু কুঁচকে বললো,
— তোর দেখি তড় সইছে না জেকে। দাড়া এলিসা ফুলের মালাটা নিয়ে আসুক।

অর্ণব লইয়ারের সাথে কথা বলে কাগজ পত্র রেডি করে ক্রীতিককে ডেকে বলে,
— জেকে অরুকে নিয়ে আয় সাইন করবি।

ক্রীতিক এবার অরুর পাঁচ আঙুলের ভাঁজে আঙুল ঢুকিয়ে বললো,
— আয় আমার সাথে।

লইয়ারের সামনের চেয়ার দুটোতে পাশাপাশি বসে আছে অরু আর ক্রীতিক।
অরুর নিস্তব্ধ চোখের জলে রেজিষ্ট্রি পেপার ভিজে আঠা আঠা হয়ে গিয়েছে, তবুও কলম হাতে নিয়ে বসে আছে সে।
অরুর এহেন কান্ডে বিরক্ত হয়ে ক্রীতিক আস্তে করে অর্ণবকে বললো,
— অর্ণব প্রাইভেট জেট বুক কর। অরুর মা দেশে ফিরবে।

ক্রীতিকের কথার আগামাথা অর্ণবের বুঝে না এলেও অরু তৎক্ষনাৎ বললো,
— করছি করছি, সাইন করছি।

চোখের কার্নিশ বেয়ে গড়িয়ে পরা নোনাজল টুকু হাতের পিঠ দিয়ে মুছে, কাঁপা কাঁপা হাতে অস্পষ্ট অক্ষরে অরোরা শেখ নামটা লিখে দিলো অরু।
অরুর সিগনেচারের পর্ব শেষ হলে ক্রীতিক নিজেও গুটিগুটি অক্ষরে জায়ান ক্রীতিক চৌধুরী নামটা লিখে দেয়। সিগনেচার করার সময় ক্রীতিকের মুখটা ছিল থমথমে আর গম্ভীর। দেখে মনে হচ্ছিল অরুকে নয়, বরং ওকেই অরু জোর করে ধরে বিয়ে করাচ্ছে। তবে ওর মনে চলছিল অন্য সুর,
—-কথা দিয়েছিলাম খুব বেশি না একটু খানি বড় হ, তোকে আমি আমার করে নেবো। আজ কথা রেখেছি, তুই আজ থেকে আমার অরু। পুরোটাই আমার।

রেজিষ্ট্রি পেপারে সাইন করা শেষ হলে এলিসা একটা তাজা ফুলের মালা অরুর হাত ধরিয়ে দিলো, অন্যটা ক্রীতিকের হাতে, তারপর মোবাইলের ভিডিও অন করতে করতে বললো,
— জেকে বউকে মালা পরা।

ক্রীতিক বিরক্ত ভঙ্গিতে বললো,
— এসবের দরকার নেই তো এলিসা।

— দরকার আছে তুই পরা।

এলিসার কথায় ক্রীতিক অরুর নত করে রাখা মাথার দিকে তাকিয়ে গম্ভীর গলায় বললো,
— মাথা তোল মালা পরাবো।

সায়র চোখমুখ কুঁচকে বললো,
— সিরিয়াসলি জেকে? তোর বউ হয়ে গিয়েছে মেয়েটা, এখনতো একটু সম্মান দে।

ক্রীতিক এবার সত্যি সত্যিই একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,
— অরু মাথা তোলো মালা পরাবো।

“তোলো” শব্দটা বলতে গিয়ে ক্রীতিকের বোধহয় জিভ খসে পরার উপক্রম, ওকে দিয়ে এসব হয়না মোটেই। এবার এলিসাও পাশ থেকে তাড়া দিয়ে অরুকে বললো,
—অরু মাথা তোলো।

সবার জোরাজোরিতে অরু এবার মাথাটা তুলে ক্রীতিকের চোখের দিকে চাইলো। সেই ঝড় তোলা কামুক চাহনি, চোখ দেখে মনেই হচ্ছেনা এই লোকটা একটু আগে এতোবড় ভয়া’বহ কান্ড ঘটিয়েছে। অথচ সবার মধ্যে থেকে ফে’সে গিয়েছে অরু।
অরুর ভাবনার মাঝেই ওর গলায় মালা পরিয়ে দিলো ক্রীতিক। এবার অরুর পালা। কিন্তু অরুর মতো একরত্তি চুনোপুঁটির মতো মেয়ে খাম্বার মতো দাঁড়িয়ে থাকা গ্রীকগড খ্যাত ক্রীতিকের লাগাম কি করেই বা পাবে? তাই সহসাই পা উচিয়ে আঙুলের উপর ভর করে দাঁড়িয়ে মুখ কাচুমাচু অরু বললো,
— পারছিনাতো।

