সাজিয়েছি এক ফালি সুখ পর্ব-১০

0
157

#সাজিয়েছি_এক_ফালি_সুখ
#লেখনীতে – #kazi_Meherin_Nesa
#পর্ব – ১০

অতীতের কিছু তিক্ত সত্য আনোয়ার সাহেব তার মেয়ের সঙ্গে কখনো আলাপ করতে চাননি কিন্তু আজ মেয়ের সুবাদেই আবরারকে বললেন কারণ উনি চান জারা যেনো তার মা বাবা সম্পর্কিত অতীত ধরে বসে থেকে নিজের জীবনে তার কোনো প্রভাব না ফেলে…

‘ আবরার, আমার মেয়েটা কখনো প্রকাশ করেনি তবে ছোটো থেকেই অনেক মানসিক চাপে বড় হয়েছে। তার জন্যে আমারও দায় আছে, আমি জানি। কিন্তু এখন যেহেতু ও নতুন একটা জীবন শুরু করেছে তোমার সঙ্গে, আমি চাই ও ভালো থাকুক আর ওকে ভালো রাখার দায়িত্ব তোমার ‘

‘ আপনি চিন্তা করবেন না, আমি আপনার মেয়ের হাত কখনো ছাড়বো না। আই উইল মেইক হার হ্যাপি ‘

‘ হুমম, সেই ভরসা করেই ওকে তোমার হাতে তুলে দিয়েছি। যাই হোক, অনেক রাত হলো। চলো আমরা ভেতরে যাই, জারাও হয়তো তোমার অপেক্ষা করছে ‘

‘ জ্বি আঙ্কেল!’

‘ আবরার, এই একবার আব্বু আবার আঙ্কেল এগুলো বলা কিন্তু এবার থেকে থামাতে হবে। সবসময় আমায় আব্বু বলার অভ্যাস করো ‘

‘ ওহ সরি! আসলে নিজের আব্বুকে ছাড়া আর কাউকে আব্বু ডাকা হয় না তো, অভ্যাসটা হতে একটু দেরি হবে মনে হচ্ছে ‘

‘ সমস্যা নেই, যাও! শুভ রাত্রি ‘

শ্বশুরের সঙ্গে কথা শেষে রুমে এলো আবরার, জারা ততক্ষণে শুয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। আস্তে করে দরজা লাগিয়ে বিছানার কাছে গেলো। হাঁটু মুড়ে বসে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন রমনীর পানে চাইলো আবরার। যেনো রাজ্যের ক্লান্তি এসে ঝেঁকে ধরেছিলো তাকে, তাই শুয়ে পড়তেই ঘুমিয়ে গেছে। মুচকি হেসে প্রিয়তমার ললাটে চু’মু একে দিলো আবরার, এ মুহূর্তে ওর ইচ্ছে হচ্ছে এখানে এভাবে বসে প্রিয় মানুষটিকে দেখতে দেখতেই রাত পার করে দিতে। এমন কিছু করাটা কি পা’গ’লা’মী হবে? ভাবতে ভাবতেই উঠে দাঁড়ালো আবরার, নাহ! ঘুমানোও দরকার। মোবাইলটা বেডের পাশের ছোটো টেবিলটার ওপর রাখলো আবরার। কি একটা ভেবে যেনো টেবিলের ছোটো ড্রয়ারটা খুলেছিলো, আর সেখানেই একটা কাগজ ওর নজরে পড়লো। আবরার কাগজটা পড়ে দেখলো এটা ওদের বৈবাহিক সম্পর্কের ছয় মাসের চুক্তি সম্পর্কিত একটি আইনি কাগজ। শেষে স্পষ্ট লিখা আছে যে ছয়মাস পর ওদের সম্পর্ক এই চুক্তি অনুযায়ী শেষ হয়ে যাবে। পুরোটা পড়ার পর আবরার কিছুটা সময় নিরবে থ মে’রে ছিলো, এরপর জারার দিকে তাকালো। মা বাবার ডিভোর্স সম্পর্কিত বিষয়টা নিয়ে মেয়েটার মনে কতোটা নেগেটিভিটি বাসা বেঁধে বসেছে যার জন্যে এমন সিদ্ধান্ত নিতেও ও ভাবেনি। দীর্ঘশ্বাস ফেললো আবরার, ভাবলো শীঘ্রই হয়তো জারা এই কাগজে সই করতে বলবে। এরকম একটা কাগজে সই করতে হবে বলে আবরার চিন্তিত নয় বরং জারাকে নিয়ে বেশি চিন্তিত। পরদিন সকালের নাস্তা শেষে জারা আবরারকে বললো…

‘ আমরা কি আজ বাড়ি ফিরবো?’

