#সর্বনাশীনি_তুমি
#পর্ব:২০
#Mishmi_muntaha_moon
আগ্নেয়গিরির ন্যায় হুংকার দিয়ে উপমা ইউসুফকে বলল
‘মিথ্যা বলছেন আপনি।সেহরিশ এমনটা কখনই করতে বলবে না।’
‘আপনি আপনার বোনের স্বামী কে জিজ্ঞেস করর দেখলেই তো সব পরিষ্কার হয়ে যায়।’
উপমা পাত্তা দিলো না ইউসুফের কথায়।তার এই মুহূর্তে ইউসুফ কে একদম ভালো লাগছে না।আগে যেমন একটা বিশ্বাস কাজ করতো সেহরিশের ভাইয়ের নজরেই দেখতো কিন্তু এখন যেনো ভিন্ন মনে হচ্ছে।
উপমা কাপা কাপা পায়ে পাশের কেবিনে গেলো।জামাল ইতোমধ্যে জেগে গেছে।আধো আধো চোখে তাকিয়ে আছে।উপমা আরিয়ার পাশে গিয়ে বসলো।অশ্রুসিক্ত নজরে তাকিয়ে বলল
‘আপু তুমি বিশ্বাস করো সেহরিশ এমনটা কখনো করবে না।করবে কি চাইবেও না উনি এই কথা কখনো কল্পনায়ও ভাববে না।`
আরিয়া রাগান্বিত চোখে উপমার দিকে তাকালো।গলার তেজ বাড়িয়ে বলল
‘স্বামীর কাছে যেতে হলে যা আমার সামনে এইসব কথা একদমই বলবি না।আর আপনি বলছেন না কেনো? বলেন ওকে সত্যিটা।আমরা কি এমনি এমনি ওকে মিথ্যা বলছি বলেন।’
জামালের দিকে তাকিয়ে শেষের কথাগুলো বলল আরিয়া।জামাল কিছুক্ষন চুপ থেকে ধীর কন্ঠে বলল
‘এক্সিডেন্ট করা গাড়িতে সেহরিশও ছিলো।আর ইউসুফের পাশের সিট এই বসা ছিলো তার বেশি কিছু আর বলতে পারছি না।’
উপমা অবাক হলো। জাফর সাহেবের দিকেন্তাকিয়ে বলল
‘এতটুকু বিষয়ের উপর ভিত্তি করে তোমরা সেহরিশকে আসামি কিভাবে বলতে পারো।আমি তো,,, ‘
‘আমরা ততোটাও বোকা না যে এতোটুকু শুনেই সেহরিশকে আসামির কাঠগড়ায় উঠাবো।সেহরিশ নিজে স্বীকার করেছে আমাদের কাছে।’
উপমার মাথায় যেনো আকাশ ভেঙে পড়লো।নিজে স্বীকার করেছে মানে কি!আর কেনোই বা এমনটা বলেছে।সেহরিশ নিজে বলেছে তবুও উপমার বিশ্বাস হছে না এইসব কথা।
__
উপমা কারো কথা শুনলো না। সোজা গাড়িতে চরে থানায় গেলো।একেকজন কে জিজ্ঞাসাবাদ করে করে ভেতরে যেতেই সেহরিশকে দেখতে পেলো একটা পুলিশ কর্মকর্তার সামনে বসা পাশেই তার বাবা সাদাত ও আছে।সেহরিশ পায়ের উপর পা তুলে হেলান দিয়ে বসে টেবিলে তাকিয়ে কিছু করছে।
সেহরিশের বাবাকে দেখে উপমা আড়ালে থাকলো।কাগজ কলমের কিছু কাজ করে পুলিশ চলে গেলো।নিরব কামড়াতে সেহরিশ সহ তার বাবা ভাই।কোনো শব্দ করছে না কেউ।তার মাঝেই সেহরিশের বাবা গম্ভীর কন্ঠে বলল
‘এই মেয়েটা তোমার জীবনে সর্বনাশ কবে যে বুঝবে।’
কথাটা শুনে ভ্রু কুচকালো উপমা।তার নামে এমন কথা শুনে মাথা নিচু হলো।সেহরিশকে কিছু বলতে না দেখে আরেকটু যেনো বেশিই খারাপ লাগলো।উপমা চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই সেহরিশের কন্ঠে শুনতে পেলো
‘ঠিক বলেছেন উপমা আমার সর্বনাশের কারণ আর এইটা আমি জানি আর মানিও।’
উপমার এই কথাটা শুনে আরও বেশি অবাক হলো।সেহরিশের বাবা বলছে মানা যায় কিন্তু সেহরিশ তার ব্যাপারে এমন বলছে কেনো?সেহরিশের বাবা আর ভাইও সেহরিশের কথা শুনে ভ্রু কুচকালো।সেহরিশের বাবা উনার কাঠিন্য দৃষ্টিতে বাহিরে তাকাতেই উপমা লুকিয়ে চলে যায়।সেহরিশের বাবা কাউকে না দেখে আবারও সেহরিশের দিকে তাকায়।ঠোঁট বাকিয়ে বলে
‘তবে কেনো বিয়ে করেছো?আর করে যেহেতু ফেলেইছো তাহলে ছেড়ে দিচ্ছো না কেনো?’
