সর্বনাশীনি তুমি পর্ব-১৯

0
312

#সর্বনাশীনি_তুমি
#পর্ব:১৯
#Mishmi_muntaha_moon

সাদাতের ১মাস থাকার কথা ছিলো তার মধ্যে ১৫ দিনই শেষ। সাদাত এতোদিন এ তার বাবার আর সেহরিশের ঝামেলাকে সাইডে রেখে তার বাবাকে তাদের সাথে থাকতে বলেছে।যতোদিন সাদাত আছে বাড়িতে।
যবে থেকে এই কথাটা সেহরিশের কানে গেলো তবে থেকেই তার গাম্ভীর্যতা ভড় করে
খাবার টেবিলে বসে আছে সেহরিশ সাদাত রাবেয়া বেগম আর সেহরিশের বাবা।উপমা সেহরিশের পাশে দাঁড়িয়ে আছে। আজকের খাবার সে নিজেই তৈরি করেছে।সেহরিশের বাবাও যেহেতু আছে আজ উপমার তাই কিছুটা বেশি ভয় করছে।

‘বাবা আমি আর ১০,১২ দিনের মতোই তো আছি।যতদিন আছি আশা করছি তুমি আমাদের সাথেই থাকবে।’

সাদাতের কথা শুনে উপমা সেহরিশের দিকে তাকালো।সেহরিশ চুপচাপ খাবার নাড়াচাড়া করছে।

‘আহা কি বলছো সাদাত এই কথা আবার বলতে হয় নাকি।আমার ছেলের কথা বলার আগেই আমি বুঝে যাই।আমি তাই সব গোছগাছ করে নিয়ে এসেছি।’

আনন্দিত হয়ে সাদাতের দিকে তাকিয়ে কথাগুলো বলে সেহরিশের দিকে তাকিয়ে হাসলো।সাদাত হাসি মুখে খাবার খেতে লাগলো।উপমাও রোকেয়া বেগমের জোড়াজুড়িতে খেতে বসলো।কিন্তু কিছু মুখে তুলতে পারলো না।সেহরিশের বাবা খাবার মুখে তুলে চোখ মুখ কুচকে বলল

‘ কে বানিয়েছে খাবার। রহিমা তো আরও ভালো রান্না করতো তাই না।কি বিচ্ছিরি হয়েছে।লবন কেউ এতো বেশি দেয় তারউপর এতো ঝাল কেনো?’

উপমার গলা শুকালো।মাথা নিচু করে বসে রইলো।পাশ থেকে জোরে আওয়াজ শুনে ডানে ফিরে তাকালো।সেহরিশ রেগে খিচ লাগিয়ে বসে আছে।নিচে গ্লাস ভেঙে পড়ে আছে। উপমার টেনশন বাড়লো।কিন্তু কিছু বলতে পারলো না।রাবেয়া বেগম সেহরিশের কাধে হাত রেখে শান্ত হতে বলল
সেহরিশের বাবা গম্ভীরমুখে বসে আছে।সেহরিশ উঠে দাড়ালো।মুখে কাঠিন্যতা বজিয়ে রেখে বলল

‘খাবার পছন্দ না হলে কাউকে খেতে বাধ্য করা হয় নি।’

‘আমার মতামত প্রকাশ করছি।তুমি এতো রেগে যাচ্ছো কেনো।তোমার বউ রান্না করেছে তাই নাকি?’