‘ তুমি কি আরো কয়েকদিন থাকতে চাইছো?’

‘ নাহ, এখানে আর থেকে কি করবো? নিয়ম অনুযায়ী এসে থাকা দরকার ছিলো তাই দুইদিন থাকলাম ‘

‘ তাহলে আমরা দুপুরে ফিরে যাবো। আজ সন্ধ্যায় আমার একটা ক্লায়েন্টের সাথে মিটিং আছে, দুপুরে কাজ নেই তো আমরা একসঙ্গে বাড়ি ফিরবো ‘

‘ ঠিক আছে। আবরার, আমার তোমার সঙ্গে একটা দরকারি কথা আছে। আমাকে কি একটু সময় দিতে পারবে?’

জারা কোন বিষয়ে কথা বলতে চায় সে সম্পর্কে অবগত আবরার, তবুও স্বাভাবিকভাবেই ও বললো…

‘ আমার সবটা সময় তোমারই জারা, আলাদা করে চাইতে হবেনা। যখনই কিছু বলার প্রয়োজন মনে করবে নির্দ্বিধায় চলে আসবে, আমি সবসময় তোমার কথা শোনার জন্যে হাজির আছি ‘

‘ বেশ, তাহলে বাড়ি ফেরার পর বলবো ‘

জারা যে ওই কাগজে সই করার কথাই বলবে তার জন্যে আবরার নিজেকে মানসিকভাবে প্রস্তুত করে নিয়েছে।
__________________________________

দুপুরে বাড়ি ফেরে দুজনে, এসেই শাশুড়ির সঙ্গে দেখা করে নেয় জারা। এরপর রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে আবরারের স্টাডি রুমে এলো…

‘ তুমি এখনই এখানে কেনো?’

‘ একটু কাজ ছিলো, তুমি রেস্ট করতে পারতে ‘

‘ আমি মোটেই টায়ার্ড হইনি!’

‘ ওকে! তাহলে আমরা কি কিছু কাজের কথা বলতে পারি?’

‘ হ্যা অবশ্যই ‘

‘জারা, আমাদের শোয়ের কথা মনে আছে? এই সপ্তাহেই সেটা অ্যারেঞ্জ করতে চাইছি। তোমার ড্রেস ডিজাইন তৈরি হয়েছে?’

‘ সমস্যা নেই! আমার ড্রেস রেডি করা হয়েছে, আমার দিক থেকে প্রস্তুতি সম্পন্ন ‘

‘ গুড, তাহলে এ সপ্তাহে আশা করছি সবকিছু ভালোভবেই মিটবে। আমার জুয়েলারি লঞ্চের অনুষ্ঠান অনেকটা দিন পিছিয়ে গেলো, আর পেছাতে চাইছি না ‘

‘ আচ্ছা, এক মাস পিছিয়ে দেওয়ার কারণ কি ছিলো? তোমার সব প্রস্তুতি তো আগেই নেওয়া হয়ে গেছিলো ‘

‘ হ্যা তবে, কিছু বিষয় নিয়ে আমি সন্দেহে ছিলাম সেগুলো চেক করতে হয়েছে। তাছাড়া ছোটখাটো কিছু প্রিপারেশন বাকি ছিলো তাই ভাবলাম তাড়াহুড়ো না করাই ভালো। দেরিতে হলেও আশা রাখছি সব ভালোভাবেই মিটবে। নেকপিসটা নিয়ে পজিটিভ রেসপন্স পাবো পাবলিকদের থেকে’

কৌতূহলবশত জারা বলে বসলো…

‘ আমাকে কি দেখানো যাবে নেকপিসটা?’

