#সায়রে_গর্জন
#নীতি_জাহিদ
৪৬.
( অনুমতি ব্যতীত কপি করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ)
ছোট্ট পা ফেলে টিপে টিপে চিলেকোঠার দরজার সামনে দাঁড়িয়ে উঁকি দিচ্ছে। ভেতর থেকে বড়দের গলার আওয়াজ। নরম ডান হাতটা তুলে আলতো টোকা দিলো। কয়েকবার টোকা দিতেই দরজা খুলে গেলো। পাভেল বেরিয়ে এসে খুশি হয়ে খুব সুন্দর একটা হাসি দিয়ে কোলে তুলে নিলো আবিরকে। বলে উঠলো,
– আমার মামাটা।
চেপে ধরে আদর করে ভেতরে নিয়ে গেলো। নোমান কি যেন একটা কাগজ দেখছিলো। পাভেলকে স্বর উঁচিয়ে জিজ্ঞেস করলো কাগজের দিকে তাকিয়েই,
– কিরে কে এলো?…
পাভেলের দিকে তাকিয়ে হাতের কাগজটা রেখেই উঠে দাঁড়ায়। দুহাত মেলে দেয় সামনে। বুক কেঁপে উঠে ছেলেকে কোলে নিয়ে। আবির দুহাতে জড়িয়ে ধরে বাবার গলা। নিঃশব্দে গড়িয়ে পড়ছে অশ্রু। ছেলেটা ফুফিয়ে কাঁদছে। বাবা আসবে জানতো। ম্যাডাম এসে পড়িয়েছে ছোট খাম্মার রুমে। তাই তখন মা বেরুতে দেয় নি। ম্যাডাম যাওয়ার পর ছুটে বেরিয়ে এসেছে। বাবাকে পেয়ে মনে হচ্ছে সব পাওনা হয়েছে। ছেলেকে নিয়ে খাটে বসে নোমান ছেলের পুরো বদনে আদর দিতে দিতে বললো,
– আমার বাবাটা। পাপাকে মিস করেছো তুমি?
কেঁদে কেঁদে ফুফিয়ে বলছে,
– হুউউমমম, অন্নেক। এত্তগুলা। কিন্তু কেউ আমাকে নিয়ে যায়নি।
নোমান পুনরায় ছেলেকে বুকে নিয়ে বলে,
– এখন আর কেউ বাঁধা দিবেনা জান বাচ্চাটা। আমিও আমার জানটাকে অনেক মিস করেছি। তাই তো দেখতে চলে এসেছি।
বাবা ছেলের আবেগঘন মুহুর্ত দেখে হাসছে পাভেল। নোমান চোখ মুছে পাভেলের দিকে তাকিয়ে বলে,
– এমন হাসছিস কেনো? তোর তো লজ্জ্বা হওয়া উচিৎ। আমার বাচ্চাটা স্কুলে পড়ে, শাহীন ও হয়তো যখন তখন বাচ্চার বাপ ও হবে আর তুই কিনা নতুন বাচ্চা পালার প্ল্যান করছিস? বাচ্চা পালার বয়সে বাচ্চার পুচকি মাকে পালবি। ছিঃ। শেম অন ইউ।
– আরেকটা কথা বললে ঘু*ষিতে নাক ফা টা বো।
এই কথা শুনে আবির পুনরায় কেঁদে দিলো। পাভেলের দিকে তাকিয়ে নাক টেনে বলে,
– এই মামা প্লিজ মে*রোনা আমার পাপাকে।
– বাচ্চাটার জন্য বেঁচে গেলি। শা*লা ***।
দাঁত খিচিয়ে বললো পাভেল।
নোমান অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো বন্ধুর অসহায় অবস্থা দেখে। আহারে কি করুণ দশা। একটা টিস্যু দিয়ে ছেলের নাক মুছে দিলো। দুহাতে গাল মুছে বললো,
– কি খেয়েছো বাবা?
– রোস্ট আর পোলাও। মাম্মা খাইয়ে দিয়েছে। পাপা তুমি নিচে চলো। মাম্মা অপেক্ষা করছে।
পাভেল এবং নোমান দুজনই অবাক হলো। পাভেল ভ্রু কুঁচকে বুঝার চেষ্টা করছে। পাভেল ইশারা দিয়ে বললো থাম। নোমানের কাছে এসে আবিরকে কোলে নিয়ে বললো,
– বাবা মাম্মা কেনো অপেক্ষা করছে?
– আমি তো জানিনা মামা, মাম্মা বলেছে তোমার পাপাকে নিয়ে এসো।
পাভেল কিছু একটা ভেবে শেফালীকে ফোন দিয়ে উপরে আসতে বললো। নোমান বার বার বারণ করাতেও শুনেনি। শেষমেষ ধমকে বললো,
– বেশি বুঝিস সব কিছু। মেয়েটা কি বলতে চায় শুন।
__
“ডুবেছি আমি তোমার চোখের অনন্ত মায়ায়,
বুঝিনি আমি সেই মায়াতো আমার তরে নয়।
ভুল গুলো জমিয়ে রেখে বুকের মণিকোঠায়
আপন মনের আড়াল থেকে ভালোবাসবো তোমায়।”
শিফা ও তাহি নওরীনের রুমে যাচ্ছিলো সন্ধ্যার নাস্তা নিয়ে। দরজার বাইরে এমন গান শুনে তাহি থমকে গেলো। শিফার হাতে ট্রে থাকায় বললো,
– আমি যাই তুমি গানো শুনো লিমন ভাইয়ার। খুব সুন্দর গান গায়। আমিও আসছি।
তাহি রুমে প্রবেশ করলো। শুয়ে আছে লিমন। কপালে হাত, চোখ বন্ধ। ল্যাম্পশেডটা জ্বলছে টিমটিমে আলো ছড়িয়ে। পায়ের আওয়াজ শুনে লিমন নড়ে চড়ে উঠলো। তাহিকে একদিন পর দেখলো আজ। ডাক্তার বলেছে ড্রেসিং সাতদিন দিন পর করে দিবে। এখন অনেকটাই ভালোর দিকে। ডান পা মাটিতে ফেলতে অনেক কষ্ট হয়। যাবতীয় প্রয়োজনীয় সব কাজ পা খুড়িয়ে করতে হয়। কাব্য আসে মাঝে মাঝে। এসে কিছুক্ষন আড্ডা দিয়ে যায়। সাহায্য করে কাজে। তাহিকে রুমে ঢুকতে দেখে সালাম দিলো। অসুস্থ হবার পর থেকেই কেমন চুপচাপ হয়ে গিয়েছে লিমন। এখন আর তাহিকে আগের মত জ্বালাতন করেনা। সালামের প্রতিউত্তর করে তাহি শুধায়,
– কেমন আছো?
– জ্বি আলহামদুলিল্লাহ আপনি।
– আলহামদুলিল্লাহ। শরীর কেমন? সেলাইয়ে ব্যাথা করে? আর ডান পা কি একটু মুভ করতে পারছো?