বলে তাচ্ছিল্যের সাথে হাসলো।সেহরিশ আর তার বাবার কথোপকথন শুনে সাদাত তার বাবার উদ্দেশ্যে বলল

‘থাক বাবা এভাবে বলছো কেনো?ভাবি নতুন রান্না করছে।ধীরে ধীরে মাস্টার শেফ হয়ে যাবে দেখে নিও।’

সাদাতের কথায় সেহরিশেএ বাবা তাচ্ছিল্য নিয়ে ‘হুহ’ আওয়াজ করলো।

উপমা নিশ্চুপ ভয় নিয়ে সেহরিশের দিকে তাকালো।রেগে আছে অনেক নিজেকে শান্ত করতে চাইছে যথাসাধ্য ।হাত মুষ্টিবদ্ধ করে কিছুনা বলে উপমার হাত টেনে ধরে উঠিয়ে রুমে চলে গেলো। সাদাত রোকেয়া বেগম ঠায় বসে আছে।রোকেয়া বেগম দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে ভাবলেন সেহরিশ আর তার বাবা একই ছাদের নিচে শান্তিভাবে কখনই কি থাকতে পারবে আদৌ।

__
সেহরিশ রাগান্বিত হয়ে সব কাপড় লাগেজে ঢুকিয়ে নেয়।উপমা কিছু বলার সাহস পাচ্ছে না।ভয় নিয়ে বসে আছে সেহরিশ তার কাজ শেষ করে উপমা সামনে হাটু ভেঙে বসে।উপমা অসহায় চোখে সেহরিশের দিকে তাকায়।সেহরিশ উপমার গালে হাত রেখে বলে

‘বলেছিলাম না উনি উপকারের সময়ই সামনের মানুষকে মনে করেন উনি।কখনো ভালো হবে না উনি আর যেমনই থাকুক আমি উনার সাথে একই ছাদের নিচে থাকতে চাই না।আশা করি তুমি তোমার স্বামীর কথা অমান্য করবে না আর হতেও দিবে না।’

উপমা অসহায় দৃষ্টিজোড়া নিচু করলো।কিছু বলল না।তখনই রুমে সাদাত আসায় সেহরিশ উপমাকে ছেড়ে সোজা হয়ে দাড়ালো।

‘ভাই তুমি রেগে গেছো নিশ্চিত। রেগো না বাবা হয় তো আর উনি তো না বুঝেই,,,, ‘

সাদাতের কথা থামিয়ে সেহরিশ গম্ভীর মুখে বলল

‘তোর ইচ্ছাকে আমি সবসময় সম্মান করেছি রেখেছি আমার টাও তোর সম্মান করা উচিত রাখা উচিত।’

সেহরিশের এই কথার আগে সাদাত আর কিছু বলল না।সেহরিশ লাগেজ নিয়ে বেড়িয়ে গেলো।উপমাও উঠে মোবাইল হাতে নিয়ে যেতে পা বাড়ালো।সাদাতের দিকে তাকাতেই তার করুন মূখ নজরে পড়লো।মাথা নিচু করে ফ্লোরে চোখজোড়া নিবদ্ধ তার।উপমা অসহায় মুখে দেখে চলে যায় সেহরিশের পিছে

সাদাতের জন্য একমাত্র এই মুহূর্তে সবথেকে বেশি খারপ লাগছে উপমার।ছেলেটা কিছু দিনই আছে আর গেঞ্জাম পিছু ছুটলো না।

__
বাড়িতে পৌছে উপমা অন্ধকার বাড়িটা আলোকিত করে লাইট জ্বালিয়ে।কেমন নিস্থব্দ লাগছে সব কিছু।সেহরিয়াহ এসে সোজা রুমে চলে গিয়েছে।উপমা সব কিছু দেখে রুমে যায়।সেহরিশ সোজা হয়ে শুয়ে আছে চোখের উপর এক হাত ভাজ করে রাখা আরেক হাত পেটের উপর।উপমা ধীরগতিতে গিয়ে সেহরিশের কাছে বসে মাথায় হাত রাখলো।সেহরিশ চোখের উপর থেকে হাত সরিয়ে উপনার দিকে তাকালো।
উঠে বসে গভীরভাবে জড়িয়ে ধরলো উপমাকে।উপমা কিছুক্ষন চুপ থেকে নিরবতা ভেঙে হেসে বলল

‘মাথা করছে নিশ্চয় আপনার।কিন্তু দুধ তো নেই বলুন তো চা কি দিয়ে বানাই?’