‘ এখন?’

‘ আমি জানি ওটা নিশ্চয়ই তোমার অফিসে বা শোরুমে কোনো গোপন জায়গায় আছে, কিন্তু ওটার ছবি নিশ্চয়ই আছে তাইনা? সেটাই দেখাও ‘

‘ তুমি আবার জুয়েলারির প্রতি ইন্টারেস্টেড হলে কবে থেকে?’

জারা হাতের আংটিটা দেখিয়ে বললো..

‘ তোমার এই আংটির ডিজাইন আমার বেশ পছন্দ হয়েছে, এছাড়া তোমার অন্যান্য জুয়েলারি ডিজাইনও দেখেছি। ইউনিক লেগেছে অনেকটা ‘

‘ ওহ ওয়াও! তাহলে কি তোমার জন্যে স্পেশাল একটা নেকপিস ডিজাইন করবো?’

‘ আরে না না, আমি সেটা বলিনি। আমি শুধু নেকপিসটা দেখতে চাইছি যেটা তোমাদের মডেল আমার ড্রেসের সঙ্গে পড়বে ‘

‘ ওকে, কাম হেয়ার ‘

আবরারের কাছে এলো জারা, আবরার চেয়ারে বসে আছে। ড্রয়ার থেকে নেকপিসের একটা প্রিন্ট ফটো বের করে দেখালো, জারা তা দেখার জন্যে কিছুটা ঝুঁকলো…

‘ বাহ! এটা খুব সুন্দর হয়েছে তো। আমি সিওর, এটা সবার অনেক পছন্দ হবে ‘

এক পর্যায়ে চোখ ঘোরাতেই জারা লক্ষ্য করলো আবরারের অনেকটা কাছে চলে এসেছে ও, আবরারও ওর দিকে তাকিয়ে আছে। জারা চোখ বড় বড় করে তাকাতেই আবরার হেসে প্রশ্ন করলো…

‘ সত্যিই সুন্দর হয়েছে?’

সঙ্গে সঙ্গে ছিটকে সরে এলো জারা, স্বেচ্ছায় কখনো আবরারের কাছে আসেনি সে। আরচোখে আবরারকে একনজর দেখলো জারা, পুরুষটি ভ্রু কুঁচকে চেয়ে আছে। হুট করেই জারা যেনো কিছুটা অদ্ভুত আচরণ করলো?

‘ কি হলো?’

‘ নেকপিসটা, অনেক সুন্দর হয়েছে ‘

‘ সে তো বুঝলাম কিন্তু তুমি ওভাবে সরে গেলে কেনো?’

আবরারের প্রশ্নের উত্তর দিতে পারলো না জারা, কি একটা ভেবে আমতা আমতা করে বলে উঠলো…

‘ ক..কফি! কফি খাবে? আ..আমি বানিয়ে আনছি ‘

‘ লাগবে না!’

আবরারের কথা যেনো জারার কানেই পৌঁছায়নি, মেয়েটা ততক্ষণে দ্রুত পায়ে বেরিয়ে গেছে। জারার এহেন আচরণের কারণ বুঝলো না আবরার…

‘ কি হলো এটা? এমনভাবে সরে গেলো যেনো কারেন্ট শক করেছে? এই মেয়েটাকে বোঝা সত্যিই দুষ্কর!’

জারা রান্নাঘরে গিয়েই চুলায় দুধ জ্বাল করতে বসিয়েছে, আর একটু আগের ঘটনার কথা ভাবছে। আবরারের নিকটে যেতেই জারার বুকের ভেতর কেমন যেনো করে উঠেছিলো, তাইতো হুট করে ওভাবে সরে গেলো। জারা নিজেও ভেবে পাচ্ছেনা এমন কেনো হলো? নাকি প্রথমবার কোনো পুরুষসঙ্গে আসায় এমন অনুভূতি হচ্ছে? হুট করেই অদ্ভুত এক ভাবনার বেড়াজালে যেনো আটকে গেলো জারা, ওর শাশুড়ি সেই মুহূর্তে রান্নাঘরে এসে দেখে চুলায় দেওয়া দুধ উতলে পড়ছে। উনি দ্রুত চুলা কমিয়ে দিয়ে বললেন…

‘ কি করছো, দুধ তো এখনই পড়ে যেতো ‘

ধ্যান ভাঙলো জারার…

‘ ওহ সরি, আমি একদম খেয়াল করিনি ‘

‘ কোনো কাজ করার সময় অন্যমনস্ক থাকলে এরকম হয়ই, কিছু হয়েছে নাকি? আবরার কিছু বলেছে?’