– সেলাই ব্যাথা করে যখন উঠে বসি। আর পা মুভ করলে ব্যাথা করে। মাঝে মাঝে রগে টান লাগে।
– একটু লাগবে সুস্থ হওয়ার পর্যন্ত।
– আচ্ছা।
একটি বাড়তি কথাও বলেনি। তাহি খুশী হয়ে উঠে দাঁড়ায়। হেসে বললো,
– ঠিক আছে থাকো তাহলে। তোমার গানের গলা চমৎকার।
– ধন্যবাদ।
বেরিয়ে গেলো তাহি। আটকে রাখা দম ছেড়ে লিমন বিড়বিড় করে বললো,
– আর কখনো গান গাইবোনা,আজকেই শেষ ছিলো। যদি জানতাম আপনি শুনেছেন তাহলে সেখানেই থেমে যেতাম।
অশ্রু গড়িয়ে পড়ে দু চোখ বেয়ে। কাউকে জানতেও দিলোনা এক্সিডেন্ট স্পটের হাতাহাতির প্রকৃত রহস্য। কেনো সেদিন লিমন আবদুল্লাহপুর থেকে সোজা রুট ধরে না গিয়ে এভার কেয়ার হাসপাতাল ঘুরে উত্তরা গিয়েছিলো। জ্ঞান ফেরার পূর্ব পর্যন্ত ফোন আগলে রেখেছিলো বুকের কাছে। বুকে, পেটে প্রতিটি কোপই ছিলো সেদিন ফোনের জন্য। ভাইজানের দেয়া স্যামসাং গ্যালাক্সি এ-সেভেনটি ওয়ান চূর্ণ বিচূর্ণ করলেও ওরা জানতে পারেনি বুক পকেটে ছিলো নোকিয়ার বাটন ফোন। সেখানেই সংরক্ষিত ছিলো প্রিয় নারীর সম্মান। সেদিন ইনফরমেশন কালেক্ট করে অনেক আগেই বেরিয়ে আসতে পারতো স্পট থেকে। দেরি হয়েছিলো এই ভিডিওর জন্য। কোনো একটি ভিডিও লিক করার প্ল্যান ছিলো মনির। প্রায় ছ মাস আগের ভিডিও। রেদোয়ানের ডেরা থেকে সব ইনফরমেশন নিয়ে যখন ফিরে আসবে তখনই শুনেছিলো সেই ভিডিও লিক করে দেয়ার কথা ভাড়াটে গুন্ডাদের মুখে। এতেই যেন মনি সুখ খুঁজে পাবে। মেমোরি কার্ড ছিলো হাসপাতালে। মনির কেবিনের ড্রয়ারে। গুরুত্বপূর্ণ কিছু ভেবে লিমন চলে গেলো নতুন তথ্যের সন্ধানে। সেখান থেকেই সংগ্রহ করেছিলো সেই মেমোরি কার্ড। বাসায় বসেই নিজের পারসোনাল সিসিটিভি ফুটেজে মনি দেখতে পায়। লিমন সেই মেমোরি কার্ড মনির ড্রয়ার থেকে সরিয়ে ফেলেছে। জিপিএস লক দেয়া ছিলো মনির ড্রয়ারে। কারো সংস্পর্শেই ইনফরমেশন চলে যেত ইউজারের কাছে। পরে অবশ্য ওই ছেলেগুলার মুখ থেকেই পাভেল সব উগলে বের করেছে। ভিডিওতে কি ছিলো তা অজানা ছিলো সকলের। লিমন ভিডিও ওপেন করেই যা বুঝার বুঝে নিয়েছিলো সেদিন। ভেবেছিলো মেমোরি কার্ড লাগিয়ে সেভ করে পুনরায় সেখানে রেখে দিবে। কিন্তু ভিডিওতে ছিলো তাহির ড্রেসিং রুমে চেঞ্জিং ভিডিও। গতকাল রাতে ওয়াশরুমে গিয়ে মেমোরি কার্ড চূর্ণ বিচূর্ণ করে ফ্ল্যাশ করেছিলো কমোডে।
বালিশের কাছে রাখা ফোন কেঁপে উঠলো। ভাইজানের ফোন দেখেই রিসিভ করে সালাম দিতেই প্রথম প্রশ্ন,
– মেমোরি কার্ড টা ডেস্ট্রয় করেছিস?
ঢোক গিলে ভীত গলায় উত্তর দিলো,
– জ্বি ভাইজান।
এই মানুষটার কাছে কথা লুকানো যাবেনা সঠিক বুঝতে পেরেছিলো।
– শরীর কেমন?
– আগের চেয়ে আলহামদুলিল্লাহ ভালো।
– তাহি কোথায়?
– বাসায় আছে।
– কথা হয়েছে তোর সাথে?
– জ্বি ভাইজান।
– কি বলেছিলাম সব মনে আছে?
– জ্বি ভাইজান।
– গুড, বিশ্রাম নে।
– ভাইজান…
– হুম।
– রেজাল্ট দিয়েছে।
– দেখেছি আমি। সুস্থ হয়ে নে৷ উপহার পেয়ে যাবি। তবে সাবধান উপহারে যেন চাওয়াটা বেশি হয়ে না যায়? ঠিক আছে?
– জ্বি ভাইজান।
সংযোগ বিচ্ছিন্ন হলো। খাট ধরে উঠে বসলো। পেটে আর বুকে টান লাগছে। দরজার কাছে গিয়ে দরজাটা আটকে দিয়ে জানালার পাশে দাঁড়িয়ে কাব্যকে ফোন দিলো। ফোন দিতেই কাব্য ও পাশ থেকে বললো,
– কিরে কি অবস্থা?
– কাব্য আমার মনে হচ্ছে কেউ আমার বুকের পাশটা ছু*রি দিয়ে এফোঁড় ওফোঁড় করছে। আমি পারছিনা আর। বিশ্বাস কর আমার ডক্টর তাহি লাগবে বাঁচার জন্য। কিন্তু উনি আমাকে চায় না, অন্যদিকে ভাইজানের ইঙ্গিতপূর্ণ ধমক। আমি বাঁচতে চাই কাব্য৷ রেজাল্ট দিয়েছে আমার। ভাইজান আমার মনের কথা টুকু ধরে ফেলেছে। সরাসরি বলেছে যেন এমন কিছু না চাই। আমি তো ডক্টর তাহিকে চাইতাম…
কাব্যকে ফোন দিয়ে কেঁদে যাচ্ছে এই ছেলে। ভালোবাসা এত কাঁদায় কেনো? কাব্য শান্ত করার জন্য বললো,
– আমি গিয়ে ভাইজানকে বলতাম,প্রয়োজনে সব রকমের চেষ্টা সবাই মিলে চালাতাম। কিন্তু তোকে বুঝতে হবে আমরা প্রত্যেকে নিরুপায়। কারণ তাহি আপা নিজেই তোকে চায়না।
– কেনো চায়না?
– কারণ উনি রাশেদ ভাইয়ের? তোকে এখন ভাইজান জোর করে একটা মেয়ে ধরে এনে বিয়ে দিলে ভালোবাসতে পারবি? তোর কাছে ওই মেয়েকে অযাচিত বোঝা লাগবে না জীবনে? ঠিক তেমনি তুই ও তাহি আপার কাছে একটা অযাচিত কাঁটা। বিরক্তিকর কিন্তু বলে না কষ্ট পাবি দেখে।
– কাব্য…
– হ্যাঁ বল।
– আমি ফোনটা রাখি রে…
– রাখিস না। কথা শোন।
– বুকে ব্যাথা লাগছে। নিতে পারছিনা।
– উলটা পালটা কিছু করে বসিস না?