অরুর কথায় এলিসা মুখ টিপে হাসি সংবরণ করে বললো,
— জেকে কি সমস্যা? তোর বউ তো তোর নাগাল পাচ্ছে না।

ক্রীতিক কিছু না বলেই এবার মাথা নুইয়ে দিলো অরুর সামনে,তৎক্ষনাৎ ওকে মালা পরিয়ে দেয় অরু।
ঠিক সেই মূহুর্তটাই মুঠোফোনের ক্যামেরায় ব’ন্ধী করে নেয় এলিসা। এরপর ধর্মীয় মতে ওদের আরও একবার বিয়ে হয়।অরু আর ক্রীতিক দুজনই কবুল বলে বিয়েটা সম্পন্ন করে।

অরু কাঁদতে কাঁদতে ক্লান্ত হয়ে গিয়েছে। নাক, চোখ লালবর্ণ ধারণ করেছে। ওর পরনে ছিল লংস্কার্ট আর সুতির টপস। চেহারায় কৃত্তিম প্রসাধনীর লেশমাত্র নেই,তবুও বিয়ের মালা পরিহিত সদ্যবিবাহিতা অরুকে দেখতে অপরূপা লাগছে। চেহারাতে অন্যরকম লাবন্যতা এসেছে মেয়েটার। এটা বোধ নতুন নতুন বিয়ের পর সব মেয়েদেরই আসে, তাই অরুরও এসেছে।

বিয়ের পালা শেষ হলে ছোট্ট একটা নিয়মের মাঝে আটকে পরে ওরা। এটা ইন্দোনেশিয়ান সংস্কৃতি। বিয়ের পর স্বামী তার স্ত্রীর ঘোমটা খুলে মুখ দেখবে অতঃপর স্ত্রী তার স্বামীর দু-হাতে চুমু খেয়ে হাতদুটো চোখে ছুয়িয়ে সম্মান জানাবে। আর স্বামী স্ত্রীর মাথায় হাত রেখে সেই আন্তরিকতা টুকু সাদরে গ্রহন করবে। দারুন ট্রেন্ড। হুজুরের মুখ থেকে কথাগুলো শুনে এলিসা, অর্ণব, সায়র একপ্রকার ঝুলে পরেছে ওদের দিয়ে এই ট্রেন্ড পালন করাবেই করাবে। সব নিয়ম পালন করা হয়েছে এটুকু কেন বাকি থাকবে?
ওদের জোরাজোরিতে ক্রীতিক বিরক্ত হয়ে বললো,
— অনেককিছু করেছি, আর পারবো না। এখন যা করার তোরা কর।

এলিসা ওর দিকে তাকিয়ে কটমটিয়ে বললো,
— পারবিনা মানে? মেয়েটাকে জোরজব’রদস্তি করে বিয়ে করেছিস, আর এখন বলছিস নিয়ম পালন করতে পারবি না? মগের মুল্লুক নাকি?

— ভাই কেন বুজছিস না,এটা বাঙালি নিয়ম না,কোথাগার ইন্দোনেশিয়ান নিয়ম। আমরা কেন পালন করতে যাবো?

এলিসা ক্রীতিকের কথায় ঘোর আপত্তি জানিয়ে বললো,
—শোন জেকে, নিয়ম ইজ নিয়ম, অতো দেশটেশ বুঝিনা আমরা। সো চুপচাপ পালন করে ফেলো।

পাশ থেকে অর্ণব বললো,
— শুধু শুধু সময় নষ্ট করছিস জেকে, অরুতো এখন তোর বউই যা নিয়ম আছে সব করে ফেল। এলিসা হলেতো আমি নাচতে নাচতে ট্রেন্ড পালন করতাম। শুধুমাত্র নিজের দেশ কেন পুরো এশিয়ান সবগুলো কান্ট্রি থেকে নিয়ম ধার করে এনে এনে পালন করতাম।

এলিসা অর্ণবকে চোখ রাঙিয়ে বললো,
— থামবি তুই?