‘ না, সব ঠিক আছে ‘

‘ জারা, দেখো তুমি এ বাড়িতে নতুন বলে আর আমি তোমার শাশুড়ি বলে ছোটখাটো বিষয় গোপন করতে হবে তার মানে নেই। তোমার যদি কখনো মনে হয় কিছু কথা শেয়ার করা উচিত কিন্তু কাউকে বলতে পারছ না, তাহলে অবশ্যই আমাকে বলবে কেমন? তুমি আমার কাছে আমার আয়েশার থেকে কোনো অংশে কম নও ‘

শাশুড়ির কথা শুনে যেনো কিছুটা স্বস্তি পেলো জারা, এতোদিন ওর সৎ মা ও কখনো এভাবে কোনো কথা বলেননি। জারা হাসিমুখে উত্তর দিলো…

‘ জ্বি, অবশ্যই বলবো। আচ্ছা, আপনি কফি খাবেন? আপনাকেও দেই?’

‘ না না, আমি এই কফি টফি খাই না। কফির ওই তেতো একটা স্বাদ আমার ভালো লাগেনা। আমি চা বানিয়ে নেবো, তুমি আবরারের জন্যে কফি নিয়ে যাচ্ছো তো? যাও ‘

শাশুড়ির কথায় সম্মতি জানিয়ে জারা দু কাপ কফি বানিয়ে নিজের রুমে এলো। দুই কাপ কফি দু হাতে ধরে জারা এ মুহূর্তে রুমের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে, ভেতরে ঢুকবে কিনা তাই ভাবছে! কয়দিন ধরে আবরারের সঙ্গে থাকতে শুরু করেছে জারা, কিন্তু আজকে কি যে হলো হঠাৎ ভেবেই পাচ্ছে না। এসব ভাবতে ভাবতেই হঠাৎ আবরার দরজা খুলে দেখলো জারা দাড়িয়ে আছে….

‘ এখানে দাঁড়িয়ে আছো কেনো?’

‘ হ্যা? না ক..কিছুনা! এইযে, কফি বানিয়ে আনলাম ‘

‘ কিন্তু আমি তোমাকে মানা করেছিলাম তো ‘

‘ হ্যা, কিন্তু আমার বানানোর ইচ্ছে হয়েছে। খেয়ে বলো কেমন হয়েছে?’

‘ তোমার বানানো প্রথম কফি খাচ্ছি, ভালোই হবে আশা করছি, থ্যাংক ইউ!’

স্মিত হেসে ভেতরে এলো জারা, আবরারও বিছানায় বসলো। দুজনেই কফি খাওয়ায় ব্যস্ত, যদিও জারা কফি খাওয়ার ফাঁকে আবরারকেও দেখছে। পুরুষটিকে এতদিন সেভাবে পর্যবেক্ষণ করেনি জারা, অবশ্য তার প্রয়োজনও মনে করেনি কিন্তু এখন ইচ্ছে হয় তাকে একটু গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করার। এ মুহূর্তে ধূসর রঙের একটি শার্ট ও কালো প্যান্ট পড়ে আছে আবরার, একটু পর কাজে বেরোবে বলে তৈরি হয়েই বসেছে। শ্যামবর্ণের পুরুষটির চোখে থাকা নেভি ব্লু রংয়ের চিকন ফ্রেমের চশমাটা যেনো সৌন্দর্য্য আরেকটু বাড়িয়ে দিয়েছে। পর্যবেক্ষণ শেষে আবরারের দিক থেকে চোখ সরিয়ে নিলো। কফি খাওয়া শেষে আবরার উঠে দাঁড়ালো…

‘ কফি সত্যিই অনেক ভালো হয়েছে। এরপর থেকে রোজ আমাকে এরকম এক কাপ কফি বানিয়ে দেবে ‘

‘ অবশ্যই!’

