#সর্বনাশীনি_তুমি
#পর্ব:১৬
#Mishmi_muntaha_moon
রাত বাড়ছে।প্রায় ১ঘন্টা পর সেহরিশ ফিরলো।এসে দেখলো উপমাকে যেখানে রেখে গিয়েছিলো এখনো একইজায়গায় একই ভাবে বসে আছে।সেহরিশ হাত দিয়ে ঘাড় চেপে ওয়ারড্রব থেকে শার্ট বের করে বলল
‘কি হলো এভাবে বসে আছো কেনো?শাড়ি পালটে নাও।’
বলে সেহরিশ ওয়াশরুম গেলো ফ্রেশ হতে।উপমা মনে মনে বলল৷ ‘জামাকাপড় কোথায় পাবো এখন আমি।’
সেহরিশ ফ্রেশ হয়ে রুমে এসে তখনো দেখলো উপমা বিছানায় বসে পা ঝুলাচ্ছে।সেহরিশ ধীরে ধীরে উপমার কাছে এলো।উপমা নিচে তাকিয়ে ছিলো সেহরিশকে এতো কাছে আসতে দেখে মাথা তুলে তাকায় সেহরিশের দিকে।সেহরিশ উপমার পাশে বসে।হাতের আঙুল চুলের ভাজে ঢুকিয়ে উপমাকে কাছে টানে।
উপমার হাত পা অস্বাভাবিক ভাবে কাপছে।জ্বর যেনো আবার আকড়ে ধরেছে।সেহরিশ উপমার একদম কাছাকাছি। কাপাকাপা ঠোঁট নেড়ে ধীর কন্ঠে বলল
‘ আমার হাত পা কাপছে সরে বসুন।’
বলে এক চোখ মেলে সেহরিশ কে দেখলো।ঠোঁটের কোনে হাসি লেগে আছে।উপমা আবারও চোখ বন্ধ করলো।উপমা তার ঠোঁটে সেহরিশের ঠোঁটের হাল্কা ছোয়ায় মিইয়ে গেলো।
কিছু সময় পরে সেহরিশ দূরে সরে বসলো।উপমা এখনো চোখ বন্ধ করে আছে।মনে হচ্ছে চোখ বন্ধ করে রাখলে সেহরিশের মুখোমুখি হতে হবে না। সেহরিশ কপাল থেকে উপমার চুল সরিয়ে দিয়ে বলল
‘তোমার কিছু জামাকাপড় এনেছি বাহিরে ছোট স্যুটকেস টাতে। চেঞ্জ করে নাও।’
উপমা ধীরে চোখ খুললো।সেহরিশের হাতে মোবাইল কিন্তু দৃষ্টি উপমাতে।উপমা চোখের পলক ফেলে উঠে দাড়ালো।দ্রুয় হেটে বাহিরে চলে গেলো।বাহিরে যেতেই স্যুটকেস দেখতে পেলো।একটা জামা বের করে রুমে এসে দেখতে পেলো সেহরিশ আধশোয়া হয়ে ল্যাপটপ কিছু করছে।ভ্রু কুচকে আছে কিছুটা বেশি।উপমা সেহরিশের কাছে গিয়ে বলে
‘আপনি ল্যাপটপ এ কি করছেন?’
সেহরিশ ল্যাপটপ থেকে ভ্রু সরালো।ঠোঁটে ঠোঁট চেপে ভ্রু উচিয়ে উপনার দিকে তাকালো।তাকিয়ে থেকে কিছুক্ষন আবারও ল্যাপটপ এ তাকালো বলল
‘চেঞ্জ করে আসো আগে তারপর বলছি।’
উপমা মাথা নাড়িয়ে ড্রেস চেঞ্জ করে এলো।
চেঞ্জ করে এসে বিছানায় সেহরিশের থেকে কিছুটা দুরত্ব বজায় রেখে বসলো।সেহরিশ তাকালো উপমার দিকে।স্নিগ্ধ লাগছে।বৃষ্টিভেজা পাখির মতো।
সেহরিশ আনমনে হাসলো।উপমা ভ্রু কুচকে দেখলো সেহরিশের হাসি কিন্তু পাত্তা না দিয়ে বলল
‘বললেন না আপনি কি করছিলেন কম্পিউটার এ?’
সেহরিশ ল্যাপটপ রাখলো সাইডে।উপমাকে হাত দিয়ে
ইশারা করে বলল
‘এতো দূরে কেনো কাছে এসে বসো?’
