সীমাহীন ভালোবাসার নীড় পর্ব-১২

0
689

#সীমাহীন_ভালোবাসার_নীড়
#লেখিকাঃনওশিন_আদ্রিতা
#পার্টঃ১২
,
,
,
,
,
অন্ধকারে ডুবে আছে রুমটা। চাঁদের আলোয় সম্পূর্ণ অন্ধকার কাটাতে না পারলেও চাঁদের এক খন্ড আলো এসে পরেছে নির আর আদ্রির উপরে।আদ্রির নিশ্বাস ধীরে ধীরে ঘন হতে শুরু করেছে। নির এর মাঝে থাকা অস্থিরতাও কমে এসেছে আদ্রির সান্নিধ্যে পেয়ে।

আদ্রি নির এর ঠান্ডা স্পর্শ পেয়ে যেনো বরফের ন্যায় শক্ত হয়ে গেছে সে। নির এর উষ্ণ স্পর্শ বার বার কেপে তুলছে তাকে না চাইতেও।

নির অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে আদ্রির থেকে দূরে সরে গেলো। আদ্রি তখন ও চোখ জোড়া বন্ধ করে দুই হাত দিয়ে শক্ত করে নিজের জামা খামছে ধরে আছে। চোখ। চোখের পাপড়ি অনবরত কেপে চলেছে।

নির মুচকি হেসে আদ্রির সারা মুখ জুরে ফু দিয়ে দিলো। গরম নিশ্বাসের ছোয়া পেয়ে চোখ জোড়া মেলে তাকালো আদ্রি।

কিন্তু সেকেন্ডের বেশি চোখের দিকে তাকিয়ে থাকতে সক্ষম হলোনা তাই তো লজ্জায় চোখ জোড়া নামায়ে অন্যদিকে ফিরে চায়লো।ইচ্ছা করছে ছুটে বের হয়ে যেতে কিন্তু নির একদম দরজার সাথে লেগে দাঁড়ায় আছে তার চোখ জোড়া তার লজ্জাবতী কে পর্যবেক্ষন করতে ব্যস্ত।

নিরঃএই ভাবে লজ্জা পাচ্ছো কেনো গো
(আদ্রির কাধের উপরে দুই হাত দিয়ে)
আদ্রির লজ্জা যেনো দ্বিগুন বেরে গেলো

নিরঃজানো এই ভাবে লজ্জা পেলে না একদম বউ বউ লাগে। হবে আমার বউ (আদ্রির চোখের দিকে তাকিয়ে)

আদ্রি অবাক নয়নে তাকায় নির এর দিকে সে স্বপ্নেও ভাবেনি নির এমন কোন কথা বলবে।

আদ্রির অবাক নয়নে চেয়ে থাকতে দেখে হাহা করে হেসে উঠে নির।আদ্রি বিব্রত অবস্থায় পরে।

নিরঃলুক এট ইউর ফেস তোমার সত্যি মনে হলো আমি তোমাকে এটা বলবো এইভাবে (হো হো করে এসে দিয়ে)

আদ্রির গায়ে লাগলো কথাটা সে মটেও এমন কিছু ভেবে ছিলোনা। কিন্তু নির এর হাসিতে তার আত্নসম্মানে লাগে খুব। সে জানে সে নির এর অযোগ্য সে কোন দিন এটা নিয়ে ভাবেও নি।

আদ্রি চোখ জুরে কালো মেঘ এসে হানা দিলো। দৌড়ে বাহিরে চলে গেলো সে।যে লোক তাকে অপমান করেছে তাকে কোন ভাবেই সে তার চোখের জল দেখাতে চায় না।

আদ্রি রুমে এসে রেডি হয়ে ন্যায় কালো গোলাপি মিশালো রঙের শাড়ি পড়েছে।চোখে কাজল আর ঠোঁটে হালকা রেড সেড এর লিপস্টিক হাতে চুড়ি আর পায়ে পায়েল পড়েছে ব্যাস আর লম্বা কালো কেশ পিঠ জুড়ে ছেয়ে রয়েছে।

সিড়ি দিয়ে নামার সময় সবার নজর নওমি আর আদ্রির উপরে। দুইজনকেই অনেক সুন্দর লাগছে বিশেষ করে নওমিকে বেশি সুন্দর লাগছে।