‘ আমি তাহলে বেরোচ্ছি!’

‘ ওকে! আমিও একটু পর বেরোবো, রাতে দেখা হবে তাহলে ‘

আবরার বেরিয়ে যাওয়ার সময় জারা পেছন থেকে বলে উঠলো…

‘ রাতে একটু আগে আসার চেষ্টা করো, আমার জরুরি কিছু কথা আছে তোমার সঙ্গে ‘

ঘুরে তাকালো আবরার, কি একটা ভেবে হ্যাঁ সূচক মাথা নেড়ে বেরিয়ে গেলো নিজ কাজের উদ্দেশ্যে। জারাও আর দেরি না করে তৈরি হয়ে চলে গেলো নিজের ফ্যাশন হাউজে। এই বিকেলবেলা ওকে দেখেই সেক্রেটারি নিশা প্রশ্ন করলো…

‘ ম্যাডাম, আপনি এখানে?’

‘ আমার কাজের জায়গা এটা ভুলে গেলে? এতো অবাক হওয়ার কি আছে?’

‘ না, আসলে আপনি আপনার বাড়ি গেছিলেন বললেন আবার এখানেও এলেন তাই জানার কৌতুহল জাগলো আর কি ‘

‘ আবরার ঠিক করেছে ওদের শো এই সপ্তাহেই করবে, তাই আমি আমার ড্রেসগুলোর ফাইনাল চেক করতে এসেছি। কোনো কমতি থাকলে সেটা এখনই ঠিক করার সময়। আমি চাইনা পরে গিয়ে কোনো গন্ডগোল হোক ‘

‘ ওহ আচ্ছা, চলুন তাহলে ‘

সেক্রেটারিকে নিয়ে জারা নিজের তৈরি করা নতুন ড্রেসগুলো আরেকবার চেক করতে গেলো ওদিকে আবরার অফিসে পৌঁছে

‘ স্যার, কিছু মনে না করলে একটা প্রশ্ন করতে পারি?’

‘ বলুন ‘

‘ আপনি নিজের পছন্দের মানুষকে তো বিয়ে করেই নিলেন, আপনারা এখন নবদম্পতি! এখন বিবাহিত জীবন কেমন কাটছে?’

একটি ফাইল ঘাটছিলো আবরার, সেক্রেটারির প্রশ্ন শুনে আবরার ফাইলের দিকে তাকিয়েই উত্তর দিলো…

‘ ইমরান, আপনাকে ভবিষ্যতের জন্যে একটা সাজেশন দেবো?’

‘ হ্যা স্যার, নিশ্চয়ই!’

‘ জীবনে আর যাই করুন, বিয়ে করবেন না! বিয়ের পরের জীবন বেশ অদ্ভুত, আমাকেই দেখুন। আমি ভাবতাম জারা সম্পর্কে আমি অনেককিছুই জানি, কিন্তু বিয়ের পর বুঝতে পারছি ওর সম্পর্কে আসলে আমি কিছুই জানিনা। আর কখন ওর মনে কি চলে মুখ দেখে আন্দাজও করা যায়না, নারী জাতির মন বোঝা সত্যিই দায় ‘

আবরারের এমন কথা শুনে বেচারা ব্যাচেলর ইমরান থতমত খেয়ে গেলো!

‘ স্যার, এভাবে বলবেন না! কোথায় আপনি আমাকে মোটিভেট করবেন, সেটা না করে ডিমোটিভট কেনো করছেন?’

‘ ডিমোটিভট করছি না, নিজের অবস্থাটা আপনার সামনে তুলে ধরছি। যাই হোক, আপনাকে যে কাজটা করতে বলেছিলাম করেছেন?’

‘ জ্বি স্যার, আমি ওই কাজেই লেগে আছি ‘

‘ তাকে পেয়েছেন?’