উপমা ঠোঁট কামড়ে ধরলো।একটু একটু করে সেহরিশের কাছে গিয়ে বসতেই সেহরিশ উপমার পিঠ নিজের বুকে চেপে উপনার হাতের উপর দিয়ে গলায় দুই হাত দিয়ে চেপে পেচিয়ে ধরলো।স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে বলল
‘ অবশেষে আমার হলে তুমি তাইতো!’
উপমা মুচকি হাসলো।কিছু মনে আসায় মাথাটা ঘুরিয়ে সেহরিশের দিকে ফিরিয়ে বলল
‘আচ্ছা আব্বু বলেছিলো কিছু শর্তের কথা।কিসের শর্তের কথা বলছিলো?’
‘ কিসের আবার আমার ভালোবাসাকে পাওয়ার জন্য পছন্দের সর্বনাশ করতে।’
উপমা সেহরিশের হাত ছাড়ালো।সেহরিশের দিকে পুরোপুরি ঘুরে বলল
‘মানে রাজনৈতিক ছাড়ার কথা বলেছে?’
‘হুম’
‘তারপর?’
সেহরিশ উপমার কপালে চুমু খেলো।ঠোঁট প্রসারিত করে বলল
‘তারপর কি সরে দাড়ালাম সব কিছু ছেড়ে।আর তুমি এলে আমার হৃদয়ের কোঠায়। ‘
উপমা অবাক হলো।ভাবতে লাগলো তার বাবার কথা, বলেছিলেন তিনি সেহরিশকে না বলার একমাত্র কারণ তার রাজনৈতিক। উপমা ঠোঁট উলটে মন খারাপ করব বলল
‘তো এখন ল্যাপটপ দিয়ে কি করছিলেন।’
‘ আমাদের অফিস জয়েন করেছি।এতে তোমার মীরজাফর বাবাও খুশি আর আমার,,, নাহ মার সো কোলড স্বামীও খুশি হাহাহা,,,,’
উপমা সেহরিশের মলিন হাসির দিকে তাকালো।হাসিটা ভেতর থেকে ছিলো না।উপমার মন বলে উঠলো
‘ইশ ছেলেটা আমার জন্য তার পুরনো জীবন ছেড়ে দিলো।’
‘রাত ১টা বাজে খবর আছে?’
উপমা হুশ ফিরে পেলো।উঠে দাঁড়িয়ে বলল
‘আমি পাশের রুমে গিয়ে শুয়ে পড়ি। ‘
বলে যেতে নিবে তখনি সেহরিশ হাত ধরে টানায় বিছানায় বসে পড়ে।ভ্রু কুচকে তাকাতেই সেহরিশ বলে
‘ বিয়ে হয়েছে আমাদের স্বামীর বুকে ঘুমাবে এখন থেকে।’
উপমার অস্বস্তি লাগলো।বুকের ভেতর অজানা শিহরণ বয়ে গেলো।উপমাকে কিছু বলতে না দেখে সেহরিশ নিজে ঘুমিয়ে উপমাকে শুইয়ে দিয়ে জড়িয়ে ধরে বলল
‘ঘুমিয়ে পড় এখন চুপচাপ।নাহলে আজকের রাতে যা হওয়ার কথা ছিলো তা কন্টিনিউ করতে হবে।’
উপমা হেসে সেহরিশের বুকে হাতের কনুই দিয়ে ধাক্কা দিলো।
___
সকালে উপমা ঘুম থেকে উঠে সামনে তাকাতেই অবাক হলো।সেহরিশ ফরমাল লুক এ৷ অনেক অন্যরকম লাগছে দেখতে।এতোদিন সেহরিশের কথা মনে হলে সেহরিশকে দেখলে রাজনৈতিক নেতা মনে হতো এখন দেখছি বিজনেসম্যান হয়ে গেলো।অবশ্য দুইরকম এটিটিউড দেখতে পাচ্ছে সেহরিশের।
মুচকি হেসে উপমা উঠে বসলো।সেহরিশ গলার টাই গলায় দিয়ে উপমার কাছে এলো।এলোমেলো চুল গুছিয়ে দিয়ে বলল
‘টাই বাধতে পারো?’