– করলে যদি ডক্তর তাহির দু ফোঁটা চোখের পানি ঝরতো আমার জন্য ভেবে দেখতাম। করবোনা। আমার মা টা আমি ছাড়া অসহায়। বড় ভাইজান আর যাই বলুক, বকা দিক আমি উনার কাছে কি আমি জানি। হাসপাতালের দুটো দিন আমার হাত ধরে বসে ছিলো। নামাজ আদায় করেছে আমার বেডের পাশে। সত্যি কথা বলতে নামাজে আমি তাকে আমার জন্য কাঁদতে দেখেছি। সেই মানুষটাকে কষ্ট দিতে পারবোনা। রাখছি। স্বাভাবিক হতে দেয়। বাস্তবতা মেনে নিতে দেয়। আল্লাহ হাফেজ।
– আল্লাহ হাফেজ।
___
মুখোমুখি দুজন। তবে দুজনের দৃষ্টি অপরিচিত। শেফালী নিরবতা ভেঙ্গে বললো,
– কেমন আছো?
– আলহামদুলিল্লাহ ভালো।
– জিজ্ঞেস করবে না কেমন আছি?
– ভাইজানের কাছে যেহেতু আছো,ভালোই আছো।
– হুম। সুরাইয়া কেমন আছে? নিয়ে এলেনা কেনো?
– পিকনিক করতে আসিনি এখানে। সুরাইয়ার লাইফ, ক্যারিয়ার আছে।
– রাগার মত কিছু হয়নি। কিছু প্রশ্ন ছিলো?
নোমান নিশব্দ। তবুও শেফালী বললো,
– আবিরের কাস্টডি আমি নেব।
– আচ্ছা।
– তোমার আগ্রহ নেই ছেলের জন্য?
– ছেলেটা দুজনের। মায়ের আদর থেকে বঞ্চিত করতে চাইনা।
– আর বাবার?
– ছেলের মুখ থেকে বাবা শব্দ বের হওয়ার দেরি, তার বাবার ছুটে আসতে দেরি হবেনা। এছাড়া ছেলের মাথা উপর বিশ্বাসযোগ্য মানুষ তার বড় মামা, ছোট মামা আছে।
– আমি না হয় খারাপ ছিলাম তুমি কি করে আরেকটা বিয়ে করলে? শুনেছি সুরাইয়াকে ভালোবেসে বিয়ে করেছো? ভালোবাসলে কখন?
মৃদু হেসে নোমান বললো,
– শিউলি…
সবই স্বাভাবিক ছিলো কিন্তু নোমানের এই ডাক শেফালীর ভেতর টা নাড়িয়ে দিলো। কই আগেও তো কত ডেকেছে কখনো তো এমন ভাবে অনুভূতি জাগে নি। তবে কি মানুষটা তার নেই বলে এমন মনে হলো। পুনরায় নোমান বললো,
– আমি ভালোবেসে ঠকেছি। ছেলেকে আমার কাছ থেকে দূরে সরিয়ে রেখে তিলে তিলে আ ঘাত করা হয়েছে। যাকে ভালোবেসেছি সেই মানুষটা আমাকে মা*রার জন্য ভাড়াটে গুন্ডা নিযুক্ত করেছিলো। যার হাসিতে আমি ম*রতে রাজি ছিলাম সে আমার অন্তর পুড়িয়ে খাঁক করে দিয়েছে। সেদিনই প্রতিজ্ঞা করেছিলাম ভেঙ্গে পড়বোনা। আজকের দিনটার জন্য সৃষ্টিকর্তার কাছে শুকরিয়া। এই দিনের মুখোমুখি হতে হতো কখনো না কখনো। আমি সুরাইয়াকে ভালোবাসিনি,মেয়েটা আমাকে আপন করে নিয়েছে। তোমার চোখের বালি ছিলো সুরাইয়া, আজ আমি তাকে নিয়ে সংসার করি। অথচ তুমি এখন দূরে। এটাই আমার প্রতিশোধ,তোমার শা স্তি। সুরাইয়া আমাকে ঠিক যতখানি ভালোবাসে বিয়ের পর থেকে আমি তাকে এর চেয়ে কয়েক গুণ বেশি ভালোবাসা দেয়াতে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছি। একা কেনো থাকিনি জানো? তুমি শাহাদ ইমরোজ এর বোন। তিনি তোমাকে পা/প থেকে ফিরিয়ে আনবেই যদি জানতে পারে তোমার পা/পের পরিমাণ। কিন্তু আমি কোনো অপশন রাখিনি আমার কাছে তুমি ফিরে আসার। বিয়ে না করলে তোমার চোখের মায়ায় পড়ে তোমাকে ঠিক বুকে টেনে নিতাম। তুমি এখন নোমানের জন্য পরনারী।
পুরো কথা শেষ করে নোমান চিলেকোঠার দিকে ফিরে গেলো। শেফালী শব্দ হারিয়ে নির্বাক। দুহাতে অশ্রু মুছে নিচে নেমে এসেছে। সত্যিই মেনে নিতে পারছেনা সুরাইয়াকে। ঠিকই বলেছে নোমান,এটাই শাস্তি। প্রাক্তন স্বামীর বর্তমান স্ত্রীকে মেনে নিতে পারছে না, তবে স্বীয় স্ত্রীর সাথে পরপুরুষ খালেদ পারভেজকে কিভাবে মেনে নিতো নোমান! শা স্তি হয়েছে শেফালীর। পা*পের শা স্তি।
___
গা ছমছম করা পরিবেশ এখন খামার বাড়িতে। রাত নেমেছে। কল্পনা,রাখি এবং সালিফ ফিরে গিয়েছে। বাড়ির মালি এবং পাহারাদার আছে বাইরে। শাহাদ চৌকিতে বসে দিয়ার গল্প শুনছে সামনের ঘরে। কোলে আছে মেয়ে শেহজা। হাত পা নাড়িয়ে গল্প জুড়ে দিয়েছে ছোটবেলার। শাহাদকে খাওয়াবে বলে গাছ থেকে ফলমূল পাড়িয়েছে। শাহাদের সামনে একটা বাটিতে কদবেল মাখা, অন্য বাড়িতে আমড়া মাখা এনে সাজিয়ে দিয়েছে। নিজে একটু মুখে দিয়ে জিহবায় টাক মে*রে বলে,
– এমপি সাহেব খুব মজা হয়েছে। খেয়ে দেখুন।
শাহাদ মুচকি মুচকি হাসছে। এক চামচ কদবেল মুখে দিয়েই চোখ মুখ কুঁচকে ফেললো। মনে হলো শরীর ঝিরঝির করে উঠেছে। দিয়া এবং ছোট বোন দুটো এই জিনিস প্রায় বানিয়ে খেত। কখনো চেখে দেখা হয়নি। এই খাবার কিভাবে মে*য়েরা এত মজা করে খায়? শেহজা হাত বাড়াচ্ছে খাওয়ার জন্য। দিয়া মুখে দিতে যাবে শাহাদ মৃদু ধমক দিয়ে বলে,
– কি দিচ্ছো এটা? কিভাবে খাও এই খাবার তোমরা? আমার জিহবা বিস্বাদ হয়ে গিয়েছে। এত টক কেনো?