‘ এখনও সঠিক খোঁজ পাইনি তবে শীঘ্রই পেয়ে যাবো ‘

সেক্রেটারিকে একজনের খোঁজ বের করতে বলেছে আবরার, কিন্তু এখনও খোজ পাওয়া যায়নি শুনে আবরার কিছুটা বিরক্ত হলো। মুহূর্তের মাঝেই ওর স্বাভাবিক চেহারায় কঠোরতার ছাপ ফুটে উঠলো…

‘ কোথায় গা ঢাকা দিয়ে আছে সেটা দ্রুত বের করুন, তার সঙ্গে আমার অনেক হিসাব কিতাব বাকি আছে ‘
_________________________________

রাত আটটা বেজে গেছে, আজকে সন্ধ্যায় কচি কাস্টমার এসেছিলো। তাদের সামাল দিতে গিয়ে অনেকটা সময় পেরিয়ে গেছে। খুদা পেয়ে গেছে জারার, ওর সেক্রেটারি খাবার কিনে এনেছে। রেস্টরুমে বসে তারা দুজনেই খাচ্ছিলো। খাওয়ার এক ফাঁকে সেক্রেটারি নিশা একগাল হেসে বললো…

‘ ম্যাডাম, একদিন স্যারকে নিয়ে আসুন না এখানে। আমার তার সঙ্গে ঐভাবে আলাপই তো হলোনা ‘

‘ তার সঙ্গে আলাপ করে কি হবে?’

‘ ওমা, আমার বসের হাসবেন্ড বলে কথা তাছাড়া উনি তো আমাদের ইনভেস্টরও বটে। দুটো সম্পর্কের খাতিরে ওনার সঙ্গে আমি কি একটু আলাপ করতে পারিনা?’

‘ না!’

‘ ম্যাডাম, আমি আপনার সামনেই তার সঙ্গে কথা বলবো। আলাদা করে তো আর কথা বলতে চাইছি না যে আপনি জেলাস হচ্ছেন!’

‘ জেলাস ‘ শব্দটা শুনেই হকচকিয়ে উঠলো জারা..

‘ ভুল বুঝছেন আপনি নিশা, আই অ্যাম নট জেলাস! আবরার অনেক ব্যস্ত মানুষ, আমার মনে হয় না ও এখানে এসে সময় দিতে পারবে’

‘ ওহ! তাহলে তো সমস্যা। বেশ আমি তাহলে উপযুক্ত সময়ের জন্যে অপেক্ষা করবো। আচ্ছা ম্যাডাম আপনার স্যারের কোন দিকটা ভালো লাগে?’

খেতে খেতে একটু থামলো জারা, কি একটা ভেবে আবার খাওয়া শুরু করলো…

‘ ও চশমা পড়ে!’

‘ কিহ! আপনার স্যারের চশমা ভালো লাগে? এটা তো অদ্ভুত কথা বললেন’

‘ চশমা নয়, আমার ওর চশমা পড়া চেহারাটা ভালো লাগে। আপনি হয়তো জানেন না তবে, আমার চশমা পড়া ছেলেদের প্রতি অনেক আগে থেকেই দুর্বলতা কাজ করে। কলেজ, ভার্সিটি জীবনে কতো চশমাওয়ালা ছেলে আর প্রফেসরের দিকে নজর গেছে আমার সে সম্পর্কে আপনার ধারণাই নেই ‘

‘ ওহ আচ্ছা, তা স্যার জানে এটা?’

জারা কিছু উত্তর দেবে তখনই ওর ফোনটা বেজে উঠলো, ফোন স্ক্রিনে “আবরার” নামটা ভেসে উঠতেই চোখ যেনো আটকে গেলো জারার। মাত্রই যাকে নিয়ে আলাপ চলছিলো তার ফোন এসে গেলো। এই মুহূর্তে আবরারের ফোন আসায় হুট করেই জারার অবচেতন মন উৎফুল্ল হয়ে উঠলো, কিন্তু কেনো তার কারণ জানা নেই ওর!

চলবে…

[ভুলত্রুটি ক্ষমা সুলভ দৃষ্টিতে দেখবেন…!!]