সেহরিশের কথায় উপমা মাথা দুই পাশে নাড়ালো।সেহরিশ মোবাইল পকেটে ঢুকিয়ে বলল
‘ইউটিউব দেখে শিখবে। আমি যেহেতু বিজনেসম্যান তাহলে তোমায় হতে হবে,,, উম
কিছু ভেবে ঠোঁট প্রসারিত করে বলল
‘গিন্নি একদম পিউর গিন্নি।’
সেহরিশের কথায় উপমা মুখ বাকালো।সেহরিশ উপমার গাল টেনে দিয়ে বলল
‘আমি খাবার অর্ডার করে দিয়েছি।আমি বাহির থেকে খেয়ে নিবো।তুমি খেয়ে নিও আর আমি বিকেলেই এসে পড়বো বেশিক্ষন অফিসে থাকবো না ওকে।’
‘বেশিক্ষন থাকবেন না কেনো?’
‘বউ ঘরে থাকলে অফিসের কাজ এতো করতে হয় না বুঝলে।’
উপমা ভ্রু কুচকে বলল
‘আহা যেমন আর কারো বউ নেই।’
সেহরিশ উপমার মাথায় গালে ঠোঁটে চুমু দিয়ে ল্যাপটপ হাতে নিয়ে চলে যেতে নিয়ে আবারও রুমে এলো।ভ্রু উচিয়ে বলল
‘একা থাকতে পারবে নাকি তোমাদের বাড়ি যাবে দিয়ে আসবো?’
উপমা উঠে দাঁড়িয়ে চুল বাধতে বাধতে বলল
‘নাহ আপনি যান এইটা আমার বাড়ি খেয়াল তো রাখতে হবে।’
উপমার কথা শুনে সেহরিশ হাসলো।
সেহরিশ চলে যেতেই উপমার পুরো ঘরে বিষন্নতার ছায়া মনে হলো।কি করবে এখন একা একা।খাবারের পার্সেল আসতেই খেয়ে দেয়ে ইউটিউব ঘাটতে লাগলো।এমনিতে কিছুটা রান্নাবান্না করতে পারে কিন্তু রান্না করা হয় নি বলে আরকি সমস্যা।এখন সব কিছু বানিয়ে দেখতে পারবে।
তার আগে ফ্রেশ হয়ে গোসল সেড়ে একটা শাড়ি বেছে পড়লো।গিন্নি গিন্নি লাগতে হবে তো।
নিজ মনে হেসেই উপমা রান্নাঘরের দিকে বাড়লো।
____
বিকেলের আগমন ঘটছে। ৩টা বাজে এখন।উপমা ভাত ডাল আর ডিম ভুনা করলো কোনোমতে। সব কিছু ডাইনিং টেবিলে সাজাতেই কলিং বেল বাজলো।উপমা চুলগুলো হাত খোপা করে দরজা খুলতে তার সব বান্ধবীদের দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলো।সবকটার মুখে ১২ টা বেজে আছে।উপমাকে নিজ থেকে উপর পর্যন্ত পরোখ করছে। উপমা হাসিমুখে তাদের ভিতরে নিয়ে রুমে বসালো।
সকলকে চুপ করে বসে থাকতে দেখ উপমা হেসে বলল
‘কি হলো তোদের মুখের অবস্থা এমন কেনো?’
ইশফা সর্বপ্রথম মুখ খুললো
‘দুই দিনে একেবারে বিয়েশাদি করে গিন্নি হয়ে গেলি দেখছি।’
উপমা হাসলো। অবাক হয়ে বলল
‘তোরা জানলি কোথা থেকে বিয়ের কথা?’
‘তোর আম্মু থেকে উনি না বললে তো তুই মনে হয় বলতি না।’
‘আরেহ নাহ কি যে বলছিস।আমি এখনি বসে তোদের কল দিতাম।আর বিয়েটা যে কিভাবে হলো আমিও কিছু জানতাম না।সব তো উনিই এতোদিন প্লানিং প্লটিং করে এইসব করেছে।আমি সত্যি বলছি কিছুই জানতাম না।’
জুই হতাশার নিশ্বাস ফেললো।মুখ বেজার করে বলল
‘তাহলে কি তোর বিয়ে খাওয়ার স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যাবে।’
উপমাও মন খারাপ করলো।সে নিজেও জানে না তাদের বিয়ের কোনো অনুষ্ঠান করা হবে কিনা।’
_
বিকেল পেড়িয়ে সন্ধ্যায় দরজার করাঘাতে উপমার আধো আধো ঘুম ছুটে গেলো।সেহরিশ ভেবে দৌড়ে দরজা খুলেই হাসি মিলিয়ে গেলো।
চলবে,,,,
(ভুল ত্রুটি গুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন সবাই।