সেহরিশ উপমাকে ছেড়ে দিয়ে বসলো।উপমার হাসিমাখা মুখে তাকিয়ে ঠোট প্রসারিত করে বলল

‘চা টা প্রয়োজন নেই।তুমি আছো আমি আছি।এইটাই এনাফ।’

‘বুঝলাম কিন্তু খাবারের কোনো বিকল্প নেই।রাত্রের খাবার গিয়ে তৈরি করি দেখি কি আছে।’

সেহরিশ হাসলো।ভ্রু নাচিয়ে বলল

‘ভুল।তুমি থাকলে খাবার না থাকলেও সমস্যা নেই’

বলে উপমা ঘাড়ে ছোট করে কামড় দিলো।সাথে সাথেই উপমা ‘আউচ’ শব্দ করে উঠে দাড়ালো।

‘কুকুরের মতো কামড়াচ্ছেন কেনো?’

বলে দৌড়ে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো।’
__________
সাদাতের ফিরার ৫দিন আগে উপমাদের বাড়ি এলো।হাসি মুখে তার মজামস্তি চালিয়ে গেলো।আগের কোনো কথাবার্তা তুললো না যেনো কিছুই হয় নি।
পুরো বাড়িটা দেখে সেহরিশের অতিরিক্ত প্রশংসা করলো।সাদাতের কথা শুনে উপমার মাত্রারিক্ত হাসি পেলো।পুরোটা সময় জুড়ে হাসতে হাসতে কাটলো।

দুপুরে উপমা তাড়াহুড়ো করে বিরিয়ানি রান্না করলো সাদাতের জন্য।বিরিয়ানি খেয়ে সাদাত উপমার আবারও অত্যাধিক প্রশংসা করলো।উপমার মনে হলো এই সাদাত নামক ছেলেটা সামনের মানুষকে প্রশংসা করে ফুলিয়ে ফেলতে অদ্বিতীয়।
বিকেল দিকেও সেহরিশ না আসায় উপমা সাদাতকে সেহরিশের ফোনে কল দিতে বলে।উপমার কথানুযায়ী সেহরিশের মোবাইলে কল লাগায় সাদাত।
কিন্তু নাহ রিসিভ করছে না কল।কয়েকবার কল করার পরেও রিসিভ করল না।উপমা কিছুটা টেনশনে পড়লো।সাদাতও হয়তো মনে মনে চিন্তিত কিন্তু উপমার সামনে প্রকাশ করলো না।আরও কিছুক্ষন গল্প করে সাদাত উপমার থেকে বিদায় নিলো।যাওয়ার সময় সেহরিশকে সাথে করে বাড়িতে যেতেও বলল।
উপমাও হাসি মুখে সাদাতকে বিদায় দিলো। সন্ধ্যা হচ্ছে সকল কর্মময় পাখি গুলো নীড়ে ফিরছে।উপমার আপাতত আর কোনো কাজ নেই৷ তাই বারান্দায় দাড়িয়ে সেহরিশের অপেক্ষা করছে।প্রিয়জনের জন্য অপেক্ষা করতেও ভালো লাগে।
ভেবে মুচকি হাসলো উপমা।গেটের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকার মাঝেই কল এলো।তবুও কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে থেকে ধীর পায়ে রুমের দিকে এগিয়ে গেলো।কল রিসিভ করে সালাম দিয়ে হাসি মুখে আরও কিছু বলতে নিবে তখনই সেখানেই কথা আটকে যায়।থমকে যায় মস্তিষ্ক।
কল কেটে দিয়ে বাড়িতে থাকার অবস্থায় দৌড়ে বেরিয়ে পড়লো।