ক্রীতিক এবার ওদের সবাইকে একসাথে থামিয়ে দিয়ে বললো,
— আচ্ছা চুপ কর তোরা। করছি, যা যা নিয়ম আছে সব পালন করছি, তবুও চেঁচামেচি থামা।

*****************************************
ক্রীতিকের সম্মতি পেয়ে এলিসা এগিয়ে এসে অরুর পাতলা ফিনফিনে দোপাট্টা দিয়ে ওর মাথায় বড়সড় একটা ঘোমটা টেনে দিলো। এখন আর অরুর মুখ দেখা যাচ্ছেনা। ক্রীতিক কয়েক সেকেন্ড ঘোমটা টানা অরুর দিকে তাকিয়ে থেকে হাত বাড়িয়ে দিলো ধীরে ধীরে অরুর ঘোমটা সরানোর উদ্দেশ্যে। ভেতরের উত্তেজনা, উৎফুল্লতায় এবার সত্যি সত্যি ওর হাত কাঁপছে। নিজেকে বারবার দাড় করাচ্ছে সপ্ন দুয়ারে, অরু এখন আক্ষরিক অর্থে ক্রীতিকের বউ। মিসেস অরোরা জায়ান। আর এই মূহুর্তে ক্রীতিক তার বউয়ের ঘোমটা সরাচ্ছে মুখ দেখার উদ্দেশ্যে এটা কি আদৌও সত্যি? নাকি সপ্ন?
ক্রীতিক ধীরে ধীরে ঘোমটা তুলে অরুর, নানা তার নতুন বউয়ের মুখের দিকে নিস্প্রভ চোখে চেয়ে রইলো খানিকক্ষণ। ওর পুরো পৃথিবীটা এখানেই থমকে গিয়েছে, অরুকে আজ মাত্রাতিরিক্ত সুন্দর লাগছে। তাইতো ক্রীতিকের মতো শক্ত পোক্ত কঠিন হৃদয়ের মানুষটাও কেমন গলে গলে যাচ্ছে ওর মায়াবী মুখখানা দেখে। ঘোমটা তোলা হয়ে গেলে এলিসা আর হুজুরের নির্দেশে কাঁপা কাঁপা হাতে ক্রীতিকের জিম করা পেশিবহুল সাদা ফর্সা হাতদুটো হাতের মধ্যে নিয়ে নেয় অরু। অতঃপর হেঁচকি দিতে দিতে ওর দু’হাতের পিঠে নিজের ভেজা নরম তুলতুলে অধর খানি ছুয়িয়ে দেয় নির্লিপ্তে,অতঃপর তা মাথা নুয়িয়ে স্পর্শ করায় নিজের দুচোখে।
অরুর এই নিয়ম পালনে কি মোটেও আন্তরিকতা ছিলোনা? ছিলোতো, যত যাই হোক বিয়ের পরে মেয়েদের হৃদয়টা স্বামীর প্রতি আপনাআপনি দূর্বল হয়ে যায়। ওই মূহুর্তে অরুরও বোধ হয় তাই হয়েছিল। অরু যখন ক্রীতিকের হাতদুটো দুচোখে স্পর্শ করায় তখন ক্রীতিক তার একহাত নিয়ে অরুর মাথার উপর রেখে অন্যহাতের বাহুতে টেনে নেয় অরুর ছোট্ট শরীরটাকে। সঙ্গে সঙ্গে ক্রীতিকের সাদা শার্টটা খামচে ধরে ওর বুকে মুখ লুকিয়ে কা’ন্নায় ভেঙে পরে অরু।কি জানি কেন এতো কেঁদেছিল সেদিন? আর কাঁদবেই যখন তখন ক্রীতিকের বুকেই কেন? তখন তো ক্রীতিকই আসল কার্লপিট ছিল।তবুও ক্রীতিকের বুকেই কেঁদে ভাসিয়েছিল অরু।

এসব অযথা নিয়মকানুন পালনের পর ক্রীতিক আর দাঁড়ালো না, অরুকে কোলে তুলে নিয়ে বেড়িয়ে গেলো মসজিদ থেকে। তারপর বাইকে বসে বরাবরের মতোই নিজের ওয়ালেট, সিগারেটের বক্স, এমনকি একটু আগের মালাটাও অরুর হাতে ধরিয়ে দিলো সে। অরুও চুপচাপ সেগুলো হাতে নিয়েই বসে পরলো বাইকের পেছনে।
অরুর ভেতর তখন ভোঁতা ভোঁতা অনুভূতি থাকলেও আজ ওর অনুভূতি গুলো তুঙ্গে। এখন মনে হচ্ছে বিয়ের পরে স্বামীর সাথে ওর প্রথম বাইক রাইড বোধ হয় সেটাই ছিল।
সেদিনের ঘটে যাওয়া প্রত্যেকটা কথা পুঙ্খানুপুঙ্খ মনে করে আরও একবার লাজুকতায় মুড়িয়ে গেলো অরু। সেই লাজে রাঙা হলো নরম তুলতুলে কপোল দুখানা।
চলবে……….