সেহরিশ গম্ভীর চোখে তার বাবার দিকে তাকিয়ে বলল
‘উপমার চোখে নিজের সর্বনাশ দেখেছি তাই তো বিয়ে করেছি।শুনেন নি নাকি প্রহর শেষের আলোয় রাঙা আজ চৈত্রমাস তার চোখে দেখেছিলাম আমার সর্বনাশ। ”
সেহরিশ বাবা রাগলো।এই উদ্দেশ্য করে বলেছে বুঝতে পারে নি এতোক্ষন।দাতে দাত চেপে বলল
‘তুমি যে তার বোনের জামাইকে আহত অথবা নিহত করতে চাও নি এইটা কি সে মানবে তার পরিবারের মুখে শুনেও।তোমাকে বিশ্বাস করবে যেখানে তুমি নিজেই কনফেস করেছো।কখনোই না।’
‘এই বিষয়ে আপনাকে মাথা ঘামাতে হবে না। ‘
বলে উঠে দরজার দিকে পা বাড়ালো।পিছন থেকে তার বাবা চেচিয়ে বলল
‘তোমাকে আমি তোমার বাবা ছাড়িয়েছি থানা থেকে ভুলে যেও না।’
সেহরিশের কোনো ভাবাবেগ দেখা গেলো না।সোজা চলে গেলো তার পথে।
__
উপমাকে হসপিটালে ফেরত আসতে দেখে তার মা উপমাকে ধীর কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো
‘সেহরিশের সাথে দেখা হয়েছে?’
উপমা কিছুক্ষণ তার মার দিকে নিশ্চুপ তাকিয়ে থেকে মাথা দুই পাশে নেড়ে বসে থাকে।বাড়িতে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি চলছে।জামালের বাবা মা অর্থাৎ আরিয়ার শ্বশুর শ্বাশুড়ি এসেছিলো সে কি কান্না আর ঘটনা জানতে পেরে তো একমুহূর্তের জন্যও জামালকে এখানে রাখতে দিবে না।সোজা তাদের বাড়িতে নিয়ে যাবে।আরিয়াও কিছু বলছে না।তাদের সাথে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে নেয়।জাফর সাহেব তাদের অনেক বুঝানোর পরেও তারা কারও কোনো কথা শুনে নি আরিয়া কেও নিতে চাইছিলো না জামালের কথায় আরিয়াকে আর কিছু বলে নি।উপমার দিকে অগ্নিদৃষ্টি ফেলে চলে যায়।গভীর রাত হয়ে গেছে জাফর সাহেব উপমাকে তাদের বাড়িতে সাথে করে নিয়ে যেতে চাইলো উপমা সোজাসাপটা না করে দিয়ে নিজের বাড়ির উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পড়ে।
তার মাথায় অনেক প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে সাথে সেহরিশকেও দেখেতে চায় তার মুখ দিয়ে সব শুনতে চায়।তাই সোজাসুজি বাড়িতেই গেলো।
__
থমথমে পরিবেশ।কুকুরে ডাকার শব্দ শোনা যাচ্ছে।উপমা বাড়িতে পৌছে ব্যাগ থেকে চাবি বের করে খুলতে নেবে তখনই দেখে দরজা খোলা।
ধীরে খুলে ভিতরে ঢুকে।অন্ধকার পুরো বাড়ি।তাদের রুম থেকে শুধু সেহরিশের গম্ভীর ধমকে কথা বলার আওয়াজ শোনা যাচ্ছে।উপমা ধীর পায়ে রুমের ভিতরে গিয়ে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে রইলো সেহরিশ বারান্দায় দাঁড়িয়ে কথা বলছিলো।অনেক কথা বলে রুমে ঢুকতে ঢুকতে বলল
‘আমি কিছুদিনের জন্য ইউসুফ কে আমার জায়গায় দায়িত্ব দিয়েছিলাম।এখন আমি ফিরছি কাল মিটিং এর ব্যবস্থা করো কথা আছে সকলের সাথে।’
বলে রুমে ঢুকে ফোন বিছানায় ছুড়ে মারলো।চুল টেনে ধরে ছেড়ে দরজার দিকে তাকালো।উপমা সেহরিশের দিকে পা বাড়ালো কঠিন গলায় বলল
‘আপনি আবার রাজনীতি তে ফেরার কথা বলছিলেন।কেনো?’