– সরুন তো আপনি। আমার মেয়ে এটা খাবে। তাই না মা?
দিয়া জোর করে মেয়ের মুখে পুরে দিতেই মেয়ে চোখ মুখ কুচকে ফেলেছে। তা দেখে শাহাদের মেজাজ
খা/রাপ হলো। পরের বার মেয়েকে দিতেই এবার মেয়ে স্বাভাবিক। মজা করেই খাচ্ছে। দিয়ার মুখে মিষ্টি হাসি। জিহবা বের করে শাহাদকে ভেঙচি দিয়ে বলে,
– দেখেছেন এটা আমারো মেয়ে, শুধু যে আপনার তিতা করলা খাবে এমন নয়? আমার পছন্দের খাবারো খেতে হবে ওকে।
দুষ্টুমি খেললো শাহাদের মাথায়। মুখে হাসি রেখেই টেনে ঢং করে বললো,
– তাইইইইইই…
– হুম তাই।
– আচ্ছা…
– কি আচ্ছা?
– সব আচ্ছা।
– না সব আচ্ছা না।
– তাই তো! ওকে সব আচ্ছা না।
– কি শুরু করলেন?
– কি শুরু করলাম?
– এভাবে কথা বলছেন কেনো?
– কিভাবে কথা বলছি?
– এমপি সাহেব?
– জ্বি এমপি বধূ।
– আপনি থামবেন?
– অবশ্যই।
দিয়া চ টে গিয়ে চেয়ার টেনে মুখে তর্জনি চেপে বসে আছে। শাহাদ ভীষণ মজা পেয়েছে বউকে রা*গিয়ে। মিটমিটিয়ে হাসছে। দুজনের চোখাচোখি হতেই দিয়া মুখ ঘুরিয়ে বলে,
– হুহ, আবার আমার দিয়ে তাকায়।
– তো কার দিকে তাকাবো?
– অন্য দিকে তাকান।
– আচ্ছা।
– আবার আচ্ছা?
– অন্য মেয়ের দিকে তাকাবো।
দিয়া ছুটে এসে শার্টের কলার চেপে ধরে বলে,
– খু*ন করে ফেলবো।
– পারবে?
রাগে ফুসছে মেয়েটা। মেয়েকে কোল থেকে নামিয়ে উরুর উপর দিয়াকে বসিয়ে ডান গাল টেনে বলে,
– রোমান্টিক বর ভালো লাগছেনা তাই না?
– হুহ।
– এই হুহ কে শিখিয়েছে? কেমন পেত্নী লাগে দেখতে।
– ভালো হয়েছে।
– না ভালো হয়নি।
দুজনের খুনশুটির মাঝখানে টিনের দরজায় ধাক্কা। দিয়া ভেতর থেকেই জিজ্ঞেস করলো,
– কে?
– আপা আমি বিলকিস।
দিয়া ছুটে গিয়ে দরজা খুলে দিলো। এই মেয়েটা দিয়াদের বাড়িতে আগে কাজ করতো। দিয়া বিলকিসকে দেখেই জড়িয়ে ধরলো। ভেতরে এনে বসালো। বিলকিস হাত বাড়িয়ে এক বাটি খাবার দিয়ে বললো,
– বিহালে হুনছি আপনি আইছেন। তয় সময় পাই নাই আইবার। এইডা আপনার লাইগা আনছি।
শাহাদকে দেখে মেয়েটি সালাম দিলো। অন্যদিকে দিয়া বাটি উলটে দেখে শিমের বিচি দিয়ে কচু পাতার তরকারি। মুরাদের সবচেয়ে পছন্দের খাবার। বিলকিস রাত হয়েছে দেখে চলে গেলো। দিয়া বাটি হাতে দাঁড়িয়ে আছে আগের মতো। টুপটুপ করে চোখের পানি পড়ছে। শাহাদ কাছে এসে জিজ্ঞেস করতেই বললো,
– বাবাজানের প্রিয় ছিলো এই খাবার।
দিলো তো এই বিলকিস এসে সব ঘেটে! যাও একটু স্বাভাবিক হয়েছিলো এখন আবার? শাহাদ মেকি হেসে বললো,
– চমৎকার ব্যাপার। তার মানে বাবাজান এই খাবার পছন্দ করতেন। তিনি নেই তুমি কাঁদছো। আমি তিতা করলা পছন্দ করি। আমি না থাকলে শেহজা কাঁদবে। আমরা বাবারা কত সৌভাগ্যবান দেখেছো। কিন্তু আমার আফসোস তোমার জন্য মনে হয় শেহজা কাঁদবেনা?
বাটিটা টেবিলে রেখে দিয়া ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে নাক ফুলিয়ে বললো,
– কেনো কাঁদবেনা? আমি তো আম্মিজানের জন্য কাঁদি। ও কেনো কাঁদবেনা?
– আম্মি জান তো আর তোমাকে এসব অসুন্দর, বেমজা কদর্য বেল খাওয়ায় নি। তুমি তো খাওয়ালে মেয়েটাকে। অবলা মেয়ে না বুঝে গিলেছে। হুহ।
– খবরদার, নকল করবেন না আমায়। আপনি কেনো হুহ বলছেন?
দিয়া আঙ্গুল তুলে ঝগড়ার তালে হা/রিয়েছে। এদিকে শাহাদের মুখে হাসি। উদ্দেশ্য তার সফল। প্রেয়সীর ঠোঁট নাড়িয়ে ঝগড়া করার ভঙ্গি আজ তাকে মুগ্ধ করেছে। খুশি মনে গাইতে গাইতে কাঠের চেয়ারে বসলো,
– যত তারা জলে রাতে, যত ফুল পৃথিবিতে
তার চেয়ে বেশি. ভালবাসি তোমায়
সাদা মেঘে ভেসে নিলে কত ঢেউ নদীর জলে
তার চেয়ে বেশি ভালোবেসো আমায়।।
থেমে গেলো দিয়া। স্তব্ধ হয়ে বললো,
– কোথায় শিখেছেন এই গান?
লজ্জ্বা পেয়ে শাহাদ বললো,
– ভালো হয়নি?
– হ্যাঁ কিন্তু কোথায় শিখেছেন?
মাথা চুলকে বলে,
– লিমন সারাক্ষন এই গান বিড়বিড় করে।
দিয়া অট্টহাসিতে ফে*টে পড়ে। হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খেয়ে বলে,
– শেষমেষ ছোট ভাইয়ের কাছ থেকে প্রেমের গান শিখেছেন?
ওর হাসি দেখে শেহজা ও হাসে ছোট্ট হাত মুখে দিয়ে। মা- মেয়ে হেসে কুটি কুটি। এদের হাসতে দেখে শাহাদ ও হেসে দিলো। খামার বাড়ির রাতের আকাশের চাঁদ,তারা, টিনের চাল আজ সাক্ষী হলো বিস্ময়কর, অপরূপ মুহুর্তের।
চলবে…
#সায়রে_গর্জন
#নীতি_জাহিদ
৪৭.