আদ্রিয়ান কিছু কাজের জন্য পার্টিতে পৌঁছাতে লেট হয়ে যায় ভিতরে ঢুকতেই তার চোখ যায় সিড়ির উপরে তার দুই মায়াবতিকে দেখে তার চোখ জুরায় যায়।

আদ্রিয়ানঃইশ পিচ্চিকে আজকে একদম বড় বড় লাগছে। মনে হচ্ছে এখনি বিয়ে করে ফেলি। উফ কবে বড় হবিরে আমার যে আমার সহ্য হচ্ছেনা।

নওমি তো আদ্রিয়ান কে দেখে দৌড় দিয়েছে কিন্তু শাড়ি পরায় পা বেজে পরে যেতে নেয় আদ্রিয়ান সেটা দেখে দৌড়ে তার কাছে যেতে নিলেই একটা ছেলে এসে নওমির কোমর জরায় ধরে পরা থেকে আটকায়।

ছেলেটাঃআর ইউ ওকে মিস(নওমিকে দাড় করায়ে)
নওমিঃহ্যা আমি ঠিক আছি। ধন্যবাদ আপনাকে।
ছেলেটাঃইটস মাই প্লেজার এরকুম সুন্দরী মেয়েকে বাচানো আমার ভাগ্য।
(খানিকটা ঝুকে)
নওমি ছেলেটার বলার ধরন দেখে খিলখিল করে হেসে দেয়।

ছেলেটা নওমির কথা বলার ধরন দেখে অবাক হয় এতো বড় মেয়ে কেমন বাচ্চাদের মতো কথা বলছে কিন্তু তবুও সেই দিকে তেমন পাত্তা দেয়না এই দিকে আদ্রিয়ান রাগে তার কপালের রগ ফুলে উঠেছে।সাদা কপালে নিল রগ ফুটে উঠেছে স্পষ্ট।

নওমিঃআচ্ছা টাটা
ছেলেটাঃকই যাও গো সুন্দরী
নওমিঃমিস্টার হ্যান্ডসাম এর কাছে
ছেলেঃমানেহ
নওমিঃওই যে মিস্টার হ্যান্ডসাম(আদ্রিয়ান কে দেখায়ে)

ছেলেটার মুখ কালো হয়ে যায়।আদ্রিয়ান এর দিকে তাকাতেই ছেলেটা আৎকে উঠলো।আদ্রিয়ান এর চোখ জোড়া কেমন যেনো অশান্ত হয়ে আছে।

ছেলেটা ভয়ে সেখান থেকে চলে গেলো।
নওমি হঠাৎ চলে যাওয়ায় অবাক হলো। কিন্তু সেদিকে খেয়াল না করে আদ্রিয়ান এর কাছে গেলো

নওমিঃআদি। তুমি এখানে দাঁড়ায় আছো কেন হুম আমাকে কেনো আসতে হলো তোমার কাছে। জানো এখানে আসতে যায়ে আমি পরে যেতে নিয়েছিলাম

নওমি বক বক করেই যাচ্ছে কিন্তু আদ্রয়ান চুপচাপ
দাঁড়ায় আছে।নওমি আদ্রিয়ান কে চুপচাপ থাকতে দেখে আদ্রিয়ান এর দাড়ি ধরে দেয় টান।

আদ্রিয়ান রাগী চোখে তাকায় কিন্তু সেদিকে পাত্তা দেয় না নওমি।উল্টা আদ্রিয়ান চুল গুলো এলোমেলো করে দেয়।

আদ্রিয়ানঃকি হয়েছে এমন করছো কেন (ঝাড়ি মেরে)
নওমির অভিমান হয় প্রচুর। সরি বলে সেখান থেকে চলে যায়। আদ্রিয়ান মাথা চুলকে নওমির পিছনে যায়।

আদ্রিয়ানঃরাগ করেছো
নওমিঃনাহ(অভিমানী গলায়)
আদ্রিয়ানঃসরি। আসলে মাথা ঠিক ছিলোনা তোমাকে ওই ছেলেটার সাথে কথা বলতে দেখে রাগ হচ্ছিলো(সোজাসাপটা বলে দেয়)
নওমিঃকেনো(বোকা চাহনি দিয়ে)
আদ্রিয়ানঃবুঝবা না গো। এবার বলো ঔষধ খেয়েছো(কথা ঘুরাতে)
নওমিঃভুলে গেছি(মাথা নিচু করে)
আদ্রিয়ানঃভুলে গেছো মানে কি হ্যা যানোনা এটাতে তোমার কতোটা ক্ষতি হবে যাও এক্ষনি ঔষধ খেয়ে আসো
নওমিঃহুম দাড়াও