__
হাসপাতালে যেতেই আরিয়াকে কান্নারত অবস্থায় তার স্বামী অর্থাৎ জামালের সামনে বসে থাকতে দেখলো পাশেই জাফর সাহেব গম্ভীর মুখে বসে আছে।উপমার মা ও আচলে মুখ ঢেকে কান্না করছে
উপমা জামালকে ভালোভাবে লক্ষ করতেই দেখতে পেলো পায়ে ব্যান্ডেজ করা হাতেও চোট পেয়েছে সাথে মাথাটা কিছু ফেটেছে।আপাতত শুয়ে আছে জামাল।
উপমা ধীরপায়ে আরিয়ার কাছে গিয়ে কাধে হাত রাখতে আরিয়া অশ্রুসিক্ত নয়নে তাকায়।উপমাকে দেখে মুহূর্তেই এক ঝটকায় হাত সরিয়ে দেয়।কিন্তু কিছু বলে না।
উপমার মাথায় কিছুই ঢুকছে কি হয়েছে।

‘জামাল ভাইয়ার এক্সিডেন্ট হলো কি করে এতো গুরুতর ভাবে।কি হয়েছে বাবা?’

উপমার কথার বিপরীতে জাফর সাহেব আর তার মা চুপ করে রইলেন।আরিয়াকে ক্ষেপে যেতে দেখা গেলো।আরিয়া তার স্বামীকে রেখে দাঁড়িয়ে রেগে উপমাকে বলল

‘তোর প্রানপ্রিয় বর আমার বরের এই অবস্থা করেছে। তোর জামাই রাজনীতি থেকে কখনো নিজ থেকে সরেই নি।তোর স্বামীর রাজনীতির জন্য আজ আমার স্বামীর এই অবস্থা।’

আরিয়ার কথায় উপমার ভ্রু কুচকে যায়।রেগে গিয়ে আরিয়ার উদ্দেশ্যে উপমা বলে

‘কি যা তা বলছো সেহরিশ কেনো করবে এইসব। ‘

‘কারণ তার দলের বিরুদ্ধে কথা বলেছিলো তো আমার স্বামী তাই।জিজ্ঞেস কর গিয়ে ওই কেবিনের ছেলেকে সব সত্যি কথা বলে দিবে।’

উপমার মাথায় এখনো যেমন কিছুই ঢুকছে না।এইসব ব্যাপারে সে কিছুই জানে না কোনো খবরই নেই তার কি করেই বা বুঝবে।তবুও নিজেকে সামলে পাশের কেবিনে যেতেই ইউসুফ কে নজরে পড়ে।কিছুটা আহত অবস্থায়।
উপমাকে দেখে চোখ তুলে তাকায়।উপমা কিছুক্ষন থমথমে অবস্থায় থেকে ইউসুফের উদ্দেশ্যে বলে

‘সেহরিশ কোথায় ইউসুফ ভাই?’

‘পুলিশ এসেছিলো সেহরিশ ভাই কে নিয়ে গেছে ভাবি।আমি অনেক আটকানোর চেষ্টা করেছি কিন্তু আমার কোনো কথাই শুনলো না।’

এই কথাটা শুনে উপমার শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা হলো।নিজের রাগ কে সামলাতে না পেরে চেচিয়ে বলল

‘কিসব কথা হচ্ছে সেহরিশ জামাল ভাইকে এক্সিডেন্ট করেছে তাও স্বইচ্ছায়। আপনি কিছু কেনো বলছেন না।আপনি তো উনার সম্পর্কে সব জানেন।উনার সাথেই থাকেন।’

‘জ্বী ভাবি এই কথাটা সত্য সেহরিশ ভাই আমাকে দিয়ে আপনার বোনজামাইকে এক্সিডেন্ট করিয়েছে।যেই গাড়ি দিয়ে এক্সিডেন্ট করা হয়েছে সেই গাড়িতে সেহরিশ ভাই ও ছিলো।জামাল ভাইকে জিজ্ঞেস করতে পারেন।আপনার বিশ্বাস না হলে।’

উপমা থমকালো।কথাগুলো রেশ উপমা ধরতে পারছে না।কি হচ্ছে কি থেকে কি হয়ে গেলো কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না যেনো ঠিক।

চলবে,,,
(ভুল ত্রুটি গুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন সবাই)