(অনুমতি ব্যতীত কপি করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ)
অম্বরে সাদা পেজা তুলো। হাত বাড়িয়ে ছোঁয়ার অপরিসীম প্রতীক্ষা। মন ভালো আজ। নতুন ঋতুর প্রত্যাবর্তন। সকালে উঠার অভ্যাস করাটা বড্ড কষ্টের তবুও গত কয়েক মাসে অনেকটাই অভ্যাস হয়ে গিয়েছে। পায়ের ব্যায়াম হয়। সকালে একটু করে হেঁটে এরপর রিকশায় উঠে। ডাক্তার জানিয়েছে পায়ের ব্যায়াম বাঞ্চনীয়। বুকের পাশটা অনেকটা ভালো আছে। ভাইজান ছাড়া অনেকের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। এখন তার সংসার মা এবং নিজেকে নিয়ে। রিকশায় উঠে রওয়ানা দিলো অফিসের উদ্দেশ্যে। স্বনামধন্য মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে জব পেয়েছে কয়েকমাস আগে। রেজাল্ট যেমন তেমন, কমিউনিকেশন স্কিল বরাবরের মতো চমৎকার। চাকরি না হওয়ার সুযোগই নেই। গোপন প্রফেশনাল অভিজ্ঞতা তো আছেই।
অফিসে প্রবেশ করতেই কিছু ফাইল নিয়ে সি ই ওর রুমে চলে গেলো। ফাইল সাইন করিয়ে কিউবিকলে বসতেই ভাইজানের কল। রিসিভ করে সালাম জানালো।
– বিকেলে বাসায় আসবে। গতবারের মত কোনো অকান্ড ঘটাবেনা। তাহিকে দেখতে আসবে ছেলে পক্ষ।
ধক করে উঠলো লিমনের বুকের মধ্যিখানে ছোট্ট পাম্পটা। গত মাসগুলোতে ভীষন যন্ত্রনারাও কুপোকাত করতে পারেনি হৃদয়টাকে, দূরত্ব মেনে চলেছে সর্বোচ্চ। এতদিনে তো সব ভুলে যাবার কথা। তবে ভুলে নি কেনো? গত সপ্তাহের ঘটনাটি জীবনের অন্য সব দূর্ঘটনা ভেবে ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করছে। এইযে! কটা দিন বন্ধু,কলিগ,আড্ডা, মাস্তিতে নিজেকে যথেষ্ট ব্যস্ত রাখার আপ্রাণ চেষ্টা বুঝি আজ জলে গেলো? আর ভাইজানই বা কেনো কাঁ টা ঘাতে নূন ছেটাতে চাইছে। সে কথা কি আর প্রশ্ন করার সাধ্য আছে? ফোস করে দম ফেলে বললো,
– জ্বি ভাইজান। কিন্তু আমার কাজ কি?
– আপাতত কথা কম বলা। শাহীন আসবে পরশু। আজ ছেলেরা রিং পরিয়ে চলে যাবে। ভাই হিসেবে পাভেল, তুমি, আমি আর কাব্য থাকবো।
– জ্বি ভাইজান।
স্বল্প কথায় ফোন রেখে দেয় ওপাশে থাকা পাষাণ মানুষটা। বিয়ের জন্য যদি তাহিকে রাজি করাতে পারে তবে লিমনের জন্য করালেও তো পারতো। গাল ফুলিয়ে রাজ্যের ভাবনা ভাবতে ভাবতে মনে পড়লো কিসব বকছে দুঃখে। ভাইজানের উপর কিসের রাগ? রাগ তো ওই ডাক্তারের উপর। খুব তো বলেছে বিয়ে করবোনা এখন ঠিকই ধেঁই ধেঁই করে বিয়ের পিড়িতে বসবে।
___
– বাবু সব কিছুর সীমা আছে? কেনো এসব করছো? দেখতেই পারছো মেয়েটা রাজি নয় বিয়েতে।
– আম্মু আপনাদের মতো এত আবেগ আসে না আমার। মেয়ে মানুষ হয়ে জন্মানো যেমন কঠিন, ঠিক তেমনি টিকে থাকাও কঠিন। গত সপ্তাহে হাসপাতালে যে অকারেন্স টা ঘটেছে এরপর থেকে কিছুতেই তাহির একা থাকার উপর ভরসা করতে পারছিনা। খালাম্মা কেমন অসুস্থ হচ্ছে মেয়ের দুশ্চিন্তায় বোন হয়ে কি আপনার চোখে লাগছেনা এসব? আব্বু আপনি কিছু বলুন?
বাড়ি গরম করে ফে*লেছে শাহাদ। প্রতিটি শব্দের উচ্চ আওয়াজে উচ্চারিত প্রতিধ্বনি দেয়ালে দেয়ালে আ*ঘাত প্রাপ্ত হচ্ছে। রায়হান সাহেব ছেলের সিদ্ধান্তকে সমর্থন করছেন। সম্মতিসূচক মাথা নাড়িয়ে বললেন,
– আমি শাহাদকে সমর্থন করছি সুলতানা। তাহির নিরাপত্তা প্রয়োজন। হাসপাতালে রোগীর আত্নীয়রা একজন ডাক্তারের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় তার ম্যানার নাহয় নাই বা জানতে পারে কিন্তু আশেপাশের ডাক্তার কলিগ কজন প্রতিবাদ করেছে? পাভেল, শাহাদ ঢাকার বাইরে, শাহীন খাগড়াছড়ি মেয়েটা না পারতে লিমনকে কল দেয়। ভাগ্যিস ছুটে গিয়েছিলো ছেলেটা। নাহয় কিভাবে ওদের কাছে অপদস্ত হতে হতো ভাবতে পারছো। মেয়েটার গায়ে অবধি হাত তুলতে চেয়েছিলো পেশেন্ট পার্টি। ভাবতেই আমার
ভ য় লাগছে।
শাহাদ মায়ের দিকে তাকিয়ে বললো,
– এতটুকুতে থেমে গেলে তো ভাবতাম যাক হাসপাতালের অহরহ ঘটনা এসব। বাসায় অবধি হামলা চালালো। নিশ্চিত খবর পেয়েছে পুরুষ মানুষ থাকেনা। এদের কলিজা কাঁপলো না যে আমার বোনের বাসায় হামলা চালায়।
শেফালী কথার মাঝে বললো,
– ভাইজান এরা তো স্বাভাবিক মস্তিষ্কের না? এরা কি করে বুঝবে কোনটা এমপির বোন। আর তাহি আপা তো কাউকে বলেও না। নিজের মত থাকে। এই বাড়িতেও থাকবেনা, নিরাপত্তা ও লাগবেনা তার। সব ইগো একসাথে নিয়ে বসে থাকবে আর নিজের বিপদ নিজেই ডেকে আনবে।
– আমার ডিসিশন ফাইনাল। এবার ওকে মে*রে ধরে বিয়ে দিব। রাশেদকে ও আমার থেকে বেশি মিস করে? করতেই পারে হাসবেন্ড ছিলো। কিন্তু রাশেদ যাওয়ার সময় আমার অর্ধেক প্রাণ নিয়ে গিয়েছে। আমি বেঁচে নেই? বাঁচতে হবে,শিখতে হবে। মেহেরজান আম্মা যেই ছেলের জন্য অন্য পথ বেছে নিয়েছে উনি বেঁচে নেই। আছে। আমি তাহির নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত।
– আমি ম*রে গেলে আপনি আরেকটা বিয়ে করবেন এমপি সাহেব?