নওমি ওর নানুমনিকে সাথে নিয়ে উপরে চলে গেলো ঔষধ খাওয়ার জন্য। সে সুযোগ এ আদ্রয়ান গেলো নওমির নানার কাছে।

আদ্রিয়ানঃমিস্টার রেজওয়ান (নানার কাছে যেয়ে)

শামসের রেজওয়ান কিছু পরিচিত ডিলার দের সাথে আলাপ করছিলেন আদ্রিয়ান এর ডাক শুনে তাদের কাছ থেকে বিদায় নেন

শামসেরঃইয়েস ইয়াং ম্যান বলো কিছু দরকার ছিলো।
আদ্রিয়ানঃজ্বী আসলে আমি ওতো ঘুরায় পেচায়ে কথা বলতে পারিনা আমি আপনার নাতনিকে পছন্দ করি বিয়ে করতে চায় (মাথা নিচু করে এক নাগারে বলে দেয়)
শামসেরঃএই সব কি বলছো তুমি। জানো এর মানে কি দাড়াচ্ছে(গম্ভির গলায়)
আদ্রিয়ানঃআমি সব জেনে বুঝেই প্রস্তাব টা দিচ্ছি মিস্টার রেজওয়ান আমার পক্ষে আর সম্ভব না নওমিকে ছাড়া থাকা। আর ওই আমার সাথে ২৪ ঘন্টা থাকলে আমি ওকে ভালো করে ওভজারব করতে পারবো।
শামসেরঃএটা কোন ছেলে খেলা না আদ্রিয়ান। ভবিষ্যতে কিছু ১৯ ২০ হলে কি করবা বলো।নওমির ঠিক হওয়ার চান্স খুব কম সেটা তোমার থেকে ভালো কেও জানেনা।
আদ্রিয়ানঃআমি সব দিক ভেবেই এই প্রস্তাব দিয়েছি প্লিজ না করবেন না
শামসেরঃআমি না হয় মানলাম কিন্তু নির আর নওমি তারা
আদ্রিয়ানঃনওমিকে মানানোর দ্বায়িত্ব আমার তাকে নিয়ে সমস্যা হবেনা।
শামসেরঃঠিক আছে আমি নির এর সাথে কথা বলে ভেবে চিনতে সিধান্ত জানাবো।
আদ্রিয়ানঃধন্যবাদ মিস্টার রেজওয়ান।

________

মেহের আর আদ্রি বসে আছে ড্রিংক কর্নার এর সাইডে। দুইজনেই কথা বলছে বলতে গেলে শুধু মেহের কথা বলছে আর আদ্রি শুধু হ্যা হু না করছে। কিন্তু আদ্রির উওরের দিকে তেমন একটা পাত্তা দেয় না মেহের সে নিজের মতো কথা বলে যাচ্ছে।

হঠাৎ সেখানে নির এর বেস্ট ফ্রেন্ড রিয়াজ শেখ উপস্থিত হলো।
রিয়াজ কে দেখে মেহের মুখ ভাংগালো সেটা দেখে মৃদু হাসলো রিয়াজ।

রিয়াজ আদ্রির সামনে হাত বেরিয়ে দিলো হ্যান্ডশেক করার জন্য সেটা দেখে মেহের এর মুখটা ছোট হয়ে গেলো। আদ্রি হাত না মিলিয়ে মুখে সালাম দিলো। রিয়াজ সালামের উওর নিলো।

রিয়াজঃকেমন আছেন মিস টক ঝাল
(মেহের কে উদ্দেশ্য করে)
রিয়াজ এর ডাকে তেতে উঠলো মেহের। রাগে রি রি করতে করতে সেখান থেকে চলে গেলো মেহের।রিয়াজ ও তার পিছে উঠে গেলো। আদ্রি তাদের যাওয়া দেখে ছোট নিশ্বাস ফেললো।

চলবে!!!!!