সেহরিশ কিছুক্ষন চুপ থেকে জানালা দিয়ে অন্ধকারাচ্ছন্ন পরিবেশে তাকিয়ে বলল
‘তোমার জানার বিষয় না।’
সেহরিশের কথা শুনে উপমার রাগ লাগলো।তবুও যথাসম্ভব রাগ চেপে শান্ত কন্ঠে আবারও বলল
‘আর আমি হসলিটালে গিয়ে যা শুনলাম তার ব্যাপারে কিছু বলুন।আপনি কেনো স্বীকার করেছেন আর ইউসুফের কথার মানে কি?’
সেহরিশ ঢোক গিলে গম্ভীরতা বজায় রেখে বলল
‘তুমি বলো কি মনে হয়।’
উপমার বিরক্ত লাগলো সাথে রাগও।যেখানে সেহরিশ তাকে বলবে কি হয়েছে কেনো সেখানে উলটো তাকে জিজ্ঞেস করছে তাও এমনভাবে যেমন কোনো বড় ব্যাপার না এইটা।উপমা রেগে বলল
‘আমি কি বলবো।ইউসুফ ভাই বলেছে এইটা বিষয় না আপনি নিজে স্বীকার করে এখন আমাকে বলতে বলছে৷ তার উপর জামাল ভাইয়াও গাড়িতে আপনাকে দেখেছে আর আপনি আমাকে বলতে বলছেন।আমি কি বলবো এইসব শুনেও।’
রাগের চোটে যা মুখে এসেছে তাই বলে দেয় উপমা।সেহরিশ বাহির থেকে দৃষ্টি সরিয়ে উপমার দিকে তাকায়।তার দৃষ্টিতে কি ছিলো জানা নেই উপমার।সেহরিশ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল
‘ তো আমাকে কি বলতে বলছো আর তুমি কি শুনতে চাইছো।সব তো মেনেই নিয়েছো বুঝেই গিয়েছো আর বলেও ফেলেছো তাই নয় কি!’
উপমা রাগে কান্না পেলো তার সাথে অবাক হয়ে সেহরিশের দিকে তাকিয়ে রইলো।সেহরিশের বিহেভিয়ার অপরিচিত লাগছে।উপমা সেহরিশের বুকে দুই হাত দিয়ে কিছুটা জোরে ধাক্কা দিয়ে বলল
‘আপনি কি বলছেন হ্যা।আর আপনি আমায় এই রাজনীতি ছাড়ার শর্তে বিয়ে করে এখন কেনো শর্তের খিলাফ করছেন।কতো ভালো তো চলছিলো কেনো এভাবে বলছেন।সব পরিষ্কার করুন না।’
বলে চোখের পানি ফেললো।সেহরিশ একদৃষ্টিতে উপমার দিকে তাকিয়ে রইলো।উপমা অশ্রুবিন্দু ফেলে সেহরিশের দিকে তাকাতেই সেহরিশ মুখ ফেরিয়ে নেয়।দ্রুত পায়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।সেহরিশকে এভাবে যেতে দেখে উপমার মাথায় অভিমান ভর করলো নাকি রাগ জানা নেই।উপমা ঠোঁট কামড়ে ভ্রু কুচকে পুরো বাড়িতে হন্নের মতো সেহরিশকে খুজলো। না পেয়ে হলের কাচের ফুলদানি ছুড়ে ফেলে সোফায় বসে মাথা চেপে ধরে নিরবে চোখের অস্রুপাত করলো।
চলবে,,,