এত বড় স্পর্ধা যে মেয়ে কখনো দেখায় নি আজ সকলের সামনে এই প্রশ্ন করলো। শেফালী শুকনো ঢোক গিললো। সুলতানা কবির ভীষণ অবাক হলেন। এমন বেফাঁস প্রশ্ন পুত্রবধূর করা উচিত হয়নি। শাহাদ নিশ্চিত রে গে যাবে। সকলকে অবাক করে দিয়ে শাহাদ দিয়ার দিকে ফিরে হেসে বললো,
– জ্বি না। করতাম না। আমার শেহজা আছে জীবন কা*টানোর জন্য। রাশেদ যদি সম্বল রেখে যেত আমি দুনিয়া লড়ে তাহিকে সিকিউরিটি দিতাম।যদি খালুজান বেঁচে থাকতেন মাথা ঘামাতাম না। রাশেদ আমার ভাই। ভাইয়ের সন্তান আর তার বউয়ের নিরাপত্তার দায়িত্ব নেয়া সমাজে যত সহজ, বিধবা খালাতো বোনের দায়িত্ব নেয়া ঠিক ততটাই কঠিন। সম্পূর্ণ অবান্তর একটা প্রশ্ন করলেন ফারাহ্ শাহাদ।
– শেহজা বড় হলে একা থাকবেন কি করে?
পূর্বের চেয়েও প্রসারিত অধর। ক্ষীণ হেসে বলে,
– নিরাপত্তার প্রয়োজন তো নেই আমার। তবে আমি যদি ম*রে যাই নিশ্চিত করে আদেশ করে গেলাম সবাইকে আপনাকে যেন ধরে সবাই আরেকটা বিয়ে দেয়। আপাতত চুপ থাকুন। রুমে গিয়ে আলোচনায় বসবো আপনার সাথে।
কথাটা বলেই মৃদু হেসে পুনরায় আলোচনায় মনোযোগ দিলো। অদ্ভুত মানুষ! একটি বার উচ্চারণ করলো না যে, তোমায় ভালোবাসি, তোমার স্মৃতি নিয়ে থাকবো তবুও বিয়ে করবোনা। কেমন বাজে বেখাপ্পা উত্তরটা দিলো। তার নাকি নিরাপত্তার প্রয়োজন নেই! অন্যদিকে দিয়াকে নাকি আরেক বার বিয়ের আদেশ দিয়ে যেত। খারাপ লোক।
অন্যদিকে বাড়ির প্রত্যেকে হতচকিত, চমকিত শাহাদ ইমরোজ রাগ না করে হেসে হেসে মিষ্টি ভাষায় এমন সিচুয়েশন ট্যাকেল দিলো! এই বাড়ির মানুষ সবে মাত্র চমক পেতে শুরু করেছে। রায়হান সাহেব স্বাভাবিক ভাবে ব্যাপারটা নিয়ে মুচকি হেসে বললেন,
– বৌমা জন্ম,মৃত্যু এবং বিয়ে আল্লাহর হাতে। লালসা গ্রস্থ পুরুষ ব্যতীত সাধু পুরুষ কখনো বিনা প্রয়োজনে বিয়ে করেনা। পুরুষ চারটি কারণে বিয়ে করে। যৌবনে, বার্ধক্যে, প্রয়োজনে এবং লালসায়। আমার শাহাদ কোন পুরুষের তালিকায় পড়ে ভেবে নিও। উত্তর সহজ।
বাবার দিকে তাকিয়ে ঠোঁটের কোণে হাসি রেখে চোখের পলক ঝাপটে বুঝালো,
– ”বাবা মানে সমস্ত গোলকধাঁধার নিরব,নির্ভুল সমাধান। বাবা মানে চিন্তিত সন্তানের প্রশস্ত কাঁধে ভরসার হাত। বাবা মানে সৃষ্টিকর্তার শ্রেষ্ঠ উপহার।”
___
সুলতানা মঞ্জিলে দ্বিতীয় বার তাহিকে দেখতে আসছে ছেলেপক্ষ। অন্যদিকে এবার শেফালী নিজ থেকে রুমে গিয়ে দরজা দিয়েছে। শিফা চলে গিয়েছে বান্ধবীর বাসায়। বাসায় আছে দিয়া ও নওরীন। দুজনের জন্য কড়া নিয়ম আজ কামরা থেকে যেন না বের হয়, যতক্ষন না সব পাকাপোক্ত হবে। তবে এমন কিছুই হওয়ার সম্ভাবনা আজ নেই। কারণ ছেলে শাহীন এবং পাভেলের ছেলেবেলার বন্ধু। আইনজীবী নিলয় ইসলাম। যথেষ্ট ভদ্র এবং মার্জিত। ভদ্রতায় রায়হান সাহেব এবং শাহাদ দুজনই মুগ্ধ। নাস্তার আয়োজন শেষ। ছেলের পরিবারের লোকজন তাহিকে দেখতে চাইলো।
অফিস শেষে লিমন সরাসরি সুলতানা মঞ্জিলে প্রবেশ করেছে। ড্রইং রুমে সবাইকে দেখে সালাম দিলো। নিলয় হেসে লিমনকে বললো,
– কেমন আছেন লিমন সাহেব?
লিমন হেসে উত্তর দিলো,
– জ্বি আলহামদুলিল্লাহ ভালো।
পাভেল ভ্রু কুঁচকে বললো,
– তোরা কি চিনিস একে অপরকে?
নিলয় জানালো,
– হুম, আমি লিমন সাহেবদের অফিসের লিগেল এডভাইজার। অফিসের অনেক কাজেই উনার সাথে যোগাযোগ রাখতে হয়। এছাড়া লিমন সাহেবের তো আলাদা পাওয়ার অফিসে।
লিমন ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলো। শাহাদ চোখ ছোট করে লিমনের দিকে তাকাতেই দেখে ছেলেটা মুখ কালো করে বসে আছে। রায়হান সাহেব প্রশ্ন করলো,
– কেমন পাওয়ার?
নিলয় জানায়,
– আমাদের চেয়ারম্যান স্যারের অনেক স্নেহের। অফিসের কাগজপত্রে অনেক টাকার একটা গোলমেল হয়েছিলো। আমার হাত দিয়েই ওটা বেরিয়ে এসেছিলো। হিসেব মেলাতে পারছিলোনা অথোরিটি, একাউন্টস সেকশন। তিনজন নির্দোষ অফিসারের চাকরি যেত। লিমন সাহেব আটাশ দিনের মাথায় প্রবলেম সলভ করে দিলেন। সেই সুবাদে উনাকে অফিসের অনেকেই ভয় পায়। কার কখন কোন ভান্ডা ফুটে।
রায়হান সাহেব এবং সুলতানা কবির হেসে দিলেন। শুনে ভালো লাগছে পরিবারের ছেলেটা এবার দায়িত্বশীল হলো। অন্যদিকে লিমন শাহাদের দিকে তাকিয়েই ভবিষ্যতের চিত্র দেখছে। মন চাচ্ছে পায়ে ধরে বলতে আজকের পাত্রকে আমি ইচ্ছে করে চিনিনা। আজকে ঝামেলা হবেই না ভাইজান। কিন্তু সে নিরুপায়। কারণ পাত্র এতক্ষন তার উপর আস্থাশীল হওয়ার পরিচয় দিয়েছে। তাহিকে ভেতর থেকে আনার আগেই শাহাদ বললো,
– লিমন বাসায় যাও। তোমাকে ক্লান্ত দেখাচ্ছে। রাতে কথা হবে।
ব্যস্, হয়ে গেলো। যা বুঝার তা বুঝে নিলো। ব্যাগ টা কাঁধে নিয়ে মাথা নেড়ে উঠে দাঁড়ায়। নিলয়ের সাথে হ্যান্ডশেক করে বেরিয়ে যাবে এমন সময় তাহিকে নিয়ে আসে। ঝাপসা দেখেই লিমন সেদিকে না তাকিয়ে ঝটপট বেরিয়ে গেলো। যেদিকে তাকানো বারণ সেদিকে চোখ না পড়াই শ্রেয়। শাহাদ আজই বিয়ে পড়িয়ে দিবে তাহির। কথাটা কানে বাজছে।
__
বাসার নিচে টং দোকানটাতে বসে আছে। ভেতরে যেতে ইচ্ছে করছেনা৷ টং দোকানদার প্রশ্ন করলেন,
– মামা চা দিতাম নি?
মাথা নেড়ে না জানালো। চোখ নিবদ্ধ রাস্তার ধূলাতে। গাড়ির টুং টিং ক্রাং আওয়াজ আসছে। আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে নিরব হয়ে। মেঘ করেছে আকাশে। আচমকা ঝড় উঠেছে, ধূলো ঝড়। হাত ঘড়িতে সাতটা বাইশ বাজে। সুলতানা মঞ্জিল ছেড়েছে তখন চারটা পঞ্চাশ। শার্টের হাতা উলটে বার বার বেয়ে নেত্র ধারা মুছতে ব্যস্ত। কাব্য ফোন দিয়ে টংয়ের সামনে এসে উপস্থিত। এই ধূলো ঝড় সব একসাথ করে এসেছে। ছেলেটা চোখে মুখে উদ্ভ্রান্ত দৃষ্টি। লিমন কাব্যকে পেয়ে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে দিলো। এই মুহুর্তে কাব্যকে ভীষণ প্রয়োজন ছিলো। কাব্যকে জড়িয়ে ধরে ক্রন্দনরত গলায় বললো,
– আমার তাহি হা*রিয়ে গেলো কাব্য। ওরা আমার তাহিকে নিয়ে যাবে। কেনো ভাইজান বুঝলো না আমাকে।
কাব্য কিছুতেই সামলাতে পারছেনা। টং এর আসগর মামাও এই ভরা ঝড়ে ওদের ভেতরের ঢুকতে বলছে। চারদিকে বালুর তুফান। এর মধ্যে শুরু হয়ে গেলো বজ্রনাদ। মেঘে ঘর্ষন, প্রবল বেগে বৃষ্টি। প্রকৃতি যেন তান্ডব লীলা শুরু করেছে। করবে নাই বা কেনো। উপকূলীয় অঞ্চলে চলছে নয় নম্বর মহা বিপদ সংকেত।
এর মাঝেই ছুটে আসছে কেউ। আসগর মামা জোরেই বলে উঠলো,
– মাইয়া মানুষ পাগল হইয়া গেছে। কেমনে দৌড়াইয়া আইতাছে। ঝড়,তুফান বালু দিয়া এমনে দৌঁড়াইলে কোনো ক্ষতি হইয়া যাইবো। ওই খালা এমনে ছুটতাছেন কেন?
আসগর চিৎকার দিয়ে ডাকতে লাগলো। কাব্য এবং লিমন দুজনই ঘাড় ঘুরিয়ে দোকানের তেরপালের আড়ালে তাকালো। সত্যি একটি মেয়ে ছুটে আসছে। কাব্য সামান্য ভিজে গিয়েছে। মেয়েটি ছুটে এসেই তেরপালের ভেতর ঢুকলো। কাব্য আর লিমন স্তম্ভিত, বিভ্রান্ত হয়ে মেয়েটির দিকে তাকিয়ে আছে। শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। আসগর মামা এক গ্লাস পানি এগিয়ে দিয়ে বললো,
– এই নেন খালা পানি টুকু খাইয়া লন। হাঁপাইতাছেন তো।
সব টুকু পানি ঢকঢক করে গিলে নিলো। পরনের শাড়িতে কাঁদা। অনেকটাই ভিজে গেছে শাড়ির নিচের অংশ। কাব্য বিস্মিত হয়ে প্রশ্ন করলো,
– আপা আপনি এখানে?
তাহি টংয়ের ভেতরে একপাশে এসে বেঞ্চিতে বসলো। লিমনের দিকে তাকিয়ে দেখে ছেলেটা চোখ ফিরিয়ে নিলো। মাটির দিকে দৃষ্টি নত। তাহি চোখ বুজে একদমে বললো,
– লিমন এই মুহুর্তে বিয়ে করবেন আমায়?
চক্ষুছানা বড়া কাব্যের। মনে হলো মাথার উপর বাঁজ পড়েছে। লিমনের দিকে তাকিয়ে দেখে ছেলেটা চোখ বন্ধ করে রেখেছে। দু চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে জল। তাহির চোখে মুখে বেদনার ছাপ। নিষ্পলক তাকিয়ে আছে লিমনের দিকে। আসগর মামাও হতবাক। এখানে কি চলছে বুঝতে পারছেনা। সকলের অপেক্ষা লিমনের প্রতি উত্তরের। অথচ লিমন নিঃশব্দ আজ। চোখ খুলছে না কেনো এই ছেলে? ঠোঁট দুটো আলগা করে বললো,
– ডাক্তার তাহি পালিয়ে এসে ঠিক করলেন না? ভাইজানকে কষ্ট দিয়ে ফেলেছেন?
হতভম্ব তাহি এবং কাব্য। এ যেন চোরের মুখে ধর্মের কাহিনী। এখনো চোখ বন্ধ লিমনের। তাহি শাড়ি ধরে উঠে দাঁড়ায়। কাব্যের দিকে তাকিয়ে বললো,
– কোথায় যাচ্ছি জানিনা। কেউ আমার খোঁজ করলে বলো জলে ডুবে ম*রতে যাচ্ছি।
লিমন চোখ খুলে তাহির হাত ধরে আটকালো। তাহির দিকে তাকিয়ে ধমকে বললো,
– এত ম*রার শখ কেনো? এত গুলো মাস আমাকে ধুকে ধুকে কষ্ট দেয়া হয়েছে অথচ আমার একটা লাইন সহ্য করার ক্ষমতা নেই। পালিয়ে এসেছেন কেনো?
দুচোখ ভরা জল নিয়ে তাহি বলে উঠলো,
– আমি পারবোনা বিয়ে করতে ভাইজান যার সাথে বিয়ে দিচ্ছেন উনাকে। উনি চাইবেন সংসার করতে। আমি তো রাশেদ কে ভুলতে পারবোনা।
কাব্য ভ্যাবাচেকা খেয়ে বলে,
– লিমনের সাথে বিয়ে করলে সংসার করবেন না?
– ওই আইনজীবীর সাথে সংসার করার চেয়ে লিমনের সাথে করা ভালো।
লিমন ক্ষীন হেসে বলে,
– আচ্ছা এইকারণ ? তাহলে ঠিক আছে চলুন। আমার আপত্তি নেই।
কাব্য ক্রোধে বললো,
– কিসের আপত্তি নেই। তাহি আপা এসব কি বলছেন আপনি? লিমন একটা মানুষ। আপনি মনের মাঝে রাশেদ ভাইকে রেখে লিমনকে ট্রাম্প কার্ড বানিয়ে বিয়ে করাটা কি প্রতারণা নয়?
তাহি লিমনের দিকে তাকিয়ে ওর ভাব বুঝার চেষ্টা করলো। তাহির হাত এখনো শক্ত করে ধরে আছে লিমন। তাহি জোরে দম ফেলে বললো,
– বাসার সবাই আমাকে বিয়ে দিবেই। বাধ্য হয়ে অপরিচিত একজন মানুষকে বিয়ে করার চেয়ে পরিচিত লিমনকে বিয়ে করাই ভালো। লিমন রাশেদকে শ্রদ্ধা করে। আর যাই হোক কখনো রাশেদ রিলেটেড কিছু হলে লিমন আমাকে অপদস্ত করবেনা। ওর জায়গায় অন্য কেউ হলে অবশ্যই করবে। বিধবা তকমা তো লেগেছে বেশ কয়েক বছর। সম্মানের চোখে কয়জন দেখে? সেদিক থেকে লিমনের উপর ভরসা করতে পারি।
কাব্য প্রশ্ন করে,
– আর ভালোবাসা?
তাহি নিশ্চুপ। বৃষ্টির তেজ কমেছে। লিমন তাহির হাত ছেড়ে একটু সামনে এগিয়ে গেলো। একটা সি এন জি ডেকে এনে বললো,
– চলুন। কাব্য তুই ও উঠ।
কাব্য বিরক্ত তাহির উপর। স্বার্থপর মেয়ে। নিজের প্রয়োজনে আজ ঠিকই ছুটে এলো। লিমনের মনে কি চলছে বুঝার উপায় নেই কারো। সি এন জি চলছে। মনে উৎকন্ঠা, ভয়। চোখে জল তাহির। গাড়ি থামলো কাজী অফিসের সামনে।
কাজীর সামনে দুজন। সাক্ষী হিসেবে ডাক দিয়েছে হামজা,তুহিনকে। তাহি ফোনে কাকে যেন লোকেশন পাঠালো। অপেক্ষা করছে সকলে তার আসার জন্য। ভেতরে ঢুকতেই কাব্য এবং লিমনের চক্ষু ছানা বড়া। কাব্য ভ*য় পেয়ে আমতা আমতা করে বললো,
– ছো ছোট দা*।
শাহীন আর পাভেল ইশারা দিলো বিয়ে শুরু করতে। লিমন একবার তাহির দিকে তাকিয়ে মনোযোগ দিলো কাজীর দিকে। স্পষ্ট বুঝতে পারছে তাহি সমস্তটা প্ল্যান করেই এসব করেছে। তাহিকে কবুল বলতে বলাতে মেয়েটা গড়িমসি না করে গড়গড় করে বলে দিলো। মনে হলো যেন কবুল বললেই বেঁচে যাবে। এদিকে লিমনকে বলতে বলায় লিমন নিশ্চুপ। জীবনের এত বড় একটা সিদ্ধান্ত মা, বড় বাবা আর বড় ভাইজান থাকবেনা ব্যাপারটা অনুচিত, অকল্যাণকর। এদের দোয়া ছাড়া আগাবে কি করে জীবনে?অথচ আজকের দিনটা বড্ড আকাঙ্ক্ষার, স্বপ্নের ছিলো। ধ্যানে ফিরে রোবটের মত তিন কবুল বলে দিলো। স্বাক্ষর করে চুপ করে নিজের জায়গায় বসে আছে। তাহির দুচোখ বেয়ে পানি ঝরছে। শাহীন এগিয়ে আসতেই ভাইকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলো। পাভেল লিমনের কাঁধে হাত রেখেছ। সবার পিঠ দেয়ালে ঠেকে গিয়েছিলো। কাব্য না পারতে শাহীনকে আজ সকালে সব জানিয়ে দিয়েছে। ভাইজান যখন রাতেই জানালো তাহির বিয়ের কথা শাহীন প্রস্তুতি নিয়েছিলো পরশু ঢাকা ফেরার। কাব্যের মুখে সব শুনে অপেক্ষা করেনি সকালেই রওয়ানা হয়েছে। নিলয় যদিও পাভেল শাহীনের বন্ধু তবে কাব্যের মুখে যা শুনেছে তাহির প্রতি লিমনের অনুভূতির ব্যাপারে এরপর আর নিলয়কে সেই ঝামেলাতে জড়াতে অনিচ্ছুক ছিলো শাহীন। পাভেলকে জানাতেই পাভেল আঁইঢাঁই করছিলো বসের ভ য়ে। শাহীন নি র্ভয় দেয়াতে দুজনে মিলে কাজটা করেই ফেললো।
কাজী অফিস থেকে বেরিয়ে এসে কাব্য কাঁদো কাঁদো মুখে বলে,
– ও ছোট দা* আমরা কোথায় যাবো?
পাভেল শুকনো ঢোক গিলে বলে,
– কই আর বাঘের ডেরায়। আজকে সব কয়টার গো*স্ত চিবিয়ে খাবে দেখিস।
শাহীন ধমক দিলো,
– চুপ থাক। প্রেম করিস নাতো তাই বুঝিস না প্রেমিকের কষ্ট। আমাকে ভাবতে দে।
পাভেল মনে মনে বলে,
– নাহ একদমই বুঝিনা, শুধু ঘর থেকে উচ্ছেদ করে দিলো আদর করে এই আর কি।
এর মাঝেই লিমন বললো,
– বাসায় চলো। আমি ভাইজানের মুখোমুখি হবো। আম্মুও ওখানে আছে।
শাহীন প্রশ্ন করলো,
– তুই নিশ্চিত?
– শতভাগ। ছোট দা* উপায় নেই তো। এত বড় প্রতারণা করবো মানুষটার সাথে? বিশ্বাস করে আমাকে। কি করলাম এটা। আবেগের জোর এতই বেশি যে আপন জনকে ঠকিয়ে ফেললাম।
হতবাক প্রতিটি চেহারা। তাহির মনে হলো এত বড় অপরাধ সে নিজের কথা ভেবে করে ফেললো! লিমন না বুঝালে হয়তো টের পেতোনা। লিমন তাহির দিকে তাকিয়ে বললো,
– ডাক্তার তাহি আপনি ভাববেন না। সামলে নেব আমি সবটা। আপনার গায়ে আঁচ লাগবে না।
চলবে…